#জোর_করে_ভালোবাসবো_তোকে ❤
……. (সিজন ২)
#পর্ব – ২
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
রেহান – রাতে কিভাবে পার পাও আমি দেখে নিবো। ওয়েট করো।
রেহানের কথায় আঁচলের বিন্দু মাত্র পরিবর্তন নেই। সে হেসেই যাচ্ছে। রেহান রেগে রুম থেকে বের হয়ে আসে।
বিকেলে….
ফোনের রিংটোনে আঁচল লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।
বিরক্তি নিয়ে ফোন টা হাতে নিতেই দেখে রেহানের কল।
আঁচল – ওফফ! এই লোক টা অলটাইম আমার ঘুমের ১৩ টা বাজানোর জন্য রেডি থাকে। ধুররর….
আঁচল ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠে….
— বেইবি কি করছো?
আঁচল – আমার মাথা আর আপনার মুন্ডু করছি। কেনো কোনো সমস্যা?
রেহান – আঁচল… এই সব কেমন কথা? (ধমক দিয়ে)
আঁচল – ওও আমি কিছু বললেই দোষ? আর আপনি যে আমার সাধের ঘুমের কিমা বানিয়ে দেন তখন?
রেহান – হোয়াট….! ঘুমের কিমা! আর ইউ ক্রেজি?
আঁচল – এতো ফটর ফটর না করে ফোন টা রাখুন।
রেহান – আঁচলললল…..(রেগে)
আঁচল – আ আমার খুব ঘ ঘুম পাচ্ছে। (ভয়ে ভয়ে)
রেহান – ওকে বেইবি তুমি ঘুমাউ তাহলে। বাসায় এসে কথা হবে কেমন? খোদা হাফেজ।
আঁচল – খোদা হাফেজ।
রেহান ফোন টা রাখতেই আঁচল আবার ধপাস করে বিছানায় শুয়ে ঘুম দেয়। এতো ঘুম যে কই থেইকা আসলো বেচারি নিজেও বুঝতাছে না।
সন্ধার একটু আগে রেহান বাড়ি চলে আসে।
এসে ড্রয়িং রুমে দেখে শুধু তার মা আর রিমি বসে টিভি দেখছে।
রেহান – মা আঁচল রুমে একা একা কী করছে?
তোমাদের সাথে বসে আড্ডা দিলেই তো পারতো।
রিমি – ভাইয়া ভাবি তো ঘুমাচ্ছে।
রেহানের মা – হ্যা রে। মেয়েটা দুপুর থেকে পড়েপড়ে ঘুমিয়েই যাচ্ছে তুই একটু গিয়ে দেখনা কি হলো। আমি কপালে হাত দিয়ে দেখে আসলাম জ্বর বলে তো মনে হলো না।
রেহান – আচ্ছা আমি দেখে আসছি।
রেহান রুমে গিয়ে দেখে আঁচল বাচ্চাদের মতো হাত পা এলোমেলো করে শুয়ে ঘুমাচ্ছে।
রেহান আঁচল কে দুই একটা ডাক দেয়। তাও উঠে না।
রেহান নিজের ব্লেজার টা খুলে রাখে তারপর আঁচল কে কোলে তুলে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। বেসিনের সামনে দাড় করিয়ে নিজেই আঁচলের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। পানির ছিটা পেয়ে আঁচলের ঘুম যেনো চান্দের দেশে চলে যায়।
আঁচল হাত দিয়েই মুখটা মুছে রেহানের দিকে তাকায়।
আঁচল – কখন এলেন? (শান্ত গলায়)
রেহান – এখনি।
আঁচল – তাহলে ফ্রেশ হয়ে নিতে পারতেন।
রেহান – হ্যা আমি ফ্রেশ হতে গেলে তো আপনি আরও ঘুমানোর সুযোগ পেতেন তাই না? সন্ধ্যা যে হয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল আছে?
আঁচল – কী বলেন! সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে!
রেহান – হুম। এখন যাও কফি বানিয়ে আনো দুইটা। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি ওকে (আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে)
আঁচল মুচকি হেসে চলে যায়। রেহান ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে থাকে। আঁচল কফি বানিয়ে আনতেই একটা নিজের হাতে নেয় আরেকটা আঁচল কে দেয়।
রেহান একহাতে কফির মগ টায় চুমুক দিয়ে আরেক হাতে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে আঁচলকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।
আঁচল – আরেহ! কফিটা খেয়ে নিন না।
রেহান – খাচ্ছিই তো।
আঁচল আর কথা বলে না। চুপচাপ রেহানের কোলে বসেই কফিটা শেষ করে।
রাতে…
সবাই একসাথে ডিনার করতে বসে। তার মধ্যেই রেহানের বাবা বলে…
রেহানের বাবা – রেহান একটা কথা ছিলো। যেহেতু রিমিও এখানেই আছে তাই কথা টা বলাই যাই।
রেহান – কী বাবা?
