#হৃদয়_এনেছি_ভেজা – [১২]
–“ফুপির এভাবে ওই ভাইয়াটার সামনে এগুলো বলা উচিত হয়নি!” নিচু গলায় বললো সাবিয়া।
চোখ-মুখ তার ভার।
তরী বিছানার এক কোণে চোখ বুজে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে বসে। একমনে। সাবিয়া টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার এখন অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বোনের চুপসে যাওয়া দেখে কিছুই বললো না। শুধুমাত্র সান্ত্বনাস্বরূপ ওই বাক্যটাই বললো। সাবিয়াও তরীর মতো কথা বলায় অপটু। কোন মুহূর্তে কী বলা উচিত তা ঠিকভাবে ঠাওর করতে পারে না। এইতো, বোন তাকে চাপা অভিযোগের স্বরে বললো,
–“পরপুরুষের সামনে ফুপি আমার নামে অভিযোগ কেন করলো রে সাবিয়া? আমার খুব বিব্রত অনুভব হচ্ছে!”
অথচ তার চাইতেও বড়ো কথা হচ্ছে তরীর চোখ জোড়া কিছুটা লাল হয়ে ঝাপসা হয়ে এসেছে। চোখ জোড়া রঙিন ছবি দেখতে পারবে না, অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে না। আজকের দিনেই কেন সে অসুস্থ হতে গেলো? কেন-ই বা আজই সিদাতের সম্মুখে পরতে হলো? তরীর মন আকাশে লজ্জার সাথে একরাশ দুঃখও মেঘ হয়ে জমেছে। এই দুঃখ সে মাটিচাপা দিয়ে বসে আছে। কাউকে বলছে না, বুঝতেও দিচ্ছে না। চিনচিন করছে তার মাথা। জ্বর আসছে নাকি?
সাবিয়া যখন নানা ভাবনায় মত্ত তখন হঠাৎ তরী ক্লান্তিভরা কন্ঠে বললো,
–“সিলিং ফ্যানটা বন্ধ করে দে সাবিয়া। ঠান্ডা লাগছে!”
সাবিয়ার টনক নড়তেই সে দ্রুত গিয়ে মাথার ওপরে শব্দ করে ঘোরা সিলিং ফ্যানটা বন্ধ করে দিলো। তরী ততক্ষণে পাশ থেকে উষ্ণ কম্বলটা টেনে গায়ে জড়িয়ে নিলো।
—
সিদাতের অবসর সময় ছিলো। এজন্য ঘুরতে ঘুরতে তরীদের ভার্সিটিতে চলে আসলো। দেখলো বেশ চকচকে পরিবেশ৷ যেন কোনো প্রোগ্রাম চলছে। সিদাত কয়েকটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো। জানতে পারলো আজ চারুকলা বিভাগে প্রতিযোগিতা আছে। সিদাত চমকালো। সে যতদূর জানে তরীর মতো মেয়ে অন্তত চারুকলাতে পড়বে না।
এজন্যে সিদাত আরও কয়েকবার জিজ্ঞেস করলো, অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে কিছু হচ্ছে নাকি? ছেলে গুলো বারণ করে বললো,”শুধু চারুকলা বিভাগেই।”
সিদাত চিন্তায় পরে গেলো। পরমুহূর্তে হাসি-মুখে ছেলেগুলো কে বিদায় জানিয়ে চলে এলো!
