হৃদপিণ্ড পর্ব ১৬+১৭

#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-১৬

সেদিনই নদী এসে বাড়িতে ঝড় তুলে ফেলে।
ইমন একা স্কুল যায় কেনো? আমাদের বাড়ির ছেলে গাড়ি ছাড়া বের হয় কেনো?
একরামুল কে জোর গলায় বলে ইমনের জন্য হলেও তোকে দ্বিতীয় বার বিয়ের কথা ভাবতে হবে।
আমরা সবাই চাই ইমন মা,বাবার ভালোবাসায়, মা বাবার ছায়ায় বড় হয়ে ওঠুক।
নদীর কথা শুনে আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নেই দ্বিতীয় বার বিয়ে করনোর প্রথমে একরা রাজি না হলেও ইমনের কথা ভেবে পরে রাজি হয়।
একদম গরীব পরিবার থেকে সাজিয়াকে নিয়ে আসি আমরা। যাতে সে বড় পরিবারে এসে কোন প্রকার হিংসা,অহংকারে বশীভূত না হয়।
সাজিয়া এ বাড়ি আসার পর প্রথম কয়েক বছর বেশ ভালোই ছিলো। ইমনও তাকে নিজের মায়ের চোখে দেখতো। সব সময় মা মা করতো বাবার থেকে মায়ের দিকেই ওর টান বেশী ছিলো।
সব ভালোই চলছিলো কিন্তু কখনো ভাবতে পারিনি যে ভয়ে সাজিয়াকে এ বাড়ি বউ করে নিয়ে এলাম সেই ভয় টাই আমাদের চেপে ধরবে।
সাজিয়ার তখন তিনমাস চলছে। বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে সে কেমন পাল্টে যায়। মেজাজ দেখানো,খিটখিটে স্বভাব ইমনকে ধমকা,ধমকি চলতেই থাকতো। আমরা প্রথমে ব্যাপারটা স্বাভাবিক নিলেও পরে ধীরে ধীরে বুঝতে পারি সাজিয়া সত্যি বদলে যাচ্ছে। আসলে বদলে যাচ্ছে না বরং ওর ভিতরের সত্তা টা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।
ভুল টা আমাদেরই হয়েছিলো আমরা ভেবেছিলাম দারিদ্র্য পরিবারের মেয়ে নিয়ে আসলে হয়তো সে আমাদের মেনে চলবে। বিলাসীতা পাবে আগের জীবন থেকে অনেক ভালো জীবন কাটাতে পারবে। এগুলোর বিনিময়ে হলেও এ পরিবারটা কে মন থেকে ভালোবাসবে ইমনকে নিজের করে নিবে।
কিন্তু ভুল ছিলাম আসলে ধনী,গরিব দিয়ে মানুষের মন বিচার করাটাই ভুল হয়েছে।
ধনী পরিবারের অনেক ছেলে, মেয়ে আছে যারা মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো হয়। আবার অনেক ছেলে, মেয়ে আছে যারা উচ্চবিত্ত হলেও মনটা নিম্নই থেকে যায়। গরীব পরিবারের খাঁটি সোনা জন্মায় আবার গরীব পরিবারে তামাও জন্মায়।
“সমাজে এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা উপরে ওঠতে ওঠতে এতোটাই উপরে ওঠে যায় যে নিচের দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করে না। কিন্তু তাদের একবার নিচে চেয়ে ভাবা উচিত একবার ফসকে পড়ে গেলেই শেষ ”
আমাদের আশে পাশে এমন অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ রয়েছে যাদের অভাব,অনটন ভোগ করতে করতে মনটাও একদম নিচু হয়ে গেছে আর এরা যখন হুট করে বড় কিছু পেয়ে যায় তখন এদের মাঝে অহংকার জন্মাতে থাকে। পিছনের দিনগুলোর কথা একবারো ভাবে না। বরং কিভাবে আরো পাবে, আরো চাই, আরো চাই করে করে মনটা বিষিয়ে তুলে।
সাজিয়ারও হয়েছিলো সেই অবস্থা এখন পর্যন্তও সে সেই নীতিই মেনে চলে আসছে। কিন্তু মন থেকে ওঠে গেছে সকলের। আসলে আমরা যদি বাইরে থেকে মানুষ টাকে চিনতে পারতাম তাহলে হয়তো এতো বড় ভুল কেউ করতাম না।
“দুনিয়াটা যেমন বিচিএ দুনিয়ার মানুষ গুলো তাঁর থেকেও বেশী বিচিএ ”
মানুষ গুলোর ভিতরে ঢুকে তো আর তাঁদের চিনতে পারিনা সব সময়। একরাও পারেনি না প্রথম বার পেরেছে না দ্বিতীয় বার তবুও মানিয়ে নিয়ে সংসার করে যাচ্ছে কি করবে বার বার সংসার ভাঙার মনটাও ওর আর নেই।
ইভান জন্মানোর পর থেকে সাজিয়ার নিত্য নতুন রূপ দেখতে থাকি সকলে মিলে। ততোদিনে ইমনও বুঝতে শিখে যায় সবটা। যেই ইমন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে বলে আমরা সাজিয়াকে নিয়ে এলাম এ বাড়িতে সেই ইমনই সাজিয়ার জন্য সব কিছু থেকে নিজেকে আবারো গুটিয়ে নিলো।
আপন,পর, কাছের দূরের বুঝতে শিখে গেলো।
নিজেকে নিজের নিয়মে তৈরী করে ফেললো।
আর তাঁর প্রথম ধাপ ছিলো বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া।
আমাকে আর একরা কে পড়াশোনার দোহাই দিয়ে দূরে থাকা শুরু করলো। ধীরে ধীরে বাড়ি আসাও বাদ দিয়ে দিলো। নিজের ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি নিজের কর্মস্থল সহ নিজের বাসস্থান নিজেই খুঁজে বের করলো। এই যে বাড়িটায় আমি আর তুই আছি একসময় সেটা ছিলো টিনের ইমন তাঁর নিজের রোজগারে নিজের সামর্থ্যে দিয়েছিলো সেই ছোট্ট ঘরটা। জায়গাটা ওর দাদুরই ছিলো,,,
নিজেই নিজের রাজ্য তৈরী করতে থাকলো ধীরে ধীরে।
আলাদা জগৎ, আলাদা রাজ্য নিয়ে বেশ ভালোই ছিলো। কিন্তু তাঁর এই সাদামাটা জীবনে রঙের ছিটে দিতে চলে এলো রিতিশা নামক সেই ভয়াবহ নারীটা।
ওই যে বললাম মানুষ চেনা বড়ই কঠিন।
“মানুষ শুধু মানুষ না।
নাটক সিনেমায় কৃএিম মুখোশ পড়ে অভিনয় করে মানুষ।
আর বাস্তবে চামড়ার মুখোশ পড়ে ছলনা করে বেড়ায়”

