#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭
১২.
সাতদিন পার হলো।এই সাতদিন ওহির কাছে কয়েকযুগ মনে হচ্ছে।ওহি ভেবে পায় না মানুষ কিভাবে এতো পাশান হতে পারে।এই সাতদিনেই ওহির অবস্হা নাজেহাল।ওহি গোসল সেরে মাত্র বের হয়েছে।আজকে সে শাড়িই পরেছে শখ করেই পরা।ইনহাজ আসার আগে অবশ্য পাল্টে ফেলবে।ভেজা চুল থেকে পানি পরছে।ওহি বসে হালকা সাজলো অনেক দিন হলো সাজা হয়নি।
তাই আজকে একটু সাজতে বসলো।আর ইনহাজের আসতেও অনেক দেরি।চোখে কাজল পরছিলো ওহি তখনই রুমে ঢোকে ইনহাজ।ওহিকে দেখে থমকে যায় সে।ওহিকে শাড়িতে সে আগে একবার দেখেছে কিন্তু তখন তো এমন হয়নি।ইনহাজ চোখ সরিয়ে নেয়।কিন্তু বেহায়া চোখটা ওহির উন্মুক্ত কোমরেই চলে যায়।ইনহাজ কি করবে ভেবে পায় না।নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।সে ওহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
-“এইভাবে নিজের শরীর দেখিয়ে আমাকে বশ করতে চাইছো।তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি ইনহাজ কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না”
ওহি চমকে উঠে।সে ভাবতেই পারেনি ইনহাজ এখন চলে আসবে।দ্রুত শাড়ি ঠিক করে শরীর ঢেকে নেয়।তারপর ইনহাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“মিস্টার খান শরীর দেখিয়ে বশ তো অন্য কাউকে করতে চাইছি না তাই না নিজের বিয়ে করা বরকেই করতে চাইছি এতে সমস্যা কোথায়।”
ওহির কথা শুনে ইনহাজ বাঁকা হেসে বলে,,
-“তাই নাকি মিসেস খান।ওকে আমি তো একটু দেখতে চাই দেখাও দেখাও”
ইনহাজের কথায় ওহি ঘাবড়ে যায়।ইনহাজ এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে তার দিকে।সে শাড়িটা দিয়ে আরো ভালোভাবে ঢেকে নেয়।ইনহাজ ওহির একদম কাছে এসে ওর দিকে ঝুঁকে বলে,,,
-“ভয় করছে না তোমার।আমি যদি তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করি”
ওহি এতো সময় ভয় পেলেও এখন পাচ্ছে না কারণ ইনহাজ যে তাকে ঘাবড়ে দেওয়ার জন্য এসব করছে তা সে বুঝতে পারছে।সে ইনহাজকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে বলে,,
-“আপনাকে আমি ভয় পাবো মিস্টার খান।আপানকে একটা বাচ্চাও ভয় পাবে না আর সেখানে আমি”
ইনহাজ তেড়ে ওহির দিকে এসে বলে,,,
-“এই মেয়ে এই কি বললে তুমি আমাকে একটা বাচ্চাও ভয় পাবে না।এই তুমি জানো আমার ভয়ে পুরো শহর কাঁপে আর তুমি সেইখানে আমাকে ভয় পাচ্ছো না”
ওহি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে,,
-“আপনার ভয়ে শহর কাঁপে মানে আপনি কি মাফিয়া নাকি আপনি তো সাধারণ একজন রাজনীতিবীদ আর কিছুই না”
ইনহাজ বাঁকা হেসে বলে,
-“তোমার কি মনে হয় আমি সাধারণ একজন রাজনীতিবীদ”
-“হ্যা তা নয়তো কি”
ইনহাজ ওহির দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে যায়।ওহি হ্যাবলাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।ইনহাজ তার দিকে তাকিয়ে হাসলো কেনো ওইভাবে।ওহির সব গুলিয়ে যাচ্ছে।কিছুই বুঝতে পারছে না আর না ইনহাজ নামক লোকটাকে।ওহি ছাদে চলে আসে কিছু সময় একা থাকতে হবে তার।ছাদের দোলনায় বসে পরে ধপ করে।
১৩.
