হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -১৪+১৫

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
আবারও ব্যাস্ত জীবন। শনিবারটা প্রিয়ার পুরো অলস কেটেছে সবসময়কার মতোই। তরুণীমা বেগম, তামান্না, ফিহা ও তুতুলের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল একবার। জারিফ চাচ্ছে প্রিয়ার এই সেমিস্টারটা শেষ হলে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হবে। আজকে জারিফের ক্লাস আছে তা ভাবতেই প্রিয়ার শরীরে শীতল হাওয়া দোল দিয়ে যায়। অস্বস্থিতে ক্লাস কি করে করবে তাই বুঝে আসছে না। ভার্সিটিতে যাওয়ার পর একটা ক্লাসের পর অর্ষা, নিশি, মিমরা ওকে ঝেঁকে ধরেছে। প্রশ্নের বাহারে অতীষ্ঠ হয়ে প্রিয়া বলে,

“আমি কি জানতাম নাকি? ভাইয়া এসবের পিছনে। যদি কেউ জানতো তবে সেটা জারিফ স্যার। আমি তো বাবা-মায়ের পছন্দে হ্যাঁ বলেছি মাত্র।”

“রেগে যাচ্ছিস কেনো দোস্ত? আমরা একটু ফান করছিলাম।”

প্রিয়ার রূঢ় শব্দের বিপরীতে অর্ষার নরম স্বরে শান্ত হলো প্রিয়া।

“সরি। আসলে আজকের ক্লাসটা নিয়ে টেনশন হচ্ছে। আমি দেড় ঘণ্টা কিভাবে ক্লাসটা করব বুঝতে পারছি না।”

মিম এসে প্রিয়ার পাশে বসে বলে,
“ক্লাসের সময় স্যারের সাথে অ্যাই কন্টাক্ট করবি না। কি কি পড়াচ্ছে সব নোট করবি। দেখবি দেড় ঘণ্টা নিমিষেই পেরিয়ে যাবে। আমরা বাদে আর কেউ বিষয়টা এখন না জানাটাই বেটার। যেহেতু সেমিস্টারের পর ফাংশন করবে তাই তখন নাহয় সবাই জানুক।”

নিশি বলে,
“কতোদিন আড়াল থাকবে তাই দেখার বিষয়। তবে স্যার যে তোর হাসবেন্ড আবার তোর ক্লাসও নেয় এটাতে অন্যরা ভাবতে পারে স্যার তোকে কারচুপি করে হেল্প করবে। তাই এখন বিয়ের ব্যাপারটাই আড়াল থাকা দরকার।”

প্রিয়া দুশ্চিন্তায় পরে যায়। প্রিয়াও ভাবে তিনটা মাস এড়িয়ে গেলেই হবে।

জারিফের ক্লাসে প্রিয়া একটু কর্নার ও পেছোনের দিকে বসেছে। জারিফ ক্লাসে ঢুকে সবার দিকে নজর বুলিয়ে প্রিয়াকে পেছোনে বসতে দেখে মনে মনে হাসে। তারপর ক্লাসে মনোযোগ দেয়। আজকে ক্লাসে আর সে প্রিয়াকে অধিক অস্বস্থিতে ফেলল না। প্রিয়াও জারিফের সাথে অ্যাই কন্টাক্ট অনেকটা এড়িয়ে গেছে শুধু একবার চোখে চোখ পরে যাওয়াতে প্রিয়া থতমত খেয়ে গেছিলো। ক্লাস শেষে জারিফ চলে গেলে প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এতক্ষণ একটা গুমোট অনুভূতি বিরাজ করছিল প্রিয়ার হৃদয় জুড়ে।

জারিফ নিজের অফিসরুমে যেতে যেতে প্রিয়মকে মেসেজ করলো,

“তোর বোনের কন্টাক্ট নাম্বারটা দিস।”

মেসেজ করেই পরের ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। এখন প্রিয়মের লাঞ্চটাইম তাই মেসেজটা দ্রুত দেখবে জানে জারিফ। হলোও তাই। প্রিয়ম বিপরীতে একটু হাসি-ঠাট্টা করে মেসেজ করে,

“আমার বোনের কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে তুই কী করবি? সে ম্যারিড তাই তার সাথে চান্স নেওয়ার চেষ্টা করিস না!”

