হৃদমাঝারে তুমি পর্ব -০৪+৫

#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_৪

খাবার টেবিলে বসে সবাই সুস্থ মতো খাচ্ছে।আজকে বিদিশার জোরাজুরিতে মিহুকে ওদের সাথে একসাথে বসতে হয়েছে।সাথে মাহিন ভাই ও তাতে সায় দিলেন।খালার পাতে মাছ তুলে দেওয়ার পর খালা তা মুখে দিতেই

-ওয়াক থু।এই খাবার খাইতে পারে কেউ?এই মাইয়্যা মেহু না কি জানি নাম তুই ইচ্ছা কইরা আমার পাতে লবণ বেশি দিছোস?

মিহু এমনিতেই ভয়ে ছিল যে ও সবার সাথে খেতে বসছে এটা নিয়ে আবার চাচি তুলকালাম না বাজায়,,,,,,কিন্তু খালা সেই আভাসটাকে পূর্ণতা দিল

-খালা আমি দেই নি
-তুই দেও নাই তো আমি মিথ্যা কতা কই?

-কি হয়েছে আপা?আপনি এরকম চেঁচিয়ে কথা বলছেন কেন?

ফুফুর কথায় খালা ফুফুর দিকে তাকিয়ে বলল- এই মাইয়্যা ইচ্ছা কইরা আমার পাতে লবণ বেশি দিছে।তুলি পারলে তুই একটু খাইয়্যা দেখ।

খালার মাখা ভাত আর মাছ থেকে খাওয়ার কথা শুনে তুলির বমি আসার অবস্থা।এমনিতেই খালার হাতের ছোঁয়া কোনো জিনিস খেতে চায় না তারপরতো তার মাখা ভাত।কল্পনা করতেই মুখে হাত দিয়ে বেসিনে দৌড় দিল।

-কিন্তু আপা মাছ তো আমি রান্না করছি।মিহুতো ধারে কাছেও যায় নাই।

বিদিশা এতক্ষণ চুপচাপ দেখছিল আর খাচ্ছিল।মাছের মাথাটা চিবুতে চিবুতে বলতে লাগল

-বুঝলে মা আন্টির মনেহয় জ্বীভের স্বাদ এলোমেলো হয়েছে।আমাদের ক্লাসের মারিয়ার দাদির এইরকম হয়েছিল।প্রতিদিন বিশ গাল পান খেতো।তারপর দেখা গেছে যে তিনি আর কিছুতেই ঠিক স্বাদ পায় না।ডাক্তার বলে দিয়েছে যে যদি কথা বলতে চান আর খাবার ঠিকভাবে খেতে চান তাহলে পান খাওয়া বন্ধ করুন।না হলে আপনার জীভ শক্ত হয়ে যেতে পারে।

আন্টি আপনার ও মনে হয় তাই হয়েছে।আপনিও ডাক্তারের কাছে যান দেখবেন বলবে পান খাওয়া না কমালে আপনার জীভ শক্ত হয়ে যাবে

-আহ্ বিদিশা খাবার সময়ে এসব অলুক্ষুণে কথা বলছিস কেন?ঠিক মতো খা

মায়ের ধমকে বিদিশা চুপ হলো ঠিকই কিন্তু ওর কথাগুলো শুনে খালার মুখটা শুকিয়ে একটু হয়ে গেল।সে আর কোনো কথা না বলে খেয়ে যাচ্ছে।একটু খেয়ে বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলে

-ঐ আমার মনে কয় লবণ বেশি হয় নাই আমি এমনেতেই বলছালাম।তাইলে মনে কয় মোর স্বাদ ঠিক আছে কি কও

-আন্টি বলাতো যায় না কখন কি হয় আপনি একবার ডাক্তার দেখিয়ে ফেলুন।
মায়ের চোখ গরমে বিদিশা চুপ হয়ে গেল।খালা একটু খেয়ে মনমরা হয়ে উঠে চলে গেল।তুলির মা গিয়েছিল শষা কেটে আনতে।এসে দেখে যে তুলির খালার চেয়ার খালি।
-আপায় গেল কই?
-মামী ওনার নাকি পেট ভরে গেছে তাই চলে গেছে