সেদিন ছিলো ইমনের অফিস জয়েন করার প্রথম দিন। এত বড় ইন্ডাস্ট্রির মালিকের প্রথম সন্তান ছিলো ইমন। সে সময় দায়িত্ব নেওয়ার মতো ওই ছিলো। শুধু সে সময় না ইভান, অভ্র বড় হলেও ইমনের মতো করে সবটা ওরা এখনো সামলাতে পারবে না। আমার ছোট ছেলেটা তো কখনো এই সম্পত্তি ব্যবসার দিকে নজর দেয় নি। সে আজীবন বার মুখী হয়েই থেকেছে। একরার পর ইমনই সেই ব্যাক্তি যে কিনা আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ধনগুলোর যথার্থ মর্যাদা দিয়েছে। নিজের সবটা দিয়ে রক্ষা করেছে। বাপ,দাদার থেকেও বেশী সফলতা লাভ করেছে সে। আর তাঁর এই অল্প সময়ে এতো বড় সাফল্য দেখে সবার নজর পড়ে যায় তাঁর দিকে।

সাজিয়ার বোনের মেয়ে সেদিন প্রথম আমাদের বাড়িতে আসে। নাম রিতিশা,,
বাবা,মা ইংল্যান্ড থাকে সেও তাদের সাথে থাকতো।
সেখান থেকেই খবড় পাঠায় দেশে ফিরবে তাঁর বাবা কয়েক বছর পর ফিরবে। সাজিয়াও জানিয়ে দেয় কোন সমস্যা নেই রিতিশা আমার কাছেই থাকবে।
লম্বা,চওড়া, ফর্সা গড়নের মেয়ে, আধুনিকতার ছোঁয়া চালচলন,কথাবার্তায় স্পষ্ট ,,
হঠাৎ একরা এসে বললো মা রিতিশা মেয়ে টা কে তোমার কেমন লাগে।
আমি বললাম কেনো কেমন লাগার কি হলো আবার।

আসলে আমি ইমনের বিয়ের ব্যাপারে ভাবছিলাম।
এতে যদি ছেলেটা এ বাড়ি আসে বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার শুরু করুক। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেয়েটার চেহেরা ভালো কিন্তু চালচলন তো ঠিক লাগেনা।
আরে মা মর্ডান মেয়ে দেশের বাইরে থাকতো।
ইমনের জন্য তো এমন মেয়েই পারফেক্ট। ইমনের ঠিক পছন্দ হবে ওকে। এছাড়া মেয়েটা উচ্চশিক্ষিত ইমনের সাথে বেশ মিলবে। আর মেয়েটা তো কাজের জন্যই এদেশে এসেছে ইমনের পার্সোনাল এসিস্টেন্ট হিসেবে আমাদের অফিস জয়েন করিয়ে দেই দুজন দুজনকে চিনবে, জানবে তারপর বিয়ে।

দাদু ভাইয়ের জন্য যা ভালো হয় তাই কর।
দাদু ভাই সুখে থাকলেই আমি সুখি।

আচ্ছা। দেখো সবটা ভালো হবে,,
অফিসে মিটিং শেষ করে সেদিন ইমন ও বাড়ি ফিরে।
ডিনারের সময় একরামুল তাঁর সিদ্ধান্ত জানায়।
ইমন চুপচাপ সব শুনে কিছু বলে না তারপর উপরে ওঠে যায়।
ছেলেটা তো এমনই তাই কেউ কিছু মনে করেনি।
কিন্তু রিতিশা যেনো এক নজর দেখেই পাগল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে কেমন গিলে খাচ্ছিলো ইমনকে। তা কারো নজর এড়ালো না । সবাই বেশ খুশি হলো সব থেকে বেশী খুশি হলো সাজিয়া।

রাত প্রায় এগারোটা বাজে, ইমন বেলকুনিতে বসে কফি খাচ্ছিলো আর অফিসের কিছু কাগজপএ ঘাটাঘাটি করছিলো এমন সময় রুমে ঢুকে রিতিশা।
ইমনের সামনের চেয়ারে বসতেই ইমন এক নজর দেখে চোখ ফিরিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।
রিতিশা বললো হায় আমি রিতিশা,,
ইমন হালকা কেশে বললো সো,,
রিতিশা বেশ অপমান বোধ করলো।
You are ignoring me??
ইমন বললো No,,I don’t know you, so there is no question of neglect।
রিতিশা বাকা হেসে বললো আমাকে চিনতে হলে জানতে হলে অবশ্যই পরিচিত হতে হবে।
আমি রিতিশা। আমার বাবার ইংল্যান্ডে বাড়ি আছে,নিজের বিজনেস আছে এদেশেও আছে।
আমি পড়াশোনা শেষ করে এদেশে এসেছি নিজের করিয়ারের জন্য।
ইমন বাঁকা হাসলো,,,
কাগজগুলো গুছিয়ে নিয়ে ওঠে পড়লো।
রিতিশাও ওঠে দাঁড়ালো,, আশ্চর্য তো এতো সুন্দর সাজানো গোছানো আইটেম রয়েছে সামনে অথচ কোন নজরই নেই এদিকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তোমার মতো পার্সোনালিটির মানুষ কে তো ছাড়ার পাএী আমি নই মি.ইমন চৌধুরী।

ইমন রুমে যেতেই রিতিশা ইমনের বিছানায় বসলো।
সাথে সাথে ইমন বেশ জোরে ধমকে ওঠলো।
রিতিশা ভয় পেয়ে ওঠে দাঁড়ালো।

