#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১০
ইনহাজ বিষন্ন মন নিয়ে বসে পরে।ফোনে বোনের ছবি বের করে দেখে নেয়।তারপর মনে করে ৮মাসআগের কথা তখন তার পরীক্ষা সব শেষ হয়েছে।কিন্তু রেজাল্ট দেয়নি।রেজাল্টের অপেক্ষায় দিন পার করছিলো।তখনই তার ফোনে কল আসে।ইফা নাকি সুইসাইড করেছে।কথাটা শোনা মাত্রই ইনহাজের দুনিয়া ঘুরে গিয়েছে।ইনহাজ পাগলের মতো করছিলো।ইনান ওকে বুঝিয়ে সামলে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলো।
বোনকে আইসিইউতে দেখে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল।সব কিছু জানার পর সে ঠিক করে নেয় প্রতিশোধ সে নেবে আরিশ আর ওর পরিবারের থেকে।ও রাজনীতিতে নাম দেয়।অল্প সময় অনেক জনপ্রিয়তা ও পায়।ও যেদিন ভার্সিটিতে প্রথম যায় সেই দিনই ওহিকে দেখে।কিন্তু জানতো না ওটা ওহির বোন।প্রথম দেখায় ওহির কাজল চোখের মায়ায় পরে গিয়েছিলো।কিন্তু পরক্ষনে যখন জানলো তখন রাগ জেদ প্রতিশোধের নেশায় খারাপ ব্যবহার করতো ওহির সাথে।
এরপর যেদিন ওহি ওকে কোনো মেয়েকে কিস করতে দেখেছিলো সেদিন ওটা ওর চাচাতো বোন ছিলো যে ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে পরে।বোনের মতো ভালোবাসে ইনহাজ ওকো।ওর চোখে কি যেনো পরেছিলো তাই দেখছিলো আর ওহি ভেবেছে কিস করেছে।
ইনহাজ যত দিন যাচ্ছে ওহির উপর দুর্বল হচ্ছে।এখন ওহিকে কষ্ট দিলে নিজেরই বেশি কষ্ট হয়।কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।ইনহাজ মাথা চেপে ধরে বসে থাকে।একদিকে বোন আরেকদিকে ভালোবাসা।নিজের সাথে যুদ্ধ করেও পারছে না।
১৭.
রোদের আলো চোখে মুখে পরতেই ঘুম ভাঙে ওহির।চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে উঠে বসে।কিছুক্ষণ বসে চোখ বুলায় রুমে।কোথাও ইনহাজ নেই।ওহি ফ্রেশ হয়ে বসে থাকে।ইনহাজ রুমেন এসে দেখে ওহি বসে আছে।ইনহাজ খাবার নিয়ে এসেছে।নিচে গিয়ে খাওয়ার মতো পরিবেশ নেই।প্রচুর লোক তাই নিজের রুমেই খাবে।
ওরা দুজন খেয়ে নেয়।ইনহাজ ওহিকে বলে,,
-“রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি দুপুরে বিয়ে।আমরা কিন্তু বিয়ে শেষ হওয়া মাত্রই বেরিয়ে পরবো”
ওহি মাথা নাড়ায়।তারপর কিছু একটা ভেবে বলে,
-“শুনুন”
ইনহাজ বলে,,”বলো”
-“আমায় একটু ভালোবাসলে কি অনেক ক্ষতি হবে।একটু ভালোবাসুন না আমায়।আগে যা হয়েছে ভুলে…”
ইনহাজ রেগে যায়।ওহির কাছে এসে ওর গাল চেপে ধরে বলে,,
-“আগে যা হয়েছে ভুলে যাবো না আমার বোনকে ঠিক করে দে।ও বেঁচেও মরার মতো পরে আছে।তোর পরিবারের জন্য আমার বোন আমার সাথে কথা বলে না।কোমায় চলে গিয়েছে।কি ক্ষতি করেছিলো ও।ওর বাপ চাচা চৌদ্দ গুষ্টি রাজনীতি করলেও ও কি করতো তোর বাপ ওকে মেনে নেয়নি।ছাড়বো না আমি”
ওহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
-“তাহলে আমার কি দোষ ছিলো আমিও তো জানতাম না তারা কি করেছিলো।তাহলে কেনো আপনি আমার জীবনটা নষ্ট করলেন।ভেবেছিলাম ভালোবেসে আপনাকে ঠিক করবো কিন্তু আপনি।তাও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো কারণ কি জানেন আমি আপনাকে ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি।তাই আপনার কাছে থাকতে চাইতাম আপনায় রাগাতাম।কিন্তু আপনি বুঝলেন না।একবার হারিয়ে গেলে আমি আর কখনো ফিরবো না মিস্টার খান”
ওহি ফ্লোরে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে।ইনহাজের কানে বাজছে ওহির ভালোবাসি কথাটা।ও স্তব্ধ হয়ে যায়।ওহি ওকে ভালোবাসে কিন্তু কি করে ভালোবাসতে পারে।ও তো এই ভয়টাই পাচ্ছিল।ওহির সাথে খারাপ ব্যবহার করার এটাও একটা কারণ।ইনহাজ এখন কি করবে।ও নিজেও তো…।ইনহাজ বেলকনিতে চলে আসে।
