হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি পর্ব ২৭

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ২৭
____________________________🌸
পরনে কালো পাড়ের জর্জেট শাড়ি। মুখে হাল্কা সাজ। চুলটা কোমড় অব্দি ছেড়ে রেখেছে। বার বার ঘড়ি দিকে তাকাচ্ছে ইয়ামিনা। রাত একটা ছুই ছুই কিন্তু আমিরের আসার নামগন্ধ নেই।ইয়ামিনা অনেক বার ফোন করেছিল আমির রিসিভ করলেও কোনো কথা বলে নি। শুধু নিশ্বাসের শব্দটুকু শুনেছে ইয়ামিনা। ইয়ামিনা হাটুমুড়ে বসে বসে আছে আমিরের আসার অপেক্ষা করছে আজ যায় হয়ে যাক না কেন আমিরের রাগ ভাঙাবে। ইয়ামিনা পন নিয়ে রেখেছে আমির না আসা পর্যন্ত চোখের পাতা এক করবে না।। হাটু মুড়ে হাটুতে হাত রেখে মাথা নুয়ে জানালার দিয়ে তাকিয়ে ইয়ামিনা রাত যেন আরও বেশি গভীর মনে হচ্ছে।।

🌸

🌸

আমি রুমে ডুকে দেখে পুরো রুম অন্ধকার কিন্তু ডিম লাইটের আলোতে আভচ্ছা সব কিছুই বোঝা যাচ্ছে। আমির পুরো রুমে চোখ বুলায় রুমটাকে আজ একটু অন্য রকম লাগচ্ছে তা আমির এই অল্প রশ্মিতে ভালো করে বুঝতে পারচ্ছে।আমির ব্লেজারটা খুলে সোফার উপর রাখে। ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়াতে নিলে কেউ পিছন থেকে আমিরকে জড়িয়ে ধরে৷ আমির ভালো করে জানে স্পর্শটা তার মিষ্টিপাখির তার মানে মিষ্টিপাখি ঘুমোয় নি জেগে ছিল তার অপেক্ষায়। আমির ইয়ামিনা রাখা হাতের ওপর হাত রাখে।

__সেদিন না বুঝে আপনাকে অনেক কথাই বলে ফেলেছি। সত্যি সেদিন কি হয়েছিল আমি নিজেও জানি না আপনাকে হারানোর ভয়টা ঝেকে বসেছিল তাই ওরকম উল্টো পাল্টা বলে ফেলেছি।প্লিজ এইভাবে রাগ করে থাকবেন না আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আপনি বুঝতে পারচ্ছেন না।কি হলো এখনো চুপ করে থাকবেন..

আমির ইয়ামিনা রাখা হাত টেনে ইয়ামিনাকে নিজের সামনে নিয়ে আসে। ইয়ামিনাকে দেখে আমির কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ।এক অন্যরকম নেশা ধরে গেছে আমিরের। ইয়ামিনাকে সবসময় সাজ ছাড়াই দেখেছে আমির। ইয়ামিনা লম্বা চুল গুলো হাল্কা মৃদু বাতাসে এদিক ওদিক দুলছে। ইয়ামিনার এই হাল্কা সাজ কালো শাড়ি সব কিছুতে মনে হচ্ছে একটা পরী দাড়িয়ে আছে। চোখে তার আকুতি। এই পরীর মধ্যে যতই ডুব দিবে ততই আমিরের নেশা যেন আরও বেড়ে যাবে।
আমির ইয়ামিনার সামনে আসা চুল গুলো ফু দিয়ে সড়িয়ে দেয়।ইয়ামিনা চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়৷ আমির চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে এক পলক ভাবে তাকিয়ে দেখে ইয়ামিনার দিকে।
কিন্তু পরক্ষনে আমির ইয়ামিনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
__ভুল!! হ্যা ভুল!! ভুলই তো বলেছিলে আমাদের সম্পর্কটাকে। সব ভুল ছিল তোমার কাছে ভালোবাসা আদর আবেগ সবকিছু তো তোমার কাছে ভুল ছিল। ইয়ামিরা চোখে পানি ইয়ামিনা ফুপাতে ফুপাতে বলে…
__আমি জানি না সেদিন আমার কি হয়েছিল রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছি আপনাকে।।
___সেটা তোমার আগে ভাবা উচিত ছিল একবারও ভাবলে না তোমার এই কথা গুলো আমার কতটা বিধেছে। ইয়ামনা এখনও ফুপাচ্ছে অস্থির হয়ে আমিরের গলা ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে…বলছি তো আমার ভুল হয়ে গেছে আমি সেদিন নিজের মধ্যে ছিলাম না। আমির ইয়ামিনা হাতটা নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আমির চলে যেতে নেয় ওয়াশরুমের দিকে।।

