হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব -১৫+১৬

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৫
আরাবীর চোখজোড়া জলে টইটম্বুর।জায়ানের মুখনিঃসৃত প্রতিটা কথা শুনে আরাবীর অবাক হয়েছে। লোকটা তাকে তাকে এতো আগে থেকে ভালোবাসে।কখনো ভাবতেই পারেনি আরাবী।ওর ভাগ্যে যে এমন একজন ভালোবাসার মানুষ আল্লাহ দিবেন কখনো কল্পনা করেনি ও।জায়ান হালকা হাসলো। হাত দিয়ে চোখের জলগুলো মুছে দিলো।তারপর আরাবীর কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বলে,
-‘ কাঁদেনা তো।এখানে কাঁদার কি আছে?’

আরাবী জায়ানের বুকে মুখ গুজে দিলো।মিনমিনে স্বরে বলে,
-‘ এতো ভালোবাসেন কেন আপনি?’

জায়ান হালকা শব্দে হাসলো।বললো,
-‘ ভালোবাসা কিভাবে?কি কারনে? কেন ভালোবাসি।তা তো আমি নিজেই জানি নাহ।তোমায় বলবো কিভাবে?’
-‘ কিন্তু আমি আমি যদি ভালোবাসতে পারবো কি না জানি না তো!’

আরাবীর এমন একটা শুনে জায়ান। চাপা শ্বাস ফেলে বলে,
-‘ তুমিও ভালোবাসবে আরাবী।আমি জানি তুমিও ভালোবাসবে।’
-‘ তাই যেন হয়।আমি মনে প্রাণে দোয়া করি তাই যেন হয়।’

আরাবী বিরবির করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরলো।জায়ানও আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো আরাবী তারপর নিজেও ঘুমিয়ে পরলো।
______________
জায়ান আরাবীর বউভাতের অনুষ্ঠান হচ্ছে।আরাবী সিলভার কালার গাউন পরা জায়ানও মেচিং করে সিলভার কালার সেরওয়ানি পরেছে।দুজনকেই ভীষণ সুন্দর লাগছে।এইযে জায়ান একটু পর পরেই তাকাচ্ছে আরাবীর দিকে। এটা নিয়ে ইফতি,নূর,আলিফা ওদের নিয়ে মজা করছে।আর আরাবী লজ্জায় নুইয়ে পরছে। জায়ান আরাবীকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে আরাবীর কানে ফিসফিস করে বলে,
-‘ এতো লজ্জা কেন পাচ্ছো বউ?আমি তো এখন কিছুই করিনি।’

আরাবী জায়ানের এহেন কথায় জায়ানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।বললো,
-‘ আপনি চুপ থাকবেন। আর চোখ অন্যদিকে সরান।’

জায়ান হেসে দিলো। তারপর বলে,
-‘ চুপ থাকতে পারি।কিন্তু চোখ সরাতে তো পারছি না।ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমায়।’

জায়ান এই নিয়ে আরাবী শতবার মনে হয় বলে ফেলেছে এই কথাটা।তাও লোকটার থামাথামি নেই।আরাবী আর কিছুই বললো না।সে জানে এই লোকটাকে থামানো তার পক্ষে সম্ভব নাহ।আর উপর উপর যতো মিথ্যে রাগ দেখাক।মনে মনে আরাবী অনেক ভালো লাগে জায়ানের মুখে নিজের প্রসংশা শুনতে।
_____________
ফাহিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।হাতে তার কোল্ড ড্রিংকস। এমন সময় হুট করে সামনে এসে দাড়ালো নূর।ফাহিম হকচকিয়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।নূর চওড়া হাসলো।বিনিময়ে ফাহিমও হালকা হাসলো।নূর ছটফটে কণ্ঠে বলে উঠে,
-‘ কেমন আছেন?’
-‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি ভালো আছো?’ প্রশ্ন করলো ফাহিম।

নূর বলে,
-‘ আমি সবসময়েই ভালো থাকি।’
-‘ বাহ তাহলে তো বেশ ভালো।’
-‘ এখনও মন খারাপ?’

