পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ৯+১০

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন ররায়হান
পর্ব : ০৯

নির্জন রাস্তাটা দিয়ে বেস কিছুক্ষণ ধরেই গাড়ি চলছে। রায়হান সে গাড়িটা থেকে প্রায় ৫০ফুট দূরে অবস্থান করে গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাৎ ইমরান হোসেনের গাড়িটা থেমে গেল। রায়হান ব্রেক চেপে নিজ গাড়িটা বন্ধ করে দিল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল রাস্তার চারিদিকে গাছে ঢাকা এক বিরাট জাঙ্গল। গাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে পড়ল ইমরান হোসেন তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে পড়ল। রায়হান গাড়ি থেকে নেমে তার পিছু নিল। ইমরান হোসের হাঁটতে হাঁটতে একটা গোডাউন এর সামনে পৌছাল তরপর পকেট থেকে চাবি বের করে গোডাউন এর ভিতর ঢুকে গেল।

রায়হান গোডাউন এর কাছে এগিয়ে আসতেই ওর পা কিছুর উপর পড়ল। নিচে তাকিয়ে একটা মোবাইল ফোন দেখতে পেল। রায়হান সেটাকে হাতে নিল দেখল, মোবাইলটার স্কিনটা ভেঙ্গে গেছে। রায়হান মোবাইলটার পাওয়ার অন করতেই দেখল, ইমরান হোসেন এর ছবি স্কিনে ভেসে উঠছে। রায়হান ভাবল — পকেট থেকে ইমরান হোসেন চাবি বের করার সময়ই হয়তো মোবাইলটা পরে গেছে। রায়হান লক করা মোবাইলটায় তিনবার রং প্যাটার্ন ট্রাই করাতে ৩০ সেকেন্ড উঠি গেল। ৩০ সেকেন্ড পর একটা প্যাটার্ন ট্রাই করাতে মোবাইলের লকটা খুলে গেল। রায়হান কোন দিকে না তাকি সোজা মেসেঞ্জারে ক্লিক করল। চেটলিস্টে ঈশানের ইনবক্সটা খুঁজে বের করতেই দেখল কিছু মেয়ের বাজে ছবি। রায়হান উপরে গিয়ে ২২ মার্চ ২০২০ এর কনভার্সেশন দেখতে লাগল যেখানে ঈশান ইমারান হোসেনকে মসেজ করেছে যে,
—“বস, সাদিয়া নামের ওই মেয়েটার কথা বললাম না? আরেহ যে আমার ছোট বোনকে পড়াতে আসে ওই মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর পড়াতে আসবে না। আমি বলি কি কতদিন ধরে কোন মেয়েকে খাই না চলো এটারে কোপ মেরে দেই। “(ঈশান)
—“বলিস কিহ মামা,ওই মালটা তো সেই। দ্বারা আমি ওদের নিয়ে আসতেছি। সেই মজা হবে আজ। আহা……”(ইমরান)

ম্যাসেজ গুলা দেখেই মাথায় রক্ত উঠে গেল রায়হানের। চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করলো ওর। গোডাউনের দরজায় স্বজোরে লাথি মেরে দরজা খুলে ফেলল রায়হান দেখল পুরো গোডাউন জুরে কাঠের গুঁড়ি আর কাঠ। তার এক কোনে বসে গাঁজা খাচ্ছা ইমরান হোসেন। কাউকে এভাবে ভিতরে আসতে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল কিন্তু রায়হানকে দেখারর পরই সে রেগে গেল। বলল,

—“তুই এখানে কি করতে আসছিস হুম? আমার গোডাউনে তোর কি? ”
—“আমি তোকে উপরে পাঠাতে এখানে আসছি তাছারা তোর গোডাউন আমার কিছুই নাই। ”
—“আমাকে মারতে আসছিস হো হো হো। ”
—“হাসছিস, কিছুক্ষণ পর এই হাসি কোথায় থাকবে আল্লাহই জানে।”
—“সালা আমাকে মারতে আসছে, জানিস আমি কে?”
—“তুই যেই হোস না কেন আমার কাছে তুই একটা ধর্ষক। ”
—“বাহ….বাহ আমি যে ধর্ষক তা জেনে গেছিস? ভালো, তাহলে তো এটাও জানিস হয়তো তোর হবু বউকে যে আমি ধর্ষন করেছিলাম।”

