হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি পর্ব ১০

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ১০
________________________🌸
সেদিনের পর থেকে ইয়ামিনা নিজের যতটকু সম্ভব আমিরের যত্নতে কোনো কমতি রাখে নি। সারাদিন হারভাঙা পরিশ্রম করে আমিরের সেবা করে গেছে। নিয়ম করে আমিরকে প্রতিদিন দুবেলা করে হাটাতো। দিন শেষে ইয়ামিনার কোমরে মাঝায় ব্যাথা হলে তা কখনোই প্রকাশ করত না। চেয়েও আমিরকে বুঝতে দিত না কারন আমির একবার জানতে পারলে কখনোও ইয়ামিনাকে নিজের সেবা করতে দিবে না অন্য কাউকে দিয়ে করাতো৷ যা ইয়ামিনা কিছুতেই চায় না। যাই হোক তাকে হার মানলে হবে না। আমিরকে ভালো করে তুলতে হবে। আমির মাঝে মাঝে ইয়ামিনাকে দেখে অবাক হতো এরকম মানুষ হতে পারে। এত সেবা করার পরও আমির ইয়ামিনার মুখে কখনও বিরক্তির ছাপটুকু দেখে নি। সবসময় মুখের মধ্যে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে রাখত। ইয়ামিনা কিছু না বললে আমির ঠিকই বুঝতে পেত ইয়ামিনার যে কষ্ট হয়। প্রতিদিন দু দু বার হাটানো কম কথা নয়। কিন্তু কেন জানি আমির চেয়েও না বলতে পারত না অন্য কাউকে সেবার জন্য। আমিরের যে অভ্যাস হয়ে গেছে ইয়ামিনাতে৷ ইয়ামিনার শরীরের মিষ্টি স্মেল, স্পর্শে এবং প্রতিটা কাজে। ইয়ামিনা ছাড়া আমিরের এখন কারো স্পর্শই ভাল লাগে না। তাই আমির যতটুকু সম্ভব পায়ের ভোরটা নিজে রাখা চেষ্টা করে। আমির ইচ্ছে করেই হাটতে চেত না কারন ইয়ামিনার কষ্ট হবে কিন্তু ইয়ামিনা শুনলে না জোর করে আমিরকে হাটাতো। আমির প্রতিদিন ইয়ামিনার নতুন নতুন প্রতিভা দেখে শুধু অবাক হতো। এক অন্যরকম অনুভুতিতে আবদ্ধ হতো।

সকালে আমির রুমে বসে লেপটপে কাজ করছিলো।।ফোন বাজতে ফোনটা কানে নেয়। মেজাজ একদম চটে আছে। বেশ জোরে গলায় আমির চিল্লিয়ে বলে…..
সমস্যা কি আপনাদের। শেয়ার মার্কেটের রেট এট বেড়েছে কিন্তু আমাদের কোম্পানিতে এত কম রেটে কিভাবে বিক্রি হচ্ছে।আমার পা ভেঙেছে এখনও বেঁচে আছি মরে যায় নি। আমি অফিস যায় না বলে আমার মাথার উপর চড়ে বসবেন ফাজলামি পেয়েছেন।আগে যে রেটে বিক্রি হতো সে রেটে বিক্রি হবে এর এক টাকাও বেশি না আর সব ডিটেইলস আমার ইমেইলে এখনি পাঠান। আমার প্রত্যেকটার ডিটেইলস চাই এট এনি কস্ট।
ইয়ামিনা গোসল করে বেড়িয়েছে। চুল থেকে চুয়ে চুয়ে কোমর বেয়ে পানি পরচ্ছে। ইয়ামিনা কিজানি খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমির হা হয়ে তাকিয়ে আছে আশেপাশ সব কিছু মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।
ও পাশ থেকে ম্যানেজার হেলো স্যার বলেই চলচ্ছে আমিরের যেন হুসই নেই। সব রাগ যেন কোথায় ফুস।ইয়ামিনা এতক্ষনে খুজতে খুজতে রুম থেকে বের হয়ে গেছে….
হেলো স্যার শুনতে পারচ্ছেন হেলো…..