নূরের প্রশ্ন বুঝতে পারলো না ফাহিম। বললো,
-‘ মানে বুঝলাম নাহ?’
-‘ মানে এখনও কি খারাপ লাগছে?কাল তো কাঁদছিলেন।দেখেন একদম মন খারাপ করবেন নাহ।দেখেন ভাবি কি হাসিখুশি।আমি আমার কথা রেখেছি।’

বলেই মিষ্টি করে হাসলো নূর।ফাহিম তাকিয়ে রইলো।গোলাপি রঙের গাউন পরিহিত নূরকে সুন্দর লাগছে দেখতে। ফাহিম গলা খাকারি দিলো।হালকা হেসে বলে,
-‘ নাহ,মন খারাপ নেই।ধন্যবাদ আমার বোনটার খেয়াল রাখার জন্যে।’

নূর খানিক ভাব নিয়ে বলে,
-‘ সাখাওয়াত পরিবারের কেউ কখনো তাদের কথার খেলাপ করে নাহ।’

ফাহিম হেসে দিলো।নূরও হাসতে হাসতে চলে গেলো।ফাহিম তাকিয়ে রইলো নূরের যাওয়ার পাণে।কেন যেন মেয়েটাকে তার ভালো লাগে।মেয়েটা প্রচুর চঞ্চল প্রকৃতির।আর নূরের এই চঞ্চলতাই ওর ভালোলাগে।
নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয় ফাহিম।তবে ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই নিলো কারন কাউকে তার ভালোলাগতেই পারে।এখানে এতোটা রিয়েক্ট করার কিছুই নেই।ভেবেই লম্বা শ্বাস ফেললো ফাহিম।
___________
-‘ তুমি যে এতো ঝগড়া করতে পারো আমি ভাবতেও পারি নি।’

পানি খাচ্ছিলো আলিফা।আচমকা এমন কথায় মুখ ফোসকে সব পানি বের হয়ে আসলো।কাশতে লাগলো অবিরত।ইফতি নিজেও ভড়কে গিয়েছে হঠাৎ এমন হওয়ায়।ইফতি আলিফার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।খানিকক্ষণ বাদে শান্ত হলো আলিফা।ইফতি চিন্তিত গলায় বলে,
-‘ আর ইউ ওকে?’

আলিফা আঁড়চোখে তাকালো।নিজেকে ইফতির এতো কাছে দেখে দ্রুত সরে আসলো।ইফতি নিজেও খানিকটা অপ্রস্তুত হলো।তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-‘ ঠিক আছো তুমি?’

আলিফা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইফতির দিকে।দু কোমড়ে হাত রেখে বলে,
-‘ আমি ঝগড়া করি মানে?হ্যা,কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?আপনি কি কম ঝগড়া করেন।ঝগড়াখুন্না একটা।’

ইফতি নাক মুখ কুচকে বলে,
-‘ তুমি আমাকে আবারও এই অদ্ভূত নামে ডাকছো।এইগুলো কিসব ভাষা হ্যা?’
-‘ এইগুলাই ঠিক ভাষা।যা আপনার মতো ভিনগ্রহের প্রাণির তা বোধগম্য হবে না।’
-‘ তুমি কি এখন আমার সাথে ঝগড়া কর‍তে চাইছো?’
-‘ শুরু তো আপনিই করেছেন।’
-‘ আমি জাস্ট একটা কুয়েশ্চন আস্ক করেছিলাম তোমার কাছ থেকে।’
-‘ করবেন কেন?’

কথায় না পেরে ইফতি বললো,
-‘ আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

ইফতির এমন কথা শুনে আলিফা খিলখিল করে হেসে দিলো।ইফতি মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখলো।নীল রঙা গাউনে হাস্যরত আলিফাকে দেখতে খুব ভালো লাগছে ওর।ইফতি নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।আলিফাকে এইভাবে হাসতে দেখে প্রশ্ন করে,
-‘ হাসছো কেন তুমি অযথা?’