খাবার খাওয়া শেষে বিদিশা মিহুর ঘরে বসে হেসেই যাচ্ছে ।হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

-মিহু আপু খালার মুখটা দেখার মতো ছিল।তুমি জানো তার জন্য আলাদা উঠিয়ে রাখা মাছে আমি লবণ দিয়ে রাখছিলাম।প্রথমে রাগ দেখাইলেও পরে দেখছো কীভাবে পল্টি খেল।
মিহু বিদিশার মাথায় টোকা মেরে বলল
-ফাজিল মেয়ে।বড়দের সাথে এমন করতে হয়?
-ঐ বজ্জাত মহিলাকে তো আমি বুঝিয়ে দেব বিদিশা কি ?আমাকে মায়ের হাত দিয়ে ধমক দেওয়াচ্ছে।বাই দা রাস্তা তুমি বোরকা পড়ে যাচ্ছ কই?

মাথায় হিজাব পিন দিয়ে হিজাব ঠিক করতে করতে বলতে লাগল
-ভার্সিটি যেতে হবে একটু।কয়েকটা সিট আনা লাগবে সামনে পরীক্ষা।তুই যাবি?

-নাহ আমার ঘুমানো লাগবে।অত দূর আমার এখন যেতে ইচ্ছা করছে না,তুমি সাবধানে যেও।
বলে হাই তুলতে তুলতে কাথা গায়ে দিয়ে চোখ বুজল।মিহু রেডি হয়ে বের হতেই বিদিশা বলল
-আমার জন্য ডেইরী মিল্ক আনবে কিন্তু।
-আচ্ছা ঠিক আছে আনবো।এখন আসি আসসালামু আলাইকুম

আরফান বাসায় প্রবেশ করেই দেখল সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে।কিন্তু নীলু অনুপস্থিত।নীলুকে না দেখে আরফানের প্রাণপাখি মনে হয় উড়ে যাবে।নেহাল ওর কাছে এসে বলল

-ভাই একটা প্রবলেম হয়ে গেছে
নেহালের চোখের দিকে তাকিয়ে আরফান জিজ্ঞেস করল-নীলুর কিছু হয়েছে?
আরফানের দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না নেহাল।মাথা নিচু করে রাখল।পিয়াসকে জিজ্ঞেস করল

-কি হয়েছে?
-ভাই তুমি যাওয়ার পর থেকে নীলু দরজা খুলে নি।আর দুপুরের খাবারও খায়নি।

-আমাকে আগে কেন বলনি
-ভাই অনেকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তুমি ফোন ধরনি।

আরফান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে 157+ মিসড কল।মিটিং এ থাকায় ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিল।

-ড্যাম ইট
বলে দৌড়ে ওপরে গেল।দরজার সামনে বসে বলতে লাগল-নীলু বোন আমার। একবার দরজাটা খোল।দেখ তুই যা বলবি তাই হবে শুধু একবার দরজাটা খোল।প্লিজ বোন। ওর রুমের চাবি কোথায়
চিৎকার করে বলে উঠল আরফান

-ভাই চাবি দিয়ে খোলা কিন্তু ভেতরে সিটকিনি দিয়ে আটকানো।
আরফান দরজা ধাক্কা দিতে উদ্যত হলেই নেহাল বলে উঠে-ভাই দরজা ভাঙার চেষ্টা করেছি কিন্তু কাজ হয় নি।

আরফান দৌড়ে বাইরে গেল।তারপর সিড়ি দিয়ে নীলুর রুমে উঠল।সেখানেও বেলকনির দরজা আটকানো।তবে ভাগ্য ভালো ছিল যে দরজাটা কাচের ছিল।আরফান কোনো মতে কাচ ভেঙে ভিতরে ঢুকল।ঢুকে দেখে নীলু ফ্লোরে পড়ে আছে