আজকে ওহিদের ভার্সিটিতে তাদের নবীন বরণ।আহিয়া জোড় করেই তাকে শাড়ি পরিয়েছে।নীল শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগছে ওহিকে।আহিয়াও পরেছে লাল শাড়ি।মাহির ওদের নিতে আসে।বাড়ি থেকে বের হয় আহিয়া আর ওহি।মাহির লাল পাঞ্জাবি পরে এসেছে।ওদের তিনজনের বাড়িই এক এলাকায় কিছুটা হাঁটলেই মাহিরের বাড়ি।আহিয়াদের বাড়ি আর ওহিদের বাড়ি পাশাপাশি।
মাহির দু’জনকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে বলে,,,
-“তোদের এমনিতেই পেত্নীর মতো লাগে।আবার আজকে আটা ময়দা মাখছিস বেশি কইরে। কেমন লাগতাছে তোগে! ইশ আটা ময়দা কি বাড়ি ছিলো আর”
কথাটা বলেই মাহির হো হো করে হেসে উঠলো।আহিয়া আর ওহি কোমড়ে আঁচল গুঁজে ওর কাছে এসে ওকে ধাপা ধাপ মারতে লাগলো।ও নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
-“আমারে কেউ বাঁচাও এই সয়তান শাঁকচুন্নি ছেমড়ির হাত থেকে”
ওহি আহিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার মাহিরকে মারতে মারতে বলে,,,
-“আমরা শাঁকচুন্নি না দাড়া তোর আজকে একদিন কি আমার কয়েকদিন সয়তান পোলা”
ওদের মারামারি করতে দেখে ওহির ভাইয়া আরিশ বাড়ি থেকে বের হয়।মাহির গিয়ে ওর পেছনে লুকিয়ে বলে,,,
-“আরিশ ভাইয়া বাঁচাও এই রাক্ষসীদের কাছ থেকে মেরে ফেলল আমায়”
আরিশ ওহি আর আহিয়ার দিকে তাকিয়ে রাগার ভান করে বলে,,,
-“এই তোরা ওকে এইভাবে মারছিস কেনো?”
ওহি বিরক্ত হয়ে বলে,,
-“উফ ভাইয়া তুই বিরক্ত করিস না তো যা এখান থেকে”
আরিশ মাহিরকে বলে,,
-“তুই এদের সামলা আমি বরং যাই না হয় তোর সাথে আমিও ফেসে যাবো”
কথাটা বলেই আরিশ কেটে পরলো।ওরা দু’জন মাহিরকে বলে,,
-“নে কান ধরে দশবার উঠবস কর”
-“পারবো না”
আহিয়া আর ওহি কানে হাত দেয় মাহিরের কথায়।ওহি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“বেয়াদপ এতো জোরে কেউ চিল্লায় কানে তালা লেগে গেলো।ঠিক আছে যখন উঠবস করবি না তখন আমাদের সাথে কথা বলবি না।”
মাহির চুপ হয়ে যায়।মুখটা চুপসে যায়।ওহি আর আহিয়া বেশ মজা নিচ্ছে মনেমনে মাহিরের অবস্থা দেখে।মাহির অসহায় কন্ঠে বলে,,
-“ঠিক আছে করছি”
মাহির পাঁচবার উঠবস করে আর পারলো না।ওহি আর আহিয়া ওকে মাফ করে দিলো।ওরা তিনজন একটা রিকশা ঠিক করলো।এবার একে উপরে বসবে নিয়ে ঝামেলা হলো।কারণ ওহি আর আহিয়া কেউই উপরে বসবে না।আর মাহিরও বসতে চাইছে না।ওরা এক প্রকার জোড় করেই মাহিরকে উপরে বসালো।ওরা পারলে দুইটা রিকশা নিতে পারতো কিন্তু ইচ্ছে করেই নেয়নি।
ওরা তিনজন দুষ্টমি করতে করতে ভার্সিটিতে চলে আসে।ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় ওহি দেখে একট মেয়ে ফুল বিক্রি করছে।ওহি মেয়েটার কাছ থেকে ছয়টা লাল গোলাপ কিনে নিলো।তিনটা আহিয়াকে দিলো আর তিনটা নিজের কাছে রাখলো।মাহির মন খারাপ করে বললো,,,
-“আমারে দিবি না!”