সভ্যতা, ভদ্রতা কোন কিছুই নেই দেখছি।
কারো রুমে ঢুকার আগে তাঁর থেকে পারমিশন নিতে হয় জানেন না। কারো সাথে ফার্স্ট মিট করলে তাঁকে তুমি বলে সম্বোধন করাটা কোন ধরনের ভদ্রতার মধ্যে পড়ে। আর এতো রাতে একজন ভিন্ন পুরুষের রুমে এসব ড্রেসআপে আসতে লজ্জা করে না।
এসব ড্রেসআপ পড়ে ভিন্ন কারো সামনে গেলে এদেশের ভাষায় কি বলে জানেন তো অর্ধনগ্ন হয়ে আসা।
বলেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নিতেই রিতিশা সামনে এসে দাঁড়ালো।
ইউ নো হোয়াট,, তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। হবু স্বামীর ঘরে আসতে আমি অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনা। হবু স্বামীকে আপনি বলে পর করে দিতেও চাইনা।
I really like your personality,,
I just want you,,
বরাবরই এদেশের প্রতি অনীহা ছিলো তবে এদেশে যে এমন একটা জিনিস আছে সত্যি জানা ছিলো না।
আগে জানলে আরো আগে চলে আসতাম।
বলেই ইমনের ফুল বডিতে চোখ বুলালো।
ইমন বললো ইউ নো হোয়াট ইমন চৌধুরীর বউ হওয়া এতোটা সহজ নয়,,
আর আপনার বিহেইভ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি কতো বড় মাপের বেয়াদব, আর বড় মাপের ফাজিল। সো এমন বেয়াদব,ফাজিল লাজ,লজ্জাহীন নারী ইমন চৌধুরীর মনে ঢুকতে পারবে না।
,
আমি বেয়াদব, ফাজিল,লাজ লজ্জাহীন এতো বড় সাহস ইমন চৌধুরীর আমাকে,এই রিতিশা কে অপমান করে। যার জন্য কিনা এতো এতো ছেলেরা পাগল। এতো এতো ছেলেকে ভিনদেশে মুরগী বানিয়েছি আর এই ইমন চৌধুরী কিনা আমাকে অপমান করে দিলো। আমার রূপ দেখে সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকলো। বলেই রাগে ফুঁসতে শুরু করলো।
সাজিয়া বেগম বললেন মামনি শান্ত হও। শান্ত হও মামনি একটা বার ইমনকে পটিয়ে বিয়েটা করে ফেলো। তারপর লাটাই তোমার হাতে বুঝলা।

কি করে পটাবো খালামুনি। আমার দিকে একটা বার চেয়ে দেখেছে,,,
একটা মানুষ যদি নাই তাকায় তাহলে তাকে কি করে কব্জা করবো। পুরুষ মানুষ কে তো রূপের আগুনেই জ্বালাতে পুরাতে হয়, কিন্তু এই পুরুষ তো সেই রূপ চেয়েও দেখছে না।
সাজিয়া বেগম বললেন দেখাতে হবে।
পুরুষ মানুষ ঘায়েল করার মন্ত্র জানতে হবে।
যতোই সাধু সাজুক না কেনো যখন তোর রূপ,যৌবন ওকে সমর্পণ করতে চাইবি ও কোনভাবেই নিজেকে আটকাতে পারবে না। মর্ডান মেয়ে তুই আশা করি তোকে বোঝাতে হবে না সবটা।

সাজিয়া সেদিন এসে বলে মা আপনার নাতি কে বোঝান। রিতিশা কিন্তু ওকে খুব পছন্দ করেছে। সে ইমনের সাথে সারাজীবন কাটাতে চায়। যেভাবেই হোক ইমনকে সে পেতে চায়। খুব মনে ধরেছে তাঁর ।
এই দেখুন না ইমনের জন্য মর্ডান ড্রেস ছেড়ে সেলোয়ার পড়া শুরু করেছে। ইমন যেভাবে চায়,যা পছন্দ করে সারাক্ষন আমার থেকে তাই তাই শুনে নিয়ে সেসবই করার চেষ্টা করছে।

আমি সাজিয়ার কথা আর রিতিশার আচরন দেখে ইমনকে সেদিন বোঝাই। আমার কসম ও দেই যে তুমি রিতিশাকে বিয়ে করো দাদু ভাই এটাই শেষ ইচ্ছা আমার।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শুধু। আমি জানতাম ইমন যদি এই পৃথিবীতে কারো কথা শুনে কারো কথা রাখে সেটা হলো আমি। ঠিক তাই ই ঘটলো।
ইমন রাজিও হয়ে গেলো।
আর বললো আপাতত তিনামসের আগে সে বিয়ে করতে পারবে না। তবে রিতিশা চাইলে অফিস জয়েন করতে পারে।
রিতিশা অফিস জয়েন করলো। ইমনের মন জয় করার জন্য স্বভাব টাও বেশ পালটে গেলো।
সবসময় ইমনের সাথে সাথে থাকার চেষ্টা গায়ে গা ঘেষে থাকাটা ওর নিত্যদিনের স্বভাব ছিলো।
ইমন বিরক্ত হলেও এই মেয়েকে বিয়ে করবে ভেবেই মানিয়ে নিতে শুরু করে।
রাতের আকাশে তাঁরা রা ওকি দিচ্ছে,,, জ্বকজ্বকে আকাশের দিকে চেয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে ইমন।
এমন সময় রিতিশা গিয়ে পাশে দাঁড়ায় ।
ইমন সিগারেটের ধোঁয়া রিতিশার দিকে ছাড়তেই রিতিশা কাশতো শুরু করে, চোখ, মুখ লাল হয়ে আসে তাঁর । ইমনের ওপর চেঁচিয়ে ওঠে ইমন সিগারেট টা ফেলে পায়ে পিষে চলে যেতে নিতেই রিতিশা হাত আটকে ধরে,,,
কেমন পুরুষ তুমি, একটা মেয়েকে এই অবস্থায় ফেলে যাচ্ছো হবু বউ তোমার আমি।একটু আলাদা সময় আমরা কাটাতেই পারি।আমাদের সাথে শুধু কাজের সম্পর্ক নয় আমাদের মধ্যে একটা বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরী হতে যাচ্ছে ।
ইমন চুপ রইলো রিতিশা ইমনের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো আই লাভ ইউ সো মাচ।
ডু ইউ লাভ মি???

