হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব -০৬

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬

পিটপিট করে চোখ খুলে ওহি।চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে সে ইনহাজের রুমে আছে।মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে।তখনই ইনহাজ বেলকনিতে থেকে রুমে আসলো।ওহি স্থির হয়ে শুয়ে রইলো।চোখ তার সিলিংফ্যানে আবদ্ধ।ইনহাজ তার পাশে এসে বসে।ওহি আগের মতো ফ্যান ঘোরা দেখছিলো।ইনহাজ নরম কন্ঠে বলে,,

-“আ’ম সরি।”

ওহি সিলিংফ্যানের থেকে চোখ সরিয়ে ইনহাজের দিকে তাকালো।ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি ফুটিয়ে বলল,,,

-“সমস্যা নেই মিস্টার খান”

ইনহাজ ওইফার দিকে তাকায়।মুখটা কেমন শুকিয়ে গিয়েছে।ইনহাজের গিল্টি ফিল হয়।ইনহাজ বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ওহি নিজের দিকে তাকায় দেখে গায়ে ওড়না নেই।সে লজ্জা পায়,এতো সময় এইভাবে ছিলো ইনহাজের সামনে।আশেপাশে ওড়না খুঁজতে থাকে।কিন্তু পায় না।ব্লাঙ্কেট দিয়ে নিজেকে ঢেকে নেয়।

ইনহাজ সার্ভেন্টকে নিয়ে রুমে ঢোকে।সার্ভেন্টা খাবার রেখে চলে যায়।ওহি ধীর কন্ঠে ইনহাজকে বলে,

-“আমার ওড়নাটা কোথায়”

ইনহাজ তাকে তার ওড়নাটা খুঁজে দিয়ে দেয়।ওহি ওড়না গায়ে জড়িয়ে ব্লাঙ্ককেটটা শরীর থেকে সরিয়ে ফেলে।ইনহাজ সুপ খেতে দেয় ওহিকে।সে ভাবে ওহি এখন নাক মুখ কুঁচকে বলবে,খাবো না আমি মিস্টার খান এইগুলো। কিন্তু ওহি ইনহাজকে অবাক করে দিয়ে সুপ খেতে লাগে।ইনহাজ ওহিকে বলে,

-“কালকে থেকে তুমি ভার্সিটিতে যেতে পারবে”

ওহি আগে যেভাবে খাচ্ছিল এখনও ঠিক সেইভাবেই নিশ্চুপ হয়ে খাচ্ছে।ইনহাজের ভালো লাগে না ব্যাপারটা।ওহিকে দেখে মনে হচ্ছে ওহি জানতো যে এই কথাটা ইনহাজ তাকে বলবে।ইনহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

-“তুমি আমায় ইগনোর করছো কেনো?”

ওহি অবাক হওয়ার ভান করে বলে,,
-“আপনাকে ইগনোর করার সাহস আছে নাকি মিস্টার খান আমার বলুন তো।”

ইনহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“তোমার ফালতু নাকট কম করো”

ইনহাজ চলে যায় রুম ছেড়ে।ইনহাজ যেতেই ওহি বাঁকা হাসে।বিয়ে যখন হয়েছে সে ইনহাজের সাথেই থাকবে।যাই হোক না কেনো।আর এখন থেকে সে চাই ইনহাজ ভালো হক।নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে সে।আর সত্যিটাও জানার চেষ্টা করবে।

১০.
ওহি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নেয়।ইনহাজ মাত্র শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।পরনে একটা কালো টিশার্ট আর ছাই রঙের ট্রাউজার।চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে।ওহির ইনহাজের দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশ ভালো লাগছে।ইনহাজ ওহিকে নিজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকায়।

ওহি তা দেখে চোখ সরিয়ে নেয়।ইনহাজ ওহির দিকে ঘুরে ওহিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে,

-“তা মিসেস ওহি আপনি আমার দিকে ওইভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেনো?”

