#হিয়ার_মাঝে
৫৫.
#WriterঃMousumi_Akter
নিকশ কালো অন্ধকার কেটে গিয়েছে ভোরের আলো ফুটেছে।রাতের শেষে ভোর হয়েছে ভোরের আলো চারদিকে চকচক করছে।কেটে গিয়েছে আমাদের জীবনের সব অন্ধকার।জীবনে আরেক বার নতুন ভোর পেলাম, নতুন আলো পেলাম পেলাম নতুন ভালবাসা। নিরবের বুকের সাথে লেপ্টে সুয়ে আছি আমি।নিঃশ্বাস গুলো আচরে পড়ছে নিরবের বুকে।নিরবের বুকে নাক ডুবিয়ে সুয়ে আছি আমি।কত কাল পরে কত প্রতিক্ষার পরে ওর বুকে আবার শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছি আমি।হালকা শীত পড়েছে আরো খানিক টা গুটি সেটে মেরে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে গেলাম।ঘুম ভাঙতেই নিরব আমার মাথায় কপালে আলতো চুমু দিয়ে বললো “শুভ সকাল জান পাখিটা, আমার বউ পাখিটা।”ঘুম ঘুম চোখে বললাম, “শুভ সকাল আম্মুর নিষ্পাপ ছেলে।”
নিরব ওর দুই হাত দিয়ে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে নিলো আমাকে।
“আস্তে করে বললাম সকাল হয়েছে উঠতে হবে না।”
“উহু বহুকাল তোমাকে আদর করতে পারি নি। এইভাবে এক যুগ জড়িয়ে ধরে রাখবো তারপর ছাড়বো।এইভাবে জড়িয়ে ধরে বৃদ্ধ হবো তবুও ছাড়বো না তোমাকে।”
“তুমি কি ভেবেছো তুমি অসুস্থ ছিলে বলে আমি দূরে ছিলাম।আমি রোজ সকাল বিকাল শত শত চুমু দিতাম তোমায়।এর থেকে বেশী শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতাম তোমাকে।তোমাকে আর তোমার বেবি নিজের সাথে মনের খুব কাছাকাছি জড়িয়ে রাখতাম।”
“মৃথিলা আমি জানি,ডাক্তার আমাকে সুস্থ করতে পারে নি।তোমার এই ভালবাসা আমাকে সুস্থ করে তুলেছে।জানো আমি না খুব লাকি। সবাই আমার সুস্থ হওয়াতে কনগ্রাচুলেশন জানিয়েছে আর বলেছে সবাই যেনো মৃথিলার মতো একটা করে বউ পায়।তাহলে ছেলেদের আয়ু অনেক গুন বেড়ে যাবে।বলেই ঠোঁটে আলতো চুমু দিলো।”
লজ্জা পেয়ে বললাম,”কি হচ্ছে মিষ্টার ওত চুমু দেওয়া হচ্ছে ব্যাপার কি?”
“এত দিন আমাকে দিয়েছো আমি সেগুলা ফিরিয়ে দিচ্ছি।আমাকে কেউ কিছু দিলে দশগুন ফিরিয়ে দেই।তাই রোজ এক হাজার চুমু প্রাপ্য তোমার।”
“যাহ দুষ্টু! আমাদের সাথে যে আরেকজন আছে সে কিন্তু সব দেখছে।বলবে পাপ্পা খুব দুষ্টু।”
“বলুক ওদের পাপ্পা ওদের মাম্মির সাথেই তো করছে যা করার।আর শোনো বউ কে জড়িয়ে ধরে রাখলে সওয়াব আছে অনেক।অন্তত নেকির জন্য হলেও আমাকে আদর করতে দিও।।”
“এই দেখুন আমার কিন্তু এবার ভীষণ লজ্জা লাগছে।বার বার এই আদর আদর করবেন নাতো।”
“ইস!কতদিন তোমার এই লাজুকতা দেখি না।এই লাজুকতা দেখলে আমি খুন হয়ে যায়।এই লাজুকতার মাঝে আমার প্রতি ভালবাসা ফুটে ওঠে জানো জানপাখি।”
“তাই না পাগল একটা।বাবা হতে চলেছে এখনো পাগলামো গেলো না।”
“আমার ছেলে হলেও ছেলেকে শেখাবো প্রেম করলে আমার মতো জটিল জায়গা করবি।কারণ খেলবি যখন অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলবি জিতলে প্রাউড ফিল করতে পারবি।।।”
“আচ্ছা শোনো না অফিস যেতে হবে যে। ”
“তোমার এই শরীরে আর অফিস যেতে হবে না একটুও না।এখন আমি সুস্হ।ঠিক ই কিছু না কিছু একটা শুরু করে নিবো।এতদিন অনেক কষ্ট করেছো।এই পিচ্চি একটা মানুষ তুমি যা করেছো ভাবতেই গা শিউরে ওঠে আমার।চোখে পানি আসে বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভব হয়।”
“নিরব তুমি না আমাকে শক্ত হতে শিখিয়েছো।আমি তোমার মৃথিলা আমার কিছুই হবে না।তুমি কিছু একটা শুরু করার আগেই আমি জব ছেড়ে দিবো। এখন জব ছেড়ে দিলে কিভাবে চলবো আমরা।”
