বৈবাহিক চুক্তি পর্ব -২১-২৪ ও শেষ

#বৈবাহিক_চুক্তি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্বঃ (২১_২৪)

২১.

“রুহান তুমি খাচ্ছ না কেন? এভাবে বসে আছো কেন?”

“খাবো না আমি, তুমি খুব পচা।তুমি আমাকে বড় আব্বুর সাথে যেতে দাও নি, খাব না আমি”

“এটা কেমন কথা?দিনদিন অশভ্য হয়ে যাচ্ছ।খাও বলছি ” ধমক দিয়ে বললো রুশি

“খাবো না, খাবো না, খাবো না ”

“রুহান…” বলেই মারতে ধরলে সায়ান এসে হাত ধরে ফেলে, আর রুহান কান্না করে দেয়।কান্না করতে করতে হিচকি তুলে ফেলছো।

“রুশি, ওকে মারছো কেন?ছোট বাচ্চা ও এতকিছু বুঝে না এখনো ”

“মাম্মা অনেক পচা, রুহান হেটস মাম্মা। কথা বলবো না আমি ”

“আচ্ছা বাবাই খাইয়ে দেই?খেতে হবে তো তোমায় নাহয় তুমি বড় হবে কি করে?”

“মাম্মাকে যেতে বলো নাহয় খাবো না, বলো বলো বলো”

“আচ্ছা রুশি তুমি উপরে যাও, আমি ওকে খাইয়ে নিয়ে আসছি ”

রুশি কিছু বলতে গিয়েও বললো না, আজকে দুইদিন ধরেই রুহান এমন করছে কেমন জানি ওকে দেখতে পারেনা। ও কিছু বললেই চেতে যায় আর দৌড়ে বড় আব্বুর রুমে চলে যায়।দুইদিন ধরে ওর সাথে ঘুমায় না এমনকি ওকে দেখতেও পারেনা। আগে তো ওকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না কিন্তু এখন মাকে যেন লাগেই না। রুশি উপরের রুমে এসে পায়চারি করছে।

“বাবাই, তুমি মাম্মাকে ওইভাবে বলেছো কেন? মাম্মা কষ্ট পেয়েছে না?”

“মাম্মাতো একটুও ভালোবাসেনা আমায়,শুধু মারতে চায়। তুমি না এলে তো মারতোই ”

“না বাবা কে বলেছে, মাম্মাতো অনেক লাভ করে তোমাকে। তুমি খাচ্ছিলে না বলেইতো মাম্মা ওমন করেছে,তুমি না খেলে অসুস্থ হয়ে যাবে না!তুমি যদি খেতে তাহলে কি মাম্মা মারতো? কখনোই মারতো না, মাম্মা তার রুহান বেবিকে অনেক ভালোবাসে ”

“তাহলে বড় আব্বুর সাথে যেতে দেয়নি কেন?”

“ওইখানে তো কতো নোংরা কতো জার্মস , বড় আব্বুতো বড় তাই তার কিছু হতো না, কিন্তু রুহান তো ছোট তাই তাকে সব জার্মস রা এটাক করলে রুহান বেবি কি করবে?এজন্য মাম্মা যেতে দেয়নি কারণ মাম্মাতো রুহানকে ভালোবাসে ”

“ওহ মাম্মাকে যে বকা দিয়েছি মাম্মা কি রাগ করছে?”

“হুমম তাতো করেছে একটু, রুহান যদি তাড়াতড়ি খেয়ে মাম্মাকে স্যরি বলে তাহলে হয়তো আর রাগ করবে না ”

“তাহলে তাড়াতড়ি খাইয়ে দাও, মাম্মার কাছে যাবো ”

সায়ান রুহানকে খাওয়াচ্ছিল তার মধ্যেই রুহানের বড় আব্বু ফিরেছে, বয়স তার সত্তরের কোঠায় পৌছালো বলে তবে দেখে বুঝা যায় অনেকটা স্ট্রং তিনি। এখনো লাঠি ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন তবে একটু ঝুকে চলেন।

“রুহান দেখো কি এনেছি তোমার জন্য! ”

“বড় আব্বু এসে গেছে, কি এনেছো আমার জন্য দেখাও দেখাও ”

“এই যে চকলেট আর এই গাড়িটা ”

“কতো সুন্দর গাড়ি!!” রুহান গাড়িটি হাতে নিয়ে চকলেট গুলো খাওয়া শুরু করলো। সায়ান ভাবছে আগে রুহান এতো চকলেট খেতো না কেভিটির ভয়ে তবে দুইদিন ধরে মনে হচ্ছে চকলেটের উপরই আছে। চকলেট ছাড়া অন্য খাবার তেমন একটা মুখে নিচ্ছে না।

“রুহান বাকি খাবার খেয়ে নাও আগে তারপর চকলেট খেও ”

“না আর খাবো না “বলেই দৌড়ে উপরের দিকে চলে যাচ্ছে

“মাম্মার কাছে যাবে না? ”

“পরে যাবো এখন না ” বলেই চলার গতি বাড়িয়ে চলে গেলো, ওকে আর পায় কে!

“দাদাজি এভাবে চকলেট খেলেতো ক্ষতি হবে, ওর জন্য চকলেট কেন আনলেন কেন?”

“কি জানি আমাকে বললো নিয়ে আসতে তাই আনলাম, দুদিন ধরে একটু বেশিই চকলেট খাচ্ছে ও, আমি খেয়াল করেছি। কিন্তু না আনলে তো রাগ করতো ”

“একটু কম আনবেন, ক্ষতি হয়তো খেলে।”

“আচ্ছা আমি বুঝাবো যাতে আর না খায় ” বলেই দাদাজি উপরে চলে গেলেন আর সায়ান রুশির কাছে আসলো।
রুশি রুম জুড়ে পায়চারি করেছিলো, মুখখানি এটুকু করে রেখেছে, সায়ানকে আসতে দেখেই ওর কাছে আসলো

“রুহান কোথায়? ”

“দাদাজির রুমে গেছে, চিন্তা করোনা ঠিক আছে ও। আমি খাইয়ে দিয়েছি ”

“কিভাবে চিন্তা করবো না বলুন দুদিন ধরে কেমন জানি করছে ও, আমাকে মনে হচ্ছে দেখতেই পারেনা”

“এমন ভাবছো কেন তুমি?ছোট বাচ্চা মারতে নিয়েছো তাই এমন বলেছে, ওইটা মনে ধরে রেখেছ কেন? আমাকেও তো বলেছিলো মনে আছে!”

“আমার কেমন অস্থিরতা কাজ করছে মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে ”

সায়ান রুশির চিন্তা বুঝতে পারলো, সন্তানের জন্য মায়েরা একটু বেশিই চিন্তা করে আর একটুতেই অস্থির হয়ে যায়। সায়ান রুশিকে জড়িয়ে ধরে বললো

“অযথা চিন্তা করছো, কিছু হবে না ওর। আমাকে বিশ্বাস করোতো? আমি আমাদের সন্তানের কিছু হতে দিবো না ইনশাআল্লাহ ”

রুশির মনে হলো এই কম্ফোর্টজোনের দরকার ছিলো যে বলবে “আমি আছিতো ভয় কিসের ” কি হচ্ছে কি হয়েছে কিছু মনে করতে ইচ্ছে হচ্ছে না বরং এই সময়টাকে আকড়ে ধরে রাখতে ইচ্ছে করছে, কিছু না ভেবে ও সায়ানকে জড়িয়ে ধরলো আর নিজের ভার ছেড়ে দিলো ওর উপর, কান্না পাচ্ছে খুব করে কান্না পাচ্ছে তাই কান্না করে দিলো। সায়ান বাধা দিতে গিয়েও দেয়নি। কাঁদুক এতে মন অনেকটা হাল্কা হয়, রুশি থেকে থেকে কেপে উঠছে, এভাবে কতক্ষণ জানা নেই,কান্নাটা কমে আসলে সায়ান বলে উঠলো

“তা বাবুর জন্য এতো চিন্তা করছো বাবুর বাবার দিকেও একটু তাকাও, বেচারা প্রেমতৃষ্ণায় কাতরাচ্ছে তোমার একটু ভালোবাসা পাবে বলে কখন থেকে অধীর আগ্রহে বসে আছে ”

রুশির মুচকি হেসে বুকে কিল বসাতে শুরু করলো সায়ানের,

“আরে আরে মারছো কেন?”

