হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব -০৯

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০৯ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

রাহির সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যার আঁধার চারিদিকে ঘনিয়ে এলো। শানায়া টের পেল না। ঘন্টাক্ষাণিক থেকে বলল
— আপু আমি তাহলে এবার যায়। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও
— একা যাবে? সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো দাড়াও আমি সাফওয়ানকে না হয় জুবরানকে বলছি
— না না আপু তার দরকার নেই আমি একা এসেছি একাই যেতে পারবো তুমি চিন্তা করো না আমি যাচ্ছি
রাহিকে কিছু না বলতে দিয়ে শানায়া হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে পড়ল। জুবরান, রিনি ডক্টরের সাথে কথা বলে কেবিনে এসে শানায়াকে দেখতে না পেয়ে জুবরানের ভ্রু কুঁচকে গেলো।
— শানায়া কই?
— এই তো মিনিট ক্ষণেক আগে চলে গেলো।
জুবারানের মাথায় বা*জ পড়ল। রিনি বলল
— কী! তুই ওকে একা যেতে দিলি কেনো? সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
— শানায়াকে বললাম আমি জুবরান বা সাফওয়ান কে বলি ও বলল না আমি একা এসেছি একাই যেতে পারব তুমি টেনশন করো না বলে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে গেলো আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না।
জুবরান শান্ত কণ্ঠে বলল
— তোমরা টেনশন নিও না আমি দেখছি এতোক্ষণে বেশি দূরে যেতে পারি নাই
জুবরান বেশ বুঝতে পারছে। শানায়া খেপে আছে। ওকে না নিয়ে আসার জন্য অভিমান হয়েছে সবার ওপরে।
জুবরান কিছুদূর আস্তে আস্তে বাইক চালিয়ে গেলো শানায়া হেঁটে গেলে বা কোনো রিকশায় গেলে যেনো চোখে পড়ে। কিন্তু চোখে পড়ল না। শানায়া দের বাসায় যাওয়া গলিটার কাছে এসে দেখলো। শানায়ার একটা জুতা আর ব্যাগ ফেলানো। জুবরান চারিদিকে তাকালো কাউকে দেখতে পেলো না। জুবরানের মনে ভয় কাজ করছে। কয়েকবার শানায়া বলে ডাকলো কোনো রেসপন্স পেলো না। জুবরান দিশেহারা হয়ে গেলো এদিকে ওদিকে হেঁটে হেঁটে শানায়া নাম ধরে ডাকতে লাগলো। কোথা থেকে শানায়া দৌড়ে এসে জুবরানকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগল। জুবরানের বুকটা ধক করে উঠল। শানায়াকে আগলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
— কি হয়েছে বল আমাকে? কাঁদছিস কেন বল? কি হয়েছে? কোথায় ছিলি তুই?
— ভাইয়া কুকুর তাড়া করছে।
— হোয়াট!
— হ্যা আর একটু হলেই আমাকে কা*ম*ড় দিত
জুবরান স্থিতির শ্বাস ছেড়ে বলল
— বেশ হয়েছে বেশি পাকামির ফল এটা। তোকে একা আসতে নিষেধ করছিল না তাও আসলি কেনো?
শানায়া ভয়ে জুবরানকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। জুবরান ছাড়াতে চেয়েও পারছে না। পাশ থেকে রিকশায় করে দু’টো মহিলা যাচ্ছিল ওদেরকে দেখে বলল
— আজকালকার ছেলেমেয়ে গুলোও না রাস্তা ঘাটে অসভ্যতামী করতে ছাড়ে না।
জুবরান কথাটা শুনে শানায়াকে ধমক দিয়ে বলল
— শানায়া ছাড় আমাকে
শানায়া ভয়ে ছিটকে গেলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
— ওঠে বস আর কোনো পাকামি করিস না তাহলে এখানে তোকে একা ফেলেই চলে যাব
শানায়া আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে চুপচাপ বাইকের পিছনে উঠে বসল।
বাসার সামনে নামতেই সেই মহিলার সামনা-সামনি হতে হলো দুজনকে। মহিলাটি বলল
— শানায়া তার তুমি ঔ মেয়েটা ছি ছি ছি তোমাকে ভালো মেয়ে ভাবতাম এখন দেখি ছি রাতবিরেত ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করে বেড়াও
