হৃদপিন্ড ২ পর্ব ৩৫+৩৬+৩৭

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২২
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়। মাত্র তিন অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। সে বিষাদের ছায়াই যেনো নেমে এসেছে মুরাদের পুরো পরিবারের বুকে। মরিয়ম আক্তার নিজেকে শক্ত করার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। তবুও তার বুক ফাটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসছে। বাপ মরা ছেলে, মেয়ে দুটো’কে নিয়ে সংসার তার। আজ সে সংসার ছেড়ে আদরের ছোট্ট কন্যাটি চলে যাচ্ছে পরের সংসারে।
মেয়েদের বলা হয় ‘পরের ধন’। একদিন-না-একদিন তাদের নিজের ঘর ছেড়ে পরের ঘরে চলে যেতে হয়। কিন্তু এই চলে যাওয়াটা যে কতোখানি বেদনাদায়ক হয় তা কেবল একটি মেয়ে এবং মেয়ের পরিবারই উপলব্ধি করতে পারে। যেদিন একটি মেয়ে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্বামীর ঘরে যায়, সেদিনটি হয় বড় বেদনাবিধুর। সবার চোখে থাকে অশ্রু। মুসকানের বাবা নেই কিন্তু বাবার থেকেও বেশি কিছু বড়ো ভাই মুরাদ। মাথা নিচু করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মুরাদ। দু’পরিবারের পরিচয় পর্ব শেষে বিদায়ের মূহুর্তেই ভেঙে পড়েন মরিয়ম আক্তার। মেয়ে’কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। ইমনের হাত চেপে আর্তনাদ করে বলেন,

“বাবাগো আমার কলিজার টুকরো টাকে সারাজীবনের জন্য তোমার হাতে তুলে দিলাম। তুমি ওকে দেখে রাইখো, আমার কলিজাটা বড়ো অবুঝ তুমি ওরে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিও। ”

ইমন মরিয়ম আক্তার’কে ভরসা দিলো। আশেপাশে তাকিয়ে কেবল মুরাদকে খুঁজলো। একপাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দিহানকে ইশারা করলো মুরাদ’কে নিয়ে আসার জন্য। মুরাদ নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তুলে এগিয়ে এলো। সকলেই ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ইমন মুসকানকে। মুরাদ মুসকানের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াতেই ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে ফেললো মুসকান। এবার আর চোখের জল আঁটকে রাখতে পারলো না মুরাদ। কয়েক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো তার চোখ বেয়ে। বোনের কপালে স্নেহের ছোঁয়া দিয়ে বুকে টেনে নিলো। ইমনের একহাত চেপে ধরে বললো,

“আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা কখনো করিস না ইমন। আমার অতি মূল্যবান সম্পদটি আজ তোর হাতে তুলে দিচ্ছি। এর যথার্থ মূল্যায়ন করবি আজীবন। ”

একে একে চাচা,চাচি,মামা,মামি,খালা,খালু,ভাই-বোন, বন্ধু বান্ধব সকলের থেকে বিদায় নিলো বর কনে। কিন্তু কনের কান্না ক্রমাগত বাড়তেই থাকলো। মুরাদ বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাঁটছে, মুসকানের একহাত তখনো ইমনের হাতের মুঠোয়। সকলেই ওদের গাড়ি অবদি পৌঁছাতে এলো। মরিয়ম আক্তার’কে রিমির মা সামলাচ্ছেন। তাকে আর গাড়ি অবদি আসতে দেওয়া হয়নি৷ এদিকে গাড়িতে বসেও মুরাদকে ছাড়লো না মুসকান। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান প্রায় হওয়ার অবস্থা। উপায় না পেয়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলো মুরাদ ইমনের বাসা অবদি পৌঁছে দিয়ে তবেই ফিরুক। সকলের কথামতো ইমনের সম্মতিতে মুরাদ মুসকানকে নিয়েই গাড়িতে বসলো। তখনো ইমন মুসকানের হাতটি শক্ত করে ধরে আছে। মুসকানের ডানপাশে ইমন বা পাশে মুরাদ বসেছে। গাড়ির সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসেছে ইমনের ফুপাতো ভাই অভ্র। বাকি গাড়িতে সবাই যার যার স্থানে বসেছে। মুসকানের সঙ্গে রিমির নানী এবং সায়রীই ইমনের বাড়িতে যাচ্ছে। আঞ্চলিক ভাষায় এটাকে বলা হয় ডোলাধরা। অর্থাৎ ডোলাধরায় যাচ্ছে সায়রী এবং মুরাদের নানী শাশুড়ি।
.
গাড়িতে বসেও কেঁদে যাচ্ছে মুসকান। মুরাদ ওকে অনেক ভাবে বোঝাচ্ছে আর ইমনকে আড়চোখে দেখছে। মুসকানের এই কান্না ইমন’কে কতোখানি যন্ত্রণা দিচ্ছে তা কেবল মুরাদ ওর দৃষ্টিজোড়াতেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। একদম শক্ত হয়ে স্থির চোখে বসে আছে ইমন৷ নিঃশ্বাস ফেলছে কিনা এটুকুও বোঝা যাচ্ছে না। নিঃসন্দেহে তার বোনোর জন্য একমাত্র উপযুক্ত পাত্র ইমন। যা প্রতিটা সেকেণ্ড উপলব্ধি করতে পারে মুরাদ। সময় গড়াতে না গড়াতেই চৌধুরী বাড়ির চমকপ্রদ আলোক সজ্জায় সজ্জিত গেটের সম্মুখে এসে গাড়ি থামলো। অভ্র গাড়ি থেকে নামতেই ভাই,বোনরা ছুটে এলো। ইরাবতী ইমনের দাদি,ফুপু, খালারা সকলেই ছুটে এলেন৷ গাড়ির ডোর খুলে প্রথমে মুরাদ নামলো। তারপর মুসকান’কে নামতে বললো। ইমন মুসকান’কে সাবধানে নামতে সহায়তা করে মুসকানের পর নিজেও নেমে দাঁড়ালো। ইরাবতী পরম স্নেহে মুসকান’কে কাছে টেনে নিলেন। নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, তার মা কিছু দিয়েছে কিনা। মুসকান মাথা নাড়িয়ে ডানহাত এগিয়ে দিলো। ইরাবতী মৃদু হেসে জিনিসটি নিয়ে তারপর ওর কাধ জড়িয়ে এগিয়ে চললো ভিতরের দিকে। সবাই যখন বউ নিয়ে বিজি হয়ে গেলো৷ মুসকানও যখন সবার ভীরে কান্না থামিয়ে দিলো মুরাদ তখন শুধুমাত্র ইমনের থেকে অনুমতি নিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো। কারণ তার মায়ের পাশে এখন তাকে খুব প্রয়োজন। মা,বোন,স্ত্রী সবাইকে সামলাতে হবে তাকে। কারো প্রতি এক চুল পরিমাণ দায়িত্বেরও কমতি রাখতে চায় না সে।
__________________
বাড়ির সকলে বউ দেখে মিষ্টি খাওয়াচ্ছিলো। সাথে ক্যামেরা ম্যান তুলছিলো ছবি। বেশ ক’জন মিষ্টি খাওয়ানোর পর নেক্সট আরেকজন মিষ্টি খাওয়াতে গেলেই গা গুলিয়ে বমি পায় মুসকানের। ইমন তখন বাঁধা দিয়ে খাওয়াতে নিষেধ করে আর বলে এখন এসব বন্ধ করতে। ইরাবতীও সবাইকে বলে এবার ওদের একটু রেষ্ট করা দরকার। পোশাক পাল্টে রাতের খাবারও খেয়ে নেওয়া উচিৎ। অলরেডি দশটা বেজে গেছে। সবাই যার যার মতো সরে যায়। অনেকে আবার পোশাক পাল্টানোর জন্য ভিতরে যায়। ইমনও ওঠে দাঁড়ায় এবং উপরের দিকে চলে যায়। ইরাবতী মুসকানকে বসতে বলে এবং জানায় সে নিজেই উপরে নিয়ে যাবে ওকে। মুসকানের পাশে তখন বসে ছিলো রিমিট নানি,আর ইমনের দাদি। ড্রয়িং রুম ফাঁকাই বলা চলে। আকরাম চৌধুরী দুরে একপাশে বসে ফোনে কথা বলছে। ইরাবতী সহ বাকিরা রান্নাঘরে। সোফায় বসে ছিলো মুসকান তার পাশেই দাদি নানি। ইমনের দাদি এমন নিরিবিলি পরিস্থিতি দেখে মুসকানের বাহুতে নিজের কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো,