ইমারান হোসেন এসব কথা বলে রায়হানকে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছে যাতে রায়হান তার কোন ক্ষতি করতে না পারে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধু ফারহান এসে পরলে দুজন মিলে রায়হানকে উপরে পাঠিয়ে দিবে।

আর এসব কথা শুনে রায়হানের রাগ যেন কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেল। রায়হান ইমরানের দিকে এগোতে লাগল আর ইমরান হোসেন পিছোতে লাগল। রায়হান আরেকটু এগোতেই ইমরান হোসেন দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করল। রায়হানও এক দৌর দিয়ে তার শার্টের কলারে ধরতেই, ঝোঁক সামলাতে না মাটিতে পরে গেল ইমরান হোসেন। রায়হান ইমরান এর উপর উঠেই স্বজরো মুখে ঘুষি মারতে লাগল। ঘুষি খেয়ে ইমার হোসেন এর ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হতে লাগল, নাক দিয়ে রক্ত পরতে লাগল।

ইমরান হোসেন এক পর্যায়ে মার খেয়ে স্তব্দ হয়ে গেল। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগল ধিরে ধিরে, রায়হান দাঁড়িয়ে ইমরান হোসেন এর লিঙ্গ বরাবর বেশ কয়েকটি লাঠি মারে। ইমরান হোসেন ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠে, নরা-চরা বন্ধ হয়ে যায় তার। রায়হান কাঠ বেধে রাখা দড়ির গিট খুলে এনে সেটা দিয়ে ইমরান হোসেনকে বেধে ফেলে। ইমরান হোসেন ব্যাথায়, মৃত্যু যন্তনায় কাতরাতে থাকে। ইমরান হোসেনকে টেনে কাঠ কাটার মেশিন এর উপর উঠায় রায়হান। মেশিন এর বেল্ট এর উপর শুশিয়ে দেয় তাকে তারপর মেশিন চালু করে দেয়।

মেশিন এর ধাঁরালো যন্ত্রটা ঘুরছে, বেল্ট এর উপরে থাকা ইমরান হোসেনের শরীরটা ক্রমস্য এগিয়ে যাচ্ছে সেই ধাঁরালো যন্ত্রটার দিকে। ইমরান হোসেনের ভয়ে চোখ যেন বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তা দেখে রায়হান বলে,
—“খুব ভয় করছে না মৃত্যুকে ? এখন ভাব কতটা কষ্টে একটা মেয়ে নিজের গলায় ফাঁসির দড়ি দেয়। কতটা কষ্টে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে একটা মেয়ে আত্মহত্যা করে। সুধু মাত্র তোদের মত কিছু জানোয়ার, পশুর জন্য।”

ইমরান হোসেন বেলটার উপর থেকে নামার চেষ্টা করল কিন্তু তা বৃথা হয়ে গেল। রায়হান মুখ থেকে এক দলা থুথু ইমরান এর মুখের উপর ফেলতেই তার মাথাটা ধারালো অস্রটাকে স্পর্শ করল, গরম রক্ত ছিটকে রায়হানের মুখের উপর পড়ল। কাঠ ফাঁড়ার মেশিনটি দিয়ে কাঠের মত রায়হানের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দুই ভাগে ভাগ করে ফেলল।

ছোট বেলা থেকেই রায়হানের মনুষের রক্ত দেখলে হাত-পা কাঁপতে থাকে হার্টের দুর্বলতার কারনে কিন্তু আজ একটা জীবন্ত মানুষ ওর সামনে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল কিন্তু রায়হান একটুও চোখ সরালো না। বরং রায়হান যেন একটু শান্তি পেল।

