হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব -১১

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১১

ওহি এক প্রকার পাগলের মতোই হাসপাতালে এসেছে।মাহির আর আহিয়াই ওহিকে নিয়ে এসেছে।ওহি রিসিপশনে কাছে এসে বলে,,

-“ইনহাজ জুহাইন খান কোন কেভিনে আছে বলতে পারবেন।”

রিসিপশনের মেয়েটার কাছে শুনে চলে আসে ইনহাজ যেই কেভিনে আছে সেই কেভিনে।কেভিনে ঢুকে স্তব্ধ হয়ে যায় ওহি।চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি পরে যাচ্ছে।ওহি দৌড়ে ইনহাজের পাশে এসে বসে।ইনহাজের মাথায় হাত পায়ে সব জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।ওহি ইনহাজের হাত ধরে কাঁদছে।মাহির মুচকি হাসে ওহির কান্ডে।

ফোনে যখন ওহি শুনলো ইনহাজ এক্সিডেন্ট করেছে তখনই পাগলের মতো ছুটে এসেছে।মাহির বুঝে ফেলেছে তার বেস্টু এখন ইনহাজকে ভালোবেসে ফেলেছে।পাশে রাফিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ওহি চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলে,,,

-“এই সব কি করে হলো”

-“আমি জানি না ম্যাম কিন্তু স্যার গাড়ি নিয়ে আসার সময় এক্সিডেন্ট করেছে।”

রাত দুটো।সবাই চলে গিয়েছে।মাহির থাকতে চেয়েছিলো।কিন্তু ওহি জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে।ওহি ইনহাজের পাশে বসে ঝিমাচ্ছে।কখন ইনহাজের জ্ঞান ফেরে সেই অপেক্ষায় বসে আছে।

সকাল ৮ টার দিকে ইনহাজের জ্ঞান ফিরে।ওহিকে নিজের পাশে বসে ঘুমাতে দেখে বেশ ভালোই লাগে ইনহাজের।পানির পিপাসা পেয়েছে অনেক।ওহিকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না।হাত বাড়িয়ে পানির বোতল নেওয়ার চেষ্টা করে ইনহাজ।পানির বোতল পরে যায়।সেই শব্দে ওহি ধরফরিয়ে উঠে।ইনহাজের দিকে তাকিয়ে ওর জ্ঞান ফিরছে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে।

নিচে পানির বোতল পরে থাকতে দেখে বুঝতে বাকি থাকে না ইনহাজ পানি খাবে।ওহি ইনহাজকে পানি খাইয়ে দেয়।ওহি রাগ নিয়ে বলে,,

-“সমস্যা কি আপনার ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারেন না।বেখেয়ালি ভাবে কেউ গাড়ি চালায়।আপনি না থাকলে আমার কি হবে ভেবে দেখেছেন।”

-“আমি না থাকলে কিছুই হবে না তোমার বরং তুমি ভালো থাকবে ভীষণ ভালো থাকবে”

ওহি কেঁদে দেয়।ইনহাজ বিরক্ত হয় মেয়েরা এতো কাঁদে কেনো ভেবে পায় না সে।ওহি ইনহাজের হাত ধরে বলে,,

-“প্লিজ ছেড়ে যাবেন না আমায়।আপনি ছাড়া এই ওহি কখনো ভালো থাকবে না।”

-“আমি ছাড়াই ভালো থাকবে তুমি ওহি।”

ওহি কথা বাড়ায় না।তার এসব কথা শুনতে মোটেও ইচ্ছে করছে না।ভীষণ খারাপ লাগছে।ইনহাজকে ছাড়া থাকবে এটা সে ভাবতেও পারে না।হ্যা আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতো হয়তো তাদের সম্পর্কটা না কিন্তু ওহি তো ভালোবাসে ইনহাজকে।সে যেভাবেই হোক কোনো না কোনো দিন ইনহাজের মনে জায়গা করে নিতে পারবে।

২০.
সাতদিন হাসপাতালে থাকার পর আজকে ইনহাজ বাড়িতে আসবে।ওহি আগে বাড়িতে এসেছে।রাফিন আর মাহির ইনহাজকে পরে নিয়ে আসবে।আহিয়া আর ওহি মিলে রান্না করছে।ওহি রাফিনকে দিয়ে সার্ভেন্টদের আসতে মানা করেছে ইনহাজ যতদিন না সুস্থ হয়।

ওহির ভয় পাচ্ছে যদি সার্ভেন্টদের ভেতরে কোনো লোক থাকে যে ইনহাজের ক্ষতি করতে চায়।সে কোনো রিস্ক নিতে চায় না।মাহির আর রাফিন ইনহাজকে নিয়ে ওদের রুমে শুইয়ে দেয়।ওহি চলে আসে ইনহাজের কাছে।ইনহাজের অবস্থা মোটামুটি ভালো।ওর পুরোপুরি ঠিক হতে প্রায় একমাস লাগতে পারে।

রুম থেকে সবাই বের হতে ওহি হাসে অদ্ভুত ভাবে।ইনহাজের কেমন লাগে।সে অস্বস্তিতে পরে যায়।ওহিকে বলে,,

-“এভাবে হাসার কি আছে মনে হচ্ছে অমূল্য রতন পেয়ে গেছো”

ওহি বাঁকা হেসে বলে,,
-“পেয়ে তো গিয়েছি মিস্টার খান।এতোদিন অনেক কিছু করেছেন এবার আমার পালা হুহ।এমন কষ্ট দিবো যে সারাজীবন মনে রাখবেন”

