🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸
#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ১১
________________________🌸
আমির কতটা দুর্বল হয়ে পরেছে ইয়ামিনার প্রতি সেদিনই বুঝেছিল। আমির বুঝে গিয়েছিল ইয়ামিনাকে ছাড়া তার চলবে না। ইয়ামিনাকে সে নিজের গভীরে জড়িয়ে ফেলেছে।চাইলেও ইয়ামিনার ভাগ সে কাউকে দিতে পারবে না। প্রতিটা পদে ক্ষনে শুধু তার ইয়ামিনাকেই চায়। ভালোবাসা আছে নাকি আমির তখনও জানতো না। শুধু জানতো প্রতিদিন সে নতুন করে ইয়ামিনার মায়া জড়াচ্ছিল।সে মায়ার গভীরতা কতটা ভয়ংকর তা আমির হারে হারে বুঝতে পারত কিন্তু আমির কিছুই বলতে পারতো না।আমিরের প্রচন্ড রাগ উঠলে ইয়ামিনার চেহারার দিকে তাকালে সব রাগ পানি হয়ে যেত। চেয়েও না রাগ করতে পারতো না৷
আমির ছাদে দেওয়ালের সাথে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমির এখন ধরে ধরে দাড়াতে পারে কিন্তু হাটার জন্য ইয়ামিনার সাহায্য করতে হয়৷ ইয়ামিনা গাছে পানি দিচ্ছে আমির তা এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে। কেন জানি আমিরের ইয়ামিনার দিকে চোখ পড়লে চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না৷ ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসচ্ছে আমির।
কি হলো খারাপ লাগছে বসবেন।ইয়ামিনার কথায় আমিরের ধ্যান ভাঙে। কখন যে ইয়ামিনা আমিরের সামনে এসে দাড়িয়েছে আমিরের খেয়ালি ছিল না৷
না আমি ঠিক আছি৷ একটু হাটবো হাটাবে৷
ইয়ামিনা মুচকি হাসি দিয়ে বলে… আমাকে ধরুন শক্ত করে।
আমির ইয়ামিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ভর যথা সম্ভব আমির নিজেই রাখার চেষ্টা করচ্ছে৷ইয়ামিনা না বললেও আমির বুঝে ইয়ামিনার পক্ষে এত ভর নেওয়া সম্ভব না।বাতাসে ইয়ামিনার চুল গুলো আমিরের মুখে বার বার এসে পড়চ্ছে। ইয়ামিনা আমিরকে হাটাচ্ছে আর এটা সেটা বলচ্ছে। আমিরের সেদিকে খেয়ালিনেই আমির তো ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনার চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যাস্ত।
হটাৎ ইয়ামিনা বলে উঠে …. এই এই আপনি এখানে একটু দাড়ান।
কেন কি হয়েছে। তোমার কোথাও লেগেছে। ব্যাথা পেয়েছো।
না না আপনি দাড়ান। আমির দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে ভর রেখে দাড়ায়।ইয়ামিনা একটু কাছে যেয়ে পানির পাইপ টা হাতে নেয়। পাইপ বন্ধ করা হয়নি গাছে পানি দেওয়ার সময় খেয়ালি ছিল না। ইয়ামিনা এক হাতে পাইপটা নিয়ে একটু ঝুকে অন্য হাত দিয়ে কল্টা বন্ধ করার চেষ্টা করচ্ছে এত টাইট হয়ায় পারছে না।হটাৎ ইয়ামিনার খেয়াল হতেই পিছে ফিরে তাকায়। ইয়ামিনার হাতে পাইপ টা আমিরের দিকে মুখ করে থাকার কারনে আমির পুরো ভিজে গেছে আমির রাগি রাগি ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনার দিকে। ইয়ামিনা তারাতারি করে পাইপটা নিচে নামিয়ে ফেলে…
সরি সরি আমি খেয়াল করি নি যে পাইপের মুখটা আপনার দিকে ছিল। ইয়ামিনা আর কিছুই বলতে পারলো আমিরের অবস্থা দেখে খিল খিল করে হেসে দেয়।
আমির এতক্ষন রাগ হয়ে থাকলে ইয়ামিনাকে এইভাবে হাসতে দেখে আমিরের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। রোদ্রের মধ্যে ইয়ামিনার মুখশ্রী আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে৷ রোদের তাপে ইয়ামিনার গাল দুটো হাল্কা গোলাপি বর্ণ ধারন করেছে। ইয়ামিনাকে দেখতে ছোট্ট পুতুল লাগচ্ছে৷ আমির মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ামিনার হাত থেকে টান দিয়ে পাইপটা নিয়ে ইয়ামিনাকে ভিজিয়ে দেয়। ইয়ামিনা আমিরের এমন করাতে চমকে উঠে।
পরনে মিষ্টি কালারের কামিজটা অনেকটা ভিজে গেছে। ইয়ামিনা কোমরে দুহাত দিয়ে বলে…
এটা কি হলো পুরো ভিজিয়ে দিয়েছেন আমাকে।
এখন বুঝো আমাকে ভেজানোর সময় খেয়াল ছিল না।
আমি না দেখে আপনাকে ভিজিয়ে দিয়েছি। খেয়াল ছিল না। আর আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছেন৷ ইয়ামিনা শরীর থেকে পানি জড়াচ্ছে আর রাগে বির বির করচ্ছে
আমিরের ইয়ামিনার এইভাবে বাচ্চাদের মত ফেশ দেখে হেসে দেয়৷
ইয়ামিনা রাগ নিয়ে বলে… আপনি থাকেন দাড়িয়ে এখানে। আমি গেলাম এটাই আপনার শাস্তি।
আরে আরে শোনো রাগ করচ্ছো কেন। ইয়মিনা চলে যেতে নিলেই আমির ধরতে যেয়ে পড়ে যেতে নেয় ইয়ামিনা দৌড়ে আমিরকে নিজের সাথে ঝাপটে ধরে।
কি করচ্ছেন কি পড়ে যাবেন তো।
আমি পড়ে গেলে তোমার কি। তুমি তো আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিলে।
হয়েছে আপনার সাথে লাগার ইচ্ছে নেই আমার। ধরুন আমাকে। আমির ধরতেই ইয়ামিনা আমিরকে ধরে নিচে নিয়ে আসে।
.