আলিফা হাসতে হাসতে বলে,
-‘ আপনাকে একটু আগে কার মতো লাগছিলো জানেন?’

ভ্রু কুচকে ইফতি বলে,
-‘ কার মতো?’
-‘ ওয়েট দেখাচ্ছি।’

তারপর আলিফা নিজের ফোনে সেইযে ভাইরাল হওয়া চোরটার ভিডিও দেখালো। যেখানে চোরটা বলছে, ‘ আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ এমন কিছু একটা। ইফতি হা করে তাকিয়ে রইলো।শেষমেষ তাকে একটা চোরের সাথে তুলনা করলো মেয়েটা।রেগেমেগে তাকালো ইফতি আলিফার দিকে।ওকে কিছু বলার আগেই আলিফা ছুটে পালালো।যাওয়ার আগে পিছনে ঘুরে ইফতিকে ভাঙিয়ে গেলো।না চাইতেও ইফতি আলিফার এমন বাচ্চামো দেখে হেসে দিলো।
______________
জায়ান আরাবী এসেছে আরাবীদের বাসায়।রাতের খাওয়া দাওয়া একটু আগেই শেষ হলো।লিপি বেগমের সাথে হাতে হাতে কাজ সেরে জায়ানের জন্যে এক কাপ কফি বানিয়ে নিজের রুমে আসলো আরাবী।রুমে প্রবেশ করে দরজা আটকাতেই হঠাৎ পেছন থেকে একজোড়া হাত ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা এমন হওয়ায় কেঁপে উঠলো আরাবী।পরক্ষণে কাজটা বুঝতে পেরেই নিজের শরীরের সমস্ত ভাড় জায়ানের দিকে এলিয়ে দিলো।জায়ান আরাবীর চুলের মাঝে মুখ গুজে দিয়ে বলে,
-‘ এতোক্ষণ লাগে রুমে আসতে?’

আরাবী কাঁপা স্বরে বলে,
-‘ আপনার জন্যে কফি বানাচ্ছিলাম।আপনি তো ঘুমানোর আগে কফি খান।’
-‘ উম! বিয়ে হতে না হতেই আমার উপর তদন্ত করা শুরু করে দিয়েছো।’

আরাবী মুচঁকি হাসলো।তারপর জায়ানের একটা হাত ওর পেটের উপর থেকে সরিয়ে সেই হাতে কফির মগ দিয়ে বলে,
-‘ দেখি সরুন।কফি খান আপনি।আমার ফ্রেস হতে হবে।শরীর ঘেমে আছে,বাঁজে অবস্থা।’

জায়ানের ধীর আওয়াজ,
-‘ কিন্তু আমার তো সরতে ইচ্ছে করছে না।এইভাবেই ভালো লাগছে।’

আরাবী লজ্জা পেয়ে দ্রুত জায়ানকে সরিয়ে দিলো।আলমারি থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেস হয়ে রুমে আসতেই দেখে জায়ান বিছানায় বসে এদিকেই তাকিয়ে আছে।ও বের হতেই কিছু না বলে কম্বল গায়ে দিয়ে সুয়ে পরলো।আরাবী ভাবলো তখন কি ওইভাবে সরিয়ে দেওয়ায় লোকটা রাগ করেছে? আরাবী এসব ভাবতে ভাবতে রুমের লাইট নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো।তারপর ধীর পায়ে হেটে বিছানার পাশে বসে পরলো।অনেকক্ষন বসেই রইলো।জায়ানের কোন হেলদোল না দেখতে পেয়ে ভাবলো লোকটা ক্লান্ত থাকায় বোধহয় ঘুমিয়ে পরেছে।তাই নিজেও জায়ানের পাশে গা এলিয়ে দিলো।কিন্তু ওর বিছানায় শোতে দেরি জায়ানের ওকে আঁকড়ে ধরতে দেরি নেই।জায়ান আরাবীকে নিজের সাথে একদম আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে। আরাবী শ্বাস আটকে রইলো।জায়ান বাঁকা হেসে বলে,
-‘ কি এভাবে তাকাচ্ছো কেন? তখন তো পালিয়ে গেলে।এখন কিভাবে পালাবে?’