” কিলো…নাতবউ কিছু টিছু খাইছো নাকি? ”

মুসকান অবুঝের মতো তাকিয়ে রইলো। নানি মুখ টিপে হেসে কিসব ইঙ্গিত দিলো। আর দাদি সরাসরি বলেই ফেললো,

“শুনো নাতবউ বাচ্চা ধরলে ধরুক গা ওষুধ মান খাও? এখনকার ছেড়িরা ওষুধ টষুধ খাইয়া জীবনের বারোটা বাজাই দেয়। পরে পাছে আর বাচ্চা ধরে না। ভালো কথা কই শোনো ওষুধ জানি খাও না। আকরামরে তো আল্লাহ আর সন্তান দিলো না ঐ একজনই৷ এইবার তোমরা এক হালি পোলাপান নিয়া আসোতো। ”

লজ্জায় চোখ,মুখ রক্তিম হয়ে গেলো মুসকানের। কান দুটো গরম হয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস বেরোতে শুরু করলো তার। হাত,পায়ে শুরু হলো মৃদু কম্পন। বুকের ভিতরটা কেঁপে কেঁপে ওঠলো। গলা শুকিয়ে হয়ে গেলো কাঠ। মাথাটা করতে থাকলো ভন ভন ভন ভন৷ এরই মাঝে দাদি আবারো বলে ওঠলো,

“এই বুড়ির কথা মালুম না করলে পরে কিন্তু পস্তাতে হবে৷ স্বামীর বয়সের দিকে যেনো নজর থাকে। এই বয়সে পুরুষ মানুষ রা হালি হালি বাচ্চার বাপ থাকে। শুনলাম তোমার ভাইয়ের বউও পোয়াতি। আশেপাশে সবাইরে দেইখা ইমনেরও কিন্তু মন চায় বাচ্চা কাচ্চার বাপ হইতে। খালি জানি নিজের কথা ভাবো না স্বামীর সুখের কথাও ভাইবো। ”

অস্বস্তি তে বসে থাকাই যেনো দায় হয়ে গেলো। আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে দুরুদুরু বুকে মাথা নিচু করে রইলো মুসকান। তখনি ইরাবতী এসে বললো,

“আরে ফুপু কি যে বলেন সবে বিয়ে হলো আগে শশুর বাড়ি কি তা বুঝুক স্বামী,সংসার বুঝুক তারপর না হয় বাচ্চার চিন্তা। ”

“রাখো তোমার বোঝাবুঝি এই বোঝাবুঝি করতে করতে তোমার ছেলের বয়স বুঝি বসে থাকবে। ছেলের চুলে যে পাকন ধরছে সেই খেয়াল আছে। শেষমেশ না এমন হয় বাচ্চা দেখে লোকে প্রশ্ন করে বসে এইগুলা কি আপনার নাতি,নাতনী! ”

লজ্জায় মাথা কাটা গেলো ইরাবতীর থমথমে মুখে বললো,

“আমার ছেলের কতো আর বয়স হয়েছে ফুপু। চল্লিশ তো হয়ে যায়নি। ”

“বত্রিশ বছর বয়সকে তোমার কম মনে হয়? এখন বাচ্চা না নিলে আর কবে বাচ্চার মুখ দেখবো কও শুনি? আমার আকরাম তো ছাব্বিশ বছর বয়সেই বাচ্চার মুখ দেখছে। ”

“থাক ফুপু এসব কথা এখন থাক মুসকান চলো উপরে চলো। ”

দাদি এবার মুসকান’কে চেপে ধরে বললেন,

“যা বললাম মনে থাকে জানি নয়তো মনে রাখিস নিজের কপাল নিজে খাবি। পুরুষ মানুষের মন কিন্তু অতো সহজ না। ”

মুসকানও থমথমে মুখে নানির দিকে তাকালো৷ সেও দাদির কথাকে সমর্থন করলো। মুসকান এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এবার ইরাবতীর দিকে তাকালো। ইরাবতী ওকে ওঠিয়ে আশ্বস্ত করে বললো,

“তারা আগের দিনের মানুষ এসব বলবেই। এসব মাথায় না নিতে আমাদের যখন নাতী-নাতনীর প্রয়োজন হবে আমরা নিজেরাই আবদার করবো মা।”

মুসকানকে বোঝাতে বোঝাতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে গেলো ইরাবতী। ইমন তখন রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সাদা রঙের টিশার্ট, কালো রঙের ট্রাউজার পরিহিত ছিলো সে,চুলগুলো ছিলো ভেজা। তার শুভ্র মুখমণ্ডল দেখে বোঝাই যাচ্ছে সবেমাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে সে। মা আর বউকে দরজার সম্মুখে দেখে হালকা কেশে ওঠে বেরিয়ে ওদের যাওয়ার পথ করে দিলো। মুসকান মাথা নিচু করে রুমে ঢুকলে ইরাবতী একটু পিছিয়ে ইমনকে বললো,

“বাসার বাহিরে যেনো না যাওয়া হয়। ”

ইমন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“সায়রীর ওখানে যাচ্ছি আলিয়ার রুমে আছে না? ”

