খুব জোরে ধাক্কা দেওয়ায় চিটকে ফ্লোরে পড়ে গেল।ফ্লোরে পড়ার সময় খাটের সাথে বাড়িও খেয়েছে।কিন্তু নাবিলের এমন জোরে ধাক্কা দেওয়ায় সামিরা হতবাক হয়ে নাবিলের দিকেই তাকিয়ে আছে।সে ভুলেই গেছে যে খাটের সাথে বারি খেয়ে মাথায় ব্যাথা পেয়েছে।নাবিল সব সময় সামিরা অপমান করে,দেখতে পারেনা,সহ্য করতে পারেনা তা ঠিক আছে।তবে কখনও যে এইভাবে ধাক্কা দিবে তা বুঝতে পারেনি সামিরা।সামিরা অবাক চোখে ফ্লোরে বসে এখনও তাকিয়ে আছে।আর সামিরার তাকানো দেখে নাবিল আরো রেগে যাই।চেঁচিয়ে বলে,
—“তোমাকে না বলেছি আমি যেখানে থাকব সেখানে যাবে না?এত কথা বলি তাও তোমার গায়ে লাগেনা।আমি যখন ভাত খেতে গেছি তখন তুমি কেন গেছিলে?”
নাবিলের চিৎকারে সামিরা হাল্কা কেঁপে উঠে।আর নাবিলের কথা শুনে বোকার মত তাকিয়ে থাকে।কিছু বলে না।এ দেখে নাবিল আরো রেগে গিয়ে বলে,
—“এমন হা করে কি দেখছ হ্যাঁ?জবাব দাও?কেন আমার আগে পিছে ঘুরো?ওহ ঘুরবে নাই বা কেন?সব সময় তো আমার কান ঝালাফালা করে ফেল “ভালোবাসি” “ভালবাসি” বলে।তোমাকে আর কতবার বলব আমি তোমাকে ভালবাসি না।আমি অন্যকেউকে ভালবাসি। তারপরেও বেহায়ার মত আমার ইনটেনশন পাওয়ার জন্য ঘরেও শুরু করে দিয়েছ বেহায়া গিরি।”
নাবিলের কথায় সামিরা কষ্ট পায়।সে যদিও নাবিলকে সব সময় ভালবাসে বলে।ভালবাসেও।কিন্তু এখন যে খাবার খেতে গেছে তখন নাবিলের ইনটেনশন পাওয়ার জন্য নয়।তারও তো খুব খিদে লেগেছিল।আর মামনি মানে নাবিলের মা নিজেই সামিরাকে ডেকে নিয়ে গেছিল তাইতো সে গেল।সামিরা শান্ত গলায় বলল,
—“আপনি যা ভাবছেন আসলে তা নয়।আমারও খিদে লেগেছিল তাই গেছিলাম।আর আমি জানতাম না আপনি আছেন।”
—“ওহ রিয়েলি?তুমি জানতে না আমি যে থাকব?এখন কি তোমার এই মিথ্যা বানোয়াট কথা আমায় শুনতে হবে?”
—“বিশ্বাস করুন আ….”
