#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ(১৬-২০)
রুহানকে বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়ান, নিজের সন্তানকে সন্তানের পরিচয়ে বুকে জড়িয়ে ধরায় এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করছে। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলুক তাকে তবে কারো আচড় লাগতে দিবে না। বাহির থেকে এই মোহনীয় দৃশ্য দেখছে রুশি, কিছুক্ষণ আগেও ভেবেছিল রুহানকে বলবেনা যে এই লোকটি ওর বাবা কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলে ঠিকই করেছে। রুহানের সত্যিই বাবার প্রয়োজন ছিলো, যাক অন্তত ওর ছেলেটিতো খুশি নিজের বাবাকে পেয়ে।
কিছুক্ষণ আগে~~
আজকে সানডে তাই অফিস নেই রেস্টুরেন্টে যেতে হবে তিনটায়। রুশি রান্নাঘরে রান্না বসাচ্ছিল, হাজবেন্ড না মানুক এটলিস্ট গেস্ট এসেছে বাসায় ভালোমন্দ কিছু তো রাঁধতেই হবে, চুলোয় গরুর মাংস কশাতেই সুজি ঢুকলো রান্নাঘরে। কতক্ষণ যাবৎ উসকো খুসকো করছে মনে হচ্ছে কিছু বলবে, কড়াইয়ে পানি দিয়ে চুলোর আচ কমিয়ে ঘুরে তাকালো সুজির দিকে তাকালো
“যা গলায় আটকে রেখেছ তা বের করে ফেলো ”
” না মানে ওই লোকটিকি সত্যিই তোর বর?”না জানার ভান করে বললো সুজি
“নাহ রুহানের বাবা আগেই তো বললাম, আমি এই বিয়ে মানিনা তাছাড়া আমাদের লিগালি বিয়ে হয়নি ”
” তোমার না মানা না মানাতে সত্য কি বদলে যাবে এন?”
রুশিকে মুখ শক্ত করতে দেখে সুজি প্রসঙ্গ পাল্টালো
“তাহলে রুহানকে তার বাবার কথা বলছো না কেন? তুমি মানো আর না মানো সেটা তোমার ব্যাপার কিন্তু রুহান তো তার বাবাকে ডিজার্ভ করে ”
” সুজি আমি.. ”
রু্শিকে কিছু না বলতে দিয়ে ওর হাত চেপে ধরে বললো
“স্টিভ ম্যারাবোলির একটা উক্তি আছে ~~
যতক্ষণ না তুমি অতীতকে ভুলে যাচ্ছ, যতক্ষণ না তুমি
ক্ষমা করতে পারছো, যতক্ষণ না তুমি মেনে নিচ্ছো অতীত চলে গেছে —ততক্ষণ তুমি নিজের এগিয়ে যাওয়ায় ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছো না
তাই অতীত ধরে রেখে লাভ নেই এটা কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয়না, মুভ অন করতে জানতে হয়।তুই নাহয় ক্ষমা করতে পারবি না কিন্তু রুহানকে তো তার বাবা থেকে আলাদা করিস না। বাই দ্যা ওয়ে জো মাফ কার দেতা হেয় উসকা দিল বহত বাড়া হোতা হ্যায়”
“ওকে ওকে আর ডায়লগ দিতে হবে না, আমি ভেবে দেখবো ”
“ইটস নট মাই ডায়লগ, এটা এসআরকে এর ডায়লগ ”
বলেই না দাঁড়িয়ে চলে গেলো বিড়বিড় করতে করতে
“জিজ আই ট্রাইড মাই বেস্ট, বাকিটা তোমার হাতে ”
রুশি রান্না শেষ করে সুজির রুমে ফিরে আসলো, রুহানকে খেলতে দেখে কাছে ডাকলো
“বেবি, আমি যদি বলি তোমার বাবা আমাদের সাথে দেখা করতে আসছে তাহলে তুমি কি করবে? ”
” আমি দেখা করবো না, আমি বাবাই এর উপর রাগ করেছি ”
“বাচ্চাটা শুনো, বাবাই তো ইচ্ছে করে এমন করে নি, তুমি জানো বাবাই এর যে বস সে বাবাকে একটা ইম্পর্টেন্ট মিশনে পাঠিয়েছে, তুমি সুপার কপ্স দেখো না? ওই সুপার কপ্স এর মতো তোমার বাবাই ও সুপার কপ্স, তাইতো এতদিন ছিলো না এইখানে। এখন চলে আসছে”
” তাহলে আবার চলে যাবে?”গাল ফুলিয়ে বললো।
“নাহ আর যাবে না, এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে, মিশন শেষ হয়ে গিয়েছে না?”
“তাহলে এখনো আসেনি কেন?”
” এসেছে তো আমাদের সাথে, দেখোনি তুমি?”
” এসকে আমার বাবাই! ইয়ে আমার বাবাই সবার থেকে হ্যান্ডসাম, কিন্তু তাহলে বলেনি কেন সে আমার বাবাই ”
“রুহান রাগ করেছে না তাই আগে রাগ ভাংগিয়ে তারপর বলতো কিন্তু মাম্মা সিক্রেট বলে দিয়েছে ”
” না রুহান আর রাগ করে নেই আমি কথা বলে আসছি বাবাই এর সাথে ”
“গো এন্ড বাবাইকে গিয়েই হাগ করবে ওকে?”
“ওকে”
রুশি সেখান থেকে চলে আসলো, ছোট থেকেই কোন বাবার সাথে সন্তানের খুনসুটি দেখলে ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, কারণ ওর বাবার সাথে এই খুনসুটি করার সৌভাগ্য ছিলো না ওর, মাঝেমাঝে মাকে বড্ড মিস করে ও। হয়তো সে থাকলে বাবার ভালোবাসাও কপালে জুটতো।
“বাবাই, তুমি আবার আমাকে ছেড়ে ইম্পর্টেন্ট মিশনে চলে যাবে?”
“ইম্পর্টেন্ট মিশন!”
“হুম মাম্মা বললো তো, ইম্পর্টেন্ট মিশনে থাকার কারণে এতদিন আমার কাছে আসতে পারো নি ”
” মাম্মা বলেছে?”
“হুম, আবার যাবে?”
“নাহ যাবোনা, কক্ষনো না ”
” দেন রুহান লাভস বাবাই এত্তোগুলা”
“বাবাই অলসো লাভস রুহান, দাঁড়াও আমি ফোনটা ধরি হ্যা?”
