#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ১৮
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৩৯,
” এটা আর কে হবে! ছোটো মার বান্ধবীর মেয়ে।”
রাদের কথায় হিয়া ভ্রু কুঁচকায়। এরপর রাদকে ফের প্রশ্ন করে,
” তো তার এতো বিয়াই সাহেবের সাথে ঢলাঢলি কিসের?”
রাদ হিয়ার প্রশ্নে ওর দিকে তাকায়। এরপর হিয়াকে বলে,
” শালী সাহেবা! সে যেই হোক, যা করুক ইহসাসের সাথে। তোমার এতো কৌতূহল কেনো?”
” আমার কোনো কৌতূহল নেই ভাইয়া। তোমাদের বাড়ি তো পার্ক, যার যখন মনে হয় ঢুকে পরে।”
কথাটা বলেই হিয়া হনহনিয়ে উপরে চলে যায় নাতাশার রুমে। যাওয়ার সময় ইহসাসের দিকে তাকায়। ইহসাস অসহায় চাহনীতে একবার রাদ তো একবার হিয়া তো আরেকবার সামনে থাকা মেয়েটিকে দেখছে। হিয়া বরাবরই সে এই বাসায় আসার পর বেশির ভাগ সময়ই নাতাশার সাথে থাকে। নাতাশার রুমে এসে সে, নাতাশাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে। হাতের ব্যাগটা সোফার উপর ছুড়ে মে’রে সোফায় ধপ করে বসে পরে। চোখের সামনে বারবার ইহসাসের কাছাকাছি ঐ মেয়েটির বসে থাকার চিত্র ভেসে উঠছে। আর মনে প্রশ্নে জাগছে, ইহসাসের সাথে এ মেয়ের আবার বিয়ে হবে নাকি! হিয়া নিজের চিন্তাভাবনার উপর নিজেই অবাক হয়। সে কি মেয়েটিকে নিয়ে জেলাসী ফিল করছে! নয়তো ইহসাসের পাশে কোন মেয়ে এসে বসলো তাতে তার কি যায় আসে! তবে কি সত্যি ইহসাসের প্রতি দুর্বল হলো সে! ‘ ধুর হিয়া তুইও না, পাগল হয়ে গেছিস ইহসাস নামক মানুষ টার ভাবনায়। বাদ দে এসব ভাবনা চিন্তা৷ নয়তো অতি সত্বর পাগলাগারদে ভর্তি হতে হবে!’ হিয়া নিজেই নিজেকে কথাগুলো বলে। নাতাশার মাত্রই কানের কাছে ফোন ভাইব্রেট হওয়ায় ঘুম ভেঙে যায়। সে উঠে বসার পর হিয়াকে সোফায় বসে আনমনে বিরবির করতে দেখে অবাক হয়ে বলে,
” আরে হিয়া? কখন আসলে? ”
হিয়া নিজের ভাবনা নিয়ে এতোটাই মশগুল ছিলো যে নাতাশা উঠেছে সে টেরও পায়নি। নাতাশার প্রশ্নে হিয়া তুতলিয়ে উত্তর দেয়,
” একটু আগেই আসলাম আপু। তুমি উঠলে সবে? আজ আমরা ঘুরতে যাবো, ভুলে গেছো?”
” আরে না বোনু, ভুলবো কেনো? কিন্তু রাতে একটু লেট করে ঘুমিয়ে উঠতে লেট হলো।”
নাতাশা বিছানা থেকে নেমে চুল খোপা করতে করতে উত্তর দেয়। হিয়া বলে,
” আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হও।”
নাতাশা মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে চলে যায়। হিয়া আবার গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসে পরে৷ আসলেই মেয়েটির সাথে ইহসাসের কোনো চক্কর আছে নাকি! হিয়া না চাইতেও ভাবনা টা চলে আসছে। হিয়া বিরক্ত হয় নিজের উপর৷ হাত দিয়ে চুল টেনে নিজেই নিজেকে বলে, ‘ উফ হিয়া! তুই সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস।’
ড্রইং রুমে একটা গোল মিটিং বসে গেছে প্রায়। জাহিদুল আর রুবেল সাহেব মাত্রই বাজার হাতে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ি ফিরে তাইবা কে দেখেই তাকে ঘিরে বসেছেন সবাই। মিসেস কল্পনা তো তাইবাকে পেয়ে খুশিতে গদগদ অবস্থা। মিসেস সেলিনা তাইবার জন্য নিজ হাতে নাস্তা বানিয়ে খাওয়াতে বসেছেন। রাদ আর ইহসাস ড্রইং রুমের এককোণে দাড়িয়ে তাইবাকে নিয়ে এতো মাতামাতি দেখে যাচ্ছে। রায়া আর আনিকা কিচেন রুম থেকে বেরিয়ে এসব দেখে রায়া আনিকাকে প্রশ্ন করে,
” এটা আবার কে ভাবী? ”
” ছোটো মামনির একমাত্র বেস্টফ্রেন্ডের মেয়ে। ইহসাসের ফিউচার ওয়াইফ। নাম তাইবা। সে ঢাকাতেই থাকে, পড়শোনা করে। এবার অনার্স ৩য় বর্ষে।”
” সবই বুঝলাম, কিন্তু এনাকে নিয়ে এতো আদর যত্ন, কারোর কোনোদিকে খেয়ালই নেই। কারণ কি?”