জারিফ মেসেজটা দেখে হাসলো অতঃপর লিখলো,

“ওকে বন্ধু। তোর বোনের সাথে কেউ চান্স নিবে না। এবার কি নাম্বার পাবো?”

“নে দিয়ে দিলাম। এতো ইনসিস্ট করছিস যেহেতু!”

জারিফ নাম্বারটা নিয়ে সেভ করে নিলো।

________

সব ক্লাস শেষে প্রিয়া বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আছে। আজকে আয়ান নেই। ছেলেটা ক্লাস মিস দেয় না। নিশি রাদকে জিজ্ঞাসা করে,

“কীরে? আয়ানটা কই আবার? সে তো ক্লাস মিস দেয় না। হুট করে আজকে ক্লাসে এলো না। শরীর খারাপ নাকি?”

রাদ মলিন হাসে। আয়ান যে কেনো আসেনি তা সে আর সাদ জানে। আয়ান গতকাল রাতে একা একা সাজেক ট্যুরে গেছে। রাদ বলে,

“আয়ান সাজেক গেছে।”

মিম অবাক কন্ঠে বলে,
“আমাদের বলল না! আর একা গেলো?”

সাদ রাদের দিকে তাকিয়ে তারপর মিমকে বলে,
“ওর কাজ পরেছে। জানিসই তো ওর বাবার সাজেকে একটা হোটেল আছে। যেহেতু কাজে যাব। তাই একটু ট্যুর দিয়ে আসবে। হুট করে প্ল্যানিং তাই তোদের জানায়নি। আমরাও সকালে জেনেছি।”

“ওহ। ”

এবারের মতো কথা কে*টে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ওরা। হাঠাৎ প্রিয়ার ফোন বেজে উঠলে স্ক্রিনে আননোওন নাম্বার দেখে কল কে*টে দেয়। আবারও কিছুক্ষণ পর কল আসলে প্রিয়া আবারও কা*টে। তৃতীয়বার ফোন আসলে প্রিয়া এবার কটমট দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকায় তারপর রিসিভ করে বলে উঠে,

“কে ভাই আপনি? কে*টে দিচ্ছি তাও কল করেই যাচ্ছেন!”

জারিফের হাসি পেলেও কন্ঠে গম্ভীর্যতা প্রকাশ করে বলে,

“আমার অফিসরুমে এসে দেখা করো। কুইক।”

প্রিয়া মুখ বাঁকায় তারপর ফোনটা চোখের সামনে ধরেও নাম্বারটা চিনতে অসমর্থ হয় কিন্তু গলার স্বর চেনা চেনা ঠেকছে। প্রিয়া বলে,

“কে আপনি? আপনার অফিসরুমে আমি যাবো কেনো? আজব!”

“তো কি বে*ডরুমে যাবে?”

চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায় প্রিয়ার। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক। মেয়ের ভয়েস শুনেই বাজে কথা শুরু! বাড়িতে কি মা-বোন নাই?”

জারিফ নিরব হাসলো তারপর বলল,
“মা আছে। কাজিন বোনও আছে। নতুন বিয়ে করলাম তাই বউও আছে। আর এই মূহুর্তে আমি আমার বউয়ের সাথেই কথা বলছি আর সে আমাকে অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক বলছে!”

প্রিয়া হতবাক হয়ে যায়। ফোনটা কে*টে দেয়। তারপর কিয়ৎ ভেবে বলে,

“তোদের কারও কাছে জারিফ স্যারের নাম্বার আছে?”

সাদ বলল,
“আছে। কেনো?”