“ওকে, আমি বাইরে থেকে খেলে আসছি ”
ফোন ধরেই দেখে সামু ফোন করেছে, কতদিন কথা হয়না ওর সাথে।
“কিরে কেমন আছিস? ”
“ভালোই ভাইয়া, তুমি কেমন আছো?জানো তোমাকে কত মিস করেছি? কোথায় তুমি এখন? দেখা করতে কবে আসছো,দাদাজি তোমাকে দেখতে চাচ্ছে”
“তোর একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করার অভ্যাস গেলো তাইনা!আমি একটু দেশের বাইরে আছি দেশে ফিরলে যাবো ওইখানে ”
“কবে বিয়ে করবি তুই? ”
“এত বউ বউ করছিস তো তাই এবার বউ নিয়েই ফিরবো যা”
” মজা করছিস তাই না! ”
” মজা কেন করবো? সিরিয়াসলি বলছি ”
“হাহা রাখি, মনে করে নিয়ে আশিস ভাবিকে, আবার এয়ারপোর্ট এ ফেলে আশিস না”
বলেই ফোন কেটে দিলো, “যাহ বাবা, সত্য বললাম বিশ্বাসই করলো না?”
সায়ান রুহানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে, রুশি রেস্টুরেন্টে গিয়েছে। রুহান হাটতে হাটতে এক জায়াগায় দাঁড়িয়ে পড়ে, সায়ান লক্ষ্য করে বলে
” গাড়িটি পছন্দ? ”
“এখানে অন্য কালারেরটা ছিলো, কিন্তু এখন চেঞ্জ হয়ে গেছে। আমি ওইটা কিনতে চেয়েছিলাম ”
“তাহলে কিনোনি কেন?”
“মাম্মার কাছেতো এত টাকা নেই, তাই বলিনি ”
সায়ান তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে, এত ছোট বয়সে এত কিছু বুঝে যে মায়ের কাছে এত টাকা নেই। সায়ান গাড়িটি কিনে দিলো ওকে লাকিলি যেই কালার চেয়েছিলো সেটা শোরুমে ছিলো। রুহানতো গাড়িটি পেয়ে খুব খুশি।
এভাবেই কিছুদিন চলে গেছে, সায়ান আর রুহানের সম্পর্ক যতটা গভীর, রুশি আর সায়ানের সম্পর্কে ঠিক ততটাই দূরত্ব। সায়ান রুশিকে স্পেস দিচ্ছে, কোন প্রেশার দিতে চাচ্ছে না এই সম্পর্ক নিয়ে। এমনিতে ভালোই আছে ও কারণ তার বউটাতো তার কাছেই আছে। একদিন এই দূরত্বও শেষ হয়ে যাবে।
“আপনি প্যাকিং করেছেন কেন? কোথাও চলে যাচ্ছেন আবার ”
“হুম যাচ্ছি তবে আমি একা না তোমরাও যাচ্ছ ”
“মানে কি, আমরা যাচ্ছি মানে?আপনার মনে হয় আপনি বলবেন আর আমি ঢ্যং ঢ্যং করে চলে যাবো ”
” দেখো এটা আরগু করার মুমেন্ট না, আমরা কেউ এখানে সেফ না তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে, সব প্যাকিং করে নাও আমরা আজই বাংলাদেশে ফিরছি, আর তুমি যদি ফিরতে না চাও তাহলে আমি রুহানকে নিয়ে চলে যাবো”
“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন! ”
“যদি মনে করো তাহলে তাই, আই হ্যাভ নো আদার অপশন, তাছাড়া চুক্তির কাগজ এখনো আছে আমার কাছে ”
১৭.
“আচ্ছা আমি না গেলে হয়না! দেখুন আমি এখানে জব করি, আমার অফিস এখানে আমার সবকিছু এখন এখানে। বাংলাদেশে গিয়ে কি করবো, না আমার থাকার জায়গা আছে আর না আছে নিজে চলার মতো কোন ব্যাবস্থা। আপনি কেন অন্যায় আবদার করেছেন। হ্যা আমি আমার ছেলের জন্য আপনার কাছে দায়বদ্ধ তবে এতোটা ফায়দা তো তার উঠাতে পারেন না ”
“আমি এই মুহুর্তে সব এক্সপ্লেইন করতে পাড়ছি না তোমাকে তবে সত্যি বলছি আমি বাধ্য হয়ে তোমাদের বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছি। আমি তোমাকে তোমার স্বাধীনতা দিতে চাই তবে তাতে তোমার সেফটি থাকতে হবে। জানি আমার জন্য তোমরা বিপদে পড়েছো তবে আমি এখানে না আসলেও তারা তোমাকে খুজে নিতো আর… ”
“কারা খুজে নিতো? কিসব বলছেন আপনি সেফটি এন্ড অল! ”
সায়ানের কিছু বলার নেই কারণ ও এরপর আর একটা কিছুই বলতে পারবে না কারণ ও নিজেই জানেনা ওর পেছনে কে আছে। সেদিন রুহানকে নিয়ে ফেরার সময় মনে হচ্ছিলো কেউ ফলো করেছিলো তাই রুহানকে কৌশলে বাসায় দিয়ে আবার ওই জায়াগায় ফিরে আসে তখন দেখে একজন মাস্ক পরা লোক কিছু একটা খুজছে। কনফার্ম হওয়ার জন্য লোকটির পাশ কাটিয়ে সামনের মাঠের দিকের গলিতে ঢুকে পড়লো, ওর ধারণা ঠিক ছিলো লোকটি ওকেই ফলো করেছিলো তাই ওই লোকটি গলিতে ঢুকতেই তার মাথায় আঘাত করে ফেলে দিলো, লোকটি ব্যথায় যখন কাতড়াচ্ছিলো তখন টান দিয়ে মাস্ক খুলে ফেলে আর মাস্ক খুলে নিজেই চমকে যায়। একজন বিদেশী লোক যে ইংলিশে তাকে গালি দিচ্ছে,লোকটির চোয়াল ধরে বললো
“হু আর ইউ?হু সেন্ট ইউ হেয়ার? আন্সার মি!! ”
লোকটিকে আরো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মুখে কিছু একটা দিলো তার কিছুক্ষণ পর নিস্তেজ হয়ে গেলো তার দেহ, নিজের মালিকের প্রতি এত লয়াল যে নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিলো!! এরুপ লয়ালিটির সাথে সায়ান খুব পরিচিত, ও আতকে উঠলো নিজের অতীত ভেবে, ওর অতীত এভাবে হানা দিবে ভাবতে পারেনি, অতীতের যে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ও এখনো আফসোস করে সেই অতীত আজ ওর দ্বারে তার জাল বিছিয়ে দিয়েছে। নাহ এখানে আর থাকা যাবে না। ও বাচুক মরুক যাই হোক ওর সাথে ওর পরিবারের কিছু ও হতে দেবে না।
“দেখুন এখনো বিশমিনিট বাকি আছে, আমি প্লেন থেকে নেমে যাই, আপনি যাওয়ার হলে আপনি যান”কপাট রাগ দেখিয়ে বললো রুশি
“আর একটা কথা বললে পা ভেংগে রেখে দিবো, তারপর নাহয় সারাজীবন লেংড়া বউ পালবো ”
“হাত দিয়ে দেখুন না আপনার হাত না ভেংগে দেই”
“এইটুক হাত দিয়ে আবার আমার হাত ভাংবে, দেখো ভাঙতে গিয়ে নিজের হাত না ভেংগে যায় ”
“আমাকে কি অপুষ্টিকর মনে হয়ে? ”
“মনে করার কি আছে এটাইতো সত্যিই”
“ইউউউউ, ইন্সাল্ট করেছেন আমাকে?”