আরাবী কয়েকপলক জায়ানের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো।ঘোর লেগে যাচ্ছে চোখ দুটোতে।এই লোকটার দিকে একবার তাকালে আরাবীর যেন চোখ সরানো দায় ঠেকে যায়।আরাবী নিজেকে সামলে নিয়ে মুঁচকি হাসলো।তারপর হুট করে মুখ গুজে দিলো জায়ানের বুকের মাঝে।মিনমিনে গলায় বললো,
-‘ পালাতে চায় কে?’

জায়ান সময় নিলো বিষয়টা বুঝতে।তারপর হেঁসে দিয়ে আরাবীকে আরো জোড়ে চেপে ধরলো।আরাবী সহ্য করতে না পেরে বলে,
-‘ কি করছেন? এতো জোড়ে কেউ ধরে? মরে যাবে তো।’

জায়ান আরাবীকে ছেড়ে দিলো।তারপর আরাবীকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে এইবার আরাবীর দিকে ঝুকে আসলো।আরাবী চোখ পিটপিট করে তাকালো।জায়ান হাত গলিয়ে দিলো জামার ভিতর। স্পর্শ করলো আরাবীর নরম উদর।কেঁপে উঠে আরাবী চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।জায়ান চুমু খেলো আরাবীর সেই বন্ধ হয়ে থাকা চক্ষুদ্বয়ে।এরপর কপালে,গালে,চিবুকে।জায়ানের প্রতিটা উষ্ণ স্পর্শে নিজেকে ঠিক রাখা যেন কঠিন হয়ে পরেছে আরাবীর জন্যে। ভেজা নয়নজোড়া নিয়ে আস্তে আস্তে তাকালো আরাবী জায়ানের দিকে।আরাবী জায়ানের দিকে তাকাতেই জায়ান হট করে মুখ গুজে দিলো আরাবীর গলদেশে।ছোট্ট ছোট্ট আবেশ দিতে লাগলো।একসময় তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠলো সেই আবেশিত উষ্ণ ছোঁয়াগুলো। দুহাতে জায়ানকে খামছে ধরলো আরাবী। জায়ানকে টেনে আরও নিজের কাছে আনার প্রচেষ্টা চালাতে লাগলো।জায়ান মুখ উঠিয়ে এইবার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো আরাবীর।জায়ান যেন উন্মাদ হয়ে যায় আরাবীকে ভালোবাসার সময়টায়।হুশ জ্ঞান হারিয়ে যায় লোকটার। নিজের তীব্র পাগলামিময় ভালোবাসাতেও ভাসিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো আরাবীকে।রাতটা হয়ে উঠলো দুজনের জন্যে মধুময়।

#চলবে_________
#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৬
লজ্জারাঙা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আরাবী। তোয়ালে দিয়ে চুল মুচ্ছে ও।আর ওর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে জায়ান।জায়ানের সেই প্রখর চোখের দৃষ্টির মাঝে আবদ্ধ আরাবী যেন লজ্জাবতীর লতার ন্যায় আরো নুইয়ে পরছে।আরাবী চুল মুছা শেষ করতেই জায়ানের কণ্ঠস্বর,
-‘ এদিকে আসো।’
-‘ কেন?’
-‘ আহা,আসো নাহ।’