“আপনি আর বেচারা! ”

“আমার থেকে বড় বেচারা কে বলতো? সুন্দরি বউ পাশে আছে অথচ তাকে হিসেব করে ভালোবাসতে হচ্ছে ”

“তাই সুযোগের সৎ ব্যাবহার করলেন তাইতো? ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন বলছি ”

“না থাক আর কিছু বলবো না, তবুও ছাড়তে বলোনা ”

রুশি কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ছাড়াতে না পেরে সায়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে আর সায়ান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে, এমন সুযোগ দ্বিতীয় বার নাও পেতে পারে।

“বস কাজ মনে হয়ে গেছে,বাচ্চাটা দেখলেন তো কেমন বিহেভ করলো ”

“হুম দেখলাম, তুমি সবার দিকে নজর রেখো যাতে ধরা না খাও ”

“বস আপনিও সাবধানে থাকবেন যাতে আপনাকে সন্দেহ না করে”

“পুরো দুনিয়ার উপর আংগুল উঠলেও সায়ান জামিল খান আমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না, আচ্ছা রাখি কয়েকদিন হয়তো যোগাযোগ করতে পারবো না কারণ আমার উপর সন্দেহ আসুক চাইনা আমি ”

ইনান বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোধুলি লগ্ন উপভোগ করছে, ময়মনসিংহ শহরটি আসলে অনেক সুন্দর, চারদিকে পানি আর পানি যেন কোন দ্বিপ। তারউপর এই প্রাসাদের মতো বাংলোটি লোকালয় থেকে একটু দূরে। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়েই ছিলো তখন কেউ একজন ওকে জড়িয়ে ধরলো, ও জানে নারীটি কে তবে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, এই মুহুর্তটাকে অনুভব করতে চায় হয়তো এরপর আর কখনো ভাগ্যে নাও থাকতে পারে।

“কিছু বলছেন না যে? এখানে আসার পর একটা কথাও বলেননি আমার সাথে”

“সেই সুযোগ পেলাম কই? ”

“মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায় ”

“আচ্ছা মন থেকে চাই তোমাকে একটা কিস করতে, সেটা কি পাবো? ”

“আপনি সবসময় এমন বেশরম এর মতো কথা বলেন কেন?থাকবোই না এখানে ” হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে ইনান হাত চেপে ধরে

“উহুম এভাবেই থাক, ভালো লাগছে এভাবে থাকতে ”
সামু আর হাত ছাড়িয়ে নিলো না।

“ভাইয়াকে কবে বলছেন আমাদের কথা?”

“কি কথা?”সামনে ফিরে ভ্রু কুচকে বললো,

“আরে এই যে আমাদের মধ্যে আছে আরকি ”

“কি আছে আমাদের মধ্যে! ” না জানান ভান করে

“ও তাহলে কিছু নেই?তাহলে আমি কেনো আছি এখানে চলে যাই ” যাওয়া ধরলেই ইনান বাধা দিয়ে বললো

“কি আছে সেটাতো বলে যাও?”

“কিছুই নেই হয়েছে!”

“কিছুই নেই? আমি আরো ভাবলাম কালকে তোমার ভাইকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা, কিন্তু কিছু যেহেতু নেই তাহলে আর কি করার! ”

“আমি তাই বলেছি নাকি?”

“বলেছো তো ”

“তো আপনিও তো বলেছেন যে কি আছে আআমাদের মধ্যে তাই বলেছে ”

“আমি তো ভাবি অনেক কিছুই আছে আমাদের মধ্যে কিন্তু তুমি কি ভাবো তাই ভাবছি ”

“সবসময় সব কথা মুখে বলতে হয়না, কিছু কথা বুঝে নিতে হয় ”

“আচ্ছা তাই!” বলেই টুপ করে গালে ঠোট ছোঁয়ালো,সামু চোখ বড় বড় করে বললো।

“এই এটা কই করলেন? ”

“তুমি বলেছো তাই করেছি “ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে

“আমি কখন বললাম? ”

“বললে তো আমি শুনেছি ”

“একদম মিথ্যে বলবেন না, আমি মুখ দিয়ে একটা শব্দও করিনি ”

“সব কথা কি মুখে বলতে হয় নাকি? কিছু কথা বুঝে নিতে হয় আর আমি বুঝে নিয়েছি ”

“একদম ফালতু কথা বলবেন না, আমি মোটেও এমনটা বলিনি ”

“ও আচ্ছা তাহলে ভালোলাগে নি তোমার তাইনা। ওকে তাহলে ফেরত দিয়ে দাও ”

“যাহ কি বলেন এসব ” বলে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো

“হাহা পাগলি ”
ইনান চুলে হাত দিয়ে হেসে বললো।

২২.

“কিরে শালা মারছিস কেন এভাবে?”

“চুপ একদম শালা বলবিনা, এটা এখন থেকে আমার অধিকার। সম্মান দিয়ে কথা বল নাহয় কিছুই হবে না বুঝলি!”

ইনান মুখের মাঝে ইয়া বড় এক প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এসেছিলো।আজ তিনদিনে পা দিলো এ বাড়িতে এসেছে কিন্তু আজকেই সায়ানের এমন উদ্ভট ব্যাবহার দেখছে, আসার পর থেকেই মারছে তারউপর কিসব বলছে নিজে বুঝতে পারছে কিনা সন্দেহ

“কি বলছিস এসব?”

“একদম না জানার ভান করবিনা, আমি জানি সবকিছু ওকে!” সিরিয়াস ভংগিতে বললো সায়ান

ইনান একটু কেন জানি ঘামতে শুরু করলো, কি জানে ও? তারপর ভাবলো যদি জানে তাহলে এত নরমালি কথা বলতো না, তবে এখন সায়ান ক্রমশ সিরিয়াস ভাবে কথা বলছে, কি জানে ও!

“রুশি আমাকে সব বলে দিয়েছে বুঝলি! শালা আমার বাড়িতে আমার নাকের নিচে আমারি বোনের সাথে প্রেম করছিস আর আমি টেরই পেলাম না? তুই ব্যাটা সারাজীবনই গভির জলের ফিশ রয়ে গেলি ”

“ওহ, যখন জানিসই তাহলে এখন কি বলিস এ ব্যাপারে? ” রিল্যাক্স মুডে বললো ইনান।

“এটা কি ধরনের কথা? আমি তোর গার্লফ্রেন্ড এর বড় ভাই। কই সম্মান দিয়ে কথা বলবি তানা তুই এটিটিউড দেখাচ্ছিস?যদি আমি রাজি না হই?”

“তোর সাথে আমার সবার আগের সম্পর্ক হলো আমি তোর বন্ধু, আর আমি জানি বন্ধুর সুখের জন্য তুই যেকোন কিছু করবি ”

“শালা প্যাচে ফেলছিস! আমি নাহয় তোর সুখের জন্য সব করবো কিন্তু তুই! তুই কি আমার সুখের জন্য সব করবি?”

“সেটা সময় বলে দিবে “বলেই একটা ব্রেড মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে সেই স্থান প্রস্থান করলো, আর সায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে

“আমাকে ইগনোর করে চলে গেলো?আমি আমার বোনকে বিয়ে দিচ্ছি নাকি তুই দিচ্ছিস? মনে হচ্ছে জোর করে বোনকে চাপাচ্ছি, সায়ান তোর সম্মান দেখি দিনদিন লো হচ্ছে! ইদানীং কি বেশি কথা বলি আমি?”