তার মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। তরী তাহলে কেন অসুস্থ শরীরে ভার্সিটি আসতে চেয়েছিলো? যদি তার ক্লাস না-ই থাকে। আজ তো চারুকলার প্রোগ্রাম শুধু। আর কিছুই না। তাহলে কী তরী এই প্রতিযোগিতাতেই আসতে চেয়েছিলো? কিন্তু এটা কেন করতে যাবে? সিদাত আকাশ পাতাল ভাবলো। নীরব বন্ধু সম্পর্কে কিছুই জানে না সে। শুধু জানে নীরব বন্ধুর দুই অক্ষরের নামটি। এছাড়া কোন বর্ষ, কোন বিভাগ, কী পছন্দ, ভালো লাগা- মন্দ লাগা কিছুই জানে না। তরী-ই যে কিছুই জানতে দেয়নি।
অবশ্য সিদাতের এবার একটু শান্তি লাগছে। কার জীবনে এরকম একটা নীরব বন্ধু থাকে? তাও তরীর স্বভাবের। হোক একটু ভিন্ন, ভিন্ন অভিজ্ঞতাও নাহয় সিদাত পেলো।
সিদাত আর দেরী না করে বাইক ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। মায়ের সাথে কতদিন গল্প হয়নি।
সিদাত বাড়ী ফিরতেই দেখলো বাগানে সাঈদ সাহেব এবং বেশ কিছু কমিটির লোকেরা ছোটো-খাটো মিটিং বসিয়েছে। সাঈদের পাশে সাইফও আছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় সাইফের মুখ জুড়ে শক্ত-পোক্ত একটা ভাব আছে। সিদাত চাপা হাসি দিয়ে ভেতরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো। মিনমিন করে বললো,
–“থ্যাঙ্ক গড, আমি এসব ঝামেলার মাঝে নেই!”
সিদাত সর্বপ্রথম রান্নাঘরে গিয়ে ফিরোজা খাতুনকে সালাম দিলো। ফিরোজা তখন তরকারিতে খুন্তি নাড়ছিলো। সিদাতের আকস্মিক উপস্থিতিতে কিছুটা চমকে যায়। পরমুহূর্তে আলতো হেসে সালামের উত্তর নিয়ে বলে,
–“এসেছো আব্বু?”
সিদাত ফিরোজা খাতুনের শাড়ির আঁচলের কিছুটা অংশ হাতে নিয়ে ফিরোজা খাতুনের ঘর্মাক্ত কপাল মুছে দিতে দিতে বললো,
–“হ্যাঁ। এইতো এসেছি। আজ কিন্তু বাড়িতেই লাঞ্চ করবো ছোটো মা। তোমার বেশি কিছু রান্না করার দরকার নেই!”
বলেই সিদাত চলে গেলো। আর ফিরোজা খাতুন মুগ্ধ চোখে সিদস্তের চলে যাওয়া দেখলো। এত সোনায় সোহাগা ছেলে পাওয়া ভাগ্য ক’জনের হয়? ফিরোজা খাতুন অনুভব করলো তার ভেতরে শান্তির বর্ষণ বইছে। ছেলেটাকে দেখলেই মাথায় মমতা চাড়া দিয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে মমতায় জড়িয়ে নিতে। সিদাত বাড়ি না ফিরলে অস্থির অনুভব হয়। যেন সিদাতের কাছেই তার মন পরে আছে।
নিত্যদিনকার মতো জয়া ছেলের কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছেন। সিদাতের কথায় আলাদা স্বস্তি পায় সে। ছেলেটা তার কথা বলায় কতটা পটু। কথা কেউ সিদাতের থেকে শিখুক। সিদাত তরীর বর্ণনা দিয়ে হেসে বললো,
–“শুনেছো সব মা?”