রায়হান মুখে লাগা রক্ত রুমাল দিয়ে মুছে গোডাউন থেকে বের হতে যাবে তখনি কাউকে গোডাউনের ভিতর প্রবেশ করতে দেখল। তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে রায়হান উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। লোকটা রায়হানকে উল্টো দিক থেকে ইমরান ভেবে বলল,
—“শালা, তোদের বড়ি গেছিলাম পাই নি তাই ভাবছি তুই এখানে থাকবি হয়তো। কতবার ফোন দিছি, ধরোস নাই কেন? মিতালি নামে মেয়েটার কথা বলছিলাম না যে প্রতিদিন রাত ০৮টায় ছোট ভাইয়ের সাথে প্রাইভেট পড়ে বড়ি ফেরে। কাল ওর ছোট ভাইটারে দুই তিনটা দিয়ে ওরে তুইলা নিয়া যাবো। সাদিয়া নামের মেয়েটার সাথে যেখানে করছিলাম সেখানে। আইসা পরিছ কাল রাত আটটায়। আমার আবার এক জায়গায় যেতে হবে। বাই ”

রায়হান কিছুটা ইমরান হোসেন এর গলা কপি করার চেষ্টা করে বলল, “হুম, বাই ”

লোকটা চলে গেল। রায়হান দ্রুত সে স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করল।



রায়হানকে ফোনে না পেয়ে সাদিয়া ওর শশুড় আমজাদ চৌধুরিকে নিয়ে মিমকে মানসিক হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এনে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে চলে যায়। এডভোকট এর সাথে কথা বলে। সমস্ত ফরমালিটি পূরণ করে এপ্লিকেশন জমা দিয়ে মিমকে বাসায় নিয়ে আসে।
মিমকে বাসায় নিয়ে সাদিয়া এবং বাবাকে ঘরে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে যায় হৃদয়। ফিরে যায় অতীতে…….
** বন্ধুর গার্লফ্রন্ডকে, বন্ধুর দেয়া চিঠি পৌছাতে গিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া মিমের সাথে দেখা হয়। প্রথম দেখাতেই একটা ভালোলাগা কাজ করে মিমের প্রতি। শুধু ভালোলাগা নয় এর চয়েও কিছু বেশি। হৃদয় ভাবে এটাকেই বোধয় লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলে। তারপর থেকে আস্তে আস্তে শুরু হয়ে যায় হৃদয়ের মিমের পিছনে ঘুরা। প্রতিদিন রাস্তায় বসে থাকা, ওর পিছন পিছ মিমের বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া। কিন্তু কখনো মিমকে
ভালোবাসা কথা বলতে সাহস পায়নি।

ভালোবাসা দিবসে হৃদয়ের সকল বন্ধুরা তাদের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে গেছে হৃদয়ের মন বেশ খারাপ। মিম প্রাইভেট পড়ে বাসায় যাওয়ার সময় হৃদয় সাহস করে মিমকে রাস্তায় দাঁড় করালো। দুই একবার “ভালোবাসি”– কথাটা বলতে চেয়েও পারলা না। অবশেষে বলে ফেলল,
—“আ…আ…আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
—“দেখুন, আপনি নাহলেও আমার পাঁচ বছরের বড়! আপনাকে ঠিক কি বলে সম্মোধন করবো বুঝতে পারছি না। আমি জানি যে আমাদের ইসলাম ধর্মে এসব প্রেম-ভালোবাসা হারাম এবং নিসিদ্ধ করে দিয়েছে। তাই আমি এসবে নিজেকে জড়াতে চাই না। আমার পিছনে ঘোরা বন্ধ করুণ। আসি। ”

হৃদয় রাস্তায় বসে কেঁদেছিল সেদিন। তারপর কত খুঁজেছে হৃদয় কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি মিমকে। ***

অতীত থেকে ফিরে আসে হৃদয় ধীর পায়ে এগিয়ে যায় মিমের কাছে কিন্তু মিমের কোন সাড়া-শব্দ নেই। অস্ফুট স্বরে বলে,
—“কি? কি হয়েছে বাবা ওর?”
—“পরে সব বলবো এখন সামনে থেকে সরে ভিতরে ঢুকতে দে।”