ইনান সামুর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, নক করতে গিয়েও না করে ভেতরে ঢুকে গেলো। সামু এখনো ঘুমাচ্ছে, রুমে ঢুকে বেশ অবাক হলো ও, একটা টেডি জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে ও। বিশ বছরের একটা মেয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে ভেবেই হাসি পেলো। খুব আস্তে খাটের পাশে সামুর মুখ বরাবর বসে খুব গভীর ভাবে দেখছে।

“আমি জানিনা ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যে কি আছে, তবে এইটুকুর মধ্যে এটা সত্যি আমি তোমাকে খুব করে চাই, সারাজীবন তোমার খেয়াল রাখতে চাই। আমি অনেক খারাপ একটা মানুষ, হয়তো জীবনে অনেক ভুল করেছি সামনেও হয়তো করবো তবে তোমাকে নিজের করার জন্য জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি আছি, আমি চাইলেই তোমার দ্বারা আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি কিন্তু তোমার কিছু হলে যে নিজেকেই হারিয়ে ফেলবো আমি তখন তো জিতে গিয়েও হেরে যাবো। তাই এমন কিছু করবো যাতে সাপও মরে যায় আর লাঠিও ভেংগে যায়, পারলে ক্ষমা করে দিও আমায়। যদি বেচে থাকি তাহলে আবার দেখা হবে ”

ইনান সামুর কপালে ছোট্ট একটা কিস করে উঠে দাঁড়ায় আর পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে সামুর হাতে গুজে দিয়ে যায়। দরজা দিয়ে বের হতেই সায়ানের সাথে ধাক্কা খায়, সায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

“ওই তুই একা আমার বোনের রুমে কি করছিস? বিয়ের আগে আর কখনো একসাথে যাতে না দেখি ”

“হুম” বলে চলে যেতে নিলে সায়ান হাত ধরে বলে

“ঘুমের মধ্যে কি কথা বললি ওর সাথে?ওতো ঘুমাচ্ছে ”

“আজ চলে যাচ্ছি তাই গুড বাই বলতে এসেছিলাম ”

“চলে যাচ্ছিস মানে কোথায় যাচ্ছিস? ”

“ঢাকায়, একটু দরকার আছে ”

“হুম তাড়াতড়ি আংকেল আন্টিকে নিয়ে আসিস, বিয়ের কথা বার্তা বলতে হবে ”

“এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই ওর গ্রেজুয়েশন পর্যন্ত আমি ওয়েট করতে পারবো ” বলে সামুর দিকে তাকালো

“ওকে উঠিয়ে দেই কথা বলে যা ”

“না ঘুমোক, ফোনে কথা বলে নিবো ”

“ওকে, বের হচ্ছিস কখন?”

“এখুনি, গুড বাই ”

“ভালো থাকিস, তোকে খুব মিস করতাম ” বলেই ইনানকে জড়িয়ে ধরলো সায়ান, ইনান হাত উঠিয়ে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরলো না ”

🌸🌸🌸

তিনদিন পর রাত ১২.০৩

রুশি ডায়রি লিখছিলো, সচারাচর লিখার অভ্যাস নেই তবে এই বিশেষ দিনে লিখতে ভুলে না, আজ ওর বার্থডে। কলকাতায় থাকাকালীন সুজি উইশ করতো একটু আগেও ফোন করে উইশ করেছে, ও ছাড়া বাকি কেউ হয়তো জানেই না ওর বার্থডে এর কথা। আজ রুহান ওর সাথে ঘুমাবে। দুইদিন ধরে রুহান ওর সাথে আগের মতো কথা বলে, আগের মতো খেলে। সবকিছু মনে হচ্ছে ঠিক হয়ে আসছে। সায়ান কে ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, এই কয়দিনে এটা বুঝে গিয়েছে যে এই লোকটি ওকে ছেড়ে কখনো যাবে না, তার সাথে যাই করুক তার লাইফের একমাত্র প্রেয়সী শুধুমাত্র সেই। রবি ঠাকুরের একটা উক্তি আছে

“যদি ক্ষমা করতে নাই পারো তবে ভালোবাসো কেন?”

আসলেই তারা দুজনেই পরিস্থির স্বিকার ছিলো আর নিতান্তই ভুলবুঝাবুঝি ছিলো দুজনের মাঝে। তাছাড়া সেদিন এয়ারপোর্টে নিজের চোখে তার শত্রুদের দেখেছে, তারমানে যা বলেছে সব সত্যি। তাই আর রাগ পুষে রাখতে চায়না, কারণ এই রাগের বশে তাদের জীবনের সুন্দর মুহুর্ত গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ও আর কতোদিনই বা বাচবে?তবে যতদিন বাচে এই পরিবারের সাথে বাচতে চায় হাসিখুশি ভাবে। রুশি লিখছিলোই হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যায়, ও ভয়ে জড়োশড় হয়ে যাচ্ছে, অন্ধকারে ছোট থেকেই ভয় লাগে। সায়ানকে ডাকবে কিন্তু আওয়াজ বের করতে পারছেনা। তখনি হালকা সাউন্ড আসছে বারান্দা থেকে, টুংটাং গিটারের আওয়াজ সাথে এককা মিষ্টি সুর,,,

“থোড়ি জাগাহ দে দে মুঝে
তেরে পাস কাহি রেহ যাউ মে
খামোশিয়া তেরি সুনু
অর দূর কাহি না যাউ মে

আপনি খুশি দেকে মে তুঝে
তেরি দারদ সে জুড় জাউ মে

মিলা যো তু ইহা মুঝে
দিলাউ মে ইয়াকিন তুঝে
রাহু হোকে তেরা সাদা
বাস ইতনা চাহতা হু মে ”

সায়ান চোখ বন্ধ করে গান গাইছিল, চোখ খুলেই পাশে রুশিকে দেখতে পেলো, গিটারটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়াল তারপর পাশের রাখা গিফট বক্সটা নিয়ে বললো
“হ্যাপি বার্থডে”

“থ্যাংক ইউ” বলে গিফট হাতে নিলো ছোট্ট একটা বক্স র‍্যাপিং করা, বুঝাই যাচ্ছে রিং এর বক্স।

“খুলে দেখো ”

রুশি র‍্যাপিং খুলতেই একটা কালো রঙয়ের একটা বক্স, বক্সটা খুলার আগেই সায়ান নিয়ে নিলো তারপর নিজেই খুললো। প্লাটিনামের দুটি কাপল রিং, খুব সুন্দর ডিসাইন এর। রুশির সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো

“আই নো আই মেড প্লেন্টি অফ মিস্টেকস, হয়তো ক্ষমা করার মতো না, তবুও বলছি আমাকে কি একটাবার ক্ষমা করা যায়না! আমি সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই, আমি তোমাকে খুব করে চাই আর সারাজীবন চাইবো। একটা সুযোগ দিবে আমায় ভালো হাজবেন্ড হওয়ার ”

রুশি কি বলবে বুঝতে পারছেনা,চোখ গড়িয়ে দুফোটা জল পড়লো, এমন সারপ্রাইজ ও কখনো পায়নি। কিছু বলতেও যেন মুখে বাজছে তাই হাত বাড়িয়ে দিলো, সায়ান তার উত্তর পেয়ে গিয়েছে তাই রুশির হাতে পরিয়ে দিলো তারপর দাঁড়িয়ে রিং এর বক্স এগিয়ে দিলো, রুশি মুচকি হেসে রিং পরিয়ে দিলো।

তারপর হাত এগিয়ে দিলো ডান্স করার জন্য, বেকগ্রাউন্ডে মিউজিক চলছে খুব আস্তে

I need your love
I need your time
When everything’s wrong
You make it right
I feel so high
I come alive
I need to be free with you tonight
I need your love…

ডান্স করতে করতে রুশির খুব কাছে চলে এসেছে সায়ান, একপাশের চুলগুলো সরিয়ে গলায় গভিরভাবে ঠোট ছোঁয়াল, তারপর কানের কাছে আস্তে করে বললো “মে আই?” রুশির শক্ত করে জড়িয়ে ধরা যেন সব না বলা কথা বলে দিচ্ছিলো, রাত যত গভীর হচ্ছে অনুভুতিরা তত জড়োশড় হচ্ছে আর দুটি মন এক হওয়ার আকুতিতে ব্যস্ত, অপেক্ষা শুধু সময়ের,,,

২৩.

