হৃদমাঝারে পর্ব -০৭

#হৃদমাঝারে – [০৭]

পুলিশস্টেশনে গিয়ে বাচ্চাদুটোর সাথে কিছু সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে ফারহান। আজ ওর মনটা বেশ ক্লান্ত। শারীরিক ক্লান্তি তো বিশ্রাম নিয়ে দূর করা যায় মনের ক্লান্তি কি করে দূর করবে সে। কোন কাজে মন বসাতে পারছে না ফারহান। বিছানায় হেলান দিয়ে দু-হাতে মাথা চেপে ধরে বসে ছিলো ফারহান। এমন সময় রওনাক ওর রুমে আসে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারে নি বলে রওনাক একটু চটে যায়। পরে ফারহান ওকে শান্তু করে শিশু পাচারের ঘটনাটা বলে। সব শুনে রওনাক তো হা। সে অবাক হয়ে বলে,

– মানুষ এত নিকৃষ্ট ও হয়।

কিছু বলে না ফারহান। শুধু তাকিয়ে থাকে।

রওনাকে চলে যাওয়ার পর ফারহান শাওয়ার নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায় ফারহান।

পরেরদিন সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে আগে পিটি জয়েন করে ফারহান। তারপর বেড়িয়ে আসে সেনানিবাস থেকে। এদিকে মুন নার্সিংহোম এসে রানার সাহায্য নিয়ে হসপিটালের কিছু ফাইল নিয়ে নিজের কেবিনে যায়। কাল রাতে আকাশের বাবা কল করে বলেছিলো হসপিটালের পুরনো ফাইলগুলো দেখা দরকার। ফাইল ঘেটে তেমন কিছুই পেল না মুন। তাই সেগুলো আবার আগের জায়গায় রেখে দেয়।

নিয়য় অনুযায়ী নিজের কেবিনে বসে রোগী দেখছে মুন এমনি সময় ইমারজেন্সি থেকে কল আসলো। মুন কোন রকমে নিজের কাল সামলে ইমারজেন্সিতে চলে যায়। আর সেখানে গিয়ে বেশ অবাক হয় মুন। ইমারজেন্সিতে ফারহান বসে আছে আর ওর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মুন একদৃষ্টিকে ফারহানের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। বুকটা কেপে উঠছে মুনের। আর ফারহান সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ঠোঁটের কোনে ঝুলে আছে এক রহস্যময় হাসি। মুন ফারহানের দিকে তাকিয়ে আবার ওর পাশে তাকালো। ওর পাশেই দুটো ছেলে বসে আছে। এদের কাউকেই চেনে না মুন। মুন কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

– ডঃ মনোজকে ডেকে বলুন ওনার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে। আমার পেশেন্ট অপেক্ষা করছে। মুন চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই পিছন থেকে আওয়াজ এলো,

– ডঃ মনোজ হসপিটালে নেই।

– তাহলে অন্য কোন ডক্টরকে ডেকে নিন।

– সবাই এখন ব্যাস্ত।

– তো আমি কি করবো। একটা নার্সকে ডেকে বলুন ওনার হাতের ব্যান্ডেজটা করে দিতে।

মুন চলে যাওয়ার জন্যে সামনে পা বাড়াতেই ফারহানের কথা শুনে থেমে যায়।

– আপনাদরে এখানে মনে হয় পেশেন্টদের এভাবেই ট্রিট করা হয়। আমার হাতটা কেটেছে, কোথায় তাড়াতাড়ি করে ঔষুদ লাগিয়ে দিবে সেটা না করে আপনারা কি করছেন। উহ্ হাতটা ভিষন জ্বালা করছে। এই পলাশ চল আমরা বরং অন্য নার্সিংহোমে যাই।

ফারহান পলাশ ও মিদুল উঠে দাঁড়াতেই মুন ওদের দিকে এগিয়ে আসে। একটা নার্সকে ডেকে ফাস্টের্ড বক্স আনতে বলে। আর ফারহানকে বেডের উপর বসতে বলে।

বেশ যত্ন সহকারে ফারহানের হাতে ব্যান্ডেজটা করে দিচ্ছে মুন। মুনের স্পর্শে বারবার কেপে ইঠছে ফারহান। স্বভাবত মুন জিগ্যেস করলো,

– কিভাবে কেটেছে হাত?

– স্যার তো নিজেই কাচে,,, আর কিছু বলতে পারলো না পলাশ। ফারহান তার পা দিয়ে পলাশের পায়ে আঘাত করে ওকে থামিয়ে দেয়। তারপর মৃদু হেসে জবাব দেয়,

– আপনি ডক্টর পুলিশ নয়। তাই এত ইনভেস্টিগেশন করার কোন প্রয়োজন নেই।

মুনও আর কিছু বলে না। চুপচাপ ফারহানের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে কয়েকটা ঔষুদ লেখে দিলো। আর ফারহান মুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তার চোখ নামিয়ে নিলো। মনে মনে বলল, এটা কি করছিস তুই ফারহান। পাগল হয়ে গেছিস তুই। এই মেয়েকে দেখার জন্যে তুই নিজের কাজ ফেলে চলে এলি। পাগল হয়ে যাব আমি।কি হচ্ছে আমার সাথে। কেন বারবার মুনকে দেখতে চাই। না এমটা কিছুই হবে না। আমি মুনের থেকে দূরে থাকবো। এই মেয়েকে আর বিশ্বাস করবো না। এ শুধুই কষ্ট দিতে জানে। ভালোবাসা কি সেটা বুঝেই না।

