হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি পর্ব ১

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#আদিলা

#পর্বঃ১
বধু বেশে বসে আছে গোলাপে সজ্জিত বিছানায় ইয়ামিনা। সামনে লম্বা গোমটা টানা।।চোখে টলটলে পানি নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।।। কি সুন্দর করে রুমটা সাজানো চোখ ধাধানো মত করে।।কিন্তু ইয়ামিনার মন কালো মেঘের গভীর আচ্ছনে ঢাকা।। এই দিনটার কতই না প্রতিক্ষায় ছিল তার সব সপ্ন যেন চোখের নিমিষেই গুর গুর করে ভেঙে গেল..কাল অবধি সবই তো ঠিক ছিল কেন এমন করলে দিহান…কেন কেন কান্না গুলা যেন বাধ মানছে না…অনেক কষ্টে আটকে রেখেছে।। কান্না করাও যে আজ থেকে বারন হয়ে গেছে।। আমি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে চলে আসতে চেয়েছিলাম আপনার কাছে… তো কেন ফিরিয়ে দিলেন আমায় এভাবে.. আপনার পায়ে শেষ ঠাইটুকু আমাকে দিলেন না….
তখনি দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ইয়ামিনা গুটিসুটি মেরে বসে পরে..চোখ তুলে তাকানোর সাধ্যটুকু নেই…

একজন সার্ভেন্ট এসে আমির কে দিয়ে দরজা লক করে চলে যায়… ঘরে যেন কিছুক্ষনের জন্য পিন পিন নিরবতা বিরাজ করছে… ইয়ামিনার মনের মধ্যে ভয় যেন ঝেকে বসেছে.. নিশ্বাসের গতি যেন বেড়েই চলছে.. হটাৎ বিকট আওয়াজে ইয়ামিনার বুক যেন কেপে ওঠে।।ধীরে ধীরে রে ঘোমটা টা উপরে উঠিয়ে সামনে তাকায়.. তাকিয়ে দেখে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার কাচ যেন ভেঙে গুরিগুরি হয়ে পুরো ফ্লোরের আনাছে কানাচে ছিটিয়ে আছে…

একজোড়া রক্তবর্ন চোক্ষু হিংস্রভাবে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনার দিকে….চুল গুলো বেশ এলোমেলো হয়ে আছে..চোখে মুখে হিংস্র ভাবে সাথে ক্লান্তির ছিটে রয়েছে…

বেশ শান্ত কন্ঠে আমির বলে… কেন করলি আমার সাথে এমন… টাকা.. টাকার জন্য এমন করেছিস আমার সাথে।। কত টাকা চায় বল আমাকে….. বলেই চিৎকার দিয়ে ইয়ামিনার দিকে টাকার বান্ডিল ছুরে মারে।।। শুধু তোর কারনে আমার এই অবস্থা।যাকে এক নামে সব মানুষ তার কথায় উঠত বসত।। এই,, এই “ওয়াসি আবরার আমির” আমি আজ আমার সব থেকেও আমি নিস্ব।। নিস্ব করে দিলি আমাকে একপলকে।। আজকে শুধু তোর কারনে আমার ইশিতা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে শুধু মাএ তোর জন্যে… বলে হাতের কাছে ফুলদানিটা ইয়ামিনার পায়ের সামনে ছুরে মারে…
ইয়ামিনা ভাল করে আবাস পেয়েছিল এমন কিছু হবে..কপাল থেকে গলা বেয়ে ঘাম টপ টপ করে পরছে..মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। গোলার মধ্যে যেন সব কিছু ধলা পাকিয়ে ফেলেছে কিছু বলতে চেয়েও পারল না…
আমির হাতে কাছে যা পাচ্ছে সব ভেঙে চলছে আজ তার মনটা ভেঙে চুরমার হয়েছে যখন সে জানতে পেরেছে সে কখনও হাটতে পারবে না সারাজীবন তাকে এই হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলতে হবে তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে যখন ইশিতা তাকে ছেড়ে চলে গেছে।। অন্তর যেন দুমরে মুচরে যাচ্ছে।। আজ যেন নিজেকে সব থেকে একা মনে হচ্ছে.. হ্যা চলে গেছে ইশিতা তাকে ছেড়ে। চলে গেছে যখন জানতে পেরেছে আমির আগের মত হাটতে পারবে না..সারাটা জীবন তাকে এই হুইল চেয়ারের সাহায্য চলতে হবে.. স্বার্থপরের মত চলে গেছে আমিরকে ছেড়ে…