” মেয়েটার মা মা”রা গেছে জন্মের সময়ই। বাবা অনত্র বিয়ে করেছেন। মামার বাসায় থাকে। সেজন্য এতো আদর যত্ন। ছোটো মা তাইবাকে কাছে পেলে ওকে বুঝতে দিতে চায় না, যে ওর মা নেই৷ এতোটাই আদর করেন। তারমাঝে বাড়ির আদরের ছোটো ছেলের বউ হবে, আদরই আলাদা।”
” ওহহ।”
আনিকার কথায় রায়া ছোট্ট করে উত্তর দেয়। সে আনিকাকে ফ্রেশ হওয়ার কথা বলে উপরে চলে যায়। আনিকা সবাইকে এক পলক দেখে ফের কিচেন রুমে চলে যায়। বাজার আনা হয়েছে, তারমাঝে মাছ আছে। কা’টতে বসতে হবে তার৷ আনিকা কাউকে নিয়ে ভ’য় না পেলেও ইহসাসকে নিয়ে ভয় পায়, তাইবাকে দেখে কি যে চলছে ইহসাসের মনে। আনিকা হতাশার শ্বাস ছাড়ে।
৪০,
” ভাইয়া।”
রাদ আর ইহসাস পাশাপাশি দাড়িয়ে থাকতে থাকতেই ইহসাস রাদকে ডাকে। ইহসাসের ডাকে রাদ উত্তর দেয়,
” হু বল?”
” গতকাল রাতে আ”পদের নাম নিলি, আজ হাজির।”
“মেয়েটা যথেষ্ট ভালো, এভাবে বলিস কেনো তুই?”
” ভালো অবশ্যই, কিন্তু আমার সাথে ওর ছ্যাচরা স্বভাব আর নেকামি ভালো লাগেনা।”
” তোকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। তো নেকামি তোর সাথে না করে পাশের বাসার দাদুর সাথে করবে?”
“করলেও তো করতে পারে! আমি বেচে যাই।”
“ইহসাস!”
রাদ মৃদু ধমক দেয় ইহসাসকে। ইহসাস মুখটা কাচুমাচু করে বলে,
” বাবা-রা আর মায়েরা কি শুরু করেছে বলো তো? নিজেদের বান্ধবী-বন্ধু তাদের সন্তান এনে গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলেছে। প্রথমে তোমার বাবা বিয়ে দিলো বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে, এখন আমার মা সেই নিয়মেই হাঁটছে।”
” ভাগ্যিস বাবা দিয়েছিলো। নয়তো এতো মিষ্টি একটা বউ কই পেতাম।”
রাদ মুগ্ধস্বরে কথাটা বলে। ইহসাস ভাইয়ের বউয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে হেয়ালির স্বরে বলে,
” পাইছো ভালো কথা, এটারেও বিয়ে করে নাও। আমি বেচে যাই।”
” ইহসাস! মা’ইর খাবি তুই। বিয়েটা ছোটো মা ঠিক করেছে, তোকেই করতে হবে। আমার এক বিয়েতেই বিয়ের খায়েশ মিটে গেছে।”
কথাটা বলেই রাদ হনহনিয়ে ইহসাসের পাশ থেকে চলে যায়। যেতে যেতে বিরবির করে বলে, ‘ এক বউই ভালোবাসলো না এখনও, আরও একটা আনলে সোজা টিকেট ছাড়া বৃন্দাবন পাঠিয়ে দেবে। যে রা’গ বাপু৷’
ইহসাস রাদের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজেও ঠোট নারিয়ে বলে, ‘ কেউ ভালোবাসে আমারে! না পরিবার, না যারে একটু ভালোবাসতে চাইলাম সে! কেউ আইসা যদি আমায় বলতো, ভালোবাসা গুলো আমারে দিয়ে দাও। দিতাম, সব উজার করে ভালোবাসতাম। কিন্তু এই তাইবা রে না৷ মেয়ে, ন্যাকামির ভান্ডার। দেখা গেলো বিয়ের পর, আমি ইহসাস আর শ্বাস নেওয়ার সময় পেলাম না, এই মেয়ের ন্যাকামির জন্য। বাপরে কি ভ’য়ংকর ব্যাপার।’ ইহসাস মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে। হনহনিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। তাইবা ব্যাপারটা খেয়াল করে মিসেস কল্পনাকে বললো,
” আন্টি, তোমার ছেলে আসার পর থেকে দেখছি আমায় ইগনোর করছে। ব্যাপার কি বলো তো?”