বিরক্ত হয়ে বললো জায়ান।আরাবী শাড়ি সামলে নিয়ে এগিয়ে গেলো জায়ানের কাছে।জায়ান হাই তুলে উঠে বসলো।তারপর হাত ধরে পাশে বসালো আরাবীকে।আরাবী লাজুক চোখে তাকিয়ে।জায়ান মুচঁকি হেসে আরাবীর গাল স্পর্শ করলো।তারপর আরাবীর কপালে দীর্ঘ চুমু এঁকে দিলো।সরে এসে বলে,
-‘ আর কখনও আমার আগে বিছানা ছাড়বে না।আমাকে ডেকে দিবে,বুঝেছো?তোমাকে দেখে, তোমার কপালে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়েই আমি আমার দিনটা শুরু করতে চাই।’

আরাবী মাথা দুলালো।তারপর ধীরে বলে,
-‘ যান ফ্রেস হয়ে আসেন।আজ তো আপনাদের বাড়ি ফিরে যাবো।’

আরাবীর কথায় রেগে গেলো জায়ান।রাগি চোখে তাকিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে,
-‘ আপনাদের বাড়ি মানে?আপনাদের বাড়ি কি?হ্যা, থাপ্প’ড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো।আমাকে রাগালে।’

মুখটা একটুখানি হয়ে গেলো আরাবী।ভোঁতা মুখ করে বলে,
-‘ ইস,এই ভালোবাসা দেখান আবার থাপ্প’ড় দিবেন বলেন।এমন করেন কেন?’
-‘ তুমি রাগাও কেন?’
-‘ আমি কোথায় রাগালাম?আমার একটু সময় লাগবে না সবটা গুছিয়ে নিতে?’

জায়ান কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো।তারপর বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে,
-‘ সবটা গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে আমিও জানি।তবে এখন থেকে তোমার আমার বলতে কিছু নেই আরাবী।এখন থেকে সব আমাদের হবে বুঝেছো?এটাই লাস্ট আর যেন শুনতে না পাই এই কথা।’

আরাবী বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলালো।জায়ান মৃদ্যু হেসে বলে,
-‘ যাও আমার জামা-কাপড়গুলো বের করে দেও।আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।’

জায়ান ওয়াশরুমে চলে যেতেই আরাবী বিছানা গুছিয়ে নিলো।তারপর জায়ানের কথা মতো জামা কাপড় বের করে বিছানার উপর রেখে চলে গেলো রুমের বাহিরে।এখন তাকে জায়ানের জন্যে কফি বানাতে হবে।রান্নাঘরে এসে দেখে লিপি বেগম কাজ করছেন।আরাবী তার পাশে গিয়ে দাড়ালো। বললো,
-‘ আম্মু কিছু হেল্প করতে হবে?’

লিপি বেগম তরকারি নাড়াচাড়া দিতে দিতে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে উঠলেন,
-‘ এখন আর আমাকে কাজ দেখিয়ে আদিক্ষেতা দেখাতে হবে না।আপনি এখন মহারানি ভিক্টোরিয়া হয়ে গিয়েছেন।আপনার শশুড়বাড়ি কাজের লোকের অভাব নেই।একগ্লাস পানি ঢেলেও তো আপনাকে খেতে হবে না।সেখানে আমি আপনাকে দিয়ে কাজ করালে আপনার স্বামি আমার গর্দাণ না নিয়ে নেয়।’

লিপি বেগমের এমন তিরিক্ষিপূর্ণ মেজাজের কথা শুনে আরাবীর অনেক রাগ লাগলো।এসেই তো ভালোভাবেই জিজ্ঞেস করলো।তাহলে এইভাবে এসব বলার তো মানে হয় না।আরাবী খানিক বিরক্ত হয়ে বলে,
-‘ কি আশ্চর্য আম্মু।এখানে এইসব কথা বলার কি আছে?আমি তো তোমাকে এসব বলিনি।আমার সামান্য একটা কথাকে তুমি কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো।’