ইমন হাতটা ছাড়াতে যেতেই রিতিশা হাতটা আরো শক্ত করে চেপে বললো মি.ইমন চৌধুরী আজ তোমায় ছাড়ছি না। বলো ডু ইউ লাভ মি??
ইমন বললো নো,,,
রিতিশা ফুঁসে ওঠলো প্রবলেমটা কি। আমাকে ভালোবাসতে সমস্যা কোথায়, যথেষ্ট সুন্দরী আমি?
কি নেই আমার তোমার সাথে খাপে খাপ সব ঠিক আছে তো তোমার এই বিহেইভের মানে কি।
ইমন কিছু বললো না বড্ড অস্বস্তি তে ভুগছে সে।
কেনো জানি মেয়েটার স্পর্শ বড্ড বিশ্রি লাগছে তাঁর।
কিন্তু এমনটা তো হওয়া উচিত নয়।
যার সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তাঁর স্পর্শ কেনো এমন লাগবে।
রিতিশা হঠাৎ ই ইমনকে জরিয়ে ধরলো।
ইমনের বিরক্ত লাগলেও নিজেকে মানানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু নিজে থেকে ধরলো না।
রিতিশা চোখ বুজে ইমনের বুকে রইলো বেশ কিছু সময়।
সেদিনটাই ছিলো ইমনের কাছে যাওয়ার প্রথম ধাপ।
,
সেদিন রাতে আমরা বাড়ি কেউ ছিলাম না। ইমন ছিলো রিতিশা কে কখন সাজিয়া পাঠিয়ে দেয় আমরা কেউ জানতাম না।
ইমন নিজের রুমে ঘুমাচ্ছিলো এমন সময় রিতিশা রুমে গিয়ে ইমনের বুকে মাথা রেখে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে শুয়ে পড়ে।
,
বুকের ভিতর টা ধক করে ওঠলো মুসকানের চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
নিজেকে শক্ত রেখে বসে রইলো।
দাদী মুসকানের হাতটা চেপে ধরে চোখ বুজে ভরসা দিলো।
,
ইমনের ঘুম আলগা হতেই রিতিশা ইমনকে আরো শক্ত করে জরিয়ে নিলো মুখ ওঠিয়ে ইমনের ঘাড়ে ঠোঁট ঘষতে লাগলো। ইমন এক ধাক্কায় সরিয়ে বললো হাউ ডেয়ার ইউ,,,
রিতিশা তাঁর শরীরের কাপড় ঠিক করতে করতে বললো এমন করছো কেনো জান,,
সারারাত এতো আদর করে এখন দূরে ঠেলে দিচ্ছো,,,

হোয়াট!
আর ইউ মেড??
রিতিশা এক ঢোক গিলে ইমনের কাছে গিয়ে ইমনকে জরিয়ে বললো জান এতো সুখ আমি কোন দিনও ভুলবো না বিশ্বাস করো।

ইমন এক ঝটকায় ছাড়িয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো হেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে কি সব বলছো।
রিতিশা আরেক ঢোক গিলে বললো কি বলছি মানে তোমার শরীরে আর আমার শরীরে একবার চেয়ে দেখো তাহলেই বুঝবে সবটা।
ইমন থমকে যায় নিজের দিকে একবার রিতিশার দিকে একবার তাকায়।
শার্টে লিপস্টিকের দাগ,মেয়েলি স্মেল, রিতিশার পড়নে নাইট ড্রেস চেহেরায় অন্যরকম ছাপ, ঘারের দিকে ঠোঁটের দিকে অস্বাভাবিক দাগ স্পষ্ট।
#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-১৭

দিলিপ খন্দকার এবং তাহিয়া বেগম এর সামনে বসে আছে ইমন।
তাহিয়া বেগম কান্না করে দিবে প্রায়,,,
ইমন বললো কাকি মা, কাকা চিন্তা করবেন না।
দিহান আসুক ওর সাথে আমি কথা বলবো। আশা করছি ভালো কিছুই হবে।
তাহিয়া বললো বাবা ইমন তোমাকে আমি যতোটা ভরসা করি অন্যকাউকে ততোটা করিনা, দিহানকেও আমি সেই ভরসা করিনা যে ভরসা তোমাকে করি।
দিহানের বাবার এখন বয়স হয়েছে একমাএ ছেলে যখন দেশ ছেড়েছে তখন থেকেই মানুষ টা যেনো শেষ হয়ে যাচ্ছে। রিটায়ার করার পর থেকেই নানারকম রোগ বেঁধেছে শরীরে কতোগুলো বছর ধরে ছেলেটা দেশ ছাড়া ফোনে যোগাযোগ অবদি রাখে না। সেদিন তিন্নি কে ফোন করে শুধু আসার কথাটা জানালো। তাই শুনে তোমার কাকা এতো খুশি সাথে সাথে বললো দিহানের মা ইমনকে একবার খবড় দাও।
দিলিপ বললেন ইমন আমি চাই তোমার বন্ধু একটা সুন্দর, সুগঠিত জীবন উপভোগ করুক।
শুধু দিহান নয় আমি চাই তুমিও এবার সংসারমুখী হও। আমি চাই মরার আগে তোমাদের দুজনের সুখের একটা সংসার দেখে যেতে।
ইমন হালকা কেশে কাকা দিহান আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ওর জন্য আমি সর্বোচ্চ ভালোটাই চেষ্টা করবো।
তবে হে আশা করি দিহান যদি পজেটিভ সিদ্ধান্তে আসে আপনারা কোনভাবে আর কোন কিছু নিয়ে আপত্তি করবেন না।
ইমনের কথার অর্থ দিলিপ বুঝতে না পারলেও তাহিয়া ঠিক বুঝতে পারলো সাথে সাথেই বলে ফেললো আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।
কতো বড় ভুল করেছি আমরা তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছি আর কোন ভুল করবো না। তোমার কাকাও আর কোন আপত্তি করবে না আশা করি।
নাই মা চেয়ে কানা মা অনেক ভালো ।
আমরা শুধু চাই ছেলেটা বউ, বাচ্চা নিয়ে সংসার করুক। এই ফাঁকা বাড়িটা খুশিতে হৈ হট্রগোলে ভরে ওঠুক।
ইমন মৃদু হাসলো।
–তিন্নি কোথায়,,,
–কলেজে বাবা।
–ওহ কোন কলেজে পড়ছে,,
তাহিয়া কলেজের নাম বলতেই ইমন ভাবলো মুসকানকেও তো কলেজ ভর্তি করাতে হবে।
তিন্নির সাথে একি কলেজে ভর্তি করানো হলেই ভালো হবে যেহেতু গার্লস কলেজ কোন চিন্তা নেই। ইয়ানা বয়েস কলেজে পড়ে তাই ইমন তিন্নি যে কলেজে পড়ে সেখানে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেললো।
তাহিয়া বললো তা বাবা তুমি দিহানের টা ভাবার পাশাপাশি নিজের টা ভাবলেও তো পারো।
নাকি আমি আর তোমার কাকা মিলে মেয়ে দেখবো।