“আমার নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে মৃথিলা, আমি বেকার যেখানে তোমার দায়িত্ব আমি নিবো সেখানে তুমি আমার দায়িত্ব নিয়েছো।মানুষ আমায় নিয়ে হাসাহাসি করবে।অল রেডি দুই একজন বলেছে ভাজ্ঞিস একটা বউ পেয়েছিলো ইনকাম করে খাওয়াচ্ছে।এইগুলা আমি সহ্য করতে পারবো না।”
“এই নিয়ম টা কে চালু করেছিলো নিরব।যে সব সময় একটা ছেলেকেই দায়িত্ব নিতে হবে।এই নিয়ম কে বানিয়েছে নিরব সব সময় একটা ছেলের ঘাড়েই বোঝা থাকবে।একটা ছেলে মরুক বাঁচুক পরিবারের জন্য উপার্জন করতে না পারলে তাকে কেনো এই খোটা টা শুনতে হবে যে সামর্থ নেই কেনো বিয়ে করেছো?একটা ছেলে আর কতদিন এই অভিশাপ নিয়ে থাকবে।সমাজ কবে বদলাবে নিরব যেদিন সবাই বলবে ছেলে হয়েছে বলেই তার কাঁধেই সব দায় ভার ছেলেকে কেনো নিতে হবে।ছেলেরা কত কষ্ট করে সংসার চালায়।কত শৌখিন ছেলেকে দেখেছি বিয়ের পর বৌ এর মুখে হাসি ফোটাতে দিন মজুরের কাজ করেছে।প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাবে বলে চাকরির জন্য এপ্লিকেশন করতে করতে অফিসে অফিসে ঘুরতে জুতা ক্ষয় হয়েছে।মাত্র দশ হাজার টাকার বেতনের চাকরি করে নিজে একটা চা ও না খেয়ে সংসার এর চাহিদা মেটাচ্ছে। ঈদ এলে একটা পাঞ্জাবি ও কিনে না।একটা জিন্স দিয়ে কয়েক টা বছর চালিয়ে দিচ্ছে।জানো নিরব ভাবতে গেলে প্রতিটা পুরুষের অনেক মহৎ।একটা কন্যাদায়গ্রস্হ পিতাকে একটা পুরুষ মানুষ ই প্রশান্তি দিচ্ছে।একটা মেয়েকে এনে খাওয়াচ্ছে পরাচ্ছে একটা সাজানো জীবন জীবন দিচ্ছে।পুরুষ জাতি মেয়েদের দিয়েছে সম্মান।একটা আশ্রস্হল একটা নিরাপদ ছাদ।প্রথমে একটা মেয়ের বাবা আগলে রাখে পরে তার স্বামি দুজনেই কিন্তু পুরুষ মানুষ। একটা পুরুষ সারাজীবন কষ্ট করার পর সমস্যায় পড়লে কেনো তাকে কথা শুনতে হবে।কেনো একটা মেয়ে তাকে ছেড়ে যাবে।কেনো তার পাশে দাঁড়াবে না।তাহলে কিসের অর্ধাঙ্গিনি নিরব।স্বামি স্ত্রী মানে কি শুধুই শারীরিক চাহিদা মেটানো আর স্বামির টাকায় বিলাসিতা করা।আমি এই প্রথা মানিনা নিরব।তুমি আমার জন্য অনেক করেছো।এখন আমার সময় এসেছে আমি তোমার জন্য করবো।জানো আমাদের অফিসের বস আমার সেলারি বাড়িয়ে দিয়েছেন অন্যদের থেকে অনেক বেশী।কারণ উনার খারাপ সময়ে উনার ওয়াইফ ওনাকে ছেড়ে চলে গেছিলো।আমার সমস্যা গুলো শুনে উনি অনেক খুশি।আমি এই ক মাসে জীবন কি উপলব্ধি করতে পেরেছি।অনেক রং বেরঙের মানুষ দেখেছি।খুব কাছ থেকে জীবন কে দেখেছি।”
“নিরব আমাকে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,তুমি থাকলে আমি সব পারবো।তোমার চিন্তা ভাবনা এত টা পজিটিভ। আমার সত্যি কিছুই বলার নেই।শুধুই বলবো অনেক পূন্যর ফলে তোমাকে পেয়েছি।তবে মানুষের সমালোচনা যে কষ্ট দেয় আমাকে।”
“মানুষ শুধু সমালোচনা তে থাকে নিরব।তাদের কাজ সমালোচনা।অন্যর সমালোচনা তে যদি নিজের এগিয়ে যাওয়া পথে থেমে যায় তাহলে তাদের কিছুই হবে না।তারা সাকসেস।কারো সমালোচনায় আমাদের জীবনের সুখ ও আসবে না দুঃখ ও আসবে না।জাস্ট ডোন্ট কেয়ার ভাবে ফেলে দাও।”
————————————————–