লিপি বেগম হাতের খুন্তিটা ঠাস করে ফেলে দিলেন।তারপর খপ করে আরাবীর হাত শক্ত করে ধরে বলে,
-‘ বিয়ের একদিন না যেতেই এখনই আমার সাথে তর্ক করছিস।বাহ,টাকা ওয়ালা জামাই পাওয়ায় শরীরে এতো অহংকার বেরে গিয়েছে।’
-‘ আম্মু, এসব কি বলছো তুমি?’
-‘ আহারে কচি খুকি কিছু জানে না।’

রান্নার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ানো ফিহা কথাটা বললো।আরাবী চোখ গরম করে তাকালো।তা দেখে ফিহা ন্যাকা গলায় বলে,
-‘ দেখলে মা দেখলে?এই কালি কিভাবে আমাকে চোখ রাঙানো দিচ্ছে।’

লিপি বেগম রাগি গলায় বলে,
-‘ চোখ নামিয়ে কথা বল।বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়ে গেছে দেখেই ভাবিস না তোর চোখ রাঙানিতে আমরা ভয় পাবো।’

আরাবী যেন এইবার সহ্য করতে পারলো না।এক ঝটকায় লিপি বেগমের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-‘ আমি কোন অহংকার করছি না।আর না অহংকার করবো।তোমাদের দুজনের মন এতোটাই কুৎসিত যে তোমাদের চিন্তাভাবনা এতো নিচু।শুধু গায়ের রঙ সাদা হলে হয় না অন্তরটাও সাদা হতে হয়।যা তোমাদের নেই।আমি এমন কথা বলতাম না।তবে আজ বলতে বাধ্য হলাম।নাহলে তোমরা কেমন মানুষ হ্যা? বাড়িতে নতুন মেয়ের জামাই আছে।তোমরা তা বাচবিচার না করে কি শুরু করে দিয়েছো।সামান্যতম বিবেগ নেই তোমাদের মাঝে।’

লিপি বেগম আরাবীর এহেন কথার তেজ দেখে বাকরুদ্ধ। তিনি ভাবতেই পারেননি আরাবী এইভাবে তার কথার প্রতিবাদ করে উঠবেন।এর মাঝে আরাবী আবার বলে উঠলো,
-‘ কথা বাড়িয়ে লাভ নেই আম্মু।কফি বানিয়ে চলে যাচ্ছি।’

আরাবী থমথমে মুখে ঝটপট কফি বানিয়ে চলে গেলো।ও চলে যেতেই ফিহা রাগে গজরাতে গজরাতে বলে,
-‘ দুধকলা দিয়ে কালসা’প পুসেছো এতোদিন।বড়োলোক বাড়িতে বিয়ে হতে না হতেই আসল রূপ বেড়িয়ে আসছে দেখেছো?’

লিপি বেগমের চেহারা রক্তিম আকার ধারণ করলো।বললো,
-‘ বেশি পাখা গজিয়েছে এই মেয়ের।পাখা গজালে সেই পাখা কিভাবে কেটে দিতে হয় তা আমি ভালোভাবেই জানি।’

ফিহা মায়ের কথায় খুশি হলো।পরক্ষণে আবার বলে,
-‘ কিন্তু আব্বু সে তো….!’

লিপি বেগম তার কাজ করতে করতে বললেন,
-‘ তাকে সামলাতে হয় কিভাবে তা আমি খুব ভালোভাবেই জানি।আপাততো দেখতে থাক কি করি আমি।’

ফিহা দৃঢ়কণ্ঠে বললো,
-‘ যে করেই হোক আম্মু।আমাকেও ওই বাড়িতে বিয়ে করতেই হবে।ওর এতো অহংকার সহ্য হচ্ছে না আমার।’
-‘ তার ব্যবস্থাও হবে।আরাবীর বিয়েটা এখনই হলো কয়েকদিন যেতে দে। তারপর সেই বাড়ির ছোটো ছেলের সাথে তোর বিয়ের কথা বলবো।’