“দেখা তো।”

সাদ কল লিস্ট থেকে নাম্বারটা দেখালে প্রিয়া একটু আগের নাম্বারের সাথে মিলিয়ে দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে বলে,

“ইশ! উনি আমাকে ফোন করেছিল আর আমি তাকে কতোকিছু বলে দিয়েছি। এখন কি করব!”

অর্ষা বলে,
“স্যার তোকে ফোন করেছিল? আর তাকে তুই অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক এসব বলছিস! বোকা নাকি তুই! কন্ঠ শুনেও বুঝিস নি?”

“নারে ভাই। বুঝলে কি বলতাম নাকি। কেমন ভরাট কন্ঠস্বর লাগছিল। সে আমাকে তার অফিসরুমে যেতে বলল।”

“তো যা। দরকার আছে বলেই বলেছে।”

নিশির প্রতিউত্তরে প্রিয়া চুপ করে গেলো। যেতে বলেছে তো না গেলে কেমন দেখায়! প্রিয়া গেলো। এদিকে জারিফ কলম হাতে নিয়ে প্রিয়ার রিয়াকশনগুলো ভেবে নিঃশব্দে হাসছে। মিনিট দশেক পর প্রিয়া এসে জারিফের অফিসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ঢোক গিলে। যা বলেছে ওসব বলা ঠিক হয়নি। সরি বলে দিবে। প্রিয়া দরজায় নক করলে ভেতর থেকে জারিফ ওকে আসতে বলে। প্রিয়া রুমে প্রবেশ করে সালাম দিয়ে বলে,

“সরি! আমি বুঝতে পারিনি ওটা আপনার নাম্বার।”

“ইটস অকে। অচেনা কারও সাথে এমন বিহেভ হবে আমি বুঝি। সো কুল। তোমাকে যে জন্য ডাকা, প্লিজ সিট।”

প্রিয়া বসলে জারিফ বলে,
“দেখো, লেকচারার হিসেবে জয়েন করার আগে আমি বা তুমি কেউ জানতাম না আমাদের ভাগ্য এভাবে বদলাবে। এমনকি তোমাদের ক্লাস নেওয়ার আগেও না। আমার পরিবার যে তোমাদের বাড়িতে যাবে তাও জানতাম না। তুমিই যে প্রিয়মের বোন তাও জানতাম না। সব যখন ধাপে ধাপে হলো তখন নিমিষেই মানা করলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হতো। আমি চেয়ারপার্সন ও কয়েকজন সিনিয়র ফ্যাকাল্টির সাথে কনসাল্ট করেছিলাম। তারা আমাকে পজেটিভ বলেছে বলে আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু এই সেমিস্টারে বিয়ের খবর ভার্সিটিতে না ছড়ানোই ভালো। শুধু শুধু বাকি স্টুডেন্টদের মধ্যে কনফিউশন হবে। এরপরের মেমিস্টার থেকে আমি তোমার কোনো ক্লাস নিবো না। আশাকরি তুমি বুঝবে। আর ক্লাসে নরমাল বিহেভ করবে। ক্লাসে আমি জাস্ট তোমার কোর্স লেকচারার। নাথিং এলস।”

প্রিয়া মন্ত্রমুগ্ধের মতো জারিফের কথা গুলো শুনছিল। লোকটার যে সবদিকে খেয়াল আছে প্রিয়ার কিছুটা বুঝে আসছে। প্রিয়া মৌন সম্মতি দিলে জারিফ বলে,

“ঠিক আছে। তাড়া থাকলে যেতে পারো নয়তো আমার সাথেও ফিরতে পারো।”

“না না স্যার। আমি যেতে পারব। ধন্যবাদ।”

