#হৃদপিন্ড_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পার্ট_১৩
.
গতকদিনে একদম পাগল হয়ে গেছে ইমন৷ কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা সে। অফিস থেকে ফিরেছে রাত এগারোটায় ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়েছিলো। কিন্তু ঘুম তাঁর চোখে ধরা দেয়নি। দেবে কি করে? তাঁর মন যে খুবই তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। এই তৃষ্ণা মেটানো খুবই দুষ্কর। মুরাদের নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু কল গেলোনা। যাবে কি করে সেদিনের পর থেকে মুরাদের ফোনে ইমনের নাম্বার গুলো ব্ল্যাকলিষ্টে রয়েছে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তাঁর। দিহানকে ফোন করে এক নাগাড়ে চিল্লাতে শুরু করলো। দিহান ফোনের স্পিকার বাড়িয়ে সেই চিল্লানো শুনালো সায়রীকে। বেশ অনেকটা সময় পর সায়রী স্বান্তনা দিলো ইমনকে। ইমন স্বান্তনায় ভোলার পাএ নয়। তাই সায়রীকে বকা দিয়ে ফোন কেটে দিলো।
ছেলের চিল্লানো ঠিক ইরাবতী আর আকরাম চৌধুরীর কানে পৌঁছায়। আকরাম চৌধুরী দরজায় নক করতেই ইমন দরজা খুলে দেয়। ইরাবতী ভয়ে আর রুমে ঢুকেনি। আকরাম চৌধুরী রুমে গিয়ে ছেলেকে বোঝাতে লাগলেন। বোঝানোটা অবশ্যই ইমন মুসকানের ভালোবাসার বিপক্ষে ছিলো যার ফলে আরো রেগে যায় ইমন। হাতে থাকা ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে। চোখ,মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে তাঁর। এমন রূপে ছেলেকে দেখে ভড়কে যায় আকরাম চৌধুরী। সচরাচর ছেলেকে রাগতে দেখা যায় না। আর যখন রেগে যায় তখন তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়৷
নিচে নামতেই ডায়নিং টেবিলে যা পায় সব ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে। টেবিলে দুটো থাবা দিয়ে বলে,
—- নেক্সট টাইম কেউ আমার থেকে মুসুকে আলাদা হওয়ার কথা বললে আমি ভুলে যাবো তাঁর সাথে আমার কোন সম্পর্ক আছে।
ইরাবতী ছেলের রূপ দেখে আঁচলে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করে। ইমন আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না বাড়ির বাইরে গিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মুরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
রাত বারোটা বাজে প্রায়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো ইমন৷ পরপর তিনটা সিগারেট শেষ করে গেট টপকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। মেইন দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করার কথা ভাবলেও করলো না। মুসকানের রুমের জানালায় পিঠ ঠেকিয়ে কয়েক দফা ভারী শ্বাস নিলো আর ছাড়লো।
জানালায় কয়েকবার ঠকঠক আওয়াজও করলো। কিন্তু কোন লাভ হলোনা।
চারদিকে মৃদু বাতাস বইছে ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে হয়তো শুরু হবে ঝড়। সেই ঝড় কি তাঁর মনে বয়ে চলা ঝড়ের থেকেও প্রবল হবে?
অনেকটা সময় ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো ইমন। একটি দেয়ালের ব্যবধান শুধু তাঁর আর মুসকানের মাঝে। যদি কোন ম্যাজিক হতো আর এই দেয়ালটা বিলীন হয়ে যেতো, যদি এক পলকে দেখতে পেতো তাঁর হৃদপিন্ডটাকে। একটুখানি ছুঁয়ে দিতো তাঁর প্রাণপাখিটাকে খুব কি ক্ষতি হয়ে যেতো?