“উফফ মাম্মা বাবাই তোমরা থামবে?দেখো সবাই কেমন তাকিয়ে আছে “রুহান বিরক্তি নিয়ে বললো
“তোমার মাম্মাই তো শুরু করেছে”
“আমি শুরু করেছি! আপনি শুরু করেছেন ”
“তখন থেকে নেমে যাবো নেমে যাবো বলে ঘ্যানঘ্যান কে করছিলো? ”
“আমি ঘ্যানঘ্যান করি!আপনাকেতো… ”
“চুপপপ, তোমরা দুজন মুখে আংগুল দাও, দাও!একটা কথাও আর বলবে না, মাম্মা তুমি না বলো ঝগড়া করা ব্যাড ম্যানার্স? ”
“এটাই নিজে বলে আবার নিজেই ভুলে যায় ”
“বাবাই তোমাকেও বলেছি আংগুল দিতে, দাও!
রুশি সায়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভ্যাংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকালো, আর সায়ান নিশ্চিন্ত হলো যে এই ধানি লংকা আর নামার জন্য বলবে না।
বাংলাদেশে আসার পরে ঢাকায় দুইএকদিন থাকার চিন্তাভাবনাই করছে সায়ান, এমনিতেই জার্নিতে ক্লান্ত তাই এখনি ময়মনসিংহ যাওয়া সম্ভব না, এইদিকের পরিস্থিতি বুঝে তারপর ময়মনসিংহে যাওয়া যাবে। সায়ান লক্ষ্য করলো রুশি তখন থেকেই আশপাশটা লক্ষ্য করছে খুব গভীর ভাবে দেখছে,
“কি দেখছ এভাবে? ”
“মনে হচ্ছে এখানে আগেও এসেছি কিন্তু তা কি করে সম্ভব! ”
রুশির এই অহেতুক চিন্তা দেখে হাসলো সায়ান, মেয়েটি কাজের থেকে অকাজের চিন্তাই বেশি করে।কলিংবেল চাপতেই একজন এসে দরজা খুলে দেয়, রুহানকে হাতে ধরেই আসছিলো রুশি, সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো
“সাহিল, আপনি এখানে…”
“হুম এটা আমার বসের বাসা ম্যাডাম, আমি থাকবো না তো কে থাকবো! ”
“তোমার বস মানে ওই হিটলারের উপরেও আরো কেউ আছে! ডোন্ট টেল মি ওই হিটলারই তোমার বস ”
“হিটলার কে?”
“এহেম এহেম সাহিল তুমি লাগেজের দিকটা সামলাও আর যা তোমাকে বলেছিলাম তার ব্যাবস্থা করো ”
“ইয়েস বস” রুশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো “পরে কথা হবে” রুশিও বিনিময়ে মুচকি হাসি উপহার দিলো।
“সাহিল গো”
“বস আর ইউ জেলাস? “ফিসফিস করে সায়ানের কানে কানে বললো
“যাও নাহয় এই মাসের মাইনে পাবেনা সাথে ওভারটাইমও করতে হবে ”
“না থাক যাচ্ছি ”
“আর তুমি যাও ভেতরে যাও আর ফ্রেশ হয়ে নাও ”
রুশিকে বললো
“আপনার কথামতো যাবো! ”
“নাহ মানে যদি ফ্রেশ তাহলে আপনার ভালো লাগতো ম্যাডাম ”
“হুম যাচ্ছি ”
🌸🌸🌸
“ভাই, তাড়াতড়ি বউমনিকে নিয়ে আস, আমি আর দাদাজি কত এক্সাইটেড হয়ে আছি তোর ছেলে আর বউকে দেখার জন্য ”
“এই পরশুদিন আসছি আমরা, কাউকে বলিস না সারপ্রাইজ দিবো সবাইকে ”
“আচ্ছা আস, আমিও একজনের সাথে দেখা করাবো তোকে”
“স্পেশাল কেউ? দেখসি আমার পছন্দ হতে হবে নাহয় কিন্তু রাজি হবো না ”
“পছন্দ হবে দেখে নিস, আমার চয়েজ বেস্ট অকে!”
“আচ্ছা আসছি, তুই আমার চয়েজ দেখসি আর আমি তোরটা দেখবো ”
“আর শুন আমারো কিন্তু পছন্দ হতে হবে”
“হাহাহা আচ্ছা, দেখে বলিস কেমন ”
পাগলি একটা, সামুর সাথে ছোট থেকেই সম্পর্ক অনেক ভালো ওর। আট বছরের বড় হলেও সায়ান আর সামু দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর ছোট্ট বোনটা বড় হয়ে গেছে, এখন দেখতে হবে সেই স্পেশাল মানুষটি তার যোগ্য কিনা।
১৮.