প্রিয়া বিদায় নিয়ে চলে আসে। কিছুটা শান্তি শান্তি লাগছে ওর কাছে। জারিফের এই সাইলেন্ট কেয়ার গুলো প্রিয়ার মনে বেশ প্রভাব ফেলছে।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
জারিফের বিয়ের কথা শুনে মুন্নি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। দুপুরে কোচিং থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসে মাকে চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে থাকতে দেখায় জিজ্ঞাসা করেছিল আর তখনি জানতে পারে জারিফের বিয়ের কথা। জমিলা বেগম নিজেও জারিফের বিয়ের খবর কিছুক্ষণ আগেই জেনেছেন। নিজে স্বেচ্ছায় ফোন দিয়ে আপডেট জানতে চেয়ে জানতে পারেন। এখন একমাত্র মেয়ের পাণ্ডুর মুখশ্রী দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে। তিনি মনে মনে ঠিকই জানেন মেয়ের মনের খবর। মুন্নি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে দৌঁড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। জমিলা বেগম মেয়ের কাণ্ডে হতভম্বি হয়ে দেখলে মনে কিঞ্চিত শঙ্কার উপস্থিতি এলে মেয়ের রুমের দিকে ছুটেন। দরজায় কয়েকবার করাঘা*ত করলে ভেতর থেকে কান্নাজরিত কন্ঠে জবাব আসে,

“প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দেও। প্লিজ!”

জমিলা বেগম মেয়ের কান্নামাখা কন্ঠ শুনে অস্থির হয়ে পরেন। আরও দুয়েকবার করাঘা*ত করে ভেতর থেকে ফোঁপানো শব্দে জবাব শুনে তিনি মেয়ের রুমের সামনে থেকে সরে যান। মুন্নি ঢুকরে কাঁদতে থাকে। ছোটো থেকে দেখা সব থেকে কাঙ্খিত স্বপ্ন এক লহমায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। কাঁচ ভাঙা তীক্ষ্ম ফলার মতো হৃদয়ে বিদীর্ণ করে র*ক্তপাত করছে। জড়ানো কন্ঠে ফোঁপাতে ফোঁপাতে মুন্নি নিজে নিজেই বলে,

“কেনো জারিফ ভাই? কেনো আপনি আমার মন বুঝলেন না? আমার ভালোবাসাটা কেনো বুঝলেন না? কী কমতি পরেছিল আমার ভালোবাসায়? কেনো আমার হৃদয় এভাবে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলেন? কেনো?”

আবারও হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। কিছুক্ষণ কেঁদে কে*টে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে ফ্লোরে বসে পরে। শাওয়ারের পানির সাথে অশ্রুধারা পালাক্রমে বয়ে চলেছে। শাওয়ারের নিচে নিরব দুঃখ বিলাশ চলছে তার।

জমিলা বেগম তার ভাইকে আবারও ফোন করেন।

“কেনো করলে ভাই? আমার মেয়েটের কথা একবারও মনে হলো না? ছোট্ট মেয়েটা আমার কতোটা ভেঙে পরবে কোনো ধারণা ছিল না তোমার? তোমারই তো ভাগ্নি। তোমার ছেলেকে সে ভালোবেসেছিল নিশ্চয়ই বিয়ে করার আশায়! আত্মীয়র মধ্যে সম্ভাবনা দেখেই তো মনে ঠাই দিয়েছিল। সেই আমার মেয়েটাকে এভাবে কস্ট দিলে!”

জাবেদ সাহেব কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরেন। বোনের কথার বিপরীতে কী জবাব দিবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এখন মনে হচ্ছে স্ত্রী ও পুত্রবধূ এই কারণেই জমিলাকে না জানিয়ে জারিফের বিয়েটা দিয়েছেন। জারিফ যেখানে মুন্নিকে বোন ছাড়া কিছু ভাবে না সেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে জোর করাটা বেমানান। জাবেদ সাহেব বললেন,

