হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব -০৬

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০৬ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

রিনি এতোক্ষণ ধরে কাঁদতে কাঁদতে মাথা ঝিম ধরে গেছে। এখন চুপচাপ শুয়ে আছে। নুবাহান আগের মতোই বসে আছে। ভোরের আলো ফুটতে আর কয়েক ঘন্টা বাকি মাত্র। রিনির ক্লান্তিতে ঘুম পাচ্ছে কিন্তু ওর ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। নুবাহানের কাছ থেকে তার মনে কি চলছে সেটা জানতে চাইছে। বেশ কিছুক্ষণ পর নুবাহান বলল
— দেখ রিনি আমি রিয়েলাইজ করলাম আমি ভুল করেছি। কিন্তু তুমি কি কখনো আমার দিকটা ভেবে দেখেছ সারাদিন এখানে ওখানে ছুটাছুটি করে উপর মহল থেকে ঝাড়ি খেয়ে আমি কতটা ডিপ্রেসড থাকি।

রিনি চুপচাপ নুবাহানের কথা শুনছে। নুবাহান একটু থেমে আবার বলল
— তোমার অনেক অভিযোগ আমাকে নিয়ে হ্যা মানলাম তোমাদের কে আমি সময় দি না। কিন্তু আমার কি ইচ্ছে করে না তোমাদের সাথে সময় কাটাতে। আমি একটা বড় কেস হ্যান্ডেল করছি সেটাতে আমার সহ আমার পরিবারেরও প্রাণের ঝুঁকি আছে আর সেটার জন্যই তোমাদেরকে এখানে থেকে যেতে বলছি।

রিনি আঁতকে উঠে বসে নুবাহানের বাহু খামচে ধরে বলল
— এই এ সব কি বলছ তুুমি?
— ঠিকি বলছি। এতোদিন তোমাদেরকে এসব বলি নি কারণ তোমরা ভয়ে ভয়ে বাঁচবে এটা আমি চাইছিলাম না।
— এই শুনো তোমার এসব পুলিশের চাকরি টাকরি আর করতে হবে না। তুমি আমার কাছে থাকলেই হবে
— তা বললে কি আর হয়? তোমাদের খাওয়াব কি?
— মানুষ না খেয়েও বেঁচে থাকে বুঝলে?
— তুমি কিশোরী বয়সে ফিরে গিয়েছ। একটা মেয়ে আছে তোমার ভুলে গেলে?
— কিন্তু তোমার কিছু হলে আমি বাঁচব না…
— হুঁশশ তুমি একজন অনেস্ট পুলিশ অফিসারের বউ তোমাকে সকল পরিস্থিতিতে স্টং থাকতে হবে। সবসময় নিজের অবস্থান থেকে যাকে ভুল বুঝছ তার অবস্থানে নিজেকে বসিয়ে দেখো তাকে বোঝার চেষ্টা করো
রিনি ছলছল চোখে নুবাহানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
— সরি!
নুবাহান রিনির মুখ টিপে বলল
— এতো মিষ্টি করে কেউ সরি বললে কেউ কি আর না একসেপ্ট করে পারে!
__________________

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে মুখে পড়তেই সাফওয়ানের বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে গেল। চোখ খুলে সকাল সকাল লামিয়া কে দেখে মাথাটা দপ করে জ্বলে উঠল।
— তুই সকাল সকাল এ রুমে কি করছিস?
লামিয়া পিঠে ছড়িয়ে থাকা অল্প কয়েকটি ভেজা চুলগুলো আলত হাতে ঝাড়তে ঝাড়তে বলল
— ঔ ওয়াসরুমের পানি পড়ছিল না তাই
সাফওয়ান বিরক্তি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। ওয়াসরুম থেকে এসে লামিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলল
— এই তুই এতো সকালে সাওয়ার নিচ্ছিস কেনো? তাও আবার আমার রুমে সকলের সামনে কি প্রুভ করতে চাইছিস? তোর আর আমার মধ্যে সব স্বাভাবিক? আমি তোর শরী*রের জ্বা*লা মিটিয়েছি এটাই সকলকে দেখাতে চাইছিস?
লামিয়া স্তব্ধ হয়ে গেলো। ও তো এতো কিছু ভেবে এরুমে এসে সাওয়ার নেয় নি। সাফওয়ান ওকে শুধু শুধু ভুল বুঝছে! লামিয়া এক্সপ্লেন করতে যাবে তার আগেই সাফওয়ান রুম থেকে বের হওয়ার সময় ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিল।

সকাল সকাল উঠে লামিয়া সকলের জন্য চা কফি বানানোর কাজে লেগে যায়। সকালের নাস্তা বানানোর জন্য যখন উচু জায়গা থেকে আটার কৌটা নামাতে যায় তখনি আটা এসে ওর গায়ে পড়ে ভুত হয়ে যায়। জুলেখা এগুলো দেখে বলে ‘শাওয়ার নিও। তোমাকে আর কাজ করতে হবে না’
— চাচি তুমি আমাকে তুমি বলছ কেনো? আগের মতো তুই করে কেনো বলছ না?
— তুমি বাড়ির বউ হয়েছ তোমাকে তো আর আগের মতো তুই বলা চলে না। লোকে বলবে ঐ দেখ বাড়ির বউকে তুই তো-কারি করে
— আমি লোকের কথা জানি না তুমি আমাকে তুই বলে ডাকো। তুমি বলবে না কেমন পর পর মনে হয়। তুই বলে ডাকলে কত কাছের মনে হয় বল ত
জুলেখা এ কথার প্রতিত্তর করে না। লামিয়া প্রতিত্তোরের আশায় মিনিটক্ষাণেক অপেক্ষা করে চলে যায়। সাওয়ার নিতে কিন্তু গেস্ট রুমের পানি পড়ছে না দেখে জুলেখাকে বলে সাফওয়ানে রুমে সাওয়ার নিতে আসে। তবুও সাফওয়ান কিছু না শুনে না বুঝে এমন করে ভুল বুঝে চলে গেল। লামিয়া বুঝতে পারছে না ও যাই করছে সাফওয়ান সেটাতেই খারাপ দিকই খুঁজে পাচ্ছে।

