জোর করে ভালোবাসবো তোকে ২ পর্ব ১

#জোর_করে_ভালোবাসবো_তোকে ❤
…….(সিজন ২)
#প্রথম পর্ব
#writer_শিফা_আফরিন_মিম

🍁
কাঁচের জানালা ভেদ করে সকালের সূর্য টা আঁচলের মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় তার। ঘুম ঘুম চোখেই উঠে বসে খনিক টা বিরক্তি নিয়ে বলে…

আঁচল – ওফফফ পর্দা টা সরালো কে রে? আমার এতো আরামের ঘুমে সেভেন আপ ঢেলে দিলো!

ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয় রেহান। আঁচলের কথা শুনে হেসে দিয়ে আঁচলের পাশে এসে বসে।

রেহান – আমি সরিয়েছি গো বউ! কেনো তোমার এখনো ঘুম হয়নি নাকি?

আঁচল – হুহহ হলে কি আর কিছু বলতাম?

রেহান মুচকি হেসে আঁচলের গালে নিজের ভেজা চুল গুলো গিয়ে ঘষা দেয়। আঁচল ছিটকে সরে যায়।

আঁচল – ওফফফ কী শুরু করলেন? এতো ঠান্ডার মধ্যে আবার ভিজিয়ে দিচ্ছেন তাও আবার মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। রেহান এবার আঁচলের গলার দিকে মাথা টা নিতেই আঁচল এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

আঁচল – আপনাকে আমি খুন করবো! সব সময় শুধু জ্বালিয়ে মারেন হুহহহ। বলেই হনহন করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

রেহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। একি তো আঁচলের অমন বোকা বোকা টাইপ কথা তার মধ্যে আবার রাগের চোটে বেচারি ওয়াশরুমে কাপড় নিতেই ভুলে গেলো!
এবার কী করবে সোনা? আমার হেল্প তো লাগবেই। দেখি কি করে আমাকে না ডেকে পারো।

রেহান ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বসে। শুধু ওয়েট করছে কখন আঁচল তার কাছে হেল্প চাইবে।
রেহানের অপেক্ষার অবসান হলো। তবে কিছুটা ব্যাতিক্রম! কারন রেহন ভেবেছিলো আঁচল তাকে ডাকবে। কিন্তু না! রেহান চুপচাপ বসে থাকায় আঁচল বেচারি ভেবেছিলো রেহান হয়তো রুমে নেই। তাই চুপিচুপি ওয়াশরুমের দরজা টা খুলে মাথাটা একটু বের করে উঁকি দিতেই তার চোখ ছানাবড়া!
একি! খাটাস, অসভ্য, ডেভিল টা দেখি পায়ের উপর পা তুলে খাটে বসে মুচকি হাসছে!
এমন ভান করছে যেনো মনে হচ্ছে তিনি আমার জন্যই ওয়েট করছিলেন। তার মানে ডেভিল টা জানতো আমি কাপড় ছাড়াই ওয়াশরুমে চলে আসছি। তাও কিছু বললো না!

ইচ্ছে করছে অসভ্য টার মাথায় তরমুজ ফাটাই! যত্তসব….

রেহান কে এগিয়ে আসতে দেখেই আঁচল হুরমুড়িয়ে ওয়াশরুমের দরজা টা লাগিয়ে ফেলে।

আঁচল – আমাকে একটা সাহায্য করুন। কাপড় গুলো ফেলে এসেছি একটু এনে দিন।

রেহান – তুমি এসে নিয়ে যাও। (মুচকি হেসে)

আঁচল – কিইইই! আপনার কি মাথা খারাপ নাকি। এইসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে কাপড় গুলো দিয়ে যান বলছি।

রেহান – আমাকে কি তোমার চাকর মনে হই নাকি হ্যা?

আঁচল – আরেহ আজিব! আপনি আমার স্বামী, আপনি এইটুকু কাজ করতে পারবেন না নাকি? এইটুকু কাজের জন্য নিজেকে চাকর ভাবছেন কেনো?

রেহান – অত সত বুঝি না। তোমার কাপড় লাগলে নিজে এসে নিয়ে যাও ব্যাস।

আঁচল – দিন না। এমন কেনো করছেন? সামান্য একটু হেল্প করার জন্য এতো বাহানা করা লাগে নাকি?

রেহান – ওকে দিতেই পারি। আগে মিষ্টি করে বলো?

আঁচল – আমি নিশ্চয় ঝাল করে বলছি না! আপনি দিবেন নাকি না সেটা বলুন।

রেহান – দিবো না। এন্ড ইট’স ফাইনাল!

আঁচল – আরেহহ শুনুন না।

রেহান – মিষ্টি করে বলো….