“দেখ বোন, তোর মেয়েকে আমার ছেলে বোনের নজরে দেখে। অন্য নজরে দেখে না। ছেলে আমার তোর মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না তাই আমার মনে হয়েছে ছেলেকে জোর করে প্রতিটা সম্পর্কে তিক্ততা না আনাটাই ভালো। মুন্নির এখন উঠতি বয়স। কিছুদিন পর মন ডাইভার্ট করতে পারবে। তুই মুন্নিকে একটু বুঝা। জোর করে বিয়ে করলে কেউ ভালো থাকতো না। এমন তো না যে ছেলে আমার দুঃখে ছিল যার দরুন তাকে ওর পছন্দের বাহিরে বিয়ে দিব! একটু বোঝার চেষ্টা কর। তুই বুঝালে মুন্নিমা বুঝবে দেখিস। মা’থা ঠান্ডা করে ভাব। রাখছি।”

জাবেদ সাহেব ফোন রেখে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ‘মানুষ তার সব চাওয়া পায় না!’ কথাটা বড্ড ভারী। খনিকের জীবনে কেউ অপার সুখে থাকে কেউ দুঃখের সাগরে সাঁতরে বেরায়। যার অপার সুখ আছে সেও দেখো জীবনে কিছু না কিছু হারিয়েছেই। সুখ-দুঃখ মিলেই জীবন।

____________

জারিফ বাড়িতে এসে ব্যাগটা রেখে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে সবে বিছানায় বসলো তখনি দরজায় নকের শব্দে দরজা খুলে নিজের বাবাকে দেখে হালকা হাসে। জাবেদ সাহেব ছেলের হাস্যজ্বল মুখশ্রী দেখে নিজেও হাসে। ছেলের মুখে দুঃখের লেশমাত্র নেই দেখে মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করল। জারিফ তার বাবাকে ভেতরে আসতে বলে। জাবেদ সাহেব ভিতরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করেন,

“কেমন গেলো দিন? প্রিয়া মায়ের সাথে দেখা হয়েছে?”

“তার ক্লাস নেই তো আমি। সে খুব নার্ভাস ছিল আজকে। ক্লাস শেষে তাকে ডেকে শান্ত থাকতে বলে দিয়েছি। ওর সেমিস্টারটা শেষ হলে যা করার করো। তার আনইজি লাগাটা স্বাভাবিক।”

জাবেদ সাহেব ছেলের প্রাণোচ্ছলতা দেখে হালকা হাসলেন। সে যে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বুঝতে পারছেন। মুন্নির জন্য খারাপ লাগলেও মুন্নি জারিফের জীবনে আসলে হয়তো জারিফ আজ এতোটা প্রাণোচ্ছল হতো না। জাবেদ সাহেব বলেন,

“হ্যাঁ। সেটাই করব। একে অপরকে আরও জানবে বুঝবে। তোমাকে হাসি খুশি দেখে মন থেকে একটা বোজ নেমে গেলো।”

জারিফ তার বাবার হাত ধরে বলে,
“তোমাদের কনসার্ন আমি বুঝি বাবা। পিএইচডি আমি পরেও করতে পারব। তোমাকে আমি দোষ দিচ্ছি না। অন্য সংস্কৃতির কোনো মেয়েকে মানতে সবাই পারে না। তাছাড়া মারিয়া আমার গুড ফ্রেন্ড। সে একটু খোলামেলা ধরনের। তুমি নিজেকে দোষ দিও না।”

জাবেদ সাহেব স্বস্থি পান। ছেলের কাঁধে হাত বুলিয়ে চলে যান। জারিফ বাবার গমনপথে তাকিয়ে তারপর উঠে নিজেই ব্ল্যাক কফি বানিয়ে এনে দরজা লাগিয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে।