নাবিল জোরে চেঁচিয়ে বলল,
—“স্টপ।আমাদের ঘরেই থাকছ আর আমি কখন কি করি তুমি জানো না তাই না?সেটাও এখন আমায় বিশ্বাস করতে হবে?আমি যে এই রাতে সাড়ে দশটাই ডিনার করি তা কি তুমি জানতে না?তুমি তো আমার আগেই খেয়ে নিতে পারতে অথবা পরে যেতে পারতে।কিন্তু না যাওনি আমার সাথে খেতে বসবে বলে।আমার ইনটেনশন পাওয়ার জন্য।যত যাই করো না কেন?মনে রেখো নাবিল তোমার হবে না।”
বলেই নাবিল হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।নাবিলের কথা শুনে সামিরার চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।আস্তে করে ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়াল।তখনি খাটের সাথে যে বারি খেয়েছে সে জায়গায় চিনিচিন করে ব্যাথা অনুভব হতে লাগল।এতক্ষন মনে হয় ব্যাথা গুলো নাবিলের সামনে, নাবিলের কথার সামনে লুকিয়ে ছিল।আর এখন নাবিল চলে যেতেই তা চারা দিয়ে উঠল।দ্রুত ওয়াসরুমে গিয়ে মাথায় বাথা পাওয়া জায়গায় বেশি করে ঠান্ডা পানি দিল যাতে করে ব্যাথাটা কম হয়।তারপর বের হয়ে খাটে গা এলিয়ে দিল।ঘুম গেলে ব্যাথা অনুভব কম হবে তাই।
এইদিকে নাবিল নিজের রুমে গিয়ে সেই লেভেলের রেগে আছে।যদিও সে জানে সামিরার আজ কোন দোষ নেই।তবুও সে ইচ্ছে করেই সামিরাকে এত কথা শুনাল।যাতে করে সামিরা বুঝতে পারে যে নাবিল সামিরার নয়। নাবিল অন্য কারো।না এখনও নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না আসলে নাবিল কার।তবে সে একজনকে প্রচুর ভালবাসে।সে চাই তাকেই লাইফ পার্টনার করতে।তবে তাকে এখনও মনের কথাটা বলা হয়নি।নাবিলের কিছুই ভালো লাগছিল না তাই সে ছাদে চলে গেল।কালো আকাশে একটা থালার মত বড় গোল চাঁদ।তার পাশে একটা তারা।এই চাঁদটা যেন পুরো পৃথিবীর সুন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে।চারিদিকে আলো ছড়িয়ে পড়েছে।কতটা সুন্দর লাগছে ছাদ থেকে এই ব্যস্ত নগরীকে বুঝানো সম্ভব না।সাথে আছে মৃদু হাল্কা বাতাস।যা এসেই নাবিলের সারা দেহকে ছুঁয়ে দিয়ে একদম শীতল করে দিচ্ছে।নাবিল চোখ বন্ধ করে তা উপভোগ করছে।এইভাবে কিছুক্ষন থাকার পর হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠাই নাবিলের ধ্যান ফিরে।এতক্ষন যেন সে অন্য জগতে ছিল।মোবাইলটার স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে দেখল ইংরেজী গোটা গোটা অক্ষরে লিখা “পপি”। মুহুর্তেই নাবিলের ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠল এক চিলতে হাসি।
নাবিল দ্রুত কল রিসিভ করে বলল,
—” হ্যালো কেমন আছো?”
ওপাশ থেকে পপির জবাব,
—“ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”
—-“এতক্ষন ভালো ছিলাম না।তবে তুমি কল করার পর ভালো হয়ে গেছি।”
পপি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
—“কেন কেন? এতক্ষন ভালো ছিলে না কেন?”
—-“আরে আর বলো না।ওই সামিরা তো কলেজে শান্তি দেয় না।এখন ঘরেও শান্তি দেয় না।তাই কিছুক্ষন আগে কিছু শুনিয়ে দিয়ে এসেছি।”
—-“নাবিল তোমার মনে হচ্ছে না?যে তুমি সামিরার সাথে একটু বেশিই বাজে বিহেভ করছ?মেয়েটা তোমাকে কতটা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে।আর তুমি থাকে এইভাবে অবহেলা করছ।”
নাবিল বিরক্তি নিয়ে বলল,
—“আচ্ছা বাদ দাও। আমি ওর কথা বলতে চাচ্ছি না।”
পপি একটা নিশ্বাস ত্যাগ করে বলল,
—-“ওকে।”
দুইজনে আরো অনেক্ষন কথা বলল। পপির সাথে কথা বলায় নাবিলের মন একদম ঠিক হয়ে যাই।কথা বলা শেষ করে এসেই শুনে পড়ে।
চলবে…..
#হৃদয়ের দহন
#পর্ব ১
🖤সামিরা পপি🖤হ