হৃদমাঝারে তুমি পর্ব -০১

-শোন মিহু আজকে তুই ঘর থেকে বের হবি না।পিহুকে দেখে যাওয়ার পরে তারপর বের হবি।

বড়চাচি কথাগুলো বলে চলে গেলেন। আজকে আমার ই জমজ বোন পিহুকে দেখতে আসবে।কি ভাগ্য আমার,,,তার এই সময়ে আমি থাকতে পারব না।কিন্তু এসব ভেবে আমি মোটেও কষ্ট পাই না।কারন ছোট থেকেই আমি এই সবের সাথে অভ্যস্ত। আমার বাবা মায়ের অ্যারেন্জ ম্যারেজ হলেও তাদের দেখে যে কেউ ভাবতো লাভ ম্যারেজ।তাদের মধ্যে এতটা ভালোবাসা ছিল।যখন তারা জানলো যে তাদের জমজ সন্তান হবে তখনই নাকি তারা নাম ঠিক করে রেখেছিলেন।কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের জন্মের সময়ে মা মারা গেলেন।না না আমাদের না আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেলেন।প্রথমে পিহু হয় এরপর নাকি আমি হওয়ার সময়ে মা মারা গেছেন।সবাই বাবাকে বুঝাতে লাগল যে আমার কারণে মা মারা গেছেন। আর এটা সবাই বাবাকে বুঝাতেও পেরে ছিল।ফলাফল স্বরূপ ছোট বেলা থেকেই আমাকে একটা কঠিন জীবনযাপন করতে হয়েছে।পিহুকে ভালো স্কুল কলেজে ভর্তি করাতো কিন্তু আমাকে ঘরের কাজ করতে হতো।আমার দাদু যদি না থাকতেন তা হলে মনে হয় আমি এই পর্যন্ত বাঁচতে পারতাম না।দাদুই আমাকে লেখাপড়া করিয়েছেন।দাদু একটা কাজের জন্য বিদেশ গেছেন। আর এই সুযোগে সবাই আমার সাথে যেরকম মন চায় সেরকম ব্যবহার করে।

অনেক বলে ফেললাম অতীতের কথা।চোখের পানি মুছে ফেলে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। না আমার জামা কাপড় নয় এগুলো পিহু,বড় চাচি,মাহিন ভাই,তুলি আপু সবার। এগুলো ধুয়ে ছাদে শুকাতে দিতে হবে।তারপর মেহমান দের জন্য যে রান্নাবান্না করছি সেগুলো পরিবেশন করতে হবে।তারা খেয়ে গেলে ঐগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে তারপর আমি যা করার করব।

পিহুকে তুলি সাজিয়ে দিয়ে বললেন-মাশাআল্লহ্ পিহু বোন তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।দেখিস নেহাল তোকে দেখেই ফিট পড়বে

পিহু লজ্জা পেয়ে হেসে দিল।নেহাল আর তার দুই বছরের রিলেশন তা তুলি আপু ছাড়া আর কেউ জানে না।সবাই ভাবে পারিবারিক ভাবে তারা দেখতে আসছে।

-যাহ অতটাও সুন্দর লাগছে না।আমার থেকে তো মিহুকে এমনিতেই সুন্দর লাগে।

-পিহু তোকে কি খারাপ দেখতে লাগছে নাকি?আর মিহুর কথা বলে এই সুন্দর মোমেন্টটা বরবাদ করছিস কেন?

-এভাবে বলো না আপু,ও তো আমার বোন।
-তোর বোন হয়ে কি করে পারল তোর মা কে মারতে?
-তুমিও অন্যদের মতো বলছো?ওর তো কোনো দোষ নেই তাই না?

তুলি নিজের মেজাজটা শান্ত করে মুখে হাসি এনে বলল
-আচ্ছা থাক ওসব কথা।তুই যাকে নিয়ে এত ভাবছিস সে কৈ বলত?তোর এই মোমেন্টে তো ওর পাশে থাকার কথা তাই না?

-ও কোথায়?ও জানে আমাকে আজকে দেখতে আসবে?

-কোথায় আবার নিজের রুমে।মা বলেছিল যে মিহু আজকে তো পিহুকে দেখতে আসবে তুই একটু ওর সাথে থাক।তুলি আর কত দেখবে?রান্নাটা তুলি করুক তুই ওকে সাজিয়ে দে।তারপর বলেছে কি জানিস?

-কি?

