হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব -০২

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০২ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

হসপিটালের করিডোরে থাইগ্লাসের পাশে দাড়িয়ে শানাইয়া নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। ও অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ভাইকে তখন রাগের মাথায় যা নয় তাই বলে দিয়েছে। তখন যদি একটু মাথা খাটিয়ে ভাবত তাহলে তার ভাই আর তার কথায় কষ্ট পেত না। সব লামিয়ার চাল লামিয়া ফাঁসিয়ে তার ভাইকে বিয়ে করেছে। এটা ওর মাথায় এতোক্ষণে আসল।

জুবরান শানাইয়ার এমন কান্না দেখে এবার আর শান্ত কণ্ঠে কিছু বলল না বেশ রেগেই বলল
— এভাবে ম’রা কান্না জুড়েছিস কেনো? আঙ্কেল তো ঠিক আছে কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে।
শানাইয়া অশ্রু সিক্ত নয়নে জুবরানের দিকে তাকিয়ে বলল
— আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি!
জুবরান ভ্রু কুঁচকে বলল
— কি করেছিস?
— আমি ভাইয়াকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি অনেক কথা শুনিয়েছি
— সরি বলে দিস সাফওয়ান তোর ওপরে রাগ করে থাকবে না ও তোকে খুব ভালোবাসে। তুই যখন জ্ঞান হারিয়ে ছিলি। ওর অবস্থা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছিল।
শানাইয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
— জুবরান ভাই ভাইয়া লামিয়াকে বিয়ে করেছে।
জুবরান বিস্ময়ে চেচিয়ে উঠে বলল
— হোয়াট? কি বলছিস তুই? তোর মাথার ঠিক আছে? আমি যতদূর জানি সাফওয়ান লামিয়াকে সহ্য করতে পারে না সেখানে বিয়ে অসম্ভব ব্যপার
— আমি ঠিকি বলছি। আমি যখন বাসায় গেলাম দেখলাম বাসা থেকে পাশের বাসার কিছু লোকজন আর হুজুর সম্ভবত কাজী বের হচ্ছে। বাসার ভিতরে গিয়ে দেখলাম লামিয়া লাল শাড়ি পড়ে ভাইয়ার পাশে দাড়িয়ে আছে
— নাহ কোথাও একটা ভুল হচ্ছে সাফওয়ানের কাছ থেকে সবটা জানা দরকার
— আমি অনেক খারাপ কথা বলে ফেলছি
জুবরান শানাইয়ার মাথায় হাত দিয়ে বলল
— সব ঠিক হয়ে যাবে।
শানাইয়া মনে সাহস পেলো।
শাহাদাত হোসেনের জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ পর শানাইয়া অভিমান করে বাবাকে বেখেয়ালি বাইক চালানোর জন্য বকাঝকা করলো। শাহাদাত হোসেন এতো ব্যথার মধ্যে হেসে বলল
— মা তোরদের কে ছেড়ে যেতে পারি বলত?
— একদম বাজে কথা বলবে না
— আচ্ছা মা। তোর মা কই?
–আম্মুর প্রেশার বেড়েছে তাই খালামনি সাথে করে নিয়ে গেছে।

সাফওয়ান কে দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাহাদাত হোসেন বলল
— দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? এদিকে আয়।
সাফওয়ান দৌড়ে গিয়ে বাবার বুকে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।
— পাগল দুটা ছেলে-মেয়ে হয়েছে আমার। এতো কান্নাকাটির কি আছে। আমি ঠিক আছি তো!

