হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব -০৫

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০৫ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সেই যে শানায়া অভিমান করে রুমের দরজা বন্ধ করলো জুবরানরা চলে না যওয়া পর্যন্ত আর দরজা খুলে নি। জুবরান চাতক পাখির মতো শুধু পিছু ফিরে চেয়েছে বার বার কিন্তু শানায়ার দেখা মেলে নি। বাসায় ফিরে জুবরান ভাবল ওর কোন কথায় কি শানায়া কষ্ট পেয়েছে? তার জন্য ম্যাডামের এতো অভিমান যে সামনেই আসল না। ভাবনার মাঝে নুবাহানের রুম থেকে চিৎকার চেচামেচি শব্দ আসছে কিছুক্ষণ পর নিনির কান্নার আওয়াজ ও আসল। জুবরান আর বসে থাকতে পারল না রুমে। রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো জিনিয়া বেগম ও যাচ্ছে। মায়ের পিছনে পিছনে জুবরান ও রুমে ডুকল। দেখল নিনি কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। জিনিয়া এমন অবস্থায় ধমকে থামালো দুজন কে জুবরান গিয়ে নিনিকে কোলে নিল

— কি সমস্যা তোদের সারাক্ষণ ঝগড়াঝাটি লেগেই রয়েছে
রিনি বলল
— তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞাসা কর না কি সমস্যা
— ব্যাস তোমাদের মধ্যেকার সমস্যা তোমরা মিটিয়ে নিবে এমধ্যে আমাদেরকে টানবে না। তোমাদের বোঝা উচিত তোমরা বাচ্চা নও তোমাদের একটা মেয়ে আছে। তোমাদের মধ্যেকার এসব দেখে মেয়েটার ওপরে কতটা প্রেসার পড়ছে তোমাদের আদেও মাথায় থাকে?
— আম্মু এসমস্যাটা এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। এখন তোমাদের জানানোর সময় এসেছে। তোমার ছেলে সারাদিন রাত কাজ কাজ আর কাজ। কাজ ছাড়া তিনি কিছু বুঝেন না। আমাদের জন্য সময় টুকু নেই তার। মাসের বাজার, রান্না, মেয়ের দেখা শোনা সবটা আমাকেই করতে হয় তার শুধু টাকা দেওয়ার দরকার সেটাই শুধু তার কাজ আমাদের সাথে টাইমস্পেন্ড করার সময় নেই তার একটু শান্তিতে দুটো কথা বলব তার মেজাজ সবসময় গরম থাকে কিছু বলতে গেলেই চিৎকার চেচামেচি ছাড়া তিনি কথা বলেন না। আবার এখন বলল এখানে থেকে যেতে ওখানে আমাদের আর যাওয়ার দরকার নেই। এভাবে তো আর জীবন চলে না আম্মু। যেখানে শান্তি নেই, সম্মান নেই সেখানে শুধু শুধু কেনো আমি আমার মেয়ে থাকব?
নুবাহান বলল
— আম্মু ওর বোঝা উচিত আমি একজন পুলিশ সেখানে মাথায় অনেক ঝামেলা নিয়ে থাকতে হয়।
— হ্যাঁ সবসময় তোমার মাথায় ঝামেলা থাকে তার দরুন সবসময় রুড বিহেভ করে যাবে আর আমি সবসময় সেটা মুখ বুঝে মেনে নিব এটা তোমার নিতান্তই ভুল ধরণা
— তোমাকে তো মানতে বলি নাই। মানতে না পারলে আছ কেনো যাও চলে যাও তোমাকে কে আটকে রাখছে
জিনিয়া এতক্ষণ রিনি আর নুবাহানের কথাগুলো আর্শ্চয্য হয়ে শুনছিলেন। নুবাহানের শেষোক্ত কথাটি শুনে তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না রেগে চ’ড় মা’র’লে’ন।
— ছিঃ নুবাহান তোমার এতো অধঃপতন হয়েছে? তুমি কাকে চলে যেতে বলছ যে মেয়েটার জন্য তুমি একটা সময় তার পরিবারের পায়ে ধরে বিয়ে করে আনছ তাকে তুমি চলে যেতে বলছ?
রিনি কাঁদতে কাঁদতে বলল
— আম্মু আমি এখানে থাকব না আমি বাসায় যেতে চাই
— রিনি তুমি কোথাও যাচ্ছ না। রিনি নুবাহান তোমাদের দুজনকেই বলছি এখনো সময় আছে নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে নাও তোমরা যদি এখন আলাদা হয়ে যাও তাহলে ভেবে দেখেছ তোমাদের মেয়ের কি হবে বড় হচ্ছে ও ওর একটা সুন্দর ভবিষ্যত আছে তোমাদের জন্য যদি ওর সুন্দর জীবনে কোনো প্রকার কষ্ট পায় তাহলে ও তোমাদের ঘৃণা করবে মা-বাবা হয়ে সন্তানের কাছে ঘৃণার পাত্র হবে? তাছাড়া লোকজন জানাজানি হলে বিশ্রি ব্যাপার হবে হাসাহাসি করবে। নিনিকে আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমাদের ব্যবহারে ও কতটা ভয় পেয়ে আছে সেটা খেয়াল করলে না নিজেদের ঝগড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলে? কেমন বাবা-মা হয়েছ তোমরা? আজরাতের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবে তোমরা কি করতে চাও ডিসিশনটা যেন পজিটিভ আসে। চল জুবরান
নুবাহান মাথা নিচু করে আছে। রিনি বেডের পাশে বসে নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
___________________________

