হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব -০৮

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০৮ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

কালকের সারাদিনের ক্লান্তিতে শানায়ার সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলো। সকলে উঠে আশ্চার্য্য হলো ওকে একবার ও কেউ ডাকলো না। ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে সারাবাড়িতে কোনো সারাশব্দ না পেয়ে শানায়া একটু ঘাবড়ে গেলো। বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো শাহাদাত হোসেন বই পড়ছে। শানায়া বলল
— আব্বু আম্মু কই বাড়িতে কেউ নেয়?
শাহাদাত হোসেন বইয়ের পৃষ্ঠা বুকমার্ক করে পাশে রেখে বলল
— না রে মা। তোর মা, ভাই, লামিয়া গিয়েছে রাহিকে দেখতে
— রাহি আপু। কিন্তু কেনো?
— ঘুমের ঔষধ খেয়েছে কাল রাতে।
— কীহ!! আমাকে ডাক নি কেনো?
— পরে যাস আমার পাশে বস তো।
শানায়ার ভালো মেয়ের মতো বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। বলল
— খেয়েছ তুমি?
— হ্যাঁ তোর মা সব গুচ্ছিয়ে রেখে গেছে।
— কিন্তু লামিয়ার যাওয়ার কি দরকার ছিল। শুধু ঝামেলা বাড়ায়
— ওসব বাদ দিয়ে আমার কথা শোন
— হ্যাঁ বলো আব্বু তুমি খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে
— হ্যাঁ
— আচ্ছা আমিও সিরিয়াস হলাম
— তুই কি কাউকে পছন্দ করিস বা ভালোবাসিস?
বাবার কাছে এমন প্রশ্ন শুনে শানায়া আকাশ থেকে পড়ল। বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলল
— এসব কি বলছ আব্বু? আমার দাঁড়া এসব হবে না।
— দেখ মানুষের মন পরিবর্তন হয়। ছেলে মেয়েকে পছন্দ করতে পারে আবার একটা মেয়ের ছেলেকে ভালোলাগতে পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না। ভালোবাসতেই পারিস। তোর যদি এমন কেউ থাকে তাহলে নিরদ্বিধায় বলতে পারিস। ছেলেটা যদি ভালো হয় অবশ্যই আমরা মেনে নিব।
শানায়া কিঞ্চিৎ চুপ করে থেকে বলল
— হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো করছ আব্বু
— দেখ আজকালকার ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের সাথে কিছু শেয়ার করে না তারা ভুল স্টেপ নেয়। আমি চাই না তুই এমন কোনো ভুল করিস
শেষ কথাগুলো বলতে গিয়ে শাহাদাত হোসেনের কণ্ঠনালি কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল। শানায়া চমকে বাবার দিকে তাকালো শাহাদাত হোসেনের চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করছে।
— এই আব্বু তুমি কাঁদছ? একদম কাঁদবে না। তোমার মেয়ে কখনো কোনো ভুল করবে না দেখ। আমি তো বিয়েই করব না সবসময় তোমাদের কাছে থাকব
শাহাদাত হোসেন হেঁসে বলল
— আচ্ছা।
— আব্বু রাহিআপু ভাইয়াকে ভালোবাসে তাই না? সেজন্য এমনটা করছে? আর তুমি সেজন্য ভয় পেয়েছ যদি আমি এমন কিছু করি
— এই তো আমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে না বলতেই সবটা বুঝে যায়
— না আমি ছোট আমি তোমাদের ছোট মেয়ে একদম এই টুকু
শাহাদাত হোসেন মেয়ের কথা শুনে না হেসে পারলেন না। বাবা মেয়ে আজ অনেক সময় নিয়ে জমিয়ে রাখা সব মনের কথা বলল। শাহাদাত হোসেন ও ধৈর্য্য নিয়ে মেয়ের কথা শুনল। শানায়ার বেশিরভাগ ফাউ কথা ছিল। শাহাদাত হোসেন সেটাতে বিরক্ত হলেন না বরং মেয়ের কথায় তাল মেলাল।
———————————–