অনেক দিন পর আজ নিরব নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে আমায়।কিন্তু নিরব খেয়াল করে আমার গলা,কান,হাত সব খালি।সাথে সাথে ওর মুড অফ হয়ে যায়।ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম তুমি আমার প্রিয় গহনা বরবাবু।এই দামি গহনা হলেই হবে আমার।নিরব আমাকে কিছুই বললো না।আমার হাত ধরে অফিসে নিয়ে গেলো।আবার অফিস শেষে হাত ধরে নিয়ে এলো।প্রেগ্ন্যাসির আট মাস পড়েছে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিলাম।কারণ আমার পক্ষে আর হাটা চলা সম্ভব হচ্ছিলো না।বস বললেন টেক কেয়ার।সন্তান নিয়ে আবার অফিসে এসো সুস্থ ভাবে।
হাত পায়ে পানি এসে গিয়েছে।অনেক ফুলে গিয়েছি আমি।এ টাইমে অনেক দৌড়াদৌড়িতে শরীর বেশ খারাপ হয়েছে আমার।
যখন ইন্টার পড়তাম তখন বিয়ে হয়েছিলো আমার।আজ আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়েছে।রেজাল্ট আউট হয়েছে ভার্সিটি তে টপ করেছি।চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আমার নাম।আজ নিরব অনেক খুশি।
নিরবের এই খুশি মুখ দেখে আমার মন খুলে হাসতে ইচ্ছা করছে। আজ আমি যা হয়েছি সব টাই নিরবের জন্য।অনার্স এর এক্সম এর পরেই বিসিএস ও দিয়েছিলাম আমি।আজ বিসএস এর রেজাল্ট ও হাতে পেয়েছি আমি।নিরবের স্বপ্ন অনুযায়ী আজ আমি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছি।পৃথিবীর সবাই আমাকে কনগ্রাচুলেশন জানালেও আমি একজন কে কনগ্রাচুলেশন জানালাম। সেটা হলো আমার ভালবাসা নিরব।
আমি কোথায় ছিলাম আর সেখান থেকে আমাকে তুলে কোথায় নিয়ে এসছে নিরব।এই মানুষ টার অবদান গাইড আর সাপোর্ট এর সাথে ভালবাসা না পেলে এখানে আসা সম্ভব ছিলো না আমার জন্য।সারা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করেছে আমার জন্য।আমি ও পেরেছি আজ ওকে দেওয়া কথা রাখতে।
“নিরব কে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম আই লাভ ইউ নিরব।hubby is the best lover in the word”
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আরো বড় হও জানপাখি।
#হিয়ার_মাঝে
৫৬.
#WriterঃMousumi_Akter
মানুষের জীবনে বোধ হয় কখনো চারদিক দিয়ে পরিপূর্ণতা আসে না।সময় টা রমজান মাস।আজ প্রথম সেহরী, রমজান মাস মানেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সব থেকে আনন্দের মাস। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বসে আছে সুপ্তি।মুখে ভীষণ মলিনতা, কারো সাথে কোনো কথা বলছে না।প্রথম সেহরীর জন্য রিফাত ভাইয়া ইফতারির সব জিনিস আর বাজার করে এনেছে।সুপ্তি আর রিফাত ভাই এখন আলাদা বাসা নিয়ে থাকে কারণ রিফাত ভাইয়ার জবের জন্য।রিফাত ভাইয়া খুশি মনে বাসায় প্রবেশ করে দেখে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর ভীষণ মন খারাপ।অন্যদিন এগিয়ে আসে রিফাত ভাইয়া বাইরে থেকে আসলে আজ আর আসে নি কথা ও বলছে না।রিফাত ভাইয়া বুঝতে পারলো কিছু একটা নিয়ে মুড অফ আছে সুপ্তির।ভাইয়া বাজার রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকনিতে সুপ্তির পাশে বসে শান্ত কন্ঠে বললো,”কি হয়েছে সুপ্তি আমি কি কিছু ভুল করেছি।”
“সুপ্তি চুপ হয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।”
“রিফাত ভাইয়া সুপ্তির হাত চেপে ধরে বলেন,প্লিজ বলো আমি কিছু ভুল করলে শুধরে নিবো।এভাবে মুখ ভার করে থেকো না।তুমি না বললে আমি কিভাবে বুঝবো কি হয়েছে তোমার।”
“সুপ্তি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,আমার একটা বাচ্চা চাই রিফাত।”
“রিফাত ভাইয়া সুপ্তির হাত চেপে ধরে বললো,পাগলীর মতো কাঁদছো কেনো?বাচ্চা চাও হবে সিম্পল ব্যাপার।এ নিয়ে কাঁন্নার কি আছে?”