বিদ্যুৎ চকমকানো তে আম্মু বলে কেঁদে ওঠে মুসকান। কেঁপে ওঠে ইমন। গলার স্বর উঁচু করে বলে,
—- মুসু ভয় পাস না আমি আছি জানালা খোল দেখ আমি দাঁড়িয়ে আছি কিছু হবে না।
ইমনের কন্ঠ শুনতেই দ্বিগুন ভয় পেয়ে যায় মুসকান। ভূত ভূত বলে আরো চেঁচিয়ে ওঠে। ইমন মৃদু ধমকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
—- চুপপ কোন ভূত নেই আমি এসেছি আমি তোর ঢংয়ের নানাভাই।
—- আম্মু,,,বলেই মুসকান কেঁদে ওঠে। রেগে যায় ইমন। রাগান্বিত গলায়ই বলে,
—- দেখ মুসু তোর জন্য যদি এখন তোর কষাই ভাই এসে আমাকে তাড়িয়ে দেয়। আর আমি তোকে এক পলক দেখতে না পেয়েই চলে যাই তাহলে তুই আর তোর ভাই আগামীকাল সকাল আর দেখতে পারবিনা বলে দিলাম। দু’ভাইবোন মিলে আমাকে একদম ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিস। নিজে আর কতো ক্ষতবিক্ষত হবো এর থেকে বরং তোদের ওপারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও ওপারে চলে যাই।
মুসকানের আর বুঝতে বাকি রইলো না সত্যি ইমন এসেছে। খুশিতে কেঁদে ফেললো সে। উত্তেজনায় হাত কাঁপছে তাঁর। দ্রুত জানালা খুলে দিলো। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দুহাত ঢুকিয়ে দিয়ে মুসকানের দুহাত শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন। মুসকান কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেললো। ইমন চোখ রাঙিয়ে বললো,
—- কাঁদবি না একদম। কেনো কাঁদছিস? তোর ঐ হিটলার ভাইয়ের কতো দম আছে আমি দেখে ছাড়বো। আমার বউটা বাচ্চা তুলে নিয়ে গেলে মা, ভাইদের জন্য কান্নাকাটি করবে বলে ওকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি নয়তো বুঝিয়ে দিতাম আমি কি জিনিস।
মুসকান কেঁদেই চলেছে ইমন মুখ এগিয়ে মুসকানের দুহাতে একের পর এক চুমু খাচ্ছে। নিজের এক হাত বাড়িয়ে মুসকানের চোখের পানিও মুছে দিলো। আদুরে গলায় বললো,
—- এতো কাঁদছিস কেনো? এই দেখ আমি কতো আদর করছি।
আবারো বিদ্যুৎ চমকালো মুসকান মৃদু চিৎকার দিয়ে ইমনের হাত খামচে ধরলো। ইমনও তাঁর দুহাত শক্ত করে চেপে ধরলো। চারদিকে বাতাসের বেগ বেড়ে গিয়ে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। পুরো শরীর ভিজে শরীরের সাথে শার্ট লোপ্টে গেছে ইমনের। মুসকান ভাঙা আওয়াজে বললো,
—- তুমিতো ভিজে যাচ্ছো।
—- হুম তো কি বলতে চাচ্ছিস? চলে যেতে বলছিস? কতোদিন পর তোকে পেয়েছি হিসেব করেছিস? একদম কথা বলবিনা চুপ করে বসে থাক। ভিতরে যেহেতু ঢুকতে দিবিনা সেহেতু বাইরেই থাকতে দে।
—- আমি কি দরজা খুলবো?
—- না একদম না তোর স্বাদের ভাই তো এখনো জেগেই আছে মেবি। টের পেলে অযথা লাফালাফি করবে। আপাতত আমি রিল্যাক্স মুডে আছি বলেই মুসকানের হাতের পিঠে চুমু খেলো।
—- না না কেউ জেগে নেই আমি দরজা খুলি? ফিসফিস করে বললো মুসকান।
—- উহুম মুরাদ জেগে আছে।
—-না নেই৷
—- জেদ করছিস কেনো? নব দম্পতিরা এতো আগো ঘুমায় নাকি? তোর ভাই তো লুইচ্চার মহারাজা বউকে এতো আগেই ছাড়বে নাকি?
মুসকান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। তা দেখে মৃদু হাসলো ইমন।
—- আমার দাদাভাই কে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবে না বলে দিলাম।
—- আজেবাজে কথা কোথায় বললাম যা সত্যি তাই তো বললাম৷
—- ছাড়ো আমি দরজা খুলবো। আমি জানি সবাই ঘুমিয়ে আছে কেউ জেগে নেই।
—- ওকে তাহলে আজ কিন্তু আমি তোর সাথে ঘুমাবো। যেভাবে খুশি সেভাবে আদর দিবো।
লজ্জায় চুপসে গেলো মুসকান৷ আর টু শব্দটিও করলো না সে। ইমন মুখে দুষ্টু হাসি একে বললো,
—- মুরাদ আর রিমি এখন কি করছে জানিস?