আমির ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পরে.. খুব ক্লান্ত সে খুব।। এই দুনিয়া মানুষ গুলোকে এইভাবে বদলাতে দেখে সে আজ বড্ড ক্লান্ত।। যাকে সব দিয়ে ভালবেসেছে যাকে ধরে আকরে বাচতে চেয়েছে সেই চলে গেছে..
আমির কোনো রকম নিজেকে শান্ত করে.. কোনো রকম রক্তমাখা হাতে হুইল চেয়ারটা ধরে বিছানার দিকে এগোয়..একটা শান্তি ঘুম প্রয়োজন এই অশান্ত মনটাকে শান্ত করার জন্য…বিছানার কাছে যেয়ে যেন উঠতে পারছে না আমির।। আজ সে আপাইজ.. নিজের অন্তর থেকে হা হাকার আসছে।। শত চেষ্টা করেও আমির বার বার ব্যর্থ হচ্ছে.. বিছানার চাদরে হাত রাখতেই এক জোড়া শীথিল হাত তাকে আগলে ধরে.. উপরে তাকাতে ওই নীল নীল চোখে যেন ডুবে যায়…

রাগ জেদ ঘৃনা সব তো আমার উপরে….এটার উপর রাগ দেখিয়ে লাব নেই….
আর জেদ না ধরে শক্ত করে ধরুন আমাকে।। ইয়ামিনা পরম যত্নে আমির কে উঠিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।। সাথে কোম্বলটাও টেনে দেয়..আমিন বেশ ক্লান্ত কথা বলার শক্তিটুকু নেই তার মাঝে।চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় পরম আবেসে…

ইয়ামিন ফ্লোরে পরে থাকা কাচের টুকরো গুলো তুলে ভালভাবে মেঝটা পরিষ্কার করে নেয়।।বারান্দায় গিয়ে গ্রিলে হাত রাখে।। আজ আকাশটা কে বড্ড আপন আপন লাগছে।। কিভাবে এই অন্ধকারে চাদের কিরন ছোড়াচ্ছে… ইয়ামিনার গাল বেয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরে..কেন দিহানজি কেন সবই তো ঠিক ছিল… আপনার কাছে ভালবাসার ভিক্ষা চেয়েছিলাম এতটা ঠুনকো ছিল আমাদের ভালবাসা…কেন তুলে দিয়েছিয়েছিলেন এই অন্ধকার জীবনে.. যেই লোকটা কে কোনো দিনও দেখি নি জানিনা চিনি না তার হাতে কিভাবে তুলে দিলেন..কিভাবে ভাবলেন আমি খুশি থাকব..আমি তো আপনার মত স্বার্থপর নয় আপনার খুশিতেই তো আমার খুশি…আপনি তো বলেছিলেন আমি অনেক সুখে থাকবে অনেক সুখে রাখবে আমাকে। হ্যা আমি সংসার করব ওয়াসি আবরার আমিরের সাথে সংসার সবটুকু দিয়ে আগলে রাখব..কারন আপনার খুশিতেই আমার খুশি…আপনি তো তাই চেয়েছিলেন…

ইয়ামিনা বেলকনি থেকে রুমে এসে গুটিসুটি পায়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পরে..

🌺🌺🌺

সকালে ফজরের আজানে ইয়ামিনার ঘুম ভাঙতে বিয়ের আভিজোর ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজে দাড়ায়…মোনাজাতে আল্লাহর কাছে অনেক কিছু বলে..নামাজ শেষ করে কান্না জোড়া চোখে বিছানায় তাকাতে দেখে আমির এখনো ঘুমিয়ে আছে.. কি নিষ্পাপ চাহনি।। কতটা কষ্ট লুকিয়ে আছে এই মানুষটার মনে কেই বলতে পারবে না…ইয়ামিনা ঠিক হয়ে রুম থেকে বের হতেই জাফরা কে দেখতে পায় আমিরের বড় ভাবি উনি….এই বাসায় শুধু আমিরের ভাইয়া ভাবি থাকে আর তাদের আদরের ছোট বোন আরুশি। অনেক ছোট বেলায় আমিরের মা মারা যায় এর কিছু দিন পরই বাবাও তাকে ছেড়ে চলে যায়… ইয়ামিনা ডাইং টেবিলের কাছে যেতেই জাফরা মুখটা গম্ভীর করে ফেলেন..
.
.

চলবে… 🌸🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here