হৃদয়কুঠিরে উষ্ণ প্রণয় পর্ব -০৪

#হৃদয়কুঠিরে_উষ্ণ_প্রণয় -।।০৪ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সাফওয়ান লামিয়ার সম্পর্কের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ছয় মাস পর ওরা যদি একে অপরকে চায় তাহলেই এই বিবাহ নামক বন্ধনে সারাজীবন একসাথে থাকবে তখনি অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে ওদের আর যদি তার উল্টোটা হয় তাহলে ছয় মাস পরেই ওদের ডিভোর্স হবে। এমন সিদ্ধান্ত সাফওয়ান না মানতে পেরে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। সকলে ড্রাইংরুম থেকে প্রস্থান করল রয়ে গেলো জুলেখা আর শানায়া।
— তোমার এ সিদ্ধান্ত আমার ভালো লাগে নি। লামিয়ার সাথে থাকতে থাকতে যদি ভাইয়া লামিয়ার মতো হয়ে যায়।
জুলেখা হেসে বলল
— দূর পাগলি মেয়ে। বিয়ের মতো পবিত্র কোনো সম্পর্ক আছে না-কি?
— নেই?
— উহুম
— কেনো নেই?
— এই দেখ আমি আর তোমার বাবা বিয়ের আগে কেউ কাউকে চিনতাম না জানতাম না কিন্তু বিয়ের পর ঠিকি এতোগুলো বছর পার করে দিলাম। আর যদি সাফওয়ান পাল্টায় ও তাতে কি হবে?
— আমি দেখেছি জানো আমার একটা ফেন্ডের ভাবি তার মা-বাবা, বোনের সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে গায়ে হাত তোলে ওর ভাই ও বিয়ের পর বদলে গেছে ওদের কথা শুনে না বউয়ের কথায় উঠে আর বসে।
— আচ্ছা শোন তোর যখন বিয়ে হবে তখন যেখানে তো আমরা কেউ থাকব না ওখানে তোর আপন হবে তোর স্বামী। আর সেই স্বামী যদি তোর দিকে খেয়াল না রাখে তোর কথা না শুনে শাশুড়ির কথা শুনে তোর কি ভালো লাগবে?
শানায়া ভাবনায় পড়ে গেলো।
— তোর তখন মটেও ভালো লাগবে না। স্বামী তোকে সংসারে দাম না দিলে কেউ তোকে দাম দিবে না ফলস্বরূপ তুমি সেই সংসারে টিকতে পারবে না।
— সংসারের এতো প্যাচ ভালো লাগে না আম্মু। আমি কখনো বিয়ে ই করব না তোমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাব না।
— তা বললে কি হয় রে পাগলি মেয়ে মানেই তাকে বিয়ে দিতে হয় যতই সে আদুরে হোক না কেনো! এটাই সমাজের নিয়ম।
— আমি সমাজ মানি না আম্মু। আচ্ছা তুমিই বলো আমরা যদি দু’দিন না খেয়ে থাকি কেউ কি এসে খোঁজ নিবে? এই দেখ আব্বু হসপিটালে ছিল সমাজের কয়জন লোক হসপিটালে দেখতে গিয়েছে? বাসা আসলে মানুষ জন একটু দেখতে আসছে। এতোদিন যে আমাদের ওপর দিয়ে ঝড় গেলো। কেউ তো একটু পাশে দাড়িয়ে সাহস দিল না খেয়েছি কি খায়নি খোঁজ নেয় নি।
— বাবাহ। আমার মেয়ে তো দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছে কত কথা বলতে শিখছে।
শানায় মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল
— আমি এখনো এইটুকু ছোট আম্মু তুমি আমাকে বড় বলবে না।
— না তুমি বড় হয়ে গেছ তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিব
শানায়া কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে বলল
— আম্মু আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি একটু আগেই না বললাম আমি বিয়ে করব না।
— যা তো পড়তে বস
— কিসের আবার পড়াশোনা আমার এক্সাম হয়ে গেছে এখন শুধু চিল করব
— হ্যা যা তাই কর আমার মাথা খাস না
শানায়া মায়ের কপালে চু!মু খেয়ে দৌড় দিল। জুলেখা হেসে শাহাদাত হোসেন কাছে গেলো তাকে সবটায় জানানো হয়েছে তিনি এ বিয়েতে সন্তুষ্ট নয় কিন্তু বিয়ে যখন হয়েছে তখন ওদের সম্পর্কের একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।

