হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি পর্ব ২৫

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ২৫
__________________________🌸
ইয়ামিনা পা টিপে টিপে রুমে খাবার নিয়ে ঢুকে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে আমির আছে কিনা।আমিরকে কোথাও না পেয়ে খাবার রেখে দ্রুত চলে আসতে নিলে কেউ পিছন থেকে ইয়ামিনাকে জড়িয়ে ধরে।ইয়ামিনা ভালো করেই বুঝতে পারচ্ছে স্পর্শটা কার।আমির ইয়ামিনার ঘাড়ে থুতনি রেখে আদুরি গলায় বলে….

কি হয়েছে মিষ্টিপাখি। রাগ করে আছো। আমি কিছু করেছি।। তোমার মুখটা এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেন।কেউ কিছু বলেছে বলো আমায়।

ইয়ামিনা কোনোরকম আমিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা হয়ে কিছুটা দূরে দাড়ায়।। আমির কিছুটা ব্রু কুচকে ইয়ামিনার দিকে তাকায়।
____কি হলো মিষ্টিপাখি।

আমির ইয়ামিনার এমন করাতে কিছুটা কষ্টপেলে মুখে মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ামিনার হাত ধরতে নিলে ইয়ামিনা কিছুটা দূরে সরে যায়।
___আ..আপনার খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে নিন।

আমির কিছুটা অবাক হয় গম্ভীর স্বরে বলে… আমি তোমার হাতে খাবো আমাকে খাইয়ে দাও। না হলে দরকার নেই নিয়ে যাও খাবার। আমিরের কিছুটা অভিমান হয় সকাল ধরে ইয়ামিনার এমন আচরণ করে আসচ্ছে। আমির আর কিছু না বলে বারান্দায় চলে যায়।।।

ইয়ামিনা ঠায় দাড়িয়ে আছে আমিরের মুখের দিকে তাকালে সব যেন গুলিয়ে ফেলে। আরও বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।ওই কালো দুই নয়নে ইয়ামিনার জন্য অতল সুমুদ্র ভালোবাসা দেখতে পায়।আমিরের ওই চোখে ইয়ামিনা নিজেকে খুজে পায় তাহলে এই নিষ্পাপ চেহারার পিছনে এত বাজে কাজ লুকিয়ে থাকতে পারে । ইয়ামিনা মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আমিরের এই ভালোবাসা আদর সব মিথ্যে নাকি ওই ইশিতা আমির ইয়ামিনার মাঝে বেড়া দিতে চাচ্ছে। ইয়ামিনা আর কিছু ভাবতে পারচ্ছে না রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা আরুশি রুমে চলে যায়।।।



আরুশি খাটের ওপর ভোর দিয়ে পা দুইটা উপরে তুলে বই পড়ছিল।। ইয়ামিনাকে দেখে উঠে বসে। ভাবী তুমি!! আসো বসো।।
____কি করছিলে আরু। ভাবলাম তোমার সাথে কিছুক্ষন গল্প গুজব করে সময় কাটিয়ে দেয় ডিস্টার্ব করে নি তো আবার।
____কি যে বলো না ভাবী ডিস্টার্ব কেন করবে আমি তো একা একা আরও ভোর হচ্ছিলাম ভালো হয়েছে তুমি এসেছো। আমি তো ভেবেছি ভাইয়া বাসায় বলে তুমি রুম থেকেই বের হবে না বলে আরুশি ইয়ামিনার কাধে হাল্কা ধাক্কা দেয়।।

__নোনদজি দিন দিন পাজি হয়ে যাচ্ছো।অন্য কিছুতে মন না দিয়ে পড়ালেখায় মন দাও।।

__কিন্তু ভাবি যায় বলো ভাইয়া যে ভাবে ইশিতাকে কথা গুলো শুনিয়েছে আমার তো ওইখানে নাচতে ইচ্ছে করছিলো। এক নাম্বার ঢঙি কথাকার।

ইয়ামিনা আমিরের আগে রিলেশনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে যদি আরুশি উল্টো পাল্টা কিছু মনে করে ফেলে সে নিয়ে ইয়ামিনা দিধাদন্ডে ভুগছে।

“এদিকে আমিরের অভিমানের সাথে সাথে রাগ যেন তর তর করে বাড়ছে। রাগে গ্রিলে একটা বারি দিয়ে রুমে চলে আসে। এসে মাথায় রাগ যেন আরও চটে গেছে খাবার ওই ভাবে পড়ে আছে। আমির রাগে রুম থেকে বের হয়ে সোজা আরুশির রুমের দিকে হাটা দেয়। কারন আমির ভালো করে জানে ইয়ামিনা এসময় আরুশি রুম ছাড়া অন্য কোথাও যাবে না।

