হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব -০৭

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০৭ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সন্ধ্যায় জনমানবহীন গলি দিয়ে হেটে চলছে দুই মানব-মানবী। অভিমানে চুপটি করে হাটছে শানায়া মন খারাপ হয়েছে জুবরানের বকা খেয়ে। জুবরান অবশ্য শানায়ার এই অভিমানে ধার ধারেনি। বাসা থেকে অজস্র ফোন কল আসছিল। জুবরান সাথে আছে শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। জুবরান হাটতে হাটতে প্রশ্ন করল
— কিছু খাবি?
শানায়া গম্ভীর কণ্ঠে বলল
— নাহ!
— চল আর একটু হেঁটে রিকশা নিব।
রিকশায় উঠে কিছু সময় অতিবাহিত হতেই শীতল বাতাস বইতে লাগল। শানায়ার শীত শীত লাগলেও কিছু বলল না। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে একটু একটু করে শীত পড়ছে। আজ সন্ধ্যায় বের হয়ে শীতের তিব্রতা বুঝতে পারল। জুবরান শানায়া পাশাপাশি বসলেও দুজনের মাঝে জেনো শত মাইলের দূরত্ব! জুবরান কীভাবে জানি শানায়ার মন পড়ে ফেলল। বলল
— শীত লাগছে?
শানায়া উত্তর দিল না। জুবরান বলল
— বাসার কাছাকাছি এসে গেছি প্রায় এতটুকু শীত সহ্য করে নে
— আপনাকে বলছি শীত লাগছে? এতো আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না।
— তোকে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছি না তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও এটাই বলতাম
শানায়া চুপ রইলো। অভিমানের পালা ক্রমশ ভারি হতে লাগছ। মনে মনে ঠিক করে নিল ‘এই ব*দ লোকটার সাথে আর কোনো কথা বলবে না।’
___________________
‘প্রেম ভালোবাসা’য় পূর্ণতা অপূর্ণতা থাকে। তাই বলে কি আমাকে জীবন থেমে থাকে? উহুম! জীবন থেমে থাকে না প্রবাহ নদীর স্রোতের মতো বইতে থাকে। এই ছোট্ট জীবনে আমাদের অনেক মানুষের আনাগোনা থাকবে। যারা জীবনের খারাপ ভালো সময়ের শেষ পর্যন্ত থাকবে তারাই তোমার আসল ভালোবাসার মানুষ। আপন মানুষ।

আজ ৩ বছরের ভালোবাসা শেষ করে বাসা ফিরে দরজা দিয়েছে রাহি। সাফওয়ান কে এতো বুঝিয়েও ব্রেকআপ আটকাতে পারি নি। সাফওয়ান ব্রেকআপের কোনো রিজন ও দেখায় নি শুধু বলেছে ‘আমার তোমাকে ভালো লাগছে না। ব্রেকআপ চাই’
রাহি শুধু আর্শ্চয্য হয়ে তাকিয়ে ছিল। আজ পনেরো দিন পর দেখা হলো তাদের এই ক’দিন বাবার এ*ক্সি*ডে*ন্টে বলে এড়িয়ে গিয়েছে। রাহিও মেনে নিয়েছিল। দেখতে যাবে বলতেই সাফওয়ান বারণ করে দিয়েছিল বলে আর যাওয়া হয় নি। হঠাৎ দুপুরের দিকে ফোন দিয়ে বলল দেখা করবে। রাহিও খুশি হয়ে গেছিল এতো দিন পর প্রিয় মানুষটাকে দেখবে বলে কিন্তু কি হলো তার ভালোবাসা ১৫ দিনে হারিয়ে গেলো? রাহি পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে রিনিকে ফোন দিল। রিনি ফোন ধরতেই বলল
— আপু।
বোনের কান্নারত কণ্ঠস্বর শুনে রিনি বিচলিত হয়ে বলল
— রাহি কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেনো?
— আপু তোর দেবর আমাকে ঠ*কিয়েছে
রিনি বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠে বলল
— কি বলছিস মাথা ঠিক আছে তোর জুবরান এমন ছেলে নয়
— জুবরান নয় সাফওয়ান
রিনি ধাক্কা সামলাতে একটু সময় নিয়ে মিয়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল
— তোর যার সাথে সম্পর্ক ছিল সে ছেলেটা সাফওয়ান!
— হ্যাঁ
— তুই আগে বলিস নি কেনো ছেলেটা সাফওয়ান
— ভেবেছিলাম ও একটা ভালো জব পেলে সবাইকে বলল কিন্তু ও আজ এসে বলল আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে না।
রিনি মিনিটক্ষাণিক চুপ থেকে বলল
— সাফওয়ানের বিয়ে হয়ে গেছে
রাহি স্তব্ধ হয়ে গেলো। অনুভূতি শূন্য হয়ে কান থেকে ফোন পড়ে গেলো।
_____________________