চোখ বন্ধ করে ফেললো মুসকান৷ হাত ছুটাতে নিতে চাইলেই আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন। বললো,
—- আরে শোন শোন তোর ভাই কতো ভালো এটা শুনলেই বুঝতে পারবি।
—- আমি কিছু শুনবো না৷ মিনমিন করে বললো মুসকান।
—- এ বাবা মুসু তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? আর শুনতেই বা চাচ্ছিস না কেনো? আমি কি বাজে কিছু বলছি নাকি? নাকি তুই অন্যভাবে নিচ্ছিস বিষয়টা। তুই তো দেখি বড্ড পেকে গেছিস সব বুঝিস?
ইমনের দুষ্টুমিতে রাগ হলো মুসকানের। এতো লজ্জা কেনো দিচ্ছে ইমন? কেনোই বা এভাবে কথার জালে ফাঁসাচ্ছে? গায়ের শক্তি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে সরে যেতে নিতেই ইমন চট করে হাত বাড়িয়ে ওড়না টেনে ধরলো৷ বৃষ্টির পানিতে অর্ধেক বিছানা ভিজেই গেছে। মুসকানের ওড়না একটানে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরে নিয়ে এলো। মুখ হাত মুছে ওড়নাটা মাথায় চাপিয়ে নিলো। ওড়না বিহীন মুসকান তো লজ্জায় আরো ইমনের সামনে যেতে পারছেনা। এমন সময়ই কারেন্ট চলে গেলো৷ সাথে সাথে মুসকান ভয়ে জানালার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইমনও মুচকি হেসে হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। এতোক্ষণ ইমন মুসকানকে দেখতে পেলেও এখন আর দেখতে পারছেনা৷ একে অপরের উপস্থিতি, স্পর্শ অনুভব করছে শুধু।
.
প্রায় দুঘন্টা বৃষ্টি তে ভিজেছে ইমন। সেই সাথে পুরো দু’ঘন্টা মুসকানের সাথে সময়ও কাটিয়েছে। মুসকান তাঁকে জানিয়েছে আগামীকাল স্কুলে যাবে। আগামীকাল অফিসও নেই ইমনের তাই কথা দিয়েছে টিফিন পিরিয়ডে দেখা করতে যাবে। কিন্তু ভোরের দিকেই গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হয় ইমনের। সারাদিন বিছানা ছেড়ে ওঠতেও পারেনা সে। জ্বরের ঘোরে অচৈতন্য রয়েছে সে৷ দুপুরের দিকে ডাক্তার আসে বাড়িতে। একটা ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে বেশ কিছু মেডিসিনও দেয়।
এদিকে মুসকান ইমনের অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে গেছে। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের অস্থিরতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইমন তাঁকে কথা দিয়েছিলো আসবে অথচ আসেনি। বিষয়টা সহজ ভাবে হজম করতে পারলো না মুসকান৷ টিফিন পিরিয়ড শেষ হতে আর মাএ পাঁচমিনিট। মুসকান দৌড়ে সায়রীর কাছে যায়। একা একপাশে ডেকে নিয়ে অসহায় চোখ,মুখ করে বলে,
—- আপু নানাভাইকে একবার ফোন দেবে?
—- কি বলছিস মুসু মুরাদ জানতে পারলে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবে আমাদের।
—- তুমি না বললেই তো জানবেনা শুধু এক মিনিট কথা বলবো প্লিজ আপু তোমার পায়ে পড়ি।
সায়রী না করতে পারলো না৷ একদিকে ইমন একদিকে মুরাদ এদিকে বাচ্চা মেয়েটার অসহায় মুখ টা। ইমন,মুরাদকে গুরুত্ব না দিলেও মুসকানের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে বাঁধ্য হলো সায়রী। এতে করে যে ভয়ংকর ঘটনাটা ঘটলো তা কি করে সামাল দেবে সায়রী?
