#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৯
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
খুশিতে আত্মহারা মুসকান৷ তার দীপ্তময়ী মুখশ্রী তৃপ্তি সহকারে উপভোগ করছে ইমন৷ চেয়ারে পিঠ এলিয়ে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে বসে আছে সে। মুসকান পুুরো টেবিলে দৃষ্টি বুলিয়ে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন মুসকানের দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে ৷ বুকের ভিতর কি যে প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে তা সে বলে বোঝাতে পারবেনা। এই মায়াবী মুখশ্রীর একটুখানি হাসি দেখার জন্য কতোই না কাঠখড় পোহাতে হয় তাকে। তবুও মেয়েটার অভিমানের দাঁড়িপাল্লা ভারী হতেই থাকে। ইমন তার প্রগাঢ় দৃষ্টিজোড়া মুসকানের দিকে স্থির রেখে শীতল কন্ঠে বললো,
“শুধু কি দেখেই যাবে নাকি টেস্টও করবে? ”
মুসকান খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
“থ্যাংকিউ সো মাচ আজ আমি খুব খুশি খুব কত্তোদিন পর এভাবে সারপ্রাইজ পেলাম উফফ খুব ভাল্লাগছে আমার। ”
বাঁকা হাসলো ইমন ইশারা করলো খেতে মুসকান আর দেরী করলো না সামনে থেকে একটা ওঠিয়ে কেবল এক কামড় দিবে তৎক্ষনাৎ ইমনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ইমন নিচের দিকে মাথা দিয়ে ফোন টিপছে। মুসকান ঠাশ করে একটি চকলেটের ওপর হাতে রাখা চকলেটটি ছুঁড়ে ফেললো। ফোন থেকে চোখ তুলে তাকালো ইমন। ভ্রুজোড়া কুঁচকে বললো,
” কি হলো! ”
“আমি খাবো না। ”
চোখ,মুখ শক্ত করে বসে রইলো মুসকান। ইমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“কি ব্যাপার এমন দরকাচ্চা মেরে বসে রইলে কেন সমস্যা কি? ”
তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলো মুসকান ইমনের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে বললো,
“আমি খাবো না মানে খাবো না। আমি বাড়ি যাব মানে বাড়ি যাব। ”
বলেই চট করে ওঠে দাঁড়ালো ইমন আশ্চর্যান্বিত হয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে মুসকানের বাহু চেপে ধরে চেয়ারে বসালো। বললো,
” কি মুশকিল সমস্যা কি সেটা তো বলতে হবে। হঠাৎ করে কি হলো ভুত টুত ভর করলো নাকি মাথায়। ”
হকচকিয়ে গেলো মুসকান। আশেপাশে ভিতু নজর বুলিয়ে চেয়ার সহ ইমনের দিকে চেপে বসলো। তারপর গাল ফুলিয়ে বললো,
“তোমার ফোনে ঐসব লুচ্চা মহিলাদের ছবি কেন? ওদের সাথে তুমি কি করো? ”
“আসতাগফিরুল্লাহ ওদের সাথে আমি কি করবো। ”
“তুমি কি করবে মানে তোমার ফোনে ওদের পিক থাকবে কেন? ছিঃ আশেপাশে একটা ছেলে নেই অথচ অগণিত লুচ্চারা ঘুরাঘুরি করছে। এসবের জন্য বিদেশে গেছো তুমি এসবের জন্য! ”
চেঁচিয়ে কথাগুলো বললো মুসকান ইমন শুকনো গলায় বিষম খেলো। অবিশ্বাস্য চোখে মুসকানের দিকে তাকিয়ে কাশতে শুরু করলো। মুসকান তাকে ধমকাচ্ছে! ক্রোধে চোখ, মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে এসেছে মেয়েটার। প্রচন্ড অস্বস্তিতে চলছে তার শ্বাস-প্রশ্বাস গুলো। একদিকে যেমন এই রূপে তার হৃদয়ে আনন্দানুভূতি হচ্ছে অপর দিকে মেয়েটাকে শান্ত করতে হবে সেজন্যও নিজেকে তৎপরও করছে। বেশ শব্দ করে গলা খাঁকারি দিয়ে ইমন বললো,
“আরে পাগলী দোষটা ওদেরও না আমারও না দোষ হচ্ছে ক্যামেরা ম্যানের। ”
” ওওও তার মানে তোমার কুকীর্তি ধরা পড়ে গেছে বলে ক্যামেরা ম্যান’কে দোষ দিচ্ছো? আর ঐ লুচু মেয়েদের দোষ আড়াল করছো? বাহ ভেরী ফাইন হাত তালি তোমাকে। ”
মুসকানের এমন সাংঘাতিক কথাবার্তা শুনে পেট চেপে হাসি পেলো ইমনের। কিন্তু হাসলে আজ আর তার রক্ষা থাকবে না তাই জোর পূর্বক হাসিটা চেপে রেখে মুসকানের এক গালে হাত রেখে আদুরে স্বরে বললো,
“আরে বাবা আমি কারো দোষ আড়াল করছিনা। ঘটনা হচ্ছে ক্যামেরা ম্যান আমার একজন বন্ধু তাই সে ফাইজলামি করে ছবিগুলো তুলেছে। এই মেয়েগুলোর সঙ্গে হাই,হ্যালো ছাড়া আমার কোন পরিচয় বা সম্পর্ক নেই ট্রাস্ট মি। ”
“হাই, হ্যালো কেন থাকবে? কেন থাকবে হাই,হ্যালো ওদের সঙ্গে হাই হ্যালো না করলে তুমি কি মরে যাবে?”
“আরে বাবা এদের নিয়ে জেলাস ফিল করছো কেন এদের তো আমি চিনিও না। জেলাস ফিল করার হলে যাদের চিনি তাদের নিয়ে করো। তবুও বুঝবো কারণ আছে। ”
চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো মুসকানের। গলার স্বর নিচু করে বললো,
” কাদের চেনো তুমি? নাম বলো, পরিচয় দাও আমি চিনিনা এমন কোন মেয়েদের ইঙ্গিত করলে? ”
“কি মুশকিলে পড়লাম এই সিম্পল বিষয়ে কান্না করতে হবে কেন? এসবের জন্য এখানে নিয়ে আসছি আমি আমারই ভুল আসলে ফোনটাই হাতে দেওয়া উচিৎ হয়নি। ”
বিরক্ত হয়ে ফোন থেকে কিছু পিক ডিলেট করলো ইমন। এদিকে মুসকানের চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে শুরু করেছে। ইমন গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
” আমি এসবের জন্য আজ বের হইনি একটু শান্তির জন্য বেরিয়েছিলাম। এই শান্তিটুকু চাওয়া কি খুব অপরাধ হয়ে গেলো? ”
দু’হাতে চোখের পানি মুছে ভাঙা আওয়াজে মুসকান বললো,
“তুমি ওদের দিকে কেন তাকিয়েছো নানাভাই? ”
অবাক স্বরে উত্তর দিলো ইমন,
“কখন!”
