#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ০৭
রায়হান, সাদিয়া, মিম — ওদের কেসটা কোর্টে তুলে দেয়া হলো। সামাজিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল – অত্র আদালতে হত্যার অপরাধের বিচারে কেসটি কোর্টে উঠেছে। আমজাদ চৌধুরি তার বন্ধু এডভোকেট রোকনুজ্জামান খাঁনকে হায়ার করছে ওদের কেসটা সল্ভ করার জন্য।
কখনো ভাবেনি সাদিয়া ওকে কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে তাও একজন অপরাধির মত।
ভয়ে বুক ধড়ফর করছে। ইমরান হোসেন এর হায়ার করা ব্যরিস্টার উজ্জল কঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সাদিয়াকে জিগ্যেস করল,
—” মিস সাদিয়া যখন খুনটা হয় তখন আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং খুনটা করেছেন বা করতে সাহায্য করেছেন?”
সাদিয়া ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিল,
— ” খুনটা যখন হয় আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আর আমি কোন খুন করিনি।”
— “পয়েন্ট টু বি নোটিস ইউর অনার। মিস সাদিয়া বলছেন, খুনদুটো হওয়ার সময় উনি সেখানে ছিলেন না কিন্তু ওসি বোরহান উদ্দিন কন্সটেবল দের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখতে পায় সেখানে মিস সাদিয়া তার হাসবেন্ড রায়হান এবং মিম সেখানে উপস্থিত ছিল।” ( ব্যারিস্টার উজ্জল )
— “অবজেকশণ ইউর অনার ( রোকনুজ্জামান খান )”
— “অবজেকশণ ওভাররাইড ( আদালত )”
— ” সরি ইউর অনার ” ( রোকনুজ্জামান)
— “আমি ওসি বোরহান উদ্দিনকে কাঠগড়ায় ডাকতে চাই মাই লর্ড।” ( ব্যারিস্টার উজ্জল)
— “আনুমতি দেয়া হলো।( বিচারালয়)”
— “ধন্যবাদ ইউর অনার।”
— “ওসি বোরহান উদ্দীন আমি জানতে চাই, খুন হওয়ার পর সেখানে পৌছে আপনি তাদের তিনজনকে কি অবস্থায় দেখেছিলেন?”
— ” মিস সাদিয়া এবং মিম দুজন ফ্লোরে, লাশের পাশে বসা অবস্থায় ছিল এবং মি. রায়হান উনি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। “(বোরহান উদ্দীন)
— ” এতটুকুই জানার ছিল, আপনি এখন আসতে পারেন, ধন্যবাদ।”
— ” ইউর অনার, ওসি বোরহান উদ্দীন এর কথা থেকে এই বুঝা যায় যে মি.রায়হান তখন ঈশান কে ধরে রেখেছিল আর তখন সাদিয়া আর মিম দুজন মিলে পর পর হত্যা করে ঈশান এবং সাহেলা বেগম কে।”
—” অবজেকশন ইউর অনার উনি হয়তো ভুলে গেছে আদালত মন গড়া কোন কথা শোনে না, প্রমান চায়। উনি মিথ্যা আমার ক্লাইন্ড দের দোষি সাভ্যস্ত করার চেষা করছে। “( রোকনুজ্জামান খান)
— ” ইউর আনার, উনি আমাকে বিভ্রান্ত করছে পুরো সত্যিটা প্রকাশ করা থেকে।” (ব্যারিস্টার উজ্জল)
— ” উপযুক্ত প্রমান ছাড়া অহেতুক বা মন গড়া কথা বলবেন না ব্যারিস্টার উজ্জল। ( বিচারালয় )
— ” সরি ইউর অনার ” ( ব্যরিস্টার উজ্জল )
— ” আপনি বসতে পারুন। রোকনুজ্জামান আপনি যা বলতে চাইছিলেন বলুন। ” (বিচারালয়)
— ” ধন্যবাদ ইউর অনার ” আমি মিমকে কাঠগড়ায় ডাকার অনুমতি চাইছি?” ( রোকনুজ্জামান খাঁন)
—- ” অনুমতি দেয়া হলো। ”
মিম কাঠগড়ায় এসে দাড়ালো। রোকনুজ্জামান মিমকে প্রশ্ন করল,
— ” সেহাদা বেগম আপনার মা এবং ঈশান আপনার ভাই। ওদের কি আপনি খুন করেছেন? ”
মিম অন্য খেয়ালে আছে, যেন রোকনুজ্জামান এর কথা শুনতেই পায় নি। তাই দেখে রোকনুজ্জামান আবার প্রশ্ন করল,
— “মিম আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো?