“তোমার আম্মু আজ আমাকে বলেছেন,আমার মাঝে কোনো সমস্যা আছে কিনা পরীক্ষা করাতে।মুনতাহা আপুর বেবি হয়েছে, মিথুর বেবি হবে আমার কেনো হচ্ছে না এসব প্রশ্ন করেছেন।আমি কি বলবো বুঝতে পারি নি।তোমার আম্মু একটু অন্য রকম ভাবে কথা বলছিলেন।বাচ্চা না হওয়ার জন্য মা ভাবছেন আমার কোনো সমস্যা কিনা।”
“রিফাত ভাইয়া সুপ্তিকে বললেন,কষ্ট পেও না।মা নাতি নাতনি দেখতে চাইছেন।মুরব্বিদের কথায় রাগ করতে নেই লক্ষি।”
“আমি রাগ করি নি রিফাত।মা তো ঠিক ই বলেছেন।আসলেই আমাদের বেবি হয় না কেনো রিফাত? সত্যি কি আমার কোনো সমস্যা আছে।”
“এতদিন বেবির কথা আমরা ভাবি নি তাই। এখন থেকে ভাববো।”
“রিফাত গত এক বছরে আমি কিন্তু কোনো জন্মনিরোধক খায় নি। তবুও বেবির কোনো লক্ষন দেখা দেয় নি।”
“সুপ্তি কুল প্লিজ! মানুষের বিয়ের দশ বছর পরেও বেবি হয়।এগুলা নিয়ে আমি ভাবি না। এসব আজে বাজে কথা বাদ দিয়ে একটু বর কে যত্ন করো তো।এসছি ক্লান্ত দেখছো না।আর তোমাকে সব সময় দুষ্টু ভাবেই দেখতে চাই আমি।সাংসারিক আধ্যাতিক চিন্তা ভাবনা করতে হবে না কখনো বুঝলে টুনির মা।”
রিফাত ভাইয়া ফোন করে আমাকে বললেন পুরা ঘটনা টা।
সুপ্তি আমার জীবনের অনেক বড় অংশ।ওর মন খারাপ আমাকেও কষ্ট দেয়।মনে মনে ভাবলাম একজন বড় গাইনি ডাক্তারের সাথে কথা বলবো।সুপ্তির জীবনের কোনো অপূর্ণতা আমি থাকতে দিবো না।আমার জীবনে নিরব আসার আগে সুপ্তি ছিলো যে সব কিছুতে আমাকে সাপোর্ট করতো।স্কুলে যেতে দিতো না মা সুপ্তি আমায় পুরা ক্লাস টা ভিডিও করে এনে দেখাতো।শৈশব কেটেছে সুপ্তির সাপোর্ট এ আমার।
“আমাকে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতে দেখে নিরব বললো,কি হয়েছে ম্যাম।”
“রাগি মুডে তাকিয়ে বললাম,ম্যাম বলা হচ্ছে কেনো শুনি। ”
“বউ এখন এত বড় চাকরি করে তাকে কি বলবো শুনি।”
“ওকে যাও চাকরি ক্যান্সেল।কোনো চাকরি করবো না।ইচ্ছা করেই একটু গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম।”
“নিরব আমার দুই গাল ধরে বলে সব সময় নিরামিষ ভালো লাগে না।একটু আধটু রাগলে গাল টা টমেটোর মতো হয়ে যায় আরো সুইট লাগে দেখতে।”
“যাও কোনো কথা নেই। রাগ করেছি খুব।এই পুচকু তোর পাপ্পাকে বল, আমি রেগে আছি কোনো কথা বলবো না।”
“মিষ্টার জুনিয়র তোমার মাম্মাকে বলো তো তোমার পাপ্পা কি করলে রাগ কমবে তোমার মাম্মার।”
“তোমার পাপ্পাকে বলো রাগ আর কমবেই না।”
“এটা কিন্তু তোমার মাম্মার চালাকি।তোমার পাপ্পার আদর নেওয়ার বাহানা, সেটা বললেই তো হয়।তোমার পাপ্পা কি তোমার মাম্মাকে আদর করার সুযোগ পেলে সেটা মিস করতে পারে।”
“নিরব আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,সেদিনের সেই সরল মেয়েটা আজ ও সরল ই থেকে গিয়েছে।সরি জানপাখি আর এমন হবে না।ওইটা তো মজা করেছি।তুমি আমার জানপাখি হয়েই থাকবে সব সময়। পৃথিবীর সবার কাছে তুমি যেটাও হও না কেনো?আমার কাছে আমার বেবির আম্মু মানে আমার আদরের জানপাখিটা।”
নিরবের এই ভালবাসা টুকু পাওয়ার জন্য ই আমার এত বাহানা।।
মা,নিরব,নানা মুনতাহা আপু সবাই নিষেধ করছে রোজা ছেড়ে দিতে।কারণ ডাক্তার বলেছে আমার বেবির পজিশন খুব ভাল অবস্থায় নেই।তাছাড়া শরীর ও উইক।কিন্তু আমি একটা রোজা ও ছাড়লাম না আরো বেশী বেশী ইবাদত করলাম।কারণ যার জন্য আজ সব কিছু পেয়েছি তাকে ভুলে যেতে পারি নাহ।সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।একমাত্র আল্লাহর সাহায্য আজ আমি এখানে।তাই কোনো কিছু না ভেবেই তার ইবাদত করলাম আমি।
