হৃদয়জুড়ে তুমি পর্ব -১১

#হৃদয়জুড়ে_তুমি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সিমা সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে অতঃপর নিজের প্রজেক্টের কাজে লেগে পড়ে। মনযোগ সহকারে সে নিজের কাজটা করেছিল। এমন সময় মান্নাত বেগমের আগমন ঘটে তার রুমে। মান্নাত বেগম দরজার বাইরে দাড়িয়ে সিমাকে জিজ্ঞেস করেন,
‘ভেতরে আসবো?’

সিমা থতমত খেয়ে যায়। একটু সময় নিয়ে বলে,
‘হ্যা আসুন। আপনাদেরই তো বাড়ি। আমি তো এখানে কয়েকদিনের অতিথি মাত্র।’

মান্নাত বেগম সিমার রুমে এসে বলেন,
‘এভাবে বলো না। তোমার যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকতে পারো। যাইহোক আমার একটা কথা বলার ছিল।’

‘জ্বি বলুন।’

‘তুমি এই রুমে কেন আছ? দেখ আইনত এখনো তো ইহানের সাথে তোমার ডিভোর্স হয়ে যায়নি। তাই তোমাদের তো উচিৎ একসাথে একই রুমে থাকা। এর ফলে সম্পর্কের উন্নতি হবে।’

সিমার ভীষণ অবাক লাগে মান্নাত বেগমের কথা শুনে। সে পুরোপুরি হতবাক হয়ে যায়। যেই মান্নাত বেগম একদিন আগে পর্যন্ত সিমাকে এই বাড়ি থেকে কিভাবে তাড়ানো যায়, ইহানের জীবন থেকে বিদায় করা যায় সেই চিন্তায় ব্যস্ত ছিল, তিনি কিনা এখন সিমা ও ইহানকে একঘরে থাকার কথা বলছেন! ব্যাপারটা ঠিক হজম হয়না সিমার। তবে সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘আপনার ছেলের সাথে কোন সম্পর্কের উন্নতি করার ইচ্ছা আমার নেই। তার মতো নিচু মানসিকতার লোকের সাথে আর যাই হোক সংসার করা যায় না।’

মান্নাত বেগম নিজের ছেলের হয়ে বলেন,
‘তুমি ভুল ভাবছ। আমার ছেলে এতটাও খারাপ নয়। একবার শুধু ইহানের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখ। তোমাকে যদি তোমার বাবা এভাবে তোমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার অপছন্দের কারো সাথে বিয়ে দিত তাহলে কি তুমি মেনে নিতে পারতে? এখানে কি ইহানের কোন দোষ আছে?’

সিমা মৃদু হেসে বলে,
‘হ্যা সত্যিই এখানে ইহানের কোন দোষ নেই। আমি যদি দেখতে এমন কালো না হয়ে অপরূপ সুন্দরী হতাম তাহলে মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে হলেও উনি ঠিকই আমায় মেনে নিতেন। ঐ যে কথায় কথায় সবাই বলে না ‘Face doesn’t matter’ এটা একটা ভুয়া কথা। ফেস ম্যাটার করে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এখনো সৌন্দর্যের পূজারী। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে তো বটেই। একটা পুরুষ মানুষ যেমনই হোক তার নিজের জন্য সুন্দরী একটা বউ চাই। নিজের হাজার খুত থাকলেও নিজের স্ত্রী হিসেবে চায় ঐশ্বরিয়াকে। সেখানে আপনার ছেলে এত সুদর্শন দেখতে সে তো নিজের জন্য সুন্দরী মেয়েই চাইবে। তাই তো আমি আপনার ছেলের জীবন থেকে চলে যেতে চাইছি।’

‘মানুষের মানসিকতা তো বদলাতে পারে সিমা। তুমি পারবে না আমার ছেলেটাকে বদলাতে?’

‘আমি এর কোন প্রয়োজন মনে করছি না। যে বোঝার সে নিজে থেকেই বোঝে। আর যে বোঝে না তাকে বোঝানোও যায়না।’

মান্নাত বেগম বুঝতে পারে সিমার মনোভাব। তাই তিনি আর কথা না বাড়িয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিমার রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।

২১.
সিমা নিজের একটি প্রজেক্টের কাজে একটি স্থান পরিদর্শনে এসেছে। মূলত একটা পুরাতন ব্রিজ মেরামত করে নতুনভাবে তৈরি করার কাজ এসে পড়েছে সিমার কাধে। সিমা সেটা নিয়েই আলোচনা করছিল।

এমন সময় কেউ একজন সিমার সামনে এসে দাড়ায়। তার পরনে জিন্স এবং স্কার্ট। মুখে মাস্ক এবং চোখে সানগ্লাস পড়া। সিমা সেই মেয়েটিকে ঠিক চিনতে পারে না। কিন্তু তার প্রতি গভীর টান অনুভব করে।

সিমার দলের একজন লোক মেয়েটির সাথে সিমার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,
‘উনি আমাদের এই প্রজেক্টে যুক্ত হয়েছেন। উনি ব্রিটেনের একজন নামকরা ইঞ্জিনিয়ার। ওনার নাম,,,’

পুরো কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সিমার ডাক পড়ে। সিমা অন্যদিকে চলে যায়। অন্য মেয়েটি সিমার দিকেই তাকিয়ে থাকে অপলক।

সিমা একটা যায়গায় দাড়িয়ে ছিল। আশেপাশ থেকে বিভিন্ন ভারী মালামাল বহন করা হচ্ছিল। সিমা সবকিছুর তদারকি করছিল। আচমকা একটি ভারী ইট সিমার মাথার উপর পরতে যাচ্ছিল। সেই সময় কোথা থেকে যেন মাক্স, সানগ্লাস পরিহিত মেয়েটি দেবদূতের মতো হাজির হয়। সিমাকে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বাচিয়ে দেয় সেই মেয়েটি। কয়েকজন মানুষ ছুটে আসে। মেয়েটি সিমাকে জিজ্ঞেস করে,
‘আর ইউ ওকে?’