“ভাবি কত্ত কিউট দেখতে তুমি… যাক এই ইউজলেস এর চয়েজ ভালো আছে “সায়ানের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বললো সামায়রা।
“তুমি অনেক সুন্দর দেখতে, নাম কি তোমার? ”
“মাইসেল্ফ সামায়রা জামিল খান, ইউ কেন কল মি সামু ” তখনি রুহান রুশির হাত ধরে উকি দিয়ে সামুকে দেখলো
“অঅঅঅঅ কি কিউট তুমি দেখতে, নাম কি তোমার? ” বলেই রুহানের হাত চেপে ধরে কাছে আনতে চাইলে রুহান রুশির পিছনে চলে যায় আর সামু চেহারায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
“আসলে সবার সাথে হুট করে মিশতে পারেনা, একটু সময় লাগে, রুহান ও তোমার ফুফিমনি হয়, সালাম দাও ” রুহানকে সামনে এনে বললো রুশি
“আসসালামু আলাইকুম, আমার নাম রুহান ”
“শুধু রুহান আর কিছু নেই?”
“রুহান জামিল খান, এটাই হবে অবশ্যই ” সায়ান বলে উঠলো, রুশি সায়ানের এই অস্থিরতা দেখে ভেতরে মজা পেলেও চোখ ছোটছোট করে তাকালো, সায়ান তো জানেই না বার্থডে সার্টিফিকেটে রুহানের পুরো নাম রুহান জামিল খান আর বাবার নাম সায়ান জামিল খান দেয়া।
“ভাবি তুমি আর রুহান উপরে যাও, মিনু ভাইয়ের রুম দেখিয়ে দে তো ”
রুশি আর রুহানের পিছনে সায়ানও যেতে নিলে সামু ডান হাত চেপে ধরে বলে
“তুই কোথায় যাচ্ছিস? প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যা ”
“তার আগে এইটা বল ছেলে বউয়ের সামনে ইউজলেস বললি কেন?”
“আমি সত্য বলতে পছন্দ করি, ওইসব বাদ দে, এটা বল তুই বিয়ে করলি কবে আর… ”
“তোকে এতকিছু বলার টাইম নেই। অনেক লম্বা কাহিনী তবে এইটুকু বলতে পারি বউও আমার আর বাচ্চাও আর আমাদের বিয়ে চারবছর আগে হয়েছে ”
“চারবছর আগে!!হতচ্ছারা এতদিন বললি না কেন? আমি ভাবলাম তোর আবার কোন সমস্যা আছে নাকি? কিন্তু চারবছর হলে তোর বউ ছিলো কই আর তুই আমাদের বললি না কেন?”
“এতকিছু বলার টাইম নেই ”
“আমাকে নাহয় নাই বললি, কিন্তু দাদাজি কে কি জবাব দিবি? সে কিন্তু লাঠি রেডি করে রেখেছে ”
“তুই বলে দিয়েছিস ”
“আমার পেটে আবার কবে কোন কথা টিকেছে বলতো? তাছাড়া না বললে আমার পেট ব্যাথা করতো ওই কথার চাপে ”
“চুচকা কোথাকার ”
“ভাই চুচকি হবে, জেন্ডার কনফিউশনে ফেলছিস কেন সবাইকে?”
“ওই একি, খেতে দে ক্ষুদা লাগছে, খেতে দে”
“যাহ আগে ফ্রেশ হয়ে খচ্চর কোথাকার নাহয় খাবার পাবি, আজকে কিন্তু গরুর মাংস রান্না হয়েছে খেতে চাইলে তাড়াতড়ি আয়, নাহয় তোর ভাগেরটাতো গেলো ”
“নাহ যাচ্ছি একপিসও খাবি না,আগে ভালোমতো খেয়ে তারপর দাদাজির মার খেতে যাবো ”
“তাতো খাবিই, আসুক খামার থেকে তোর নিস্তার নেই আজকে”
সায়ান আর রুশি সবাই সন্ধ্যায় খাবার খেয়ে নিলো, সবাই মিলে ড্রয়িংরুমে কথা বলছিলো। সায়ানের দাদাজি রুশিকে খুব পছন্দ করে আর রুহানকে তো কোলছাড়াই করতে চাইছে না, পাশে বসিয়ে এই কথা ওইকথা জিজ্ঞেস করছে। তখনি একটা মেয়েলি কন্ঠ কেউ বলে উঠলো
“সায়ান তুমি বাংলাদেশে আসলে আর আমাকে বললে না, রাগ করেছি আমি ”
“আমি তোমার বড় ইশানি,সম্মান দিয়ে কথা বলো ”
“ওহ কামন তুমি মাত্র তিন বছরের বড়, এটাকে বড় বলেনা।তাছাড়া বয়ফ্রেন্ডকে আজকাল নাম ধরে ডাকার ট্রেন্ডই চলে ”
“আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড না “বলেই উঠে চলে গেলো সায়ান, এই মেয়েকে যাই বলুক যত অপমানই করুক এর গায়ে লাগে না, গন্ডারের চামড়া যাকে বলে।তাই বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে কিছু না বলা।
রুশি এই বাড়ির সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে, মেয়েটি আসাতে যেন কেউ খুশি হয়নি, মেয়েটির গেটাপ কেমন উৎশৃংখল তারউপর কেমন গায়ে পড়া ভাব, আর ওনাকে দেখো একবার বলে নি আমার বউ আছে তুমি এমন বললে সে মাইন্ড করতে পারে। সব পুরুষরাই এক, গাছেরটাতো খাবেই তলারটাও কুড়াবে।
“আমি আসছি, রুহান বড় আব্বুর সাথে উপরে চলো ”
হঠাত দাদাজির এমন উঠে যাওয়া আশ্চর্য লাগলো রুশির তখনি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো একজন মধ্যবয়সী লোক গেইট দিয়ে ঢুকলো। হাতে অনেক ধরনের জিনিস।রুশি বুঝতে পারলো লোকটিকে দেখেই চলে গেছে। এসব দেখে রুশি সামুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“কিরে সামু মা কেমন আছিস? ”
“ভালো কাকা বসুন, এই মিনু কাকাকে চা নাস্তা দে ”
“এই মেয়েটি কে ঠিক চিনলাম নাতো? “তখনি ওই মেয়েটিও বলে উঠলো
“ইয়া সামু,কে এই মেয়েটি আগে কোনদিন দেখিনিতো!”