আমিরের ধ্যান ভাঙতে বলে.. ও হ..হ্যা শুনতে পারচ্ছি আপনি আমাকে সব ডিটেইলস গুলা পাঠান কুইক… বলে আমির ফোন কেটে দেয়।
একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে ইয়ামিনাকে এইভাবে ভেজা শাড়িতে দেখলে আমিরের সব কিছু যেন উল্টপাল্ট হয়ে যায়।
.
.
.
ভাইয়া ভাবি কোথায় ভাবিকে দেখাছো।আরুশি রুমে ডুকতে ডুকতে বলে।।

আমির লেপটপে কাজ করতে করতে বলে.. একটু আগে রুমে ছিল। হবে হয়তো রান্নাঘরে…

ধুর ভাবিকে একটা কাজের জন্য খুজে পায় না।

আমির আরুশির দিকে ব্রু কুচকে তাকায়। কেন কি এমন কাজ এত লাফালাফি করছিস…

ভাবিকে নিয়ে শপিং যেতাম। ভাবিতো তেমন বাহিরে বের হয়না। আমার ফ্রেন্ডসরাও যাবে তাই ভাবলাম নিয়ে বলার আগে আমির বলে উঠে কোনো দরকার নেই তুই তোর ফ্রেন্ড যাচ্ছিস তোর ভাবিকে কেন টানচ্ছিস।

কেন দরকার নেই ভইয়া?

আমি বলেছি তাই।

এমন করো কেন ভাইয়া ভাবি তো সারাদিন বাসায় বসে থাকে কোথাও যায় না ভাবিরো তো যেতে ইচ্ছে করে। যেতে দাও না।

আমির বেশ গম্ভীর গলায় বলে…আমি একবার না বলেছি তো তার উপর কোনো কথা না।

ভাইয়া তু আরুশি কিছু বলার আগে ইয়ামিনা রুমে এসে আরুশিকে দেখে বলে উঠে… কি হয়েছে তুমি এখানে কিছু লাগবে…
আরুশি ইয়ামিনাকে দেখে ইয়ামিমার হাত ধরে.. দেখোনা ভাবি ভাইয়া যেতে দিচ্ছে না কত করে বললাম তোমাকে নিয়ে যায় তুমি সারাদিন বাসায় থাকো কোথাও যাও না কিন্তু না বলো না ভাইয়াকে যাতে তোমাকে যেতে দেয়..
ইয়ামিনা আমিরে দিকে তাকায় আমির ভাবলেশহীন ভাবে লেপটপে বসে কাজ করচ্ছে। এমন ভাব আমির যেন কিছু শুনেই নি৷

আমির আরুশি দিকে হেসে বলে… আরু তুমি যাও তোমরা ফ্রেন্ডরা তো আছেই। তোমার ভাইয়া মানা করেছে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।আমি তো আগে অনেক ঘুরেছি তাই এখন আর মন বসে না এসবে মন খারাপ করো না আরু তুমি যাও ফ্রেন্ডের সাথে এনজয় করো।
আরুশি কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।

এই নিন ধরুন আমির তাকিয়ে দেখে ইয়ামিনা এক হাতে গ্লাস আর ওষুধ নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷
আমির গ্লাস আর ওষুধ হাতে নিয়ে ইয়ামিনার দিকে তাকায় কিন্তু ইয়ামিনা মুখে কোনো রাগ দেখতে পায়না আমির ভেবেছিল যেতে না দেওয়া ইয়ামিনা হয়তো মনখারাপ করবে কিন্তু তেমন কিছুই না।

___________________🌸
ড.আবির বেশ গম্ভীর ভাব নিয়ে আমিরকে দেখে যাচ্ছে। এমন একটা ভাব যেন খুব সিরিয়াস কিছু। আমিরের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠেছে। বিরক্ত নিয়া ড.আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিরকে ঘিরে ইয়ামিনা পাশে জাফরা ভাবি বসে আছে। জাবির বিজনেসের কাজে কয়েকদিনের জন্য বাহিরে গেছে। ইয়ামিনা বেশ আগ্রহী নিয়ে বসে আছে আবিরের কথা শোনার জন্যে ।