জয়া পলক ফেললো৷ সিদাত শান্তি পেলো মাকে সঙ্গ দিতে পেরে। এমন সময় সাঈদ সাহেব উঁকি দিলো রুমে। সাঈদ সাহেব ঠিকই লক্ষ্য করেছিলেন ছেলেকে ফিরতে দেখে। এজন্যই তো কোনো রকমে গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা সেরে ভেতরে চলে আসলেন। বড়ো ছেলে সাইফ গিয়ে জরুই কাজে। ছেলের মুখখানা একটু দেখার জন্যেই এসেছেন। ছেলে এবং স্ত্রীকে একসাথে দেখে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। করুণ চোখে স্ত্রীর মুখপানে একপলক চেয়ে চলে গেলো। স্ত্রীর প্রতি চাপা অভিমান তাকে স্ত্রীর কাছাকাছি যেতে দেয় না। দূর থেকেই বেশিরভাগ সময় দেখে নেয় তাকে।
দুপুরে সকলে একসাথেই খাবার খেলো। এ যেন অনন্য অনুভূতি। সাঈদ সাহেব নিজ হাতে দুই ছেলের পাতে এটা ওটা তুলে দিয়েছে। দুই ভাই-ই নানান গল্প করতে করতে খেয়েছে। আর সাঈদ সাহেব দুই ছেলেকে একসাথে দেখে চোখ জুড়িয়েছে। ছেলেরা যে সাঈদ সাহেবের ভীষণ আদরের, ভালোবাসার।
ফিরোজা খাতুন একপলক স্বামীর দিকে তো আরেক পলক ছেলেদের দিকে তাকাচ্ছে। এখানে কোথাও না কোথাও জয়ার শূন্যতা অনুভব করছে সে। মানুষটা একা ঘরে পরে আছে আর এখানে সকলে একসাথে। ভারী দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফিরোজা।
—————–
বিকালের দিকে ফুপির ছোটো ছেলে শাওন এসেছে। শাওন এবং সাবিয়া সমবয়সী। শাওনকে হুট করে তরীদের বাড়িতে দেখে ফুপি অবাক হলো। অবাক সুরে বললো,
–“একা একা তুই এখানে এসেছিস?”
শাওন দাঁত কেলিয়ে বলে,
–“বাবার রান্না খেতে আর ভালো লাগছিলো না। এজন্যে চলে এলাম। রাস্তা তো চিনি-ই!”
ফুপি এবার শাওনের কান ধরে বললো,
–“খুব বড়ো হয়ে গেছিস না? ‘বাবার রান্না খেতে ভালো লাগছিলো না!’ আহারে ঢং। এতদিন বলতি আমার রান্না ভালো লাগে না। এখন বাবা। তুই কী ভেবেছিস, তোর এসব চালাকী আমি বুঝি না?”
শাওন চাপা আর্তনাদ করে বললো,
–“লাগছে মা। ছাড়ো! কেউ দেকগে ফেলবে। মান-সম্মান আর থাকবে না আমার। আহ্!”
সৌভাগ্যবশত তরী এবং সাবিয়া নামাজ পড়ছিলো এজন্যে শাওনের এই অবস্থা কেউ-ই দেখতে পেলো না।
©লাবিবা ওয়াহিদ#হৃদয়_এনেছি_ভেজা – [১৩]
শাওন বাড়িতে বেশিক্ষণ বসলো না। কোনোরকমে হালকা-পাতলা নাস্তা করেই বেরিয়ে গেলো পাড়া ঘুরতে। তরীদের এলাকা তার ভীষণ পছন্দ। এজন্যে এই এলাকার পথ-ঘাট হেঁটে বেড়ায় নির্দ্বিধায়। ফুপি এতবার পিছুডাক দিলো, শাওন শুনলোই না। ছেলেটা তার বড্ড চঞ্চল এবং অবাধ্য। কী করলে যে ছেলেটা সোজা পথে আসবে কে জানে?
তরী এখন মোটামুটি সুস্থ। সাবিয়া গিয়েছে তিন তলায়। তাদের উপরের ফ্ল্যাটে একটা ছোটো পরিবার থাকে। ছোটো পরিবারে একটা বাচ্চা ছেলে আছে। সম্ভবত ক্লাস থ্রি-তে পড়ে। ছেলেটার নাকি একটু অংক করতে সমস্যা হচ্ছে, এজন্য ছেলেটার মা এসে তরীকে ডাকলেন। কিন্তু তরী অসুস্থ হওয়ায় সাবিয়া তরীর বদলে গেলো। মাঝেমধ্যে-ই তরী ছেলেটাকে গিয়ে সাহায্য করে।
সাবিয়া আসলো বেশ কিছুক্ষণ পর। তরী সোফা ঝাড়ছিলো। সাবিয়া তরীর কাছে নীরবে এসে চাপা স্বরে তরীকে ডাকলো। তরী পিছে ফিরে তাকালো। সাবিয়া চারপাশে সতর্ক নজর ফেলে আড়াল থেকে একটা চিঠি বের করে বললো,
–“বাসায় আসার সময় দেখি দরজার সামনে এটা পরে ছিলো। চিঠিটা কুড়িয়ে দেখি তোমার নাম লেখা। এজন্যে ফেলে দেওয়ার সাহস করিনি!”