“ওহ তোমাকে তো বলাই হয়নি ও হচ্ছে রুশানি, আমার ওয়ান এন্ড অনলি ভাবি আর এই বাড়ির বউমনি ”
“মানে সায়ান বিয়ে করেছে? কি বলছো তুমি এসব? ”
“শুধু বিয়ে করেনি, ভাইয়ের ছেলেও আছে তিনবছরের ”
“আমাকে আগে বলোনি কেন? আমি এখনি আমার সায়ানকে জিজ্ঞেস করছি ”
বলেই মেয়েটি উঠে চলে গেলো,মেয়েটির পিছু সামুও উঠে গেলো
“মনে হচ্ছে নিজের প্রোপার্টি যেমন ভাবে বলছে আমার সায়ান ”
রুশি ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। বাঙালি মেয়েরা হাজবেন্ড মানুক আর না মানুক তার ভাগ কাউকে দিতে রাজি নয়। রুশি থম মেরে বসে রয়েছে, এই মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দর দেখতে, তাই এই মেয়েকে একসেপ্ট করতেই পারে সায়ান তারউপর ও সায়ানকে পাত্তা দেয়না, এখন মনে হচ্ছে একটু একটু পাত্তা দিলে ভালোই হতো।ও এখানে হলেও পা গুলো কেমন উশখুশ করছে ওইখানে যাওয়ার জন্য।
রুশি তার হাতের নখ কামড়ে এসব ভাবতে ভাবতেই পাশে তাকালো। তাকিয়ে দেখে ওই মাঝবয়সী লোকটি কেমন জানি ওকে স্ক্যান করছে মনে হচ্ছে বহুকাংখিত বস্তু পেয়ে গেছে। এই নজর রুশির বাজে লাগলো তাই সেখান থেকে উঠে গেলো, দরজার কাছাকাছি যেতেই শুনতে পেলো
“ফারদার আমার সামনে আসবিনা, আমার বউ মাইন্ড করতে পারে নাও গেট আউট ”
তখনি ওই মেয়েটি মানে ইশানি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলো আর রুশিকে দেখে যেন রাগ বেড়ে গেলো
“তুমি কি মনে করো তোমার এই সৌন্দর্যে সায়ানকে মুগ্ধ করে ওকে নিজের বশে আজীবন রাখতে পারেবে? সায়ান আমার ছিলো আমারি থাকবে, দেখে নিও”
রুশিকে কিছু না বলতে দিয়ে চলে গেছে ইশানি, রুশি দরজার সামনে যেতেই শুনতে পেলো
“ভাই ওকে দিয়ে তো ভাবিকে জেলাস ফিল করাতে পারতি ”
“নাহ আমি ওর সামনে কোন নাটক করতে চাইনা আর না জেলাস ফিল করাতে চাই, আমি এটা করলে ও ভাবতো অন্য পুরুষদের মত আমিও মেয়েবাজ। আর ও আমার থেকে আরোও দূরে চলে যেতো। আমি চাই ও আমাকে ভালোবাসুক তবে তার আগে আমি ওর বিশ্বাস অর্জন করতে চাই যে আমার লাইফে ও ছাড়া না কেউ ছিল না আছে না থাকবে।ও আমার কাছে আছে এটাই আমার জন্য অনেক। ওর জন্য আমি আজীবন ওয়েট করতে পারবো।
এই কথাগুলো সত্যি না মিথ্যে রুশির জানা নেই তবে যাচাই করতে ইচ্ছে করছে না। সায়ানের জন্য রুশির সম্মান অনেকখানি বেড়ে গেছে আজ। এমন হাজবেন্ড পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার যার পৃথিবী শুধু তার বউকে ঘিরে। শুধু তাকে ঘিরে
১৯.
“ভাই ভাবি চলে গেছে আর বলতে হবে না ”
“আমি কোন এক্টিং করেছিলাম না, যা বলেছি তাতে একদণ্ড ও মিথ্যে নেই। শুধু চেয়েছি ও জানুক ও ছাড়া আর কেউ নেই আমার লাইফে আর না কেউ ভবিষ্যতে হবে ”
“অনেক ভালো চিন্তাধারা ভাই, সব পুরুষরা যদি তোর মতো এক নারিতে সন্তুষ্ট থাকতো তবে সংসারে কোন ঝামেলা থাকতো না। প্রত্যকটা নারীর দিন শেষে নিজের ঝুলিতে যদি কিছু থাকে তবে সেটা তার লাইফ পার্টনার। একটা নারী কিন্তু এর বেশি কিছু চায়না ”
“বাহ কতো বড় হয়ে গিয়েছিস তুই, কি সুন্দর গুছিয়ে বলিস। তবে সব পুরুষ যেমন এক নয় সব নারীও কিন্তু এক নয়, তা তোর উনি কেমন? সেকি আমার মতো নাকি অন্য পুরুষদের খাতায় ফেলছিস? ”
“সেটা নাহয় আসলেই যাচাই করিস ”
“তাতো অবশ্যই যার তার হাতে তো তুলে দিতে পারিনা তোকে, যে তোর মত জংলীকে সামলাতে পারবো তার কাছেই তো দিবো ”
“আমি জংলী!! তুই কি তুইতো একটা গরিলা, সারাক্ষণ আ আ করে চিল্লাস, হুহ কথা নাই তোর সাথে হুহ। তোর ভাগ্যের বিফ তো গেলো ” বলেই হনহন করে চলে গেলো সামু
“আমি সত্যিই গরিলার মতো চিল্লাই? ওহ সায়ান কি ভাবতেছিস! “কলার ঠিক করতে করতে দাদাজির রুমে গেলো সায়ান, রুহানের সাথে কতক্ষণ ধরে দেখা হয়না, এখন আর একমুহুর্তও নিজের থেকে আলাদা করতে ইচ্ছে হয় না ওর। যে অতীত ওর ছিলো তার ছায়াও নিজের উপর পড়তে দিবে না ও। কখনো না।
রুশি রান্নাঘরে রান্না চড়াচ্ছিল রাতের জন্য, সবাই আগেই অলমোস্ট ডিনার সেরে ফেলেছে তাই খাল্কা খাবারের ব্যাবস্থা করছে ও। শত হোক শশুর বাড়ি, যতদিন আছে নিজ হাতে সবটা গুছিয়ে নিতে হবে। মেয়েরা হচ্ছে তরল পদার্থের মতো, যে পরিস্থিতিতেই থাকুক সেই পরিস্থিতে মানিয়ে নিতে পারে আর না চাইলেও আশপাশ বাধ্য করে মানিয়ে নিতে।
তাছাড়া বাড়িতে গেস্ট আছে তাই বাড়ির বউ হিসেবে রান্না করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের এলাকাগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ হচ্ছে বিলের এলাকা।একটা জনপ্রিয় কথা বিদ্যমান ময়মনসিংহকে নিয়ে
‘হাওর-বাওর-মইষের শিং, এই তিন লইয়া মৈমনসিং’
ময়মনসিংহের মানুষরা খুবই ভোজন রসিক। তাদের প্রসিদ্ধ কিছু খাবার রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে~~
মুক্তাগাছার মণ্ডার মিষ্টি, খুদিপিঠা, গৌরিপুরের কাবক, ভুইত্তা কলার পিঠা ইত্যাদি। তাদের জনপ্রিয় পানীয় হচ্ছে ‘চু জাঙি’ যা গারোদের মাঝে খুব জনপ্রিয়। যেহেতু ময়মনসিংহে আছে তাই এখানকার কিছু বানানোর ট্রাই করলো রুশি যা হচ্ছে কাবক।
কাবকের জন্য প্রয়োজন দেশি মোরগ, প্রয়োজন মতো আদা, পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবণ ও সরিষার তেল। মোরগ জবাই দিয়ে ভালোভাবে শরীর থেকে চামড়া ও লোম ছড়িয়ে নিয়ে মোরগের শরীরের বিভিন্ন অংশ লোহার শিকের ভিতর ঢুকিয়ে আগুনে পোড়াতে হয়। তারপর ব্ল্যান্ডারে পেস্ট তৈরি করতে হয় মোরগ, কাঁচামরিচ, আদা ও পিঁয়াজের। এইভাবে মন্ড তৈরি করে সরিষার তেল মাখতে হয়। এইভাবে তৈরি হয় মজাদার কাবক।
রুশি খুব মনোযোগ সহকারে এটাই বানাচ্ছিলো তখনি দেখলো সামু বিড়বিড় করতে করতে আসছে।
“কিগো ননদিনী কাকে বকছো? ”
“তোমার জামাইকে, জানো জংলী বলেছে আমাকে। এমা তুমি রান্নাঘরে এসেছ কেন?”
