হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -১৭+১৮

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সকালে আয়ান হেলিপ্যাড থেকে কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রওনা করে। পথিমধ্যে একটা মেয়ের হাসি বারবার কানে আসছিল। যা আয়ানকে কিছুটা বিরক্ত করছিল। সেই মেয়েটার সাথেই আবার দেখা কংলাক পাহাড়ে উঠার সময়! দেখা হবেই না বা কেনো? গন্তব্য তো একই। মেয়েটা পাহাড়ের ধার দিয়ে যেমন ভাবে চলছে যেনো পাহাড়ের পথে কোনো আঁকাবাঁকা পথ নেই! একদম সরু মসৃণ কন্টকহীন পথ! মেয়েটা নিজের কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলে দুই বেনী করেছে সেগুলো নাড়তে নাড়তে লাফিয়ে চলছে। আয়ানকে পাশ কাটিয়ে আয়ানের সামনে গেলো। পেছোন থেকে মেয়েটার বয়সি কিছু ছেলেমেয়ে ওকে বারবার বলছে, “পরে যাবি লাফাস না!” কিন্তু মেয়েটার নাম বলছে না। আয়ান কানে এয়ারফোন লাগিয়ে নিলো। এসব তার বিরক্ত লাগছে। এসেছে শান্তির খোঁজে কিন্তু এক অশান্তি পিছু নিয়েছে। কিছু পথ হাঁটার পর দেখলো মেয়েটা হুট করে পা পিছলে পরে গেলো। পাহাড়ের ধারে একটা সরু গাছ ধরে ঝুলছে। আকস্মিক ঘটনাতে আয়ান হতবাক হয়ে গেলো। এয়ারফোনের দরুন কানে মেয়েটার চিৎকার আসছে না কিন্তু মেয়েটা যে চিৎকার করছে তা বুঝা যাচ্ছে। কান থেকে এয়ারফোন নামিয়ে মেয়েটার কাছে গেলো। মেয়েটার ফ্রেন্ডরা পেছোন থেকে ছুটে আসছে। তারা অনোকটাই দূরে। আয়ান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে বলে,

“আর লাফালাফি করবে? সরি তুমি করই বললাম। কারণ তোমাকে দেখে নাইন-টেনে পড়ুয়া নিব্বিই মনে হয়! উড়নচণ্ডী নিব্বি!”

মেয়েটা একে তো ভয়ে আছে তারউপর আয়ানের অসহ্যরকমের কথাবার্তা সাহায্য না করে! কান গরম হচ্ছে তার। কখন হাত পিছলে যায়! নিচের দিকে তাকিয়ে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। চোখ-মুখ খিঁচে নিয়ে বলে,

“আমাকে প্লিজ তুলুন। আমার ভয় করছে খুব।”

“আগে আমার কথার জবাব দেও।”

মেয়েটার আরও মা*থা গরম হচ্ছে। সে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“সাহায্য করার জন্যই এসেছেন? নাকি আমার ব্যাবহার শোধরাতে! বেঁচে থাকলেই না নিজেকে শোধরাবো। দয়া করে আমাকে তুলুন তারপর আপনার কথার জবাব দিচ্ছি।”

আয়ান বাঁকা হেসে বলে,
“বা*ন্দ*রকে ঝুলন্ত অবস্থায়ই মানায়! তোমাকেও দারুন মানাচ্ছে।”

মেয়েটার এবার কান্না পাচ্ছে। গলা ছেঁড়ে কাঁদতে পারলে শান্তি লাগতো তার।

“আপনাকে তুলতে হবে না। তাও আমাকে অযথা কথাগুলো বলবেন না। আমি এখান থেকে টুকুস করে পরে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যাব! আপনি যান এখান থেকে।”

“না না। আল্লাহর প্রিয় হতে হবে না। আমি জাস্ট আমার বিরক্তির লেভেল যাতে আর না বাড়ে সেটারই বন্দোবস্ত করছিলাম। তোমাকে টেনে তুলব তার বিনিময়ে তুমি শান্তি বজায় রেখে চলাফেরা করবে সাথে কাউকে বিরক্ত করবে না।”

মেয়েটাকে রাগে ফুঁসতে দেখে আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে হাত এগিয়ে দেয়। মেয়েটা হাত এগুনো দেখেও ধরছে না। আয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,

“কী হলো? হাত ধরো?”