ইমন হকচকিয়ে গেলো।
মেয়ে দেখতে হবে না কাকি। বরং আপনাদের সামনেই আমার মুগ্ধময়ীকে একদিন হাজির করবো।

–কি হলো, দেখো বাবা অতীত টা সবার ভালো হয় না।
তাই বলে অতীতকে ঘিরে সারাজীবন বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও বোকামি। দিহান আর তুমি আমার কাছে আলাদা নয়, দিহান যেমন আমার সন্তান তুমিও আমার আরেক সন্তান। তাই আমি শুধু দিহানের কথা ভাববো আর তোমার টা ভাববো না এটা হতে পারে না।

–ইনশাআল্লাহ কাকি আপনার দুই ছেলের থেকে যা যা আশা করছেন সব এবার পাবেন।

দিলিপ বললো তুমি কি গল্পই করবে নাকি ছেলেটাকে খেতে দিবে এতোদিন পর ছেলেটা বাড়ি এসেছে কতোরকমের রান্না করেছো সেই ভোরে ওঠে। খেতে দাও আমারো খিদে পেয়েছে ভীষন।
তাহিয়া হাসতে হাসতে ওঠে দাঁড়ালো।
–খেতে তো দিবোই আমি জানিতো আমার এই ছেলেটা সকালে না খেয়েই বেরিয়েছে। সেই ছোটবেলার অভ্যেস কি ভুলতে পারে।
যখনি এ বাড়ি আসার জন্য খবড় পাঠাতাম দেখতাম সকাল সকাল এসে পড়েছে। আসবে নাই বা কেনো আমাদের যে যোগসূত্র রয়েছে আত্মিক যোগসূএ।

ইমন মৃদু হাসলো।
,
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি ওঠে গেছে মুসকানের।
দাদী বললো তুই যদি এভাবে কাঁদিস সব টা কিভাবে শুনবি। সব টা শুনে তারপর যতো কাঁদার কাঁদিস আমি নিষেধ করবো না এমনও হতে পারে সবটা শুনে তুই নিজেই ইমনকে আপন করে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যাবি।

সেদিন ওই ঘটনার পর ইমন বেশ বড় সড় ঝটকা খায়। সেই সাথে ওর মনের ভিতর সন্দেহ তৈরী হয় রিতিশা কে নিয়ে। নিজের ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিলো ওর যে রিতিশা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা দোষ চাপাচ্ছে। হতে পারে এটা ইমনকে বিয়ে করার জন্য ওর কোন চাল বা হতে পারে অন্য কোন রহস্য।
সবাই মিলে সকালের নাস্তা করতে বসেছি। রিতিশাও ছিলো খাওয়ার মাঝ পথে হঠাৎ রিতিশা ওঠে দৌড়ে বেসিনে চলো যায়। বমি হয় অনেক আর এটা যে স্বাভাবিক ছিলোনা তা অন্তত আমি হারে হারে টের পাই। ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করি কিগো মেয়ে সব ঠিকঠাক তো,,,
রিতিশা লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে যায়,যাওয়ার আগে ইমনের দিকে কেমন যেনো এক চাহনীতে তাকায়।
ইমন সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো খেয়ে চলে যায়।
সাজিয়া মুচকি হাসে,,,
–বৌ মা হাসছো কেনো এইভাবে।
–মা আপনার নাতী তো এমন ভান করে যে ভাঁজা মাছ টা ওলটে খেতে জানে না। অথচ আমার বোন ঝি কে অনেক আগেই সে নিজের করে নিয়েছে।
সবাই জানাজানি হওয়ার আগে বিয়েটা পড়িয়ে দিলেই ভালো হবে। নয়তো আপনার নাতীর গায়ে কালি পড়বে মা। তারাতারি বিয়ের বন্দবস্ত করুন।
আপনার ছেলেকে আমি এখুনি গিয়ে সবটা বলছি।

সাজিয়ার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
এক ধমক দিয়ে বলি বৌ মা মুখ সামলে কথা বলো।

–মুখ সামলে কথা মানে, মেয়েদের শরীর দেখলে তো আপনার নাতীর হুশ থাকে না। বাড়াবাড়ি না করে বিয়ের বন্দবস্ত করুন নয়তো ফল ভালো হবে না। মিডিয়ার কানে এসব কথা গেলে ভাবতে পারছেন কি হবে। রিতিশা কিন্তু হেরে যাওয়ার মেয়ে নয়। ওর অধিকার ওকে না দিলে ওর বাচ্চার দায়িত্ব না নিলে ধ্বংস লীলা শুরু করবে এই বলে দিলাম।

বাড়িতে শুরু হয়ে গেলো বড়সড় ঝামেলা।
ইমন ক্ষেপে গিয়ে রিতিশার গালে কয়েক থাপ্পড় দিতেই সাজিয়া তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে থ্রেট দেওয়া শুরু করে মিডিয়ার লোকের কাছে সব প্রকাশ করবে যদি ইমন রিতিশা কে বিয়ে না করে।
তা শুনে একরা ঘাবড়ে গেলেও ইমন শক্ত থাকে।
একরা ইমনকে হাতজোর করে বলে বাবা বিয়েটা মেনে নে তোর সন্তানের জন্য হলেও মেনে নে। নিজের বংশধর কে অন্তত আমি অস্বীকার করতে পারবো না।

