হৃদয়জুড়ে তুমি পর্ব – ১৬ ও শেষ

#হৃদয়জুড়ে_তুমি
#পর্বঃ১৬ এবং শেষ।
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। দেখতে দেখতে অতিবাহিত হয়ে গেছে দুই মাস। আর মাত্র ১ দিন পরেই সামিহা ও বুরাকের বিয়ে। বিয়ের প্রায় সব আয়োজন সমাপ্ত। এখন শুধু বিয়েটা হওয়াই বাকি আছে।

আজ শেষবারের মতো রাতে একসাথে শুয়ে আছে সিমা ও সামিহা। সামিহা ও সিমা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিল। একপর্যায়ে সামিহা হঠাৎ বলে ওঠে,
‘তুই ইহানের ব্যাপারে কিছু কি ভেবেছিস?’

সিমা আচমকা এমন কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়। অতঃপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘এই ব্যাপারে আর ভাবার মতো কিছুই নেই। যা ভাবার আমার ভাবা হয়ে গেছে।’

‘ছেলেটাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায়না? এই দুইমাসে তো কম চেষ্টা করেনি সে। তোকে নিজের কাছে ফিরে পাওয়ার। তুই বারবার ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিস। তবুও সে নিজের মান সম্মানের তোয়াক্কা না করে তোর কাছে এসেছে। তোর তো উচিৎ একটু হলেও গলে যাওয়া।’

‘আমার মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তার উপশম এভাবে সম্ভব নয়।’

সামিহা এবার সিমাকে বলে,
‘আচ্ছা, যখন আমি আব্বুর উপর রাগ করে ছিলাম তখন তুই তো বলেছিলি কেউ তার ভুল বুঝে যদি আমাদের কাছে ক্ষমা চায় তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। তাছাড়া আব্বু আমার সাথে যা করেছিল সেটা নিশ্চয়ই ইহানের থেকে বড় নয়। আব্বু আমাকে নিজের থেকে দূরে রেখেছিল, নিজের পরিবার থেকেও। তবুও আমি যখন তাকে এক কথায় ক্ষমা করে দিতে পেরেছি তাহলে তুই কেন পারবি না বলতে পারিস? ইহান তো সেই তুলনায় তোর সাথে খারাপ কিছু করে নি। হ্যা, তোর গায়ের রং নিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছে। কিন্তু একবার তুই ইহানের যায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখ। সবারই তো নিজের জীবন সম্পর্কে একটা প্রত্যাশা আছে। তারও নিশ্চয়ই ছিল। সেখানে তার বাবা হুঠ করে এভাবে বিয়ে দিয়ে দিল। তাহলে তার একটু রাগ করাই স্বাভাবিক। তাই সে প্রথম প্রথম একটু রাগ করেছিল। কিন্তু যখন নিজের ভুল বুঝতে পারল, সে তো এখন তোকে ভালোবাসে। আর জীবনে ভালোবাসার গুরুত্ব অনেক বেশি। সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ খুজে পাওয়া কিন্তু সহজ না। তাই বলছি এখনো সময় আছে। তোদের যেহেতু এখনো ডিভোর্স হয়নি তাই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে পারিস তুই। সবকিছু শেষ হওয়ার আগে সব ঠিক করে নে। নাহলে পরে কিন্তু তোকেই পস্তাতে হবে।’

সিমা সামিহার বলা কথাগুলোই ভাবতে পারে। অতঃপর সে একটা সিদ্ধান্তে পৌছায়।

৩১.
চৌধুরী বাড়িতে আজ আলোকসজ্জায় ভরপুর। এই বাড়ির মেয়ে সামিহার বিয়ে আজ। সেই উপলক্ষে অনেক বড় আয়োজন করা হয়েছে।

পার্লার থেকে লোক এসেছে সামিহাকে সাজানোর জন্য। সিমা সামিহার পাশেই বসে আছে। সামিহাকে সাজানো শেষ হলে সিমা বলে ওঠে,
‘বাহ কি সুন্দর লাগছে আমার বোনটাকে। কারো নজর না লাগুক।’

সামিহা তখন বলে ওঠে,
‘আমার উপর কারো নজর লাগবে না৷ এখন তুই একটা কাজ কর তুইও সেজে নে।’

সিমা অবাক হয়ে বলে,
‘আমি সেজে কি করব? তোর বিয়ে যেহেতু তাই তোরই সাজা উচিৎ। আর এমনিতেও আমি তোর মতো সুন্দরী নই যে সাজলে আমায় ভালো লাগবে।’

সামিহা জেদ করে বলে,
‘না আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। তোকে যখন বলেছি সাজতে হবে তখন তোকে সাজতে হবেই।’

সামিহার জেদের কাছে পরাজিত হয় সিমা। অতঃপর পার্লারের লোকেরাও তাকে সাজিয়ে দেয় সুন্দরভাবে। সামিহা সিমাকে আয়নার সামনে নিয়ে এসে বলে,
‘কে যেন বলছিল তাকে নাকি সুন্দর লাগে না। একবার দেখুক নিজেকে আয়নায়। এত রূপসী কাউকেই তো দরকার।’