সন্ধ্যায় জিনিয়া, জুবরান, নুবাহান (জুবরানের বড় ভাই), রিনি (জুবরানের ভাবী), নিনি ( ওদের মেয়ে) আসল। ওদেরকে দেখে জুলেখা রান্নাঘরে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। লামিয়াও শাশুড়ির হাতে হাতে কাজে সাহায্য করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু নার্ভাসনেসে কাজ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। জুলেখা অবশ্য কিছু বলছে না চুপচাপ নিজের কাজ করে যাচ্ছে। জিনিয়া, নুবাহান, রিনি শাহাদাত হোসেনের সাথে কথা বলছে। জুবরান, নিনি, শানায়া ড্রাইংরুমে বসে আছে।
— নিনি তুমি চকলেট খাবে?
ছোট্ট নিনি তুতলিয়ে আধো আধো বুলিতে বলল
— না না চ চ চক্কেত খেলে দা দাতে পোকা হয়
— কেনো তুমি দাঁত ব্রাশ করো না?
— কলি তো। চাচ্চুই বলছে চক্কেত খেলে দা দাঁতে পোকা হয়। তখন ব্যথা পাব
— তাই বলে চকলেট খাবে না?
জুবরান বিরক্ত হয়ে বলল
— কানে এতো কম শুনিস তুই বাচ্চা মেয়েটা এতো বার করে বলছে চকলেট খেলে দাঁতে পোকা লাগবে তাও ওকে নাড়ছিস কেনো?
— ওফ্ফ আপনার কি সমস্যা বলুন তো? নিজে তো নিরামিষ বাচ্চা মেয়েটাকেও আপনার মতো বানাচ্ছেন? এই টুকু মাথায় চকলেট না খাওয়ার ভুত ডুকিয়ে দিচ্ছেন?
— ওকে সাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে উল্টা পাল্টা খেয়ে অসুস্থ হবে না তোর মতো?
— এই শুনুন আপনার এই সাস্থ্য সচেতন আপনার কাছেই রাখুন।
— তোর সাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান নেয় বলে দু’দিন পর পর অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকিস
— ওটা ভালো বুছলেন অসুস্থ হলে পড়াশোনায় বিশ্রাম নেওয়া যায়, অতিরিক্ত আদর পাওয়া যায়। আপনার মতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ওসব বুঝবে না।
— তুই কি আমাকে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বলে খোঁটা দিস না-কি হিংসা করিস?
শানায়া মুখ ভেংচি কেটে ভাব নিয়ে বলল
— আমি শানায়া আমি কেনো কাউকে হিংসা করবো! সবাই আমাকে দেখে হিংসা করবে
— তা তোকে দেখে হিংসা করার মতো কি আছে তোর?
— সেটা সিক্রেট আপনাকে বলা যাবে না।
— কিছু থাকলে তো বলবি
নিনি ওর গোল গোল চোখ দিয়ে একবার জুবরানের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার শানায়ার দিকে তাকিয়ে ওদের কথা বোঝার চেষ্টা করছে।
— আপনি ডে*ঞ্জারা*স লোক বুঝলেন আমাকে খেপিয়ে কথা বের করে নেওয়ার ধান্দা আমি এতোটাও বোকা নয় বুঝলেন?
— আমি ডে*ঞ্জা*রাস?
— কেনো আপনি জানেন না আবার শুনছেন?
নিনি তুতলিয়ে বলল
— তো তো তোমরা কি ঝঘলা কলছ?
— না রে নিনি ভাবছি তোর চাচুই থেকে আমার ছেলেমেয়েদের দূরে রাখব। নাহলে তোর মতো অবুঝ বাচ্চা থেকে যাবে
কথা শেষ হতেই খেয়াল করলো জুবরান ওর দিকে সেই শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে যা শানায়ার মনে ভয় সৃষ্টি করে। অস্বস্তি হয়। শানায়া নড়েচড়ে বসে বলল
— এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
— তোর রূপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে তাই দেখছি
— আমি জানি আমি সুন্দরী
— কে বলল?
— আমি জানি তো
— ভুল জানিস দেখা গেলো তোর বিয়ের জন্য কোনো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না
জুবরানের কথা শুনে শানায়ার ছোট্ট মনে অভিমান পাখিগুলো এসে ভীর জমালো। চুপচাপ উঠে যাবার সময় বলল
— দেখব আপনার বউ কেমন সুন্দরী হয়
— সে অন্য কারো কাছে না হোক আমার কাছে অবশ্যই বিশ্বসুন্দরী হবে

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here