আমির সোজা রুমে ঢুকে ইয়ামিনার হাত ধরে, আরুশি কিছুটা অবাক হয় সাথে চমকায়।
___কি হলো ভাইয়া কিছু লাগবে। ভাবি আ..আরুশিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইয়ামিনার হাত ধরে টেনে উঠায় ইয়ামিনা হাত ছাড়াতে চেয়েও ছাড়ালো না কারন সামনে আরুশি।
আমির চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে ইয়ামিনাকে রুমে নিয়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দেয়…

আমির গিয়ে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়।ইয়ামিনা কিছুটা ভয় পায়। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠে…দ..দ..দরজা লাগাচ্ছেন কেন। আমি বাহিরে যাবো আমার কাজ আছে বলে ইয়ামিনা যেতে নিলে আমির হেচকা টান দিয়ে ইয়ামিনাকে নিজের সামনে দাড় করায়।।আমির বেশ শান্ত কণ্ঠে বলে..
___ সত্যি তুমি বলবে নাকি আমি বের করবো আমি বের করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।কি হয়েছে বলো সকাল ধরে দেখছি আমাকে ইগনোর করছো।।
___বললাম তো কিছু হয় নি। আমাকে যেতে দিন
___তুমি আমাকে না বলে একপাও এখান থেকে সড়াবে না। কি হয়েছে আমাকে বলো। আমি এমন কিছু করেছি থাকলে প্লিজ মিষ্টিপাখি আমাকে বলো আমি শুধরে নিব।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার এই ইগনোরেন্স আমি আর নিতে পারচ্ছি না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এপাশটায়। আমির ইয়ামিনার কোমড় শক্ত করে ধরে নিজের বাহু ডোরে আবদ্ধ করে নেয়।

___বলছি তো কিছু হয়নি প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
ইয়ামিনা নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে চলছে কিন্তু এক চুলও নড়তে পারচ্ছে না।।
___আমি না ছাড়লে এই বাহুডোর কেন এই আমিরের জীবন থেকে ছাড়া পাবে না। প্লিজ মিষ্টিপাখি জেদ ধরো না বলো আমি কি কিছু করেছি। কষ্ট দিয়েছি। এমন কিছু বলে ফেলেছি যা আমার বলা উচিত হয় নি বলো আমায়। আমার ভুলটা কোথাও…ইয়ামিনা তখন ধরে ছোটাছুটি করছে আর ওই ছবি গুলোর কথা চিন্তা করে রাগ আরও বেড়ে যায়। রাগে আমিরকে জোরে ধাক্কা মারে৷
ঘটনা আকস্মিক ভাবে আমিরের হাত আলগা হয়ে আসে আমির দু পা পিছিয়ে পড়ে।।
হ্যা হ্যা হ্যা ভুল করেছি সেটা আপনি না আমি আপনাকে ভালোবেসে আপনার মিথ্যে ভালোবাসায় পড়ে কাল রাতে যা কিছু হয়েছিল সবই আমার ভুল ছিল। সব জেনে আমি ভুল করেছি আপনাকে সব কিছুর অধিকার দিয়ে ভুল করেছি বলে ইয়ামিনা ডুকরে কেদে ওঠে।।

আমির নিজেকে সামলে হাতের মুঠ শক্ত করে ইয়ামিনার দিকে করুন চোখে তাকায়।। ইয়ামিনা কাধ ধরে ধরা গলায় বলে …ভুল!কি সুন্দর করে বলে দিলে আমার ভালোবাসায় ভুল ছিল। আমার ভালোবাসাকে সন্দেহ করছো। তুমি যদি রাগ দেখিয়ে বকাঝকা করতে আমি কিছুই বলতাম না আদর দিয়ে সব ভুলিয়ে দিতাম। কিন্তু তুমি হাহ!! তোমার এই কথা গুলো আজ তীরের মত আঘাত করছে ।আর এই কাল কিসের ভুলের কথা বলছো ভালোবেসে আপন করেছিলাম তোমাকে। আমাদের মাঝের সম্পর্ক পূর্ণ করেছিলাম। ভুল বলে সম্পর্কটাকে অপবিত্র করে দিলে একবারও দেখলে না আমার ভালোবাসাটা।আরে ভালোবাসার পুরো রাজ্যটা তোমাকে দিয়েছিলাম। তোমার মনে এত তিক্ততা ছিল যে আমার ভালোবাসাটাই দেখতে পারো নি। বিশ্বাস করতে পারো নি।

বলে আমির পাশের চেয়ার লাথি মেরে দরজা খুলে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে। চেয়ারটা ভেঙে দু খন্ড হয়ে গেছে। ইয়ামিনা ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। দু হাটুতে মুখ গুজে ফুফিয়ে কেদে ওঠে।।
.
.
.
চলবে…🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here