বিয়ে শেষ হয়েছে মাত্র আর ওহি ইনহাজ ওরা বেরিয়ে পরেছে।ওহি সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পরছে।এক হাত দিয়ে মুচছে আর নাক টানছে।ইনহাজের বিরক্ত ও লাগছে আবার ভালো ও।ভালো কেনো লাগছে ইনহাজ তা বুঝতে পারছে না। ওহি এক সময় ঘুমিয়ে পরে।ইনহাজ সাইডে গাড়ি থামিয়ে পানি কিনতে যায়।
গাড়িতে ফিরে ওহিকে দেখে ঘুমিয়ে আছে।খোলা চুলগুলো মুখের উপর এসে পরেছে।ইনহাজ চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়।সে নিজেই নিজের কাজে বিরক্ত হচ্ছে।কেনো করছে সে এগুলো।বাসায় চলে আসে ওরা।চোখে মুখে তরল কিছু পরতেই ধরফরিয়ে উঠে ওহি।সামনে তাকিয়ে দেখে ইনহাজ পানির বোতল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
ওহি বিরক্ত হয়ে বলেন,,
-“কি সমস্যা আপনার পানি মেরেছেন কেনো?”
-“কতোবার ডাকলাম তোমায় কিন্তু তুমি উঠছিলেই না তাই তো এভাবে উঠাতে হলো।এবার বলো এতে আমার দোষ কোথায়”
ওহি নেমে চলে গেলো।ইনহাজও বাড়ির ভেতরে চলে আসে।ইনহাজ খুব ক্লান্ত তাই সে রুমে এসেই চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পরে।ওহি কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে।তাও কান্না থামানোর কোনো নাম নেই।চেখ মুছে ইনহাজের কাছে আসে।ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কিভাবে যেনো এই অসভ্য লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছে সে।
১৮.
এক সপ্তাহ চলে গেলো।ওহি ইনহাজকে ইগনোর করেছে এই ক’দিন।ও চাই ইনহাজ ওকে ভালোবাসুক।ওহি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেয়।ওহি নিচে নেমে দেখে ইনহাজ বাড়িতে নেই।ও খেয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।ভার্সিটিতে এসে মাহির আর আহিয়ার সাথে গল্প জুড়ে দেয়। ক্লাস করে বাইরে বের হয় তিনজন।
ভরা ক্যাম্পাসের ভেতর আরেক রাজনীতিবিদ সাইফ শেখ ওহিকে প্রপোজ করে বসে।ওহি বিরক্ত হয়।ভার্সিটির সবাই ভীত চোখে তাকিয়ে আছে।সবাই জানে ইনাহজ কেমন!তার জিনিসে চোখ দেওয়া মানে আগুনে হাত পুড়িয়ে ফেলা।ওহি ভলো ভাবেই বলে,,
-“আমি বিবাহিত ভাইয়া”
-“উফ ওহি বেবি তুমি ভাইয়া কেনো বলছো বুকে লাগে তো।জান বলো জান।তোমার মুখে ভীষণ হ*ট লাগবে।অবশ্য তুমি নিজেও হ*ট প্রচুর”
সাইফের বাজে কথায় ওহির গা ঘিনঘিন করে উঠে।ঘৃনায় থু থু মারতে ইচ্ছা করছে।ভদ্রতার খাতিয়ে তাও পারছে না।সে চলে যেতে নিলেই সাইফ খপ করে হাত ধরে ফেলে ওহির।ওহি হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়।সাইফ আরো জোরে চেপে ধরে।মাহির এসে হাত ছুটায়।সাইফ বলে,,
-“কেরে তুই নতুন লোক নাকি ইনহাজের বউয়ের”
মাহির সাইফকে থাপ্পড় মেরে বলল,,
-“ভদ্রভাবে কথা বল ও আমার বোন হয়।ছোটবেলা থেকে প্রত্যেকটা বিপদ থেকে আমি ওকে রক্ষা করেছি এখন ও পারবো।”
সাইফ রেগে যায় ওকে থাপ্পড় মারায়।ও মাহিরের কলার চেপে ধরে।ওদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।সাইফ মাহিরের সাথে পেরে উঠছে না।মাহির সাইফের তুলনায় লম্বা শক্তিও বেশি।শেষ মুহুর্তে কে যেনো মাহিরের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে।ওহি আর আহিয়া মাহিরের নাম ধরে চিল্লিয়ে ওঠে।