“একটা ছবিতে তুমি ওদের দিকে তাকিয়েছো আমি দেখেছি। ”
“ওহ গড ভুল হয়ে গেছে আমার কি শাস্তি দেবে দাও তবুও কান্নাকাটি করে এই মূহুর্তটা নষ্ট করো না। হাতে সময় খুব কম অলরেডি আটটা বেজে গেছে।”
“আমি বাড়ি যাবো আমার ভাল্লাগছে না। ”
চোখ,মুখ শক্ত করে ইমন মুসকানের দিকে এগিয়ে গেলো মুসকানের চেয়ার টেনে মুসকানকে সহ একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। দু’হাতে দৃঢ়ভাবে দুগাল চেপে ধরে শান্ত গলায় বললো,
“এই আজাইরা বিষয় নিয়ে এমন কাহিনী তুই করবি আর আমি মেনে নেবো? ”
“আচ্ছা তাহলে আমিও অর্ধনগ্ন কোন পুরুষের দিকে তাকিয়ে থেকে পিক তুলে তোমায় দেবো। দেখো ফিলটা কেমন হয়, আমিও মুচকি হাসবো। ”
ইমন দৃঢ় চোখে চেয়ে মুখটা খানিকটা এগিয়ে বললো,
” এমন ইচ্ছে দু’দিন পরই পূরণ হবে তবে সে পুরুষ টা হবো আমি। ”
শিউরে ওঠলো মুসকান। লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো তার। ইমনের হাতের মুঠোয় থেকে ছাড় পেতে চেষ্টা করলো খুব কিন্তু তার পূর্বেই ইমন বললো,
“অকারণে সময় নষ্ট করার শাস্তি পেতে হবে এবার মুসু…এতো সুন্দর মূহুর্তটুকু কিছু সময়ের জন্য বিদঘুটে করার জন্য শাস্তি পেতে হবে, সেই সাথে একটা রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টিও করতে হবে। এই ত্যাজময়ী রূপটাকে আবেগময়ী’তে রূপান্তর করতে চাই৷ এক মিনিট সময় দিলাম প্রস্তুতি নাও। ”
অস্থিরতায় কপাল বেয়ে ঘাম শুরু হয়ে গেলো মুসকানের। নিঃশ্বাসে তার প্রচন্ড চঞ্চলতা। ইমনের হাতের মুঠোয় থেকে গাল দুটো ছাড়াতে চেষ্টা করতেই ইমন দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“উহুম এভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে জান কোন ছাড় নেই। অযথা কেঁদে কেঁদে আমার হৃৎপিণ্ডে ব্যাথা ধরাতে পারবে অথচ ব্যাথা কমানোর মেডিসিন দেবে না তাই হয় নাকি? ”
মুসকান চোখ মুখ খিঁচে বললো,
“আমি কিন্তু কান্না করবো। ”
নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নেশাতুর কন্ঠে ইমন বললো,
“আমি কাঁদতে দেবোই না। ”
ইমনের অমন কন্ঠ শুনে কিছুটা শান্ত হলো মুসকান। চোখ তুলে তাকিয়ে এক পলক ইমনকে দেখার সুযোগ পেলেও দ্বিতীয়বার আর পেলো না। তার পূর্বেই ইমন তার কোমল ওষ্ঠজোড়া আঁকড়ে ধরলো। পুরুষালি সিক্ত ওষ্ঠজোড়ার মাতাল করা স্পর্শে দিশেহারা হয়ে গেলো মুসকান। ইমনের থেকে সরে যাওয়ার দুঃসাহস তার নেই তবুও চেষ্টা করতেই ঘটলো বিপদ। ইমন তার ওষ্ঠজোড়ায় মত্ত থাকা অবস্থায়ই তাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। বেশ ভালোভাবেই ফেঁসে গেছে মুসকান বুঝতেই উপায় না পেয়ে এক’হাতে ইমনের শার্ট অপরহাতে গাল খামচে ধরলো।
মোমবাতির আলোগুলো খুব বেশি সময় টিকলো না। নিভে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। দূরের কিছুটা আলো দেখা গেলেও ছাউনির ভিতর একদমই বিদঘুটে অন্ধকার তখন৷ অন্ধকার হয়ে গেছে বুঝতেই মুসকানকে এক হাতে জড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ অন করে টেবিলের সাইটে রাখলো। মুসকান তখনও চোখ বন্ধ করে ইমনের বুকে জড়িয়ে আছে। তার এলোমেলো নিঃশ্বাসের প্রতিটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে ইমন। একহাতে চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে নিয়ে শান্ত গলায় বললো,
” চেয়ারে বসবে? ”
মুসকান চোখ বুজে থাকা অবস্থায়ই মাথা দুলালো। ইমন মুচকি হেসে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পাশের চেয়ারে নিজে বসলো। মুসকান নিজের ভারসাম্য রাখতে পারবে না বলে একহাতে তাকে ধরেও আছে৷ এতো উইক মানুষ কিভাবে হতে পারে ভেবে পায় না ইমন৷ এই যে মেয়েটা কেমন কাঁপছে নিজের ভারসাম্য টুকু ধরে রাখার শক্তি বোধ হয় নেই। যদি পড়ে যায় সেই ভয়ে এক হাতে ধরেও আছে,এক পা দিয়ে চেয়ারও আঁটকে আছে যাতে কোনভাবেই না পড়ে যায়। দীর্ঘ একটা সময় নীরবতায় কাটিয়ে যখন আকাশে মেঘ গুড়গুড় শব্দ হলো তখনি চৈতন্য ফিরলো ইমনের। মুসকানকে তাড়া দিয়ে বললো,
“এগুলো কি একটু টেস্ট করে দেখা উচিৎ ছিলো না?”
উত্তর পেলো না ইমন তাই একহাতে আলতো ছুঁয়ে এক গাল স্পর্শ করে জিগ্যেস করলো,
“খাবে না? ”
মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো মুসকান। কিন্তু ইমন একটি চকলেট হাতে নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে বললো,
“একটু খেতেই হবে বাকিটা বাসায় গিয়ে খাবে। আমি এগুলো প্যাক করার ব্যবস্থা করছি। ”
নাছোরবান্দা ইমন একটু খাওয়িয়েই ছাড়লো। তারপর ওখানের দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন ছেলেকে ফোন করে সবগুলো চকলেট প্যাক করে দিতে বললো। ওরা এসে সব প্যাক করে গাড়িতে রেখে এলো। ততোক্ষণে ইমন মুসকান’কে স্বাভাবিক করে ছাউনির চারপাশ ঘুরিয়ে দেখালো। শেষে গাঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললো,
“আরো দুটো দিন কিভাবে থাকবো জানিনা। তবে এ দু’টো দিনে একটাই রিকোয়েস্ট রিমি বা কাকিমা যখনই খেতে বলবে খেয়ে নিবে। একটুও অনিয়ম করবে না। যদি শুনি খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করেছো সব অনুষ্ঠান ক্যানসেল। ”
আঁতকে ওঠলো মুসকান আতঙ্কিত চোখে তাকালো ইমনের দিকে। ইমন ওর গাল টিপে দিয়ে মৃদু হেসে বললো,
“অনুষ্ঠান ক্যানসেল মানে বিয়ে ক্যানসেল নয় বিয়েটা পাঁচ মিনিটেই সেরে ফেলা যাবে। কিন্তু অনুষ্ঠান’কে কেন্দ্র করে তুমি নাওয়াখাওয়া ছেড়ে অসুস্থ হয়ে যাবে আর আমি এটা মেনে নিবো? ”
মুসকান ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রইলো। ইমন বললো,
“যা বোঝাচ্ছি বুঝেছো? ”
মাথা ঝাঁকালো মুসকান ইমন বললো,
“গুড গার্ল চলো এবার আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। ”
.