তরী তার হাতে চিঠিটা নিলো। সাবিয়া তখন কৌতুহলী নজরে তরীর হাতের খামটার দিকে চেয়ে আছে। তরীকে নীরব থাকতে দেখে সাবিয়া এবার উৎসুক স্বরে বললো,
–“এটা কে দিয়েছে আপু?”
তরী হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
–“জানি না। এত জানতেও হবে না। যা গিয়ে পড়তে বস!”
সাবিয়ার মুখ ভার হয়ে গেলো। এত কৌতুহল এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। কৌতুহলকে মাটিচাপা দিয়ে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে চলে গেলো। সাবিয়া চলে যেতেই তরী রান্নাঘরের দিকে সতর্ক দৃষ্টি ফেলে সোফায় বসে পরলো। ফুপি রান্না করতে ব্যস্ত। মনে হয় না এত সহজে রান্নাঘর থেকে বের হবে। এজন্যে তরী এখনই খাম খুলে চিঠি পড়ার সিদ্ধান্ত নিলো। চিঠির ওপর আগের বারের মতোই ইংরেজীতে “ডিয়ার তরী” লেখা।
খাম থেকে চিঠিটা বের করতেই দেখলো গুটিকয়েক লাইন। তরী সেগুলোতে চোখ বুলালো। লেখা,
–“জানি, আমার লেখা এত আহামরি না। তাই জাস্ট ইগনোর মাই হ্যান্ডরাইটিং। কখনো লেখার হাতকে যত্ন করা হয়নি। এজন্যই বকের হাত-পায়ের মতো লাগে। যাইহোক, তুমি দেখা এবং কথা না বললেও এভাবে-ই চিঠি দিয়ে যাবো নিকাব রাণী। কোনো বারণ শুনবো না। তুমি ভালো আছো তো?”
তরী হতভম্ভ, বিমূঢ়। কী বলছে এসব সিদাত? মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি? রোজ রোজ এই চিঠির ভার সে কী করে সইবে? কারো হাতে এই চিঠি পরে গেলে নির্ঘাত তরীর কপালে দুঃখ আছে। বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেলো তার। তরী চিঠিটা মুড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। এর হেস্তনেস্ত করতেই হবে তাকে।
তরী বেশিক্ষণ না বসে বেসিনের সামনে গিয়ে কাগজ ভিঁজিয়ে দিলো। অতঃপর সেগুলা কাপড়ের মতো দু’হাতে ঘষে লেখাগুলো নষ্ট করে দিলো। কারো বোঝার উপায় নেই এটাতে কী লেখা ছিলো! তরী ভেজা কাগজটা ডাস্টবিনে ফেলে আসতেই নিচ্ছিলো ওমনি কলিংবেল বেজে ওঠে। তরী দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলে কাউকে পেলো না। বিরক্তি যেন আরও ঘিরে ধরলো তরীকে। এভাবে হুটহাট কলিংবেল বাজানোর মানে কী? তার চাইতেও বড়ো কথা, বাচ্চাদের হাতের নাগালেই কেন কলিংবেল থাকবে? সবই বিরক্ত লাগছে তরীর। মুখজুড়েও তিতা ভাব। খাবারে রূচি নেই। তরীর এখন খিটখিটে মেজাজের হতে খুব ইচ্ছে করছে, খুব!