ইরাবতী মাথা নাড়াতেই ইমন চলে গেলো। ইরাবতীও স্বস্তি নিয়ে রুমে ঢুকে মুসকানকে হেল্প করলো পোশাক ছাড়তে। যে কাজ ননদ বা অন্য আত্মীয় রা করার কথা ছিলো সে কাজ দায়িত্ব এবং স্নেহ মাখিয়ে ইরাবতীই করে দিচ্ছে। এতো কিছুর মাঝে ইরাবতীর এই কেয়ারটুকু অনেকটা তৃপ্তি দিলো মুসকানকে। এবং নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করলো আজীবন এই মানুষগুলোর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে সে। যাদের মাধ্যমে সে পেয়েছে তার ভালোবাসার মানুষ তার স্বামী’কে।
.
সকলে মিলে হাসিঠাট্টা করছে ইমনের সুসজ্জিত রুমে বসে। ভেজা চুলে বাসন্তী রঙের লাল পাড় শাড়ি পরিহিত মুসকান গুটিশুটি হয়ে বসে আছে বিছানার একপাশে৷ শরীরটা আর চলছে না তার মন চাচ্ছে মাথাটা বালিশে গুঁজে দিতে। শরীরটা এলিয়ে দিতে বিছানায়। তীব্র মাথার যন্ত্রণায় অসহনীয় লাগছে তার। ইমনের ভাই,বোনরা রুম থেকে যাচ্ছেও না ইমনও রুমে আসছে না। সব মিলিয়ে অসহ্য হয়ে ওঠেছে মুসকান। ফোনটা কোথায় আছে তাও জানেনা৷ আসার পর থেকে মা বা ভাইয়ের সাথে কথাটুকুও হয়নি। তার দাদাভাই কোনদিক দিয়ে চলে গেলো টেরও পেলোনা এই নিয়ে অভিমানের কমতিও রইলো না তার। ইমনের ওপরও বিশাল অভিমান জমা হয়ে আছে তার। এতো এতো অভিমান জমিয়ে রাখতে রাখতে সে এখন খুবই ক্লান্ত। তার এই ক্লান্তি ভরা মুখোশ্রী দেখে মায়া হলো সায়রীর। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিয়ে সকলকে তাড়া দিয়ে বললো,ঘুমাতে যেতে। কিন্তু কেউ রুম ছাড়তে রাজি নয়৷ এমন সময় দিহান ঢুকলো রুমে বললো,

“বাসর সাজানোর জন্য তোমাদের জানি পারিশ্রমিক কতো ছিলো? ”

সকলে এবার হৈহৈ করে বলে ওঠলো,

“পনেরো হাজার, পনেরো হাজার। ”

দিহান এবার কলার উঁচিয়ে আড়চোখে সায়রী’কে দেখে নিয়ে ভাব নিয়ে বললো,

“যদি আরো পাঁচ হাজার যোগ করে দেওয়া হয় কতো সেকেন্ডে রুম ছাড়বে? ”

সকলে মিলে হৈহৈ রৈরৈ করতে করতে বললো,

“দু’সেকেণ্ড ”

বলেই সকলে এক লাইনে বেরিয়ে গেলো। আলিয়া তো দিহানের গাল টেনে দিয়েও গেলো। তা দেখে সায়রী ফুঁসে ওঠে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। দিহান মুচকি হেসে বললো,

“আহারে রমণীরা কেন যে আমার গালটাকে এতো পছন্দ করে… ওষ্ঠাধর কি কারো নজরে পড়ে না নাকি।”

মুসকান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সায়রীর দিকে। সায়রী নিজেকে শক্ত করে নিয়ে দিহান’কে উদ্দেশ্য করে মুসকান’কে বললো,

“মুসু ওকে বল রুম ছাড়তে নয়তো আমার হাতে খুন হতে হবে। ”

দিহান দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সায়রী’কে উদ্দেশ্য করে মুসকান’কে বললো,

“মুসু ওকে বলে দে আমি ওর হাতে খুন হতেও প্রস্তুত।”

এমন সময় ইমন রুমে ঢুকলো আর বললো,

“কেন আমার বউ কি তোদের মতো গাঁজা খাইছে নাকি? ”
#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৩
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
“কেন আমার বউ কি তোদের মতো গাঁজা খাইছে নাকি? ”

ইমনের কথা শুনে দিহান গোল গোল চোখে তাকিয়ে বললো,

“দোস্ত বাসর রাতে বউ’কে গাঁজা খাওয়ালে কিন্তু আহামরি সমস্যা হয় না। ”

দিহানের কথা শুনে ইমন সায়রী দুজনই চোখ কটমট করে তাকালো। দিহান জিবে কামড় দিয়ে বললো,

“সরি সরি একটুর জন্য ভুলে গেছিলাম। শালা বিয়ে করলি করলি ছোট বোন’কে বিয়ে করতে গেলি কেন? ”

এবার যেনো দ্বিগুণ ফুঁসে ওঠলো ইমন। সায়রীর দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,

” এই স্ক্রু ঢিলা’কে এখান থেকে নিয়ে যাবি? ”

সায়রী দিহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইমন’কে বললো,

“এসব মাতালদের দায়িত্ব একদম নিতে পারবো না আমি। ”

দিহান তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে আঙুল ওঠিয়ে কিছু বলবে তার পূর্বেই হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো সায়রী। তাই আঙুলটা ব্রেকফেল করে ইমনের দিকে চলে গেলো। তৎক্ষনাৎ ইমন এমন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো যে হুট করে আগুনে ছ্যাঁকা খেলে যেমন অনুভূতি হয় তেমন মুখোভঙ্গিতে হাত সরিয়ে ঝড়ের গতিতে রুম ত্যাগ করলো দিহান। ইমন বিরবির করে কয়েকটা গালি দিয়ে বেশ শব্দ করেই দরজা চাপিয়ে লক করে দিলো। কিঞ্চিৎ চমকে ওঠলো মুসকান। সহসা বক্ষঃস্থলে ধুকপুকানি বেড়ে গেলো তার। অস্থিরচিত্তে ডানে-বামে নজর বুলিয়ে নিঃশব্দে বিছানার এক কোণায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো। ইমন মুসকান’কে শোয়া অবস্থায় দেখতেই এগিয়ে গিয়ে হাত ঘড়ি খুলে সেন্টার টেবিলের ওপর রাখলো। তারপর বিছানায় বসে শান্ত গলায় কয়েকবার ডাকলো মুসকান’কে কিন্তু সাড়া শব্দ পেলো না। ঠিক বুঝলো অভিমানে সিক্ত হয়ে তার অর্ধাঙ্গিনী কথা বলছে না। তাই হাত বাড়িয়ে কাঁধে স্পর্শ করে বললো,

