হৃদরোগ #অহর্নিশা #পর্ব_সংখ্যা ৮

#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ৮

• নিস্তবদ্ধ পরিবেশ, শুধু দেয়ালের ঘড়িটা ‘ঢং’ ‘ঢং’ শব্দ করে জানান দিচ্ছে সময়ের কথা । মাঝে মাঝে কয়েকটা মাছির ডানা ঝাপটানোর শব্দ কানে আসছে। ঘরের মেইন দরজা বন্ধ , লিভিং রুমের চারিদিকের জানলা খোলা থাকায় বাতাসের তীব্র বেগে “শো” “শো” শব্দ করে জানলার পর্দা উড়ছে । মাথার ওপরের ফ্যান টাও “ভন” “ভন” শব্দ করে ঘুড়ছে । ঘরের মধ্যে এই গুলো বাদেও হেমন্ত রায় চৌধুরীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে , তিনি উচ্চ আওয়াজে চিঠিটা পড়ছেন । আর রেখা মনোযোগ সহকারে তা শুনছেন । ঘরে আর একজন ব্যক্তি উপস্থিত রয়েছে, সে আর কেউ নয় হিমাদ্র । তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার মনে কী চলছে । তার দৃষ্টি আগের মতোই নীচে মেঝের দিকে „„„„„„

প্রিয় কঠিন পুরুষ ,

প্রথমেই কঠিন পুরুষ বলায় আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু কী করবো বলো তুমি যে ভীষন পাষান, কঠিন সুপুরুষ তুমি। তুমি আমার প্রিয় অসুখ , সেই অসুখের নাম জানো কী ?? #হৃদ_রোগ । জানো এই রোগে আমার মৃত্যু নিশ্চিত। তবু আমি এই রোগটাকে ভীষন ভালোবাসি ।

জানো তোমার প্রেমে পড়ে আমি লেখক ,,,,,, এই না লেখিকা হয়ে গেছি, কত শত কল্পনা জল্পনা করে তোমার জন্য কত কবিতা , গল্প লিখেছি তার ঠিক নেই। সে সব না হয় অন্য দিন বলবো, কেমন ? রাগ করো না আবার,,,,,,

আচ্ছা তোমার শার্টের বোতাম লাগানোর দায়িত্বটা কী আমাকে দেওয়া যায় না ?? তোমার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে রোজ সকালে ঘুম থেকে তুলতে চাই,,,,, সেই সুযোগ দেওয়া যায় না আমাকে ?? আমার না তোমার ওই ঘড়িটা থেকে ভীষন হিংসে হয় „„„„ কীভাবে অসভ্যদের মতো চিপকে থাকে তোমার সাথে , আমি তোমার হাতের ঘড়ি হতে চাই । বিশ্বাস করো ভীষন যত্ন করে তোমাকে আমার হৃদ মাঝারে রেখে দেবো,,,,,, থাকবে তুমি?? এই সব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমার চাই । কোনো এক গোধূলি বেলায় তোমার মুখ থেকে সব উওর শুনতে চাই ,,,,,, শোনাবে তো আমায় ???

ইতি,
তোমার বিরহে পাগল কন্যা

হেমন্ত রায় চৌধুরী চিঠিটা বন্ধ করলেন, চিঠির এক কোনায় যেখানে ছোটো করে হিমাদ্র লেখা সেখানে হাত বোলালেন। এরপর মুখ তুলে চাইলেন রেখার পানে সে “থ” মেরে তার দিকেই চেয়ে রয়েছে । তারপর তিনি ছেলের দিকে তাকালেন, ছেলে তার মনোযোগ সহকারে ফোন চাপছে । তার মানে সে এতকিছু নিশ্চয়ই শোনেনি।

চমৎকার লিখেছে বৌমা ,,,,,, কী দারুণ ভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছে । আমার মনে হয় বৌমা আদ্রকে খুব ভালোবাসে,,,,, কী বলো ?? রেখা মুখ উজ্জ্বল করে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললেন হেমন্ত রায় চৌধুরীরকে„„„,„ ।

ও তোমার বৌমা হলো কবে ??,,,,,,, হেমন্ত রায় চৌধুরী মুখ বাঁকিয়ে বললেন।

কেনো এখন থেকে,,,,,,,,আমি তো ভেবেই নিয়েছি তাকেই আমার বৌমা করবো । ,,,,,,, রেখা খুশি হয়ে বললেন।

যা খুশি তাই করো মা-ছেলে মিলে ,,,,,,, আমার কথার কোনো দাম আছে না কী তোমাদের কাছে???,,,, এই বলে হেমন্ত রায় চৌধুরী সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন।

এই আদ্র সত্যি করে বল মেয়ে টা কে?হুম ,,,,,, এই ও দেখতে কেমন?? বৌমার নাম কী রে ?? ও কোথায় থাকে?,,,, রেখা প্রফুল্ল গলায় বললেন।

মা কী শুরু করেছো তুমি?? সত্যি আমি জানি না মেয়েটা কে ,,,,,, হিমাদ্র বিরক্তি নিয়ে বললো তারপর গটগট করে বেরিয়ে গেলো ।