ইমনের ফোন রিসিভ করে ইরাবতী। ইমনের অসুস্থতার খবর শুনে ফোন ফেলে ক্লাসে গিয়ে নিজের ব্যাগটা নিয়েই দৌড়ে চলে যায় স্কুলের বাইরে। সাথে সাথেই অটো পেয়ে অটোতে ওঠে চলে যায় মুসকান। সায়রী তাঁর পিছন দৌড়ে এসে এতো করে ডাকলেও সে আর থামে না। এমন ভয়াবহ অবস্থায় জীবনে পড়েনি সায়রী৷ দ্রুত ইমনের নাম্বারে ডায়াল করে সে। জানতে পারে ইমনের ভীষণ জ্বর। এ কথা শুনেই মুসকান অমন উন্মাদের মতো ছুটে গেলো। যে মেয়েটা একা স্কুল,প্রাইভেটে যায় না সে মেয়েটা আজ কতো সাহস দেখিয়ে কিভাবে চোখের পলকে চলে গেলো। ভাবতেই গা শিউরে ওঠলো সায়রীর। ছুটির পর মুরাদ এসে যদি মুসকান কে না পায় তাহলে কি ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে হবে তাঁকে ভাবতেই মাথাটা এক চক্কর দিয়ে গেলো তাঁর।
.
চৌধুরী বাড়িতে ঢুকেই সোজা ইমনের রুমে চলে গেলো মুসকান। ইমনকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় দেখে নানাভাই বলেই ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। ইরাবতী মুসকানকে দেখে অবাক হলোনা। কারণ সে কিভাবে এসেছে সবটা সায়রীর থেকে শুনেছে। এতদিন ছেলের পাগলামি দেখে কেঁদেছে সে কিন্তু আজ মুসকানের পাগলামি দেখে শান্তি লাগছে। কারণ এদের এই পাগলামিই এদেরকে এক করার জন্য যথেষ্ট।
.
অচৈতন্য অবস্থায়ই মুসকানকে আঁকড়ে ধরলো ইমন। মুসকান কেঁদেই চলেছে৷ ইরাবতী মুসকানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
—- কেঁদো না মামনি এই জলপট্টি টা ওর মাথায় দাও ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে জ্বর কমে যাবে।
মুসকান জলপট্টি হাতে নিলো কিন্তু কিভাবে দেবে ইমন তো তাঁর কোলে মুখ গুঁজে রয়েছে। ইরাবতীর সামনে লজ্জা পেলেও ইমনের অসুস্থতা কে বেশী গুরুত্ব দিয়ে স্বাভাবিক রয়েছে মুসকান। ইরাবতী বুঝলো এভাবে জলপট্রি দেওয়া যাবেনা। তাই মুসকানকে বললো ইমনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। ওদের একা রেখেই ইরাবতী রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
নিজ রুমে গিয়ে স্বামীকে সবটা জানায় আর বলে,
—- যেখানে ওরা দুজন দুজনে জন্য এতোটা পাগল সেখানে শুধু মুরাদের জন্য আমরা থেমে থাকতে পারি না৷ তুমি আজি মুরাদের চাচার সাথে কথা বলবে।
আকরাম চৌধুরী মেজাজ দেখিয়ে বলে,
—- মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমারও। আমার একটা সম্মান আছে ইমনের মা সেটা তুমি ভুলে যেতে পারোনা। আমার ছেলের মাথা খারাপ হয়েছে বলে বউ এর মাথা খারাপ হয়েছে বলে আমার তো মাথা খারাপ হয়নি তাইনা? এডিউকেটেড একটা ছেলে হয়ে কি করে এসব মাথায় আনতে পারে সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা। এই মেয়েটা না হয় বাচ্চা তোমার ছেলে তো বাচ্চা নয়৷ এখনো সময় আছে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে বলো আর মেয়েটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দাও। পাগল হয়েছি আমি আমার ছেলের জন্য ঐ বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো? তাও যদি হতো মেয়েটার বয়স সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমার ছেলের জন্য সুন্দরী, উচ্চশিক্ষিত,উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে আনবো আমি।