________

প্রিয়া ভার্সিটি থেকে এসে নামাজ আদায় করে বিকেলে একটু গাছে পানি দিয়ে সন্ধ্যার নামাজের পর পড়তে বসেছে। ফোনটাকে দশ হাত দূরত্বে সুইচঅফ করে রেখে পড়ছে। প্রিয়ার মা এসে অবাক চোখে দেখে গেছেন। তার বিশ্বাস হচ্ছে না মেয়ে তার এতো মন লাগিয়ে পড়ছে। সামনের সপ্তাহে মিড১ পরীক্ষা জানেন কিন্তু সবসময় পরীক্ষার আগেরদিন এভাবে পড়তে দেখেছেন। আজকে ভীন্নতা দেখে নিজেই নিজের চোখ-মুখের জলের ছিঁটা দিচ্ছেন যদি সবটা ভ্রম হয়ে থাকে!
প্রিয়া মন দিয়ে পড়ছে। তাকে এই সেমিস্টারের সব সাবজেক্টে ভালো করতে হবে। স্যারের বউ হয়েছে এখন খারাপ রেজাল্ট করলে তার সহ স্যারেরও মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে। পড়ালেখার দুশমন ওই ফোনটাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। প্রিয়ার মা আবার এসে দেখে গিয়ে খুশি মনে প্রিয়ার জন্য চকলেট হরলিক্স বানাতে গেছেন। প্রিয়ার খুব পছন্দের চকলেট হরলিক্স।

_______

আয়ান রিসোর্টের রুফটপে উঠে একা একা চন্দ্রবিলাশ করছে। আজকে পূর্ণচন্দ্র না তবে মৃদু জোৎসনা আছে। আকাশে তারকারাজি জ্বলজ্বল করছে। আয়ান কানে হেডফোন গুঁজে ‘শ্রেয়া ঘোষালের’ একলা আকাশ গানটা শুনছে। ইদানীং এই গানটা তার বড্ড প্রিয় হয়ে গেছে। নিজেকে খুঁজে পায় গানের মাঝে। আজকে সারাদিন হোটেলেই শুয়ে বসে ছিল। আগামীকালকে ঘোরাঘুরি করবে। একদিন ঘোরাঘুরি করে পরশু সকাল সকাল রওনা হবে। মনটাও ভালো হবে। একা একা ঘোরাঘুরির একটা আলাদা মজাই আছে। আয়ান নিজ মনে হাসে। প্রিয়া ভালো থাকুক এটাই চায়। ছয়টা সেমিস্টার শেষ হলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এব্রোডে চলে যাবে। তবে এই ছয়টা সেমিস্টার তো কম সময় না। প্রিয়াকে প্রতিনিয়ত নিজের চোখের সামনে দেখবে সাথে জারিফ স্যারকেও। নিজের ধৈর্যশক্তি আরও বাড়াতে হবে। পড়ালেখাতেই ফোকাস করতে হবে।

——–
জারিফ রাতের খাবার খেয়ে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছে তখন প্রিয়ার আইডি সামনে এলো কারণ প্রিয়ম বাসায় গিয়ে মায়ের মুখ থেকে প্রিয়ার পরিবর্তনের কথা শুনে প্রিয়াকে ট্যাগ করে পোস্ট দিয়েছে যে,

“আমার বোনটা রাতারাতি বদলে গেলো! এই পরিবর্তনের পেছোনে মূল হোতা কে? জানতে চোখ রাখুন আমার আইডিতে।”

বিকেলেই জারিফ প্রিয়মকেও মানা করেছে বিয়ের ব্যাপারটা সামনাসামনি এখনি না আনতে। এমনকি জারিফের পরিবারও প্রিয়ার পরিবারকে বলেছিল আকদের দিনই। জারিফ প্রিয়মের পোস্ট দেখে হাসলো। প্রিয়ার অ্যাকাউন্ট লক করা। রিকুয়েস্ট পাঠাবে কি পাঠাবে না করে আর পাঠালো না। প্রিয়াই নাহয় আগে দিক। মারিয়া নক করে। মারিয়া জানায় সামনের মাসে জেমসের সাথে মারিয়ার বিয়ে ঠিক। জারিফ যদি পারে তবে আসতে। জারিফও মারিয়াকে বিয়ের কথাটা জানায় সাথে সবকিছু ডিটেইলসে বলে। মারিয়া এখন নিজের বিয়ের থেকে তিন মাস পর জারিফের বিয়ের জন্য এক্সাইটমেন্ট দেখাচ্ছে। সে তখন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসবে জেমসকে নিয়ে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।
চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here