হৃদরোগ #অহর্নিশা #পর্ব_সংখ্যা ১২

#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ১২

• সময় প্রবহমান, সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না। নবীনবরণ অনুষ্ঠানের পর কেটে গেছে বেশ কয়েক দিন, এই কয়েক দিন সুদেষ্ণারা কেউ কলেজ যায়নি । তার অব্শ্য কারন আছে , চনন্দননগর কলেজে সেকেন্ড সেমিষ্টার এর পরীক্ষা চলছিলো তাই সুদেষ্ণাদের ছুটি ছিলো কাল থেকে আবার কলেজ যাবে। সেকেন্ড সেমিষ্টার এর পর সুদেষ্ণাদের পরীক্ষা শুরু হবে তাই কম বেশি সবাই চিন্তায় আছে ।

বিকেল পাঁচটা তখন , সূর্য এখনো ডোবেনি,,,,,, সব পাখিরা কিচিরমিচির শব্দ করে নিজেদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে কেনোনা একটু পরেই অন্ধকার নেমে যাবে। মাসটা নভেম্বর এর শুরুর দিকে , হালকা শীত পড়ে গেছে তাই এখন দিন ছোটো রাত বড়ো । সুদেষ্ণা ছাদের কোনায় রেলিং এ হেলান দিয়ে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । মুখে তার বিষন্নতা দৃশ্যমান। দেখেই মনে হচ্ছে অষ্টাদশীর মন আজকে প্রচন্ড খারাপ । কেনো খারাপ তা সে জানে না, হয়তো জানতে চায় না। এমন সময় সিঁড়িতে কারোর পদ ধ্বনি শোনা গেল। সুদেষ্ণার তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সে তখনও একই ভঙ্গিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনা গেলো,,,,,,,,,,,

সবাই নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর তুই এখানে দুঃখ বিলাস করছিস ছোটো?,,,,,,, মিমি কোথায় বলে তো আমার মেয়েটা পাগল করে দিচ্ছে আমাকে,,,,,,,, বলতে বলতে সুতৃষ্ণা ছাদে প্রবেশ করলো এবং সুদেষ্ণার পাশে গিয়ে একই ভঙ্গিতে দাঁড়ালো।

সুতৃষ্ণার কথার কোনো উওর দিলো না সুদেষ্ণা, সে এখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি আবার আসবো তো বুনু,,,,, মন খারাপ করছিস কেনো?? সুতৃষ্ণা সুদেষ্ণার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো।

আর কয়েকটা দিন থাক না দিভাই,,,,,,

অনেক দিনই তো থাকলাম, আর কত ?,,,,, সুদিতির স্কুল আছে, উনার অফিস আছে,,,, বুঝতেই তো পারছিস। তাছাড়া আজকেই তো আর যাচ্ছি না আরো দু দিন আছি , জমিয়ে আড্ডা দেবো আর ঘুরতে যাবো। কী বলিস?

হুঁ,,,,,,, সুদেষ্ণা মলিন মুখে বললো ।

সুদেষ্ণার দিভাই বিয়ের পর বেশি আসে না এই বাড়িতে। আসে তবে দু-তিন বছর পর চার-পাঁচ মাসের জন্য । তার জন্য এখন তার শ্বশুর বাড়িই সব , তার কাঁধে সংসারের দায়িত্ব যে আছে । এই বারেও তো চার মাস থাকার কথা ছিলো কিন্তু রাহুলদার অফিসে দরকারি কাজের জন্য তাড়াতাড়ি যেতে হচ্ছে । এই কয়েক দিন সুদিতির সাথে তার বেশ ভালোই সময় কেটেছে। সুদিতি তো সুদেষ্ণা বলতে পুরো পাগল। সারাক্ষণ মিমি,,,মিমি কর আগে পেছনে ঘুর ঘুর করে ।

তুই প্রেমে পড়েছিস ছোটো??

