হৃদয় মাঝারে পর্ব -০৭ ও শেষ

#হৃদয়_মাঝারে
#হালিমা_চৌধুরী
#অন্তিম_পর্ব

তূর্য শিকদারের বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে ১২ টা বেঁজে গেছে। আমরা বাড়িতে আসতেই তূর্য শিকদার ভুত দেখার মত চমকে উঠে।

‘মুরতাসিম ব্রো তোরা কি সত্যিই এসেছিস? এই চাঁদ আমাকে একটা চিমটি কাটো তো!’

তূর্য শিকদারের কথা শুনে চাঁদনীরর কপালে বিরক্তিরর চাপ ফুটে উঠে। চাঁদনী ইচ্ছে করে জোরে তূর্য শিকদারকে চিমটি কাটে। তূর্য শিকদার চিমটি কাটার পর হো হো করে হেসে উঠে।

‘কি তূর্য ভাই তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নাকি?’

‘নারে ব্রো তোর বোনের কোমল হাতের ছোঁয়ায় আমি ফিদা হয়ে গেছি।’

‘আচ্ছাহ সেসব কথা বাদ দে আমরা কি আজ তোর এখানে থাকতে পারবো?’

তূর্য শিকদার কিছুটা অভিমানের স্বরে বলে,

‘আমি কি তোদের কখনো বারণ করেছি থাকার জন্য? তুই কিভাবে ভাবলি এটা!’

‘আরে আমি সেভাবে বলতে চাই নি।’

আস্তে আস্তে মুরতাসিম তূর্য শিকদার কে সব খুলে বলে। সব শুনে তূর্য শিকদার মুরতাসিম কে বলে,

‘তোর বোন কে তো তোর হিটলার মা রিকির সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে! পাত্র হিসেবে তো রিকির থেকে আমি ভালো নাকি?’

চাঁদনী ফোঁড়ন কেটে বলে,

‘তূর্য ভাইয়া আপনি এখন কি বলতে চাইছেন? আমি এখানে বিয়ে করতে আসি নি বুঝলেন।’

তূর্য চাঁদনী কে ধমকে বলে উঠে,

‘তোমাকে আমি জিঙ্গেস করেছি? বড়দের মাঝে কথা বলবে না।’

চাঁদনী দাতদাত চে’পে বলে,

‘আচ্ছাহ বিয়ের দিনও তো বড় রা কথা বলবে তখন আমি বড়দের মাঝে কথা বলবো না। দেখি কে আমাকে কবুল বলতে বলে।’

চাঁদনীর কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দেয়।

‘এই চল আমরা খাবার খেয়ে নিই। শিলা যাওয়ার পরে একদম ভেঙে পড়েছিলাম। তোরা এসেছিস ভালো করেছিস।’

‘আচ্ছাহ চল প্রচুরর খুদা লাগছে।’

বলেই মুরতাসিম তূর্য শিকদারের আগে আগে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ে।
.
গান গাওয়ার জন্য আজ আমার ডাক পড়েছে। তাই মুরতাসিম আমাকে পৌছে দিয়ে অফিসে চলে যায়। আমিও গান গাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলাম। আমাকে আসতে দেখে তূর্য শিকদার এগিয়ে আসে। তার পাশে চাঁদনী শিকদারও আছে। চাঁদনী আর তূর্য শিকদারের বিয়ে হয়। দুজনের মতামতের ভিত্তিতেই বিয়েটা হয়।

‘ভাবি আপনার বর মশাই আসে নি?’

তূর্য শিকদারের কথা শুনে আমি কিছুটা অভিমানের স্বরে বলি,

‘নাহ ভাইয়া তার অনেক কাজ। আমাকে সময় দেওয়ার মত কি ইচ্ছে তার আছে নাকি!’

‘আচ্ছাহ ফারিহা তুমি কেনো এটা মনে করছো? ভাইয়া তো তোমার গান লাইভে দেখবে বলে অফিসে চলে গেছে।’

চাঁদনীর কথা শুনে আমি আর কিছু বলিনি। আমাকে গান গাওয়ার জন্য তূর্য শিকদার ডেকে চলে যায়। আমিও তার পিছনে গুটিগুটি পায়ে কক্ষে চলে আসি।
.
গান গেয়ে বের হবার পর দেখি চাঁদনীর পাশে মুরতাসিম ও দাড়িয়ে আছে। উনাকে দেখে মুখে এক চিলতে হাসির দেখা মিলে।

‘কন্গ্রাচুলেশন ফারিহা।’