হৃদয় বাবার মুখ থেকে মিমের কথা শুনে যেন হোচট খায়। আমজাদ চৌধুরিকে জিগ্যেস করে,
—“বাবা ও কি আর সুস্থ হবে না? আগের মত স্বাভাবিক হবে না?”
—“ভালোভাবে ট্রটমেন্ট করালা খুব সিগ্রহী ও আবার আগের মত সুস্থ হয়ে যাবে। মায়ের মৃত্যুর ধাক্কাটা ভুলতে পারলেই হলো।”
—“তাহলে ভালো ভাবে ওর ট্রিটমেন্ট করাও বাবা প্রয়োজন হলে আমি কাজ করে ওর ট্রিটমেন্টের টাকা জোগাড় করবো।”
—” ওর ট্রিটমেন্ট ঠিক ভাবেই হবে। আচ্ছা ওর বিষয়ে তুই এত কৌতুহলি কেন? ”

” কিছু না বাবা ” — বলে হৃদয় সেখান থেকে চলে গেল।



রায়হান বাড়ি ফিরে সাদিয়ার মিমকে ওদের বাড়িতে এনেছে শুনে সাদিয়ার উপর বেশ খুশি হলো। অপরের প্রতি সাদিয়ার এ ভালোবাসাটা রায়হানের খুব ভালো লাগে।

রাতে…!! রায়হান শুয়ে আছে। সাদিয়া রান্না ঘরে সব বেঁচে যাওয়া খাবার ফ্রিজে রেখে। রান্নাঘর, ড্রয়িংরুম ও ডাইনিংরুমের লাইট অফ করে। ঘরে এসে রায়হানের পাশে শুয়ে পড়ল। রায়হান সাদিয়ার কোমর চেপে ধরে সাদিয়াকে হালকে টেনে নিজের সাথে জরিয়ে ধরল। রায়হানের এমন কজে সাদিয়া একটু অবাক হলো। রায়হান মনে মনে ভাবলো,
—“সাদিয়াকে সেই কালো রাত্রের কথাটা কি মনে করানো ঠিক হবে? সাদিয়াকে যেখানে ধর্ষন করা হয়েছে সেখানেই তো ওই লোকটা আমাকে ইমরান ভেবে, থাকতে বলেছিল। সেখানে তো ওরা আরেকটি মেয়েকে ধর্ষন করতে যাচ্ছে। না, আমাকে সাদিয়াকে জিগ্যেস করতেই হবে, কোথায় সেই যায়গাটি? ”

—“সাদিয়া একটা কথা জিগ্যেস করি? ”
—“হ্যাঁ করুণ।”
—“কিছু মনে করো না প্লিজ।”
—“আচ্ছা বলুন।”
—“কোথায় তোমাকে ধর্ষন করা হয়? যায়গাটা কোথায়? একটু মনে করার চেষ্টা করে। ”

সাদিয়া এই প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।

—“আমি কিছু মনে করতে পারছি না।”
—“একটু মনে করার চেষ্টা করো প্লিজ। ”
—“বিশ্বাস করুণ আমি কিছু মনে করতে পারছি না। আমার কিছু মনে পরছি না।”


চলবে…..
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ১০
সেদিন নিজেকে কোথায় ধর্ষন করা হয়েছিল সে যায়গাটি মনে করতে পারছে না সাদিয়া।
সাদিয়া উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে, ওর মাথায় চাপ পড়তে পারে ভেবে রায়হান ওকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
—“শান্ত হও তুমি। একটু শান্ত হও তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাববে। দেখবে সব মনে পরে যাবে। ”
—“আমি কেন কিছু মনে করতে পারছি না? গাড়িতে আমারে টেনে তুলল তারপর আমি ছুটার জন্য চষ্টা করছিম তারপর আমার হাত মুখ চেপে ধরল…. আর কিছু মনে পরছে না কোথায় যাশগাটি। ”
—“একটু ভাবার চেষ্টা করো প্লিজ ” ( মনে মনে –এটা যে একটা মেয়ের মান-সম্মানের ব্যাপার)
—“আমারর কিছু মনে পরছে না। ”
—“যাগটা না চিনো তাতে সমস্য নেই কিন্তু সেখানে এমন কিছু দেখেছ কি যা দ্বারা যায়গা টাকে চিনতে পারি। যেমন : আশেপাশে কোন সাইনবোর্ড এমন ধরনের কিছু?”
—“হ্যা, লোকটা আমার মুখে বেশ বড় একটা পাথর মারতে চেয়েছিল এর মানে আশেপাশে পাথর ছিল, আমি পাহার দেখতে পেয়েছি কিছু। ”
—“এমন তো একটাই যায়গা আছে ‘ ‘নুলিয়াছড়ি’ আর যায়গাটা তোমাদের বাসা থেকে বেশি দূরেও না। এক ঘন্টার রাস্তা হবে হয়তো।”
—“আমি জানি না।
—“আচ্ছা, এসব বাদ দাও আর একটু ঘুমাও। সকালে নামাজ পড়তে উঠবে তো?”
—“সাদিয়া হুম বলে শুয়ে পড়ল।”