ওহি পরে যায় বিপাকে কি বলবে এখন সে।সে আমতা আমতা করে বলে,,
-“আমি আপনার দিকে কোথায় আমি তো পাশের ফুলদানিটা দেখছিলাম কতো কিউট”

ইনহাজ কথা বাড়ায় না।ওহি বলে,
-“আমার ফোনটা কি আমি পেতে পারি”

ইনহাজ ওহির ফোনটা ওকে দিয়ে দেয়।ইনহাজ ওকে ভার্সিটিতে নিয়ে যায়।ভার্সিটির কেউই ওহির দিকে তাকাচ্ছে না।যা দেখে ওহি ভীষণ অবাক হয় খুশিও হয়।কারণ ছেলেরা এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে যাতে ওহি ভীষণ অস্বস্তিতে পরে।ইনহাজ ওহিকে নিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে বলে ও কেনো আসতে পারেনি।প্রিন্সিপাল স্যার হেসে বলে ঠিক আছে সমস্যা নেই।ওহি ওখান থেকে ক্লাস রুমে আসে।

আহিয়া আর মাহির বসে মারামারি করছিলো।ওহি ওদের পাশে ধপ করে বসে পরে।দু’জনেই চমকে ওঠে।হা করে ওহির দিকে তাকিয়ে থাকে।ওহি ওদের ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,

-“এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো তোরা?”

মাহির জোরপূর্বক হেসে বলে,
-“না না তুই ভার্সিটিতে এসেছিস তাই”

-“তোকে ইনহাজ ভাইয়া আসতে দিয়েছে”

ওহি গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,”হুম”

মাহির ওহিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে বলে,
-“দেখি দেখি তোর কোথাও লেগেছে কিনা”

ওহি ভ্রু কুচকে বলে,
-“আমার লাগবে কেনো?”

-“কালকে ইনহাজ ভাইয়া যেইভাবে তোকে নিয়ে গেলো তোকে কিছু বলেনি”

ওহি তাচ্ছিল্য হাসলো।কিছু বলেনি তাকে আবার।কিন্তু ওহি ওদের কাছে রুমে আটকে রাখার বিষয়টা গোপন রাখলো।কারণ ওরা কষ্ট পাবে জানলে।তাই বলল,,

-“কিছু বাজে বাজে কথা বলেছিলো আর কিছু বলেনি”

আহিয়া সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে,
-“সত্যি তো”

ওহি মাথা নাড়ায়।তার ভেতরেই স্যার ক্লাসে ঢোকে।ওরা চুপ করে মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে।ক্লাস শেষে তিনজন মাঠে গিয়ে ওদের প্রিয় জায়গা কৃষ্ণচূরা গাছের নিচে বসে।ওহি ওদের উদ্দেশ্য করে বলে,

-“শোন মিস্টার খান আমায় এমনি এমনি বিয়ে করেননি”

-“হ্যা তা তো আমরা জানি তুই সেদিন ওই মেয়েটার সাথে দেখে ফেলে উনার মুখোশ খুলতে চেয়েছিলি তাই তো উনি তোকে বিয়ে করেছে”

আহিয়ার কথায় ওহি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,
-“উনি আমায় শুধু তার জন্য বিয়ে করেনি।উনার সাথে বাবার কোনো শত্রুতা আছে”

মাহির আর আহিয়া একসাথে বলে,,”কিহ!সত্যি”

-“হ্যা আর আমি এটাই খুঁজে বের করবো।তোরা আমাকে সাহায্য করবি”

মাহির হেসে বলে,
-“দোস্ত নো চিন্তা আমরা আছি তোর সাথে”

ওহি হাসলো।এই দুটো মানুষ তাকে নিজের বোনের মতো আগলে রেখেছে ছোট বেলা থেকে।মাহির তাকে বোন হিসাবে মানলেও আহিয়াকে সে ভালোবাসে।ভীষণ ভালোবাসে।আর আহিয়া এটা বুঝতেই চায় না।আহিয়া খুব ভীতু একটা মেয়ে।আহিয়া আর মাহিরের সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকে।আর ওহি ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসে।আহিয়া যে মাহিরকে ভালোবাসে না তা না সেও ভালোবাসে কিন্তু প্রেম করা তার পছন্দ না।

সে মাহিরকেই একেবারে বিয়ে করবে।তাই কিছু বলেনি।মাহিরও মুখ ফুটে তাকে বলেনি।ওহি ওরা ভার্সিটি থেকে বের হয়।ফুসকা দেখে আহিয়া আর ওহি বাচ্চাদের মতো লাফাতে থাকে।মাহির হাসে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে।তারপর তিনজন মিলে ফুসকা খায়।

১১.
-“দোস্ত তুই কি ওহির সাথে যা করছিস ঠিক করছিস?”