“স্যার আপনি সব জেনেও চুপ করে আছেন কেন?”

“আমিও দেখতে চাই আমার কাছের মানুষটি আমাকে কত আঘাত করতে পারে ”

“কিন্তু এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে”

“ক্ষতিটা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উপর থাকবে আমি টু শব্দটুকু ও করবো না কিন্তু আই সয়ার যদি আমার ফেমিলির উপর একটা আচড়ও আসে তাহলে এই দুনিয়ায় তার শেষ মুহুর্ত হবে সেটি ”

“আপনার বোনতো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাকে সাবধান করে দেয়া উচিৎ নয় কি?”

“আমার বোন সেই মানুষটিকে খুব বিশ্বাস করে তাই তার সেই বিশ্বাস ভাংতে চাই না, ওর জীবন থেকে এই মানুষটি চলে গেলে ও এই ধাক্কা সামলাতে পারবে না। বাবা মায়ের ধাক্কা অনেক কষ্টে সামলে উঠেছে ও। তাইতো ওকে চোখে চোখে রেখেছি আমি। সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানো?
তুমি জানো সামনের মানুষটি মিথ্যা বলছে, যেটা দেখাচ্ছে সে আসলে সেটা না তবুও তার সাথে তুমি হাসি মুখে কথা বলছো। কারণ আমি দেখতে চাই আমার প্রান প্রিয় বন্ধু ঠিক কতোটা নিচে নামতে পারে। এটা দেখার মজাই আলাদা বুজছো!”

“স্যার তাহলে আগে কি করবেন? এভাবে চলতে থাকলে তো কোম্পানির স্টক মার্কেট অনেক লো হয়ে যাবে তাছাড়া একটার পর একটা কন্ট্রাক্ট আমাদের হাত ছাড়া হচ্ছে ”

“আমাদের একটা কোম্পানির কন্ট্রাক্ট হাতছাড়া হচ্ছে কিন্তু বাকিগুলো তো ঠিকই আছে। তাছাড়া এই ব্রাঞ্চ ছাড়া বাকি ব্রাঞ্চ গুলোর খবর তেমন কারো জানা নেই তাই এই কোম্পানি হাত ছাড়া বিশেষ কোন ক্ষতি হবে। গেম তো মাত্র শুরু হয়েছে, এখনো তো অনেক দেখার বাকি। নিজের লেভেলের কারো সাথে খেলার মজাই আলাদা বুঝলে! আর সে যদি হয় নিজের কেউ! তুমি সব কিছুর দিকে নজর রাখো আর আমাকে আপডেট করতে থাকো”

“ইয়েস স্যার, সেদিক থেকে নিশ্চিন্তে থাকুন ”

“ও আমাকে হারিয়ে যে আনন্দ পাচ্ছে তাতে আমিও খুব মজা পাচ্ছি, আমি লাগাম ছেড়ে দিয়েছি ও যা করার করুক, যখন লাগাম ধরে টান দিবো তখন বুঝতে পারবে সায়ান জামিল খান কি করতে পারে” পেপার ওয়েট ঘুরাতে ঘুরাতে

তখনি সায়ানের ফোন বেজে উঠে,আর অপরপাশ যা শুনলো তা শুনার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না

“আমি বলেছি ইনান তুই আমাকে যাই করিশ আমি কিছু বলবো না কিন্তু আমার ফেমিলির কিছু হলে ছেড়ে কথা বলবো না। তুই কাজটা ঠিক করিশ নি এবার আমি যা করবো তা করতে তুই আমাকে বাধ্য করেছিস ”

বলেই পেপার ওয়েটটি সজোরে ফ্লোরে আঘাত করলো, মুহুর্তেই সেটি বিভিন্ন খণ্ডে পরিণত হলো, সায়ান দ্রুত পায়ে বের হলো, খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে, গন্তব্য সিটি হসপিটাল। একটু আগেই রুশি ফোন করেছে যে রুহান অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে আর তাকে হসপিটালে নেয়া হয়েছে। আজ কয়েকদিন ধরেই রুহান কেমন জানি করছলো, সারাক্ষণ শুয়ে থাকে আর কিছু খেতে চায় না, খেলেও বমি করে দেয়। সায়ান গাড়িটা পার্ক করে ছুটলো ২০৩ নং কেবিনের দিকে, কেবিনে পৌঁছেই দেখলো রুহান বেডে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে, মুখে অক্সিজেন মাস্ক আর হাতে ক্যানেলা লাগানো। পাশেই রুশি যেন পাথর হয়ে বসে আছে, কিন্তু থেকে থেকে কেপে উঠছে আর চোখ গড়িয়ে জল পড়ছে। সামু পাশে বসেই শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে। রুশির দিকে এগিয়ে যাবে তখনি দাদাজি কেবিনে ঢুকলো, সায়ান দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো তার কাছে

“কি বলেছে ডাক্তার? কি হয়েছিলো ওর আর এখন কেমন আছে?”

“ডক্টর ভেবেছিলো ফুড পয়জনের কারণে এমন হয়েছে কিন্তু ওয়াশ করার পর বুঝতে পেরেছে যে ড্রাগস এর কারণে এই অবস্থা। ওর পেটে হাই ডোজের ড্রাগ ছিলো কিন্তু বমি হওয়ায় অধিকাংশ বের হয়ে গেছে তাই ততটা ক্রিটিকাল অবস্থা হয়নি। হি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার নাও কিন্তু অনেকটা দুর্বল তাই রেস্টের প্রয়োজন”

সায়ান হাত মুঠো করে ফেললো, ওর ছোট্ট ছেলেটাকে ছাড় দেয়নি ও, যদি এখন চোখের সামনে পেতাম তাহলে খুন করে ফেলতাম ইউ রাসকেল,বেরিয়ে যেতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে ফিরে আশে।

“দাদাজি ওইযে চকলেট আপনি আনতেন রুহানের জন্য সেটা কোথা থেকে আনতেন? ”

“আমি তো জানি না, ওইযে তুমি যে বডিগার্ড নিয়ে এসেছিলে না? কি নাম যেন!ওকেই আনতে বলতাম আমি। কেন কি হয়েছে? ”

“নাহ কিছুনা, আপনি এই দিকে থাকেন আর ওদের খেয়াল রাখেন আমি বডিগার্ডদের বলে যাচ্ছি সুরক্ষা বাড়িয়ে দিতে ”

সায়ান গাড়ি ড্রাইভ করে ঢাকার দিকে যাচ্ছে, অনেক হিসাব বাকি আছে যা আজ চুকাতে হবে, তুই জানিসনা তুই আমার কোথায় হাত দিয়েছিস ইনান, তোর সব কিছু ক্ষমা করলেও এর হিসাব তোকে দিতেই হবে।

“বস ইনান স্যার এখন ময়মনসিংহে আছে আর আপনার বাড়ির দিকেই আসছে ”

“হুম আসছি আমি। তুমি আসলে যাতে না যেতে পারে সেই ব্যাবস্থা করো ”

“শিকার নিজেই হাতের কাছে ধরা দিচ্ছে, তাকে ছিঁড়ে খাওয়ার মজাই আলাদা” স্টেয়ারিং এ হাত রেখে বাকা হাসি দিয়ে।