–ব্যাস বাবা ব্যাস, আর একটা কথাও না।
বিয়ে করতে তো আমি রাজি হয়েই গিয়েছিলাম। এই বিয়েটা আমি করেও নিতাম। কিন্তু এই সব নাটক এর কি প্রয়োজন পড়লো তা তো আমাকে জানতেই হবে। আর রিতিশাকে বিয়ে মাই ফুট,,,
এইরকম একজন ক্যারেকটার লেস মেয়ে কে অন্তত আমি বিয়ে করবো না।

রিতিশা, সাজিয়া ভয়ে এক ঢোক গিললো।
নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো –ইমন প্লিজ কেনো নিজের সন্তান কে অস্বীকার করছো,, ভুলে গেছো তুমি সেদিন রাতের কথা।

–স্যাট আপ, নির্লজ্জ মেয়ে। ঘৃনায় আমার থুথু ফেলতে ইচ্ছে করছে তোর দিকে। ভালো ক্যারেক্টারের মেয়েরা কখনো নিজের গায়ে নিজেই কলংকের দাগ লাগায় না। তাহলে তুই কতোটা জঘন্য, কতো টা নিচু জাতের ভেবে দেখ।

–ইমন,,,
–চুলের মুঠী ধরে যে তোকে এখনো এ বাড়ি থেকে বের করিনি সেটা তোর ভাগ্য।
ইমন চৌধুরীর গায়ে দাগ লাগাতে এসেছিস এবার দেখ ইমন চৌধুরী তোর কি হাল করে।
বলেই ইমন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
সাজিয়া বলে দেখেছো দেখেছো তোমার ছেলে কতোটা নীচ হয়ে গেছে নিজেই অপরাধ করে এখন নিজেই অস্বীকার করছে,,,
একরা সাজিয়ার গালে কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয়।
সাজিয়া গিয়ে পড়ে রিতিশার কাঁধে।

–আমার ছেলে অপরাধ করেছে তোমার বোনের মেয়ে কি কচি খুকি, অবুঝ শিশু সে কিছু বুঝেনা,মনে রেখ ইমন পুরুষ মানুষ ওর গায়ে এসব নোংরামির আঙুল তুললে আজ বাদে কাল মানুষ সেটা ভুলে যাবে আর যেহেতু ইমন চৌধুরী সেহেতু এমন কিছু রেকর্ড থাকলেও পাবলিকের কিছু জায় আসবে না।
কতো মেয়ের বাবারা লাইন দিয়ে রাখে ইমনের কাছে তাঁদের মেয়ে দেওয়ার জন্য,কতো মেয়ে আমার কাছে এসে চোখের পানি ফেলেছে আমার পুএবধূ হওয়ার জন্য আশা করি সব খবড়ই তুমি পেয়েছো।
যা ক্ষতি হওয়ার যা বদনাম হওয়ার তোমার বোনের মেয়েরই হবে তাই সময় থাকতে আসল ঘটনা কি সেটা বলো এতেই মঙ্গল।

রিতিশা, সাজিয়া দুজনই ভয়ার্ত চোখে একরার দিকে চাইতেই একরা ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে গেলো।
সবারই ইমনের ওপর বিশ্বাস ছিলো তাই সবাই অপেক্ষা করতে লাগলো সঠিক সময়ের। এদিকে রিতিশাও পাগল হয়ে গেলো ইমনের সন্তান তাঁর গর্ভে এটা প্রমান করার জন্য।

আমার মনে প্রশ্ন ঘুরতে থাকলো হঠাৎ রিতিশা এমন কথা বলছে কেনো। ইমন তো বিয়েতে রাজিই হয়েছিলো। সভ্য ভাবে থাকলেই বিয়েটা সহজেই করতে পারতো। তাহলে এইরকম পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে রহস্য টা কি??
বাচ্চা যে পেটে আছে এটা সত্যি তাহলে বাচ্চা টা কার??
অন্য কারো পাপের বোঝা ইমনের ওপর চাপাচ্ছে না তো,,,
পরের দিন ড্রয়িং রুমে সবাইকে হাজির করলো ইমন।
সাজিয়া, রিতিশা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
বাড়ির ছেলে, মেয়েদের ইমন নিচে আসতে বারন করায় কেউ নিচে আসেনি। নিচে শুধু কাজের লোক,একরা, আমার ছোট ছেলে এনামুল, সাজিয়া আর আমি।
ল্যাপটব চালু করতেই কিছু দৃশ্য চোখে ভেসে এলো।

–জান তোমার সন্তান আমার গর্ভে তুমি কেনো ভয় পাচ্ছো, আমি তোমাকেই ভালোবাসি। শুধু কয়েকটা মাস ওয়েট করো। বিয়েটা হবে,আর আমি জাষ্ট কয়েকটা মাসই থাকবো ইমন চৌধুরীর বউ হয়ে।
চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির অর্ধেক মালিকানাই ইমন চৌধুরীর জাষ্ট সেটা আমার ছোট ভাই ইভানের করে দিবো যেভাবেই হোক। তারপর আবার আমাদের গন্তব্য স্থলে পারি জমাবো। জানোই তো জান আমার নিজের কোন ভাই নেই আমরা দুবোন ইভান কে নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসি। কিন্তু খালামুনির বর শুধু ইমন ইমন করে ইভানের দিকে তাঁর কোন খেয়ালই নেই।

–বুকের ওপর মাথা রেখে কথা গুলো বলছিলো রিতিশা,,, ছেলেটা রিতিশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ধীর গলায় বললো নিজের জিনিস কে অন্যকারো ঘরে দেখা যে খুবই যন্ত্রণার সোনা বুঝোনা,,,

সাজিয়া সহ রিতিশা ভয়ে কুঁকড়িয়ে গেলো।
রিতিশা চিৎকার করে বললো এসব মিথ্যা, এগুলো বানোয়াট।
একরা ঘৃনায় মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি ভিডিওটার বলা সব কথা শুনলাম।