বাসা এসে শানায়া কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। জুবরান জুলেখার সাথে দেখা করে ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে গেলো। শানায়া ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে মাকে দেখতে পেলো জানে এখন ওকে বকা শুনতে হবে। কিন্তু শানায়াকে অবাক করে দিয়ে জুলেখা বলল
— তুই জুবরানের সাথে ছিলি ফোন করে তো বলতে পারতি
— মনে ছিল না
— কি মনে থাকে তোর? কোন দিন নিজেকেই ভুলে যাবি। খেয়েছি সারাদিনে কিছু না-কি বন্ধুদের সাথে শুধু হল্লা দিয়েই গেছ
— আম্মু ওদের সাথে তোমার শত্রুতা বল ত
— ওদের জন্যই তো তুমি বিগড়ে যাচ্ছ
জুলেখা বকতে বকতে চলে গেলো। শানায়া ফাঁকা ঢোক গিলে মনে মনে বলল
— তুমি তো আর জানো না ওদের লিডার আমি। তোমার মেয়েই সবচেয়ে ব*দের হাড্ডি। তাহলে ওদের বাবা-মাও আমাকে এমনে বকাবকি করে?

সাফওয়ান সন্ধ্যা ফিরে সেই যে রুমের দরজা দিয়েছে এখনো খুলে নি দেখে জুলেখার মনে ভয় হলো ছেলেটা আবার কিছু করে না বসে। দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল
— সাফওয়ান কি হয়েছে বাবা তোর শরীর খারাপ লাগছে না-কি সেই যে দরজা দিলি আর নিচে আসলি না।
সাফওয়ান দরজা খুলে দিয়ে বলল
— আম্মু আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।
❝’মা’ ছোট শব্দ হলেও এর গভীরতা অনেক। পৃথীবির সব শান্তি মায়ের কাছে পাওয়া যায়। মায়ের মতো আর কেউ হয় না। এই যে মায়ের কাছে সব সমস্যার স্যালুশান আছে। তারা ম্যাজিক করে জেনো সব ঠিক করে দেয়। তাদেরকে মন খারাপের কথা না বললেও তারা বুঝে ফেলে।❞
——————
জুবরান বাসা ফিরতেই রিনি এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল
— তোমার সাথে কথা আছে
— বলো ভাবী
— তুমি জানতে সাফওয়ানের রাহির সাথে সম্পর্ক আছে।
— হ্যাঁ জানতাম।
— আমাকে আগে কেনো বল নি
— ব্যাপাটা আমি সিরিয়াসলি নেয় নি। সাফওয়ানের বিয়ের পর ও আমার কাছে স্যালুশন চেয়েছিল কি করবে আমি বলেছি রাহিকে সব জানাতে।
— কিন্তু রাহি ফোন ধরছে না।

রাতের খাবার খেয়ে জুলেখা রুমে এসে শাহাদাত হোসেনকে ঔষধ খাইয়ে দিলো। অর্ধাঙ্গীনির মুখটা প্যাঁচার মতো করে রাখছে দেখে মজার ছলে বলল
— আমার একমাত্র বউটার কি হলো চিন্তিত মনে হচ্ছে
জুলেখা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
— ছেলেটার জন্য চিন্তায় আছি। ছেলেটার জীবনটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো না? ও একটা মেয়েকে ভালোবাসে সেখান থেকে ও আর লামিয়া কীভাবে সুখে সংসার করবে?
— ছেলের জন্য তো আমার মন টা কেমন করে। এ সম্পর্কের আদেও কোনো পরিবর্তন হবে কোনো রূপ লাভ পাবে কি? দেখ কি হয়…
— লামিয়া কে যদি না মানে তাহলে সাফওয়ান যেটাতে সুখী হয় সেটাই করব আমি আমার ছেলেকে এমন দেখতে চাই না আমার আগের হাসিখুশি প্রাণচ্ছল ছেলেকে ফিরে পেতে চাই

রাহিকে ফোনে পাচ্ছে না রিনি চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে পায়চারি করছে কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। শেষে বাধ্য হয়ে মা বাবাকে সবটা জানাল। একটু পরে খবর আসল। রাহি ঘুমের ঔষধ খেয়েছে।
সাফওয়ানের কাছে কথাটা যেতেই ও দিকবিদিকশুন্য হয়ে হসপিটালে ছুটে গেলো। রাহির বাবা-মায়ের কাছে সাফওয়ান অনেক কথা শুনলেও ওর হৃদয় স্পর্শ করতে পারি নি। মনে প্রাণে শুধু চাইছে ভালোবাসার মানুষটা সুস্থ হয়ে যাক।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here