“না। আপনি আমায় ফেলে দিবেন। ওইযে রাহাত, সাইফরা আসছে। ওরাই উঠাবে।”

আয়ান তাকিয়ে দেখলো, দুইটা বাচ্চা দেখতে ছেলে! ওগুলোকে বাচ্চাই লাগে দেখতে। আয়ান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

“ওকে! বেস্ট অফ লাক!”

আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। এক কদম এগিয়ে আবার পিছিয়ে বলে,

“বাই দা ওয়ে, কোন ক্লাসে পড়ো?”

মেয়েটা আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে ভাবলো, ‘একটু আগে না নিজেই বললি আমি নাইন-টেনে পড়ুয়া নিব্বি! এখন কেনো জানতে হবে আমি কিসে পড়ি! হা*রা*মি বেটা। আমি ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি। তোকে বলব কেন? বলব না হুহ্! আচ্ছা বলি! তোর চিন্তা ভাবনার মধ্যে এক বালতি পানি তো পরবে!’

“ইন্টার প্রথম বর্ষ।”

“ওহ! দেখতে বাচ্চা বাচ্চাই লাগে। তোমার বন্ধুরাও নিশ্চয়ই ইন্টার প্রথম বর্ষেই পড়ে?”

“হুম।”

আয়ান কয়েক কদম বাড়ানোর পরপরই মেয়েটার বন্ধুরা এসে হাজির। এক মেয়ে অস্থীর কন্ঠে বলছে,

“রাহাত! সাইফ! পিহুকে উঠা দোস্ত।”

আয়ান এবার মেয়েটার নাম জানতে পারলো। প্রিয়াকে আয়ান মাঝে সাঝে ‘পিয়ু’ বলে ডাকতো। পিহু আর পিয়ু নামটা অনেক কাছাকাছি। আয়ানের মায়া হলো। পিহুর দুই ছেলে বন্ধু পিহুর হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করেও বিফল। পারছে না তুলতে। পিহু মিডিয়াম স্বাস্থ্যের। আর ছেলেগুলা শুকনো। ওরা পিহুকে উঠানোর চেষ্টা করছে তন্মধ্যেই আয়ান গিয়ে ছেলেগুলার সাথেই পিহুকে ধরে টান দেয়। তিনজনে মিলে পিহুকে উঠাতে সক্ষম হয়। ছেলেগুলোর মধ্যে রাহাত নামের ছেলেটা বিনয়ের সাথে বলে,

“অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।”

আয়ান বিনিময়ে হেসে নিজের পথে হাঁটতে থাকে। কংলাক চূড়ায় উঠে আয়ান মন খুলে শ্বাস নেয়। মন শান্ত শান্ত লাগছে।
এদিকে পিহু রাহাত ও সাইফকে কতেগুলো কি*ল, ঘু*ষি লাগালো কারণ তারা আয়ানের থেকে সাহায্য নিয়েছে। তনিমা বলে,

“তোকে বারবার আমরা মানা করছিলাম লাফালাফি করিস না। শুনছিস আমাদের কথা? তোর বাড়িতে যে আমরা কিভাবে রাজি করিয়েছি তা আমরাই জানি। আঙ্কেল আন্টি তোর এই স্বভাবের কারণেই একা ছাড়তে চাননা। যদি কিছু হয়ে যেতো!”

পিহু তনিমার কাঁধে কনুই রেখে বলে,
“চি*ল বেবস! কিছু হয়নি তো।”

নাইমা বলে উঠে,
“হতে কতক্ষণ? ভাইয়াটা হেল্প না করলে আমরা তোকে তুলতাম কি করে? আমার তো তোর চিৎকারে হৃৎপিন্ড বেরিয়ে যাওয়ার দশা হয়েছিল।”

রাখি বলে,
“শুধু শুধু ওকে বুঝিয়ে শব্দের অপচয় করছিস। সে কি বুঝবে!”

পিহু মুখ ভাড় করে বলে,
“তোরাও আমাকে ব*কবি! ওই লোকটাও ব*কে গেছে। আমি কি বুঝেছিলাম যে পরে যাবো!”