“এই একটু ভালো লাগলো তাই, ভাবলাম কিছু বানাই ”
“তুমি কাবক বানাচ্ছো!!জানো এটা ভাইয়ার ফেভারিট,মায়ের হাতের তৈরি প্রায় খেতো। মা মারা যাওয়ার পর ভাইয়া আর খায়নি, আজকে হয়তো অনেক খুশি হবে ”
রুশি মুচকি হাসলো,মনের অজান্তেই ও সায়ানের ফেভারিট খাবার বানাচ্ছে।
“আমি হেল্প করবো ”
“নাহ দরকার নেই প্রায় হয়ে এসেছে,আচ্ছা একটা কথা ছিলো তোমার কাকাকে দেখে দাদাজি চলে গেলো কেন?”
“আমার কাকাকে দেখেছো না কি সুন্দর কথা বলছে আমার সাথে!কিন্তু আঠারো বছর আগে এই চিত্র অন্য ছিলো। আব্বু আম্মু যখন মারা যায় তখন সে পুরো সম্পদ নিজের নামে করে নিতে চায় আর বলে সে আমাদের খেয়াল রাখবে কিন্তু দাদাজি রাজি হয়না আর সম্পদ দুইভাগ করে আমার আর ভাইয়ের নামে অর্ধেক আর বাকি অর্ধেক তার নামে দেয়। সে ওইদিন খেপে যায় আর বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। আমাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ ছিলো না। ছয়বছর আগে যখন ভাইয়ের কারণে এসকে কোম্পানির অনেক নাম হয় তখন থেকেই সে আবার আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য উঠে পড়ে লাগে। তবে দাদাজি কেন রেগে আছে তার কারণ আমার জানা নেই কিন্তু সে আসলেই দাদাজি চলে যায়। আর ওইযে ইশানি! ও কিন্তু ভাইয়ের সম্পদ দেখেই ভাইয়ের পিছনে পড়ে আছে। আমার ভালো লাগে না কিন্তু বড় বলে কিছু বলতে পারিনা ”
“থাক মন খারাপ করোনা, যে জিনিস কোমলতায় হাসিল করা যায় তা কঠোরতায় কখনো হাসিল করা যায়না ”
“ঠিক বলেছো ভাবি, তাইতো কিছু বলিনা শুধু ঝামেলা করে কি লাভ?”
“যাও সবাইকে ডাকো আর টেবিলে গিয়ে বসো,আমি সার্ভ করে নিয়ে আসছি ”
টেবিলে চুপচাপ বসে আছে সবাই, খুবই থমথমে অবস্থা। সায়ানের দাদাজির খাবার উপরে পাঠিয়েছে রুশি রুহানের টাও। রুহান তো তার বড় আব্বুর কাছেই থাকছে সারাক্ষণ, মায়ের কথা যেন মনেই নেই।
“ভাই কাবক কিন্তু ভাবি বানিয়েছে তোর ফেভারিট ” সায়ান একবার রুশিকে দেখে কিছু বলতে গিয়ে বললো না, চুপচাপ খাচ্ছে।
“টেস্টটা কেমন যেন আজব, লবণ বেশি আর সো অয়েলি” ইশানি নাক ছিটকে কথা গুলো বললো।
“তোমার মুখে তো এমন লাগবেই ইশানি, কথায় আছে না “যারে দেখতে নারি তার চলন বাকা” আর তুমি যদি লবণ কম খাও তাহলে থায়রয়েড প্রব্লেম হবে। বি কেয়ার ফুল” সামু বলে উঠলো।
রুশি বারবার সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে ও কিছু বলুক। ওর স্ট্যান্ড নিক কিন্তু সায়ান কিছুই বলছে না দেখে রুশি একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলো। সায়ান খেয়ে উঠে গেলো আর সিঁড়ির কাছে গিয়ে বললো
“রুশি…”
“হুম”
“খাবারটা আমার মায়ের মতো হয়েছে, আমার খাওয়া দ্বিতীয় বেস্ট, তুমি প্লেট নিয়ে রুমে চলে আসো আর যার খাওয়ার ইচ্ছে নেই সে চলে উঠে চলে যায় ” বলেই হনহন করে চলে গেলো সায়ান আর রুশি সে পথে চেয়ে মুচকি হাসি দিলো
২০.
“ইনান তুই এখানে?”