মুসকানকে নিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেলো। মাঝরাস্তায়ই শুরু হয়েছে ঝুম বৃষ্টি। ঠান্ডা আবহাওয়ায় গাড়িতেই ঘুমিয়ে যায় মুসকান। গুটিশুটি হয়ে ইমনের কোলে মাথা রেখেই পুরো রাস্তা ঘুমিয়ে কাটালো সে। ইমনও তাড়াহুড়ো না করে আস্তে ধীরে মুসকানের বাড়ির সামনে পৌঁছালো। তারপর মুরাদকে কল করলো ছাতা নিয়ে আসার জন্য। ততোক্ষণে মুসকানকেও কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু ওঠলো না মুসকান। তার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে যে কেউ বুঝবে সে কতোটা প্রশান্তি নিয়ে ঘুমুচ্ছে। এতো প্রশান্তির ঘুম নষ্ট করতে চাইলো না ইমন৷ মুরাদ ছাতা নিয়ে এলে ইমন বললো,
“ঘুমিয়ে গেছে কয়েকবার ডাকলাম ওঠলো না৷ ”
“তুই ছাতা ধর আমি নিয়ে যাচ্ছি। ”
প্রচন্ড অস্বস্তি’তে পড়ে গেলো ইমন। সে থাকতে মুরাদের কেন নিতে হবে ভাবা মাত্রই বিব্রত গলায় বললো,
” সমস্যা না হলে আমিই নিয়ে যাই। ”
মুরাদও অস্বস্তি’তে পড়ে গেলো। দু’বন্ধুর মাঝের সম্পর্কটা হঠাৎই কেমন অস্বস্তিকর হয়ে ওঠলো। তবুও ইমন সব অস্বস্তি দূরে ঠেলে মুসকানকে কোলে তুলে নিলো। মুরাদ ছাতা ধরে পিছন পিছন এলো। একদম মুসকানের রুমে গিয়ে ওকে শুইয়িয়ে দিলো ইমন। তারপর ত্বরিতগতিতে বেরিয়েও পড়লো। মুরাদ শুধু পিছন থেকে জিগ্যেস করলো,
“কাল তুই আসবি? ”
“নাহ বাচ্চা’রা মজা করুক আমি এসবে এসে কি করবো। ”
“ওও আচ্ছা আম্মাকে বলে দিবনি তুই আসবিনা। ”
গাড়িতে বসতে বসতে ইমন বিরবির করে বললো,
“শালা হিটলার ছোট বোন জামাই হতে যাচ্ছি কই আসার জন্য বার বার রিকোয়েস্ট করবি তা না। ”
“কিছু বললি? ”
চেঁচিয়ে ওঠলো মুরাদ। ইমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললো,
“বললাম আমার ভাই,বোনরা আসবে আর মুসুকে মেহেদী রিক্তা পড়াবে রিক্তা না আসা অবদি কেউ যেনো ওকে মেহেদী না পড়ায়। ”
____________________
ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেলো মুসকানের। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমন বললো,
“গুড মর্নিং ম্যাডাম এবার ওঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন। ”
“গুড মর্নিং আমি কখন এলাম? ”
“যখন আমি তোমার ভাইয়ের সামনে কোলে করে রুমে পৌঁছে দিলাম তখনি। ”
ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে ওঠে বসলো মুসকান। এক ঢোক গিলে বিস্ময়ান্বিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
“আল্লাহ কি বলো এসব কি করেছো তুমি? ”
“ঠোঁট এবং গলার দাগগুলো যেনো না দেখতে পায় তাই এসব করতে হয়েছে জান। ”
লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো মুসকান। আশেপাশে চেয়ে এক ঢোক গিলে বললো,
“তুমি খেয়েছো? ”
“হুম এইমাত্র এখন রিক্তাকে আনতে যাচ্ছি। আমার বন্ধু একঘন্টার মাঝে তোমাদের ওখানেও পৌঁছে যাবে। ”
“আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে নেই তাহলে। ”
“শুধু ফ্রেশ নয় একদম পেট ভরে খাবার খেয়ে তারপর ফোন দেবে এক ঘন্টার বেশি যেনো সময় না যায়। ”
“আচ্ছা রাখছি। ”
“ওয়েট কি কালার শাড়ি পড়বে মনে আছে? ”
“ভাবি বলছিলো পারপেল কালার পড়তে। ”
“আমি কি বলেছি? ”
“গোল্ডেন। ”
” দ্যান আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেয়ার এনিথিং এলস ওকে?”
“হুম। ”
“রাখলাম। ”
.
ইমন ঠিক যেভাবে যেভাবে বলেছে নিজেকে ঠিক সেভাবেই সাজিয়েছে মুসকান। ইমন যখন তাকে এভাবে সাজতে বলেছিলো বড্ড অদ্ভুত লেগেছিলো। এভাবে কেউ সাজে নাকি? মেহেন্দি অনুষ্ঠানেও শাড়ি! কিন্তু যখন ওর ভাবনার মতো নিজেকে সাজালো নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো।এবং অনুভব করলো তার সাজটা কতোটা ইউনিক। আসলে তার মানুষ’টাই যে ইউনিক তাই তার রুচিবোধও অলওয়েজ ইউনিক হয়। তবে তার রুচির মধ্যে মুসকান নিজেও রয়েছে তা ভাবতেই লজ্জায় গাল দু’টো লাল হয়ে গেলো। ঠিক তখনি ফোন বেজে ওঠলো রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমন বললো,
“কি ব্যাপার আর এতোক্ষণ রুমে দরজা আঁটকে থাকবে?”
ইমনের বলা বাক্য শেষ হতে না হতেই তার দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুললো রিমি। অপর দিকে পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে সাউন্ড বক্সে গান বেজে ওঠলো। মুসকান দরজা খুলে ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারলো না তার আগেই রিমি সায়রী সহ ইমনের বোন আলিয়া ওকে টেনে বাড়ির বাইরে বড়ো ওঠানে নিয়ে গেলো। সেখানে সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে সে স্টেজে নিয়ে ওকে বসানো হলো আশেপাশে আরো বোনরা মেহেদী লাগাচ্ছে। মুসকানকে বসিয়ে তার পাশে সায়রী আলিয়া বসলো। মুসকানের মামাতো,ফুফাতো ভাইবোনরা ছুটে এলো স্টেজে। সবাই মুসকানকে দেখে কিছু সময় হা করে চেয়ে থেকে চিৎকার করে বললো,
“মেহেদী অনুষ্ঠানে এসব কি গান বাজাচ্ছো? ”
তৎক্ষনাৎ মুসকানের খালতো ভাই শাওন গিয়ে গান চেঞ্জ করে সকলকে নাচার পারমিশন দিলো। গান বেজে ওঠতেই ইমন ওঠানের একপাশ থেকে স্টেজের দিকে তাকালো। রিক্তাকে ইশারা করলো মুসকানের কাছে যেতে। তারপর দূর থেকে কিছু সময় তাকিয়ে দেখলো তার প্রেয়সী’কে। হৃৎপিণ্ড নামক পাখিটা যখন অস্বাভাবিক ছটফট করতে শুরু করলো, কানে কেবল বাজতে থাকলো,
Mehndi Laga Ke Rakhna
Mehndi Laga Ke Rakhna…
তখনি পা বাড়াল স্টেজের দিকে। সকলে যখন নাচে মত্ত হয়ে মুসকানকে টেনে ওঠাতে যাবে তখনি ইমন গিয়ে মুসকানের পাশে বসে সবার থেকে মুসকানের হাত ছাড়িয়ে দিলো।যেহেতু গান বাজছে সেহেতু একটু উচ্চ স্বরে সকলকে বললো,
“বউদের বসে বসে নাচ দেখতে হয় নিজের বিয়েতে সকলের সঙ্গে নাচে যোগ দেওয়ার মতো বউ অন্তত আমার হবে না।”
#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২০
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
একদিকে মিউজিক, ডান্স অপরদিকে মুসকানের হাতে মেহেদী পড়ানো। পুরো অনুষ্ঠান জমে ওঠেছে। ইমন স্টেজের এক কোণায় বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে। পাশে রয়েছে দিহান এবং গুটিকয়েক বন্ধু। রিক্তা মুসকানকে মেহেদী পড়াচ্ছে। সায়রী তার পাশে বসে মেহেদী আর্ট দেখছে। একটা সময় ভাই,বোনরা ক্লান্ত হয়ে স্টেজের মেঝেতেই বসে পড়লো। ডান্স বন্ধের পাশাপাশি গানও বন্ধ করা হলো। দিহান তখন আড়চোখে সায়রীর দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
“আরে মিয়া গান থামায় কে ঝাকানাকা গান ছাড়া এক মূহুর্তও এই দিহান থাকতে পারেনা। ”
বিরক্তিতে চোখ, মুখ কুঁচকে ফেললো সায়রী। এতো আয়োজন করে গলা ফাটিয়েও কোন লাভ হলো না দিহানের। সায়রী এক বারের জন্যও তাকিয়ে দেখলো না তাকে। অথচ নব বর বধূ আড়চোখে, ফাঁকফোঁকরে কতো মাত্রায় যে দৃষ্টি বিলাস করছে হিসাব নেই। গা জ্বলে ওঠলো দিহানের। বসা থেকে ওঠে ইমনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ওই মিঞা সমস্যা কি মেহেদী অনুষ্ঠান মাইয়াগো তুমি এইখানে কি করো? আসো বন্ধু আসো আমরা গলা ভিজাই আসিগা। ”
বিরক্ত হয়ে স্টেজের অপর পাশের সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলো সায়রী। ইমন চোখ,মুখ শক্ত করে বললো,
“এক লাথি দিয়ে নিচে ফালাই দিব। ক্যাচাল করতেও ভাল্লাগে আবার ছ্যাঁচড়ামি করে ক্যাচাল মিটাতেও মন চায় তাইনা? ”
হকচকিয়ে গেলো দিহান আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে ইমনের দিকে নিচু হয়ে ফিসফিস করে বললো,
“মামু আমার যন্ত্রণা টা একটু বোঝ। ”
“কিচ্ছু বোঝার নেই এখানে। ঠিক জিনিস বেঠিক করেছিস এবার বেঠিক জিনিসও নিজ দায়িত্বে ঠিক কর।”
“বন্ধু কি ঐ মাইয়া একাই নাকি আমিও বলতো? ”
“ঐ মাইয়ার সম্মান টা আমার কাছে তোর থেকেও বেশি। ”
নিশ্চুপ হয়ে গেলো দিহান। আশেপাশে নজর বুলিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসলো। সেই হাসিটা আর কেউ বুঝুক না বুঝুক ইমন ঠিক বুঝলো কতোটা ক্লেশ মিশ্রিত হাসি ছিলো সেটা। তাই কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই দিহান ইমনকে এড়িয়ে চলে গেলো স্টেজ ছেড়ে। ইমনও তার পাশের বন্ধুগুলোকে নিয়ে ওঠে পড়লো। তারপর সিঁড়ি বেয়ে একে একে সবাই নেমে গেলো। ইমন যখন সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেললো তৎক্ষনাৎ কি মনে করে যেনো ঘাড় বাঁকিয়ে পিছন দিকে তাকালো। বুকের ভেতর ধক করেও ওঠলো৷ কারণ মুসকান উৎকন্ঠা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাই ওকে শান্ত করার জন্য চোখ মেলে ইশারা করে বোঝালো সে চলে যাচ্ছে না। আশেপাশেই আছে। মৃদু হাসলো মুসকান। ইমন বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে ইশারা করলো ‘ওকে? ‘ মুসকান চোখ বুজে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ধাপে ধাপে পা ফেলে নিচে চলে গেলো ইমন।
.