রমজানের মাঝামাঝিতে জীবন যুদ্ধ একটা অনুষ্টান থেকে আমার ইন্টারভিউ নিতে আসে।ওরা মানুষের জীবনের গল্প শেয়ার করে।আমার এই প্রতিষ্টিত হওয়ার পেছনে কার আবদান তারা জানতে চাইলো।আমি কিভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছি বিভিন্ন প্রশ্ন ছিলো তাদের।
“শুধু এতটুকুই বললাম আজ যা হয়েছি তার সব টুকুই আমার স্বামির অবদান।আমার স্বামি ছাড়া আমি সেদিন ও শূণ্য ছিলাম আজ ও শূণ্য।আমার সব পাওয়া আমার স্বামিকেই উৎস্বর্গ করা আমার।”
পুরো রমজান মাস কেটে গেলো।ঈদের আগের দিন হঠাত পেটে চিন চিন ব্যাথার অনুভব হলো।তখন রাত দশ টা বাজে। নিরব কে বলতেই ও দ্রুত এম্বুলেন্স ডেকে আমাকে হসপিটাল নিয়ে গেলো।আমার প্রেগন্যান্সির সময়ে প্রচুর মানসিক অশান্তি আর খাটনির ফলে শারিরীক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।ডাক্তার চেক আপ করে বলেন,পেশেন্ট এর অবস্থা খুব একটা ভাল নয় মিষ্টার নিরব।বেবির পজিশন ভাল নয়।আপনার বেবিকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।কথাটা শুনেই নিরবের মুখ টা মলিন হয়ে গেলো।এই বেবি নিয়েই আমাদের দুজনের অনেক প্লান পরিকল্পণা ছিলো।তাছাড়া কোনো বাবার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সহজ নয় যে,তার বেবি আর বাঁচবে না।নিরব ডাক্তার কে বললেন,বেবির কিছু হলে মৃথিলা কে সামলানো যাবে না ডাক্তার।এই বেবির জন্য অনেক কষ্ট করেছে মৃথিলা।রোজ তারিখ দেখেছে কবে বেবির জন্ম হবে।
‘ডাক্তার বললেন,তাহলে মৃথিলা কে বাঁচানো রিস্ক হয়ে যাবে।’
কথা টা শুনেই নিরব এর মাথাটা ঘুরে উঠলো,কি বলবে বুঝতে পারছে না।শান্ত কন্ঠে বললো,”কোনো কি রাস্তা নেই ডাক্তার।মা সন্তান দুজনকেই বাঁচানোর।”
“আমরা চেষ্টা করতে পারি শুধু। তবে আপনার কাছে কে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টার নিরব।ওয়াইফ নাকি সন্তান।”
“ডাক্তার দুজনের ভালবাসার অনূভুতি দু’রকম।কেউ কম নয় আমার জীবনে।তবে সন্তান না হলেও আমি বাঁচতে পারবো তবে মৃথিলা ছাড়া বাঁচতে পারবো না।তাই কেয়ারফুলি মৃথিলাকে দেখুন প্লিজ।”
“”ডাক্তার হেসে দিয়ে বলেন,এত টা ভালবাসেন।”
“নিরব মলিন কন্ঠে বললো,ভালবাসা টা তার থেকেই শেখা ডাক্তার।! ”
“আমাকে ওটিতে নেওয়া হলে সিজার এর আগে ডাক্তার কে বললাম একটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন ডাক্তার।”
“ডাক্তার বললো,জ্বী ম্যাডাম বলুন।আপনার চিকিৎসা করতে পারছি এটাই ভাগ্যর ব্যাপার।আপনার যেটা ইচ্ছা বলুন রিকুয়েষ্ট কেনো করবেন?”
“প্লিজ নিরব কে এখানে থাকার পারমিশন দিন।ও থাকলে আমি সব সমস্যা থেকে জয়ী হয়ে ফিরে আসবো।ও থাকলে আমি সাহস পাবো ডাক্তার।”
“আমার অনুরোধ এ ডাক্তার নিরব কে ভেতরে আসার পারমিশন দিলো।নিরবের মুখে হাসি নেই।দুঃচিন্তায় ঘেমে যাচ্ছে ওর কপাল।ঘামে লেপ্টে আছে মুখ।”
“নিরব এসে আমার হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো আমি আছি জানপাখি। তুমি একটুও ভয় পেও না।নিরব আমার হাত ধরে রাখা অবস্থায় নরমাল ডেলিভারি হলো আমার ম্যাজিকের মতো।সিজারের সব রেডি সত্ত্বেও সিজার করা লাগে নি।”
“ডেলিভারিতে এত পেইন আগে জানা ছিলো না।এত তীব্র ব্যাথা হচ্ছিলো আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।বাচ্চার কাঁন্না কানে যেতেই সব কষ্ট যেনো নিমিষেই মিলিয়ে গেলো।”
“মেয়ে হয়েছে আমার।নিরব মেয়েকে কোলে নিয়ে ভীষণ আনন্দিত।সদ্য নবজাতক মেয়ের গালে চুমু দিয়ে বললো ছোট্ট মৃথিলা।”
“নিরব কে বললাম মেয়ের নাম কি রাখবা।।!