রেহানের বাবা – আশরাফ আমার বিজনেস পার্টনার ছিলো একসময় এখন অবশ্য বন্ধু ও বলতে পারিস। ওর ছেলে বাহিরে ছিলো এতো দিন গত সপ্তাহে দেশে এসেছে।
রেহান – বাবা, আশরাফ আংকেলের কথা বলছো?
রেহানের বাবা – হ্যা। ও তো কতো বারই আমাদের বাড়িতে এসেছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তোর বিয়েতে ওত এসেছিলো। কিন্তু ওর ছেলে দেশের বাহিরে থাকায় আসতে পারে নি।
রেহান – হ্যা। কিন্তু কি হয়েছে?
রেহানের বাবা – ও কাল আমার সাথে দেখা করেছিলো। ওর ছেলে আর রিমির বিয়ের ব্যাপারে কথা বলেছে আরকি।
রেহান – কী বলছো!
রেহানের মা – হ্যা। তোর বাবা আমাকেও বলেছিলো কথাটা। আমি বলেছি আগে তোদের মতামত নেয়া যাক পরে না হয় উনাকে জানাবো।
রেহান – তোমরা যদি ভালো মনে করো তাহলে তাই করো আর যদি রিমি রাজি থাকে তো। তাছাড়া আশরাফ আংকেল খুব ভালো মানুষ। উনার পরিবারের সবাই উনার মতোই। ছেলেটা ও হয়তো ভালো মনের মানুষই হবে। যদি কোনো দিন দেখিনি।
রেহানের বাবা – ছেলে তোদের পছন্দ হবেই। আমি মোবাইলে ছবি দেখেছিলাম।
রেহানের মা – তুমি দেখেছো আমরা তো দেখিনি। রিমি ওত দেখেনি।
রেহানের বাবা – আহা আসলে তো দেখতেই পাবে নাকি।
রেহান – হ্যা তাও ঠিক আমাদের বাসায় একদিন ইনভাইট করলে কেমন হয়?
রেহানের বাবা – হ্যা তাই করো।
রিমি মাথা নিচু করে চুপচাপ সব শুনছিলো। তারপর উঠে নিজের রুমে চলে যায়।
রেহানের বাবা – রেহান….রিমির কি হলো?
রেহান – ওসব তুমি ছাড়ো তো বাবা। আমি ওকে জিগ্যেস করে নিবো নি।
রেহানের মা – হ্যা তাই করিস। তোর কাছে নিশ্চয় সব বলবে।
রেহান – ওকে মা — রেহান উঠে নিজের রুমে চলে যায়। আঁচল ও তার পিছন পিছন যায়।
রেহান – আঁচল…
আঁচল – হ্যা
রেহান – তুমি একটু রিমি কে জিগ্যেস করবে ওর কি হয়েছে? আই মিন ও কি কাউকে ভালোবাসে?
আঁচল – আচ্ছা আমি জিগ্যেস করবো।
রেহান – হুম।
আঁচল বিছানায় শুতে গেলেই রেহান আঁচলের হাত চেঁপে ধরে…
আঁচল – আহহ হচ্ছে টা কী? রাতেও কি শান্তি মতো ঘুমাতে দিবেন না নাকি? সারাটা দিন তো আমার ঘুম পন্ড করে দিতে আপনি সদা প্রস্তুত!
রেহান – সারা দিন যাই করি না কেনো তোমার কি মনে হই এখন তোমাকে ছেড়ে দিবো?
আঁচল – তার মানে?
রেহান – সকালের বদলা নিবো বেইবি।
আঁচল – হুহহ অসভ্য…
রেহান আঁচলের দু’চোখে চুমু দিয়ে আঁচল কে কোলে তুলে নেয়।
সকালে…
আঁচল রেহানের আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। কিন্তু তাতে কি?
অসভ্য টা তো বেচারি কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আঁচল অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।
এখন তো প্রচুর রাগ উঠছে এই লোক টার উপর। এই ভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর কোনো মানে হই। এই লোক টা তো আমার জীবনটারে ত্যানা ত্যানা বানাই দিলো গো।
অনেকক্ষণ যাবৎ অনেক চেষ্টা করেও আঁচল রেহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। অবশেষে রেগে রেহান কে ধাক্কা মারে৷
ভাগ্যিস! একটুর জন্য বেচারা নিচে পড়ে যায় নি। না হলে তো আজ আঁচলের কপালে মহা দুঃখ ওয়েট করতো!
রেহান রেগে আঁচলের দিকে তাকায়…
রেহান – সমস্যা কী তোমার? শান্তি মতো একটু ঘুমাতেও দিবেনা নাকি?
আঁচল – আহারে…! ঘুমান না আপনাকে বারন করলো কে শুনি তাই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন?