❝আসলে একটা বিষয় কি আপনারা কখনো লক্ষ্য করেছেন। আমরা যখন কোনো একটা মানুষকে খারাপ ভাবি তখন আর আমরা তার ভালো দিকটা দেখতে পাই না বা দেখার চেষ্টা করি না। তখন তাকে সবটা দিক দিয়ে খারাপ বুঝতে থাকি। এমন কি তার আগে ভালো কাজ করা গুলো ভুলে গিয়ে খারাপটাই মনে রাখি। তার স্থানে নিজেকে কখনো কল্পনা করি না। বা তাকে বোঝার চেষ্টা করি না।❞
______________________

নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা চোখে রঙিন পর্দা থাকে। তারা সবসময় কল্পনার জগতে বাস করে। প্রজাপতির ডানার মতো তারা উড়তে থাকে। তারমধ্যে আবার অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়ে এই ফ্যান্টাসি জোন থেকে ছিটকে পড়ে। পরিচয় হয় নতুন সম্পর্কের ব্যাড়াজালে। তৈরি হয় পারিবারিক বিভিন্ন জটিলতা তার থেকে অনেকে ম্যাচুরিটি আসে।

বোকাসোকা শানায়া এই রেইনবো ফ্যান্টাসি জোনে বসবাস করছে। এই যে সকাল বেলা ফেন্ডরা মিলে প্লান করল আজ তারা সারাদিন ঘুরবে। অনেক মজা করবে। বাবার এক্সিডেন্টের পর থেকে তো আর ফেন্ডরা বাবাকে দেখতে আসলে তাদের সাথে তেমন কথা বলতে পারি নাই। আজও যেতে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু বন্ধুদের জোরাজোরিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছে রাজি হতে। মা’কে ও রাজি করে বাসা থেকে বের হয়ে দেখল। পাশের বাসার রাফি নামে ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে। কাছাকাছি এসে বলল
— কোথাও যাচ্ছ? দাড়িয়ে আছ যে…
— হ্যাঁ যাচ্ছি তো?
— চলো আমার বাইকে করে তোমাকে পৌঁছে দি
— নো নিড ভাইয়া থ্যাংঙ্কিউ আমি একা চলতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি
— ওহ। আংঙ্কেল কেমন আছে?
— ভালোই।
— তুমি কি আমাকে ইগনোর করছ?
— বুঝতেই যখন পারছেন শুনছেন কেনো?
— আমি এতোটাই খারাপ?
— আমি লামিয়া নই। আমি শানায়া তাই জায়গা বুঝে ফ্ল্যাট করবেন। নাহলে ই*ভ*টি*জিংয়ের কেস ঠুকে দিব

কথাটা বলে শানায়া হাটা ধরল। রাফি বিরবির করতে করতে চলে গেলো।

বন্ধুত্ব সম্পর্কটা অন্যরকম। রক্তের সম্পর্ক না হয়েও কত আপন। কেবল একমাত্র বন্ধুমহলে আসলেই আমাদের সকল দুঃখ, কষ্ট, বিষন্ন গুলো ভুলে শৈশবে ফিরে যায়। এদের সাথে থাকলে কখনো এনার্জি ডাউন হয় না। কিভাবে যে সময় চলে যাবে বুঝাই যায় না।
সারাদিন বন্ধু মহলে সাথে সময় কাটিয়ে এতো দিনের চিন্তা দুঃখ কষ্ট গুলো রিফ্রেশে পরিণত হলো। ফুরফুরে মেজাজে সন্ধ্যার একটু আগে বাসার দিকে রওনা হলো।
তবুও এই জ্যামের জন্য আটকে পড়লো তাই বসে না থেকে হাঁটতে হাঁটতে পথ অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিল। সন্ধ্যার সময়টায় চারিদিকে ঝকঝকে আলো। আর বায়ুদূষণে শানায়ার মনে হচ্ছে সব নতুন এতো এতো সুখ কেনো!! শান্তি লাগছে কেনো??

এই ভীরের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দেখা পেয়ে সুখ গুলো অম্বরি ছুয়ে পৃথিবী গ্রহের বাইরে চলে গেলো না-কি? ভাবতে ভাবতে ভাব নার সুতো ছিঁড়ল। ব্যাক্তিটর অবাক কণ্ঠের কথায় বলল
— তুই এই সন্ধ্যা বেলা বাইরে কি করিস? সাথে কেউ নেই? একা?
শানায়া ফ্যান্টাসি জোন থেকে বলল
— এইতো আপনি আছে!
জুবরান বিস্ময় নিয়ে বলল
— হেয়াট!

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here