বলেই মুরতাসিম আমার দিকে একগুচ্ছো লাল গোলাপ এগিয়ে দেয়।

‘ওহ ভাইয়া তুই জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছিস। ভাইয়া তুই আসিস নি কারনে ফারিহা সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে রেখেছে। এখন দেখ কিরকম মুচকি মুচকি হাসছে।’

চাঁদনির কথা শুনে মুরতাসিম আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘এটা তো আমার বউ তাই আমার জন্য মুখ গোমড়া করে রেখেছে। বাট তার মুখ গোমড়া করে রাখা উদাও করার ঔষধ ও আমার কাছে আছে।’

‘এই আপনি চুপ করুন তো। সারাদিনই শুধু উল্টা পাল্টা বকেন।’

‘নো ভাবি আপনি কেনো মুরতাসিম কে থামতে বলেন? এই মুরতাসিম তোর বউয়ের মন ভালো করার ঔষধ টা আমাদের ও একটু দেখা!’

মুরতাসিম ভাব নিয়ে বলে,

‘তোদের কে যদি আমি মন ভালো করার ঔষধ দেখাই তাহলে আজ আর আমাকে ঘরে জায়গা দিবে না। তোদের বরং আজ ট্রিট দিয়েই চুপ করিয়ে রাখি।’

চাঁদনী খুশি হয়ে বলে,

‘আজ একদম পেট ভরে খেয়ে দেয়ে তারপর তোকে ছাড়বো।’

সবাই চাঁদনীর সাথে তাল মিলিয়ে রেস্টুরেন্ট এ চলে আসে। সবার খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার বাড়িতে চলে যায়। আমি আর মুরতাসিম ও বাড়ির উদ্দের্শ্য রওনা দিই। গাড়িতে বসে মুরতাসিম কে বললাম যে পাশেই একটা লেক আছে সেখানে যাওয়ার জন্য। মুরতাসিম প্রথমে রাজি না হলেও পরে আমার জোরাজুরি তে রাজি হয়।

‘একদম পানিতে পা দেওয়া যাবে না বলে দিলাম।’

‘আচ্ছাহ বাবা বললাম তো দিবো না।’

‘আচ্ছাহ চলো।’

বলেই মুরতাসিম লেকের উদ্দের্শ্য পা বাড়ায়। আমিও উনার পিছন পিছন হাটা শুরু করি। মধ্য দুপুর হওয়ার কারনে লেকের আশে পাশে কোনো লোক নেই। এমনিতেও জায়গা টা বেশ নির্জন। লেকের সামনে এসে আমি লেকের চারপাশ ঘিরে থাকা ঘাসের উপর বসে পড়ি। উনিও আমার পাশে বসে পড়ে।

‘আচ্ছাহ তুমি এখানে কেনো এলে একদম ভালো লাগে না এখানে!’

‘আমার নির্জন এবং লেকের পাড় অনেক ভালোলাগে। এটা তো নির্জন ও তাই এখানে আসতে বললাম।’

উনি বসা থেকে আমার হাটুর উপর শুয়ে পড়ে। আমি উনার চুল টানতে টানতে বলি,

‘আপনি কি আমায় সত্যিই ভালোবাসেন?’

‘এটা কোন ধরনের প্রশ্ন?’

‘জানি না। আগে তো চিৎকার দিয়ে দিয়ে বলতেন ফারিহা আমি তোমায় ভালোবাসি বাট এখন আর এসব দেখি না!’

‘আমি তো চাই না তুমি বিরক্ত হও। আগে তোমাকে বললে তুমি বিরক্তের মতো তাকিয়ে থাকতে।’

‘আমি কি আগের মতই আছি মিস্টার চৌধুরী?’

আমার কথা শুনে মুরতাসিম আমার দিকে অদ্ভূত ভাবে তাকিয়ে আছে।

‘জানো তোমার মুখে মিস্টার চৌধুরী ডাক টা আমার কাছে অনেক মধুর লাগে!’

উনার কথা শুনে আমি মুখ টিপে হাসি।

‘আমার প্রশ্ন টা এড়িয়ে গেলেন কেনো?’

‘তুমি তো আর আগের ফারিহা নও। তুমি তো আমার গায়িকা ফারিহা। আমার একান্তই আমার।’

বলেই মুরতাসিম আমাকে জড়িয়ে ধরে।

সমাপ্ত

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দূষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মনের মত করে মুরতাসিম আর ফারিহার সংসার টা সাজিয়ে দিবেন। সবাই বলবেন কেমন হয়েছে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here