সাইফ ধ*মকে বলে,
“তা বুঝবি কেন! তুই কি কিছু বুঝিস? এখন যদি লাফালাফি করিস তো তোরে আমি নিজে ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”

পিহু ঠোঁট উলটে ধপাধপ পা ফেলে হাঁটতে থাকে।

_________

প্রিয়াকে ব্রেকটাইমে পড়তে দেখে ওর বন্ধুরা অবাক হয়ে গেছে। অর্ষা প্রিয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে গালে হাত দিয়ে বলে,

“প্রিয়ুটার যে কোন ভূ*তে ধরলো! কোনোদিন দেখেছিস ওকে এমন সময় পড়তে?”

মিম বলে,
“স্যারকে বিয়ে করে সে পড়ার প্রতি ঝুঁকেছে।”

সাদ বাধ সেঁধে বলে,
“কালকে যে স্যার ওকে ডেকেছিল না? তখন মনে হয় পড়তে বলেছে।”

রাদ সাদকে চা*টা মে*রে বলে,
“আরে না! প্রিয়া তো এসে আমাদের সবই বলল। মনে হয় প্রিয়ু নিজেকে স্যারের সাথে তাল মেলাতে পড়াতে মনোযোগী হচ্ছে। আফটারঅল স্যারের বউ বলে কথা!”

কথাটা বলে রাদ তাচ্ছিল্য হাসলো। নিশি সেটা দেখে বলে,
“যেমনই হোক। পড়ছে তো। আর এটা কিন্তু ঠিক যে স্যারের মান-সম্মানের কিঞ্চিত দায়িত্ব প্রিয়ুরও। আর রাদ তুই দুইদিন ধরে কেমন করে যেনো কথা বলিস। কী হয়েছে তোর?”

রাদ চুপ করে থাকে। সাদ কথা কা*টাতে বলে,
“মনে হয়, প্রিয়ু স্যারের বউ আর এখন প্রিয়ু আমাদের সাথে মিশবে না এই কারণে। বাদ দে।”

প্রিয়া এবার ওদের কাছে এসে বসে তারপর বলে,
“কী হয়েছে?”

অর্ষা গালে হাত দিয়েই বলে,
“তোর নতুন রূপে আমরা অভিভূত। জারিফ স্যার তোকে কি থেকে কি বানিয়ে দিলো!”

প্রিয়া হেসে বলে,
“দেখ, আমি চাইনা আমার কারণে উনি লজ্জিত হোক। মোটামোটি একটু ভালো করতে পারলেও হবে। আগে দেদারসে তোদের খাতা দেখতে পারলেও এখন অনেক লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে হবে। উনার মান-সম্মানের বিষয়।”

নিশি, মিম, অর্ষা ও সাদরা সম্মতি প্রকাশ করে। রাদকে চুপ থাকতে দেখে সাদ ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে,

“একজনের জন্য অন্য বন্ধুত্বগুলো নষ্ট করিস না। আয়ান নিজেও প্রিয়ার সাথে নরমালি কথা বলবে দেখিস। জানি তোর আয়ানের জন্য বেশি খারাপ লাগছে কিন্তু এতে প্রিয়ুর কি দোষ বল? নিয়তিতে ছিল এটাই। বি নরমাল দোস্ত।”

রাদের মৌন সম্মতি পেয়ে সাদ ওকে নিয়ে আবার আড্ডাতে ফিরে আসে।
এদিকে জারিফের আজ টানা তিনটা ক্লাস। সে তিনটা ক্লাস করে খুব ক্লান্ত। প্রিয়ার সাথে আজ দেখাও হয়নি। গ্রাউন্ডে প্রিয়া বাদে বাকিদের দেখেছে কিন্তু প্রিয়াকে দেখেনি। ভাবলো প্রিয়াকে মেসেজ করবে। কিন্তু আবার ভাবছে করবে না। পরে আর করলোই না। লাঞ্চ শেষ করে চেয়ারপার্সনের সাথে কথা বলে বাড়ির জন্য রওনা করলো। যাওয়ার পথেও প্রিয়াকে দেখেনি। প্রিয়া হয়তো আজ আসেনি এটাই ভেবে নিলো। শেষে মনের সাথে যুদ্ধ করে টেক্সট করেই ফেলল,

“কোথায় তুমি?”