“দীর্ঘ প্রতিক্ষার এই পরিণয় পেয়ে উপরওয়ালার নিকট শুকরিয়া না জানালে তিনি অসন্তুষ্ট হবে মুসু। ”

নড়েচড়ে ইমনের হাতটি কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলো মুসকান। ক্ষীণ স্বরে বললো,

“আমার শরীর ভালো লাগছে না আমি ঘুমাবো। ”

মুচকি হেসে একহাত বাড়িয়ে মুসকানকে টেনে তুললো ইমন। ফলশ্রুতিতে ফুলে সজ্জিত বিছানাটি এলোমেলো হয়ে গেলো। মুসকান অভিমানে গাল ফুলিয়ে ইমনের দিকে এক নজর তাকিয়ে দৃষ্টি নত করে ফেললো। ইমন এক হাত বাড়িয়ে ওর এক গাল ছুঁয়ে আদুরে স্বরে বললো,

“আজকের দিনে এভাবে রাগ করতে হয় না। ”

মুসকান এবার এক ঝটকায় ইমনের হাত সরিয়ে দিলো। ত্যাজি কন্ঠে বললো,

“আর গতদিনে তুমি যা করলে এসব বুঝি করতে হয়? ”

” অফকোর্স করতে হয়। একটা চুমু খেতে বলাতে যার চোখ দিয়ে বন্যা বইয়ে যায় তার সাথে এর থেকে আর কি ভালো আচরণ করবো? ”

রাগান্বিত হয়ে ইমনের থেকে সরে বসলো মুসকান। ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“আমার থেকেও তোমার কাছে চুমু গুরুত্বপূর্ণ? ”

“ইয়েস কারণ চুমুটা তুমিই আমাকে দেবে। ”

“পারবো না আমি। ”

“পারতে তো হবেই। ”

“কখনোই না। ”

“বিয়ে করেছি বউ তুমি আমার যা বলবো তাই করতে হবে। এখন চলো নামাজ পড়তে হবে। ”

ইমন ওঠে দাঁড়ালো। কিন্তু মুসকান চুপটি মেরে বসেই রইলো। ইমন পিছন দিক ঘুরে দৃঢ় কন্ঠে বললো,

“কি বললাম আমি মুসু…। ”

“আসছি যাও তুমি। ”

“চুপচাপ বিছানা ছাড়ো এক সেকেণ্ডও যেনো সময় না লাগে। ”

অভিমানে আরক্ত হয়ে ছলছল দৃষ্টিতে নেমে দাঁড়ালো মুসকান। সাথে সাথে ইমন ওর হাত টেনে নিয়ে গেলো বাথরুমে। তারপর দুজন এক সঙ্গে নামাজ শেষ করলো। নামাজ শেষে ইমন ওঠে বললো,

“জায়নামাজ গুলো গুছিয়ে কাবার্ডে রেখে এসো। ”

ইমন গিয়ে বিছানায় বসলো। দৃষ্টি তার মুসকানের দিকেই স্থির। সদ্য বিবাহিতা মুসকান’কে এতোটাই মোহনীয় লাগছে যে এক সেকেণ্ডের জন্যও দৃষ্টি সরাতে পারছে না। শুভ্র অনুভূতি’তে ছেঁয়ে গেছে মন।মুসকান জায়নামাজগুলো যথাস্থানে রেখে। পিছন ঘুরতেই দেখলো ইমন গভীর দৃষ্টিতে তারপানে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ওর বক্ষঃস্থলে মৃদু কেঁপে ওঠলো। এক ঢোক গিলে শাড়ির আঁচল টেনে ডান কাঁধে ওঠিয়ে ধীর পায়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো। দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে ফেললো ইমন৷ লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে আবার দৃষ্টি মেললো। বললো,

“শরীর খারাপ লাগছে? ”

কথাটি বলেই এক হাত বাড়িয়ে মুসকানের কপাল এবং গলা চেক করলো। ঈষৎ তাপ অনুভব করতেই বললো,

“এখানে বসো আসছি আমি। ”

ইমন ওঠে যেতেই চাপা একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে বসলো মুসকান। কেমন গুমোট অনুভূতি’তে ছেঁয়ে গেছে তার হৃদয়। পুরো ঘরজুড়েই যেনো গুমোট ভাব, নাকি এটিই ঝড়ের পূর্বাভাস? অতিরিক্ত মানসিক চাপে মাথা ব্যাথা ধরে গেলো মুসকানের। পুরো শরীরেও কেমন ম্যাজম্যাজ করছে। একটা বিয়ে মানেতো আর কম ধকল নয়। সে ধকলের কথা চিন্তা করেই ইমন কিছু মেডিসিন এবং এক গ্লাস পানি নিয়ে মুসকানের সম্মুখে ধরলো। তা দেখামাত্রই সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠলো মুসকানের। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকাতেই ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো,

“কি হলো? ”

এক ঢোক গিলে মুসকান জিজ্ঞেস করলো,

“কিসের ওষুধ? ”

প্রশ্নটি করে নিজে নিজেই ভয় এবং লজ্জায় দৃষ্টি নত করে ফেললো। ইমন রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসলো। ওষুধ গুলো মুসকানের সম্মুখে ধরেই বললো,

“আমি কাকে বিয়ে করেছি আমার বউ কে হয়েছে এটা তোমার থেকেও আমি ভালো জানি। ”

বোকা চোখে মাথা উঁচিয়ে তাকালো মুসকান৷ ইমন গম্ভীর মুখোভঙ্গিতে বললো,

” মেডিসিন গুলো খেয়ে নাও শরীর ব্যাথা সেরে যাবে জ্বরও কমে যাবে। ”

লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো মুসকান। ইমন ওর মুখের কাছে ওষুধ ধরতেই ওষুধ গুলো মুখে তুললো। তারপর পানি দিয়ে গিলে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে প্রশ্ন করলো,

“তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাও তাইনা? আমার কান্না তোমাকে খুব সুখ দেয়। ”

” আমি তোমাকে কষ্ট দেইনি বরং কষ্ট থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি দিচ্ছি। ঘুমিয়ে পড়ো সকাল সকাল ওঠতে হবে। ”