সামিহা আর কিছু বলল না। একটু পরেই তাকে নিয়ে যাওয়া হলো বিয়ের আসরে। বুরাকও তার পরিবার নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। অতঃপর তিনি সামিহাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন,
‘এবার তুমি কবুল বলো।’

সামিহা একটু সময় নেয়। কিছু সময় নিয়ে তারপর বলে দেয়,
‘কবুল।’

বুরাক ও এরপর বলে,
‘কবুল’

তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আসে বিদায়ের পালা। সামিহা সাজ্জাদ চৌধুরী ও সিমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে। মেয়েটা কতদিন পর তার পরিবারকে খুজে পেল। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে আবার হারাতে হবে। সামিহা সিমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘কাল রাতে তোকে যেই কথাগুলো বললাম সেগুলো একবার ভেবে দেখিস।’

সিমা তখন বলে,
‘আমি ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে ভেবে নিয়েছি।’

সামিহা আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। বুরাকের পরিবার থেকে তাড়া দিলো। সামিহা বুরাকের সাথে গাড়িতে উঠে পড়ল তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিল। রওনা দিল নতুন গন্তব্যে।

ভীড় কমে যাওয়ার পর সিমা লক্ষ্য করল ইহানকে। ইহান সিমার দিকে এগিয়ে এসে তাকে বলল,
‘আমি অনেক চেষ্টা করেও পারলাম না তোমাকে মানাতে। এখন আর জোর করতে চাই না। তুমি চাইলে ডিভোর্স,,,’

ইহানের পুরো কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সিমা বলে,
‘কেমন ভালোবাসেন আপনি আমায়? এত সহজে হাল ছেড়ে দিলেন। আর আমি কিনা আপনার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।

ইহান খুশি হয়ে বলে,
‘তারমানে তুমি আমার জীবনে ফিরবে।’

সিমা আর সময় নষ্টা না করে জড়িয়ে ধরে ইহানকে। তাদের মধ্যে সব দূরত্ব যেন মিটে যায়।

৩২.
সিমাকে সাথে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরল ইহান। সিমাকে ফিরতে দেখে রায়হান খান, মান্নাত বেগম দুজনেই খুব খুশি হন। মান্নাত বেগম তো সিমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘এই দিনের অপেক্ষাতেই তো ছিলাম। অবশেষে তুমি ফিরলে। আমার সংসারটা আবার পূর্ণ হলো।’

সবকিছু যেন আবার সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। মান্নাত বেগম সিমাকে বলেন,
‘রাতের ডিনার করে তারপর শুতে যেও।’

সিমা মান্নাত বেগমের কথামতো ডিনার করতে বসে। ইহানও বসে যায় তার সাথে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে অতঃপর সিমা ও ইহান দুজন নিজেদের রুমে চলে যায়। ইহান রুমে প্রবেশ করা মাত্রই সিমাকে বলে,
‘তোমাকে আমাদের রুমে পুনরায় সুস্বাগতম। এর আগে এই রুমে তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেইনি। কিন্তু এবার পূর্ণ মর্যাদার সাথে তোমাকে নিয়ে এলাম।’

ইহানের কথা শুনে সিমা অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। তবে ভেতরে তার জন্য যে আরো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল সেটা সে জানতেই পারে নি। বিছানার দিকে তাকাতেই সিমা দেখতে পায় ফুল দিয়ে সজ্জিত। ইহান বলে,
‘আমাদের বাসরটাও তো এখনো হয়নি। তাই আজ নাহয়,,,’

ইহান পুরো কথা সম্পন্ন করতে পারে না। তার আগেই সিমার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ইহান সিমার লাজুক মুখ দেখে মুচকি হেসে বলে,
‘এত লজ্জা পেও না প্রিয়তমা। আজ আমাদের মিলনের সময় ঘনিয়ে আসছে।’

ইহান সিমার কাছে আসতে থাকে। সিমা বিছানায় গিয়ে চুপটি করে বসে। ইহান ও সিমার ঘনিষ্ঠতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আজকের রাত সাক্ষী হয় তাদের দুজনের ভালোবাসার।

সকালে ঘুম থেকে ওঠামাত্রই সিমা নিজেকে ইহানের অনেক কাছাকাছি আবিষ্কার করে। ইহানের ঘুম ভেঙে গেলে সে দেখতে পায় সিমা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইহান সিমাকে বলে,
‘তোমার স্থান আমার বুকেই রয়েছে। জানো আগে আমার কাছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ছিল, যে ফর্সা হলেই সুন্দর। কিন্তু তোমাকে ভালোবাসার পর আমি বুঝতে পেরেছি আসল সৌন্দর্যকে মানুষের মনে রয়েছে। কারণ ভালোবাসা যে হৃদয়ঘটিত ব্যাপার। আর আজ দেখ, আমার হৃদয়জুড়ে তুমি।’

✨ সমাপ্ত ✨
>>গল্পটা কেমন লাগল জানাবেন। অন্তত আজ সবার গঠনমূলক বড় বড় মন্তব্য চাই গল্পটা সম্পর্কে ✨✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here