—- তুমি বোধহয় ভুলে গেছো তোমার ছেলে ঠিক কি? এসব কথা তোমার ছেলের কানে দিয়ে পুএ হারা হবার শখ না জাগলে মুখ টা বন্ধ রাখো।
_____________________
প্রায় একঘন্টা পর ইমনের হুঁশ ফেরে। নড়েচড়ে বুঝতে পারে ছোট ছোট দুটিহাত তাঁর চুলগুলো নিয়ে খেলা করছে। ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ তাঁর কানে বাড়ি খায়৷ চোখ বুজে দু’হাতে মুসকানকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে জাবটে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—- আই লাভ ইউ মাই লিটল ওয়াইফ।
—- উফফ মরে গেলাম আমি ছাড়ো৷
—- উহুম ছাড়বোনা সারাজীবনের জন্য রেখে দিব আমার কাছে। তোর ঐ হিটলার ভাই নিতে এলেও ছাড়বোনা৷ মেরে বস্তা বন্দি করে ভ্যানগাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিব তোর মায়ের কাছে তবুও তোকে ছাড়বো না৷ বলেই গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। তখনি সায়রী রুমে ঢুকে চেঁচিয়ে ওঠে,
—- এসব কি হচ্ছে ইমন? বাচ্চা মেয়েটাকে একা পেয়ে এভাবে সুযোগ নিচ্ছিস? #হৃদপিন্ড_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পার্ট_১৪
ইমনের জ্বর যতটা কমেছিলো সায়রীর উপস্থিতি তে তাঁর থেকেও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো যেনো। মুসকানের থেকে সরে গিয়ে পাশেই পুরো শরীর ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। মুসকান মুখটা কাচুমাচু করে ওঠে বসলো৷ ইমন বিরবির করে বললো,
—- আগে যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতাম তুই এতোটা নিচে নামবি তাহলে দিহানের সাথে তোর বিয়ে কেনো প্রেমের সম্পর্কও ঘটতে দিতাম না।
—- ঐ ঐ কি বললি? মনে হয় তোর দয়ায় আমি দিহানকে পেয়েছি? বলেই তেড়ে এলো সায়রী।
—- নিজের বাড়ি কি ভিটেতে কি পানি ওঠেছে? ওখানে মরার জায়গা পাসনি এখানে মরতে এসেছিস কেনো?
—- শয়তান ছেলে! সেধে এসেছিলাম বাঁচাতে গায়ে লাগলো না। আমার কি একটু পরেই বোনের খোঁজে ভাই হাজির হবেইনি। বলেই সায়রী বেরিয়ে যেতে নিলো।
মুসকান আপু বলেই বিছানা থেকে ওঠতে যাবে তখনি ইমন হাত টেনে ধরলো। মায়াভরা চোখ,মুখে চেয়ে বললো,
—- আরেকটু বোস না?
ইমনের অমন আবদারে কান্না চলে এলো মুসকানের। ইমন চোখ টেনে টেনে চেয়ে আছে। জ্বরে পুরো চোখ,মুখ লালচে হয়ে গেছে তাঁর। সায়রী ওদের অবস্থা দেখে কাছে এসে বললো,
—- ইমন আমি মুরাদকে ফোন করে বলেছি স্কুল আগে ছুটি হয়েছে তাই মুসুকে চলে এসেছি বাড়িতে আমিই পৌঁছে দেবো। এখন যদি লেট হয় প্রবলেম হয়ে যাবে।
—- নিয়ে যাবি ওকে? আহত গলায় প্রশ্ন করলো ইমন।
মুসকান প্রায় কেঁদেই দেবে৷ সায়রী বললো,
—- এছাড়া কোন অপশন নেই। মুরাদ আমাকে বিশ্বাস করে ওর সে বিশ্বাস আমি ভাঙতে পারবো না।
ইমন বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। মাথাটা ঝিমঝিম করছে তাঁর। তবুও মুসকানের দিকে এগিয়ে সায়রীর সামনেই কপালে আলতো করে চুমু খেলো। মুখে মলিন হাসির রেখা টেনে গাল টিপে দিয়ে বললো,
—- একদম মন খারাপ করবিনা। খুব তারাতাড়ি দেখা হবে আমাদের৷ ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করবি,পড়াশোনা করবি যাহ বাড়ি যা৷
.