শাহাদাত হোসেনের জ্ঞান ফিরেছে শুনে জুলেখা একদণ্ড অপেক্ষা না করে ভাইয়ের সাথে হসপিটালে চলে আসল।
বেশ রাত হয়ে যাবাই রাতে হসপিটালে কে থাকবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সাফওয়ান আর জুবরান থাকবে আর সকলে বাসায় যাবে। শানাইয়া যাবে না বলে গো ধরে বসে আছে। অনেক বোঝানোর পড়েও লাভ হলো না। অগত্যা শানাইয়া, জুবরান আর সাফওয়ান থেকে গেলো।
শাহাদাত কে খাইয়ে দিয়ে শানাইয়াও খেল। জুবরান, সাওয়ান বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে আর শানাইয়া আর শাহাদাত হোসেনের জন্য বাসা থেকে খাবার পাঠানো হয়েছে। শাহাদাত হোসেন বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলেন না ঔষধের ডোজে ঘুমিয়ে পড়লেন। জুবরান ফোনে কি যেনো করছে। সাফওয়ানের ফোন আসায় কেবিনের বাইরে চলে গেলো। তা দেখে শানাইয়াও পিছনে পিছনে গেলো জুবরান চোখ তুলে দেখলো দুইভাইবোনের কান্ড।
সাফওয়ানকে লামিয়া ফোন দিয়েছে।
— ফোন দিচ্ছিস কেনো বারবার?
— আমার বরকে আমি ফোন দিব না ত কে দিবে?
— এসব কথা শোনার ইচ্ছে নেই আর ফোন দিবি না।
— আরে আরে শোনো না। কখন ফিরছ?
— কেন?
— যাহ কি যে বলো না আজ আমাদের বাসর রাত বলে কথা কিছু তো স্পেশাল হতেই হবে
— তোর শরীরের এতো জ্ব*লা বলেই আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস? এতো কষ্ট করা লাগত না। আমাকে বলতিস তোর রাত কা’টানোর জন্য ছেলের ব্যবস্থা করে দিতাম।
সাফওয়ান আর মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে ফোন কেটে দিল। লামিয়ার সাফওয়ানের কথায় হৃদয়ে অদৃশ্য র’ক্ত’ক্ষ’র’ণ হতে লাগলো। ওতো সাফওয়ান কে ভালোবাসে। ভালোবাসাকে হারাতে দিবে না বলেই এভাবে বিয়ে টা করতে হলো। এটা ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না যে ওর! লামিয়া ডুকরে কেঁদে উঠলো আগে অনেক ভুল করেছে একটু সুখ কি ওর কপালে জুটবে না?
সাফওয়ান পিছনে ফিরে বোনকে দেখে বলল
— তুই? কিছু লাগবে?
— ভাইয়া তুই বাসায় ফিরে যা। এভাবে লামিয়া কে বলাটা তোর ঠিক হয় নি। ও বিয়ে করেছে তোকে…
— আমি তোর কাছ থেকে জ্ঞান শুনতে চাইছি না ও আমাকে ফাসিয়ে বিয়ে করেছে এ বিয়ের কোনো মানেই হয় না। তাছাড়া আব্বু আম্মু এগুলো জানলে কতটা কষ্ট পাবে ভাবতে পারছিস? তুই ঠিকি বলেছিস সন্তান হিসেবে আমি অপদার্থ
— ভাইয়া আ’ম সরি আমি আসলে তখন রেগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ওভাবে বলে ফেলছি মন থেকে কিছু বলি নি তুমি আমার ওপরে রাগ করো না প্লিজ
— আরে রাগ করার কি আছে আমি জানি তুই রাগের মাথায় বলে ফেলেছিস।
— আ’ম সরি ভাইয়া।
— আরে চল কি খাবি বল
— আইসক্রিম
— এই রাতে আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগবে কাল খাওয়াব
— পা-ল্টি-বা-জ

দুজন ফিরে এসে দেখলো জুবরান আগের মতোই বসে আছে। সাফওয়ান বলল
— তুই কষ্ট করে না থেকে চলে গেলেই পারতি
জুবরান কোণা চোখে তাকিয়ে বলল
— ইন্ডিরেক্টলি চলে যেতে বলছি
— আরে ব্যাটা মাইন্ড করিস কেন?
— আমাকে একথাটা না বলে তোর বোনকে বল
— আমি এখানে আব্বু কাছে থাকব কোথাও যাব না
— হ্যা বুঝতে পারছি আমরা

জুবরান, শানাইয়া সোফায় বসে, আর সাফওয়ান চেয়ারে বসেই রাত কাটিয়ে দিল।
সকালে সবার আগে শানাইয়া ঘুম থেকে জেগে দেখলো জুবরানকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে আছে। মূহুর্তেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইলো। আস্তে করে জুবরানের থেকে সরে গিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলো ভাগ্যিস আগে ভাগে ঘুম ভেঙেছিল না হলে কেউ দেখে ফেললে ব্যপারটা কতটা খারাপ হতো। তার মিনিট ক্ষানেক পরে জুবরান চোখ খুললে বলল
— ঘুম হয়নি তোর? এভাবে বসে ছিলি নাকি সারারাত?
— না না মাত্রই ঘুম ভাঙ্গলো
— ওহ খুদা লাগছে নিশ্চয়ই খাবি?
— চা খাব
— তুই বস আমি আনছি।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here