জোর করে ভালোবাসবো তোকে ২ পর্ব ৩

#জোর_করে_ভালোবাসবো_তোকে❤
……. (সিজন – ২)
#পর্ব – ৩
#writer_শিফা_আফরিন_মিম

🍁
আঁচলের ভাবনায় আবারও এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে রেহান হনহন করে অফিসে চলে যায়।
আঁচল বেচারির মুখখানা দেখার মতো হয়েছে! এই বুঝি কেঁদেই দিলো!

রিমি – ভাইয়ার যে কী হয় মাঝে মাঝে ধুররর…

আঁচল খাবার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়।

রেহানের মা – কী হয়েছে আঁচল? খাবে না তুমি?

আঁচল – না মা আমার ক্ষিদে নেই।

রিমি – কেনো যে ক্ষিদে নেই সেটার গন্ধ আর কেউ না পেলেও আমি ঠিকই পেয়েছি। (চোখ মেরে)

আঁচলের এই মূহুর্তে ইচ্ছে করছে রিমি কে সোজা মঙ্গলগ্রহে সেন্ট করে দিতে। যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে হয়তো সে তাই করতো!

আঁচল কোনো কথা না বলে রুমে চলে যায়।

রেহানের বাবা – যাহহ! ছেলেটাও না খেয়ে চলে গেলো এখন মেয়েটাও গেলো!

রেহানের মা – রিমি গিয়ে একটু পর খাবার দিয়ে আসবে নি। তোমরা খাওয়া শুরু করো। ওর হয়তো ভালো লাগছে না তাই চলে গেছে।

রেহানের বাবা – আচ্ছা রিমি কাল চলে গেলি এভাবে? তোর কি কোনো আপত্তি ছিলো আমাদের ডিসিশন এ?

রিমি – না বাবা। আপত্তি কেনো থাকবে?তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটাই করো। আমার কোনো সমস্যা নেই।

রেহানের বাবা – সত্যিই বলছিস?

রিমি – হ্যা বাবা। (মাথা নিচু করে)

আঁচল রুমে এসে রাগে জ্বলছে। ইচ্ছে করছে দুই ভাই বোন কে এক বালতি পানিতে চুবিয়ে মারতে। কি অসভ্য রে বাবা! ভাই রাগিয়ে দিয়ে গেলো আর বোন রাগের পরিমাণ বাড়াতে ব্যাস্ত!

অফিসে যাওয়ার পর আর এক বারও রেহান ফোন করে নি। দুপুরের দিকে ফোন দিতেই আঁচলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

আঁচল – যত্তসব আজাইরা ঢং। সারা সকাল কেটে দুপুর হয়ে গেলো এতোখনে উবার ফোন দেয়ার ইচ্ছে হলো। ধুরর…ধরবোই না।

কয়েক বার ফোন টা বাজার পরও আঁচল রিসিভ করে নি।

এদিকে রেহান বেচার মনে ভয় ঢুকে যায়। হলো টা কী এই মেয়ের। ফোন কেনো তুলছে না।
রেহান আর কিছু না ভেবে সোজা বাড়ি চলে আসে।

বেল বাজাতেই রিমি গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

রিমি – ভাই তুই এই টাইমে বাসায়?

রেহান – আসলে মাথা ব্যাথা করছিলো তাই চলে আসলাম।

রিমি – ওহ ভালো করেছিস।

রেহান – আঁচল কোথায়?

রিমি – ভাবি তো সেই সকাল থেকেই মুখ ভার করে নিজের রুমে বসে আছে। আচ্ছা তোরা ঝগড়া করিস নি তো? মেয়েটা সকালে খেলো ও না।

রেহান – ও খায়নি?

রিমি – না।

রেহান – ঠিক আছে আমি দেখছি।

রেহান রুমে চলে আসে। আঁচল শুয়ে ছিলো। কারো আসার শব্দ পেয়ে উঠে বসে।

রেহান রাগি লুক নিয়ে আঁচলের কাছে আসে।

রেহান – সকালে খাও নি কেনো?

আঁচল – এমনি।

রেহান – মানে? (রেগে)

আঁচল – এমনির কি কোনো মানে আছে নাকি আগে জানতাম না তো!