ইয়ামিনা এখনো দাড়িয়ে আছে দুহাত দিয়ে শাড়ির দু’প্রান্ত ধরে ডুকুরে কেদে ওঠে। ইয়ামিনার কান্না শব্দে আমির থেমে যায়। খারাপ লাগচ্ছে ইয়ামিনা ভালো করে জানে আমির ইয়ামিনার কারনে অকারণে কান্না করাটা মেনে নিতে পারে না।আমির থমকে দাঁড়ায় কিছুক্ষন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুড়ে দাড়ায়। হটাৎ ইয়ামিনাকে এক টানে নিজের সাথে মিষিয়ে নেয়।

হুসসসসসসস!! পাগলি তুই আমাকে হাজারবার আঘাত করলেও যে তোর ওপর বেশিক্ষন রাগ করে থাকতে পারবো না। আমার রাগ ভাঙার ওষুধ যে তুই।। ভালোবাসি সেখানে রাগ করাটাও বেমানান দেখায়। কিন্তু অভিমান হয়েছিল অনেক বেশি সেদিনের সব গুলোকে ভুল বলেছিলে একটু কষ্ট হয়েছিল।। যাই হয়ে যাক কখনও আমার ভালোবাসাটাকে সন্দেহ করো না আমার ভালোবাসার গভীরতা অনেক বেশি যার তল খুজতে গেলে তোমাকেও যে ডুবতে হবে।
ভালোবাসি মিষ্টিপাখি বলে আমির ইয়ামিনার কপালে ঠোট ছোয়ায়।। হাত দিয়ে ইয়ামিনার চোখের পানি মুচে দিয়ে জড়িয়ে ধরে৷

কিছুক্ষন এইভাবে থাকার পর আমির নিজে বলে ওঠে…খেয়েছো কিছু
ইয়ামিনা শুধু মাথা উপর নিচ করে।
মিথ্যা কেন বলছো আমি জানি মিষ্টিপাখি তুমি কিছুই খাওনি আমার অপেক্ষায় ছিলে। আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে চলো৷

আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি রান্না করছি বলে ইয়ামিনা হাত দিয়ে চুলে খোপা বাধতে নিলে আমির ইয়ামিনার হাতটা ধরে ফেলে
___থাকুক না ভালো লাগছে বেধোনা।।

তাহলে রান্না করবো কিভাবে। হুসসসস আমি আছি তো আজ আমি রান্না করবো তুমি দেখবে।
ইয়ামিনা শুধু মুচকি হাসি দেয় একটা। আমির ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে যায় ইয়ামিনা পিচু পিচু যায় আমিরকে সাহায্য করতে। রাত ২দুটো বাজে অলমোস্ট সবাই এখন গভীর ঘুম।