আঁচল – হ্যা গো….ও গো… শুনছো গো? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)

রেহান – শুনছি গো… বলো গো…

আঁচল – আমার কাপড় গুলো দিন।

রেহান – এটা কী হলো! এতো সুন্দর করে ডেকে এইভাবে কথা বলছো কেনো? এটা তো রুলস মানা হলো না।

আঁচল – দেখুন আমার ঠন্ডা লাগছে। প্লিজ কাপড় গুলো এনে দিন। অনেক কষ্ট হচ্ছে।

রেহান আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত কাপড় গুলো নিয়ে আসে।

রেহান – তোমার মাথায় না… জীবনেও বুদ্ধি হবে না। প্রবলেম হচ্ছে সেটা আগে বলবা তো নাকি। তাহলে কি আমি এতোখন মজা করতাম। স্টুপিড কোথাকার। তারাতারি চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসো।

আঁচল দরজা টা একটু খুলে হাত বাড়িয়ে কাপড় গুলো নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
রেহান আলমারি থেকে অফিসের পোশাক গুলো বের করে আয়রন করছে। কিছুক্ষণ পর আঁচল বের হয়।

আঁচল – কোথাও যাবেন?

রেহান – হুম। অফিস যাবো।

আঁচল – আমাকে বলে রাখলেই তো পারতেন। আয়রন করে রেখে দিতাম।

রেহান – আমি থাকতে তোমার কষ্ট করতে হবে না বুঝলে? (মুচকি হেসে)

আঁচল – এই টুকু কাজ করলে কষ্ট কিশের শুনি।

রেহান – কষ্ট আছে তো বটেই। যাকগে বাদ দাও। তুমি নিচে যাও আমি রেডি হয়ে আসছি কেমন। তারপর সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিবো।

আঁচল – আপনার আর কিছু লাগবে? লাগলে বলুন আমি দিয়ে যাই।

রেহান – হ্যা লাগবে। (কিছুক্ষণ ভেবে)

আঁচল – কী বলুন। আমি রেখে যাচ্ছি।

রেহান – রেখে যাওয়ার জিনিস তো নয়। যেটা লাগবে আমিই নিয়ে নিচ্ছি। — বলেই আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে।

আঁচল – কি হচ্ছে টা কি! এটা নিশ্চয় আপনার দরকারি জিনিস না?

রেহান – উহুম…দরকারি আবার স্পেশাল ও বটে।

আঁচল – ওফফফ ছাড়ুন তো।

রেহান আঁচলের ঠোঁটের কেণে হালকা করে চুমু দিয়ে আঁচলকে ছেড়ে দেয়।

রেহান – হয়ে গেছে আমার জিনিস পাওয়া। (বাঁকা হেসে)

আঁচল ভেংচি কেটে রুম থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসে।

নিচে আসতেই দেখে রিমি চেয়ারে বসে ছোট বাচ্চাদের মতো পা নাচাচ্ছে।

আঁচল – রিমি….

রিমি – নাউ…. এতোখনে আসার সময় হলো তোমাদের তাইনা। জানো, ক্ষুদায় আমার পেটের ভিতর ৭ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। (অসহায় মুখ করে)

আঁচল – সপ্তম? (ভ্রু কুঁচকে)

রিমি – তা নয়তো কী?তোমরা জানো সবাই একসাথে খেতে না বসলে আমার খাইনা। তাই সবাই দেরি করে আসো আমার মতো একটা শিশুকে ক্ষুদায় কষ্ট দিতে তোমাদের কলিজায় লাগে না বলো তো?

আঁচল – শিশু? (বেকুব হয়ে)

অমনি রেহানের মা আসে….

রেহানের মা – হয়েছে হয়েছে আর ভাষন দিতে হবে না। কে বলেছে তোমান এভাবে না খেয়ে বসে থাকতে। ক্ষিদে পেয়েছে যখন খেয়ে নিলেই তো পারো নাকি। একদিন একা খেলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো শুনি?

রিমি – মা তুমি আমার কাটা গায়ে নুনের ছিটে দিচ্ছো…. এ্যা এ্যা….(ন্যাকা কান্না করে)

আঁচল – আহহ রিমি মা তো মজা করছিলেন। তুমি শুরু করো তোমার ভাইয়া আসছে। বাবা ও চলে এসেছে। (রিমির গালে হাত রেখে)

রিমি – না। ভাইয়া আসুক আগে।

আঁচল – পাগলী মেয়ে।

কিছুক্ষণ পরই রেহান চলে আসে।

রেহান – গুড মর্নিং।

রিমি – হ্যা রে৷ এতো লেট করে এসে আবার গুড মর্নিং বলছিস।

রেহান – তাতে তোর কী হ্যা?