কিছুটা চেঁচিয়ে বললেন তিনি কিন্তু মিমের কোন সাড়া-শব্দ নেই। কোর্টে উপস্থিত থাকা সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগল।
—“মিম আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা? আমি আপনাকে কিছু জিগ্যেস করেছি।” (রোকনুজ্জামান)
— “হুম, কিছু বলছেন?” (মিম)
— ” আপনাকে অনেক্ষণ ধরেই কিছু জিগ্যেস করছি কিন্তু আপনি শুনতে পাননি, মনে হয় কিছু ভাবছিলেন।”
— “ওহ। ”
— “আপনি কেন নিজের মা আর ভাইকে খুন করতে গেলেন? আর এই খুনের পিছনে কি রায়হান এবং সাদিয়ার কোন হাত ছিল?”
—“না…না… আমি আমার মাকে মারিনি। আমি তো মাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। জানো আমার মা না খুব ভালো ছিল খুব খুব খুব।”
রোকনুজ্জামান, সাদিয়া, রায়হানের সহ সবার এতক্ষণ মিমের মানসিক ভার্ষাম্য হারানোর বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছি এখন সন্দেহটা সত্যি বলে প্রকাশ পেল। রোকনুজ্জামান সব বোঝার পরও প্রশ্ন করলেন,
— “আপনি তো আপনার মাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন তাহলে আপনার মাকে মারলো কে?”
—“আমার ভাই, আমার ভাই মারছে মাকে। আমার মাকে মেরে ফেলছে ও।”
— “আপনার মাকে মেরেছে ঈশান, মানে আপনার বড় ভাই। তাহলে আপনার ভাই ঈশানকে মারল কে?”
— “কেন? আমি মারছি ওরে? আমার মাকে মেরে ফেলছে আমিও ওরে মেরে ফেলছি।”
— “আপনি যখন ঈশানকে মেরে ফেলেছিলেন তখন সাদিয়া এবং রায়হান সেখানে উপস্থিত ছিল?”
— “সাদিয়া আপু…. উমম না তো, আমি তো পরে গিয়ে আপুর বাড়ি থেকে নিয়াসছি।”
— “মাই লর্ড, ওনার কথা থেকে প্রমান হয়ে যায় যে, মিস সাদিয়া এবং রায়হান এই খুন করে নি এবং এই খুনের সাথে জরিতও নয়।”
—“অবজেকশান ইউর অনার, মিমের কথা থেকেই সবটা প্রমান হয়ে যায় না যে, মিস সাদিয়া এবং রায়হান এই খুনের সাথে জরিত নয়। আদালত প্রমাণ চায়।” (ব্যারিস্টার উজ্জল)
—” ইউর অনার, আমার বিপক্ষীয় বন্ধু হয়তো জেনেন না যে, আমি তার মত প্রমান ছাড়া মনগড়া কোন কথা বলিনা। (রোকনুজ্জামান)
এই নিন ইউর অনার এটা মিমদের বাড়ির বাইরে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ। এখানে দেখুন, ” মিম রক্তাক্ত অবস্থায় ওর নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় রাত এগারো টায় তারপর বারোটা পনেরোয় সে তার সাথে করে মিস সাদিয়া এবং মিমকে নিয়ে ফিরে আসে।
ইউর অনার, মিমের কথা এবং এই ভিডিও টা দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মিস সাদিয়া এবং রায়হান খুনটা করেইনি এবং খুনটা হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল না। ধন্যবাদ।
—” আগামী ১৪ চৈত্র ১৪২৬ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত কোর্টের কার্যক্রম মন্তব্য রাখা হলো এবং উক্ত দিনে কোর্টের কার্জক্রম আবার শুরু হবে।”
১৩ চৈত্র আবার কোর্টের কার্জক্রম শুরু হলো। বিচারালয় উপস্থিত হতেই সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানালো। তিনি সবাইকে বসতে বলল।
—“ইউর অনার, মিসের রায়হান এবং তার স্বামী নির্দোষ সেটা আমার বিপক্ষীয় বন্ধু প্রমান করতে পারলেও ঈশান কেন তার মা সাহেলা বেগমকে মেরেছে এবং মিম কেন ওর ভাইকে মেরেছে তা প্রমান হয় নি। ইউর অনার, আমি ইমরান হোসেনকে কাঠগড়ায় ডাকার অনুমতি চাইছি। (ব্যারিস্টার উজ্জল)
—“অনুমতি দেয়া হলো।” (বিচারালয়)
—” ইমরান হোসেন আপনি কমপ্লেইনটা থানায় লিখেছিলেন আর যখন খুনটা হয় তখন আপনি আপনার বন্ধু ঈশান এর সাথে ফোনে ছিলেন?