তরী ভেতরে আসতেই তার ফোনে টুং শব্দে মেসেজ আসলো। তরী পুণরায় সোফায় বসে ফোন হাতে নিলো। দেখলো মামা মেসেজ দিয়েছে। অবশ্যই খোঁজ-খবর নেওয়ার মেসেজ নয়। তার পোস্টে লাইক করার মেসেজ। মামার মেসেজ থেকে বেরিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করতেই হোমপেজে সর্বপ্রথম ভেসে ওঠে সিদাতকে নিয়ে বানানো ব্যানার। মামা লিখেছেন, “আদর্শ বাবার আদর্শ ছেলে৷”
তরী ‘থ’। কী বলবে বা বলা উচিত বুঝলো না। সিদাতকে যদি আদর্শ বলা হয় তাহলে ভালো, ভালো ছেলেদের অপমান করা হবে। মামা আজকাল এত পরিমাণে তেল দিচ্ছে। আলগা প্রসংশায় পঞ্চমুখ করে ফেলছে। এগুলো করে সময় নষ্ট না করে সময়গুলো ভালো কাজে লাগালেই তো পারতো! আশ্চর্য!
আবার কলিংবেল বেজে ওঠে। এবার তরীর ধ্যান নেই। যার ফলে ফুপি এসেই দরজা খুলে দিলো। শাওন এসেছে। ফুপি শাওনকে দরজা বন্ধ করতে বলে ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দিলো। শাওন দরজা বন্ধ করে দুলে দুলে গুণগুণ করে গাইছে,
“আশিক বানায়া, আশিক বানায়া.. আশিক বানায়া আপনে!”
তরীর মুখ ঘুচে গেলো শাওনের গাওয়া গান তার কানে প্রবেশ করতেই। কপাল কুচকে গেলো এ ধরণের গান শুনে। এমনিতেই বিরক্তির শেষ নেই। তার ওপর শাওনের এ-সব গান। তরী খুব কড়া গলায় ডাকলো শাওনকে।
–“শাওন!”
শাওন চমকে সোফার দিকে তাকালো। তরী বসে আছে। সঙ্গে সঙ্গে শাওন তার গান বন্ধ করে হালকা ঢোঁক গিললো। সে বুঝতে পারেনি যে তরী এখানে বসে আছে। সে জানতো তরী অসুস্থ, এজন্যে রুমে হয়তো বিশ্রাম নিচ্ছে। শাওন আমতা আমতা করে বললো,
–“বলো আপু!”
তরী আবারও কড়া গলায় বললো,
–“আমার কাছে আয়!”
শাওন আবারও শুকনো ঢোঁক গিলে আল্লাহ্-কে ডাকতে ডাকতে তরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শাওন বড্ড ভয় পায় তরীকে। তরীর মতো ভয় শাওন তার বড়ো বোনকেও পায় না। তরী গরম চোখে চেয়ে আছে শাওনের দিকে। শাওন কোণা চোখে চেয়ে তা ঢের বুঝতে পারলো। তরী কাঠকাঠ গলায় বললো,
–“আমার ঘরে তুই গুণগুণিয়ে গান গেয়েছিস! এত বড়ো সাহস? আগে বারণ করিনি?”
শাওন মিনমিন করে বললো,
–“গানটা মাত্রই শুনে এসেছি আপু। তাই প্রেক্টিস করছিলাম।”
–“বাদ্যযন্ত্র হারাম। কতবার বলেছি এ-সমস্ত গান-টান শুনবি না৷ কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস না কেন?”
শাওন নিশ্চুপ। তরী ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। অন্যদের রাগ সে শাওনের ওপর ঝাড়ছে, যা মোটেও উচিত নয়। তরী দু’হাত মুঠো করে নিজেকে সামলে নিলো। অতঃপর ঠান্ডা গলায় বললো,
–“আমার পাশে বসো!”
শাওন চট করে তরীর দিকে তাকালো। অতঃপর হাসলো। রাগ চলে গেছে, এবার নিশ্চয়ই আর বকবে না। শাওন তরীর পাশে বসলো। দুই ভাই-বোন মিলে নানান আলাপ করতে লাগলো।
রাতে সিদাত এলো কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে। ফুপি অবাক হয়ে বললো,
–“এই প্যাকেটগুলো কেন আনলে বাবা?”