ড.আবিরের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে… এতটা ইনপ্রুফ অসম্ভব। এটা তো মিরাক্কেল ছাড়া কিছুই না। মি.আমির দিন দিন আপনার অনেক ইনপ্রুফ হচ্ছে। এভাবে চললে আর বেশি দিন না আল্লাহর রহমতে খুব শীগ্রই হাটতে পারবেন।আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা শুনে আমিরের থেকে ইয়ামিনা বেশি খুশি হয়েছে। চোখ দুটো ছল ছল করচ্ছে। জাফরা ভাবি জাবিরকে খবর শুনানোর জন্য চলে যায়।আচ্ছা এখন তাহলে উঠি আমি ওষুধ আর হাটাটা সব যেন নিয়মিত হয় বলে ড. আবির চলে যায়।

ইয়ামিনার ফোন বাজছে সেদিকে তার খেয়ালি নেয়। আমির একটু জোরে গলায় বলে… তোমার ফোন
বাজচ্ছে অনেক্ষন ধরে ফোনটা পিক করো।

ইয়ামিনা ফোনটা পিক করে কানে নিতেই নিমিষেই ইয়ামিনার ছলছল চোখে পানি এসে ভোর করে। কান থেকে ফোনটা সরিয়ে নেয়।স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে আছে ইয়ামিনা।
আমির একটু অস্থির হয়ে পরে.. কি হলো এমন করে দাড়িয়ে আছো কেন? কে ফোন দিয়েছে কি বলেছে কি হলো বলো। আমির এখন টেনশনে পড়ে গিয়েছে… এই বলবে তো কে ফোন করেছে..
ইয়ামিনা হটাৎ ডুকরে কেদে দেয়। আমিরের সামনে হাটু ঘেড়ে বসে পড়ে…
প্লিজ আমাকে বাহিরে যাওয়ার পারমিশনটুকু দিন। আমাকে কিছুক্ষনের জন্য বাহিরে যেতে দিন। প্রমিস কিছুক্ষনের জন্য যাবো। যাবো আর আসবো।

প্লিজ রিলেক্স কি হয়েছে সেটা বলো.. দেখ চুপ করে থেকো না আরলি বলো..

ইয়ামিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠে..ব..ব..বাবা অনেক অসুস্থ। প্লিজ আমকে যেতে দিন। আমি সত্যি পালাবো না। বিশাস রাখুন। আপনি পারমিশন না দিলে গার্ডসরা আমাকে বের হতে দিবে না। আমকে যাওয়ার পারমিশন টুকু দিন। আর কোনো দিন আপনার কাছ থেকে কিছু চাইবো না।

আমিরের খুব খারাপ লাগচ্ছে সাথে একটু একটু ভয় হচ্ছে। যেতে দিতে ইইছে করছে না ইয়ামিনাকে নিজের কাজ থেকে। আমিরের যে খুব বলতে ইচ্ছে করছে আমাকে সাথে নিয়ে চলো। কিন্তু সেটা আমিরের নিতান্তই চিন্তা।

উঠো এভাবে ভেঙে পড়ো না। আমির ইয়ামিনাকে বাহু ধরে উঠতে বলে। আমির ইয়ামিনার কান্না মুছে দিয়ে এত স্ট্রোং মেয়ে এভাবে ভেঙে পরলে হবে…. আমির বেশ শান্ত গলায় বলে.. সাবধানে যেও আমাকে কল করে জানিও

ইয়ামিনা আমিরের দিকে অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে বলে.. আমি আসবো আর যাবো।বলেই ইয়ামিনা কোনো রকম উঠে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমির হাতটা অটোমেটিক বুকের পা পাশে চলে যায় .. প্লিজ রিলেক্স শান্ত হো। ক্ল্যাম ডাউন ও আসবে।।
.
.
.
.
.
এদিক দিয়ে সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলচ্ছে কিন্তু ইয়ামিনার কোনো খবর নেই। ফোন দিয়েছে আমির নিজেই কিন্তু ফোন বাজলেও রিসিভ হচ্ছে না।এদিকে আমিরের শত্তু ইয়ামিনার যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে অন্য ইয়ামিনা যদি নিজে ফিরে না আসে তখন আমির মাথা হাত দিয়ে রেখে কোনো কিছুই মাথায় সে নিতে পারচ্ছে না।