সায়ানের কথায় মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে সামনের ছেলেটি। পরনে কালো শার্ট, ব্লু জিন্স, চোখে ব্লাক সানগ্লাস, হাতে দামি ব্রান্ডেড ঘড়ি, সবমিলিয়ে ফরমাল লুকে বেশ লাগছে ছেলেটিকে।
“এখানে একটা কাজে এসেছি বাট আমিতো জানতামই না এখানে তোকে পেয়ে যাবো। তা দিনকাল কেমন কাটছে তোর ”
“আমার তো বেশ কাটছে, বউ বাচ্চা নিয়ে বেশ আছি, তুই তোর খবর বল ”
“শালা বিয়ে করলি কবে আবার বাচ্চার বাপও হয়ে গেছিস? তুমি মামা সব ক্ষেত্রেই ফাস্ট ফাস্ট। তা কবে করলি? ”
“এই কয়েকবছর হয়েছে, তুই বল বিয়ে করেছিস নাকি আগের মতই প্লে বয় রয়ে গেছিস? ভার্সিটিতে তো খুব পপুলার ছিলি, কতো গার্লফ্রেন্ড ছিলো তোর!”
“সে আর বলতে অবশ্যই তোর মত তো নিরামিষ থাকবো না আর, তোকে যারা প্রপোজ করতো তাদেরও তো আমার সামলাতে হতো ”
“সেই আপনিতো হৃদয় বান ব্যাক্তি সকলকেই গ্রহণ করতেন তারপর আবার ছেড়ে দিতেন ”
“নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে হাটাও প্যাশন বুঝলি ”
“তা কতকাল এরুপ চলবে?”
“দোস্ত অনেক আগেই সেসব ছেড়ে দিয়েছি, নাও আই এম ওয়ান উইমেন ম্যান ”
“শালা তুই কবে চেঞ্জ হলিরে? সে মহান নারী কে?”
“আছে কেউ একজন যাকে পেয়ে ওইরকম প্লে বয় হয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়নি, মনে হয়েছে এই সে যাকে পাওয়ার জন্য সকল খুশি ত্যাগ করে দিতে পারি, যাকে দেখার পর অন্য নারীকে দেখতে ইচ্ছে হয়নি ”
“সে নারী আসলেই মহীয়সী যে কিনা তোর মত নালায়েক কেও মানুষ বানিয়েছে।”
“হয়েছে আমাকে নিয়ে বলা বাদ দিন, আপনি যে ড্রিংক করেন তা ভাবি জানে?”
“এহেম এহেম জানলে আর ঘরে ঢুকতে দিবে না, তাছাড়া আমিও ছেড়ে দিয়েছি ওইসব ”
“সেই ভাবিও নিশ্চই মহীয়সী নারী নাহয় তোর এই অভ্যাস বদলানো চারটিখানি কথা নয় ”
“আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছিস? যাইহোক বাসায় চল। কতদিন পর তোকে পেলাম।”
“অন্য একদিন, আজ বিশেষ কাজে এসেছি এখানে ”
“নাহ, তোকে ছাড়ছিনা যাই বলিস না কেন, চল বাসায় চল। পরে কবে না কবে পাই”
“তুই আর বদলালি না, সেই জেদিই রয়ে গেলি ”
“আমি যদি বদলেই যাই তবে আমি তো আমি থাকলাম না আর অন্যকেউ হয়ে বেচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ”
কিছুক্ষণ আগে সায়ান বাড়ির সামনের মেইনরোডে হাটছিলো, বিকালবেলা হাটা ওর একটা অভ্যাস। অন্যদিন রুহান থাকলেও আজ একাই এসেছে কারণ রুহান ঘুমাচ্ছে।রুহান তো তার বড় আব্বুকে ছাড়া কিছুই বুঝে না, অদ্ভুতভাবে সারাক্ষণ তার সাথেই থাকে,এখন আর মাকেও খুব একটা লাগেনা তার। বিলের পাশের রাস্তা দিয়ে হাটছিলো, এখন গাড়ির চলাচল অনেকটা কম। অনেকক্ষণ হাটার কারণে একটু ক্লান্ত লাগছিল তাই বিলের স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে সবকিছু দেখছিল। সামনে রুশির বার্থডে, ভাবছে কোন রোমান্টিক কিছু প্ল্যান করে ওকে সারপ্রাইজ দিবে তাতে যদি মহারাণীর মন একটু গলে!
ঠিক তখনি কাধে কেউ একজন হাত রাখে, আচমকা হাত রাখায় পা পিছলে বিলের পানিতে পড়েই যাচ্ছিল কিন্তু একজোড়া হাত আকড়ে ধরে ফেলে। পেছনে ফিরেই পরিচিত মুখ দেখতে পেলো, ইনান চৌধুরী, সায়ানের ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। এরেন, ইনান আর ও ভার্সিটিতে খুব পপুলার ছিলো, ইনান আর সায়ানের প্রায় এসাইনমেন্ট এরেন করে দিতো। ইনান তো মেয়েতে ব্যস্ত ছিলো আর ও তো অন্যকিছুতেই…
কিন্তু অনার্স শেষ হওয়ার পরেই ইনান চলে আর আর ও আর এরেন থেকে যায়। এরপর আর ইনানের সাথে যোগাযোগ হয়নি, আজ এতবছর পর প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে পাবে ভাবতে পারেনি সায়ান। তাইতো আজ আর হাতছাড়া করছে না।
🌸🌸🌸
“কিগো ননদিনী কার লাগি হঠাৎ এরুপ সাজুগুজু করিতেছ? বাহ আবার শাড়িও পড়ছো দেখছি। পুরু বাঙালীয়ানা।
“যাহ ভাবি এসব কি বলছো, আমার তো এমনি সাজতে মন চাইলো ”
“তাই নাকি!”
“কার লাগি সাজিতেছ কন্যা
গড়িতেছ রুপের বাহার
তোমার সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে
হুশ উড়িবে তাহার ”
~লিজা~
“বাহ আপনি দেখি কবি হয়ে যাইতেছেন দিনদিন, ভাইয়ের ছোঁয়ায় বুঝি ”
“ছি ছি কিসব কথা বলো, বড় হই তোমার। বয়সেও আর সম্পর্কেও ”
“উহ বয়সে বড়, বয়স কত তোমার? ”
“যদিও মেয়েদের বয়স জিজ্ঞাস করা ব্যাড ম্যানার্স তবুও বলছি আমার একুশ বছর, সামনে বাইশ হবে বুজেছ? ”
“ওই একবছরের বড় তাতে কি?”