প্রিয়া তখন বাসে। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। মেসেজটা সে আর দেখলো না। কারণ প্রিয়া সব কল ও মেসেজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছে গান শোনার জন্য।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
এদিকে জারিফ প্রিয়ার রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করে যাচ্ছে। অপেক্ষার প্রহর যত দীর্ঘ হচ্ছে ততো অস্থীরতা বাড়ছে। একবার ভাবলো ফোন করবে আবার ভাবে পরে করবে। দ্বিধার মধ্যেই জারিফ প্রায় বাড়ির কাছে চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ চেক করে দেখল এখনও ফিরতি মেসেজ আসেনি। জারিফ কপালে হাত ঘষে এবার। তারপর ফোন অফ করে চার্জে লাগিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে।

প্রিয়া বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরেছে। ফোন আর দেখা হলো না। প্রিয়ার ঘুম ভাঙে এশার আজানের সময় তাও দরজায় করাঘাতে। দরজা যেনো ভেঙে যাবে! এমন ভাবে ডাকছে। প্রিয়া টলতে টলতে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুললে প্রিয়ম ওকে ধ*মকে বলে,

“তোর ফোন কই? সারাদিন কী করিস? যে একটা মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারিস না!”

প্রিয়া ঘুম ঘুম চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। প্রিয়ম রুমো ঢুকে প্রিয়ার ফোনটা চার্জ থেকে খুলে প্রিয়াকে দিলো লক খুলে দিতে। প্রিয়ার মা*থায় কিছুই ঢুকছে না। সে লক খুলে দিলে প্রিয়ম ছোঁ মে*রে হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয় তারপর চেক করে দেখে কল ও মেসেজ নোটিফিকেশন প্রিয়া অফ করে রেখেছে। প্রিয়ম প্রিয়ার দিকে চোখ গরম করে তাকালে প্রিয়া ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। প্রিয়ম এবার জারিফের মেসেজটা বের করে বলে,

“তখন তোর ফোন কই ছিল? আর নোটিফিকেশন অফ করে রাখছিস কেন?”

প্রিয়া ভালো করে দেখে চোখ মুখ খিঁচে নেয় তারপর বলে,
“সরি ভাইয়া। আমাকে তো সচরাচর কেউ ফোন করেনা ওই সময় তাই আমি প্রায়ই এমন অফ করে রাখি।”

প্রিয়ম ঝা*রি দিয়ে বলে,
“তখন ছিল না কিন্তু এখন তো আছে। এখনি জারিফকে ফোন করে কথা বলবি। তোর মতো মা*থামোটাকে বিয়ে করে আমার বন্ধুর জীবনটা খড়খড়ে পাতার মতো হয়ে যাবে!”

প্রিয়ম প্রিয়ার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। প্রিয়া ঠোঁট উলটে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়ার মনে মনে ব*কা খাওয়ার জন্য রাগ হচ্ছে। একটা মেসেজের রিপ্লাই করেনি বলে ভাইকে বলতে হলো লোকটার! কী আজব! তাও যদি কল দিতো তো বুঝা যেতো। আজকালকার মেসেঞ্জার, হোয়াটসএপের যুগে কে সিমকার্ডে মেসেজ দেয়! সিমকার্ডে তো সিম কম্পানি মেসেজ দেয়। সারাদিন কতো কেয়ার করে সিম কম্পানি! সেখানে এই লোকটাকে কেনো মেসেজ দিতে হবে? প্রিয়া মন খারাপ করে নিজে নিজে বলে,

“ধ্যাত ভাল্লাগে না। এখন আবার ফোন দিতে হবে।”

_________

অন্ধকারাচ্ছন্ন ব্যালকনিতে বসে জারিফ কফি খাচ্ছে আর ভাবছে, প্রিয়মকে বলা ঠিক হলো কীনা? বলতে তো চায়নি কিন্তু প্রিয়ম যেভাবে পিঞ্চ করছিল!

ফ্লাশব্যাক,
জারিফ সন্ধ্যার পর সবসময়ের মতো ফোন স্ক্রল করার সময় প্রিয়মের সাথে কথা হচ্ছিল তখন প্রিয়ম জানতে চায়,

“কীরে? প্রিয়ার সাথে কথা হয়েছে আজকে?”