—” হ্যা। ”
—” আচ্ছা আপনি তখন ফোনে কি কি শুনতে পেয়েছিলেন?”
—“আমি ঈশান এর সাথে কনভারসেশনে থেকে এটাই বুঝতে পেরেছি যে, মিম ঈশান আর ওর মা দুজনকেই মারার চেষ্টা করছিল। তাই পুলিশ নিয়ে তখন সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম। ”
—“মিম কেন ওর ভাই আর মাকে মারতে পারে, ঈশান এর বন্ধু তো আপনি কোন ধারনা করতে পারছেন? বা ইশান কি কখনো তেমন কোন কিছু বলেছিল ওর বোন এর ব্যাপারে। ”
—“ঈশান তো ওর পরিবার সম্পর্কে আমার সাথে তেমন কিছু সেয়ার করে না। কিন্তু একদিন বলেছিল ওর বোন নাকি কোন ছেলের সাথে রিলেশন এবং এফআইআরও ছিল। ছেলেটার নাকি অন্য যায়গায় বিয়ের কথা চলছিল তা শুনে মিম ছেলেটাকে ওকে বিয়ে করার জন্য বলল ছেলেটা বলে মিম যদি ওদের ঢাকার বাড়ি এবং ওরা যেখানে থাকে সে বাড়ি লিখে দিলে মিমকে বিয়ে করবে। তাই মিম নাকি ওর মাকে ওদের ঢাকার বাড়ি এবং ওরা যেখানে থাকে সেই বাড়ি ছেলেটার নামে লিখে দিতে চাপ দেয়। (ইমরান হোসেন)
—“বাড়ি লিখে দিতে হয়তো ওর মা রাজি হয়নি তাই মিম ওর ভাই এবং ওর মাকে মেরে ফেলে।” (ব্যারিস্টার উজ্জল)
—” অবজেকশান ইউর অনার, ইমরান হোসেন মিথ্যা বলছেন।”
—“আমি কোন মিথ্য বলছি না।”
—“আপনি মিথ্যা বলছেন আর আমার কাছে প্রমানও রয়েছে। ইউর অনার, ইমরাান হোসেন যে মিথ্যা বলছে আমি তার প্রমান দিতে চাই।”
—“প্রমান উপস্থিত জরা হোক।”
—” ধন্যবাদ ইউর অনার। এখানে বেশ কিছু রেকর্ড আছে, ঈশান মৃত্যুর আগে যার যার সাথে ফোনে কথা বলেছেন সেসব রেকর্ড। এখানে ঈশানের সাথে ইমরান হোসেন এর যা কথা হয়েছে তার রেকর্ডও আছে। রেকর্ডটা শুনে এটা বুঝা যায় না যে মিম ওর মা-ভাইকে মারতে চেয়েছে বরং এটা বুঝা যায় যে ঈশাম মিম আর ওর মাকে মারতে চেয়েছে। রেকর্ডটা শুনুন ইউর অনার। আর এই নিন ইউর, অনার মিম এর মেডিকেল চেকআপ যেটাতে বুঝা যাচ্ছে যে মিম ভার্জিন ওর সাথে কারে কোন এফআইআর ছিল না যা একটু আগে ইমরান হোসেন বললেন। আমি মিমকে কাঠগড়ায় ডাকতে চাই। (রেকনুজ্জামান)
—” হুম। “(বিচারালয়)
মিম কাঠগড়ায় এসে উপস্থিত হলে রেকনুজ্জামান বলেন,
—“মিম আপনার কি কারো সাথে সম্পর্ক ছিল বা আছে?”