সেদিনের পর প্রায় দুমাস কেটে যায়। এ দুমাসে প্রায় দিনই টিফিন পিরিয়ডে ইমন মুসকানের সাথে দেখা করে যায়। মাঝে মাঝে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়েও অনেকটা সময় কাটায়। মুরাদ লক্ষ করলো শুরুর দিকে মুসকান কান্নাকাটি করতো। ঠিক ভাবে খাওয়া-দাওয়া করতো না। পড়াশোনা করতো না। কিন্তু এখন সেসবের কিছুই চোখে পড়ছে না৷ তাঁর মানে মুসকানের আবেগটা কেটে গেছে। সে ভুল নয়, মুসকানের অল্প বয়স তাই আবেগে পড়ে এসবে মনোযোগ দিয়েছিলো। ভাই হিসেবে সঠিক কাজটাই তাহলে সে করেছে। এবার ইমনের সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে হবে। ইমনকে বোঝাতে হবে মুসকান ছোট আবেগ ছিলো ওর যা অল্প সময়েই কেটে গেছে। বন্ধু হিসেবে সে যেমন ইমনের ভালো চায় বোন হিসেবে মুসকানেরও ক্ষতি চায় না সে। দু বন্ধুর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরী হয়েছে এটাকে দীর্ঘ করা যাবে না। ইমন তাঁর বেষ্ট ফ্রেন্ড কলিজার দোস্ত। ইমনের সাথে কালই দেখা করতে হবে ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুরাদ৷
রাতের খাবারের পার্ট চুকিয়ে রুমে আসে রিমি। মুরাদ রিমিকে দেখে মৃদু হেসে বলে,
—- ইমনের জন্য একটা ভালো মেয়ে দেখতে হবে রিমি। যতো তারাতাড়ি সম্ভব বিয়ের বন্দবস্ত করবো ওর৷
—- তোমাদের মধ্যে সব ঝামেলা মিটে গেছে?
—- না তবে মিটিয়ে নেবো। মুসুতো ইমনকে ভুলেই গেছে এবার ইমনকেও বুঝতে হবে এটা জাষ্ট আবেগ ছিলো।
রিমি চমকে গেলো। মুসু ইমনকে ভুলে গেছে নাকি ওদের সম্পর্ক আগের থেকেও গভীর হয়েছে তা যদি মুরাদ জানতো তাহলে কি আর এ কথা বলতো? রিমিকে অন্যমনস্ক দেখে কাছে টেনে নিলো মুরাদ। কোমড় জরিয়ে বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে বললো,
—- কি ভাবছো?
—- সত্যি মুসু সব ভুলেছে তো?
—- কেনো ভুলেনি? তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে জিগ্যেস করলো মুরাদ।
রিমি ভয়ে এক ঢোক গিললো৷ আমতা আমতা করে বললো,
—- আমি তো জানিনা, না মানে মুসুতো ঠিক আছে স্বাভাবিক আছে।
মুরাদ তবুও তাঁর দৃষ্টি সরালো না। সন্দেহ চোখে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো রিমিকে। রিমি কথা ঘোরানোর মুরাদের থেকে সরে বিছানা ঠিক করে শুয়ে পড়লো। মুরাদের সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো। প্রচন্ড শক্ত করে হাত চেপে ধরলো রিমির। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,
—- যদি বুঝতে পারি আমার থেকে কিছু লুকিয়েছিস খুন করে ফেলবো।
—- ভাইয়ের রূপে ফিরে এলে মন্দ লাগেনা বলেই খিলখিল করে হেসে ওঠলো রিমি।
—- আর যখন স্বামীর রূপে থাকি তখন কেমন লাগে? বলেই গা থেকে ওড়না সড়িয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।
__________________
বেলা এগারোটার দিকেই ইমন গাড়ি নিয়ে পৌঁছায় মুসকানের স্কুলের সামনে। সায়রী দ্রুত মুসকানকে গেট থেকে বের করে ইমনের গাড়িতে ওঠিয়ে দিয়ে আবার দ্রুত স্কুলের ভিতর চলে যায়।
আজ ইমনের জন্মদিন৷ তাই ক্লাস মিস দিয়েই মুসকানকে নিজের বাড়ি নিয়ে এলো ইমন। ইরাবতী আর কাজের মেয়ে পারুল মিলে বহুপদের রান্না বসিয়েছে৷ মুসকানকে নিয়ে ইমন বাড়ি আসতেই ইরাবতী ইমনকে বললো তাঁর রুমে বিছানার ওপর লাল রঙের শাড়ি বের করা আছে। মুসকানকে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে শাড়িটা পড়ে ফেলতে বল। পরোক্ষনেই ইরাবতী জ্বিব কেটে বললেন,
—- ওকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বল আমি গিয়ে শাড়ি পড়িয়ে দিব।
ইরাবতীর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো মুসকান। বিছানায় শাড়ির সাথে ব্লাউজ পেটিকোটও রয়েছে। সেই কোন ছোট বেলায় মা,রমা আর রিমি আপু তাঁকে শাড়ি পড়িয়ে দিতো। বড়বেলা আর শাড়ি পড়া হয়নি তাঁর। বান্ধবী দের সাথে কথা হয়েছে এস এস সি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে বিদায় অনুষ্ঠানে শাড়ি পড়বে সবাই মিলে। ভাবতেও পারেনি তাঁর শাড়ি পড়ার সময় এতো দ্রুত চলে আসবে। শাড়ি দেখে লজ্জা পেলো ভীষণ তখনি রুমে এলো ইমন। বললো,
—- কাহিনী কি এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?