সাফওয়ান ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে খাটের একপাশে লামিয়াকে শুয়ে থাকতে দেখে রেগে গেলো। সাফওয়ান লামিয়ার হাত টেনে বেড থেকে নামিয়ে নিল লামিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়তে গিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িল। সাফওয়ান চিৎকার করে বলল
— তুই আমার রুমে কি করছিস? আমার রুমে আমার বেডে শুয়েছিস কোন সাহসে?
লামিয়া ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল
— তাহলে কোথায় শুব?
— যেখানে খুশি যা তার আগে আমার রুম থেকে বের হ
— আমি কোথায় যাব সাফওয়ান? সবাই এতোক্ষণে শুয়ে পড়েছে। এখন কোনো চিৎকার চেচামেচি কর না।
— তোর সাথে আমার ভালো করে কথা আসে না। আর তোর সাথে এক রুমে থাকা মানে তোর ফাঁ’দে পা দেওয়া
লামিয়া অবাক হয়ে বলল
— কিসের ফাঁ’দ?
— সেটা তুই-ই ভালো জানিস! দেখা গেল তুই তোর শরীর দিয়ে আমাকে বশ করতে চাইতেছিস
অপমানে লামিয়ার অক্ষিকোটরের অশ্রুসিক্ত হল। মাথা নিচু করে বলল
— আমি নিচে শুচ্ছি এটাতেও কি তোমার সমস্যা?
— হ্যাঁ তুই আমার আশেপাশে থাকা মানে আমার মাথায় রক্ত উঠে যাওয়া। তুই গেস্ট রুমে যা।
লামিয়া দাঁড়াল না। দৌড়ে চলে গেল।
_______________________

জুবরানের কথাগুলো শুনে শানায়া মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল বলে রুমে এসে শুতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তা আবার যে সে ঘুম না গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছিল। তার দরুন এতো ডাকাডাকির পরেও মহারাণীর ঘুম ভাঙে নি। মাঝরাত তখনো শানায়া গভীর নিদ্রায় পাশে থাকা মুঠোফোনটি ঝংকার তুলে বেজে উঠল। একটু ঘুম পাতলা হলো নড়েচড়ে সময় নিয়ে ঘুমের ঘোরে ফোন তুলে কানে ধরে ঘুমঘুম কণ্ঠে বলল
— হুম কে?
ওপাশের ব্যক্তি তখন নিরব তার অনুভূতি গুলো তখন প্রকাশ করতে ইচ্ছে হল। কালবিলম্ব না করেই বলে ফেলল
— ঘুমকুমারী!
আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে তুমি কি সুন্দর ঘুমাচ্ছ অথচ আমি ঘুমাতে পারছি না কেনো বল তো! ও ঘুমকুমারী আমার রাণী হবে কবে?
শানায়া তখন ঘুমের রেষ অনেকটা কেটে গেছে। শানায়া বলল
— কে? রাতে গাঁ*জ্ঞা খেয়ে রং নম্বরে ডায়াল করেছেন।
এতো রোমান্টিক মোমেন্টে শানায়ার কথাটা জুবরানের মুড নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ছিল। জুবরান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
— খেয়েছিস?
— কে?
বলে নম্বরটা দেখে বলল
— ও আপনি? এতো রাতে ফোন দিলেন যে আর কি যেনো বলছিলেন?
— কখন কি বললাম? খেয়েছিস কিনা সেটাই শুনলাম
— না তো খাইনি ঘুমিয়ে গেছিলাম
— আচ্ছা আপনি কি আমাদের বাসায়? না-কি চলে গেছেন?
জুবরানের রাগ লাগল এতক্ষণ ভাবল যে শানায়া ওর কথায় রাগ করে দরজা খুলে নি এখন কি-না বলে মহারানী ঘুমিয়েছিল।
— চলে আসছি।
— আমাকে ডাকলেও না।
— মরার মতো ঘুমিয়ে থাকলে পৃথিবী ধ্বং’স হয়ে গেলেও দেখা যাবে তুই ঘুমিয়ে আছিস।

চলবে ইনশাআল্লাহ

আসসালামু আলাইকুম। অনিয়ম হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত এবার থেকে নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here