ফিহা কথাটা শুনেই খুশি হয়ে নাঁচতে নাঁচতে চলে গেলো।

————–
আরাবী রুমে প্রবেশ করা মাত্র জায়ানও ওয়াশরুম থেকে বের হলো।আরাবীর থমথমে মুখশ্রী দেখে ভ্রু-কুচকালো। তারপরেও কিছু বললো না।জায়ানের কোমড়ে শুধু তোয়ালে পেঁচানো। আরাবী খেয়াল করেনি সেটা।কফিটা সাইড টেবিলে রেখে ঘুরে তাকাতেই জায়ানকে দেখে থতমত খেয়ে গেলো।মনে মনে ভাবলো।লোকটার কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই।এইভাবে কেউ এমনভাবে রুমে ঘুরে বেড়ায়।জায়ানের উদম বুকের দিকে নজর যেতেই শ্বাস আটকে আসে আরাবীর।জায়ানের আকর্ষনীয় স্লিম পেটানো শরীর দেখে যে কোন মেয়ে সহজেই আকৃষ্ট হয়ে যাবে।আরাবীও সেই কাতারেই পরলো। হঠাৎ সম্ভিৎ ফিরে পেতেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।আমতা আমতা করে বলে,
-‘ এই অবস্থায় কেউ এমন ভাবে রুমে ঘুরে বেড়ায়?’
-‘ আমি করি।’

জায়ানের সোজাসাপটা কথা শুনে কপালে ভাঁজ পরলো আরাবীর।আঁড়চোখে তাকালো জায়ানের দিকে।লোকটার হালকা লোমশ বুকে নজর যেতেই লজ্জায় মুখশ্রী গরম হয়ে উঠলো।জায়ানের বুকে স্পষ্ট আরাবীর নখের দাগ দেখা যাচ্ছে।এইগুলো যে তারই দেয়া তা বুঝতে বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না আরাবীর।আরাবীর লজ্জারাঙা মুখশ্রী দেখলো জায়ান। ভেজা চুলগুলোতে হাত দ্বারা বেকব্রাশ করলো।অতঃপর হালকা হেসে বলে,
-‘ লজ্জা পাচ্ছো কেন?’

আরাবী নতমস্তকে বলে,
-‘ জামা-কাপড় পরছেন না কেন?’
-‘ ইচ্ছে করছে না।এইভাবেই থাকতে ভালো লাগছে।’

জায়ানের এমন কথায় আরাবী বির বির করল,
-‘ নির্ল*জ্জ লোক।’
-‘ একেবারে ঠিক আমার মধ্যে লজ্জা শরম বলতে কিছুই নেই। আর আমাকে এইভাবে দেখার অভ্যাসটা করে যতো জলদি করে নিবে তোমার জন্যে ততোই ভালো হবে। এখন এদিকে আসো।’

জায়ান আরাবীকে ডাকায় আরাবী হকচকিয়ে গেলো।লোকটা আবার তাকে ডাকছে কেন?মতলব তো ভালো দেখাচ্ছে না লোকটার।আরাবী শুকনো ঢোক গিললো। জায়ান বিছানায় আয়েশ করে বসে আবারও ডাকলো আরাবীকে।আরাবী ধীর পায়ে জায়ানের কাছে এসে দাড়ালো।জায়ান আরাবীর হাত ধরে টেনে ওকে আরো নিজের কাছে আনলো।তারপর আরাবীর হাতে তোয়ালে দিয়ে বলে,
-‘ মাথা মুছে দেও।’

আরাবী বেক্কলের মতো তাকিয়ে থাকলো কতোক্ষণ।তারপর বুঝতে পেরে বলে,
-‘ এর জন্যে ডাকছিলেন?’