শানায়া ঘাবড়ে গেলো। জুবরান বলল
— আন্টি আপনি যেমনটা দেখছেন আর যেমনটা বুঝছেন সবটা ভুল
— আমরা সবাই ভুল তোমরাই ঠিক। যার ভাই এমন সেখানে বোন ভালো হবে কিভাবে? তোমার মা-বাবা তোদেরকে মানুষ করতে পারি নি
শানায়া আকাশ থেকে পড়ল প্রতিবেশী কাছ থেকে এমন কথা শুনে রাগে বলল
— আপনি কি সব যাতা বলছেন?
— আমি যেটা দেখেছি সেটাই বলছি
— কি দেখেছেন আপনি হ্যাঁ?
— এই যে তোমরা রাস্তায় দাড়িয়ে জড়াজড়ি করছিলে
— বেশ করেছে আরো করব আপনার কি হ্যাঁ নিজের মেয়েকে মানুষ করতে পারেন নি বলে সে পালিয়ে গেছে সরি টু সে আন্টি আপনি আমাকে এটা বলতে বাধ্য করলেন। নিজের চরকায় তেল দিন নিজের ছেলেমেয়েকে আগে মানুষ করুন তারপর অন্যর ছেলেমেয়েদের খুঁত ধরবেন।
মহিলাটা দমে গিয়ে ও হাল না ছেড়ে বলল
— চো*রের মায়ের বড় গলা
— এখানে চু*রির কি দেখলেন? যাতা বলছেন। আমি এডাল্ট যা ইচ্ছে তাই করব আপনার কি? আমি আপনার খায় না পরি?…
জুবরান শানায়ার মুখ চেপে টেনে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে লাগল। মহিলাটা ভেংচি কেটে নিজের বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। দরজার সামনে গিয়ে শানায়ার মুখ ছেড়ে দিল।
— আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেনো? দেখলেন না ওনি কেমন বাজে বাজে কথা বলছিল?
— একটা ছেলেমেয়েকে ওভাবে দেখলে যে-কেউ ই খারাপ ভাববে শানায়া!
— কেনো খারাপ ভাববে?
— তুই বাচ্চা নস যে তোকে সবটা বুঝিয়ে বলতে হবে যা বাড়ি যা আর প্যারা দিস না
— আমি আপনাকে প্যারা দি
— অবশ্যই। আজ সারাদিন আমাকে তুই প্যারা দিয়েছিস।
শানায়া রেগে গিয়ে বলল
— দিয়েছি বেশ করেছি আরো দিব
শানায়া জুবরানের কথার আওয়াজ পেয়ে জুলেখা দরজা খুলে বলল
— কি রে তোরা চিৎকার চেচামেচি করছিস কেনো?
— সেটা তোমার মেয়ের কাছে শুনো খালামনি। তোমার মেয়ে মাতব্বরি করে একা বাসায় আসতে গিয়ে কুকুরের তাড়া খেয়েছে
— খেয়েছি বেশ করেছি আরো খাবো আপনার কি
— দেখছ খালামনি মুখে মুখে কথা বলাও শিখে গেছে বড় দের মানছে না
জুলেখা রাগি চোখে শানায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
— শানায়া কি হচ্ছে কি সরি বলো
শানায়া রেগে মুখের ওপরে বলল ‘পারব না’ তারপর ধুপধাপ পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো। জুলেখা বলল
— বাবা ওর কথায় কিছু মনে করিস না। মেয়েটা দিন দিন জেদি হয়ে যাচ্ছে। একটা কথাও শুনে না কি করব বলত
— এই বয়সে এমন হয় টেনশন করো না ঠিক হয়ে যাবে আমি যাচ্ছি
— সে-কি কিছু খেয়ে যা
— না খালামনি আমার হসপিটালে কাজ আছে সাফওয়ান ওখানেই না?
— হ্যা ছেলেটার নাওয়া খাওয়া ভুলে ওখানে পড়ে আছে। শুধু দুপুরের দিকে সাওয়ার নিয়ে আবার চলে গেছে।
— আচ্ছা রাতে ওকে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দেখছি
— হ্যা তাই করিস না হলে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে
__________________________

লামিয়া রাগে দুঃখে কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। ও কিছুতেই মানতে পাড়ছে না। সাফওয়ানের মন জুড়ে অন্য নারীর বসবাস। সেখানে কেনো কোনেও তার ঠাঁই নেই। তার জন্য শুধু মন ভরা ঘৃ*ণা যা ভাবলেই লামিয়ার ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে। লামিয়ার মনে শ*য়*তা*ন ভর করলো যেনো। মাথায় শুধু ঘুরতে লাগল যে করেই হোক রাহিকে সাফওয়ানের জীবন থেকে সরাতে হবে!

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here