মিম কিছু বলল না বড় বড় চোখ করে তার দিকে চাইলো। আবার অন্য দিকে মনযোগ দিল। তখনি সাদিয়ার ফোনে ডা. ইশানি-এর ম্যাসেজ এল। সাদিয়া কেঁদে দিল, তারপর বসা থেকে দাড়িয়ে বলল,
—“মিম মানসিক ভার্ষাম্য হারিয়েছে। ও মনে হয় না আপনার কথা বুঝবে বা উত্তর দিতে পারবে।”
—“আপনি বসুন।” (বিচারালয়)
—” জিগ্যসাবাদ করার জন্য মিসেস রায়হানকে আমি কাঠগড়াশ ডাকতে চাই। ”
—“অনুমতি প্রদান করা হলো।”(বিচারালয়)
সাদিয়া কাঠগড়ায় আসতেই রোকনুজ্জামান প্রশ্ন করল,
—“আপনি কি করে জানলেন মিম মানসিক ভার্ষাম্য হারিয়েছে? ”
—“এই মাত্র ডা. ইশানি -এর ম্যাসেজ এলো। দেখুন।”
—“আপনি তো মিমের খুব ভালো টিচার এবং ও আপনাকে নিজের বোন মনে করে আপনি কি জানেন ওর কারো সাথে কোন প্রেম, ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল কি না? ”
—” ইসলাম ধর্মে এসব হারাম ও খুব ভালো করে জানে ও এসব জীবনে করে নি। আর করলে অবশ্যই আমাকে জানাতো।”
—“আপনি বলতে চাইছেন ওর কারো সাথে সম্পর্ক ছিল না?”
—” হ্যা। ”
—“ইউর অনার, এখন ব্যপারটা পুরোপুরি ক্লিয়ার যে মিম এর কারো সাথে এসব সম্পর্ক ছিল না আর সে বাড়ি-সম্পতির জন্য তার মা-ভাইকে খুন করেনি।”
—“ইউর অনার, আমি আরেকটা রেকর্ড শুনাতে চাইছি যা মিম ওর ভইকে খুন করার পর সে ষটনা সাদিয়ার সাথে সেয়ার করেছিল এবং তখন রায়হান তা রেকর্ড করে। রেকর্ডটাতে মিম বলেছে ওর ভাই একজনকে ধর্ষণ করে এবং সেইটা ওর মা সাহেলা বেগম জেনে ফেলে ও পুলিশকে ইনফর্ম করতে যায়। তখনি ঈশান ওর মাকে মেরে ফেলে এবং মিম তা দেখে ফেলায় মিমকেও মারার চেষ্টা করে। এবং মিম মায়ের মৃত্যুতে এতটাই সক্ট পায় যে সে তার ভাই ঈশানকে মেরে ফেলে।
—” অবজেকশন ইউর অনার, উনি একজন দোষিকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে চাইছে। এই রেকর্ডটা ফেক। (ব্যারিস্টার উজ্জল)
।#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ০৮
—“রেকর্ডটা মোটেও ফেক নয় ইউর অনার। রেকর্ড কখনো ফেক হতে পারে না ব্যরিস্টার উজ্জল।”
—“আচ্ছা আমি মানছি মিম বড়ির লোভে ওর ভাইকে মারেনি। ওর মাকে ওর ভাই মেরে ফেলেছে বলে মিম ওর ভাইকে মরে ফেলেছে। এখন যেটাই হোক মিম তো দোষী সেটাই বড় কথা।”
—“আপনি একটা উকিল হয়ে এটা জানেন না যে, বিচারালয় যতক্ষণ পর্যন্ত কেন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করছে না ততক্ষণ আমরা কাউকে দোষী বলতে পারি না।”
—“যায়ি হোক। ইউর অনার, আশা করি আপনি অপরাধিকে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিবেন। আমার আর কিছুই বলার নেই।”
—“ইউর অনার, আমি যত-দূর জানি যে, আইন অপরাধিকে শাস্তি দেয়ার জন্য তৈরি হয়নি। আইন একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য তৈরি হয়েছে। আর মিমও একজন নিরপরাধই বটে কেননা সে নিজের মাকে বাঁচাতে এবং নিজেকে বাঁচাতে কোন উপায়ান্ত না পেয়ে খুনটা করে ফেলেছে। আপনি নিজেকে তখন ও যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় রেখে তারপর বিচার ঘোষনা করবেন, অনুরোধ।