“নোপ! ক্লাস ছিল না ওদের সাথে আর…”

প্রিয়ম জারিফকে আবার প্রশ্ন করে,

“আর কী?”

জারিফ বলে,
“ভার্সিটিতে দেখলাম না। মনে হয় ক্লাসে যায়নি।”

প্রিয়ম অবাক হয়ে যায় তারপর লিখে,
“কী বলিস! গিয়েছে তো।”

“দেখলাম না। ওর বন্ধুদের দেখলাম কিন্তু প্রিয়া ছিল না। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে টেক্সট করলাম কিন্তু নো রিপ্লাই।”

প্রিয়ম অবিশ্বাসের সাথে লিখে,
“কী বলিস! প্রিয়া তো ভার্সিটিতে ওর ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথেই চি*পকে থাকে। আর ফোন তো ওর সবসময়ের সঙ্গী! ওয়েট কর। বাসায় গিয়ে দেখি।”

জারিফ লিখে,
“বাদ দে। লাগবে না। বিজি হয়তো। তোর কী খবর বল? বিয়ে করছিস কবে?”

“ইশার বাবা-মা চান ইশার অনার্স শেষ হলে বিয়ে দিবেন। তাই দেরি আছে।”

ওদের কথাবার্তা আরও দীর্ঘায়িত হয়। তারপর প্রিয়ম বাসায় গিয়ে প্রিয়াকে ধরে।

ফ্লাশব্যাক এন্ড—-

জারিফের ভাবনার মাঝে ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে প্রিয়ার নাম্বার দেখে আলতো হাসে। তারপর রিসিভ করলে অপরপাশ থেকে কোনো শব্দ আসেনা দেখে জারিফ আবারও নিরবে হাসে। নিজেই সালাম দেয়,

“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো প্রিয়া?”

প্রিয়ার হৃৎপিন্ডের গতি যেনো আরও বেড়ে গেলো। স্ট্রোক, অ্যাটাক হয় কিনা সেই ভয়ে প্রিয়া বুকে হাত দিয়ে রেখেছে। একটু আগের রাগ যেনো নিমিষেই হাওয়া! জারিফ এবারও কোনো জবাব না পেয়ে বলে,

“বিজি? প্রিয়ম কি তোমাকে কিছু বলেছে?”

প্রিয়া একটু দম নিয়ে ঢোক গিলে বলে,

“আসলে বিকেলে বাসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম আর সহসা কেউ ওই সময় কল করেনা। কল করলেও বাসায় এসে কল লিস্টে এক নজর বুলানো হয় কিন্তু মেসেজ লিস্টে সিম কম্পানির রাজত্ব! ওটা চেক করাই হয়না। তাছাড়া মাথাব্যথাতে বাসায় এসেই ফোন চার্জে দিয়ে ঘুম দিয়েছিলাম। এই মাত্র ভাইয়ার ডাকে উঠলাম। সরি আপনার মেসেজ দেখিনি।”

জারিফ বলে,
“ডোন্ট বি সরি। তুমি রেস্ট করো। মাথাব্যথা কমেছে? মেডিসিন নিয়েছ?”

“হ্যাঁ। মেডিসিন নিয়েই ঘুম দিয়েছিলাম। এখন পেইন নেই।”

জারিফ স্বস্থি পায়। তারপর বলে,
“প্রিয়মকে বলতে চাইনি কিন্তু সে কথা বলেই এভাবে যে শেয়ার করে ফেলি। বেস্টফ্রেন্ড সে আমার। ব*কেছে সে?”

প্রিয়া মুখ ভাড় করে দুঃখি কন্ঠে বলে,

“হু। ভাইয়া আমাকে ব*কে গেলো। আমার ফোনের নোটিফিকেশন কেনো অফ ছিল তা নিয়ে।”

“এই প্রিয়মটাও না। যাকগে বাদ দেও। কাল ক্লাসের পড়া ভালো করে কভার করে আসবে। ডিনার করে কিছুক্ষণ পর একটু চা-কফি খেয়ে পড়তে বসো। ডিনারের অন্তত পঁচিশ-ত্রিশ মিনিট পরে চা-কফি খেয়ো।”