মুসকানকে মেহেদী পরানো শেষ। এবার মুসকানের কাজিন সিস্টার্সরা মেহেদী পরছে। রিক্তা সহ রিক্তার সাথে আসা দুটো মেয়ে সবাইকে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় সায়রী এসে বললো,
“কি ব্যাপার রিক্তা শুধু কনে’কে মেহেদী পরালে হবে? বর’কেও তো পরাতে হবে। ”
“ইয়েসস তা তো অবশ্যই বাট তিনি আগেই বলেছেন এসব পরবে না৷ জোর করে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করিয়েছি। ওর বাড়ি গিয়ে দিয়ে দিব। ”
মুসকান মেহেদী ভরা হাতে চুপচাপ বসে বোনদের মেহেদী পরানো দেখছে পাশাপাশি নিজের হাতের মাঝবরাবর ★Emon★ লেখাটুকু বার বার দেখছে। অদ্ভুত এক শান্তিতে ভরে ওঠছে হৃদয়। বাম হাতের তলার মাঝবরাবর স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে নামটি। ডানহাতেও লেখা আছে তবে তা স্পষ্ট নয়। গর্জিয়াছ ডিজাইনের মাঝে অতি কৌশলে ইমন নামটি লেখা আছে। এখানে একটা গেম টেষ্ট হবে। ইমনকে মুসকানের ডানহাতে লেখা নিজের নামটা খুঁজে বের করতে হবে। যদি না পারে তাহলে বর শুরুতেই হেরো বলে সাব্যস্ত হবে। মুসকানের বুকের ভিতর ধুকপুকানি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বার বার মন বলছে ইমন যেনো বের করতে পারে। কারণ ভাই বোনদের কড়া নিষেধ রয়েছে ইভেন সায়রীও পইপই করে বলে দিয়েছে সে যেনো কোনমতেই ইমনকে সহায়তা না করে। ইমন যদি নামটা বের করতে না পারে বড্ড কষ্ট পাবে মুসকান। সে কষ্টের শুরুটা বুঝি হয়েই গেলো। প্রচন্ড টেনশনে হার্টবিট দ্রুতবেগে ওঠানামা করতে শুরু করলো। মুসকান যখন অতি সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে চিন্তার অতল গহ্বরে তলিয়ে যায় তখনই মুরাদ এসে সকলকে বলে, অনেক মজা,মস্তি হয়েছে এবার সকলে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিতে। সবাই হৈচৈ করে ওঠে বলে মেহেদী পুরোপুরি না শুকালে কেউ খাবে না। মুরাদ তখন মুসকানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“সবাই পরে খাবে তুই চল আমার সাথে। বেলা গড়িয়ে গেছে বেশ এবার খেতে হবে। ”
মুসকান চিন্তিত হয়ে কিছু বলতে উদ্যত হতেই মুরাদ বললো,
“আমি খাইয়িয়ে দেবো একটুও নষ্ট হবে না মেহেদী চল। ”
মুসকান সকলের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে চুপচাপ ওঠে দাঁড়ালো। গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই মুরাদ ওর লম্বা আঁচলটুকু হাতে তুলে নিলো বললো ধীরে ধীরে যেতে তাড়াহুড়ো না করতে। বোনের প্রতি ভাইয়ের এই কেয়ারটুকু দেখে দূর থেকে তৃপ্তিকর হাসি হাসলো ইমন। মুরাদের ঘরে রিমি আর মুসকান বসে আছে। রিমিটা শরীর খুব একটা ভালো না। বাবু পেটে আসার পর থেকে মেয়েটা সুস্থই থাকে না। খাওয়া-দাওয়ার প্রতিও রুচি ওঠে গেছে। মুরাদ কখনোই রিমির প্রতি সেভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেনি। কেয়ারিং স্বভাব টা তার সঙ্গে কখনোই যেতো না৷ কিন্তু যে মেয়েটা তার সন্তান’কে গর্ভে ধারণ করে দিনের পর দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সে মেয়েটার প্রতি একটু যত্নশীল না হয়ে থাকতে পারলো না। একদিকে আদরের বোনের বিয়ে অপরদিকে বউ’টা অসুস্থ। সমস্ত যন্ত্রণা একেবারে চেপে ধরেছে মানুষ’টাকে। মুরাদ হাত ধুয়ে বউ আর বোনের সম্মুখে হাঁটু মুড়িয়ে বসলো। তখনি মরিয়ম আক্তার খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলেন ছেলের হাতে খাবার দিয়ে গ্লাসে পানি ভরে বিছানার সামনে চেয়ার টেনে চেয়ারের ওপর গ্লাস রাখলো। তারপর আবার গিয়ে বাটিতে করে তরকারি ভাত এনে টেবিলে রাখলো। ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“একটু খাবারও যেনো না থাকে তিনজন মিলে খেয়ে নেবে। ”
মা’কে সম্মতি দিয়ে মুরাদ বললো,
“তুমি আর কাকি মিলে ইমন, দিহান, রিক্তা, সায়রী ওদের একসাথে খাবার দিয়ে দাও।”
মরিয়ম আক্তার মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। মুরাদ ভাত মেখে একবার রিমিকে আবার মুসকান’কে দিলো। ওরা দু’জনই খাচ্ছে রিমি আর মুসকান টুকটাক কথাও বলছে। এক সময় মুসকানের বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠলো। আর একদিন তার পরই শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে সে। সকালে ঘুম থেকে ওঠেই আর ভাই,ভাবি আম্মুকে দেখা হবে না। ভাইয়ের আদরমাখা যত্নগুলোও রোজ রোজ পাওয়া হবেনা৷ আবেগান্বিত হয়ে কেঁদে ফেললো মুসকান। মুরাদ বুঝতে পারলো মুসকানের কি অনুভূতি হচ্ছে। তাই সে মাথা নিচু করে ভাত মাখতে ব্যাস্ত হয়ে রইলো। রিমি ভাই,বোনের এমন অবস্থা দেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বিভিন্ন টপিকে কথা তুললো। নিজ হাতে মুসকানের চোখের পানিও মুছিয়ে দিলো। কান্নার মাঝেই মুসকান বলে ওঠলো,
“বাবুর নাম কিন্তু আমি রাখবো বাবুকে ফার্স্ট কোলে কিন্তু আমি নিবো। ”
রিমি বললো,
“অবশ্যই নিষেধ কোথায় তুইই নিবি, তুইই নাম রাখবি। ”
তারপর মুরাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার খাওয়া হয়ে গেছে এবার তুমি আর মুসু খেয়ে নাও। ”
মুরাদ চোখ রাঙিয়ে বললো,
“আমার বাচ্চার খাওয়া এখনো হয়নি তাই চুপচাপ বসে থাকো। ”
কাঁদতে কাঁদতে ভাই ভাবির কাহিনী দেখে হেসে ফেললো মুসকান। মুরাদ বোনের হাসি দেখে বললো,
“পুরোটা দুজন মিলে শেষ করতে হবে। ”
মুসকান গাল ফুলিয়ে বললো,
“না এটুকু আমি খাবো না তাহলে বাবু রাগ করবে, কাঁদবে আর বলবে ফুপি আমার সব খাবার একাই খেয়ে নিলো। ”
রিমি শাসনী ভঙ্গিতে বললো,
“না মুসু বাবু একটুও কাঁদবে না বরং খুব খুশি হবে তার ফুপি সব খাবার একাই খেয়ে নিলে।”
মুরাদ এবার দু’জনকেই মৃদু ধমক দিয়ে বললো,
“চুপ বাবু খুশি হবে মা আর ফুপি দু’জন মিলে খাবারটা শেষ করলে। ”
ওদের দু’জনের মুখই চুপসে গেলো৷ ইমন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখে বিরবির করে বললো,
“এই মেয়েটা আর ঠিক হলো না। একটা মানুষ খাবারের প্রতি এতো অনীহা কি করে প্রকাশ করতে পারে? আল্লাহ জানে রিমির পরিস্থিতি তে আসলে এই মেয়ে কি ভেলকি দেখাবে!”