সিমার কাছে মেয়েটির গলা খুব চেনা লাগছিল। শুধু তাই নয় মেয়েটিকেও তার আপন আপন লাগছিল। কেন জানি মেয়েটির মুখ দেখার অদ্ভুত বাসনা জাগে সিমার মনে। সিমা মেয়েটির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আই এম ফাইন। থ্যাংকস ফর সেইভ মি।’

মেয়েটি যেন নিশ্চিত হয়। অতঃপর চলে যায় নিজের মতো। সিমা সেই মেয়েটির যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে।


সিমা বাড়িতে ফেরার পর দেখা দেয় নতুন সমস্যা। মান্নাত বেগম ইহানকে বলে সিমাকে নিয়ে ইনায়ার বিয়ের শপিং করতে যেতে। সিমা ও ইহান কেউই রাজি হয় না একসাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মান্নাত বেগম জেদ ধরে বসে থাকেন যে তাদেরকে এক সাথে শপিং করতে যেতেই হবে।

অগত্যা তার জেদের কাছে হার মেনে ইহান রাজি হয়। সিমাও ভদ্রতার খাতিরে রাজি হয়। সিমা, ইহান ও ইনায়া একসাথে শপিং করতে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে ওঠার সময়ও বিপত্তি বাধে। সিমা ইনায়ার সাথে গাড়ির পিছনের সিটে বসে। ইনায়াকে মান্নাত বেগম বলেই দিয়েছেন যে করেই হোক সিমা ও ইহান যাতে পুরো রাস্তা একসাথে বসে যায়। সেই কারণে ইনায়া সিমাকে বলে,
‘ভাবি আমার এভাবে যেতে প্রব্লেম হচ্ছে তুমি একটু সামনে যাবে প্লিজ?’

‘কি প্রব্লেম?’

‘শ্বাস নিতে সমস্যা।’

সিমা একবার ইহানের দিকে তাকায়। ইহান সামনে আসার সংকেত দিতেই সামনে গিয়ে বসে সিমা। ইহান গাড়ি চালাতে শুরু করে।

২২.
শপিং মলে পৌছে সবাই শপিং এ মনযোগ দেয়। মূলত ইনায়ার বিয়ের জন্য শপিং এ আসার কারণে সবাই সেদিকটাই দেখছিল।

এদিকে ইনায়া মনে করে মান্নাত বেগম তাকে কি বলেছিল। তিনি বলেছিলেন,
‘শোন ইনায়া তুই একটা ব্যাপারে ভালো ভাবে খেয়াল রাখবি। সিমা ও ইহান যেন একসাথে বেশি বেশি সময় কা’টায়। এতে ওদের সম্প্রতি স্বাভাবিক হবে।’

মায়ের আদেশমত কাজ করতে থাকে ইনায়া। তাই সে এক পর্যায়ে ইহানের কাছে গিয়ে চুপিচুপি বলে,
‘ভাইয়া তুমি তো শুধু আমার জন্য লেহেঙ্গা দেখছ। ভাবির জন্য কিছু একটা কেনো। সে তো এসেছে আমাদের সাথে। তাকেও তো কিছু কিনে নিয়ে দেওয়া দরকার।’

ইহানের কাছে ইনায়ার কথাটা যুক্তিযুক্ত লাগে। সত্যিই তো সিমা যখন তাদের সাথে এসেছে তখন সিমাকে কিছু কিনে দেওয়া দরকার। ইহান পুরো শপিং মল ঘুরে খুব সুন্দর একটা পিংক কালারের শাড়ি পছন্দ করে সিমার জন্য। ইহান ভাবে,
‘এই শাড়িটাকে সিমাকে ভালো মানাতে পারে।’

সিমা একজন সেলসম্যানকে বলে শাড়িটা প্যাক করে নেয়। সব কেনাকাটা শেষ হলে তারা শপিং মল থেকে বেরিয়ে আসে। অতঃপর শপিং মলের বাইরে এসে ইহান সিমার হাতে শাড়িটা তুলে দেয়। সিমা তো বেশ অবাক হয়ে যায় ইহানের এই কাণ্ডে। জিজ্ঞেস করে,
‘কি এটা?’

‘শাড়ি আপনার জন্য। দেখুন তো পছন্দ হয় কিনা।’

সিমার অবাক হওয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। শাড়িটা বের করে দেখে সত্যিই অনেক সুন্দর। ইহানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে,
‘শাড়িটা আমার পছন্দ হয়েছে। থ্যাংক ইউ।’

ইহানের গাড়িটা শপিং মলের বিপরীত দিকে একটি পার্কিং লটে পার্ক করা ছিল। ইহান গাড়িটা আনার জন্য রাস্তা পারাপার হতে যাচ্ছিল। এমন সময় একটি গাড়ি দ্রুতবেগে তার দিকেই যাচ্ছিল৷ সিমার নজরে আসে ব্যাপারটা। সিমা আর কালক্ষেপন না করে ছুটে যায় ইহানকে বাচানোর জন্য ইহানকে ধা’ক্কা দিয়ে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। সিমা গাড়ির সামনে পড়ে যায়। মুহুর্তেই রক্তাক্ত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here