ইমনকে দেখে লজ্জাটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। মুখে কুলু পেতে দাঁড়িয়ে রইলো সে। ইমন ব্লাউজ,পেটিকোট হাতে নিয়ে মুসকানের সামনে ধরলো। বললো এগুলো পড়ার আগেই লজ্জা পাচ্ছিস পড়ার পর কি করবি? নে ধর। মুসকানের হাতে কাপড়গুলো গুজে দিয়ে দরজার দিকে এগুতে লাগলো৷ হাঁটা পা থামিয়ে আড় চোখে চেয়ে ওর লজ্জা দেখে বললো,
—- এতো লজ্জা পেতে হবে না। এগুলো পড়ে ডাকবি আমায় আমি দরজার বাইরেই আছি।
ইমন চলে যেতেই মুসকান দুরুদুরু বুকে ব্লাউজপেটিকোট পড়ে নেয়। কিন্তু পিছনের ফিতা লাগাতে পারেনা। শাড়িটা গায়ে জরিয়ে দরজার দিকে ওকি দিতেই ইমন ভূবন ভুলানো এক হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। তারপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাড়িটা ছিনিয়ে নেওয়ার মতো করে নিজের হাতে নেয়। মুসকান হাত দিয়ে টেনে ধরে বলে,
—- পুরোটা নিও না৷
—- আরে আজব পুরোটা না নিলে শাড়ি পড়াবো কি করে? ভয় নেই তোর ঐ কইঞ্চার মতো শরীরে নজর দেবো না আমি। নজর কাড়া ফিগার আছে নাকি তোর যে এতো ভয় পাচ্ছিস?
মুখটা গোমড়া করে ফেললো মুসকান৷ ইমন নিজের মতো করে শাড়ি পড়াতে শুরু করলো। পুরো শাড়ি পড়িয়ে আঁচল দিতে গিয়ে কি যেনো মনে করে পুরো শাড়িটা আবার খুলে ফেললো। মুসকান চমকে তাকালো ইমনের দিকে। আর ইমন তাঁকে এপাশ-ওপাশ করে ঘোরাতে শুরু করলো৷ কি যেনো খুঁজছে সে। মুসকান অস্থির হয়ে বললো,
—- কি হয়েছে?
—- তিল খুঁজছি।
—- কিসের তিল?
—- দু’টো পেয়েছি আরেকটা কোথায় সেটাই খুঁজছি। বলেই পিছন দিক ঘুরিয়ে পিঠ চেক দিলো। তারপর সামনে ঘুরিয়ে যেই চেক দিতে যাবে মুসকান আঁতকে ওঠে পিছিয়ে যায়। ইমন স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মুসকানের দিকে। তারপর নিজেই লজ্জিত হয়ে যায় ভীষণ। ইদানীং বড্ড বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে সে। মুসকানকে সামনে পেলে মাথা ঠিক থাকেনা তাঁর। হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে সরি বলে আবারো শাড়ি পড়িয়ে দেয়। আঁচল তুলে দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে স্থির হয়ে চেয়ে থাকে সে। কে বলে এই মেয়েটা বাচ্চা? এই তো কতো বড় বড় লাগছে। মুগ্ধ হয়ে অপলক ভাবে চেয়ে শান্ত গলায় বলে ওঠে ‘মুগ্ধময়ী’।
মুসকান লজ্জা পেয়ে চোখ সড়িয়ে নেয়। ইমন তাঁর কপালে শীতল স্পর্শ একে দিয়ে হাত চেপে ধরে ধীরে ধীরে নিয়ে যায় নিচে। সিঁড়ি বেয়ে নামছে মুসকান আর ইমন। ইমনের একহাতে মুসকানের হাত ধরা আরেক হাতে মুসকানের কাঁধ ধরা। নিচ থেকে ইরাবতী এ দৃশ্য দেখে বলেন,
—-‘মাশাল্লাহ খুব সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে’।
শেষ সিঁড়ি তে পা রাখার সাথে সাথে কানে ভেসে এলো,
—– মুসু???