.
সকলেই ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করছে। রিক্তা’কে পৌঁছে দিয়ে ইমন আবারো মুসকানদের বাড়িতে ফিরেছে। ইমন আসতেই মরিয়ম আক্তার এক গ্লাস সরবত ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“আব্বাজান রাতে খাবার খেয়ে তারপর বের হবেন একেবারে। ”
ইমন মৃদু হেসে বললো,
“ইনশাআল্লাহ। ”
মরিয়ম আক্তারও খুশি হয়ে তার ভাইয়ের মেয়েকে ডাকতে ডাকতে ভিতরের রুমে চলে গেলেন। কারণ সে জানে ইমন এখন শুধুমাত্র মুসকানের জন্যই এসেছে। তার মেয়েটিও ইমনের জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। মরিয়ম আক্তার ভিতরে গিয়ে সায়রী’কে পাঠিয়ে দিলো সায়রী এসেই বললো,
“ইমন মুসু অপেক্ষা করছে ফটাফট যা মেয়েটার ওপর বেশ ধকল গেলো। তোকে বললাম আর বের হোশ না কথা তো শুনিস না। ”
ইমন ভাবুক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সায়রীর দিকে তারপর বললো,
“রুম ফাঁকা আছে? ”
“হ্যাঁ’রে ফাঁকাই আছে তাড়াতাড়ি যা বেচারি এই গরমে সিদ্ধ হয়ে গেছে একদম। আমি শাড়িতে একঘন্টাই কমফোর্টেবল ফিল করিনা অথচ মেয়েটা সেই সকাল থেকে একভাবেই রয়েছে শুধু তোর জন্য। ”
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সায়রী’কে পাশ কাটিয়ে মুসকানের রুমে চলে গেলো ইমন। সায়রী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে গুটিগুটি পায়ে চললো মুরাদের রুমে।
.
বিছানার একপাশে চুপচাপ বসে ছিলো মুসকান। ইমন রুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দিতেই জড়োসড়ো হয়ে গেলো একদম। লজ্জায় তার গালদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। দু-হাত ভর্তি মেহেদী দেওয়াতে কেমন বউ বউ অনুভূতি হচ্ছে। আড় চোখে ইমনের হাতটাও দেখার চেষ্টা করলো। সে মেহেদী পড়েছে কিনা। ইমন ধীর পায়ে এগিয়ে আসতেই হাতের তালুতে লাভ আর্ট দেখতে পেলো। যার ভেতরে একটি মাত্রই শব্দ হয়তো লেখা আছে। ইমন এসে মুসকানের পাশে বসতেই মুসকান নম্র সুরে বললো,
“এতো সময় লাগলো সে কখন থেকে অপেক্ষা করছি আমি।”
বিছানায় দু হাত গেড়ে রেখে ঘাড় বাঁকিয়ে মুসকানের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইমন। লম্বা এক শ্বাস টেনে বললো,
“কষ্ট হচ্ছে? ”
নম্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুসকান বললো,
“কষ্ট হবে কেন? ”
প্রশ’টি করতেই ইমন অদ্ভুত চোখে মুসকান’কে আগাগোড়া দৃষ্টি বুলিয়ে বললো,
“শাড়ি পরেছো গয়না পরেছো এই গরমে এমন ভাবে কষ্ট হতেই পারে তাই জিগ্যেস করছি। ”
মুসকান ছোট্ট এক শ্বাস ছেড়ে বললো,
“একটু হচ্ছে বাট ঠিক আছি আমি তুমি এবার এখান থেকে তোমার নামটি বের করোতো। ”
উৎফুল্ল মুখোভঙ্গিতে দু-হাত বাড়িয়ে দিলো মুসকান। ইমন ছোট ছোট অথচ গভীর শ্বাস ছেড়ে মুসকানের মুখোশ্রী থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দৃষ্টি স্থির করলো দু’হাতে। তারপর আচমকাই ওর হাতদুটো নিজের দু’হাতে ধরে সম্মুখে ধরে বললো,
“আমার পিচ্চি বউয়ের পিচ্চি হাতে মেহেদী পরালে এতো কমনীয় লাগে তা তো জানা ছিলো না। ”
লজ্জায় মিইয়ে গেলো মুসকান। নিঃশ্বাস হয়ে গেলো ভারী। ইমন ওর কোমল হাতজোড়া নিজের বলিষ্ঠ হাতজোড়া দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একহাতে নিজের নাম স্পষ্টই দেখতে পেলো ইমন মুসকানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে নিজের নামটায় বুলাতে বুলাতে বললো,
“এইতো আমার নাম। ”
ইমন কথাটি বলামাত্রই মুচকি হাসলো মুসকান। ওর ওষ্ঠের নিচের তিলটার দিকে গভীর দৃষ্টি তে তাকিয়ে ইমন বললো,
“হাসির কি হলো? ”
মুসকান ওর ডানহাতের দিকে ইশারা করে বললো,
“এখানে আছে বের করো। ”
ইমন ভ্রু কুঁচকে একবার মুসকানের মুখের দিকে আবার হাতের দিকে তাকালো। বললো,
“এখানে লেখা থাকলে তো পাবো। ”
“এখানেই আছে এটাইতো গেম এখানে তোমার নাম আছে সেটা তোমাকেই বের করতে হবে। যদি বের করতে না পারো তাহলে তুমি হেরে যাবে। ভাই,বোনরা মিলে তোমাকে খুব ক্ষেপাবে। ”
“তাই নাকি বউয়ের হাতে আমার নাম অথচ আমি পাবো না? আমার থেকেও ট্যালেন্টেট আমার বউ নাকি ওহ না কাজটা তো রিক্তার আমার অবুঝ পিচ্চি বউটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টা চলছে। ”
কথাগুলো বলতে বলতেই নির্মল গতিতে মুসকানের কোলে মাথা রাখলো ইমন। ওর হাত দু’টো দু’দিক থেকে টেনে বুকের কাছে এনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে রইলো বললো,
“এখানে আমার নাম লেখা আছে তাই না কিন্তু নাম তো এখানে থাকার কথা নাম তো অন্য জায়গায় থাকে। ”
“উহুম অন্য কথাও নেই তুমি আমার সাথে একদম চালাকি করবে না। আর এতো সময়ও দেওয়া যাবেনা। আর মাত্র এক মিনিট সময় তোমার হাতে এর মাঝেই বের করতে হবে। ”
ইমন ওর হাতের দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে বললো,
“যদি বের করতে পারি তার বিনিময়ে কি পাবো আমি?”
“ওমা এর বিনিময়ে আবার কি চাই তোমার? ”
“আহামরি কিছু নয় কি দেবে বলো? ”
“কি দেবো, কি চাও? ”
“আই নিড ইউর লিপ।”
অতি সহজ গলায় যে বাক্যটি উচ্চারণ করলো ইমন, সে বাক্যটি শুনে পুরো শরীর ঝিমঝিম করে ওঠলো মুসকানের। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হবে এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। হাত,পা মৃদু কেঁপেও ওঠছে। সে মূহুর্তেই ইমন ওর হাতগুলো’তে এলোমেলোভাবে লেখা ছোট্ট ছোট্ট ওয়ার্ডগুলো মুসকানকে ইশারা করলো। তারপর বললো,
” ডান। ”
মুসকান চট করে ওর হাত গুলো সরিয়ে নিলো। তারপর ইমনের মাথা সরানোর চেষ্টা করে বললো,
“তোমার কাজ শেষ এবার যাও আমি ফ্রেশ হবো। ”
ইমন স্বেচ্ছায় ওঠে বসলো মুসকান ভাবলো সে চলে যাবে। তাই দ্রুত ওঠে দু’পা মেঝেতে ফেলে আরেক পা এগুতে যাবে অমনি ইমন ওর জরজেট শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো। বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো ওর। কম্পনরত শরীরে পিছন ঘুরে শাড়ির আঁচল একটুখানি ধরে কাঁপা গলায় বললো,
“কি হলো?”