–জান নো টেনশন জান তোমার ভালোবাসার গভীর ছোঁয়া গুলো আমার শরীরে একে দাও তো,, আমিও অনেকদিন পর তোমায় ফিল করি সেইসাথে একটা ক্যালমাও হয়ে যাক।

–ছেলেটা রিতিশার সাথে অন্তরঙ্গ হতে নিতেই ইমন ভিডিও টা অফ করে ফেললো।

রিতিশা নানা ভাবে সবাইকে বোঝাতে লাগলো।
ইমন হাতে তালি বাজিয়ে জোরে হাসতে লাগলো।

–বাহ! কি খেলোয়ার ভাবা যায়। নষ্টামি করবি বয়ফ্রেন্ডর সাথে পাপের ফল চাপাবি আমার ঘারে।
কি ভেবেছিস ইমন চৌধুরী এতোটাই বোকা।

রিতিশা ভয়ে এক ঢোক গিললো।
সাজিয়া একরা কে বললো কোথাও ভুল হচ্ছে রিতিশা নয় এটা।
একরা বললো ছিঃ এতোটা জঘন্য তোমরা। ইভান আমারো সন্তান, ইভানের জন্য তোমাদের ভাবতে হবে না। ইভানকে নিয়ে ভাবার ওর বাবা, বড় ভাই আছে বলেই ইমনকে বললো — আমি যাচ্ছি তোমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত।

আমি ইমনকে বললাম দাদু ভাই এসব তুই কিভাবে পেলি।

–দাদী তোমার নাতীর সম্পর্কে আর কারো ধারনা থাকুক বা না থাকুক তোমার নিশ্চয়ই আছে।
সেদিন বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান থেকে রিতিশা বেরিয়ে আসার পর কোথায় গিয়েছিলো কতোক্ষন লেট করেছে সব এ টু জেট আমি জানি। প্রুফ সহ সবাইকে দেখালাম এর পরও আমার ক্ষমতা সম্পর্কে কারো সন্দেহ আছে,,,
মিস রিতিশা জাষ্ট এক ঘন্টা টাইম দিলাম এর মধ্যে এ বাড়ি থেকে না বেরুলে পুলিশের হাতে দিতে বাধ্য হবো।
,
মুসকান নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।
–তাঁর পর থেকেই দাদুভাই আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা। নিজের মায়ের করা বেঈমানী গুলো, রিতিশার করা বেঈমানী দেখে ওর মনটা বিষিয়ে যায়। তাই সিদ্ধান্ত নেয় এসবে জরাবে না।
সারাজীবন একাই পার করে দিবে।
আমরা কেউ ওকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারিনি। আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম ছেলেটা বোধ হয় নিঃসঙ্গ জীবন ই পার করবে।
কিন্তু যখন ওর মুখে তোর কথা শুনলাম তখন যেনো আশার আলো দেখতে পেলাম।

মুসকান চোখ তুলে তাকালো। গাল দুটো নোনাজলে ভরে ওঠেছে।
দাদী মাথা নাড়িয়ে বললো হ্যাঁ রে,,,
তোর এই নমনীয়তা, তোর দায়িত্ব বোধ, তোর সহনশীলতা সবটাতেই মোহিত হয়েছে তিনি।

মুসকান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।

–দাদু ভাই মুখে না বললেও দাদু ভাই যে তোকে খুব করে চায়,সেটা আমরা সবাই জানি। তোকে সারাজীবনের সাথী করতে চায়। কিন্তু কাল কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।

মুসকান কান্না মিশ্রিত গলায় বললো ওনিতো আমাকে এসব বলেনি। আর ওনি আমার থেকে কিছু শুনেনও নি। বলেই কাঁদতে লাগলো।

–দাদু ভাই কেমন জানিসই তো অল্প কথার মানুষ।
অল্পতেই বোঝাতে চেয়েছে। তা তুই কি বলিস দাদু ভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী হবি তো,,,বলেই মুসকানের মুখের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।

মুসকান লজ্জায় ওঠে পড়লো। চলে যেতে নিয়েও ফিরে চেয়ে বললো ও দাদী ওনার মত কি পাল্টে গেছে,,,

–তোর কর্তার মত পাল্টেছে নাকি তুই জিগ্যাস কর না ছুড়ি,,,
–আমি তো মরেই যাবো লজ্জায়।
–আহা গো লজ্জা লজ্জা পাইয়া লাভ নাই। যতো তারাতারি পারো নিজের কর্তাকে
নিজের দখলে নিয়ে নাও। নয়তো রিতিশার মতো আরো বিষধারী মাইয়ারা ভাগ বসাইতে আসবো।
হাজার হলেও নাতী আমার লাখে একটাই।

মুসকান আঁতকে ওঠলো।
,
–কিরে দাদীদের দিয়ে আসলি যে,,মুসকান কতোটা মন খারাপ করেছে দেখেছিস।

–সুপ্তি ঘুমিয়েছে।
–হ্যাঁ। ঘুম পাড়িয়েই আসলাম। তুই আগে বল তো কি চাস তুই। বাচ্চা মেয়ে মনটাও বাচ্চা ওর মুড দেখে আমারই খারাপ লাগছে।

–এতো খারাপ লেগে কাজ নেই যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড় তো ওকে আমি দেখে নিবো।

–বিয়েটা করে নিলেই ভালো হতো ইমন। তুই যে কি বুঝিস না,,,

–বিয়ে তো করবোই এতো চিন্তা কিসের। একজনের অপেক্ষায় আছি দেরী যখন একটু হলোই সে আসলেই না হয় বিয়েটা হবে। উপরওয়ালা হয়তো এটাই চায়। সবই তাঁর ইচ্ছা, জানিস তো মুসকান আমাদের জন্য খুব লাকি।