” ও কিছু না, এমনিই হয়তো কিছু নিয়ে চিন্তিত। তুই কিছু মনে করিস না।”
মিসেস কল্পনা উত্তর দেন। তার সাথে বাকিরাও তাল মিলায়। তখনই হিয়া আর নাতাশা নিচে নামছিলো সিড়ি বেয়ে। তাদের কথার হালকা আভাস হিয়ার কানে যেতেই সে মনে মনে ভাবে, ‘ বাহ মিঃ ইহসাসের তাহলে ভালোবাসার মানুষ আছে! অথচ উনি আমায় একবারও জানাননি। ভালোয়।’ হিয়ার মনে মনেই ইহসাসের প্রতি এক আকাশ সম অভিমান জমে যায়। হিয়া নিচে নামতেই মিসেস সেলিনা এগিয়ে আসেন। হিয়া উনাকে সালাম দেয়। মিসেস সেলিনা সালামের উত্তর নিয়ে জিগাসা করেন,
” কখন আসলে? একবারও দেখলাম না যে! ”
” দেখবে কিভাবে বড় মা? পরে আছো তো একটা ন্যাকামির পাহাড়কে নিয়ে!”
নাতাশা পাশ থেকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে উত্তর দেয়। মিসেস সেলিমা কপট রাগ দেখান নাতাশার কথায়, বলেন,
” তুই আর ইহসাস তাইবাকে দেখতে কেনো পারিস না বলতো? ”
” মেয়ের মতো মেয়ে হলো দেখতে পারতামই।”
কথাটা বলেই নাতাশা নাস্তা করার জন্য সবাইকে পাশ কা’টিয়ে ডাইনিং টেবিলে যেতে ধরে। তখুনি তাইবা নাতাশাকে ডেকে উঠে, বলে,
” আরে নাতাশা? কেমন আছো? কবে আসলে জার্মানি থেকে?”
নাতাশা তাইবার দিকে তাকিয়ে এমনিই জোড় করে হাসার চেষ্টা করে বলে,
” ডোন্ট মাইন্ড তাইবা আপু৷ তোমার সাথে পরে কথা বলবো।”
বলেই নাতাশা চলে যায়। তাইবা কিছু টা মন খারাপ করে। মিসেস কল্পনা বুঝতে পারেন, তার ছেলে মেয়ে কেউই তাইবাকে পছন্দ করে না। কিন্তু একসাথে চলাফেরা,মেলামেশা করে ঠিকই তাইবাকে ভালো লাগবে। এজন্য তিনি তাইবাকে কল করে বলেছিলো বাসায় চলে আসতে। এতোদিন রাদ বড় ভাই, অবিবাহিত ছিলো বলে, উনি ভাবেননি। কিন্তু এখন না ভাবলেও চলছে না। সেজন্য আসতে বলা। উনি তাইবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
” মন খারাপ করিস না।”
জাহিদুল আর রুবেল সাহেব ততক্ষণে নাস্তা করতে চলে গেছেন। ড্রইং রুমে শুধু মিসেস সেলিনা আর কল্পনা দুই জা। উনারা তাইবার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরেন। হিয়া সিড়ির কাছে একদৃষ্টিতে তাদের দেখছে। মাথায় একগাদা প্রশ্ন ঘুরছে তার। কিন্তু উত্তর সব ইহসাস জানে। কিন্তু সে কোথায়! হিয়া পুরো ড্রইং রুম জুড়ে দৃষ্টি ঘুরায়। কিন্তু কোথাও পায় না। তখনই আনিকা হিয়াকেও নাস্তা করতে ডাকে। হিয়া তার ডাকে সাড়া দিয়ে নাস্তা করতে চলে যায়।
চলবে?
গল্প দিনদিন যতো বড়ো করে দিচ্ছি, সবার অভিযোগ বাড়ছে ছোটো করে দিচ্ছি। আমার তো তাহলে সেই শুরুর দিকের মতো ১০০০+ওয়ার্ড লিখেই পোস্ট করা উচিত। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। আসসালামু আলাইকুম।