হঠাৎ থমকে গেলো সুদেষ্ণা, চোখ পিটপিট করে তাকালো তার দিভাইয়ের পানে । সে তার দিকেই চোখ ছোটো করে তাকিয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ উওর দিতে পারলো না সুদেষ্ণা। তার দিভাইকে তো মিথ্যে বলা যাবেনা সে চট করে ধরে ফেলবে । ভয় পায় সুদেষ্ণা, যদি সত্যি শুনে তার তুলতুলে গালে চড় পড়ে তখন,,,,,,, ঢোক গেলে সুদেষ্ণা, নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,,,,,

এরকম মনে হওয়ার কারন ??

এই সময়টা আমিও পেরিয়েছি , তাই না বোঝার কিছুই নেই ।

তুইও প্রেমে পড়েছিলিস ??

একটা সময় সবাই পড়ে , আমিও ব্যতিক্রম নই।

ছেলেটা কে দিভাই??,,,,,, রাহুল দা ?

সে অতীত ছিলো আমার, রাহুল আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। সব থেকে বড়ো কথা খুশি আছি আমি রাহুল এর সাথে । মলিন হেঁসে বললো সুতৃষ্ণা , তার চোখ ছলছল করছে। দেখে মনে হচ্ছে অক্ষিকোটোর হতে এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে । দৃষ্টি লোকাতে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সুতৃষ্ণা ফের কিছুক্ষণ পর তাকালো সুদেষ্ণার দিকে, তারপর বললো , তোর ব্যাপার-স্যাপার কী ?

তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করে নেয় সুদেষ্ণা।

সুতৃষ্ণা বুঝলো , তার বোন বলতে ইচ্ছুক নয় , তাই সুতৃষ্ণা সুদেষ্ণাকে আর ঘাঁটালো না ,,,,,,,। সুদেষ্ণা নিজে থেকেই বললো,,,,,,,

ভালোবাসলে পেতেই হয় ??

ভালোবাসার অপর নাম ত্যাগ ।

পৃথিবীর এতগুলো মানুষের মধ্যে আমার যাকে ভালোলাগবে,,,,,,, তার সাথে আমার নিশ্চয়ই কিছু হবে , তাই তো আমার তাকে ভালোলেগেছে । কিন্তু তাকে মনের কথা বললে সে পাওা দেয় না কেনো??

দরকার নেই যে তোর যাকে পছন্দ হবে তারো তোকে পছন্দ হবে ।

তাহলে কী ভুল মানুষের আগমন হয়েছে আমার জীবনে ??

আমাদের জীবনে প্রতিটা মানুষের আগমন এমনি এমনি হয়না । তারা সবাই কিছু না কিছু শিখিয়ে যায় আমাদের। শোন একটা কথা বলি , যাকে যত ধরে রাখার চেষ্টা করবি সে ততো পালাবে তোর কাছ থেকে । সব সময়ের ওপর ছেড়ে দে , যা লেখা আছে তাই হবে তাতে তুই চায় কি না । বুঝেছিস,,,,,?

সুদেষ্ণা মলিন হেঁসে হ্যাঁ সূচক ঘার নাড়লো ।

অনেক হয়েছে এবার নীচে চলে , চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে ।

তুই যা আমি আসছি,,,,,।

বেশিক্ষণ দাঁড়াসনা,,,,, তাড়াতাড়ি নীচে নেমে আসবি । আমি যাই , সুদিতিকে খাওয়াতে হবে।সুতৃষ্ণা চলে গেলো ,,,,,, ।

সুদেষ্ণার তার দিভাই এর সাথে কথা বলে মনটা একটু হালকা হলো ।সুদেষ্ণা নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো , সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার পাষান পুরুষের ছবি । আর কতোদিন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম নিবেদন করবে,,,,,, অনেক তো হলো , এর একটা বিহিত করতেই হবে । সুদেষ্ণা আর পারছে না , সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছে।

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here