-নীলু বলে চিৎকার দিল আরফান

একঘন্টা পরে নীলুর জ্ঞান ফিরল।নীলু চোখ খুলে নিজেকে হাতে সেলাইন লাগানো অবস্থায় পেলো।ওদের ফ্যামিলি ডাক্তার জাভেদ হাসান নীলুর জ্ঞান ফেরা দেখে ওর হাতের সেলাইন খুলে দিল আর বলল

-আরফান বাবা এখন আর চিন্তার কিছু নাই।নীলু মায়ের জ্ঞান ফিরছে।তবে শরীর কিন্তু এখনো উইক ভালো খাবার দাবার খেতে হবে।তাহলে আমি এখন উঠি।নেহাল আর পিয়াস তার সাথে গেল।রেবেকা বেগম নীলুর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।
আরফান এখন পর্যন্ত অফিসের ড্রেস পড়া।ও গিয়ে নীলুর পাশে বসল।নীলু নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওর মুখ ধরে নিজের দিকে ফিরাতেই নীলু চোখ নামিয়ে নিল

-কথা বলবি না আমার সাথে?
-যে আমাকে গুরুত্ব দেয় না তার সাথে কোনো কথা নাই।
-এই দেখ কান ধরেছি,ভাই কান ধরেছে।এইবার তো তাকা।
নীলু তারপরও তাকালো না আরফানের দিকে
-আচ্ছা ঠিক আছে তাকাবি না তো।তাহলে আমি যে চকলেট গুলো এনেছি ঐগুলো আমি পিয়াসকে দিয়ে দিব।নীলু তারপরও কিছু বলছে না দেখে নীলুর দুই গালে হাত রেখে বলল

-বোন তোকে কৈফিয়ত দিব না শুধু কয়েকটা কথা বলি একটু মন দিয়ে শোন। আজকে মিটিং এ যদি টাইমলি না যেতাম তাহলে অন্যরা আমাকে কটু কথা শোনাতো।বলত আরফান আদিত্য টাইম ই মেইনটেন করতে পারে তো কম্পানির ডিলগুলো কীভাবে সামলাবে?তুই কি চাস তোর ভাই এই কথাগুলো শুনবে?
ভাই কিন্তু এখনো কিছু খায়নি।বোন যদি কিছু না বলে তাহলে কিন্তু খাবেও না।

আরফানের কথাগুলো শুনে নীলু ঝরঝর করে কেঁদে দিল।ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে

-ভাই তুমি আমাকে এত ভালোবাসো?
বোনকে দুই হাতে আগলে নিয়ে বলল-বাসিতো।এখন বলতো আমার ওপর অভিমান কমেছে?

-কমেছে,,,,,কিন্তু আমার একটা জিনিস চাই দিবে?
-তুই যা চাবি সব দিয়ে দেব।
-আমার ভাবি লাগবে উহু নেহাল ভাইয়ের বৌ হলে হবে না।আমি তোমার বৌ দেখতে চাই

আরফান কিছুক্ষণ নীলুর দিকে তাকিয়ে বলল-ঠিক আছে।আমি রাজি আছি কিন্তু

আরফানের রাজি হতে দেরি হলেও নীলুর খুশি হতে দেরি নেই।ইয়ে বলে যে এক চিৎকার দিয়েছে সেই চিৎকারে সবাই দৌড়ে এসেছে।নীলু সারা ঘরে ছোটাছুটি করছে বাচ্চাদের মতো।নেহাল পিয়াস ও যোগ দিয়েছে নীলুর সাথে।

নীলুকে দেখে আরফানের এখনো সেই ছোট্ট নীলুই মনে হয়। ওর কাছে নীলু বড় হয় নি।আসলে ভাই বোনের সম্পর্ক গুলোই এমন।ভাইদের কাছে তার বোনেরা কখনোই বড় হয় না।বোনের মুখের হাসির জন্য সে সব করতে পারে।নীলুর এমন খুশি দেখে আরফানের মনটা হালকা হলো।মনে মনে বলল

-বোন তোর খুশির জন্য হলেও আমি বিয়ে করব।তুই আমার সব।তোর জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত আর সেখানে এই সেক্রিফাইজ করতে পারব না।এইটুকু না করতে পারলে কেমন ভাই আমি?