রেহান – বউ তুমি আমার। তোমাকে জড়িয়ে ধরবো না তো কাকে ধরবো শুনি।
আঁচল – দরকার হয় রাস্তার সাইডে বড় বড় কারেন্ট এর খাম্বা গুলারে জড়াই ধরেন… যত্তসব! — বলেই হনহন করে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।
রেহান বেচারা তো পুরাই বেকুব হয়ে গেলো। বউ থাকতে শেষে কিনা কারেন্টের খাম্বা জড়াই ধরবো!! ছিঃ ছিঃ
রেহান ও শুয়া থেকে উঠে বিছানায় গম্ভীর মুখ করে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পরই আঁচল ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
আঁচল কে দেখেই রেহানের মুখের গম্ভীর ভাব টা দূর হয়ে যায়।
মেরুন কালার শাড়ি মাথায় টাওয়েল পেচানো! রেহানের মনে উথালপাতাল শুরু করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট!
রেহান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আঁচলের দিকে তাকিয়ে আছে। আর এক পা এক পা করে এগুচ্ছে।
আঁচল রেহানের চাহনি দেখে একখান ঢোক গিয়ে। সাত পাঁচ না ভেবেই দিলো এক দৌড়৷
রেহান থেমে যায়। কী হলো এটা!
রেহানের তো এবার ঘোর লাগার বদলে রাগ উঠছে।
এই মেয়েটা সব সময় তার রোমান্স এ জল ঢেলে দিবেই। ইচ্ছে করে তুলে একটা আছাড় দিই।
আঁচল রেহানের রুম থেকে বের হয়ে সোজা রিমির রুমে চলে আসে।
এসে দেখে রিমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে…
আঁচল – রিমি…
রিমি – হ্যা ভাবি বলো…
আঁচল – একটা কথা বলতে চাইছিলাম। যদি অনুমতি দাও তো বলি…?
রিমি – ও মা ভাবি! এই ভাবে কেনো বলছো। একটা কেনো একশো টা বলো। আগে তুমি বসো তো।
আঁচল মুচকি হেসে রিমির কাছে বসে।
আঁচল – আচ্ছা রিমি তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
রিমি আঁচলের কথা শুনে চমকে যায়।
রিমি – কেনো ভাবি? হটাৎ এই কথা?
আঁচল – আসলে তখন বাবা তোমাকে কিছু বলছিলেন কিন্তু তুমি কোনো জবাব না দিয়েই চলে এসেছো। তাই মনে হলো।
রিমি – না ভাবি। আমার এমন কিছুই নেই। আসলে আনইজি লাগছিলো তাই….
আঁচল – বুঝতে পেরেছি লজ্জা পাচ্ছিলে নিশ্চয়। (মুচকি হেসে)
আঁচলের কথায় রিমি মাথা নিচু করে হালকা হাসে। যার মানে হ্যা বুঝায়!
আঁচল – তাহলে কি তুমি রাজি?
রিমি – হ্যা ভাবি মা বাবা যা বলে তাই হবে।
আঁচল – লক্ষী মেয়ে! আচ্ছা তোমার ভাইয়াকে বলে আসি গিয়ে। সেও অনেক টেনশনে ছিলো এই ব্যাপার টা নিয়ে। আর হ্যা… তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। ব্রেকফাস্ট করবে।
রিমি – ওকে ভাবি।
রেহান অফিসের জন্য রেডি হয়ে বসে আছে। এমন সময় আঁচল রুমে আসে…
আঁচল – শুনুন…
রেহানের কোনো সাড়া নেই। আঁচল রেহানের এমন আচরণে বেশ অবাক হয়।
আঁচল – আরে শুনুন না…
এবার ও রেহানের কোনো রেসপন্স নেই।
আঁচল – নিশ্চয় ঐ সময় টার জন্য রেগে আছে। ধুরর আমিও না!
আঁচল ভাবছে কিভাবে রেহানের রাগ টা ভাঙানো যায়।
কিন্তু না!
আঁচলের ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে রেহান করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আঁচল বেচারি তো পুরো থ মেরে বসে আছে।
মা গো মা এতো রাগ দেখাতে হই নাকি! হুহহহ
আঁচল ও রেহানের পিছন পিছন নিচে নেমে আসে।
সবাই খাবার টেবিলে আঁচল দ্রুত গিয়ে রেহানের জন্য একটা চেয়ার রেখে অপর টায় নিজে বসে পড়ে।
রেহান – মা আমি কেন্টিনে খেয়ে নিবো। একটু কাজ আছে তাই তারাতারি যেতে হবে।
রেহানের মা – আরে একটু কিছু তো খেয়ে যাবি নাকি।
রেহান – না মা কিছু খাবো না আমি আসছি।
আঁচলের ভাবনায় আবারও এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে রেহান হনহন করে অফিসে চলে যায়।
আঁচল বেচারির মুখখানা দেখার মতো হয়েছে। এই বুঝি কেঁদেই দিলো!
চলবে…