“আই নিড ইউর লিপ। ”
ইমনের গভীর চাহনিতে মাদকীয় কন্ঠস্বরে মুসকানের দৃষ্টি হয়ে গেলো এলোমেলো নিঃশ্বাস হয়ে গেলো ঘন থেকে ঘনতর ইমনের থেকে আঁচল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে কাঁপা স্বরে বললো,
“পারবো না আমি। ”
“পারতে হবে আর মাত্র একটা দিন আছে এরপর সামান্য কিসে সীমাবদ্ধ থাকবো না তাই আপাতত যা চাই তা দিয়ে আমাকে শান্ত করো। নিজের সাহসটাও যুগিয়ে নাও। ”
চোখ বুঝে ফেললো মুসকান দু’ফোটা অশ্রু নির্গত হলো ওর চোয়াল বেয়ে। তা দেখে শান্ত হলো ইমন আঁচল ছেড়ে দিয়ে ওঠে দাঁড়ালো। থমকানো সুরে বললো,
“লাগবে না। ”
কথাটি বলেই আর এক মূহুর্ত দেরী করলো না সে। বড়ো বড়ো পা ফেলে রুম ত্যাগ করলো মাত্র।
#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২১
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে ইমনদের বাড়ি থেকে আসা আত্মীয়-স্বজন সকলেই চলে গেলো। মুরাদ,দিহান সহ মুরাদের কাজিনরা মিলে সকলকে গাড়ি অবদি এগিয়ে দিলো। গায়ে হলুদের কিছু নিয়ম কানুন ছিলো যা রিমির মা মুসকানের চাচি বাথরুমে ঢুকে পালন করে বেরিয়ে এলেন। লম্বা এক শাওয়ার নিয়ে একঘন্টা পর মুসকানও বেরিয়ে এলো। চোখ, মুখ লাল হয়ে আছে তার। একদিকে সারাদিনের ধকলে শরীরটা দুর্বল লাগছে, অপরদিকে কাল থেকে ইমনের সঙ্গে তার বিন্দু যোগাযোগও হয়নি। যা থেকে স্পষ্ট ইমন তার ওপর ভয়ংকর রেগে আছে। এতোটাই রেগে আছে যে মানুষ’টা না একটা টেক্সট করছে, না একটা কল করছে। কিন্তু তার তো রেগে থাকলে চলবে না। তাই মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দিলো। তারপর বিছানার একপাশে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দুরুদুরু বুকে কল করলো ইমনের ফোনে। দু’বার রিং হওয়ার পরও যখন ফোন রিসিভ হলো না তখন দুচোখ ভর্তি জল ছেড়ে দিলো মুসকান। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই বেশ কয়েকবার কল করলো কিন্তু না একবারো রিসিভ হলো না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো মুসকানের। বুকের বা পাশে চিনচিনে এক ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। কেন এতো কষ্ট দিচ্ছে ইমন? তার দেওয়া ভালোবাসা যতোটা না সুখ দেয় তার দেওয়া কষ্ট গুলো তোতোটাই তীক্ষ্ণ হয় কেন? মরিয়ম আক্তার দরজায় ঠকঠক শব্দ করছেন আর মুসকান’কে ডাকছেন। মুসকান ত্বরিতগতি’তে দুচোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে দরজা খুলে দিলো। স্মিথ হেসে পিছন ঘুরে বিছানায় এসে বসলো। মরিয়ম আক্তার দু’হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে এসে বিছানায় রেখে বললো,
“কিরে মুখটা এমন লাগছে কেন? চোখ গুলো ডেবে গেছে কেমন আয় খাওয়িয়ে দেই তার পর মাথা টিপে দেবো ঘুমিয়ে যাবি। ”
মায়ের বলা বাক্যগুলো শেষ হতে না হতেই ডুকরে উঠলো মুসকান। মরিয়ম আক্তার মেয়ের কান্না দেখে নিজেও কেঁদে ফেললেন। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“কাঁদিস না মা এটাই তো নিয়ম প্রতিটি মেয়েকেই বিয়ের পর স্বামীর সংসারে যেতে হয়৷এ সময়টা অনেক কঠিন মা তবুও মেয়েদের এ সময়টা মানিয়ে নিতে হয়। শতকষ্ট হলেও যেতে হয় শ্বশুর ঘরে। ”
ব্যাথাটা এবার যেনো দ্বিগুণ ভাবে মুসকানের হৃদয়ে নাড়া দিলো। তার বিয়ে সত্যি সত্যি কাল তার ইমনের সঙ্গে বিয়ে। ভালোবাসার মানুষটিকে স্বামী রূপে পাবে সে। সারাজীবনের জন্য প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হবে মানুষটার সঙ্গীনী হওয়ার। সেই সাথে মা,ভাইয়া’কে ছেড়ে চলেও যাবে। এরপর হয়তো মা, ভাইয়ের কাছে আসবে কিন্তু সেই সময়টা আর এখনকার সময়টা হবে সম্পূর্ণ আলাদা। সব দুঃখ,কষ্ট একবারে চেপে ধরলো মেয়েটাকে। মা’কে জড়িয়ে ধরে অনেকটা সময় কেঁদেই চললো।
.
বুকের ভিতর কি যে অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে মুসকানের তা সে কাউকে বোঝাতে পারবে না। বিয়ে নিয়ে কতোটা এক্সাইটেড ছিলো সে। তার সকল এক্সাইটমেন্ট ইমন এক নিমিষেই নিঃশ্বেষ করে দিল। পুরো দু’টো রাত একটি দিন মানুষ টা একটুর জন্যও তার সাথে দেখা তো দূরের কথা একটু কথাও বলেনি। চারদিকে ফজরের আজান ধ্বনি বাজছে। সারারাত একটুও ঘুম হয়নি মুসকানের। জাগ্রত ঘুমে বিভোর ছিলো সে। একটু পর পরই ফোন দেখেছে এই বুঝি ইমন একটা টেক্সট করলো,এই বুঝি ইমন একটা ম্যাসেজ করলো। বরাবরই ফলাফল শূন্য।মেঝেতে তাকিয়ে দেখলো মরিয়ম আক্তার নামাজরত অবস্থায় রয়েছে। আর তার পাশে সায়রী ঘুমাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওঠে বসলো মুসকান। শুকনো এক ঢোক গিলে ইমন’কে একটা টেক্সট দিলো। তারপর অজু করে এসে নামাজ শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে আবারও কল করলো ইমন’কে। ঘুমের ঘোরে ফোন রিসিভ করে ‘হ্যালো বলতেই মুসকানের হৃৎস্পন্দন থেমে গেলো। মরিয়ম আক্তার কোরান শরীফ পড়ছেন মুসকান রুমের বাইরে গিয়ে একহাতে বুকের বামপাশে চেপে ধরে রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বললো,
“নানাভাই সরি… ”
ইমন ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দিলো,
“সরি দিয়ে আমি কি করবো আমার দরকার তোমাকে। আই নিড ইউ,আই নিড ইউর এভরিথিং। ফোন রাখো ঘুমাতে পারলে ঘুমিয়ে নাও। কারণ আজকের পর আবার কবে ঘুমানোর সুযোগ পাবে আই ডোন্ট নো। ”
বুকের ভিতরটা মারাত্মক পর্যায়ে কেঁপে ওঠলো মুসকানের। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া ছাড়ছে যেনো। হঠাৎ করেই ইমন কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে। গতদিন কথা না বলে তাকে এতো কষ্ট দিয়ে আজ একটু খোঁজও নিলো না। নিজের মতো কথা বলতে শুরু করেছে। তবে কি ইমন পালটে যাচ্ছে? একদিনের ব্যবধানেই এমন পরিবর্তন কারো হয়? কেন করছে ইমন এমন সে কি বুঝতে পারছে না তার হৃৎপিণ্ডের কষ্ট হচ্ছে, তার মুগ্ধময়ী খুব কাঁদছে…