যা বাবাহ আমি কী করলাম,,,, দুজনে আমার ওপর রেগে চলে গেল। তবে মেয়েটার কিন্তু সাহস আছে , প্রথম দিনেই চিঠিতে সুইটহার্ট লেখে,,,,, হা হা। রেখা তুই কী সব ভাবছিস ,,,,,, নিজের মাথায় চাঁটি মেরে বললেন রেখা ।
________________________________________________

. সময় বহমান কারোর জন্য অপেক্ষা করে না । দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কেটে গেছে। চনন্দননগর কলেজে আসা দু মাস হয়ে গেছে প্রথম বর্ষের ছাএ ছাত্রীদের। ইতি মধ্যে সুদেষ্ণার ডিপার্টমেন্টে অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে। গলায় গলায় ভাব এমন নয় , ক্লাসে অল্প আধটু কথা হয় আর কি । সুদেষ্ণার দিন খুব একটা বাজে যাচ্ছে এমন নয় , সে ভালোই আছে তার জল্পনা কল্পনা নিয়ে । সুদেষ্ণা হিমাদ্রর সামনে খুব একটা পড়ে না ,,,,, তবে ভুল করে মাঝে মাঝে ঠিকি দেখা হয়ে যায় । সুদেষ্ণা মাঝে মধ্যেই চিঠি দেয় হিমাদ্রর বাড়িতে , সুদেষ্ণা এই বিষয়টা খুব উপভোগ করে । তবে মনের মধ্যে ভয় লেগেই থাকে ,,,,,, হিমাদ্র তার হবে তো ?? সে যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলে ? ,,,,, বুকটা “ধক” করে ওঠে অষ্টাদশীর । নাহ,,,, নিজের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস আছে তার। তাও কলেজের অনেক সিনিয়র এমনকি তাদের ডিপার্টমেন্টের মেয়েরাই ঘুরঘুর করে হিমাদ্রর পাশে । তারা তো হিমাদ্র বলতে অজ্ঞান। এই তো কয়দিন আগেকার ঘটনা,,,,,,,

সেই দিন সম্ভবত সোমবার ছিল, যেই স্যারের আমাদের ক্লাস নেওয়ার কথা ছিলো তিনি কিছু অসুবিধার জন্য আসেননি । কেয়া আর আমি বসেছিলাম ক্লাসেই, আরো অনেকেই বসেছিল। আমরা মেইন ক্যামপাস এ যাইনি কারন আমাদের দলের সবার ক্লাস চলছিল তাই । তো আমরা যেই ক্লাসে বসেছিলাম সেই ঘরটার জানলা থেকে স্ট্যান্ড আর ওই বট গাছটা দেখা যায় যেখানে হিমাদ্ররা আড্ডা দেয় । আমি , কেয়া আর রিতা নামের একটা মেয়ে গল্প করছিলাম,,,,,, রিতা আমার খুব একটা ভালো বন্ধু না তবে মাঝে মধ্যে কথা হয় । আমাদের গল্পের মাঝেই হঠাৎ কেয়া বলে উঠলো,,,,,, সু দেখ ওই দিদি টা মনে হয় হিমাদ্র ভাই কে পটানোর চেষ্টা করছে।

আমি তড়িৎ বেগে তাকালাম সেই দিকে,,,,, দেখলাম দিদি টা কথা বলছে আর হাঁসতে হাঁসতে হিমাদ্রর গায়ে হেলে পড়ছে । আমার বুকে হঠাৎ সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করলাম। তখন আমার ইচ্ছে করছিলো মেয়েটার মাথার সমস্ত চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলি । আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম,,,, যা ইচ্ছা তাই করুক, আমি ভাবার কে ।

একটা পাগলের ভাত নেই অন্য পাগলের আমদানি,,,,, আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম। কেয়া অসহায় চোখে তাকালো আমার দিকে তারপর আমার কাঁধে হাত রাখলো।

ভীষন রাগ হচ্ছিলো আমার তাই ভাবলাম একটু জল খাওয়া উচিৎ, সবে এক ঢোক জল মুখে নিয়েছি তারমধ্যে রিতা বলে উঠলো,,,,,,

ভাই ওই গ্ৰুপে ব্লু শার্ট পরা ছেলেটাকে দারুন দেখতে । আমি মনে হয় তাকে ভালোবাসে ফেলেছি,,,,, লাভ এট ফার্স্ট সাইট । ,,,,,,বলে লাজুক হাঁসলো ।

তৎক্ষণাৎ আমার মুখের সমস্ত জল রিতার গায়ে গিয়ে পড়লো । হ্যাঁ,,, আমি ইচ্ছা করেই ফেলেছি । কারন রিতা হিমাদ্রর গ্ৰুপের কথা বলছিলো , আর ওই গ্ৰুপে হিমাদ্রই একমাএ ব্লু শার্ট পড়েছিলো ।

কী করলি এটা ??,,,,,,, এই বলে রিতা নিজের জামা ঝারতে লাগলো ।

আমি রিতার দিকে কটমট করে তাকালাম , তারপর বললাম,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here