রিমি – আমার ক্ষুদা লাগছে। তারাতারি শুরু কর তো।

সবাই একসাথে খাওয়া শুরু করে।

রেহানের বাবা – রেহান শোন… অফিসের কাজে কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি ওকে।

রেহান – হ্যা বাবা।

রেহান ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুমে চলে আসে। এসেই আঁচল কে ডাকতে শুরু করে।

রিমি – ওফফফ ভাইয়া টা যে কী! মাত্রই তো রুমে গেলো তার মধ্যেই ডাকাডাকি শুরু করে দিয়ে ছে। ভাবি যে খেতে বসেছে সে খেয়াল তার আছে?

রেহানের মা – আঁচল মা একটু গিয়ে দেখ না।

আঁচল – হ্যা মা যাচ্ছি। আমার খাওয়া ও শেষ।

আঁচল উঠে রুমে চলে আসে।
রেহান হাতে টাই নিয়ে খাটে বসে আছে। আঁচল কে দেখে মুচকি হাসে।

আঁচল – আপনার সমস্যা টা কী বলুন তো? এভাবে কেউ ডাকাডাকি করে আজিব!

রেহান – কেউ ডাকা ডাকি না করলেও আমি করি। আমার বউ আমি যখন ইচ্ছে যেভাবে ইচ্ছে ডাকবো তাতে তোমার কী?

আঁচল – হয়েছে দিন (হাত বাড়িয়ে)

আঁচল হাত বাড়াতেই রেহান টাই টা আঁচলের হাতে দিয়ে মুচকি হাসে। এটা নতুন কিছুই না প্রতিদিনই রেহান একি কান্ড করে। রেডি হয়ে টাই টা নিয়ে বসে থাকে আঁচল এসে পড়াবে বলে!

আঁচল টাই টা নিয়ে রেহানকে পড়িয়ে দেয়। আর রেহান দু’হাতে আঁচলের কোমড় চেঁপে ধরে রাখে।

আঁচল – নিন… হয়ে গেছে। এবার ছাড়ুন।

রেহান – উহুম.. বলেই আঁচলের গলায় মুখ গুঁজে।

আঁচল এক ধাক্কায় রেহান কে সরিয়ে দেয়।

আঁচল – যান তো। সব সময় এই সব ঢং ভালো লাগে না।

রেহান – তোমার ভালো লাগে না তো?

আঁচল – না লাগে না।

রেহান – ওকে তাহলে যার ভালো লাগে তার কাছেই যাবো নি। (বাঁকা হেসে)

আঁচল রেহানের কথা শুনে রেগে তেলে ভাজা বেগুন হয়ে যায়।

আঁচল – ওহহ তাই না? (রেহানের দিকে এগিয়ে এসে)

রেহান – হুমম বউ।

আঁচল রেগে এসে রেহানের টাই টা রেহানের গলায় পেচিয়ে ধরে….

আঁচল – একদম মেরে দিবো আপনাকে….একদম মেরে দিবো।

রেহান মুচকি হেসে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে।

রেহান – মেরে ফেলো না। আমি তো এটাই চাই।

আঁচল নিজেকে রেহানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে রেহান আঁচলকে আরও জোরে চেঁপে ধরে।

আঁচল – অ অফিসের ল লেট হচ্ছে। ছাড়ুন।

রেহান – আঁচলের মুখটা উঁচু করে ধরে একদৃষ্টিতে আঁচলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আঁচল চোখ খিচে বন্ধ করে আছে। ঠোঁট জোড়া অনবরত কাঁপছে।

রেহান নিজের মুখটা আঁচলের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নেয়।
কিন্তু বেচারার ইচ্ছে টা আর পূরণ হলো না। হটাৎ করেই ফোন এসে রোমান্স এর ১৩ টা বাজিয়ে দেয়।

ফোনের রিংটোন এ আঁচল রেহান দু’জনেরই ধ্যান ফিরে। আঁচল ছিটকে সরে যায়।
রেহানের এতোটাই রাগ উঠছে যে ইচ্ছে করছে এই ফোন টা আছাড় দিয়ে টুকরো টুকরো করে দিতে।
রেহান ফোন টার দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে বলে…

রেহান – দিলি তো আমার রোমান্স এ জল ঢেলে। বাই দ্যা ওয়ে ফোন দিয়েছিলো কে?

রেহান দ্রুত কললিস্ট টা চেক করে দেখে সিম কোম্পানির ফোন। এবার রেহান আরও রেগে যায়।
এদিকে আঁচল রেহানের এমন কান্ড দেখে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আঁচল – আহারে বেচারা…. (দাঁত কেলিয়ে)

রেহান – দাড়াও না রাতে কিভাবে পার পাও আমিও দেখে নিবো। ওয়েট করো।

চলবে…??
আপনাদের সাড়া পেলে গল্পটা বড় করবো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here