মাঝ রাতে, ওয়াশরুমে যাবার জন্য চোখ খুলে পাশে তাকিয়ে সাদিয়াকে দেখতে না পেয়ে আতঙ্কে উঠল রায়হান। বুঝে ফেলল সাদিয়া কোথায়, প্রতিদিন রাতে যেখানে যায় আজও হয়তো সেখানে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, বেড থেকে উঠে, ছাদের দিকে হাটা শুরু করল রায়হান। ছাদে উঠতেই তার এক কোনে বসা সাদিয়ার আর্তনাদ শুনতে পেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে সেদিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলল রায়হান।
এ আর নতুন কি? প্রতি রাতেই সকলে ঘুমিয়ে পড়লে ছাদে বসে কাঁদে সাদিয়া। চিৎকার করে বলে “আল্লাহ কেন আমার সাথে এমনটা হলো আমি তো কোন পাপ করিনি। কোন পাপের শাস্তি স্বরূপ তুমি আমাকে এই শাস্তি দিলে।” রায়হান প্রতিদিন এসব দেখে কিন্তু কখনো সাদিয়াকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে নি কেননা রায়হান মনে করে সাদিয়ার কাছ থেকে ওর এই অধিকারটা কেড়ে নেয়া ঠিক হবে না। দিনের বেলা বুকের ভিতরে কষ্ট চেপে রেখে সবার সামনে হাসিখুশি থাকে যাতে ওর ভেতরের কষ্টটা কেউ বুঝতে না পারে। আর দিন শেষে সে কষ্টটা কান্না হয়ে বের করে দেয়। এখন সাদিয়া যদি জানতে পারে রায়হান ওকে কান্নারত অবস্থায় প্রতিদিন দেখে তাহলে হয়তো মন খুলে কাঁদতেও পারবে না। বুকের ভিতর কষ্টটা চাপে রাখবে যার ফল ভালো হবে না। তাই রায়হান ওকে এভাবে দেখেও ওকে বোঝানোর বা শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে না। আর এসব বিষয়ে যেন রায়হান কিছুই জানে না এমন ভবে থাকে।