“আমির রান্না করচ্ছে আর ইয়ামিনা বার বার উঁকি ঝুকি দিচ্ছে আমিরের কিছু লাগবে কিনা।
হটাৎ তেলের ছিটে এসে ইয়ামিনার হাতে কিছুটা লেগে যায়। ইয়ামিনা মৃদু শব্দ করে উঠে।
আহহহহ!!
আমির ইয়ামিনার হাতটা নিজের হাতে আলত করে চেপে ধরে। দেখেছো লেগে গেছে। বলেছিলাম না আমি রান্না করবো তুমি দুরে থাকবে। গেলো তো লেগে। বেশি জ্বলচ্ছে দাও দেখি বলে আমির কল ছেড়ে ইয়ামিমার হাতটা ধরে।
ইয়ামিনা শুধু আমিরের দিকে তাকিয়ে দেখচ্ছে। __একটু লেগেছে তেমন কিছু হয়নি।
__চুপপপপ দেখেছো হাত কতটা লাল হয়ে গেছে আমির ইয়ামিনার হাতে কয়েক টুকুরো বরফ চেপে ধরে।
ব্যাথায় ইয়ামিনার চোখে হাল্কা পানি। আমির ইয়ামিনার কপালে আলতো করে চুমু দেয়। চুপচাপ এখানে বসে থাকো একটু নড়বে না আমি নিয়ে আসছি খাবার বলে আমি রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর আমির হাতে করে বড় বাটিতে চওমিন নিয়ে আসে। মুখে আমিরের ক্লান্তি৷ ক্লান্তি মাখা স্বরে বলে…আমি চওমিন থেকে ভালো কিছু বানাতে পারি না তাই এটাই করেছি মা শিখিয়েছিল আমাকে। কি চলবে তো!!
ইয়ামিনা মুচকি হাসি দিয়ে বলে চলবে মানে দৌড়াবে বলে ইয়ামিনা ফিক করে হেসে দেয়।
আমির টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে ইয়ামিনার পাশে বসে৷ হটাৎ আমির একটানে ইয়ামিনাকে নিজের কোলে নিয়ে আসে।
ইয়ামিনা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কি করছেন আমি আমার জায়গায় বসে খেতে পারবো।
__হুসসস এত কথা বলো কেন মিষ্টিপাখি এখন থেকে তোমার বসার জায়গা হচ্ছে আমার কোল আমার কোলে বসে খেতে হবে। এখন আমাকে খাইয়ে দাও। ও নো আমি তো ভুলে গেছি তোমার হাতে লেগেছে আমি খাইয়ে দিচ্ছে বলে আমির ইয়ামিনার মুখে খাবার ধরে৷
ইয়ামিনা শুধু তাকিয়ে আছে আমিরের চোখে দিকে। তারপর আমির ইয়ামিনাকে খাইয়ে নিজে বাকি টুকু খেয়ে নেয়।
__তুমি বসো আমি সব গুছিয়ে দিচ্ছি৷
__আমি করে দিচ্ছি আপনি রুমে যান বলে ইয়ামিনা আমিরের হাত থেকে প্লেট গুলো নিতে আমির প্লেট গুলো সড়িয়ে নেয়৷
আমি বলেছিনা মিষ্টিপাখি আজ সব কাজ আমি করবো তুমি শুধু দেখবে। আমির মুচকি একটা হাসি দিয়ে সব গোছায়।

“ইয়ামিনাকে পাজা কোলে তুলে রুমের দিকে নিয়ে যায়।।। আমির শুয়ে আছে ইয়ামিনা আমিরের বুকে মাথা রেখে তখন ধরে কথা বলে যাচ্ছে। আমিরও হেসে হেসে খুব মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছে। কথা না বাচ্চাদের মত বিভিন্ন আবদার করচ্ছে তা আমির খুব সিরিয়াস ভাবে কানে নিচ্ছে।
আমির ইয়ামিনাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কথা বলতে কখন যে ইয়ামিনা ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালি নেয়।। আমির হাল্কা হেসে ইয়ামিনার নাক টেনে দেয় চুলে ছোট ছোট করে ঠোঁট ছোয়ায়। তারপর ইয়ামিনাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।।

চলবে…🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here