বিছানা ছেড়ে ওঠে গিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করলো ইমন৷ মুসকান বুঝলো ইমন যে পর্যন্ত না চাইবে সে পর্যন্ত খোলাখুলি কথা বলা তো দূরের কথা অভিমান দেখিয়েও লাভ নেই। তাই ছোট্ট একটি শ্বাস ছেড়ে শুয়ে পড়লো সে । ইমন এসে তার পাশে শুতেই সে পাশ ফিরে কিছুটা দূরে সরে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকলো। ইমন অপেক্ষা করছিলো কখন মুসকান ঘুমে বিভোর হয়৷ কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি ঘুমের মেডিসিন খেয়েও মেয়েটার ঘুম পেলোনা বরং অভিমানে অশ্রুপাত করতে থাকলো। এতোটা সময় নিজেকে কঠিনভাবে সংযত করলেও এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো ইমনের। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুসকানের দিকে চেপে গেলো। একহাত বাড়িয়ে বউ’কে কাছে টানতে নিলেই ছিটকে সরে গেলো সে। কান্নার বেগ বাড়িয়ে ফুঁপাতে শুরু করলো। ইমন আরো একটু চেপে যেতেই দেয়ালের সঙ্গে ঠেকে গেলো মুসকান৷ তবুও ইমনের দিকে ফিরে তাকালো না। ইমনও তাকে ফেরার জন্য জোরাজোরি করলো না৷ নিজের উত্তপ্ত শ্বাস গুলো ছাড়তে ছাড়তে উষ্ণময়
বলিষ্ঠ হাতটি দ্বারা স্পর্শ করলো মুসকানের কাঁধ। মৃদু কেঁপে ওঠলো মুসকান। সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ব্যর্থ হলো সে। দুষ্টু হেসে ইমন বললো,

” আমি কিন্তু চাইনি বাধ্য করেছো তুমি আমায়। ”

বলতে বলতেই কাঁধ বরাবর আঁচলের সাথে ব্লাউজ আটকানো সেপটিপিন খুলে ফেললো। মুসকান নাক টানতে টানতে কম্পিত গলায় বললো,

“আমি ঘুমাবো। ”

“আমিতো এটাই চেয়েছিলাম কিন্তু বাসর রাতে ঘুমাতে হয় না এটা বার বার তুমিই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলে। নাও গেট রেডি ফর বাসর… ”

কথাগুলো বলেই মুসকানের উন্মুক্ত কাঁধে গভীরভাবে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো ইমন। সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠলো মুসকানের একহাতে বালিশ অপরহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরলো। ঘন নিঃশ্বাসের শব্দে মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে গেলো ইমনের। মুসকান’কে নিজের দিকে ফিরিয়ে ললাটে ভালাবাসাময় আলতো ছোঁয়া দিলো। লজ্জায়, ভয়ে আড়ষ্ট মুসকান চোখ বুজে বিছানা খামচে ধরলো। ড্রিম লাইটের আলোতে মুসকানকে স্পষ্টই দেখতে পেলো ইমন। ওষ্ঠকোণে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে ওঠলো তার। ধীর গতিতে চাদর খামচে ধরা একটি হাত ওঠিয়ে নিজের ওষ্ঠদ্বয়ে ছুঁইয়ে দিলো। অশ্রুসিক্ত নয়নজোড়া মেলে তাকালো মুসকান। ইমনের প্রগাঢ় চাহনি’তে মাতাল হয়ে আবারও চোখ বুজে ফেললো সে। হাতের পিঠে পরপর কয়েকবার চুমু খেলো ইমন। পরপরই কেঁপে ওঠলো মুসকান ধক ধক করে ওঠলো বক্ষঃস্থল। সবই দৃষ্টিগোচর করলো ইমন৷ বললো,

“সব অভিমান দূরে ঠেলে আমার বউ কি আমার হৃদয়ের গান শুনতে শুনতে ঘুমাতে চায়? ”

মিইয়ে যাওয়া মুসকান দৃষ্টি নত থাকা অবস্থায়ই মাথা নাড়ালো। ইমন বিশ্বজয়ী হাসি হেসে ওর থেকে সরে পাশেই শুয়ে পড়লো। মুসকানও চোখ বুজে থাকা অবস্থায় ইমনের বুকে মুখ গুঁজে দিলো। আর ইমন একহাত বাড়িয়ে মুসকানের চুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে বিলি কাটতে শুরু করলো। এক পলক তাকিয়ে ইমন’কে দেখে নিয়ে আবেশে চোখ বুজে ফেললো মুসকান। ইমন বিলি কাটতে কাটতে এটা সেটা গল্প করতে শুরু করলো। তাদের নতুন জীবনের সূচনা ঘটলো। তা নিয়েই নানারকম পরিকল্পণা করছিলো ইমন৷ সেগুলো শুনতে শুনতে কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো টেরই পেলো না মুসকান৷ কিন্তু তার ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী দেখতে পেয়ে মৃদু হেসে ললাট চুম্বন করে তার পাশেই স্বস্তি নিয়ে শুয়ে পড়লো ইমন।
.
সায়রী’র ফোনে হঠাৎই অচেনা একটি নাম্বার থেকে কল এলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে দিহান বললো,

“সায়ু একটু ছাদে আসবি প্লিজ। ”

কথাটি শোনামাত্রই কল কেটে দিলো সায়রী। পাশে তাকিয়ে ইমনের ফুপু আর আলিয়া’কে দেখে নিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। সঙ্গে সঙ্গেই আবারো বেজে ওঠলো ফোন। সায়রী কেটে দিয়ে গায়ে ওড়না জড়িয়ে দ্রুত রুম ছেড়ে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো। বর্ডার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো দিহান। সায়রী গিয়ে ওর পাশে দাঁড়াতেই বিচলিত হয়ে দিহান বললো,

“গতমাসে তোর পিরিয়ড মিস গেছে না আমাকে জানিয়েছিস আর না নিজে কোন প্রকার টেষ্ট করেছিস। এসবের মানে কি বলবি তুই কি সত্যি চাস আমরা আলাদা হয়ে যাই? ”

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সায়রী বললো,

“আমি আমার ব্যক্তিগত বিষয় রিমি ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করিনি। ”

“রিমিও মুরাদ ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করেনি আর মুরাদ আমি ছাড়া। ”

“এটা বলার জন্য ডাকা হয়েছে? ”

“কালই টেষ্ট করবি। ”

“যদি না করি? ”

“জোর করে করাবো। ”

“হ্যাঁ এটা তুই খুব ভালো পারিস। ”

“সরি সায়ু…”

চোখ,মুখ শক্ত করে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো সায়রী। তৎক্ষনাৎ দিহান ওর হাত টেনে ধরলো। বললো,

“টেষ্ট করে আমায় জানাবি সায়ু। ”

“যদি নেগেটিভ আসে? ”

“ব্যাপার না আল্লাহ যখন চাইবে তখনি পজিটিভ হবে। ”

“যদি পজেটিভ আসে? ”

“তাহলে আমাদের সব ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। ”

“কখনোই না। ”

“আমাদের বেবি সব ঠিক করে দেবে। ”

“তোর মতো অমানুষের বাচ্চা’কে আমি দুনিয়ার আলোই দেখাবো না। ”

“হোয়াট! ”

“হ্যাঁ পজেটিভ আসা মাত্রই তোর অংশকে খুন করবো আমি। সেদিন তুই যা করেছিস তার ফল কখনোই ভালো হবে না। ”

কথাটি বলামাত্রই গায়ের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ঠাশ করে এক থাপ্পড় দিলো দিহান। অগ্নি চক্ষুতে চেয়ে গলা চেপে ধরে বললো,