ফোন কেটে দিয়েছে ইমন। ব্যর্থ মুসকান ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে রুমে ঢুকলো। চেয়ার টেনে বসে চোখ বন্ধ করে রইলো দীর্ঘ সময়৷ বুকের ভিতর কেমন ধকধক করছে। চাপা এক কষ্ট হচ্ছে যেই কষ্টের সঠিক কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। আবার হয়তো খুঁজেও পাচ্ছে। দু’টো কারণ এক.ইমনের ইগনোর,দুই.আজ তার বিয়ে।
__________________
গাঢ় খয়েরী রঙের বেনারসি’টা মনে হয় পৃথিবীর অন্য কোন রমণীর জন্য নয় কেবল মুসকান নামক এই রমণীর জন্যই তৈরি করা হয়েছে। বাঙালি আকারে বেনারসি পড়ানোয় অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য ঘিরে ধরেছে ওকে। সে যে বাঙালি বউ এটা নিঃসন্দেহে বুঝে ফেলা যাবে। তার সাজেও বাঙালিয়ানার কমতি রাখেনি রিক্তা। মাথার মাঝবরাবর দোপাট্টা’টি অতি সন্তর্পণে গেঁথে আছে। চুল থেকে কপালের আগ বরাবর জড়োয়াটিই যেনো ছোট্ট মুখশ্রী’তে রাজস্বী ভাব স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলেছে। নাকের নোলকটা যেনো তার বধুবেশের স্পষ্ট এক উদাহরণ। গলা থেকে পেট অবদি ভারী ভারী গহনায় ভরা। হাত,পা,কান, গলা, নাক সর্বাঙ্গেই স্বর্ণের অলংকারে সজ্জিত আজ সে। আর এ সাজ শুধুই ইমনের জন্য।
কনে সাজে বোন’কে দেখে চোখটা জুড়িয়ে গেল মুরাদের। সম্মুখে পুতুলের ন্যায় এক রাজরানীই যেনো দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দু’টো টলমল করছিলো মুরাদের। বোনের দুগালে আলতো ছুঁয়ে কপালে চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বললো,
“আমার মুসু যে অনেক বড়ো হয়ে গেছেগো রিমি। দেখ আমার মুসু’কে একদম রাজরানীর মতো লাগছে। ”
আবেগে আপ্লুত হয়ে মুসকান কেঁদেই ফেললো। চোখে জল রিমিরও। মুরাদ বোনকে তৃপ্তি সহকারে দেখে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“আরে পাগলী কাঁদার কি আছে সন্ধ্যায় যাবি সকাল সকালই এসে পড়বি। একটুও কাঁদবি না দাদাভাই আছে তো…”
দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো সায়রী। বললো,
“হুম তাই তো দাদাভাই আছে নানাভাইও আছে মুসুরানীর কান্না কেন হুম? ”
মুরাদ সায়রীর দিকে তাকিয়ে কুটিল হেসে বললো,
“ওমা সায়ু তোকে তো শাড়িতে বুড়ি বুড়ি লাগছে আর আমার মুসুকে দেখ পুরোই রাজরানী। ”
সায়রী ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
“এই মুসু বলতো কেমন লাগছে আমি বাবা এই শাড়ি টারি একদম পছন্দ করিনা। তোর কাজিন সিস্টার্সদের জ্বালাতনে পড়তে বাধ্য হলাম। ”
মুসকান ক্রন্দনরত অবস্থায় মৃদু হেসে দিলো। রিমি বললো,
“আপু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে এ প্রথম তোমাকে শাড়িতে দেখছি। দিহান ভাইয়া তো চোখের পলকই ফেলছিলো না আজ। লুকিয়ে লুকিয়ে খুব দেখছে তোমায়। ”
সায়রীর মুখটা ছোট হয়ে গেলো। মুরাদ রিমির দিকে চোখ রাঙিয়ে সায়রী’কে তাগাদা দিয়ে বললো,
“এই সায়ু তুই মুসুর সঙ্গে থাক আর কোন কাজ নেই তোর আমি ওদিকটা সামলাই ওদের আসার সময় হয়ে গেছে। ”
সায়রী সম্মতি দিতেই মুরাদ বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে রিমিকে শাসনী স্বরে বললো,
“আক্কেল জীবনে হবেনা তাইনা? কোথায় কি বলতে হয় আজো শেখাতে পারলাম না। আল্লাহ জানে বাচ্চা টা মায়ের মতো মাথামোটা হয় কিনা! ”
.
ইমনদের বাড়ি থেকে ইমনের কাজিন’রা প্রায় সকলেই এসে উপস্থিত হয়েছে। এরা এসেই বউ দেখার জন্য বেশ তাগাদা দেওয়া শুরু করেছিলো। কিন্তু কনে পক্ষের কেউই হুটহাট বরপক্ষ’কে কনে দেখাতে রাজি নয়৷ এই নিয়ে বরপক্ষ কনেপক্ষের মাঝে বেশ ঝগড়াই বেজে গেলো। ঝগড়ার মূলে রয়েছে দু’পক্ষেরই মহিলা পার্টি। এক পর্যায়ে ইমনের ফুপাতো বোন আলিয়া সিরিয়াস রেগে গেলো। রেগে গিয়ে সরাসরি ইমনকেই কল করলো সে। এদিকের খবর পেয়ে ইমন মুরাদ আর দিহান’কে ফোন দিয়ে গালি দিলো কয়টা তারপর বললো,
” এসব ঝামেলা যদি দশমিনিটের মধ্যে না মেটাতে পারিস সোজা গিয়ে বউ নিয়ে চলে আসবো। এতো প্যারা আর ভাল্লাগছে না। ”
ইমনের এহেন কথা শুনে মুরাদ হন্তদন্ত হয়ে মুসকানের রুমের সামনে যায় তারপর রিমি,সায়রী আর মামাতো বোনদের বেশ জোরেসোরে এক ধমক দেয়। আর আলিয়াদের বলে ভিতরে যেতে। মুরাদের ধমকে রিমি কেঁদেই দিলো সায়রী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে শুধু বললো,
“এইসবের ভিতর নাক গলিয়ে ভালো করলিনা মুরাদ। ”
সায়রীর কথা শেষ হতেই দিহান বললো,
“সায়ু…ইমন ফোন করেছিলো। ”
দিহানের কথা শুনে সায়রী আরো দ্বিগুণ রেগে গেলো। কিন্তু আলিয়ারা খুশিতে গদগদ হয়ে হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়লো।
সকলে ভিতরে গিয়ে এমন হট্টগোল শুরু করলো যে পাঁচমিনিটেই মাথা ধরে গেলো মুসকানের। আলিয়া,অভ্র বাদে চারদিকে শুধু অপরিচিত মুখ। সে অপরিচিত ব্যাক্তিরা এসে গা ঘেঁষে ঘেঁষে ছবি তুলছে। শুধু মেয়েরাই নয় ইমনের ভাই,ব্রাদার অপরিচিত যারা আছে তাঁরাও এসে ছবি তুলছে। একজন যখন মুসকানের কাঁধ জড়িয়ে সেলফি নেওয়ার চেষ্টা করলো মুসকান বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। তারপর চোখে,মুখে বিরক্তি প্রকাশ করে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো নিজেদের কেউ আছে কিনা৷ কিন্তু না কেউ নেই। এরই মধ্যে দু’পাশ থেকে ছেলেরা এসে ওকে ঘিরে ধরে ছবি ওঠাতে শুরু করলো। কান্না পেয়ে গেলো মুসকানের। এ কোন বিপদের সম্মুখে পড়লো সে!