জায়ান ভ্রু উঁচু করে বলে,
-‘ তো? তুমি কি মনে করছিলে?’
-‘ ন…নাহ।কিছু না।’

আরাবী আলতো হাতে জায়ানের মাথা মুছে দিতে লাগলো। হুট করে জায়ান আরাবীর কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর পেটে মুখ গুজে দিলো।কেঁপে উঠলো আরাবী।খামছে ধরলো জায়ানের চুল।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো।জায়ান আরাবীকে আরো নিবীড়ভাবে চেপে ধরে বলে,
-‘ চুল খামছে ধরে আর কাঁপাকাঁপি করে আমাকে সিডিউস করতে হবে না। আমি এমনিতেই ফুল মুডে থাকি।শুধু একটু ইশারা করলেই হবে।’

জায়ানের এমন লাগামছাড়া কথা শুনে আরাবী লজ্জায় হাশফাশ করে উঠলো।মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দিলো জায়ানের কাছ থেকে ছুটে যাওয়ার জন্যে।জায়ান বিরক্ত হলো আরাবীর কাণ্ডে।নাক মুখ কুচকে তাকালো আরাবীর দিকে।বললো,
-‘ এমন করছো কেন?’
-‘ আপনি ছাড়ুন আমাকে।’
-‘ এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে? কাল রাতেও না লজ্জা ভেঙে দিলাম?’
-‘ উফ, কি শুরু করলেন আপনি?ইচ্ছে করে এমন করছেন তাই নাহ?’

আরাবী সরে গিয়ে বললো কথাটা। জায়ান শব্দ করে হেসে দিলো। আরাবী ভেজা তোয়ালে নিয়ে দ্রুত বারান্দায় গিয়ে তা নেড়ে দিলো।তারপর রুমে এসে দেখলো জায়ান প্যান্ট পরে নিয়েছে।আরাবী আসতেই ওর কাছে এগিয়ে গেলো জায়ান।তারপর আরাবীর হাতে শার্টটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-‘ পরিয়ে দেও।’

জায়ান সকাল সকাল কিসব পাগলামো শুরু করে দিয়েছে।জায়ানের এহেন কর্মকাণ্ডে আরাবী কিছুই বললো না।অবশ্য ওর ভালোই লাগছে জায়ানের ছোটো থেকে ছোটো কাজগুলো করে দিয়ে। আরাবী মুঁচকি হেসে জায়ানের পিছনে দাড়ালো।শার্টটা পরিয়ে দিবে এমন সময় পিঠের দিকে নজর যেতেই ভ্রু কপালের উপরে উঠে যায়।এ কি অবস্থা জায়ানের পিঠের।নখের আচঁ’ড়ের দাগে ছি’ন্নভি’ন্ন হয়ে আছে পিঠটা।নিজের এমন কাজে আরাবী মুখে হাত দিয়ে রইলো।চোখ ভরে উঠলো আরাবীর।এমনটা সে করতে চায়নি কখনই।লোকটার ব্যাথা করেছে অনেক নিশ্চয়ই।আরাবী আলতো হাতে ছুঁয়ে দেয় পিঠটা।নরম গলায় বলে,
-‘ ব্যাথা করে?’
-‘ উহু, একটুও নাহ।’

বলতে বলতে জায়ান ঘুরে গেলো আরাবীর দিকে।আরাবীর দুগালে স্পর্শ করে ফের বললো,
-‘ এটা তোমার দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন আরাবী।এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই।আমিও তো তোমাকে কতো ব্যাথা দেই। কামড়ও তো দিয়েছি কতো।’

এগুলো শুনে কান্না থেমে গেলো আরাবীর।মুখশ্রীতে এসে ভড় করলো একরাশ লজ্জা।জায়ান আরাবীকে টেনে বুকে নিয়ে বলে,
-‘ আমার শরীরের একেকটা নখের আচঁড় বলে দেয় তুমি আমাকে ঠিক কতোটা গভীরভাবে অনুভব করো।আমার ভালোবাসাকে অনুভব করো।আর আমি এটাই তো চাই আরাবী। আমার স্পর্শ যেমন তোমার সর্বাঙ্গে বিরাজমান থাকে,ঠিক তেমনি আমার কাঠগোলাপের একেকটা কোমল স্পর্শ যেনও আমার শরীরেও থাকে।’

#চলবে____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here