তখনি কলিংবেল এর আওয়াজ শুনা গেলো, আর সামু তাড়াতড়ি মেকাপ ঠিক করে দৌড়ে নিচে গেলো,হাসিমুখে দরজা খুলতেই সামনে তাকিয়ে হাসি মিলিয়ে গেলো আর মুখটা অটোমেটিক হা হয়ে গেলো। একি দৃশ্য!
২০.১
সায়ান আর ইনান কাধে কাধ মিলিয়ে হেটে আসছে, আর সামু এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, সামনের মানুষটি যে অবাক হয়নি তা কিন্তু নয়। তারতো চোখের পলকই সরছে না, কালো আর লালের মিশ্রণে শাড়ি, হাত ভর্তি লাল চুড়ি আর চোখে মোটা করে দেয়া কাজল। সবমিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, আচ্ছা পরি আর ওর মধ্যে কাকে বেশি সুন্দর লাগতো! নাকি কোন অপ্সরী ভুল করে পৃথিবীতে নেমে এসেছে!
রুশি একবার সামুর দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ওই লোকটির দিকে তাকাচ্ছে, দুজনের মধ্যে যেন চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার কম্পিটিশন চলছে, কেউ একজন পলক ফেললেই হেরে যাবে। রুশির চোখ হঠাৎ সায়ানের দিকে গেলো, এই হাদারাম সেই যে তখন থেকে কথা বলেই যাচ্ছে আর কোন হুশ নেই, এদিকে নিজের বোন যে প্রেমের পুকুরে হাবুডুবু খাচ্ছে, কই তাকে বাচাবে তা না নিজের মতো কথা বলেই যাচ্ছে। আচ্ছা এই এতো হেসে কথা বলছে, কত সুন্দর লাগছে। আর আমার সামনে আসলেই মুখ দিয়ে করলা ঝরে। আবার চুক্তির বিয়ে করে। তোর চুক্তির গুষ্টির ষষ্টি করি আমি।
রুশি গলা ঝেড়ে সামুর কাধে হাত রেখে বললো
“ননদিনী তাকিয়েই থাকবে নাকি গেস্টকে ভেতরেও আসতে দিবে! ”
“হুম তাকিয়ে ছিলাম না তো, জাস্ট ভাবছিলাম কে আর কি!” সামু ঝটপট সরে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো।আর দুই বন্ধু সেই কথা বলতে বলতেই ভেতরে চলে গেলো, সামু রান্নাঘর দিকে হেটে আসছে আর রুশি
“নাহ, তাকিয়ে ছিলাম তো আমি, তবে কেউ একজন বলেছিলো যে সে এমনি সাজছে কিন্তু বেল বাজার সাথে সাথে সেই কিন্তু দৌড়ে এসেছে ”
“কি যে বলোনা, আমিতো এমনি আসলাম কে এসেছে এই সময়ে ”
“আজকেই হঠাৎ মনে হলো কে এসেছে তা দেখার কথা! বুঝি ননদিনী সব বুঝি, তা বলেন যার জন্য এত সাজুগুজু তার নামটি কি আর কোথায় এমন সুপুত্রের দেখা মিললো আপনার? ”
সামু নত মস্তকে বলে উঠলো
“উনার নাম ইনান চৌধুরী, উনি একজন প্রফেসর এবং বিজনেসম্যান।”
“উনিইই… এখন থেকেই উনি? বাহ!”
“ভাবিইই, বলবো না কিন্তু ”
“নাহ থাক আর মজা করবো না তুমি বলো ওই ওনার সাথে দেখা কোথায় হয়েছে তোমার?”
“তিনবছর আগে আমি দাদাজির সাথে বিজনেস টুর এ গিয়েছিলাম ডেনমার্কে। পরে গার্ডদের নিয়ে সেখানে মার্কেট করতে গিয়েছিলাম। লেডিস কর্নারের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম হঠাৎ আমার হ্যান্ডবেগ নিয়ে একজন চলে যায় আর আমি তার পিছনে দৌড়াতে থাকি। গার্ডরা পার্কিং সাইডে ছিলো তাই আমাকে দেখেনি। দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে মার্কেট থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি।
সেখানকার কিছু চিনিনা এদিকে চোর তো ব্যাগ নিয়ে চলে গেছে, ফোন করারও সুযোগ নেই। রাস্তায় বসে ছিলাম অসহায় এর মতো। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয় আর বৃষ্টিতে ভিজা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই, খুব কান্না পাচ্ছিলো আমার। তখন দেখি মাথার উপর বৃষ্টি পড়ছে না কিন্তু পাশে ঠিকই পড়ছে। উপরে তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে বিরক্তি ভংগি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়ি, আর ভয়ের চোটে ইংলিশ ভুলে গেছি তাই বাংলায় বলে ফেলি
“আমার হ্যান্ডবেগ চুরি হয়ে গেছে আর আমার কাছে ফোন নেই, কি করবো বুঝতে পারছিনা ”
“বাঙালি!! ”
“জী “মাথা নিচু করে
“তো এখানে বসে আছেন কেন? আশেপাশে পুলিশ স্টেশনে তো যেতে পারতেন ”
“আসলে এমনটাতো মাথায় আসেনি তার উপর বৃষ্টি হচ্ছে ”
“আশেপাশের ছেলেগুলো আপনাকেই টার্গেট করেছিলো, এখানে নিরাপদ নন আপনি। আসুন বাড়ি পৌছে দেই”
এরপর লোকটি আমাকে ফোন দেয় যাতে কল করে এড্রেস জানতে পারি, এভাবেই তার নাম্বার পাই। তারপর থ্যাংকস বলার জন্য তাকে কফিশপে ডাকি আর তারপর থেকেই কথা শুরু হয় আর এখন পর্যন্ত চলছে।
“বাব্বাহ এতো সিনেমার কাহিনী। তা শুধু কথাই চলছে নাকি অন্যকিছুও চলছে ”
“যাও তো এখান থেকে, আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি ”
“হ্যা হ্যা অবশ্যই, স্পেশাল মেহমান এসেছে না!”
বলেই রুশি বেরিয়ে পড়লো। ভালোবাসাটা হয়তো এমনি হুট করে হয়ে যায় যে নিজেও টের পায়না। আচ্ছা ও কি সায়ানকে ভালোবেসে ফেলেছে! নাকি প্রেমে পড়েছে? ইদানীং তাকে দেখতে, তার কথা শুনতে আর পর্যবেক্ষণ করতে এত ভালো লাগে কেন তাহলে!!
to be continued…