সিদাত মুচকি হেসে বলে,
–“আমরা দুই বন্ধু মিলে এনেছি। নিজেরাও খাবো সাথে আপনাদের জন্যেও আনলাম। প্লিজ বারণ করবেন না। বড্ড আশা নিয়ে এনেছি। প্রতিবেশি’রা প্রতিবেশিকে ভালোবেসে কিছু না কিছু দিতেই পারে। তাই না?”
ফুপি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়। ঘাড় বাঁকিয়ে রুমের দরজার দিকে তাকায়। পর্দার আড়ালে তরী দাঁড়িয়ে আছে। ফুপি তাকাতেই তরী তক্ষণাৎ নেতিবাচক মাথা নাড়ালো। ফুপি হাসার চেষ্টা করে পুণরায় সিদাতের দিকে চেয়ে বলে,
–“কিছু মনে করো না বাবা। তবে তোমার এই খাবার নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। মনে কিছু নিও না বাবা, একটু বোঝার চেষ্টা করিও!”
সিদাত অবশ্য জোর করলো না। সে হাসি-মুখে ফুপির কথা মেনে নিলো। চলে যেতেই নিবে ওমনি সিদাতের সামনে এসে দাঁড়ালো শাওন। সিদাতের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। অস্ফুট স্বরে বললো,
–“আরে, আপনি আর-জে সিদাত না? আমার প্রিয় শো-এর হোস্ট?”
সিদাত শাওন দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বললো,
–“কোনো সন্দেহ আছে? দেখো, আমি-ই সিদাত।”
সিদাতের কথায় শাওন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। ভক্তরা থাকে না, যারা তাদের পছন্দের মানুষকে পর্দা থেকে হুট করে সরাসরি দেখলে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যায়? শাওনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। বেচারার খুশিতে চোখের কোণ ভিঁজে গেছে। উপচে আসা খুশি কোনোরকমে গিলে শাওন দুই ধাপ এগিয়ে সিদাতের উদ্দেশ্যে বললো,
–“আমি আপনার বিরাট বড়ো ভক্ত ভাইয়া। আপনার বচন-ভঙ্গি, কথা-বার্তা, আপনার শো.. মানে সবমিলিয়ে আমি মুগ্ধ আপনার ওপর। আপনি আমাদের বাসায়? অবিশ্বাস্য! আমি কী স্বপ্ন দেখছি?”
সিদাত হাসলো। তবে চিনতে পারলো না শাওনকে। হয়তো-বা তরীর আত্নীয় সে। তাই খুব সুন্দর ভাবে কথা বললো। জানালো সিদাত বন্ধুর কাছে মাঝেমধ্যেই আসে। তাদের পাশের ফ্ল্যাটটাই সিদাতের বন্ধুর। শাওন বিশ্বাস করলো। সাথে উপচে আসা খুশিও প্রকাশ করতে চাইলো। দুজনে পরিচিত হলো। সিদাত শাওনকে বিরিয়ানির এক প্যাকেট দিয়ে বললো,
–“আমার তরফ থেকে এটা তোমার জন্যে গিফট শাওন। গুড লাক!”
বলেই সিদাত চলে গেলো। সিদাত চলে যেতেই শাওন আনন্দের সুরে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
–“আম্মা, আমি আজ থেকে এখানে-ই থাকবো। কনফার্ম। আমিও সিদাত ভাইয়াকে প্রতিদিন দেখতে চাই। আমি এখানে থাকতে চাইই আম্মু!”
ভেতর থেকে তরীর ধমক শোনালো। শাওন সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেলো। ফুপি কপাল কুচকে মিনমিন করে বললো,
–“তুই এখান থেকে কালকেই যাবি! কয়েক ঘন্টাতেই জ্বালানোর সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিস!”
~[ক্রমশ]
বিঃদ্রঃ লেখা খেই হারিয়ে ফেলেছি না লিখতে লিখতে। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
~[ক্রমশ]
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।