-মা এর ওপর চেচিয়ে উঠে বলেছে এত গ্যাদারিং নাকি ওর ভালো লাগে না।এখন নাকি এক ঘন্টা ধরে শাওয়ার নিবে তারপর ও রিল্যাক্স হবে।

এসব বলে তুলি চলে গেল আর মনে মনে পৈশাচিক হাসি হাসল।পিহু যখন দেখবে মিহুর বাথরুমের দরজা বন্ধ তখন সে তুলির সব কথা বিশ্বাস করে নেবে

মেয়ে দেখে ছেলে পক্ষের সবার পছন্দ হলো।খাবার দাবার খেয়ে সবাই খাবারের অনেক প্রশংসা করল।নেহাল এর মা তো রীতিমত উঠে পড়ে লেগেছেন কে রান্না টা করেছে সেটা জানতে।পিহুর চাচি বলল

আসলে রান্নাটা আমার মেয়ে তুলি করেছে।ঐ হোস্টেলে থাকতে থাকতে রান্নাটা শিখে ফেলেছে।নেহালের মা পিহুর বাবাকে বললেন

-বেয়াই সাব, এখন তো আমরা আপন মানুষই নাকি?একটা আবদার করতে পারি?

-হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই।

-আমার আরেকটা ছেলে আছে নেহালের বড় আরফান। আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাহলে আমি তুলি মাকে আমার আরেক ছেলের জন্য নিতে চাই।আপনার কোনো আপত্তি আছে?

নেহালের চাচাতো ভাই পিয়াস জুস মুখে নিচ্ছিল।রেবেকা বেগমের কথা শুনে ওর মুখের সব জুস পড়ে গেল তুলির গায়ে।তুলি ওয়াক ছি ছি করতে করতে দৌড় দিল।
-বড় মা তোমার মাথা ঠিক আছে তো?তুমি কার কথা বলছো ভেবে দেখেছো?

-তুই চুপ কর।বেয়াই সাব আপনি বলুন

-দেখুন বেয়ান সাব, আপনার পছন্দ হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু মেয়ের মত বা মেয়ের মায়ের মত

কবির সাহেব আর কিছু বলার আগেই তুলির মা বলে উঠল
-ভাই আমাদের মত লাগবে না।ওদের বাবা মারা যাবার পরে তো আপনিই ওদের অভিভাবক। আপনি তো ওদের খারাপ চাইবেন না।আর তাছাড়া দুই বোন যদি এক ঘরে যায় সেটাতো একটা ভালো বিষয়।

-আলহামদুলিল্লাহ্।তাহলে তো আর কারো কোনো আপত্তি নেই।তাহলে আগামী শুক্রবারই দিনকাল ঠিক করে ফেলি

-তা না হয় করা যাবে কিন্তু বেয়ান সাব আমার পিতা এখনো জীবিত।তাকে ছাড়া তো এই শুভকাজ সারতে পারি না

-তাকে নিয়েই করি সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা হচ্ছে তিনি এই মুহূর্তে ইন্ডিয়া অবস্থান করছেন।তার আসতে এখনো একমাস বাকি।তাই বলছিলাম যদি একটু ওয়েট করা যেতো

-আরে বেয়াই সাব এই ডিজিটাল যুগে কিসের চিন্তা?শুক্রবার শুধু দিন ঠিক করব বিয়েতো আর হবে না।তিনি ভিডিও কলের মাধ্যমেই যোগাযোগ করবেন সমস্যা কই।তারপরও আপনি তার সাথে কথাবলে দেখেন। আজ তবে উঠি।

গাড়িতে উঠেই রেবেকা পিয়াস এর পিঠের ওপর একটা কিল বসালেন।
-বোকা ছেলে কিছু বোঝনা কখন কি বলতে হবে?

-বড় মা আমাকে মারলে কেন?তুমি আরফান ভাইয়ের কথা যে বললে তুমি তাকে কিভাবে রাজি করাবে?সে কী জীবনে তোমার কথা শুনেছে?নাকি তোমাদের মধ্যে সেইরকম কোনো মা ছেলে সম্পর্ক আছে?

পিয়াসের কথা শুনে রেবেকা চুপ হয়ে গেলেন।কোনো কথা বললেন না।গাড়ি ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলেন।পিয়াস কি বলতে কি বলে ফেলেছে তা বুঝে জীভে কামড় দিল।তারপর পেছনে নেহালের দিকে তাকাতেই নেহাল ওকে চোখ দিয়ে চাকু দেখাচ্ছে।

#চলবে
#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here