ইনহাজের বেস্টফ্রেন্ড ইনান কথাটা বলল।ইনহাজ সিগারেট টানতে টানতে বলল,,,
-“ওদের জন্য আমি আমার পছন্দের মানুষটাকে হারিয়েছি।আমি ওদের ছাড়বো না ইনান যাই হোক না কেনো”

ইনান হতাশ হয়।সে জানে ইনহাজকে বুঝিয়ে লাভ নেই।জীবনেও বুঝবে না।নিজের কাজে অটল সে।
-“দোস্ত যা করেছে ওর পরিবার করেছে ও তো কিছু করেনি,আর মনেও হয় না যে ও জানে কিছু”

সিগারেট ফেলে ওহির হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,,,

-“ওর পরিবার যা করেছে তার মাশুল তো ওকে দিতেই হবে তাই না”

ইনান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,
-“দেখ ইনহাজ ভালো না বেসে ফেলিস।কখন মানুষ কার মায়ায় পরে যায় বলা যায় না”

কথাটা শুনেই ইনহাজ রেগে যায়।সে ইনানের কলার চেপে ধরে বলে,
-“আমি!এই আমি কখনোই ওই মেয়েটাকে ভালোবাসবো না।ওর মতো ফ্যামিলির মেয়েকে ভালোবাসা যায় না”

ইনানকে ছেড়ে রাগে ফোসফাস করতে থাকে ইনহাজ।ইনান হতাশ হয়ে বলে,

-“বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন।যেখানে তুই ওকে তিন কবুল বলেই বিয়ে করেছিস সেখানে ওর প্রতি তোর একটু হলেও টান হবে।দেখ তুই তোর এই প্রতিশোধের নেশায় না নিজের ভালোবাসাকে হারাস।”

ইনহাজ কোনো কথা না বলে হনহন করে ভার্সিটির বিল্ডিং এর ছাদ থেকে নেমে যায়।নেমে সোজা ওহির কাছে এসে ওকে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে আসে।ওহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ইনহাজের দিকে।বাড়িতে এনেই ঠা’সস করে থা’প্প’ড় মারে ইনহাজ ওহিকে।ওহি টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়।

ইনহাজের চোখ ভয়ংকর রকম লাগছে।লাল হয়ে গিয়েছে।ওহি বুঝতে পারছে না ইনহাজের হুট করে হলোটা কি।তার গাল জ্বলে যাচ্ছে।সে রেগে গেল কোনো কারণ ছাড়া কেনো মারবে ইনহাজ তাকে ছেলে হয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে!সে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলল,,,

-“কোন সাহসে আপনি আমায় মারলেন!কি করেছি আমি হ্যা আর মেয়ে বলে কি অবলা মনে করেছেন এই ওহি জানে প্রতিবাদ করতে।নিজের যা ইচ্ছা তাই করবেন।আমাকে কি নিজের দাসী মনে করেছেন নাকি”

ওহি রাগে ফুঁসছে।ইনহাজ রেগে যায় ভীষণ।এমনিতেও ইনানের কথায় রেগে ছিলো তার উপর আবার ওহির এইসব কথা।ও ওহির কাছে এসে ওর গাল চেপে ধরে বাহু চেপে ধরে বলে,

-“বেশি সাহস বেড়ে গিয়েছে তোমার।তুমি মাহিরের সাথে কেনো বেশি মিশেছো।নাকি ছেলে দেখলে তাদের সাথে ঢলাঢলি করতে ইচ্ছে করে”

ওহি অনেক কষ্টে বলল,,
-“লাগছে আমার হাত ছাড়ুন”

ইনহাজ একটু ছাড়তেই ওহি ধাক্কা মেরে ধূরে সরিয়ে বলল,,

-“ছিহ নিজে যেমন আমাকেও কি তেমন মনে করেছেন নাকি!মাহির আমার ভাইয়ের মতো ও আমাকে বোন হিসাবে অনেক ভালোবাসে।তার থেকে বড় কথা ও আহিয়াকে ভালোবাসে আর আহিয়াও।আর আপনি ওকে নিয়ে আমার সাথে ছিহ”

ওহি দৌড়ে উপরে চলে গেলো।ইনহাজ চুল খামচে ধরে নিচে বসে পরলো।ও নিজেও জানে না কেনো ও ওহিকে থা’প্পড় মারলো।ওহিকে যে মাহিরের সাথে দেখে ওর রাগ লেগেছে তা ও আসলে ইনানের রাগ ওহির উপরে ঝেড়েছে।

চলবে~

বিঃদ্রঃআগের পর্বে আমি ওহির পরির্বতে অনেকবার ওইফা লিখেছি তার জন্য দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here