পিহু তার মায়ের ছবির এলবাম বুকে জড়িয়ে আছে।ও আর মিহু জমজ হলেও চেহারা ভিন্ন হয়েছে।মিহুর চেহারা একদম হুবহু তাদের মায়ের মতো হয়েছে।জন্মের পর থেকে মা হীনা বেড়ে উঠেছে তারা।এমন কি তাদের নানুবাড়ির সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছে।পিহু আর মিহু আজ পর্যন্ত জানতে পারল না তার নানুবাড়ি কোথায়?তারা কারা?এমন কি,,,,,,,কি কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সে বিষয়েও কিছু জানে না।পিহুর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে আর পিহু বলতে থাকে

-মা তুমি আমাদের ফেলে কেন চলে গেলে?জানো সবাই আমাকে কত ভালোবাসে তারপরও আমি তোমার পরশ পাই না কোথাও।জানো মিহুর সাথে সবাই খারাপ ব্যবহার করে আমি ওর বোন হয়েও কিছু করতে পারি না।

পিহুর আবেগে বলা কথাগুলো শেষ হবার আগেই নেহালের ফোন এলো।চোখের পানি মুছে নেহালের ফোন রিসিভ করল

-জানো আরফান ভাই বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে।নীলু তো কী যে খুশি হয়েছে।ও তো আজকেই তোমাদের বাসায় চলে যেতে চেয়েছিল। আমরা কোনোভাবে বুঝিয়ে রেখেছি।হ্যালো তুমি কি শুনছো?

-হুম

-তাহলে কথা বলছো না কেন?
-এমনি

পিহুর ভাঙা কন্ঠস্বর শুনে নেহাল বুঝে ফেলেছে পিহু কান্না করেছে।তাই নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল

-মন খারাপ?
-হুম
-কেন?
-আমি মিহুকে ছেড়ে চলে গেলে যে ওর ওপরে অত্যাচার বেড়ে যাবে।দাদু ও সব সময় বাড়ি থাকে না।এখানে ওখানে চলে যায় মাঝে মাঝে।তুমি তো সবই জানো

-আচ্ছা মিহুকে আমাদের বাড়ি নিয়ে এলে কেমন হয়?
-মানে?
-শোনো আরফান ভাইয়ের তো কোনো পছন্দ নাই।নীলু যাকে পছন্দ করবে তাকেই ভাই বিয়ে করবে।এখন যদি কোনোভাবে নীলুর মাথায় মিহুর কথা বলা যায়।

-তোমার আইডিয়াটা দারুণ।আমাকে একটু ভাবার সময় দাও।আমি রাতে তোমাকে জানাচ্ছি।

একটা রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে মিহু আর তার দাদু।প্রমি মিহুকে নোটস্ দিয়ে বাসায় চলে গেছে।মিহু তার দাদুকে জিজ্ঞেস করল

-দাদু তুমি না ইন্ডিয়া গিয়েছিলে?
-মিহু তুমি দাদুকে বিশ্বাস করো?
-হুম
-তাহলে দাদু যা যা বলবে মন দিয়ে শুনবে আর যেটা করতে বলবে সেটা করবে।কোনো কিছু জিজ্ঞেস করবে না।

#চলবে#হৃদমাঝারে_তুমি
#সাইয়ারা_মম
#পর্ব_বোনাস

সকাল থেকে সবাই মিলে তোড়জোড় করছে।আজকে কথা পাকাপোক্ত করবে কবে এঙ্গেজমেন্ট হবে আর কবে বিয়ে।আরফান রাজি হয়েছে শুনে তুলির যেন খুশির বাধ মানছেই না।সে যখন শুনেছে তখন ই পার্লারে গিয়ে ফ্রেশিয়াল করে এসেছে।তুলির মা আর খালা তো তুলির পেছনে লেগে আছে কোন সাজে ওকে ভালো মানাবে।আজকেই তুলি পার্লার থেকে সেজে আসতে চেয়েছিল কিন্তু সেটা অতিরিক্ত হয়ে যাবে বলে তুলির মা নাকোচ করে দিয়েছে।