নিরব বললো ওকে আমরা দুজনে আমাদের হিয়ার মাঝে আগলে রাখবো।আমার প্রিন্সেস এর নাম “হিয়া “রাখবো।
মা তার ছেলের সন্তান কে কোলে নিয়ে ভীষণ খুশি।একটা পরিবার বোধহয় অপূর্ণ থাকে বেবির অভাবে।একটা বেবি বোধহয় হাসি আনন্দ কয়েক হাজার গুন বাড়িয়ে দিতে পারে।
#হিয়ার_মাঝে
৫৭.
#WriterঃMousumi_Akter
কুয়াশা ভেজা সকালে শহর টায় মনে হচ্ছে কুয়াশার ধোঁয়া উড়ছে।আবছায়া দেখা যাচ্ছে সব কিছু, নিজের থেকে পাঁচ সাত মিনিট দূরের কাউকেও ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে না।ঘাসে ঘাসে শিশির বিন্দুর ফোঁটা লেগে আছে।কর্মজীবী মানুষেরা শীতের সাথে যুদ্ধ করে যে যার মতো কাজে ছুটছে।ঘড়িতে সকাল নয় টা বেজে গিয়েছে অথচ এই কড়া শীতে আমি সেটা খেয়াল ই করি নি।চোখ খুলে কোলের মাঝে হাতড়ে দেখি হিয়া নেই।বুকের মাঝে ছ্যাত করে উঠলো। হিয়া কোথায় গেলো?দ্রুত উঠে গেলাম আমি।খাটের নিচে কোথাও পড়ে গেলো কিনা উঁকিঝুকি মেরে দেখলাম কোথাও নেই।পাগলের মতো খোজাখুজি শুরু করলাম।
হঠাত বেলকুনির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম আমি।ছোট্ট লাল কম্বলে হিয়াকে জড়িয়ে শীতের সকালের মিষ্টি রোদ পোহাচ্ছে নিরব।হিয়ার মুখে মিষ্টি রোদ এসে পড়েছে, মুখটা চকচক করছে হিয়ার।ও মাত্র একটু হাসা শিখেছে।নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট গালে হাসছে।ওর বাবা মাম্মা বলে ডাকছে আর চোখ মুখের ইশারা করে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে কথা বলছে।আর হিয়া ছোট্ট গালে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।
‘এটা কি আমাল মামমাম,পাপ্পার কথায় সায় দিচ্ছে।ওলে আমার সোনাটা।’
‘নিরব নিজেই বাচ্চাদের মতো কথা বলছে আর হিয়ার গালে মুখে চুমু দিয়ে আদর করছে।’
আমার জীবনে এত বেশী সুন্দর আর মুগ্ধ করা দৃশ্য দেখি নি।জীবন কি এতটায় সুন্দর। আগে তো জানতাম না।স্বামি,সন্তান সব কিছু ঠিক থাকলে এক জীবন কেনো হাজার জীবন বাঁচতে ইচ্ছা করে।
‘আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,এইযে হিয়ার বাবা আমাকে এতটা ভয় না দিলেও পারতে।বাবা মেয়ে এখানে এসে ভাব করা হচ্ছে আর আমি ওদিকে মেয়েকে খুজে প্রেসার বেড়ে যাচ্ছিলো।’
‘নিরব আমার গাল টেনে দিয়ে বললো,এতটুকু চিন্তা যদি না করবে তাহলে কিসের মা তুমি শুনি।এটা নিয়ে আবার আমাদের বাপ বেটিকে কথা শোনাচ্ছো।মাম্মা একটু বকে দাও তো তোমার আম্মু কে।’
হিয়া হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।ও কি সত্যি কিছু বুঝছে।নাকি না বুঝেই হাসছে।
‘আমি বললাম,আমাকে বলে আসলে কি হতো শুনি। ‘
‘তুমি সারারাত ঘুম কামাই করো।মেয়েকে ৫-৭ বার উঠে দুধ খাওয়ায়।ওর প্রসাব, পায়খানা চেঞ্জ করো, এই সকালেই একটু ঘুমিয়েছো,,আবার ছুটবা অফিসে কিভাবে ডাকি বলোতো।তাই ভাবলাম আমি হিয়াকে একটু সামলায়।’
‘নিরব আমি কি আজ ও ছোট আছি।তুমি আর কত ভাববে আমাকে নিয়ে বলোতো।’
‘তোমাকে নিয়ে ভাববার জন্যই তো আমার জন্ম হয়েছে জানপাখি।তোমাকে নিয়ে না ভাবলে মেয়ে আমাকে বড় হয়ে খুব বকবে।মেয়ের শাষনে তখন কি উত্তর দিবো।মেয়ে তো বলবে পাপ্পা, আমার মাম্মা আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে একটা সাগর পাড়ি দিয়েছে আমি পেটে থেকে সব দেখেছি তুমি একটু খেয়াল তাই রাখতে পারো না মাম্মার কি উত্তর দিবো শুনি।’