সকালে সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে। সাদিয়া খাবার-দাবার সব গুছিয়ে ঘরে এসে দেখে রায়হান ঘরে নেই। ‘রায়হান দেখা না করেই চলে গেল’– ভেবে মন খারাপ করে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
রায়হান আজ কত দিন ধরে অফিসে যায় না। অফিসের নাম করে সাদিয়ার অপরাধিদের খুঁজতে বের হয়। তাই আজ ঘরে বসেই অফিসের সব কাজ-কর্ম ঠিক ভাবে চলছে কি না তা দেখার কথা ভাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। লেপটপ হতে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। সিঙ্গেল সোফায় বসে টি-টেবিল এর উপর পা রেখে কাজ করতে থাকে। সূর্যের আলো শরীরের উপর এসে পরছে রায়হানের। খুব গরম লাগছে বলে ঘরে যাবার জন্য পা বাড়ায়। বারান্দার দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে তখনি সাদিয়াকে একটা টাওয়ালে পরে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবার হয়ে যায়। হা করে তাকিয়ে থাকে।
সাদিয়া ড্রেসিংটেবিল এর আয়নায় ছেলেদের মত কাউকে আপছা দেখতে পেয়ে, পিছু ঘুড়ে জোরে চিৎকার দিতেই রায়হান দৌড়ে এসে ওর মুখ চেপে ধরে। বলে,
—“আরে বাবা আমি, চিৎকার দিচ্ছ কেন? সবাই কি ভাববে।”
—“আ…আ…আপনি না অফিসে চলে গেলেন? ”
—“অফিসে চলে গেলে তোমার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে? ভুত?”
—“না মানে আমি ভেবেছি আপনি চলে গেছেন। তাই চেন্জ না করেই বেরিয়ে গেছি।”
—“আমি থাকলে চেন্জ না করে বের হওয়া যায় না বুঝি?”
—” নাহ, ছাড়ুন আমায়। চেন্জ করতে যাবো।”
রায়হান সাদিয়ার এ কথা শুনে ওর কোমরে চেপে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। বলল,
—“আমি আমার বউকে ধরে রেখেছি তাতে তোমার কি?”
—“ইশশ, ছাড়ুন বলছি। নয়তো চিৎকার দিব।
—“চিৎকার দিবে কি করে? যদি তোমার ঠোঁট জোরা আমার ঠোঁটে জোরার দখলে থাকে।”
বলে রায়হান সাদিয়ার ঠোঁটে ঠোট স্পর্শ করতে যাবে। সাদিয়া আঙ্গুল দিয়ে রায়হানের ঠোঁট চেপে ধরে বলে,
—“আপনি…. হুহ, শয়তান একটা।”
—“এখনো দেখলাম কই আমার শয়তানপনা? দেখাবো কি? ”
সাদিয়া রায়হানকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল, “প্রয়োজন নেই। ” তারপর জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। রায়হান ধপ করে ফাটের উপর শুয়ে পরল তারপর সাদিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল।


রায়হান হাটতে হাটতে রান্নাঘরে গেল। দেখল সাদিয়া রান্না করছে। রান্নাঘরের ভিতরে না ঢুকে বাইরে দাঁড়িয়া সাদিয়াকে দেখতে লাগল। হঠাৎ সাদিয়ার চোখ দরজায় পড়তেই রায়হানকে ওর দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখল। খালি গায়ে সুধু একটা টাউজার পরা রায়হানকে দেখে সাদিয়ার অদ্ভুত অনুভূতি হলো। রায়হানের লোমশ বুকের দিকে তাকাতেই কেঁপে উঠল সাদিয়া। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে উঠল,
—“কিছু লাগবে কি?”
সাদিয়ার কথায় রায়হানের হুশ ফিরল। বলল,
—“হুম লাগবে তো, তোমাকে।”
—“আমাকে দিয়ে কি করবেন ?”
—“জেনেও না বোঝার ভান করাটা তোমার একটা খারাপ অভ্যাস।”
—“এই অভ্যাসটা সবার বেলায় নয় শুধু আপনার বেলায়। ”
—“ওহ, তাই নাকি ?”
—“হুম, খালি গায়ে কেন আপনি ?”
—“গরম লাগছে খুব। আচ্ছা প্রশ্নটা কেন করলে বলো তো হুম।”
—“বাকা হাসি দেয়া বন্ধ করুন আমি এভাই জিগ্যেস করেছি। ঘরে এসি থাকতে আপনার তো গরম লাগার কথা না। ঘড়ে চলুন আমি শরবত বানিয়ে আনছি। ”
—“আচ্ছা যচ্ছি। ”
—“কি হলো যান।”
—“আরে বাবা যাচ্ছি। ”
বলে রায়হান মন খারাপ করে চলে গেল। সাদিয়া মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। ভাবতে লাগল, — আজ উনি এত রোমান্টিক মুডে কেন ? আমার পিছন পিছন ঘুরছে সারাদিন ? আমার মত একটা ধর্ষিতাকে উনি এতটা ভালোবাসতে পারে, সত্যি খুব ভাগ্যবতী আমি। ”