অন্যদিকে দুপুর ঘড়িয়ে বিকেল বিকেল ঘড়িয়ে সন্ধ্যা সন্ধ্যা থেকে রাত হতে চলচ্ছে আমির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে নয়টা বাজতে চলচ্ছে। কিন্তু ইয়ামিনা এখনো আসেনি। ফোনটা আগে রিং হলেও এখন বন্ধ দেখাচ্ছে। আমিরের ভেতরে ভয়টা আরও ঝেকে বসেছে। আজ নিজের নিজেরই প্রতি রাগ লাগচ্ছে৷নিজের এই অসহায়ত্বের উপর প্রচন্ড জেদ উঠচ্ছে।ইচ্ছে করচ্ছে সব কিছু ভেঙে ঘুর ঘুর করে দিতে।আমির রেগে দেওয়ালে পাঞ্চকরে একটা। তারপরও রাগ যেন কমচ্ছে। ইয়ামিনা তাহলে সত্যি ছেড়ে….না ওতো আমাকে কথা দিয়েছিল ফিরবে।। ও ওর প্রতিশ্রুতি এভাবে ভেঙে ফেলবে। না আমি আর চিন্তা করতে চায় না।
🌸

🌸

🌸

রুমে ঘুট ঘুট অন্ধকার। এই অন্ধকারটাকে আমিরের বেশ আপন মনে হচ্ছে। এই অন্ধকার যতই অন্ধকার হোক না কেন কখনও প্রতারনা করে না। সবসময় সাথেই থাকে৷ হটাৎ লাইট জ্বলে উঠলে আমিরের চোখটা ভারি হয়ে আসে। এতক্ষন অন্ধকারে থাকার কারনে চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখছে আমির।ঝাপসা চোখে ইয়ামিনার ঘামে মাখা মুখটা স্পষ্ট দেখতে পায় আমির। ইয়ামিনা আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে আমিরের সামনে দাড়ায়।

কি হলো আপনি রুমের লাইট অফ করে রেখেছেন কেন?আমির ওইযে ইয়ামিনার দিকে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে। এক মুহুর্তের জন্য চোখ সড়ায় নি৷ একটা পলকও ফেলেনি।
ইয়ামিনা কিছুবলার আগে আমির ইয়ামিনার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। টান পেয়ে ইয়ামিনা আমিরের বুকে হুমরি খেয়ে পরে। আমির ইয়ামিনার গলায় মুখ গুজে নেয়। ইয়ামিনা গলায় গরম কিছু পরার অনুভব করে। তাহলে কি আমির কাদচ্ছে কিন্তু কেন..ইয়ামিনা নিজের অজান্তেই আমিরকে জড়িয়ে ধরে….
আমির কতটা দুর্বল হয়ে পরেছে ইয়ামিনার প্রতি সেদিনই বুঝেছিল। আমির বুঝে গিয়েছিল ইয়ামিনাকে ছাড়া তার চলবে না। ইয়ামিনাকে সে নিজের গভীরে জড়িয়ে ফেলেছে।চাইলেও ইয়ামিনার ভাগ সে কাউকে দিতে পারবে না। প্রতিটা পদে ক্ষনে শুধু তার ইয়ামিনাকেই চায়। ভালোবাসা আছে নাকি আমির তখনও জানতো না। শুধু জানতো প্রতিদিন সে নতুন করে ইয়ামিনার মায়া জড়াচ্ছিল।সে মায়ার গভীরতা কতটা ভয়ংকর তা আমির হারে হারে বুঝতে পারত কিন্তু আমির কিছুই বলতে পারতো না।আমিরের প্রচন্ড রাগ উঠলে ইয়ামিনার চেহারার দিকে তাকালে সব রাগ পানি হয়ে যেত। চেয়েও না রাগ করতে পারতো না৷
.
.
.
চলবে…🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here