🌸🌸🌸

সায়ানের সাথে হিসাব মিলানোর বাকি আছে এখনো, ও জানে এখন সায়ান বাড়ির দিকেই আসছে তাই বসে আছে ওর জন্য। আজ অনেক প্রশ্নের জবাব চাই ওর সাথে বদলাও। যেই প্রতিশোধের আগুন ছয় বছর ধরে পুষছে তা এতো সহজে নিভে যায় কি করে? যেদিন জানতে পেরেছে ওর ভালোবাসার মানুষ ওরই শত্রুর বোন তখন খুব কষ্ট লেগেছিল। একবার মনে হচ্ছিলো সব শেষ করে দেই কিন্তু কি করে শেষ করবে সব? যাকে ছাড়া নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় তাকে ছাড়া থাকা সম্ভব নয় তাই প্লেন বদলে ফেলেছে। যেখানে এটাক করতে এসেছিলো সেটা বদলে অন্য জায়াগায় এটাক করার চিন্তা করলো আর তা করেছেও। বাংলাদেশে “এসকে গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস” এখন এক থেকে তিন এ নেমে এসেছে আর কয়েকদিনে টপ টেন থেকে বের হতে সময় লাগবে না। আর অন্য ক্ষেত্রে তো…

মেইনডোর খুব শব্দ করে খুললো সায়ান ও জানে ইনান ভেতরে আছে, ঢুকেই ইনানের রিল্যাক্স মুডে সোফায় বসে থাকাটা হজম হলো না ওর। কাছে এসেই কলার চেপে ধরে দাড় করালো ওকে আর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারা শুরু করলো,ইনান মার খেয়েও হাসছে যা দেখে সায়ানের রাগ আরো বেশি বাড়ছে আর ও আরো বেশি মারছে ওকে। সায়ানের এই আহত বাঘের ন্যায় গর্জন দেখে ইনান ভালোই বুঝতে পারছে তীর নিশানা বরাবর গিয়ে লেগেছে।

যখন ইনানকে মারছিল তখনি হুট করে একজন সায়ানকে সামনে ফিরিয়ে ঘুষি মারলো আর একজন এসে ওর হাত পেছন থেকে ধরলো। সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে সায়ান অবাক হলো, “ঘরের শত্রু বিভীষণ” বলে একটা উক্তি রয়েছে আর সেটার জলন্ত প্রমাণ চোখের সামনে দেখতে পেলো। সায়ানের চাচা জাহিদ খান স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে, চাচার সাথে ওর ভালো সম্পর্ক কোনকালেই ছিলো তাই বলে ওর চাচা শত্রুপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে সত্যিই মিরজাফর হয়ে গেলো, নিজেকে সত্যি মেঘনাদ ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর আর বলতে ইচ্ছে করছে
“হায় তাঁত তব কর্মে ইচ্ছে মরিবারে”
কিন্তু যে তার হাত ধরেছে তাকে দেখে মোটেও অবাক হলো না, ওরই এসিসট্যন্ট ধরে রেখেছে ওকে। ওর এই অবাক চাহনি দেখে ইনান হাসলো আর আঙুল দিয়ে নিয়ে ঠোটের কোনে লেগে থাকা রক্ত মুছছে।তারপর সায়ানের চুল মুঠ করে ধরলো, আঁহ নামক অস্ফুট শব্দ বের হলো সায়ানের মুখ থেকে।

“কেমন লাগছে মি.সায়ান জামিল খান,নিজের বাসায় নিজের সবচেয়ে বড় শত্রুর সামনে হাটু গেড়ে এইভাবে বসে থাকতে? কোথায় গেলো সেই সায়ান জামিল খান যার ইশারায় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপতো?আন্ডারওয়ার্ল্ড এর বাদশা ওফফফ স্যরি সাবেক বাদশাহকে এইভাবে নিজের সামনে নত শীরে বসিয়ে রাখতে আমার কিন্তু সেই লাগছে। ”

বলেই নিজের মনের সাধ মিটিয়ে মারছে ওকে, সায়ান যখন কিছুটা দুর্বল হয়ে গেলো তখন বললো

“কিরে বললি নাতো কেমন ফিল হচ্ছে তোর নিজেরই বন্ধুর এত বড় ধোকার সম্মুখীন হতে?”

সায়ান শান্ত চাহনিতে তাকালো তারপর বললো

“কেন করলি এটা তুই আমার সাথে?” বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও বলছে

“আমারো একি প্রশ্ন কেন করলি এটা আমার সাথে?, ছয়টা বছর শুধু এটাই ভেবে এসেছি আমার ফ্রেন্ড আমার সাথে এটা কি করে করতে পারলো! আর প্রত্যকটা মুহুর্তে ভেবেছি তোকে সামনে পেলেই তোর এই বা পাশ গুলি করে ঝাজরা করে দিবো যাতে তুই তোর বোন, বউ আর বাচ্চাকে রাখিস”

“কি করেছি আমি?বল কি করেছি?”

“সাহিল ছেড়ে দাও ওকে, ও এমনিতেই আর আমাকে এটাক করার পজিশনে নেই ”

ইনানের কথামতো সাহিল ওকে ছেড়ে দিলো কিন্তু পকেট থেক গান বের করে ওর মাথায় ঠেকালো,

“জানতে চাচ্ছিলি না কি করেছিস? লয়ার এহসান চৌধুরীকে মনে আছে? যাকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলি তুই কারণ তোর লোকের বিরুদ্ধে লড়ছিল সে আর তোর কথামতো লড়া বন্ধ করেনি তাই! জানিস সে কে ছিলো? আমার বাবা ছিলো সে, তার মৃত্যুতে আমার যতোটা না বেশি কষ্ট হয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট হয়েছে এটা জেনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার বাবার খুনি ”

“জানিস বিশ্বাস করতাম না আমি যে তুই এতো নিকৃষ্ট যদি না এটা দেখতাম ” বলেই কতোগুলো ছবি ছুড়ে মারে সায়ানের দিকে, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একজন মাঝ বয়সী লোকের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে আছে সায়ান, সায়ান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে,

সায়ান স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে ওই ছবিটির দিকে, ছবিটির ঘটনা সম্পুর্ণ সত্যি, বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি ওই ছিলো। ও ভাবতেও পারেনি অতীত এভাবে হানা দিবে ওর লাইফে, যে অতীতের ভয় ও প্রত্যকটা দিন পায় যার নিজের সন্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে সেই অতীত ওর দ্বারপ্রান্তে।

“কি মনে পড়েছে? মনে পড়ারই কথা এতবড় খুন করে ভুলে যাওয়ার কথা না, আচ্ছা তোর বউ তোকে ক্ষমা করতে পারবে এটা জানার পর যে তুই একটা খুনি, হাজারো মানুষের রক্তে তোর এই হাত লাল হয়ে আছে?”

সায়ান ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো, রুশি ওকে কখনোই মেনে নিবে না যদি জানতে পারে ও আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া ছিলো। কখনোই হয়তো ক্ষমা করবে না।

২৪.১

“ইচ্ছে তো করছে মেরে ফেলি তোকে কিন্তু না এত সহজে তোকে মরতে দেয়া যাবে না, এখনো আরো অনেক কিছু বাকি আছে ”

“হাহাহা হাহাহা “হাসিতে ফেটে পড়লো সায়ান, হাসতে কষ্ট হচ্ছে তবুও হাসছে, তারপর উঠে দাঁড়াল আর শার্ট ঠিক করে চুলে হাত দিয়ে বললো

“কেমন লাগে যখন মনে হয় সবকিছু তোর অনুযায়ী চলছে অথচ তোকেই অন্য একজন নাচাচ্ছে, বুঝলিনা তো?সাহিল… ”

তখনি সায়ানের দিকে পয়েন্ট করা গান সাহিল ইনানের মাথায় ঠেকালো, ইনান অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাহিলের দিকে

“তোর সবচেয়ে বড় ভুল কি জানিস, তুই আমাকে সায়ান জামিল খানকে আন্ডারেস্টিমেট করেছিস। ভুলে গেছিস তুই আমার এক আঙুলের ইশারায় পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড হেলে যেতো, আর তুই আমাকে আন্ডারওয়ান্ড কিং কে বোকা বানাচ্ছিলি?আমি ওই জগত ছেড়ে দিয়েছি তবে মানুষটি কিন্তু আমিই আছি। এই যে তোর আশেপাশের যাদের ভাবছিলি যে তোর কাজ করেছিলো! ওরা আসলে আমার কথায় তোর সাথে ছিলো। তাকিয়ে দেখ ভালো করে সব আমার লোক আর আমার ইশারায় তোকে মেরে গেড়ে রেখে দিবে ”