‘তোমার সাথে আমি কথায় পারবো না।দাও ওকে খাইয়ে দেয়।অনেক সময় খায় নি ও।’
‘কে বলেছে ও খায় নি।আমি খাইয়ে নিয়ে এসেছি।’
‘কিভাবে খাওয়ালে।’
‘তুমি ঘুমিয়েছিলে কৌশলে।’
‘কিহ!এই তোমার লজ্জা করলো না।এইভাবে কি এগুলা হ্যা।’
‘নিরব আমার নাক টেনে দিয়ে বললো বি পজিটিভ।মেয়ের জন্য এতটুকু না করলেই নয়।ইস রে আজ ও পুচকি ই থেকে গেলে।আম্মুর নিষ্পাপ ছেলে টাকে অসভ্য বানিয়ে নিজে আজ ও অবুঝ।এই হিয়া তোর আম্মুকে আজ ও সামলাতে হয়।আমার ঘরে দুই দুইটা পিচ্চি এখন জানিস।’
পরণে কালো জিন্স,গায়ে কালো হুডি,মাথায় হুডির টুপি কি বলবো বর কে দেখে সকাল সকাল মারাত্মক একটা ক্রাশ খেয়ে গেলাম।
‘নিরব কে বললাম,মানুষ দিন দিন এত সুন্দর হচ্ছে কেনো শুনি?আমার দেখে শুধু প্রেম করতে ইচ্ছা করে।’
‘হ্যা এখন এগুলা বলবেন,আমার মনে প্রেমের তুফান তুলে নিজে পালাবেন তাইতো।আমি আর এসব ফাঁদে পড়ছি না বউ পাখি। আমাকে দেখে প্রেম পেলেই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে এক গুচ্ছ চুমু দিয়ে বলতে হবে আই লাভ ইউ।’
‘নিরব কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,আই লাভ ইউ।’
হুট করেই মা রুমের মাঝে প্রবেশ করলেন।মা আমাদের দেখে না দেখার ভান করে বললেন,মিথু অফিস যাবি না মা।রুমভরে এত কাপড় ছড়ানো কেনো শুনি।
দ্রুত স্বাাভাবিক হয়ে নিয়ে বললাম, মা কাল গোছাতে খেয়াল ছিলো না।থাকলেও ক্লান্ত ছিলাম মা।এই কাজের মেয়েটা ও দিন দিন ফাঁকি বাজ হচ্ছে খুব।
মা থাক অকে কাজ নিয়ে প্রেসার দিও না মা।ও আমাদের বাড়ি আছে তাই বলে তো আর আমরা কাজ নিয়ে প্রেসার দিতে পারি না।ওকে লেখাপড়া শিখতে হবে মা।এই নিতু এদিকে আয় তো।
-নিতু মাথা নিচু করে বললো স্যার বলুন।
–নিতু তুই আমাকে স্যার ডাকিস কেনো?
-মানুষে কইছে তোর কপাল অনেক ভালা ম্যাজিস্ট্রেট এর বাসায় কাম পাইছোস।আর উনাকে স্যার ডাকতে হয়।অনেক সম্মান উনার।তাই মোর আব্বায় কইছে ভুল ভাল কাম করার লাইগা যদি আমারে বাইর কইরা দেন তাইলে আমারে মাইরা ফেলবো।
-শোন আমি তোর বড় বোন নিতু।আমাকে আপু ডাকবি।আর এমন ভাষায় কথা বলবি না।এমন কিছু করবি না যা দেখলে মানুষ হাসাহাসি করে।তুই শুধু লেখাপড়া পড়বি আর হিয়ার সাথে খেলা করবি ব্যাস।আর কিছুই না।শোন নিতু আমাকে দেখ,তোর থেকেও খারাপ জায়গা থেকে উঠে এসেছি আমি।তোকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে নিতু।নিতুর মা মারা যাওয়ার পর সৎ মায়ের অত্যাচারে আমার বাসায় রেখে গিয়েছে।কিন্তু আমি ওকে কাজের মেয়ের মতো করে দেখি না।বাসায় ওকে দিয়ে তেমন কোনো কাজ ও করায় না।
–এখন হিয়ার বয়স ২ মাস চলছে।হসপিটাল থেকে আসার পরে সবাই এসছিলো বাসায়।হিয়া দেখে সবাই অনেক উপহার সামগ্রী দিয়ে গেছিলো।এত উপহার যা রাখার জন্য আমার আলাদা একটা রুমে প্রয়োজন।।
মেয়ে নিয়ে কিছুই করতে পারতাম না যদি আমার শ্বাশুড়ি মা না থাকতেন।আমি যেখানে যায় মেয়েকে রাখার জন্য সেও যায়।আমার সুখি পরিবারে আজ সুখের অভাব নেই।
________________________________
কেটে গেছে চার টা বছর———-
বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই আজ।সংসার জীবনের ব্যাস্ততায় যে যার মতো বিজি হয়ে পড়েছে।এটাই নিয়ম মন দিয়ে সংসার করতে গেলে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে যায় মানুষের জীবনের।মনের দিক দিয়ে চেঞ্জ না হলেও ব্যাস্ততা মানুষকে সময় দেয় না।আমার কর্মজীবনের বিশাল দায়িত্ব আমার কাঁধে।আমি সততার সাথে সেটা পালন করি।নিরব আবার বিজনেস শুরু করেছে,এখন ওর বিজনেস এ অনেক উন্নতি।নতুন ফ্ল্যাট কিনেছি নিরবের নামে।যা কিছু হারিয়েছিলাম সব আবার ফিরে পেয়েছি।