রেহান – এই ভাবে কথা বলছো কেনো আঁচল?

আঁচল – তাহলে কোন ভাবে বলবো?

রেহান – উঠো খেয়ে নেবে চলো।

আঁচল – আমি খাবো না। আপনিই গিয়ে গিলতে থাকুন।

রেহান – আঁচল প্লিজ চলো আমার ও ক্ষিদে পেয়েছে অনেক।

আঁচল – আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসুন।

রেহান মুচকি হেসে আঁচলের গাল টেনে দেয়।

রেহান – আসছি তুমি যাও।

আঁচল নিচে এসে দেখে অলরেডি সাবাই খাবার রেডি করেই বসে আছে।

রিমি – এইযে তুমি নিচে নামলে তাহলে?

আঁচল – কেনো?

রিমি – আবার বলছো কেনো তাইনা? সকাল থেকে যে ঘরে বসে আছো এক বারও তো নিচে নামো নি। সকালে খাও ও নি। নিশ্চয় ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছিলো?

আঁচল – না তেমন কিছু না।

রেহানের মা – আঁচল রেহান কোথায়?

আঁচল – উনি ফ্রেশ হয়ে আসছেন মা।

রিমি – তুমি খাবার রেডি করে ফেলো মা ভাইয়া ও বোধহয় সকালে খায়নি।

রেহান ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসে।

রেহানের বাবা – রেহান আমি আশরাফ কে ফোন করেছিলাম।

রেহান – কি বললো উনি?

রেহানের বাবা – বলেছে কাল আসবে।

রেহানের মা – ভালো করেছো। আসলে ছেলেটাকেও দেখা হয়ে যাবে।

রেহানের বাবা – হ্যা সেটাই তো।

আঁচল – মা একটা কথা ছিলো।

রেহানের মা – হ্যা বলো…

আঁচল – আসলে আজ উনার সাথে একটু শপিংমলে যেতে চাইছিলাম। কিছু কেনাকাটা ছিলো।

রেহানের মা – হ্যা যাও। সমস্যা নেই। আর রেহান তুই তো আছিস ই।

রেহান – হ্যা মা।

রেহানের মা – তাহলে আঁচলকে নিয়ে যাস বিকেলে।

রেহান – ওকে।

বিকেলে…

আঁচল শপিং এ যাবার জন্য রেডি হচ্ছে। কিন্তু সে ঠিক করেছে তার সাথে রিমি কেও নিয়ে যাবে।
রিমি বেচারি তো খুশিতে গদগদ!

রেহান, আঁচল আর রিমি তিন জনই বের হয়।

রেহান ড্রাইভিং সীটে বসে। রিমি আর আঁচল পেছনের সীটে।

রেহান রেগে ওরা দু’জনের দিকে তাকায় যার মানে এটাই ওরা দু’জন রেহানকে ড্রাইভার মনে করছে নাকি!
দু’জনই অবুঝের মতো একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয়।

শপিংমলে গিয়ে আঁচল রিমির জন্য একটা শাড়ি কিনে যেটা কাল তাকে পড়াবে বলে ঠিক করে রেখেছে।
সাথে কিছু মেচিং জুয়েলারি ও কিনে। রেহানের জন্য ও একটা পাঞ্জাবি আর নিজের জন্য একটা শাড়ি নেয়।

শপিং শেষ করে তিনজন রেস্টুরেন্ট থেকেই ডিনার করে আসে।

বাসায় এসে আঁচল ফ্রেশ হয়ে নেয়। সকালে সব রান্না বান্না সে করবে বলে ঠিক করে রেখেছে। তাই বেশিরাত না জেগে শুয়ে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর রেহানও এসে আঁচল কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।

আঁচল রেহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

আঁচল – আমি অনেক এক্সসাইটেড জানেন! রিমির বিয়েতে অনেক মজা করতে পারবো তাইনা।

রেহান – তুমি কি করে জানলে বিয়েটা হবেই। এখনো তো আমরা ছেলেকেই দেখলাম না। (ভ্রু কুঁচকে)

আঁচল – আরে এটা নিয়ে নো টেনশন কারন বাবার পছন্দ কখনো খারাপ হবে না। আমি জানি বাবা বেস্ট কাউকেই রিমির জন্য পছন্দ করে রেখেছে। যেমনটা আপনার জন্য করেছিলো! (চোখ মেরে)

রেহান – ওহ বাবাহ! তাই বুঝি? তুমি বেস্ট তাইনা?