“সেই আমি এত সহজে ভুলে গেলাম কি করে যে তুই একটা খুনি, দ্যা গ্রেট ভিলেন সায়ান জামিল খান ” ইনান ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো।

“আমি আন্ডারওয়ার্ল্ড এর কিং ছিলাম কথাটা সত্য কিন্তু আমি কখনো কোন নির্দোষ মানুষকে মারিনি, যারা আমাকে মারতে এসেছে আমি তাদের মেরেছি ”

“তাহলে ছবিগুলো মিথ্যে, এইখানের মানুষটি তুই নস? ”

“আমি তা বলিনি, এইছবির সিন সম্পুর্ণ সত্যিই তবে তুই যা জানিস তা পুরোটা সত্যি নয় ”

“হুহ পুরোটা সত্যি নয়! তুই যতই নির্দোষ প্রমাণ করতে চাসনা কেন তুই খুনি ছিলি আর থাকবিও। আমাকে মেরে ফেললেও সত্য মিথ্যে হয়ে যাবে না”

“তুই জানিস তোর বাবা কার পক্ষ হয়ে কেস লড়ছিলো? লরেন লিউস এর হয়ে যে কিনা রেপ, উইমেন ট্রাফিকিং, মার্ডার, কিডন্যাপ এমন কোন কাজ নেই যে করেনি, ক্যালিফোর্নিয়ার ডন ছিলো সে। একটা মেয়েকে রেপ করার ট্রাই করেছিলো তার লোক কিন্তু করতে না পারায় মেয়েটিকে মেরে ফেলে ও আর আমার দলের লোক সেটাই দেখেছিল। যেহেতু ওকে ওইখানে শেষ করতে পারেনি তাই ওর নামে মিথ্যে রেপিং এর কেস দিয়ে দিয়েছে আর এমেরিকা এই ব্যাপারে কত স্ট্রিক্ট তা তো জানিসই তুই। আমি তোর বাবাকে বারবার বলেছি লরেন লিউস এর হয়ে কেস লড়তে না কিন্তু সে শুনে নি।তাই তাকে কিডন্যাপ করে এনে বুঝাচ্ছিলাম কিন্তু সে বুঝেনি ”

“আর তাই তাকে মেরে দিয়েছিস? তাইনা!”

“নাহ মারিনি বরং বুঝাচ্ছিলাম তবে আমার হাতে গান ছিলো যেটা দিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে পিছু হটতে বলছিলাম কিন্তু সে সরেনি। পরে লরেন লিউসের বিরুদ্ধে তথ্য তাকে দিয়েছি সাথে প্রমাণও আর সে কেস বন্ধ করে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে বলেছিলো লড়বেনা তাই আমি নিজে তাকে তার অফিসের নিচে নামিয়ে দিয়ে এসেছি”

“এই মিথ্যে কাহিনী বানাতে কতক্ষণ সময় লেগেছে তোর?”

“আমি মিথ্যে বলছি! সব স্বিকার করে নিলাম যদি এটা করতাম তাহলে এটাও স্বিকার করতাম ” বলেই ইনানকে ঘুষি মারলো সায়ান,ইনানের কলার চেপে ধরে বললো

“কিন্তু তুই, তুই কি করেছিস? আমার বদলা আমার ছেলের উপর নিচ্ছিলি? ওকে ড্রাগস দিয়ে মেরে ফেলতে চাইছিলি?তোর যা বদলা তুই আমার উপর নিতি, আমাকে মেরে ফেলতি কিন্তু আমার ছেলের দিকে নজর দিলি কেন?”

বলেই পাল্টাক্রমে দুজন দুজনকে মারতে লাগলো, সাহিল এগিয়ে এসেও থামাতে পারেনি তাই রুশিকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য, কারণ সায়ানকে একমাত্র রুশিই থামাতে পারবে।

“আর ইউ মেড আমি তোর ছেলেকে কেন টার্গেট করবো? হ্যা মানছি অনেক আগে আমি তোর ছেলে সন্তানকে খুজে তোকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তাদের ক্ষতি করার ইচ্ছা আমার কখনোই ছিলো না। তাছাড়া আমি প্লেন অনেক আগেই চেঞ্জ করে তোর কোম্পানিকে টার্গেট করেছি যা তুই নিশ্চয় টের পেয়েছিস ”

“তাহলে তুই আসার পর থেকে আমার ছেলের এই অবস্থা কেন হয়েছে?আর ওর শরীরে ড্রাগস কোথা থেকে আসলো? ”

“সেটা আমি কি করে জানবো? আমি তোর উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছি কিন্তু তোর ফেমিলিকে কখনো টার্গেট করিনি। তুই ভাব যদি ফেমিলিকে টার্গেট করারই থাকতো তাহলে তোর একমাত্র বোনকেই তো টার্গেট করতে পারতাম আমি কিন্তু আমি এতোটাও নিকৃষ্ট নই। তাছাড়া আমি সামুকে ভালোবাসি অনেক টাই বেশি ওর কিছু হওয়া কল্পনাও করতে পারিনা। আর ভাবি আর রুহানকে তো কখনোই টার্গেট করবো না, ও ছোট একটা বাচ্চা সায়ান। এত নির্দয় আমি নই ” সায়ান ওকে মারার জন্য হাত উঠিয়েও নামিয়ে ফেললো, কারণ ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও যা বলছে সত্যি বলছে আর ওর কথা ঠিক। চাইলেই ও সামুকে টার্গেট করতে পারতো কিন্তু ও তা করেনি এর মানে অন্যদেরও টার্গেট করবে না। তাহলে এসব করছে কে?

“ইনান আমার মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে আমাদের মধ্যে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্রিয়েট করছে, আমি তোর বাবাকে সত্যিই মারিনি ” শান্ত স্বরে বললো সায়ান।

“তাহলে কে মেরেছে বল আমার বাবাকে? বল?”সায়ানের দিলে তেড়ে এসে বললো।

“ইনান স্যার, বস যা বলছে সত্যি বলছে, বস তার যে লোকের কথা বলেছে সেই লোকটি আমিই ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আপনার বাবা কেস লড়ছিলো কিন্তু শেষ মুহুর্তে উনি বলেছিলেন যে এই কেস উনি লড়বেন না। আমরা নিজে ওনাকে সেখানে নামিয়ে দিয়ে এসেছি”

“আচ্ছা এইটা বল তোর বাবা কিভাবে খুন হয়েছে?”

“তাকে গুলি করা হয়েছিলো আর শরীরে অনেক আঘাত ছিলো ”

“দেখ এই ছবিতে আমি গান হাতে ছিলাম কিন্তু আমি মেরেছি এমন কোন প্রমাণ আছে?”

“ওয়েট বস… স্যার আপনার বাবা কত তারিখে খুন হয়েছে? মনে আছে আপনার? ”

“ওই তারিখ আমি কি করে ভুলতে পারি, ২৭ আগস্ট ছিলো সেই দিন”

“দেখুন এই ছবির এইখানে ২৫/৮ দেয়া, মানে এটা ২৫ আগস্টের ঘটনা, মানে তার দুইদিন পর আপনার বাবা খুন হয়েছে। এই দুইদিন আপনার বাবা বাসায় যায়নি? ”

“হুম এসেছে আর ২৬ তারিখ আমরা ঘুরতেও গিয়েছিলাম ”

“তাহলে আপনি জানেন আপনার বাবা ওই কেস থেকে সরে গিয়েছিলো, তাই আমাদের তাকে মারার কোন রিজনই ছিলো না তাছাড়া আমরা নির্দোষ মানুষকে কখনো মারিনি”

“তাহলে আর কে মারবে আমার বাবাকে? তুই যদি না মারিস ”

“বাকি কে থাকে তাহলে যার হয়ে তোর বাবা কেস লড়েনি?”

“লরেন লিউস?”