—“রোকনুজ্জামান, খুনের অপারাধের শাস্তি দুইটা এক.মৃত্যুদনৃড দুই. যাবত জীবন কারাদন্ড।”
—“হুম জানি, কিন্তু আপনি এটা জানেন না যে, যদি কোন ব্যক্তি সত্যি কোন অপরাধ করে, সেই সময় তার মানসিক অবস্থা কিরকম ছিল, যদি সেই ব্যক্তি সাজা পেয়েও থাকে তার সাজার পরিমান এসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
ইউর অনার আমার আর কিছু বলার নেই। আপনি বিচার ঘোষণা করতে পারেন।”
—“সমস্ত সাক্ষী, প্রমণ ধারা এই দাঁড়ায় যে মিসেস রায়হান এবং মি. রায়হান এই খুনের সাথে কোন ভাবেই জরীত নয় একমাত্র মিম ছাড়া। তাই মিসেস রায়হান ও মি. রায়হানকে সসম্মানে মুকি দেয়া হলো। মীমের ভাই তার ধর্ষণ করার বিষটা চাপা দিতে নিজের মাকে খুন করে ও তা মিম দেখে ফেলায় মিমকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু মিম নিজেকে আর মাকে বাঁচাতে ওর ভাই ঈশানকে মেরে ফেলে। সে অবস্থায় ওর মানসিক অবস্থা ঠিক ছিল না এবং বর্তমানে ও একজন মানসিক রুগিতে পরিনত হয়েছে বলে এই আদালত তাকে শাস্তি দেয়ার উপযোগি মনে করছে না।আর মিমকে মানসিক হাসপাতালে রেখে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার অনুমতি প্রদান করছে। দ্যা কেস ইস ক্লোজড।
সাদিয়ার যেন খুশিতে চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো মিমের কোন সাজা হচ্ছে না বলে। এখন মিমকে সুস্থ করে তোলতে হবে।
আজ কতদিন পর শান্তিতে বাসায় ঢুকছে রায়হান। একটা ঝড় পুরো উল্টে পাল্টে দিয়েছে ওর জীবন। কত কিছু ভেবে রেখেছিল, বিয়ের পর দুজন মিলে হানিমুন যাবে এখন কিনা কোর্টে যেতে হচ্ছে। ভাবত রাতে সাদিয়াকে আঁকরে ধরে ঘুমাবে কিন্তু এখন সাড়া রাত চোখের পাতাই এক করতে পারছে না। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রায়হান তারপর সাদিয়ার বেড় করে রাখা টি-শার্ট ও ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
রেহানা বেগম ( রায়হানের মা ) এসে সাদিয়ার পাশে বসল। সাদিয়া হাতে থাকা রায়হানে ছবি-ফ্রেমটা নিয়ে লজ্জা পেয়ে গেল। উনি হেসে ফেলে বলল,
—“কি হলো? সুধু আমার ছেলের ছবি দেখলে চলবে ওকেও তো একটু দেখতে হবে তাই না? ”
—“বুঝলাম না মা? ”
—“কিছু দিন ধরেই দেখছি রায়হান সারাক্ষণ কেমন মন মরা হয়ে থাকে। তার উপরে এসব কেস-কাচারি যেন আরেক অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আমি জানি তুই ওসব থেকে এখনো বেড়িয়ে আসতে পরিসনি তার উপর মিম এর ঘটনাটা, তুই নিজেই ডিপ্রেশ্ড তাও বলছি ওকে একটু খুশি রাখার চেষ্টা করিস।
—“মা আমি চেষ্টা করবো।”
—“মাথায় তেল দিস না ক’দিন হইছে। আজ আমি তেল দিয়ে দেই আয়।”
—“মা আপনি কষ্ট করে….”