“কুত্তার বাচ্চা তোরেই আমি খুন করবো তোর মতো জঘন্য মনের মানুষ’কে দুনিয়ায় টিকতে দেবো না কখনোই না। ”

যতোক্ষণ না কেশে ওঠলো ততোক্ষণ ছাড়লো না দিহান। কেশে ওঠা মাত্রই ছেড়ে দিয়ে ছাদ ত্যাগ করলো সে। রাগের বশীভূত হয়ে ঘোরে মাঝে এমন একটি কথা বলে ফেলবে তা হয়তো সায়রী নিজের কল্পনা করতে পারেনি। কিন্তু সেও তো ভুলতে পারছে না সেই রাতের কথা সেই দিনগুলোর কথা। দিহান উন্মাদ,দুষ্ট,চঞ্চল, লিমিট ছাড়া ভাষা তার কিন্তু দিহান কখনো স্বার্থপর হতে পারেনা। হতে পারেনা সে অমানুষ। দিহান শুধু তার স্বামী নয় স্বামী হওয়ার পূর্বে সে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড। এতো বিশ্বাস এতো ভালোবাসার মাঝে হঠাৎ এই ঝড় কেন এলো? একটা বাচ্চার জন্য তাদের সম্পর্কের অবনতি কেন ঘটলো? তাদের ভালোবাসাকে আজ কেনই বা ঠুনকো মনে হয়? এর পিছনের রহস্য যে অবদি সে জানতে না পারবে সে অবদি দিহান’কে ক্ষমা করবে না সে৷ কিন্তু দিহান কেন এই রহস্য ভেদ করতে দিচ্ছে না? কেন দিহান চাইছে না সায়রীর থেকে পরিপূর্ণ ক্ষমা?
_____________________
একটি শান্তিময় ঘুম,একটি সুন্দর সকাল, একটি সুন্দর জীবনের আগমনি বার্তা, মনটাই ফুরফুরে হয়ে গেলো মুসকানের৷ ইমনের বাহু থেকে আলগোছে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ওষ্ঠকোণে লাজুকতা মিশিয়ে মৃদু হাসলো। আবার কি মনে করে যেনো টোপ করে ইমনের গালে চুমুও খেলো। জেগে যায়নিতো মনে হতেই বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো। নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে ওঠে চলে গেলো বাথরুমে। হাত,মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হতে গিয়ে অর্ধেক ভিজেই গেলো। কিন্তু গোসল করলো না। এতো সকালে গোসল করা মানে ঠান্ডা,সর্দির কবলে পড়া। তাই বাথরুম থেকে বেরিয়ে কাবার্ড খুলে হালকা গোলাপি রঙের একটি নতুন সুতি কাপড় বের করলো। কিন্তু সে তো শাড়ি পরতেই জানেনা। যেটুকু জানে তাতে কাজও হবে না। তাই মুখ ফুলিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে ইমনকে ডাকতে শুরু করলো। বারকয়েক ডাক দিতেই চোখ কচলাতে কচলাতে ওঠে বসলো ইমন৷ মুসকান আহ্লাদী সুরে বললো,

“আমি ভিজে গেছি চেঞ্জ করবো, কে শাড়ি পরিয়ে দেবে এখন? ”

হাই তুলতে তুলতে ইমন বললো,

“বউ যখন আমার আমিই পরাবো। ”

মাথা নত করে লাজুক হাসলো মুসকান। ইমন বললো,

” দু’কাপড় পড়ো আমি দু’মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

ইমন তয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। মুসকান কাপড় পাল্টে পেটিকোট, ব্লাউজ পরে শাড়ি কিছুটা কোমড়ে গুঁজে আঁচল কাঁধে দিলো। তারপর আয়নার সম্মুখে গিয়ে পিছন মুখী হয়ে ব্লাউজের হুকগুলো লাগানোর চেষ্টা করলো। পারলো না তাই আয়নায় তাকিয়ে দুহাত পিছনে দিয়ে সর্বোচ্চ ভাবে চেষ্টা করলো নিচের একটা লাগাতে পারলেও বাকিগুলো লাগাতেই পারলো না। অধৈর্য হয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে যে একটা লেগেছিলো সেটাও খুলে ফেললো। শাড়ির আঁচল খুলার জন্য উদ্যত হতেই বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো ইমন। তৎক্ষনাৎ আঁচল দিয়ে পুরো পিঠ ঢেকে তীব্র অস্বস্তি নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো৷ ক্রমে ক্রমে বক্ষঃস্পন্দন বাড়তে থাকলো মুসকানের। হাত,পা কাঁপতে শুরু করলো। অদ্ভুত এক অনুভূতিতে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে শুরু করলো। ইমন সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে আগাগোড়া মুসকান’কে দেখে নিয়ে ধীর পায়ে এগুতে এগুতে বললো,

“এখানে, চারদেয়ালের ভিতরে তুমি এবং তোমার স্বামী রয়েছে অন্য কেউ নেই। তাহলে এই জড়োতার মানে কি? ”

মুসকানের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে থামলো ইমন৷ হাত বাড়িয়ে আঁচল সরাতে নিলেই মুসকান ইমনকে বাঁধা দিলো। জড়োসড়ো হয়ে সরে যাওয়ারও চেষ্টা করলো। মেজাজ বিগরে গেলো ইমনের। নিম্ন স্থানের ওষ্ঠ কামড়ে ধরে শাড়ির আঁচলে দৃঢ়ভাবে বলিষ্ঠ হাতটা চেপে ধরে একটানে পুরো শাড়িটাই খুলে ফেললো। #হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৪
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
আচমকাই ইমন’কে রেগে যেতে দেখে স্থির হয়ে গেলো মুসকান৷ ইমন চোখ,মুখ শক্ত করে দু’হাতে মুসকানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

“কি সমস্যা মনে কি ভয় ডর নেই? বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের, যা খুশি তাই করবো এতো বাঁধা কিসের? ”

শিউরে ওঠলো মুসকান৷ লজ্জায় মুখটা কাঁচুমাচু করে মাথাটা নুইয়ে ফেললো। নিঃশ্বাসে বেড়ে গেলো চঞ্চলতা। ইমন দৃঢ় দৃষ্টিতে কয়েক পল তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ একটি শ্বাস ছাড়লো৷ তারপর আবারো মুসকান’কে পিছন ঘুরিয়ে এক এক করে ব্লাউজের প্রতিটি হুক লাগিয়ে দিলো। এতে যতোবার ইমনের আঙুলগুলো পিঠ ছুঁয়ে দিলো ততোবার মৃদু কেঁপে ওঠলো মুসকান। যা ইমন খুব বেশিই টের পেলো। তার মাথাটাও ঝিম ধরে আসছিলো কিন্তু কিছু করার নেই ধৈর্যের ফল মিঠা বেশি এটুকু স্মরণ করে ওষ্ঠে কোণে ফুটিয়ে তুললো বক্র হাসি।