মাহিরকে মেরেছে সাইফের দলের একটা ছেলে।সাইফ মাহিরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চলে যায়।ওহি আর আহিয়া ছুটে মাহিরের কাছে চলে আসে।মাহির তখন ছটফট করছে মাথায় হাত দিয়ে।ওহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
-“কেনো করলি এমন কে বলেছিলো ওই সয়তান লোকটার সাথে লাগতে”
মাহির ওহির গালে হাত রেখে বলল,,
-“পাগলি কাঁদছিস কেনো আমি একদম ঠিক আছি।আরিশ ভাই যেমন তোর ভাই আমিও তো তাই না।আর বোনকে রক্ষা করা একটা ভাইয়ের দায়িত্ব।আমিও আমার দায়িত্ব পালন করছি।কি করে তোর নামে আমি এমন ফালতু কথা শুনি বলতো”
ওহি মাহিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
-“আমি তোকে খুব ভালোবাসি মাহির।তুই আমার আরেকটা ভাই।”
মাহির ওহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।তারপর আহিয়ার দিকে তাকায়।মেয়েটা পাশে বসেই নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে।মাহির বলে,,
-“কিরে তুই দূরে বসে আছিস কেনো এদিকে আয়।
আহিয়া ঝাপিয়ে পরে মাহিরের দিকে।ও হয়তে এই কথাটা শোনার অপেক্ষাতেই ছিলো।ওহি মাহির আর আহিয়া কাঁদছে।বন্ধুত্ব আহা এমন বন্ধুত্ব দেখতেও ভালো লাগে।
মাহির চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে।চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পায়।ওহি সোফায় আর আহিয়া তার হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে।তখনই কেভিনে প্রবেশ করে ইনহাজ।মাহিরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,
-“এখন কেমন আছো তুমি”
মাহির ভাঙা গলায় বলে,,
-“জি ভাইয়া ভালোই আছি।কিন্তু ওরা এখনো এখানে বাড়ি যায়নি কেনো?”
-“তোমার কি মনে হয় তোমার দুই বেস্টু আমার কথা শুনবে!ওদের কতো করে বললাম বাড়ি যেতে কিন্তু দুজনেই এখানে থাকবে মানে থাকবে”
-“ভাইয়া আসলে ওই সাইফ..”
-“তুমি ঘুমাও মাহির তোমায় ওতো কিছু এখন ভাবতে হবে না।”
১৯.
আজকে তিনদিন পর মাহির ভার্সিটিতে যাচ্ছে।এখন পুরোপুরি সুস্থ মাহির।ভার্সিটিতে ঢুকতেই ওহি আর আহিয়াকে দেখতে পায়।ওকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,,,
-“যাক সয়তান ভালো হয়েছে তবে।এখন আবার আমাদের জ্বালানো শুরু করবে”
ওরা ক্যাম্পাসক্যাম্পাসের মাঠে আসতেই থমকে যায়।ইনহাজ মারছে সাইফকে।মাহির স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে আছে।ও টের পেয়েছিলো এমন কিছু হবে।কেউ কিছু বলছে না বা এগিয়ে বাঁচাতেও যাচ্ছে না।ইনহাজ সাইফকে এতো মেরেছে যে ও কথা বলতেও পারছে না।ওহি দৌড়ে ইনহাজের কাছে আসে।ও ইনহাজের হাত ধরে টেনে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে।কিন্তু ও ব্যর্থ।
-“কি করছেন মিস্টার খান ছাড়ুন ওকে না হলে তো মরে যাবে এবার”
-“তুমি এখান থেকে যাও মেয়ে আমার রাগ বাড়িও না আর”
ইনহাজ সাইফকে মেরে সবার উদ্দেশ্য করে বলে,,
-“আমার বউ ও ওর দিকে তাকানোর সাহস যেনো ফারদার কেউ না করে তাহলে তাকে আমি জানে মেরে দেবো”
ইনহাজ হনহন করে বের হয়ে যায় ভার্সিটি থেকে।ওহি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না।ক্লাসে চলে আসে ওরা।ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে বের হয়।চায়ের দোকানে এসে তিনজন চা খায় আর আড্ডা দিতে থাকে।ওহির ফোনে কল আসে।ও রওসিভ করে বলে,,
-“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে যা বলে তা শোনার জন্য ওহি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।ফোন এবং চা দু’টোই ওর হাত থেকে নিচে পরে যায়।থমকে যায় ওহির দুনিয়া।
চলবে~