—“কি বললি? আমায় মা ডাকিস কি শুধু নামে নাকি? জানিস আমার খুব সখ ছিল আমার একটা মেয়ে হবে যার চুলগুলো আমি তেল দিয়ে দিব বিনুনি পাকিয়ে দিব।আর দেখ একটা মেয়ে পেয়েও গেলাম।”
রায়হানের মা সাদিয়ার মাথায় তেল দিয়ে বিনুনি পাকিয়ে দিতে লাগল। সাদিয়ার খুশিতে কান্না করে দিল। ওর মা বেঁচে থাকাতে প্রতিদিন রাতে বিনুনি পাকিয়ে দিত।এখন আবার আরেকটি মা পেয়ে গেল।
—“মা আপনি জানেন, আমার মাও না বেঁচে থাকতে আমায় রোজ রাতে বিনুনি পাকিয়ে দিত যাতে চুল তাড়াতরি বড় হয়ে যায়।”
—“আমিও এখন থেকে বিনুনি পাকিয়ে দিব কেমন।”
—“আচ্ছা মা”
—“এই নে, তোর বিনুনি পাকানো হয়ে গেছে। আমি এখন যাই তোর বাবার আবার ঔসধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।”
সাদিয়া “আচ্ছা” বলতেই তিনি সাদিয়ার কপালে চুমু দিয়ে চলে গল। সত্যি একটা মা পেয়েছে সাদিয়ার খুব ভালো লাগছে।
এমন সময় গেসল সেড়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলে রায়হান। রায়হানের সাদিয়ার দিকে চোখ পড়তেই একটু অন্যরমক লাগলো সাদিয়াকে তখনি সাদিয়ার মাথায় বিনুনি দেখে একটু অবাক হলো। সাদিয়াকে যেন ১৬ বছর বয়সী এক যুবতি মনে হচ্ছে। রায়হান মুচকি হেসে সাদিয়ার কাছে গেল। সাদিয়া রায়হানের মুখে হাসি দেখে মুচকি হেসে দেখে বলল,
—“হাসছেন কেন?”
—“বিনুনি তে তোমাকে পিচ্চি লাগছে।”
—“হুম, এটা আমার কাছেও মনে হয়।”
—“হা হা। আচ্ছা চলো আমার খুব খুদা লাগছে।”
—“ওইদিন সবার সামনে আমার খাতে খেতে চাইছিলেন কেন? সবাই কি না কি ভাবছে।”
—“কি আর করতাম বলো? সবার সমনে না বলে যদি একা বলতাম তুমি শুনতে না তাই বলছি।”
—“আজকেও এমনটা করবেন?”
—“যদি বলি করার ইচ্ছা আছে তো কি করবা?”
—“তাহলে আপনার খাবারটা ঘরে নিয়ে আসবো তারপর খায়িয়ে দিব।”
—“তাহলে যাও নিয়ে আসো।”
—“এখন সত্যি সত্যি আমার হতে খাবেন? আমি তো ভাবছি মজা করে বলছিলেন।”
—“খুদা লাগছে, তুমি কি খাবার নিয়ে আসবা নাকি না খেয়েই ঘুমাবো এখন।”
“না… না, না খেয়ে ঘুমাতে হবে না আমি আনছি” — বলে সাদিয়া এক দৌড় দিল। রায়হান ওর কাজ দেখে হাসতে লাগল। আজ কতদিন পর এভাবে হাসলো ভেবেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল।
সাদিয়া রায়হানকে খায়িয়ে দিল। রায়হানও সাদিয়াকে খায়িয়ে দিল। সাদিয়া প্রথমে রায়হানের হাতে খেতে না চাইলেও পরবর্তীতে রায়হান নিজে না খাওয়ার বাহানা করল। যার ফলে সাদিয়াকে রায়হানের হাতে খেতে হলো।
খাওয়া দাওয়ার পর দুজন ঘুমানের জন্য বিছানায় চলে গেল। কিন্তু কারোরই ঘুম আসছে না। রায়হানের চোখের নীচের কালো দাগই বলে দেয় যে ও কতদিন ঘুমায় নি। রায়হান ঘুড়ে সাদিয়া দিকে তাকালো দেখল সাদিয়াও ঘুমায়নি তাকিয়ে আছে বারান্দা মধ্যে দিয়া আসা পূর্ণীমার চাদের দিকে, ওর চোখের কোনে পানি। রায়হান শন্ত গলায় ডাক দিল, ” সাদিয়া ! “সাদিয়া চোখের পানি মুছে রায়হান এর দিকে ঘুরে, ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
—“কিছু কি বলবেন?”