মিমের ব্যাপারটা সকলে জানিয়েছে হৃদয়। কিন্তু কেউই হৃদয়ের কথা শুনতে রাজি নয়। হৃদয়ের মত একটা রাগি, বদমেজাজি ছেলের সাথে মিমের জীবনটা কিছুতেই জরাতে চায় না কেউ। সাদিয়া তো কিছুতেই রাজি নয়। হৃদয় বলে মিমকে পেলে ও ভালো হয়ে যাবে, বদমেজাজ তো দূরের কথা উচ্চশোরে কথা পর্যন্ত বলবে না। তাও সবাই মিমকে হৃদয়ের সাথে বিয়ে দিতে নারাজ। রায়হান বলেছে
—“তুই আগে বেকার না ঘুরে কাজ কর, একটা চাকরির ব্যবস্থা কর, নিজের ব্যবহার/স্বভাব পরিবর্তন কর তারপর সবাই ভাববো। এমটা না হলে সাদিয়া ওর বোন মিমকে তোর কাছে বিয়ে দিবে না।”
—“হ্যাঁ, আমি রাজি কালথেকেই চাকরির খোঁজে বেরোন। ”


সাদিয়া হৃদয়ের কথা শুনে ঘড়ে এসে সেসব ভাবতে থাকে তখনি রায়হান ঘড়ে ঢুকে। রায়হানকে দেখে সাদিয়া বলে,
—“আপনি তো আজ সারাদিন বাসায়ই তাই না?”
—“হুম কিন্তু সন্ধ্যায় একটু বেরোব।”
—“ওহ, আচ্ছা।”
সাদিয়া ভাবছে — “রায়হান সন্ধ্যায় বোরিয়ে যখন রাতে ফিরবে তখন চমকে দিবে রায়হানকে। যে লোকটা ওকে এত ভালোবাসে সে একটু ভালোবাসা তো সাদিয়ার কাছ থেকে ডিসার্ভ করে।”


রায়হান বাসা থেকে বের হয়েছে অধঘন্টা আগে। ও এখনো গাড়িতে, গন্তব্য নুলিয়াছড়ি কিন্তু গন্তব্যে এখনো পৌছাতে পারে নি। নিজের সাথে করে ইমরান সোহেনের ফোনটা নিয়ে এসেছে যাতে করে ওই লোকটার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। হঠাৎ ইমরান হোসেন এর মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। রায়হান গাড়ি সাইড করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে ইমনার হোসেনের মোবাইলে ফাহিম বলে কউ একজন মেসেজ দিয়েছে। লিখেছে,
—“কিরো তুই এখনো কই? মেয়েটাকে উঠায় নিয়াসছি। কাজ তাড়াতড়ি খতম করতে হবে। তাড়াতাড়ি আয়।”
রায়হান বুঝতে পারল ওই লোকটার নাম ফাহিম। রায়হান “ওকে” লিখে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিল।


রায়হান ওকে এত ভালেবাসে তার বদলে সাদিয়া কিছুই দেয় নি ওকে তাই আজ রায়হানকে ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ দিতে চায় সাদিয়া। সাদিয়ার জন্য রায়হানের কেনা বেশ কিছু শাড়ি থেকে কালো একটা শাড়ি বের করল। ঘন কুচি দিয়ে শাড়িটা পরে নিল সাদিয়া। শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে কালো কাঁচের চুড়ি ও কালো দুল নিয়ে আসল তারপর সেগুলো পরে নিয়ে কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পড়ল। চোখে মোটা করে কাঁজল দিল। বাধা চুলগুলো ছেড়ে আয়নায় তাকিয়ে যেন নিজেকেই চিনতে পারছে না সাদিয়া। হয়তো রায়হানের জন্য সেজেছে বলে এতটা সুন্দর লাগছে।
রায়হান ওকে দেখে কি বলবে? রায়হান জানতে চাইলে কেন সেজেছে তখন ও কি উত্তর দিবে রায়হানকে এসব ভাবতে থাকে তখনি চার্জে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো সাদিয়া সেটা কানে ঠেকাতেই চিৎকার দিয়ে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। বাসা থেকে বের হয়ে গড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে বলল ড্রাইভারকে, গন্তব্য এপোলো হস্পিটাল।
চলবে…..
[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ ]
[

1 COMMENT

  1. Ei sab galpo anek Hindu pare,
    Tai balchi gorru magsa Katha ta na ullekh karle
    Bali hato.
    So dukhita galpo ta r parte parlam na.
    Valo hoyechila

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here