এদিকে পলাশ কেবলার মতো তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। এর আগে তো ফারহান কখনো এমনটা করে নি। নিজের গাড়ির কাচে ঘুসি দিয়ে নিজের হাত কেটে হসপিটালে আসলো। ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিস থেকে এনআর নার্সিংহোমে আসতে না হলে চারটা নার্সিংহোমকে ক্রশ করে আসতে হয়। তাহলে স্যার এখানেই আসলো কেন? ব্যাপারটা বেশ সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। পলাশ তোকে কিন্তু চোখ কান সবটা খুলে রাখতে হবে। আর এই ফুলপরি, ফুলপরিকে স্যার আগে থেকেই চিনে। তাহলে সেদিন আমাকে লাইন মারতে বলল কেন? মাথাটা ঘুরছে পলাশের। এত চাপ ওর ছোট মাথায় দেওয়া চলবে না। তবে ব্যাপারটা একটু ঘেটে দেখতে হবে।

৫,
বিকাল বেলা ফারহান তার টিম মেম্বারদের নিয়ে আতাউর রহমানের গ্রামে যায়। আতাউর রহমানের বাড়িটা অনেক বড়। বাড়ির চারদিকে চারটা টিনের ঘর। দক্ষিণ পাশের ঘরটাতে সে গরুর রাখে। উত্তর আর পূর্ব পাশেরটা তাদের নিজেদের আবাসস্থল। পশ্চিম পাশের ঘরটাতে তাদের দ্রব্যসামগ্রী রাখে। আমরা যেটাকে বলি গুদামঘর। বারান্দায় বসে ঝিমুচ্ছে আতাউর রহমান। চোখ-মুখে তার দুশ্চিন্তা। আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে কিছু ভেবে যাচ্ছে এমন সময় তার সামনে হাজির হলো পঞ্চমানব। তাদের মধ্যে একজন ছিলো ফারহান। ইন্সপেক্টর শিমুল। ও ফারহানের সহযোগী পলাশ মিদুল আর মোহনা। ওদের পাঁচজনকে দেখে আতাউর রহমান ভাবুক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকায়। মিদুল প্রশ্ন করে,

– আপনি আতাউর রহমান?

লোকটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। শিমুল পকেট থেকে নিজের কার্ড দেখিয়ে বলে,

– সাব ইন্সপেক্টর, শিমুল।

বাড়িতে পুলিশ দেখে আতাউর রহমান একটু অবাক হয়। সে তো থানায় কোন ডাইরি করে নি তাহলে তার বাড়িতে পুলিশ কেন? আতাউর রহমানের স্ত্রী এগিয়ে আসে। অতঃপর পলাশ সুধায়?

– VF 00 47 এই গাড়িটা আপনার তো?

গাড়ির কথা শুনে চমকে উঠে আতাউর রাহমান। তড়িৎগতিতে বলে,

– হো। কনে আমার গাড়ি। তোমরা জানো কত দিন ধইরা আমি আমার গাড়িটারে খুজবার লাগছি।

– খোজছেন মানে? আপনি জানেন না আপনার গাড়ি কোথায়?

– এসব কি কউ? জানলে আমি গাড়ি খোঁজুম ক্যা?

– আপনার গাড়ি খোঁজে পাননা কবে থেকে?

– এই ধরো সপ্তাহ খানেকের মতো?

– আপনার যে গাড়ি হাড়িয়েছে তারজন্যে থানায় মিছিং ডাইরী করেছেন? [পলাশ]

– যেডা চুরি অইছে হেইডা কি আর পাওন যাইবো? তাইলে খালি খালি টাহা খরচ করে পুলিশরে জানিয়া লাভটা কি অইবো। পুলিশ তো আবার টাহা ছাড়া কতা কয়না।

আতাউর রহমানের কথা শুনে শিমুল রেগে গিয়ে কিছু বলতে চাইলে ফারহান ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

– কনট্রোল ম্যান, কনট্রোল।

– তুমি কিভাবে নিজেকে কনট্রোল করতে বলছো ফারহান। এই চাচা তো সমগ্র পুলিশ জাতিকে অপমান করছে।

ফারহান আতাউর রহমানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

– আপনাকে আমাদের সাথে পুলিশস্টেশনে যেতে হবে। না ভয় নেই। আপনাকে কিছু জিগ্যাসা করা হবে তাই।

আতাউর রহমান একবার ফারহানের দিকে তাকায় তো আরেকবার তার স্ত্রীর দিকে তাকায়।

শিমুল আতাউর রহমানকে নিয়ে পুলিশস্টেশনে চলে যায়। ফারহান পলাশ মিদুল আর মোহনা ওরা এক গাড়ি করে কমিশনড স্যারের বাসায় যাচ্ছে। ফারহান ড্রাইভ করছে আর ওর পাশের সিটে বসে আছে পলাশ। মিদুল আর মোহনা বসে আছে পিছনে। পলাশ ফারহানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,

– স্যার, আপনার কি মনে হয়না এই আতাউর রহমান মিথ্যে বলছে।

– আমার মনে হয় ওনি সত্যিই বলছে।

– কেন স্যার?

– জানিনা রে পলাশ। তবে আমার মনে হয় উনি সত্যি বলছে।

– আমারও তাই মনে হয়। [মোহনা]

গাড়ি এসে কমিশনড স্যারের বাসার সামনে পার্ক করতেই সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। বাড়ির ভিতরের দিকে এগোতে যাবে তখন দেখতে পায় কমিশনড স্যারের বাসা থেকে মুন বের হচ্ছে। ফারহান সেখানেই থেমে যায়। আর ভাবতে থাকে মুন এখানে কি করছে।

চলবে,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here