মিহুর ওপর আজকে সবগুলো রান্নার দায়িত্ব পড়েছে।প্রতিটা পদে মিহুর হাতের ছোঁয়া রয়েছে।সকাল থেকে খেটেই যাচ্ছে।যদিও মহুয়া আর মিহুর ফুফুও সাহায্য করেছে।একটা বাজতেই মিহুর সব রান্না শেষ হলো।মেহমানরা বারোটার দিকে এসেছে।পুরুষেরা সবাই মসজিদে গিয়েছে জুমার নামাজ পড়তে।আর মহিলারা ঘরের মধ্যে অবস্থান করছে।মিহু সবকিছু ঠিকঠাক করে রুমে গেল।এখন গোসল না করলে শরীরটা একদম ঘ্যানঘ্যান লাগবে।গোসল শেষ হলে মিহু নামাজটা পড়ে নেয় তারপর শ্যাম্পু করা চুলগুলো ছেড়ে দেয়।চুলগুলো পিঠ ছড়িয়ে কোমরের নিচে চলে যায়।

-মাশাআল্লাহ।তোমার চুলগুলোতো খুব লম্বা আর সুন্দর

বিদিশার বয়সী একটি মেয়ের কথা শুনে মিহু দরজার দিকে তাকায়।নীল গাউন পড়া সুন্দর একটি মেয়েকে দেখে মিহু হতভম্ব হয়ে যায়। কে এই মেয়ে? যে ওর রুমে অবস্থান করছে?

মিহুকে হতভম্ব হতে দেখে নীলু খিল খিল করে হেসে দেয়।মিহু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।নীলু ওর দিকে তাকিয়ে বলে

-আমি নীলু।আরফান আর নেহাল ভাইয়ের বোন।আচ্ছা তুমি বুঝি পিহু ভাবির জমজ বোন?

মিহু মুচকি হেসে বলে-হ্যাঁ।কিন্তু তুমি আমাকে চিনলে কীভাবে?

-নেহাল ভাই তোমার কথা বলেছে।আচ্ছা তোমার চুল এত লম্বা কিভাবে বানালে?

-আমি তো বানাইনি।এগুলো আমার এমনিতেই হয়েছে।আমার মায়েরও নাকি এরকম চুল ছিল

-তাই বুঝি?তাহলে পিহু ভাবির অমন বড় চুল নেই কেন?সে তো তোমার বোন।

-পিহুর ও ছিল কিন্তু ও কেটে ফেলে তাই ছোট চুল ওর।কিন্তু তুমি কী আমাকে কিছু বলবে?

-না,কেন?
-না ইয়ে মানে হঠাৎ আমার ঘরে এলে যে।
-হঠাৎ কোথায়? আমি তো আগের বার আসি নি তাই তোমাদের বাড়ি ঘুরে দেখছিলাম।তোমাদের সবার রুম ওপরে দো তলায় কিন্তু তুমি নিচে থাকো কেন?

মিহু মনে মনে হাসল। এই মেয়ে দেখছি বয়সে বড় হলেও অনেক আচরণই শিশুর মতো।সব কিছু জানার ইচ্ছা তার।তবে মিহুর ওকে ভালো লাগছে।উত্তরে বলল

-আসলে হয়েছে কি তুমি আমার দাদুর কথা শুনেছো তো?
-হুম
-আমার দাদুর কোমরে ব্যাথা আছে তাই তিনি ওপরের রুমে থাকতে পারেন না।এই কারণে তিনি নিচে রুম নিলেন আর দাদুর মাঝে মধ্যেই এটা সেটা লাগে সেগুলো এনে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। এজন্যই মূলত এই রুমে থাকি।তরে এই রুমের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটা কি আন্দাজ করতে পারো?