—“বলতে চাই তো কত কিছুই কিন্তু বলে উঠতে পারি কই।”
—“ঘুম আসছে না? ”
—“ঘুম? না আসছে না এ আর নতুন কি। জানো সাদিয়া আজ কতদিন শান্তিতে ঘুমাতে পারি না।”
—“( হুম, জানি তো। প্রতিদিন রাতে বারান্দয় বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন, মাঝে মাঝে চোখের জ্বলও ফেলেন–মনে মনে বলল সাদিয়া)”
—“তুমি কি আমায় একটু জরিয়ে ধরবে আমি একটু শান্তিতে ঘুমাবো।”( বলতেই চোখ থেকে এক ফোটা জ্বল গড়িয়ে পড়ল )
সাদিয়া রায়হানের কাছে আসল তারপর আস্তে আস্তে রায়হানের মাথাটা বুকে চেপে ধরে রায়হানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। রায়হান সাদিয়ার বুকে মুখ গুঁজে সাদিয়াকে জরিয়ে ধরে পরম আবেশে চোখ বুঝলো। সাদিয়া রায়হানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে পূর্ব আকাশের সূর্যের আলো বারান্দা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে রায়হানের মুখের উপর পড়ল। রায়হান হাত দিয়ে চোখ দুটো আড়াল করার চেষ্টা করল তারপর চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠে দেখল সাদিয়া বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
“আমার জন্য সারা রাত বসে বসে রাত পার করে দিলা, পাগলি রে।”– বলে উঠে বসে, সাদিয়াকে খাটে শুয়িয়ে দিতেই সাদিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সাদিয়া দেখল রায়হান ওর এতটা কছে যে ওর নিশ্বাসের শব্দটা ওর কানে আসছে। দুই থেকে তিন ইঞ্চি ব্যবধানে রায়হানের মুখ। রায়হান দ্রুত ওর উপর থেকে উঠে বলল,
—“আমি কিন্তু তোমায় কিস-টিস করতে চাইনি, তুমি বসে ঘুমিয়ে ছিলে তাই খাটে শুয়িয়ে দিচ্ছিলাম খালি।”
সাদিয়া উঠে বাসতেই ঘারে ব্যাথা অনুভব করল “উহহ”–এর মত একটা শব্দ করে উঠল। রায়হান বলে উঠল,
—“উইঠো না শুয়ে থাকো, ব্যাথা করতেছে না খুব? সারা রাত বসে বসে ঘুমাতে হবে? আমারই সব দোষ কেব যে তখন আমাকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বললাম। ”
—“আরেহ কিছু হবে না, সামান্য একটু ব্যথা মাত্র। ”
—“সামান্য একটু ব্যাথা না। রেস্ট নাও ঠিক হয়ে যাবে।”
।
।
।
।
রায়হান আজ বেড়িয়েছে ! ইমরান হোসেন এর খোঁজ নিতে। কেনই বা সেদিন সাদিয়াকে দেখার পর সে ঘাবরে গিয়েছিল? মিমের নামে কেনই বা মিথ্যা বলে কেসটা ঘুড়িতে দিতে চাইছিল? সাদিয়া আর আমাকে কেন সে কেইস এ জরাতে চেয়েছিল অপরাধি হিসেবে? আমরা তো তাকে চিনি না! সাদিয়ার ধর্ষণের পিছনে এর হাত আছে মনে হচ্ছে। ঈাশান এর ফোন থেকে যদি ইমরান হোসেনেরর সাথে কি মেসেজিং করেছিল সে ডিলেট করে দেওয়া মেসেজ বের করা যেত তাহলে কিছু হলেও বোঝা যেত?
রায়হান ইমরান হোসেন এর বাসার আসে পাশেই ছিল তার খোঁজ খবর রাখার জন্য তখনি দেখল সে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে। রায়হানও ওর গাড়ি নিয়ে তার গাড়ির পিছু পিছু ছুটলো।
চলবে…..
[