“হুম, তুই জানিস! আমি আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলাম ক্লাবে ফাইটিং করার পর থেকে, আমাকে বলেছিলো ফাইট শিখাবে কিন্তু কখন যে জড়িয়ে গিয়েছি বুঝতেই পারিনি। আর দুই বছরের মধ্যেই আন্ডারওয়ার্ল্ড কিং হয়ে গিয়েছি কিন্তু তবে আমি কোন পাপকাজে নিজেকে জড়াইনি ”

“যদি তুই নির্দোষ হয়ে থাকিস তাহলে ছেড়েছিস কেন?”

“কারণ ওইযে ওই কর্ণারের ছেলেটি আছেনা? ওর নাম হচ্ছে এমরে, ও একটা মেয়েকে পছন্দ করতো কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ড এ থাকার কারণে তাকে মেরে ফেলেছে শত্রুরা, এটা দুই বছরে প্রথম ভয় হয় আমার সামুকে নিয়ে, কারণ ওইমেয়েটির জায়াগায় আমি সামুকে দেখতে পাচ্ছিলাম তাই ছেড়ে দিয়েছি কারণ আমি চাই আমার ভুলের মাশুল আমার বোন দিক। ছাড়াটা সহজ ছিলো না কিন্তু আমি জোর করে চলে এসেছি
ওই জগতে ঢুকা যত সহজ কিন্তু বের হওয়া ঠিক ততটাই কঠিন। আমার অতীত আমার পিছু ছাড়েনি। তুই জানিস কতবার মৃত্যুর দ্বার থেকে বেচে ফিরেছি আমি?”

“তারমানে তুই বাবাকে মারিস নি তাহলে আমাকে এমন ছবি পাঠিয়ে তোর বিরুদ্ধে খেপালো কেন?”

“কেউ একজন চায় আমরা নিজেরাই নিজেদের মেরে ফেলি আর সে এক ঢিলে দুই পাখি মেরে ফেলুক ” বলেই দুজন সায়ানের চাচার দিকে তাকালো তখনি দেখে ওর চাচা ওদের দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে আর সাহিল ওর চাচার দিকে বন্দুক তাক করে আছে।

“চাচাজান বলে দিন কেন এসব করেছেন? ”

“অবশ্যই সম্পত্তির জন্য, তোর দাদা তোদের বেশির ভাগ সম্পদ দিয়েছে কিন্তু আমাকে ফিফটি পার্সেন্ট বলে মাত্র ৩০% দিয়েছে।ওই লোককে তো আমি প্রায় মেরেই ফেলেছিলাম কিন্তু বেচে ফিরলো কি করে কে জানে! কিন্তু আমি তোর একা শত্রু না আরো…”
আর কিছু বলার আগেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, রক্তে মেঝে লাল হয়ে গেলো, সায়ান ইনান দুজনেই ভরকে গেলো। সায়ান গুলির উৎস খুজতে লাগলো তখনি পরিচিত কন্ঠ ভেসে উঠলো

সায়ান অস্ফুট স্বরে বললো “লরেন লিউস”

২৪.২

কিছুক্ষণ পুর্বে ~~

“কে ফোন করেছে বউমনি? তোমাকে এত টেন্স দেখাচ্ছে কেন?”

“সাহিল ফোন করেছে সামু, ইনান আর সায়ান নাকি ফাইটিং করছে, ওদের সামলাতে পারছেনা তাই আমাকে যেতে বলেছে ”

“হঠাৎ ভাই আর ও মারামারি কেন করবে? সিরিয়াস কিছু হয়নি তো?”

“ওইখানে অনেক আওয়াজ হচ্ছিলো, সাহিল স্পষ্ট করে কিছু বলেনি শুধু বলেছে তাড়াতাড়ি যেতে ”

“ভাবি আমিও যাবো তোমার সাথে, চলো”

“আমরা চলে গেলে রুহান এর কাছে কে থাকবে?ওকে একা ফেলে যাওয়া তো সম্ভব না ”

তখনি রুহানের বড় আব্বু বলে উঠলো

“তোমরা দুজন যাও বউমা, আমি আছি এখানে তোমরা টেনশন করোনা ”

“জি দাদাজি, নিজের আর ওর খেয়াল রাখবেন আর কিছু হলে জানাবেন আমাকে ”

“তুমি নিশ্চিন্তে যাও বউমা”

রুশি তাড়াতাড়ি সামুকে নিয়ে বের হলো, ও এটাই ভেবে পাচ্ছেনা এত ভালো বন্ধুদের মধ্যে হঠাৎ কি হলো? যে ওরা এত এগ্রেসিভ হয়ে গেলো আর মারামারি পর্যন্ত করছে। বাচ্চা নাকি সায়ান! মানুষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার চেষ্টা করে আর উনি সোজা এক্সটিম হয়ে গেলেন। আর পারিনা বাবা, মনে হচ্ছে দুটো বাচ্চা পালছি।

সায়ান আর ইনান সামনে শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখলো টিভিতে একজনকে দেখা যাচ্ছে কোন এক গাড়ির ভিতরে, মাথায় ক্যাপ পড়া জায়গাটা কিছুটা অন্ধকার তাই চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।

“হোয়াটস আপ গাইজ?এভ্রিথিং ইজ ফাইন বিটউইন ইউ?ওহ লুকস লাইক এভ্রিথিং ইজ ফাইন”

“হু আর ইউ?হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট ফ্রম আস?” সায়ান চেঁচিয়ে বললো

“হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট, ওয়েট! “বলেই কিছু একটা করলো তারপর বললো “কেমন আছো দাদুভাই?”

সায়ান থমকে গেলো কয়েকসেকেন্ডের জন্য তারপর ইনানের দিকে তাকালো ও ভুল শুনেছে কিনা!ইনানও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
স্ক্রিনে থাকা মানুষটিকে দেখে যেন চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে আর গলা হঠাৎ করে চেঞ্জ!

“কি বিশ্বাস হচ্ছে না?আমারো বিশ্বাস হয়নি কিন্তু দেখো এই চেহারা একদম অবিকল তোমার দাদার মত তাইনা! হাহাহা উপসস ওয়েট ” বলেই গলার পাশ থেকে কিছু একটা খুলে বললো
“এবার চিনতে পারছো আমায় ” গলায় স্বর পরিবর্তন হওয়াতে সায়ানের বুঝতে দুই সেকেন্ড ও লাগলো না,হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বললো

“লরেন লিউস?”

তখনি রুশি আর সামু তাড়াহুড়া করে ভেতরে ঢুকলো,সামু আর কিউরিসিটি ধরে রাখতে না পেরে বললো “তোমরা নাকি মারামারি করছিলে?কি নিয়ে করছিলে মারামারি?”

“আরে বউমা আর আমার সুন্দরি নাতনিও দেখছি আছে এখানে, একটা কথা বলি তোমাদের এই দাদাজি সাজতে গিয়ে আমার হাতের দুটো পাখি হাতছাড়া হয়ে গেছে যাদের কাছে থেকেও কিছু করতে পারিনি, নাহয় ধরা খেয়ে যেতাম তো ”

রুশি আর সামু যেন কিছুই বুঝতে পারছেনা, যদি চোখের ভুল না হয় তাহলে সামনে দাদাজি বসে আছে কিন্তু কন্ঠ! তা একদমি মিলছেনা, কে এই লোক?

“মুখ সামলে কথা বল নাহয় তোকে পুতে রেখে দিবো তোকে ” চিল্লিয়ে বললো ইনান

“কন্ট্রোল ইয়াং ম্যান কন্ট্রোল! এইটুকু শুনেই এই অবস্থা সামনের গুলো শুনলে কি করবে হাহাহা,”

“দাদাজি কোথায়? কি করেছিস তার সাথে?”