আলিয়াকে যে কিছু বলবে তারও উপায় নেই। সে সবার সঙ্গে সেলফি নিতে ব্যাস্ত। এক পর্যায়ে মাথা ঘুরাতে শুরু করলো মুসকানের। গিজগিজে মানুষের ভীরে এমন অস্বাভাবিক আচরণে ফাপর হয়ে গেলো মেয়েটা। অভ্র তখন ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মুসকান তা লক্ষ করে অভ্রকে ইশারা করলো। অভ্র হয়তো কিছু টা বুঝতে পেরেছিলো। তাই মুসকানের পাশে থাকা ছেলেগুলোকে টেনে টুনে কিসব বুঝিয়ে দুরে সরিয়ে নিলো। মুসকান একটু স্বস্তি নিয়ে আবারো বিছানায় বসলো। তারপর ফোন খুঁজে বের করে ইমন, সায়রী,রিমি তিনজনকে একই ম্যাসেজ সেন্ট করলো। সঙ্গে সঙ্গে সায়রী,রিমি ছুটে এলো ইমনও কল করলো তাকে। ইমনের ফোন পেয়ে কেঁদেই ফেললো মুসকান। ইমন ক্ষুব্ধ স্বরে বললো,
“অভ্র’কে ফোন দাও। ”
মুসকান তাই করলো অভ্রকে ইমন কি বললো বোঝা গেলো না কিন্তু তার মিনিট কয়েক পরেই পুরো রুম ছেলে বিহীন হয়ে গেলো। তার পরপরই ইমন আলিয়াকে ফোন করলো চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
” একজন্য তোদের ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করেছি আমি? তোদের সাথে অতোগুলো ছেলেরা কেন গেলো আন্সার মি! সার্কাস দেখতে গেছিস ওখানে কোন সার্কাস হচ্ছে না। ক’জন ছিলি ভিতরে কেকে ছিলি পাই টু পাই ম্যাসেজ করে পাঠাবি তারপর বাকি হিসাব নিবো। ”
চারদিকে থমথমে এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে গেলো। আলিয়ার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সে প্যান্ডেলের ভিতরের একটি চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে। কিছু সময়ের ব্যবধানেই বরের গাড়িও চলে এলো। গেটের এপারে মেয়ে পক্ষ ওপারে ছেলে পক্ষ দাঁড়িয়ে আছে। মেয়ে পক্ষের সাথে সায়রী’কে দেখে দিহান তৎক্ষনাৎ ছেলে পক্ষে চলে গেলো। ইমনকে মিষ্টি সরবত খাওয়িয়ে যখন মুসকানের মামাতো বোন লম্বা হাঁক ছেড়ে দুলাভাই ডাক দিলো, ডান হাত চুলকাতে চুলকাতে মিষ্টি করে হাসলো দিহান তখন টিটকারি মেরে বললো,
“কি বেয়াইনসাহেবা আপনার চুলকানি বাড়ছে নাকি?”
“আরে আরে ওল্ড দুলাভাই যে কন কি ধপাধপ বিশ হাজার ছাড়েন তারপর দেখাইতাছি চুলকানি বাড়ছে না কি বাড়ছে। ”
“ওল্ড ইজ গোল্ড শালিসাহেবা তা বিশ হাজার দিলেই চলবে তো? ”
“আরে আরে বলেন কি সবে তো সূচনা পর্ব উপসংহার অবদি পৌঁছাতে হবে তো। ”
দিহান আর মুসকানের মামাতো বোনের কান্ড দেখে জোর পূর্বক হাসি থামিয়ে রাখলো সায়রী। ইমনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ইমন কনেপক্ষের চাহিদা মিটাও। ”
দিহান তৎক্ষনাৎ বললো,
“এসব কি কথা ছিঃ আমার বন্ধু কনে ছাড়া কারো চাহিদা মিটাবে না, আমার বন্ধু ক্যারেক্টারলেস না। ”
এমন একটা কথা দিহান বলে ফেলবে যা ভাবার বাইরে ছিলো। বিষয়টা ইমনেরও পছন্দ হলো না। কিন্তু বর হওয়ার দুরুণ কিছু বলতেও পারলো না। কিন্তু সায়রী চুপ করে রইলো না। মুখ্যম জবাব সে দিলোই,
“ওওও আচ্ছা তো আপনি বুঝি ক্যারেক্টারলেস? ”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি করলো দিহান তারপর নিজের পকেট থেকে একটি এক হাজার টাকার নোট আরেকটি বিশ টাকার নোট বের করে সায়রীর হাতে প্রথম বিশ টাকা দিয়ে বললো,
“এই যে বিশ। ”
তারপর হাজার টাকা দিয়ে বললো,
“এই যে হাজার ইজ ইকোয়াল বিশ হাজার ডান। ”
বরপক্ষের সকলেই হোহো করে হেসে ওঠলো। কনে পক্ষরা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলো। সায়রী হাতে থাকা টাকাটা মুচড়ে দিহানের মুখের ওপর ঢিল দিয়ে চলে গেলো। ইমন বুঝলো সায়রী সিরিয়াস রেগে গেছে। তাই তার পাশে থাকা অপর বন্ধু টিকে চাহিদা অনুযায়ী পাঁচ হাজার বেশি টাকাই দেওয়া হলো। পরিবেশ শান্ত শিষ্ট করে মুরাদ আর মরিয়ম আক্তার এসে ইমনকে হাতে আংটি, ঘড়ি পড়িয়ে দিয়ে বরের বসার জায়গায় নিয়ে বসিয়ে দিলো।
.
চলে এলো কাঙ্ক্ষিত সেই সময়টি। যে সময়টি সাক্ষী হবে দু’জন নরনারীর প্রণয় থেকে পরিণয় নিশ্চিত করার। কিন্তু কে জানতো এই সময়টিতে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী হবে! যাকে পাওয়ার জন্য এতো মরিয়া হয়ে ওঠেছিলো মেয়েটি, যার দূরত্ব এতো পুড়িয়ে ছিলো মেয়েটাকে তার বউ হওয়ার জন্য তিন কবুল কেন বলছে না সে। কেন কান্নাকাটি করছে? সকলেই বলে প্রতিটি মেয়েই নাকি বিয়ের সময় তিন কবুল বলা কানীন কান্নাকাটি করে। সে হিসেবে মুসকানের কান্নাটার জন্যও তারা কেউ বিচলিত হচ্ছে না৷ কিন্তু ইমন যে সকলের মতো নয়। সে ঠিক বিচলিত হচ্ছে। তাঁদের দুজনের মাঝখানে যে লাল পর্দা টেনে দেওয়া হয়েছিলো তা এক হাতে উঁচিয়ে মুসকানের দিকে চেপে বসলো ইমন। সকলের সম্মুখে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“এই কান্নার অর্থ কি মুসকান? এভাবে কান্না করোনা তাহলে হয়তো সকলে ভেবে নিবে এই বিয়েতে তুমি নারাজ। বিয়েটা সারাজীবনের ব্যাপার সকলকে শুনিয়ে কবুল বলতে হবে না। তুমি কেবল আমায় নিশ্চিত করো, তুমি কি কবুল বলেছো?”
মুসকান কাঁদতে কাঁদতেই মাথা ঝাঁকালো। ইমনের দাদি ঘোর বিরোধিতা করে বললো,
“এই মেয়ে মুখে কুলু পাতছো কেন? বিয়ে করতে মন চায় কবুল বলতে মন চায় না কেন? কবুল বলো। ”
ইমন শান্ত দৃষ্টি মেলে বললো,
“প্রয়োজন নেই দাদি ও বলে দিয়েছে। ওর যে বিয়েতে মত আছে তা সকলেই জানি। এতোগুলো মানুষের ভীরে মুখে স্পষ্ট নাই বা বললো মনে মন বললেই হবে বিয়েতে কবুল যে সকলকে শুনিয়েই বলতে হবে এমন কোন বিধান আমাদের ধর্মে নেই,এটা আমাদের সমাজেরই প্রচলিত নিয়ম। ”
মুরাদ তখন বললো,
“ইমন এতো ঝামেলার দরকার নেই, মুসু তুই সকলকে শুনিয়েই বল। ”
ইমন শান্ত গলায় বললো,
“আমার কোন অসুবিধা নেই। ”
ওদের সম্মুখে থাকা হুজুরটি আবারো নিয়ম অনুযায়ী বাণী আওড়িয়ে মুসকান’কে কবুল বলতে বললো। হয়তো অনেক সময় লাগলো তবে সকলের তাগাদায় তিন কবুল স্পষ্ট ভাবে বলেই দিলো মুসকান। সকলের মুখেই ফুটে ওঠলো তৃপ্তির হাসি। চোখ বুজে ফেললো ইমন লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে তার স্থানে গিয়ে বসলো সে। কিন্তু মুসকান? সে তো ঘোরে আছে। তার অনুভূতি যে ব্যক্ত করে বোঝানো সম্ভব নয়। একহাত দুরে বসে থাকা ইমন মুসকানের দিকে দৃঢ় দৃষ্টি তে তাকালো। অদ্ভুত সুখের আবেশে ছেয়ে গেলো তার মনটা। দৃষ্টি দিয়ে কেবল ব্যক্ত করলো কিছু লাইন –
মনে কি পড়ে আমায়..
দেখা হয়েছিল কোন সূদুর নিলীমায়;
হয়েছিল কথা কিছুক্ষণ, আবেগে
বেসেছিলে ভালো ততোক্ষণ, সবেগে
তোমারই পরশে হয়েছিলাম আমি রিক্ত;
তা দেখে আজকে সবে অনুরক্ত।
কত শত প্রেম উজার করে দিয়েছিলে তুমি আমায়,
সর্বশেষ পরিনতিতে আজ তোমার আমার পরিণয়। (বিশ্বজিৎ মালাকার)
চলবে…