রাহির জ্ঞান ফিরতে সকলে এক এক করে দেখা করে আসলো। সাফওয়ান যেতে গেলে রাহির বাবা সাফওয়ানকে আঁটকে দিয়ে বলল
— না তুমি যাবে না। তোমার জন্য আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা। এবার কি আমার মেয়েকে মে*রে ফেলতে চাও!
— আঙ্কেল প্লিজ ওর সাথে আমার একটিবার দেখা করতে দেন আমি সব কিছু ঠিক করে দিব প্লিজ আঙ্কেল
অনেক জোরাজোরির পর রাহির বাবা মানলেন। সাফওয়ান কেবিনে ভিতরে গিয়ে দেখলো রাহি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই রাহি চোখ খুলে সাফওয়ানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাফওয়ান বলল
— এমন কেউ করে জান। তুমি না থাকলে আমার কি হতো বলো তো আমি তো ম*রেই যেতাম
— তোমার তো বউ আছে। আমি থাকা না থাকায় তোমার কি যায় আসে?
— এই চুপ। আমার যায় আসে তুমি আমার বউ আর কেউ আমার বউ না।
রাহি মলিন হেসে বলল
— দেখ সাফওয়ান আমি অন্যের স্বামী’কে কেড়ে নিব এমন মেয়ে নই। আর এটা আমি চাই ও না আমি চাই তুমি তোমার বউকে নিয়ে সুখী হও
— কিন্তু আমি ওর সাথে সংসার করছি না যতদ্রুত সম্ভব ওকে আমি ডিভোর্স দিব
রাহি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে দ্বিধা নিয়ে বলল
— ডিভোর্স যখন দিবে তখন বিয়ে কেনো করছিলা?
— তুমি কিছু জানো না রাহি না জেনে না বুঝে এতো বড় স্টেপ নিলে?
— কি বলছ তুমি ক্লিয়ারলি বলো
সাফওয়ান সেদিনের সব ঘটনা বলল। রাহি সব শুনে কি বললে ভাষা খুঁজে পেলো না। একটা মেয়ে তার নিজের ইর্জ্জত নিয়েও এতো বড় মিথ্যা বলতে পারে?
— আমাকে একটু সময় দাও ওকে আমি ডিভোর্স দিব!
________________________

দুপুরের দিকে শানায়া জুবরানকে ফোন দিল জুবরান তখন দুপুরের খাবার খেয়ে কেবলই রুমে এসেছে। এই অসময় শানায়ার ফোন পেয়ে বেশ অবাক হলো।
— হ্যালো জুবরান ভাইয়া
— বল
— আমাকে একটু রাহি আপুর কাছে নিয়ে যাবেন?
— কেনো তোর পা নেই তোকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে?
— এতো কিউট করে বললাম আর আপনি ঝাড়ি মারছেন?
— মেয়ে দের মিষ্টি কথায় ভুলতে নাই তাদের মিষ্টি কথার মধ্যে বি*ষ থাকে। যা তুই এই মুহুর্তে প্রমাণ করে দিলি।
— আমি এতো কথা শুনতে চাই না আপনি আমাকে বিকালে এসে নিয়ে যাবেন। আমাকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে না। আপনি না বলবেন না প্লিজ। আপনি না নিয়ে গেলে আপনার বিয়ে হবে না দেখেন।
একদমে কথা গুলো বলে থামলো শানায়া। জুবরান শান্ত কণ্ঠে বলল
— শকুনের দোয়ায় গোরু মরে না।
জুবরানের কথায় শানায়া বুঝল ও তাকে নিয়ে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে।
— তার মানে আমাকে নিয়ে যাবেন না?
— বুঝতে যখন পারছিস শুনছিস কেনো? রাখছি।
— হ্যাঁ হ্যাঁ যান যান আমি একই যেতে পারি আপনাকে তেল দিতে পারব না। এই যতটুকু তেল দিয়েছি ফিরিয়ে দিবেন। এখন তেলের দাম অনেক। আপনাকে তেল দিয়েছি বলে আপনার ভাব বেড়ে গেছে।
হসপিটালের ছোটাছুটির ক্লান্তিতে জুবরানের চোখ ছাপিয়ে ঘুম পেলো। এখন শানায়ার কথা মস্তিষ্ক ভালো করে নিতে পারছে না। এক কথায় বিরক্ত লাগছে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আবার হসপিটালে ছুটল।
রাহি আর রিনি দুই বোন কোনো ভাই নেই রিনির বাবার ও বয়স হয়েছে। আর সেই সুবাদে সবটা জুবরানই দেখাশোনা করছে। নুবাহান অফিসে কাজে বিজি থাকায় এদিকটা দেখতে পারছে না। কেবিনের সামনে আসতেই জুবরানের শানায়ার কথা মনে পড়ল। দরজা খুলে শানায়াকে দেখতে পেলো। শানায়া একবার তাকিয়ে আর তাকায় নি। শানায়া মনে মনে বলল ‘ব্যাটার খুব ভাব না? আমি ও ভাব দেখাব তোকে পাত্তাই দিব না দেখিস। হুহ্!’

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here