.
.
কাচের জানালার সামনে গ্রিল ধরে দিহান দাড়িয়ে দাড়িয়ে বেস্ত নগরীটাকে দেখে চলচ্ছে। কত সুন্দর ভাবে ব্যস্ত দিনে এই নগরীটা মানুষকে ব্যাস্ত করে তুলচ্ছে। সবাই সবার মত করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।কিন্তু দিহান। দিহান যে আজও পারে নি ইয়ামিনাকে ভুলতে৷শুধু দিন গুনচ্ছে কখন শেষ হবে এই অপেক্ষার প্রহর। কখন ইয়ামিনাকে আবার নিজের করে পাবে।এই সময়টা যে দিহানের কাছ থেকে যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু এই অশান্ত মনটা যে অপেক্ষা করতে নারাজ।দিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা হাতে নেয়।
আপনি চেঞ্জ করে নিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে আসচ্ছি। ইয়ামিনা আমিরকে টিশার্ট দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আমির বেডের পাশে হুইল চেয়ারে বসে ছিল।আমির তোয়ালেটা নিয়ে হাত দিয়ে মাথার একসাইড মুছচ্ছে।। হটাৎ ইয়ামিনার ফোনটা বেজে ওঠে আমির মাথা মুছতে মুছতে বেডের দিকে তাকায় ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে “DG” কেউ একজন ফোন করেছে। দিজি আবার কে ফোনটা ধরবে কি ধরবে না আমির একটু চিন্তায় পড়ে যায়। ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিং হয়ে কেটে যায়। দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই আমির ফোনটা ধরে কানে নিতেই ওপর পাশ থেকে….
শুধু নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর
ইয়ুমনি…..
কি হলো চুপ করে থাকবে৷ একটা বার কি আমার সাথে কথা বলা যায় না। খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছি ইয়ু। বিশ্বাস করো তোমাকে ভাল রাখার জন্যই আমি এত কিছু করেছি। চিন্তা করো না ইয়ু খুব শীগ্রই তোমাকে নিজের করে নিব।হ্যালো
আমিরের চোখ দুটো ক্রমশো লাল হয়ে আসে।রাগে ফোনটা ফ্লোরে ছুরে মারে যার কারনে ফোনটা ভেঙে দুভাগ হয়ে যায়। আমির কিছুতেই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারচ্ছে না। রাগ লাগচ্ছে প্রচন্ড রকম রাগ৷ আমির তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে মারে।
না ইয়ামিনা ওই দিহানের কাছে যেতে পারে না।সব কিছুর সাক্ষী রেখে আমি ওকে বিয়ে করেছি। ও তো আমার। নাহহহহহহহহহ। আমার এত রাগ লাগচ্ছে কেন। হোয়াই কেন। রাগে আমিরে সমস্ত শরীর কাপচ্ছে। আ..আ..আমি কি ইয়ামিনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। রাগে আমির কপালে আংগুল ঘষচ্ছে।
এতক্ষন ইয়ামিনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেছে। পায়ের কাছে ফোনটা ভাঙা দেখে হাতে তুলে নেয়। আমিরের সামনে দাড়ায়।
ফোনটা ভেঙেছে কিভাবে..
আমির লেপটপ হাতে নিয়ে ওপেন করতে করতে বলে… আমি কি জানি পড়ে গেছে হয়তো।
পড়ে যাওয়ার তো কথা না আচ্ছা যাই হোক আপনাকে বলে গিয়েছিলাম ভেজা চুলে না থাকতে। মাথাটাও ঠিক ভাবে মুছতে পারেন না । চুল থেকে টপ টপ পানি পড়চ্ছে।
আমির কোনো কথা না বলে লেপটপে কাজ করেই চলচ্ছে । ইয়ামিনা বিছানা থেকে তোয়ালেটা হাতে নিয়ে আমিরের মাথা মুছতে শুরু করে।
ইয়ামিনার হাতের স্পর্শে আমির চোখটা বন্ধ করে নেয়।
ইয়ামিনা তখন ধরে কথা বলে চলচ্ছে। ইয়ামিনা আমিরের সামনে দাড়িয়ে লেপটপটা হাত থেকে নিয়ে নেয়। কি হলো আমি কিছু বলচ্ছি আপনি কি শুনতে পারেন নি। আচ্ছা বেশ শুনা লাগবে না খেতে চলুন।
আমির চুপ করে শুধু ইয়ামিনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
_________________________🌸🌸
আমির চুপচাপ বসে খাচ্ছে আর ইয়ামিনা খাবার বেড়ে দিচ্ছে আমিরকে। ইয়ামিনা ভালই করেই বুঝচ্ছে আমিরের কিছু নিয়ে রাগ উঠচ্ছে কিন্তু কারন কি ইয়ামিনার জানা নেয়।
দূর থেকে কেউ একজন লোলুপ দৃষ্টিতে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে ইয়ামিনার খেয়ালই নেয়। হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।লোভ কাতুরে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনাকে একটিবার কাছে পাওয়ার নেশায়।।
.
.
.
চলবে……🌸🌸