ওহি ভ্রু কুচকে বলে,,
-“তুই গোলাপ দিয়ে কি করবি আমাদের মতো কি কানের পেছনে গুঁজবি”
মাহির বোকা বোকা হাসি দেয়।ওহি আর আহিয়া ওকে ফেলে ভেতরে ঢুকে যায়।বেচারা মাহিরও ওদের পিছু পিছু যায়।ওরা বসে তিনজন নাচ গান দেখছে।কিছুক্ষণ পর সবাইকে ফুল দেওয়া হলো।মাহিরকে নিয়ে ওহি আর আহিয়া ভার্সিটির পেছনের লেকের ধারে আছে।ওরা দুজন বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলতে থাকে।মাহির বিরক্ত হয়ে যায় এসব দেখে।
বেচারা শেষে এদের ডং না নিতে পেরে চিল্লিয়ে বলে,,,
-“থামবি তোরা কি শুরু করেছিস?”
ওরা মাহিরের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলায়।তিনজন গল্প করতে করতে বের হওয়ার সময় ওহি মাহিরকে মেরে ছুটতে থাকে আর মাহিরও ওহির পেছনে পেছনে ছুটতে থাকে।আহিয়া দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে।ওহি মাহিরের দিকে তাকিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেয়।পরে যাওয়ার আগেই শক্তপোক্ত দুটো হাত ওহির কোমড় জড়িয়ে ধরে।
ওহি স্পর্শ পেয়ে শিউরে ওঠে।সে দ্রুত চোখ খোলে।চোখ খুলে ইনহাজকে দেখে সরে আসে দ্রুত।ইনহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,
-“এইভাবে ইডিয়েটের মতো কেউ দৌড়ায়।ঠিক সময় না ধরলে তো কোমড় যেতো!ঠিকমতো হাঁটতে পারো না”
ওহি কিছু বলতে যাবে তার আগে মাহির এসে ওকে কিছু বলতে না দিয়ে সে বলে,,
-“দুঃখিত ইনহাজ ভাইয়া আসলে আমরা দুষ্টমি করছিলাম ছোট মানুষ তো বুঝতে পারিনি”
ওহি মাহিরের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,,,
-“ওই পোলা চুপ থাক তুই।আর এই যে মিস্টার কি মনে করেন নিজেকে আমি না হয় ঠিক মতো হাঁটতে পারি না আপনি তো পারেন তো নিজে কেনো ঠিকমতো হাঁটছিলেন না”
ইনহাজ অবাক হয় যেখানে কোনো মেয়ে তার দিকে তাকায় না আর এই মেয়ে ঝগড়া করছে।সে মাহিরকে গম্ভীর কন্ঠে বলল,,
-“নিজের ফ্রেন্ডকে সামলাও নাহলে ফল ভালো হবে না”
কথাটা বলেই ইনহাজ হনহন করে চলে যেতে লাগলো।ওহি পেছন থেকে চিল্লিয়ে বলল,,,
-“আমিও দেখে নেবো কেমন ফল হয় আমিও ওহি এর শেষ দেখে ছাড়বো”
মাহির ওর মুখ চেপে ধরে বলে,,
-” কি শুরু করেছিস তুই।কার সাথে লাগছিস বুঝতেছিস”
ওহি ওকে চুপ করিয়ে নিয়ে যায়।মাহির টেনশনে পরে যায়।সে কিছুতেই আহিয়া আর ওহির ক্ষতি হতে দিবে না যা হয়ে যাবে যাক।কিন্তু তাকে ওহিকে মানানোর চেষ্টা করতে হবে যাতে ইনহাজের সাথে আর না লাগে।
১৪.
মাগরিবের আযানের ধ্বনি কানে আসতেই ঘুম ভাঙলো ওহির।সে আগের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরেছিলো দোলনায়।ওহি উঠে ছাদ থেকে নেমে রুমে আসে।ওহি রুমে এসে দেখে ইনহাজ হাত পা মেলে শুয়ে আছে।ওহি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অযু করে বের হয় ।
নামাজ পরে রান্না ঘরের দিকে যায় মাথা ব্যাথা করছে ভীষণ চা না খেলে কমবে না।সে চা বানিয়ে বেলকনিতে চলে আসে।মেঘলা আকাশ,হয়তো বৃষ্টি হবে।ঠান্ডা বাতাস ওহির শরীরে এসে লাগছে।ওহির খুব ভালো লাগছে।উপভোগ করছে।
চলবে~