ইমন মুসকান দুজনই চমকে তাকালো সামনের দিকে। মুরাদকে দেখে মুসকান ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। আর ইমন এক ঢোক গিলে খুব শক্ত করে চেপে ধরলো মুসকানের হাত। ছাড়লেই মুসকানকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে ভাবটা এমন।
.
আজ ইমনের জন্মদিন প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন অথচ মুরাদ তাঁকে উইশ করবে না তা কখনো হয়? স্কুল থেকে টিফিন পিরিয়ডে বেরিয়েছে প্রিয় বন্ধুর সাথে দেখা করবে বলে। কিন্তু এসে এমন কিছুর সম্মুখীন হবে ভাবতেও পারেনি। রাগ যতোটা পড়ে গেছিলো তাঁর থেকেও হাজারগুন বেড়ে গেলো। তাঁর অগোচরে কলিজার বোন, কলিজার বন্ধু এতো বড় কাজ করছে? এভাবে বার বার ঠকাচ্ছে ইমন তাঁকে? বন্ধু দিচ্ছে না বন্ধুত্বের মূল্য, বোন দিচ্ছে না ভাইয়ের মূল্য। ফিকে হয়ে যাচ্ছে ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক। ফিকে হয়ে যাচ্ছে এতো বছরের বন্ধুত্ব। আর কিছু ভাবতে পারছে না মুরাদ। দুহাত মুঠ করে বললো,
—- বাড়ি চল।
কথাটা শোনামাএই ইমন আরো শক্ত করে চেপে ধরলো মুসকানের হাত। ইরাবতী দ্রুত মুরাদের কাছে গিয়ে মুরাদের কাঁধে ধরে বললো,
—- বাবা মাথা গরম করো না। শান্ত হয়ে বসো সব বুঝিয়ে বলছি। আজ ইমনের জন্মদিন তাই,,,
—- বাড়ি চল মুসু।
মুসকান ইমনের থেকে হাত সরাতে নিতেই ইমন কঠিন চোখে তাকালো মুসকানের দিকে। মুসকান ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। ইমন বললো,
—- আজ না তুই যাবি না মুসু যাবে একটা বিহিত করেই আজ তোরা ভাই বোন বাড়ি যাবি।
—- আমার কসম মুসু তুই আমার সাথে বাড়ি চল। আজ আমি দেখতে চাই তোর কাছে কে বড় আমি না ইমন? বলেই ইরাবতীর হাত সড়িয়ে দিয়ে মুসকানের দিকে এগিয়ে যায় মুরাদ।
ইমনের হাত থেকে খুব জোর খাটিয়ে মুসকানের হাত সরাতে নেয়৷ কিন্তু পারে না৷ মুসকানের চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তেই থাকে। মুরাদ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় ইমনের দিকে। ইমনও রক্তিম চোখে চেয়ে রয়। ছাড়তে না চাইতেই মুরাদের চেষ্টা দেখে ছেড়ে দেয় ইমন। বন্ধুর চেষ্টা বৃথা যেতে দেয় না। শুধু শান্ত গলায় বলে,
—- মা রান্না করেছে দুজন খেয়ে যা।
মুরাদ তাচ্ছিল্যের চাহনী চেয়ে মুসকানকে হির হির করে টানতে টানতে নিয়ে যায়। দু হাত মুঠ করে রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে দেখে মুসকানের চলে যাওয়া। মুসকানের অবিরত কান্না বিধ্বস্ত মুখ দেখে চোখ বুজে ফেলে সে। মুসকান সদর দরজা অবদি গিয়ে ইমনের দিকে ঘুরে তাকায় একবার। তাঁর সে চাহনী দেখে হাটুগেড়ে বসে পড়ে ইমন৷ দুহাত দুদিকে দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,
—- ও কেনো বুঝতে চাইছে না? কেনো বুঝতে পারছেনা ও আমি ওর বোনকে ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি আমি ওর বোনকে। কেমন ভাই ও? কেমন বন্ধু ও? একসাথে বন্ধু আর বোনকে আঘাত করতে ওর বুক কাঁপে না? আজ যদি ওর জায়গায় অন্য কেউ হতো মেরে পুঁতে দিতাম আমি। বলেই দুহাতে মুখ ঢেকে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
চলবে….
চলবে…