–তোর জন্য লাকি এটা আমরা সবাই জানি।

–শুধু আমি না আরো অনেকের জন্যই।

–মানে,,,

–কিছুনা যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।

,
ইমনকে খাবাড় গুছিয়ে দিয়ে মুসকান চুপচাপ বসে রইলো।
ইমন খাবাড় মুখে দিয়ে গম্ভীর গলায় বললো খাবেনা??
মুসকান মলিন মুখে নিচু স্বরে বললো খেয়েছি আপনি খেয়ে নিন বলেই মাথা নিচু করে রাখলো।
ইমন ভ্রু বাঁকিয়ে মুসকানের দিকে চেয়ে ভাবলো সাহসের তো সীমা নেই দেখছি, আমার আগেই খেয়ে নিয়েছো।মুখ দেখে তো সবটাই বুঝতে পারছি।
মিথ্যা বলেছো তো বলেছো তাও আবার বিশাল সাহসীকতার মিথ্যা।
চুপচাপ খেয়ে ইমন ওঠে পড়লো।
মুসকান সব গুছিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘুরতেই ইমনের মুখোমুখি হলো।
মুসকান একবার ইমনের দিকে চেয়ে মুখ ফিরিয়ে ওদিক সেদিক চেয়ে বললো কিছু লাগবে,,,
ইমন এক হাতে মুসকানকে পেঁচিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো।
আচমকাই ইমন এমনটা করে ফেলবে মুসকান ভাবতে পারেনি৷ তাঁর হৃদস্পন্দন ১০০ গতিতে বেড়ে গেলো। এক ঢোক গিলে মিনমিনে স্বরে বললো কি করছেন,,,
ইমন একটু ঝুঁকে মুখের কাছে মুখ নিয়ে গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সেই দৃষ্টি তে চোখ রাখার সাহস মুসকানের নেই। চোখ ফিরিয়ে নিলো।
–মিথ্যা কেনো বললে,,,
–মুসকান তুতলাতে তুতলাতে বললো কইই না তো,,,

–ওহ তাই, তাঁর মানে আমার আগেই খাওয়া হয়ে গেছে রাইট বলেই আরেকটু শক্ত করে নিজের সাথে চেপে নিলো।

মুসকান ভয়ে মিইয়ে গেলো কেমন। বুকের ভিতর তাঁর ধকধক করতে শুরু করেছে। ইমনের এতো কাছে আসায় তাঁর সম্পূর্ণ শ্বাস সে অনুভব করতে পারছে। প্রত্যেকটা শ্বাস যেনো তাঁর শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছাচ্ছে গিয়ে।
–বড্ড সাহস বেড়েছে তাইনা, পেটের ভিতর কি ইঁদুর ছুটছিলো যে আমার আগেই খেয়ে নিলে। এতোগুলো দিন যেটা হয়নি আজ তাই হয়েছে। এর শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে বলেই একহাতে মুসকানের ঘাড় চেপে ঠোঁট এগিয়ে নিলো।
মুসকান ভয়ে সড়তে গিয়েও সড়তে পারলো না।
চোখ দুটো বন্ধ করে এক হাতে ইমনের ঠোঁটে বাঁধা দিয়ে বললো আমি খাইনি এমনি বলেছিলাম।

ইমন বাঁকা হাসলো সাথে সাথেই মুখটা কঠোর করে নিয়ে বললো ওহ তাই, মিথ্যা বলার শাস্তি টা না হয় পরেই দিবো। তাঁর আগে আমার সামনে প্লেট ভর্তি খাবাড় নিয়ে সম্পূর্ণ খাবাড় শেষ করবে নয়তো আজ তোমাকে আমি কি করবো ভাবতেও পারবে না।

মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিললো।
ইমন মুসকানকে ছেড়ে দিয়ে কঠোর দৃষ্টি দিয়ে ইশারা করলো ডায়নিং টেবিলের দিকে।
মুসকান বাঁধ্য মেয়ের মতো গিয়ে খাবাড় বেড়ে খেতে শুরু করলো। ইমন সামনের চেয়ার টেনে বসে মুসকানের খাওয়া দেখতে লাগলো।
মুসকান লজ্জায়,অভিমানে খেতে পারছিলো না।
তবুও ইমনের ভয়ে ভাত মুখে পুড়ে পানি দিয়ে দিয়ে গিললো।
যা দেখে ইমন বেশ মজা পাচ্ছিলো।
,
কয়েকদিন পর-
রাত আটটা বাজে সুপ্তি আজ তারাতারিই ঘুমিয়ে গেছে। সায়রী রুমে বসে পরীক্ষার খাতা দেখছিলো।
ঘুম ঘুম পাচ্ছে তাই রান্না ঘরে চলে গেলো কফি বানাতে কফি বানিয়ে রুমে আসতে নিতেই হঠাৎ কেউ তাঁকে কোমড় পেঁচিয়ে একদম পাশের রুমের দেয়ালে নিয়ে ঠেকালো। কফি টা সায়রীর রুমের সামনেই পড়ে গেছে।
সায়রীর একটা চিৎকার ই কানে ভেসে এলো সাথে সাথে মুসকান দৌড়ে বেরুলো রুম থেকে।

–আপা কি হয়েছে কে ওখানে।
আর কোন সাড়া পেলো না৷ রুমেও সায়রী নেই।
পাশের রুম থেকে দরজায় হাতরাহাতরির আওয়াজ পেতেই মুসকান ভয় পেয়ে যায় আপা আপা করে যেতে নিতেই দেখলো পিছন থেকে সায়রীর মুখ চেপে ধরে আছে। কিসব বলছে বুঝতে পারলো না। তবে এটা ঠিক বুঝলো বাড়িতে ডাকাত পড়েছে দৌড়ে গিয়ে রান্না ঘর থেকে একটা লাঠি নিয়ে এলো।
দরজার কাছে আসতেই দেখলো সায়রীর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ে যাচ্ছে। সামনের লোকটার দিকে অদ্ভুত ভাবে চেয়ে আছে।
কালো শার্ট, কালো প্যান্ট গলায় সাদা কাপড় মাপলারের মতো পেঁচানো। লম্বা,চওড়া লোক দেখেই মুসকান কয়েক পা এগুলো উদ্দেশ্য মাথা বরাবর এক বাড়ি দেওয়া।
কিন্তু তাঁর কাজে ইমন বেগরা দিলো।
পিছন থেকে এক হাতে পেটে পেঁচিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। মুসকান চেঁচাতে শুরু করলো আল্লাহ গো ডাকাত ডাকাত বাড়িতে দুইটা ডাকাত পড়েছে,,,

চলবে…………

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
চলবে……
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
কি মনে হচ্ছে সত্যি কি ঘটেছে ঐদিন??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here