নীলু চারদিকে একবার তাকালো তারপর কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর বলল

-তোমার এইরুমে বিশেষ কেউ তার প্রিয় জিনিসগুলো সাজিয়ে রাখত।

মিহু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।একটু আগেও যে মেয়েটিকে ও বোকা ভেবেছে সেই মেয়েটি নির্দ্বিধায় কি সুন্দর এই প্রশ্নের উত্তরটা বলে দিল।মিহুর ঘোর কাটল বিপাশার ডাকে।

-এই নীলু তুমি কী ফ্রেশ হয়েছো?
-হ্যাঁ হয়েছি।
-এই দাড়াও দাঁড়াও।তুমি আমার রুমে ফ্রেশ হতে এসে আমাকে মিথ্যা বলেছ আর এখন ফ্রেশ না হয়েই চলে যাচ্ছ?

-কই মিথ্যা বললাম? আর ফ্রেশ হয়েছি তো।মাইন্ড ফ্রেশ তো সব ফ্রেশ।কথাগুলো বলে নীলু চলে গেল।বিদিশাও ওর পেছনে পেছনে গেল।

নেহালের বেজেছে মহা ঝামেলা।আরফান ভাই আসে নাই।বলেছে নীলু যা বলবে তাই হবে।আর এদিকে নেহাল এসে ফেসে গেছে।তুলির খালা তার পানে চিবানো দাত দিয়ে কয়েকটা হাসি দিল।তারপর জিজ্ঞেস করল

-তা বাবাজি কদ্দূর?

উনি যে কিসের কথা জিজ্ঞেস করছেন সেটা ও বুঝতেই পারছেনা।কোনো কথা না বলায় তিনিই বললেন

-কদ্দূর পরালেহা করছ?
-জ্বী বাংলায় অনার্স কমপ্লিট করে এখন লেকচারার পদে আছি।
ফচাৎ করে পানের পিক ফেলে আবার জিজ্ঞেস করল
-ল্যাকচারা আবার কী?
-হ্যাঁ আন্টি কিছু বললেন?
-কইছি ল্যাকচারা কী

নেহাল কিছু বুঝতে পারছে না দেখে পিয়াস বলল
-ল্যাকচারা মানে শিক্ষাকতা।

-কি বাংলার শিক্ষক? আরে রে বাংলা পরতে গেলা ক্যান?ইংরাজি পরতা।জানো ইংরাজি না পারলে কত্ত খতি অয়। আরে কবির মাইয়্যাডার কফাল এক্কেবারে পুরলি।শ্যাস ম্যাস কিনা বাংলার ষাড়ের কাছে মাইয়্যা দিবি।

খালার বলা ষাড় শব্দটা শুনে নেহাল ভয় পেয়ে গেল। তাকে কি কোনোভাবে ষাড়ের মতো লাগছে?আজকে তো পিহুর পছন্দ করা খয়েরি পাঞ্জাবি পড়ে আসছে।কই ভিডিও কলে যখন কথা হলো তখন তো কিছু বলল না।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে পিয়াসকে বলল

-ভাই আমাকে কি ষাঁড়ের মতো লাগছে?
পিয়াস ও ঘোরের মধ্যে আছে।এই মহিলার কোন এঙ্গেলে নেহালকে ষাড় মনে হয়।তাও আবার যেই সেই ষাড় না বাংলার ষাড়?

পিয়াস আর নেহালকে কোমায় পাঠাতে সেখানে বিদিশা এসে উপস্থিত হল।সব কথা শুনে ওর হাসতে হাসতে চোখের পানি বের হয়ে গেছে।

-ভালো বলেছে আন্টি।আপনারা তো ইংরেজী ষাড় বাংলা ষাড়ের মানে বুঝবেন কিভাবে।

কথার মাঝে মাহিন এসে ওদের উদ্ধার করল। আসলে খালা ষাড় বলতে স্যার অর্থাৎ শিক্ষক বুঝাইছে।সবকিছু শুনে নেহাল হাফ ছেড়ে বাচল।ভাগ্যিস মাহিন এসেছিল না হলে আজকে সত্যিই সে ষাড়ের সমান হয়ে যেত

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here