অজস্র উত্তপ্ত শ্বাসের ভীরে শিহরিত অনুভূতিগুলো’কে সন্তর্পণে নিয়ন্ত্রণ করে অত্যন্ত যত্নশীলভাবে শাড়ি পরানো কমপ্লিট করলো ইমন৷ এক হাঁটু গেড়ে কুঁচিগুলোও ঠিক করে দিলো। তারপর আয়নার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে পিছনে দাঁড়ালো সে। মুসকান অবুঝ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই ইমন ইশারায় আয়নার দিকে তাকাতে বললো৷ মুসকান যখন আয়নাতে চোখ রাখলো আচম্বিত হয়ে শিউরে ওঠলো। নিজেকে দেখে নয় বরং তার স্বামী নামক সুদর্শন পুরুষটিকে দেখে। ধবধবে ফর্সা বক্ষঃস্থলের ঘনকালো কৃষ্ণবর্ণীয় লোমগুলো দৃষ্টিগোচর হতেই বুকের ভিতর অদ্ভুত এক ঢেউ খেলে গেলো। পুরো শরীরে বইয়ে গেলো শীতল স্রোত। চোয়ালজোড়া লজ্জায় রক্তিম আভা ধারণ করলো। এক ঢোক গিলে শুষ্ক গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করলো। ইমন তার স্বভাবসুলভ বক্র হাসিটি বজায় রেখে মুসকানের কাঁধে আলতোভাবে চিবুক ছোঁয়ালো। আঁতকে ওঠে একহাতে শাড়ি অপরহাতে ইমনের হাতটি স্পর্শ করে সরানোর চেষ্টা করলো। যে হাতটি শাড়ি ভেদ করে তার উন্মুক্ত উদরে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠছিলো। দৃষ্টিজোড়া বদ্ধ করে ঘন নিঃশ্বাসের বেগে নিচু স্বরে মুসকান বললো,

“আমি নিচে যাবো। ”

মুসকানের কথাটি ইমনের কর্ণকুহরে পৌঁছালো কিনা বোধগম্য হলো না। সে তার নিজ জগৎে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে তাই আচরণ শুরু করলো। শেভ করা চিবুক দিয়ে ক্রমশ ঘষতে থাকলো মুসকানের কাঁধ, কখনো বা নাক ঘষতে থাকলো ঘাড়ে। একহাতে মুসকানের দুহাতই আঁটকে দিয়ে অপরহাতে উদরে উষ্ণময় দুষ্টু ছোঁয়ায় মেতে ওঠলো। মুসকান বেহুশ প্রায় হওয়ার অবস্থা ইমনের হাত থেকে বুঝি আজ তার রক্ষা নেই এমন অনুভূতিতে যখন সিক্ত হয়ে ওঠলো শরীর,মন এবং মস্তিষ্ক তখনি দরজায় করাঘাত শুরু হলো।

বিরক্তি’তে চোখ মুখ কুঁচকে মুসকানের হাতজোড়া আরো শক্ত করে এবং উদর খামচেই ধরলো ইমন। মুসকান ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ করতেই হুঁশে ফিরল ইমন। দু’হাতই নরম করে সরে দাঁড়ালো। ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে ঘন নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ইমনের দিকে তাকিয়ে রইলো মুসকান। ইমনও কয়েক পল নিশ্চুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় বললো,

” যেই থাকুক না কেন বলো পাঁচ মিনিট পর নিচে যাবে। ”

আঁচল ঠিকঠাক করে দুকাঁধ ভালো মতোন ঢেকে বার কয়েক ঢোক গিললো মুসকান। ইমন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সরে গিয়ে কাবার্ড থেকে নিজের পোশাক বের করতে লাগলো। মুসকান নিজের নিঃশ্বাসগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে করতে ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুললো। সায়রী থাকাতে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে বললো,

“আপু নানাভাই বললো পাঁচ মিনিট পর নিচে যেতে। ”

সায়রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর হাস্যরসাত্মক সুরে বললো,

“বইন তুই পারিসও বটে বাসর শেষেও জামাইকে নানাভাই! ”

ভিতর থেকে ইমন বললো,

“বাসর আর কই করতে পারলাম তুই আর আসার সময় পেলি না।”

লজ্জায় জমে গেলো মুসকান। সায়রী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“কেন ভাই সারারাত কোন মহান কাজে ব্যস্ত ছিলেন?”

“মহান কাজই বটে বউকে ঘুম পাড়ানো কিন্তু মহান কাজই। ”

সায়রী অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো। সে দৃষ্টির মানে ঠিক বুঝলো ইমন তাই বললো,

“বউয়ের চেহেরা দেখে তোর মনে হচ্ছে বাসর হয়েছে? ”

প্রশ্নটি করে দাঁড়ালো না ইমন শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বিছানায় গিয়ে বসলো। এদিকে লজ্জায় মাথা নুইয়ে আছে মুসকান। কানদুটো দিয়ে গরম হাওয়া বেরুচ্ছে যেনো। সায়রী তো বন্ধু’র খপ্পরে পড়ে ভুলেই গেছিলো ছোট্ট বোনটি লজ্জায় শোকাহত হয়ে যাচ্ছে। তাই বেশি সময় নষ্ট না করে মুসকান’কে নিচু স্বরে বললো,

“আমি কাছেই আছি পাঁচ মিনিটের ওপরে লেট করবি না। ইমনের দাদি খুব খ্যাঁকখ্যাঁক করছে, মাথা ধরাই ফেলছে একদম। ”
_________________
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতেই শুনতে হলো,

“বিয়ের আগের জীবন আর পরের জীবন এক হয় না। পরের ঘর করতে আসলে এতো আরাম করা যাবে না। বউদের এতো বেলা করে ঘুম থেকেও ওঠা যাবো না৷ এইটা বাড়ির বউয়ের মতোন আচরণ না। ”

দাদির কটাক্ষ সুরে বলা বাক্যগুলো শুনতেই মুসকানের জবাব দিতে ইচ্ছে করলো,

“আমিতো পরের ঘর করতে আসিনি দাদি, আমি আমার স্বামীর হাত ধরে নিজের ঘরই করতে এসেছি। ”

অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের পর বদহজম হয়ে সেগুলো যেমন গলা দিয়ে উগ্রে বের হয়, ঠিক তেমনি দাদির কটাক্ষ বাক্যগুলোও বদহজম হয়ে তীক্ষ্ণ বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে উগ্রে আসার পথেও বাঁধা প্রাপ্ত হলো। কারণ সায়রী তার বাহু চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,