প্রিয়া পড়ার কথা শুনে বিতৃষ্ণায় মুখ কুঁচকে ফেলে। সারাদিন পড়েছে। এখন আর ভালো লাগছে না। তাও জারিফকে হ্যাঁ বলে। জারিফ প্রিয়াকে বায় বলে ফোন রেখে দেয়। ফোন রেখে দেওয়ার পর প্রিয়া আগে রান্নাঘরে গিয়ে কড়া লিকারের চা বানায়। তাতে লেবু-চিনি দিয়ে চা নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসে। রাতের খাবার সে আরও ঘণ্টাখানেক পরে খাবে।

_________

হোটেলের গার্ডেনে আয়ান গিটার হাতে বসে আছে। গিটারে সে টুকটাক সুর তুলতে পারে এই আরকি। সেই মোতাবেক টুংটাং করছিল। হঠাৎ গার্ডেনের সোডিয়াম বাতির আলোয় একটা ছায়ামানবি দেখে। মানবি কারণ তার গায়ে ফ্রক জড়ানো সেটা ছায়াতে বুঝা যাচ্ছে। আয়ান গিটার বাজানো থামিয়ে তৎক্ষণাৎ পেছোনে ঘুরলে ছায়ামানবিটি ভড়কে যায়। আয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে প্রশ্ন করে,

“কে আপনি? লাইটের সামনে আসেন।”

মেয়েটি পিছিয়ে যাওয়া ধরলে আয়ান বলে উঠে,
“ভয় পাচ্ছেন কেনো? আমি তো আপনাকে মা*রবো না। সামনে আসেন।”

মেয়েটি এবার ভীরু পায়ে সামনে এগোয়। আয়ান এবার লাইটের আলোয় মেয়েটির চেহারা দেখে বলে,

“ওহ তুমি! এই হোটেলেই উঠেছ?”

মেয়েটি সকালের ঘটনার জন্য আয়ানের উপর বিরক্ত হলেও আয়ান যে ওকে টেনে তুলেছে তাই এখন রাগ দেখালো না। পিহু বলে,

“হ্যাঁ। আমার গিটার অনেক ভালো লাগে কিন্তু বাজাতে পারিনা। আপনার বাজানোটা শুনে চলে আসলাম।”

“ওহ!”

আয়ানের স্বল্প জবাবে পিহু একটু দমে যায়। পিহু বলে,

“আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি কম কথা বলেন। আসলেই কি তাই?

আয়ান নিরব হাসলো তারপর উদাস কন্ঠে বলল,

“নিরবতার জন্য অনেক কিছু হারিয়েছি তাই এই নিরবতাকেই দায়িত্ব দিলাম সে আমার জীবনটা গুঁছিয়ে দিক।”

পিহু অবাক হলো। কিছু ভেবে রম্যস্বরে বলল,
“ছ্যাঁকা খেয়েছেন বস? কেমন ভগ্ন হৃদয়ের গন্ধ আসছে!”

আয়ান তাচ্ছিল্য হাসলো অতঃপর বলল,
“ভগ্ন হৃদয় তাই ভগ্ন হৃদয়ের গন্ধ পাচ্ছো। বাই দা ওয়ে! হৃদয়ের গন্ধ আসে? তাও ভাঙা হৃদয়ের?”

পিহু চমৎকার হেসে বলে,
“মন পো*ড়ার গন্ধ আসলে ভগ্ন হৃদয় বেচারা কি অন্যায় করলো শুনি! সবই আসে।”

আয়ান হেসে ফেলে বলে,
“তুমি আসলেই বাচ্চা। তো বাচ্চা মেয়ে! তোমার বাবা-মা তোমাকে এতোদূরে বন্ধুদের সাথে ছাড়লো?”

“ছাড়বে না কেনো? আমার বাড়ি তো খাগড়াছড়িতে। আমার উড়নচণ্ডী মনের জন্য তারা ভয় পায় কিন্তু আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।”

আয়ান পিহুর সাথে কথা বলে মজা পাচ্ছে। মেয়েটা ফানি অনেক। বাচ্চাসুলভ ব্যাবহার। আয়ান তারপর বলে,

“তোমার এই স্বভাবের জন্য আজ ম*র*তে ম*র*তে বেঁচেছো।”

পিহু হুট করে বলে বসলো,….

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here