ওহি কথাটা বলে হাসতে হাসতে বের হয়ে যায়।আর ইনহাজ চিন্তায় পরে যায়।কি করবে ওহি তার সাথে।ইনহাজ ভয় পায়।ওহি যদি তাকে কিছু করেও সে তো ওহিকে কিছুই করতে পারবে না।মাথার চোটটা এখনো শুকাইনি।এক পা আর এক হাত ভেঙে গিয়েছে।

দুপুরে ওহি ইনহাজকে খাওয়াতে আসে।ওহি ইনহাজের সামনে ভাত নিয়ে বসে ওকে খাইয়ে দিতে থাকে।ইনহাজ ওহির দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।ইনহাজকে ওভাবে তাকাতে দেখে ওহি হেসে বলে,,

-“বেশিক্ষন তাকাবেন না মিস্টার খান প্রেমে পরে যেতে পারেন”

-“আমি যারতার প্রেমে পরি না।”

ওহি হাসে।খাইয়ে দেওয়া শেষে।খাবারের বাটি রাখতে চলে যায়।রুমে এসে গোসল করতে চলে যায় ওহি।গোসল শেষে বের হয় নীল রঙা শাড়ি পরে।ভেজা চুল থেকে পানি পরছে টুপটাপ।ইনহাজের চোখ আটকে যায়।সে তাকিয়ে থাকে ওহির দিকে।ওহি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছিল।

ইনহাজ চোখ বুঝে নেয়।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।এভাবে দিন চললে সে ওহির প্রতি সে অনেক দুর্বল হয়ে পরবে যা সে চায় না।

২১.
২৫ দিন হয়ে গেলো ইনহাজের এক্সিডেন্টের।ওহির সেবা যত্নে এখন ইনহাজ অনেক সুস্থ।এখন ইনহাজ ভর দিয়ে হাঁটতে পারে মোটামুটি।এই ক’দিন ইনহাজ অবাক হয়ে ওহিকে দেখেছে।মেয়েটা তাকে ভীষণ ভালোবাসে তা ইনহাজ বুঝতে পেরেছে।বুঝেও লাভ নেই ইনহাজের।

ওহি খাবার নিয়ে রুমে আসে।ইনহাজকে খাইয়ে দেয়।ওহি রাগ দেখিয়ে বলে,,
-“হাত তো ঠিক হইছে রাত থেকে নিজের খাবার নিজের হাতে খাবেন।পারবো না খাইয়ে দিতে আমি”

-“কেনো খাইয়ে দিতে সমস্যা কি”

ইনহাজের এমন কথায় ওহি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
-“আমি কেনো খাইয়ে দেবো আপনার তো হাত এখন ঠিক আছে”

ইনহাজ কথা বলে না।ওহি হাসে।অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি ইনহাজ হা করে তাকিয়ে থাকে সেই হাসির পানে।ওহি ইনহাজকে বলে,,

-“এভাবে তাকাবেন না মিস্টার খান নাহলে আবার প্রেমে পরে যেতে পারেন।”

-“জীবনেও না।আমি জীবনেও তোমার প্রেমে পরবো না”

-“তা দেখা যাবে।সময়ের সাথে সাথে।”

আজকে ওহি ভার্সিটিতে যাবে।ইনহাজ এখন পুরোপুরি সুস্থ।ওহি একমাস পরে যাচ্ছে ভার্সিটিতে।মাহির আর আহিয়া অপেক্ষা করছে ওর জন্য।ভার্সিটিতে আসতেই আহিয়া আর মাহিরকে কৃষ্ণচূরা গাছের নিচে বসে থাকতে দেখে চলে আসে।আহিয়া মন খারাপ করে বসে আছে।মাহির ও চুপচাপ বসে আছে।ওহি ওদের মাঝে ধপ করে বসে পরলো।

ওরা দুজন ওহির দিকে তাকালো।ওহি বুঝলো কোনো কারণে ওদের দুজনের মন ভালো নেই।ওহি আহিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,,

-“কি হয়েছে তোদের দুজনের এমন মুড অফ করে বসে আছিস কেনো?”

আহিয়া জোরপূর্বক হেসে বলে,,
-“না না কিছু হয়নি কি হবে বলতো”

-“আহিয়া আমরা তোর বেস্টফ্রেন্ড আমাদেরকে বলবি না।দেখ তোর মন খারাপ বলে এই গাধাটাও মন খারাপ করে বসে আছে।”

-“আসলে আম্মু আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে।কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাই না”

-“কেনো বিয়ে করবি না আঙ্কেল আন্টি তো তোর খারাপ চাইবে না।তুই বরং বিয়েটা করে নে।”

মাহির দাঁড়িয়ে পরে।ও রেগে ওহিকে বলে,,
-“বিয়ে করবে মানে ও শুধু আমায় বিয়ে করবে আর কাউকে না”

-“কেনো তোকে বিয়ে করবে।”

-“কারণ কারণ আমি ওকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করবো আর কাউকে না।”

আহিয়া স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।মাহির যে ওকে ভালোবাসে তা শিকার করবে ভাবতেও পারেনি।আহিয়া কাঁদতে শুরু করে।মাহির অস্থির হয়ে বলে,

-“আম সরি আহি আমি জানতাম তুই এই কথাটা শুনলে কষ্ট পাবি।দোস্ত প্লিজ ফ্রেন্ডশিপ ভাঙিস না”

ওহি মাহিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
-“আমিও তোকে ভালোবাসি হাদারাম”

চলবে~

আমার মনটা এই দুই দিন ভীষণ খারাপ।লিখাতে মন বসাতে পারছি না।অনেক কষ্টে এতোটুকু লিখেছি।আশা করি বুঝবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here