“তোমাদের অনেক প্রশ্ন তাইনা আমি কে? আর এই চেহারা! সায়ান তোর দাদাজি তো নেই পাঁচ বছর আগেই ভুমম, কিন্তু আমি মারিনি তাকে এই তোর চাচাকে দেখছিস সে মেরেছে। মনে আছে তোর দাদা পাঁচবছর আগে ডেনমার্কে গিয়েছিলো?সেখানে তার এক্সিডেন্ট হয় আর অপারেশন করা লাগে? কিন্তু তারতো অপারেশন হয়নি হয়েছে আমার! তোর দাদাতো সেইদিনই মারা গেছে আর আমাকে বাচানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আমি তখন পুলিশের হাত থেকে বাচতে হসপিটালে রোগি সেজে ছিলাম আর তখনি তোর দাদার লাশ আসে আর আমি জানতে পারি আমার সবচেয়ে বড় শত্রুকে শেষ করার এর থেকে ভালো উপায় নেই তাই ওইদিন অপারেশন করে পার্মানেন্টলি লরেন লিউস থেকে সায়ান জামিল খানের দাদা হয়ে গেলাম আর তার সাথে পার্মানেন্টলি থাকা শুরু করলাম ”

“তারমানে তুই বলেছিস যে তুই আমার বউকে চিনিস, কলকাতায় তুই আমাকে মারতে লোক পাঠিয়েছিস, আমার উপর হওয়া সকল এটাক তুই করেছিস আর রুহানকে ড্রাগস তুই দিয়েছিস তাও সে দুইদিন যে দুইদিন ইনান ছিলো যাতে সন্দেহ ইনানের দিকে থাকে আর তুই বেচে যাস?”

“ইয়াহ, সব আমি করেছি তার থেকে বড় কথাকি জানিস ওইযে ইনানের কাছে ছবিগুলো আমি পাঠিয়েছি,তোর বউ কলকাতায় কখন কি করেছে সব আমি জানতাম আর তোর বাচ্চাকে শুধু ড্রাগস দেইনি হিপনোটাইজ ও করেছি তাইতো আমার রুম ছাড়া অন্য কোন রুমে যেতেই চাইতো না ”

“কেন করেছিস এসব?”

“সিম্পল তোকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য। তুই আমার বিরুদ্ধে প্রুফ পুলিশকে দিয়ে আমার লাইফ হেল করেছিস, আমি তোর লাইফে এসে তোর লাইফ হেল করেছি ”

“বাবাই, মাম্মার কাছে যাবো, আমার হাত খুলে দাও কষ্ট হচ্ছে, বাবাই… ”

“শুনতে পাচ্ছিস তোর ছেলের আওয়াজ দাড়া দেখাই কোথায় আছে “বলেই কিছু দূরে থাকা গাড়িটির দিকে কেমেরা ঘুরালো,তারপর একটা রিমোট হাতে নিয়ে বললো “এই যে এটা টিপ দিলেই গাড়িটা বুমমম
হাহাহা ”

“দেখ তোর যা চাই তা আমি তোকে আমি দিবো, দরকার হয় আমাকে মেরে ফেল তবুও ওকে ছেড়ে দে ”

“কিন্তু আমার যা দরকার তাতো আমি পেয়ে গিয়েছি তাই তোর জীবন দিয়ে কি করবো বরং তুই সারাজীবন আফসোস কর ওকে…”বলেই রিমোটে ক্লিক করলো আর বিকট শব্দে সামনের গাড়িটি ব্লাস্ট হয়ে গেলো

“রুহান… সায়ান আমার ছেলেকে কি করেছে ও। আমার রুহান কি তাহলে আর মাম্মা বলে ডাকবে না আমায়? আমার রুহানকে এনে দাও তুমি, সব তোমার জন্য হয়েছে না তুমি আমার লাইফে আসতে না আমার ছেলের কিছু হতো, আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না কখনো না “বলে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো

সায়ান যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেইটাই হয়েছে, ওর ছেলেকে ও নিজের অতীত থেকে বাঁচাতে পারেনি, ওর লাইফের একটি অতীত ওর বর্তমান ভবিষ্যৎ সবকিছু নষ্ট করে দিলো, রুহান আর কোনদিন ওকে বাবাই বলে ডাকবে না, ওর মিষ্টি হাসি আর কোনদিন দেখা হবে না ওর। এই মুহুর্তে নিজেকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর, এই দুনিয়ার সবচেয়ে ব্যর্থ বাবা ও। ও ক্ষমা ডিসার্ভ করেনা, এটারই যোগ্য ও।

🌸🌸🌸

আট মাস ১১দিন পর

হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে সায়ান, রুশি অপারেশন থিয়েটারে। সেদিন রুশি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল তারপর ও জানতে পারে রুশি মা হতে চলেছে,কি রিয়াক্ট করা উচিৎ ছিলো ওর জানা ছিলো। রুশি হয়তো বেচে আছে শুধুমাত্র ওর সন্তান আসবে জেনে, কিন্তু অতিরিক্ত স্ট্রেসে ছিলো তাই ডেটের পুর্বেই বাচ্চা সিজার করতে হচ্ছে।

“মিস্টার খান আপনার মেয়ে হয়েছে, কনগ্রাজুলেশন”

সায়ান স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটির দিকে, যদি রুহান থাকতো তাহলে ওর দুটি সসন্তান হতো।

“আমার স্ত্রী? ও কেমন আছে ”

“উনি ভালো আছেন কিছুক্ষনের মধ্যেই ওয়ার্ডে শিফট করা হবে ”

সায়ান বাচ্চাটিকে কোলে নিলো,ওর অজান্তেই চোখের পানি ঝরছে।

“ভাইয়া দেখি বাবুকে দেখি?” সামুর কোলে বাবুকে দিয়ে করিডোরে থাকা বেঞ্চে বসলো।সামু আর ইনানের বিয়ে হয়েছে পাচ মাস হলো। ওরা খবর শুনেই ছুটে এসেছে

“আগে কি করবি? “কাধে হাত রেখে বললো ইনান

“জানিনা তবে লরেন লিউসকে ছাড়বো না আমি, ওকে হাজারবার মারলেও আমার শান্তি হবে না ” হাত মুঠো করে

কিছুক্ষণ পর~~

সায়ান কেবিনে রুশির পাশে বসে আছে আর রুশি বাবুকে কোলে নিয়ে বসে আছে

“যদি একটা কথা বলি রাখবেন?”

এই আটমাসে এই প্রথম ওর সাথে কথা বললো রুশি, সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই বললো

“হুম”

“আপনি লরেন লিউসের কিছু করতে যাবেন না ”

“কেন? ওকে তো আমি জ্যান্ত পুতে রেখে দিবো” চোয়াল শক্ত করে

“আপনার জন্য আমি আমার এক সন্তানকে হারিয়েছি, ওকে হারাতে চাইনা, আমার উপর দয়া করুন। প্লিজ আপনার জীবনের সাথে আমার সন্তানের জীবন জড়িত তাই আমাকে কথা দিন আপনি কিছুই করবেন না, আমাকে আর আমার সন্তানকে এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে চলুন যেখানে আপনার অতীত আমাদের ছুতে পারবে না “ঢুকরে কেদে উঠে,সায়ান রুশিকে জড়িয়ে ধরে বললো

“হুম চলে যাবো দূরে কোথাও আমরা যেখানে কেউ খুজে পাবেনা আমাদের ”

কিছু কিছু গল্পের সমাপ্তিতে নতুন গল্পের সুচনা হয়, হয়তো নতুন রুপে নতুন কাউকে নিয়ে।

~~সমাপ্ত~~

(আজকে গল্পটা শেষ হয়ে গেলো, খারাপ লাগছে যে কাল থেকে আর দিতে হবে না। এই গল্পে আমি অনেক সাড়া পেয়েছি তাই এতদিন ধরে যারা আমার সাথে ছিলেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ,আমার সকল পাঠকদের মনের গহিন থেকে শুকরিয়া জানাচ্ছি। আমি কোন পাকাপোক্ত লেখিকা নই, শখের বসে লিখা বলতে পারেন ফেভারিট পাস টাইম। তাই যাদের মতো হয়নি তাদের মন থেকে স্যরি বলছি।
আমি সায়ান আর রুশিকে অনেক মিস করবো, আপনারা করবেন??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here