আঁচল – কেনো কোনো সন্দেহ আছে নাকি?

রেহান – কোনো কি বলছো? পুরোটাই সন্দেহ!

আঁচল – মানে! (রেগে)

রেহান – রাগ করছো কেনো বেইবি। তুমি যে অলওয়েজ আমার মুড টার ১২ টা বাজাও সেটা বেস্ট তাইনা? অন্য কেউ হলে তো এমন করতো না! (চোখ মেরে)

আঁচল রেহানের কথা শুনে আরও রেগে যায়।

আঁচল – বাহ! এখন আর আমাকে ভালো লাগবেই না জানি! তো জান না বেস্ট কাউকে গিয়ে খুঁজুন। (মুখ ঘুরিয়ে)

রেহান বেশ বুঝতে পেরেছে আঁচল ক্ষেপেছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আঁচল কে টেনে নিজের কাছে আনে।

রেহান – তুমিই আমার জন্য বেস্ট বুঝলে!

আঁচল – হয়েছে। পাম দেয়া লাগবে না।

রেহান – জ্বী এবার কথা না বলে ঘুমান। সাকালে তো উঠতে হবে নাকি।

আঁচল – হ্যা। অনেক কাজ আছে।

রেহান আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে…

আঁচল সবার আগেই উঠে সব নিজে নিজেই রেডি করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই রেহানের মা কিচেনে এসে আঁচল কে কাজ করতে দেখে বলে…

রেহানের মা – একি আঁচল! এতো সকালে উঠে পড়লে যে? আর এই সব এখনি করতে হবে না তো বোকা মেয়ে। উনারা আসতে তো আরও অনেক সময় বাকি আছে তাইনা।

আঁচল – তাতে কী মা। ধীরেসুস্থে সব রেডি করে রাখি না।

রেহানের মা – আচ্ছা ঠিক আছে। আর শুনো রিমি কে কিন্তু তুমি রেডি করিয়ে দিও কেমন।

আঁচল – ঠিক আছে মা।

দুপুরের দিকে…

সবাই চলে আসে। আঁচল রিমি কে কালকের কেনা শাড়িটা পড়িয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে আসে।

রিমি কে দেখা সবাই পছন্দ করে এমনকি ছেলেকে দেখেও রেহান আঁচল সবাই খুশি হয়। কারন ছেলে সত্যিই সুদর্শন বটে!

নেহাল (ছেলের) বাবা – আচ্ছা তাহলে যখন কোনো সমস্যা নেই তাহলে বিয়ের ডেট টা ফিক্সড করে ফেললে কেমন হয়।

রেহানের বাবা – হ্যা ভালোই হবে। আমাদের তো সমস্যা নেই কোনো।

সবার মতামতে সামনের মাসে রিমি আর নেহালের বিয়ে ঠিক হয়।
রিমি আড়চোখে একবার নেহাল কে দেখেছে অবশ্য। খারাপ লাগার মতো না ছেলেটা!

নেহালের পরিবার চলে যেতেই আঁচল বলে…

আঁচল – বাবার পছন্দ আছে বটে…

আঁচলের কথা শুনে রেহান ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
রেহানের মা – হ্যা তা ঠিক বলেছো। ছেলেটা দেখতে মাশআল্লাহ!

রেহান রুমে চলে যায় যাওয়ার সময় ইশারায় আঁচলকেও আসতে বলে।

আঁচল রুমে যেতেই রেহান রেগে আঁচলের দিকে তেড়ে আসে…

রেহান – বাবার পছন্দ আছে বটে…!

আঁচল – হ্যা (দাঁত কেলিয়ে)

রেহান – এমন ভাবে বলছিলে যেনো তোমার খুব পছন্দ হয়ে গেছে নেহাল কে।

আঁচল – আরেহ না! আমি তো জাস্ট কথার কথা বললাম। (অসহায় ভাবে)

চলবে…

(বেশি ছোট করে দেয়ার জন্য দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here