-রুমময় পায়চারী করে বেড়াচ্ছে হিয়া।
-হিয়া এখানে এসো সোনা ওভাবে ছুটলে পড়ে যাবা তো।
-পোলবো না মাম্মা।
-না সোনা পড়ে যাবা, ফ্লোরে পড়লে ব্যাথা পাবা খুব।
-না মাম্মা পোলবো না,,তুমি খেলবে আমার সাথে।
-অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো রেখে ল্যাপটপ টা অফ রেখে বললাম হ্যাঁ খেলবো।
-“ছত্তি”
-তোমার মাম্মা কি মিথ্যা বলে কখনো।
-“আই লাভ ইউ মাম্মা।”
-আই লাভ ইউ টু সোনা।কিন্তু আই লাভ ইউ বলা কিভাবে শিখলে হিয়া সোনা।
-পাপ্পা ই তো বলে সব সময় তোমাকে আই লাভ ইউ জানপাখি।
-মেয়ের কথা শুনে ভড়কে গেলাম আমি।না মানে এই মেয়ে এত পাকা হয়েছে যেটা ভাষায় প্রকাশ এর মতো নয়।ওর বাবার কপি হয়েছে মেয়ে।
মেয়েকে নিয়ে বাগানে ঘুরতে গেলাম বিকালে আমি,নিতু আর মা। নিরব সুন্দর একটা ফুলের বাগান বানিয়েছে।এখানে আসলেই মন ভাল হয়ে যায়।হিয়া দিনে একশ বার বাগানে আসবে আর ফুল ছিড়বে।ওর জন্য গাছে একটা কড়ি ও থাকে না।সারাদিন দুষ্টুমি করে।ল্যাপটপ এ পানি ফেলে দেয়,বিছানায় পানি ফেলে দেয়।আলনার কাপড় সব টেনে নিচে ফেলে দেয় এগুলায় ওর কাজ।নিজের স্যান্ডেল রেখে আমাদের গুলা পায়ে দিয়ে ঘুরবে।রান্নাঘরে গিয়ে সব জিনিস ছড়াবে আর পাকা পাকা কথা বলবে।ওর বাবা মেয়ের চুল রেখে দিয়েছে। আমার দুষ্টু হিয়াকে আরো মিষ্টি লাগে দেখতে।
_______________________________
নিরব মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলো।হঠাত খেয়াল হলো নিরবের উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার গলায় পড়ছে।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি ডিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট ওর দুষ্টমি দেখা যাচ্ছে।গলায় নাক,মুখ ডুবিয়ে আমাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
“আস্তে করে বললাম কি হয়েছে”
নিরব নেশাক্ত কন্ঠে বললো,”জেগে আছো”
“এমন করলে না জেগে থাকা যায়।”
“তাহলে জেগে থাকো আজকে ঘুমোতে হবে না।”
“দুষ্টুমি করো না ঘুমোও তো।”
“নিরব নেশাক্ত কন্ঠে বললো,আমি বুড়ো হয়ে গিয়েছি বলে কি আর ভালবাসতে মন চাই না তোমার।এত অবহেলা করছো কেনো বউপাখি।”
কথা টা শুনেই আমার কেঁদে দেওয়ার উপক্রম।
“নিরবকে আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম,,কোথায় অবহেলা করলাম বলোতো।সারাদিন ক্লান্ত থাকো তাই ঘুমোতে বললাম।”
“তুমি কেনো বুঝো না জানপাখি,,তুমি ছাড়া আমি অসহায়, ভীষণ অসহায়।সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় তোমাকে কাছে পেলে।তোমার একটু ভালবাসা আমাকে সব ভুলিয়ে দেয়।”
“আমি তো কাছেই আছি নিরব।সারাজীবন ই থাকবো।”
“আর একটু কাছে এসো বউ ভীষণ মিস করছি তোমায়।জানো মৃথিলা আমার মনে হয় সেই ছোট্ট মৃথিলায় রয়েছো তুমি।মনে হয় গতকাল ই বিয়ে করেছি আমি।তুমি আমার নতুন বউ।তোমাকে ভালবাসার স্বাদ দিনে দিনে বেড়েই চলছে।নিরব নেশাক্ত ভাবে চুম্বন করছিলো আর আমি ওর সঙ্গ দিলাম।একটু খানি আদর,ভালবাসা পেলেই মানুষ টা ভীষণ খুশি।মধুচন্দ্রিমাময় আরেক টা রাত কেটে গেলো”
চলবে,,
(