“মুসু কিছু বলিস না এই বুড়ি’কে যা বলার ইমনই বলবেনি৷ তুই চুপচাপ গিয়ে ইরা আন্টির পাশে দাঁড়া। তাছাড়া এই বুড়ি এ বাড়িতে দু’দিনের অতিথি মাত্র। এর কথা এতো পাত্তা দেওয়ার কিছু নাই। ”

সংযত হয়ে গেলো মুসকান৷ পুরো ড্রয়িং রুমে চোখ বুলিয়ে চাপা একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সে৷ সত্যি এখন সে কিছু বলে ফেললে সবাই হয়তো তাকে বেয়াদব উপাধি দিতো। নতুন বউ সে মুরুব্বি মানুষ যতোই ভুলভাল বকুক এর উত্তরে কিছু তীক্ষ্ণ কথা বললে অবশ্যই সবাই তার ভুল ধরবে৷ কিন্তু এই সবাইয়ের ভীরে ইমনও কি তার ভুল ধরতো? মস্তিষ্কের আসা প্রশ্নটি মস্তিষ্কেই চেপে রাখলো মুসকান৷ ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইরাবতী’র পাশে দাঁড়ালো। নমনীয় সুরে প্রশ্ন করলো,

” মা আমি কি বাবা’কে সহ সবাই’কে চা দিতে পারি?”

হেসে ফেললো ইরাবতী মাথা দুলিয়ে বললো,

“চা শুধু তোমার ফুপু শাশুড়ি আর বাবা’কে দেবে। সায়রী, ইমন আর অভ্রকে কফি দেবে,আজ এইটুকু কাজ এর বেশি কিচ্ছু করবে না। ”

ইরাবতীর কথামতো চা,কফি বানিয়ে ট্রি টেবিলের ওপর রাখলো মুসকান। আকরাম চৌধুরী ফোনে কথা বলছিলেন। আজ বউ ভাতের অনুষ্ঠান। সমস্ত আয়োজন করা হচ্ছে পুরান বাড়িতে। অর্থাৎ ইমনের বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে ইমনের দাদার বাড়ি। যা পুরান বাড়ি নামে পরিচিত। সেখানেই করা হচ্ছে বিশাল আয়োজন। সকালের নাস্তা সেরে সকলে সাজগোজ করে বর বউ নিয়ে সেখানেই চলে যাবে। ইমনের পক্ষের প্রায় দুইশত আত্মীয় স্বজন সেখানেই আসবে চৌধুরী বাড়ির একমাত্র পুত্রবধুকে দেখতে। মুসকানের পক্ষেরও প্রাশ শত আত্নীয় স্বজন আসবে আজ বউ ভাতের অনুষ্ঠানে। সব আয়োজনের জন্য অগণিত লোক ঠিক করা হয়েছে। বাড়ির কারো তেমন পরিশ্রমই করতে হচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে যা করার ঠিক করা লোকেরাই করছে। তবুও ইমন সেখানে দেখভাল করার জন্য যাবে বলে মনোস্থির করলো। বাবার পাশে কিছু সময়ের জন্য বসতেই মুসকান যখন যত্নসহকারে চা,কফি এনে রাখলো নির্নিমেষ দৃষ্টিতে কেবল তাকিয়েই রইলো ইমন। এর থেকে বড়ো প্রশান্তি আর কি হতে পারে? একহাতে মাথায় কাপড় টেনে ইমনের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার আকরাম চৌধুরীর দিকে তাকালো মুসকান। নিম্নস্বরে বললো,

“বাবা আপনার চা। ”

আকরাম চৌধুরী ফোন রেখে বেশ শব্দ করেই হেসে দিলেন। বললেন,

“মাশাআল্লাহ কি সৌভাগ্য আমার পুত্রবধু আসতে না আসতেই সেবা শুশ্রূষা পাচ্ছি। ”

স্মিথ হাসলো ইমন হাত বাড়িয়ে কফি তুলে নিলো৷ লজ্জায় মাথা নুইয়ে ঈষৎ হাসলো মুসকান। আকরাম চৌধুরী ওকে তার পাশে বসতে বললো। মুসকান বাঁধ্য মেয়ের মতোন তাই করলো। ইমন এবার আড় চোখে মুসকানকে দেখতে থাকলো আর অতি সন্তর্পণে কফির মগে চুমুক দিতে থাকলো। আকরাম চৌধুরী চা খেয়ে খুবই প্রশংসা করলেন মুসকানের। বাড়ির ছোটো বড়ো সকলেই খুশি এমন সময় আকরাম চৌধুরীর ফুপু ইমনের দাদি এসে ড্রয়িংরুমের ফাঁকা মেঝেতে এক বাটি পেঁয়াজ এবং রসুনের খোসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললেন। সবাই আশ্চর্যান্বিত হয়ে দাদির কর্মকাণ্ড দেখতে থাকলো। আকরাম চৌধুরী বললেন,

“আহ ফুম্মা এইসব নিয়ম আমার বাড়ি পালন না করলেই পারতে। ”

“তুই চুপ থাক মহিলাগোর কাজে কোন পুরুষ নাক গলাবি না। নাত বউ এদিকে আসো,আলিয়া ঝাড়ুটা নাতবউয়ের হাতে দে তো। ”

আকরাম চৌধুরী চুপ মেরে গেলেন। মুসকান কেবল ওঠে দাঁড়িয়েছে এমন সময় ইমন গম্ভীর মুখে বললো,

“এসব কি হচ্ছে দাদি’কে এসব মাতলামি করতে নিষেধ করো। ”

আকরাম চৌধুরী ইমনকে বোঝাতে যাবে তার পূর্বেই মুসকান বললো,

“আমি পারবো সমস্যা নেই। ”

বলেই মাথায় আঁচল টেনে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আলিয়ার থেকে ঝাড়ু নিলো মুসকান। সায়রী নিরব দর্শকের মতো কাহিনী দেখছে আর ইমনকে ইশারায় কি সব বোঝাচ্ছে। কিন্তু মুসকান হেরে যাওয়ার পাত্রী নয়। সে ঠিক বুঝেছে দাদি তাকে ছলে বলে কৌশলে ইমনের অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টায় মেতে ওঠেছে। তাই সে খুবই নিখুঁত ভাবে পুরো রুম ঝেড়ে পরিষ্কার করে দাদির সামনে গিয়ে মিষ্টি এক হাসি দিলো। আর মনে মনে বললো,

” তিনটা বছর যে দহন আমি সহ্য করেছি সে দহন আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়েছে। তিনটা বছর স্ট্রাগল করে নিজেকে এমনি এমনি তৈরী করেছি নাকি দাদি… বয়স কম বলে কম তো সহ্য করিনি। কিন্তু আমি মুসকান নিজেকে প্রমাণ করতে জানি। সকলকে পই পই করে বুঝিয়ে দেবো ইমন চৌধুরীর জন্য মুসকান ব্যতিত অন্য কেউ পারফেক্ট হতেই পারে না। ”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here