পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ১১+১২

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখল :রিদন রায়হান
পর্ব : ১১

কাঁদতে কাঁদতে চোখের কাজল লেপ্টে গেছে সাদিয়ার। ঘর থেকে বেরোনর সময় হাতে থাকা কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে বিধেছে, হাত থেকে এখনো রক্ত ঝরছে। সাদিয়া একটু পর পর ড্রাইভারকে বলছে, “গড়িটা একটু জোরে চালান। একটু জোরে চালান। ” ড্রাইভার এর থেকে আর জোরে চালাতে পারছে না এই ভেবে যে, এর থেকে জোরে চালালে হয়তো এক্সিডেন্ট হয়ে যাব। বেশ কিছুক্ষণ পর! গাড়ি স্থীর হলে গাড়ি থেকে নেমে এক দৌড় দিতেই খালি পায়ে কিছু একটা ঢুকে গেল সাদিহ “আহহ” বলে একটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। পা’য়ের দিকে তাকাতেই দেখল একটা পিন ঢুকে গেছে তার থেকে রক্ত বের হচ্ছে। কাঁপা হাতে পিনটা বের করে উঠে দাঁড়ালো পা প্রচন্ড রকমের ব্যাথা করছে সাদিয়ার। ব্যাথা নিয়েই ছুটে হস্পিটালের ভিতর ঢুকে “রায়হান নামের প্যাসেন্ট কোন কেবিন এ আছে”– জিগ্যেস করে, ছুটল সেই কেবিনের দিকে। কেবিনের সামনে পৌছাতেই বাবা, সৎ মা ও সৎ বোনকে দেখে চমকে গেলো। সাদিয়া একটু এগোতেই সৎ বোন মাইশা এসে সাদিয়াকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। সাদিয়া তোয়াক্কা না করে কেবিনের ভিতর ঢুকে পড়ল। কেবিন এ ঢুকতেই বেডে শোয়া রায়হানকে দেখল, রায়হানের দুটো পা ফুল ব্যান্ডেজ করা। বা-হাতটা ব্যান্ডেজ করা। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। এসব দেখে সাদিয়া “আল্লাহ” বলে কেঁদে উঠল। শরীর যেন এক জায়গায় জমে গেছে সাদিয়ার। পা খোঁড়াতে খোঁড়াতে রায়হানের কাছে গেল। সাদিয়া রায়হানের দিকে আরেকবার তাকাল, রায়হানের উপর ওর হাতটা রাখতে চাইলো কিন্তু যায়গা পেল না। শব্দ করে কেঁদে উঠল সাদিয়া।

রায়হানের ঘুমন্ত নিস্বপাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে সাদিয়া। হঠাৎ রায়হান ধীরে ধীরে চোখ খুলল। সাদিয়ার মিলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিগ্যেস করল,
—“কি হয়েছে? ”
—“আপনার নিজের শরীরের অবস্থা ঠিক নেই আর আপনি আমকে জিগ্যেস করছেন আমার কি হয়েছে? সন্ধ্যয় তো সুস্থ বাসা থেকে বের হলেন এসব কি করে হলো? কি কররে হলো?”
বলে সাদিয়া বেডে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলো। রায়হান ঘন্টা চার-এক আগের ঘটনা গুলো মনে করতে লাগল,


সাদিয়াকে যেখানে ধর্ষন করা হয়েছিল সেখানে পৌছাতেই রায়হান দেখতে পেল তিনজন লোক গাছের সাথে বেধে রাখা মেয়েটার সাথে অসভ্যতামো করতে লাগল। শুকনো পাতার কড়মড় আওয়াজে তিন জন পিছন ফিরে তাকিয়ে রায়হানকে দেখতে পেল। রায়হান দেখল তিনজনের মুখেই মাক্স পরনো। এজনের হাইট, হেয়ার স্টাইল দেখে রায়হান বুঝতে পারল ওইটা ফাহিম। রায়হানকে দেখে তিনজন হো হো হো করে হেসে উঠল। ফাহিম বলে উঠল,

—“আরে তুই এসেছিস? কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি। ভাবলাম তুই আসবি তারপর তোকে উপরে পাঠিয়ে শান্তিতে মেয়েটাকে খাবো। তইতো মেয়েটাকে বেধে রাকছি। ওই দেখ… ”

রায়হান ওদিকে তাকাতেই সাদিয়ার সৎ বোন মাইশাকে দেখে চমকে গেল। মনে মনে বলল,
—“ওরা মাইশাকে উঠিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিল?”

রায়হানের সাথে তাদের কিছুক্ষণ হাতা-হাতি হলো। রায়হান একাই তিনজনের উপর ভারি পড়ল। রায়হানেক ক্রোধের কাছে ওরা টিকতে পারল না। রায়হান গাছের সাথে বেধে থাকা সাদিয়ার সৎ বোন মাইশাকে ছাড়ানোর সময় গড়ি থেকে হকি বের করে মাথায় আঘাত করতেই রায়হান পিছু ফিরে তাকালো তখনি আরেকজন মুখের মধ্যে আঘাত করতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ফাহিম বলে উঠল,

—“তোকে মারার সব বন্দ-ব্যবস্থা করেই এখানে এসেছি। ইমরানের মৃত্যুর খবর শুনেই বুঝে গেছি সেদিন আমি যার সাথে কথা বলেছিলাম সে ইমরান ছিল না অন্য কেউ মানে তুই ছিলি। আর তুই এখানে নিশ্চই আসবি সেটাও জানতাম। আমার বন্ধুটাকে মেরে ফেলেছিস তুই তোকে কি জীবিত রাখা যায় বল।”

বলেই তিনজন মিলে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে লাগল রায়হানকে। প্রতিটা আঘাতে চিৎকার করতে লাগল রায়হান।

বাঁধন হালকা মনে হতেই মাইশা দেখল গিট খোলা। “এর মানে তখন গিট খুলতে পেরেছিল রায়হান”– ভেবে বাঁধন খুলে পালিয়ে যায় মাইশা। প্রথমে বাসায় যায় মাইশা। বাবা-মাকে সব খুলে বলে তারপর তাদের নিয়ে থানায় যায়। থানা থেকে “নুলিয়াছড়ি” এসে দেখে রায়হান আচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। তারপর এপোলোতে নিয়ে আসে রায়হানকে।


সাদিয়া রায়হানকে কিছু ভাবতে দেখে বলল,
—“বললেন না যে কি করে হলো এসব?”

সাদিয়ার কথায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো রায়হান। বলল,
—“উত্তরটা আমি দিতে পারবো না। আর যদি উত্তরটা দিই ও মিথ্যা বলতে হবে আর আমি তোমাকে মিথ্যা বলতে চাই না তাই প্লিজ আমাকে আর এ প্রশ্নটা আর করো না।”

সাদিয়া ভাবছে, “কি হয়েছে যা আমাকে বলা যাবে না?”
রায়হান সাদিয়ার পড়নে শাড়ি, হতে চুড়ি, কানে দুল, চোখে কাজল দেখে মুচকি হেসে প্রশ্ন করল,
—“আমার জন্য সেজেছিলে বুঝি?”
—“না মা…মা…মানে…”
—“বুঝছি আমার জন্যই সাজছিল।”
—“আপনি কি শুরু করলেন? আপনার আবস্থা দেখে আমার কান্না পাইতাছে আর আপনি আছেন আমার সাজ নিয়ে।”
—“আমি অসুস্থ আমার সুস্থতার জন্য কিছু চাই। তুমি কি চাইলে দিবা না?”
—“হ্যাঁ, অবশ্যই দিব।”
—“ব্যাথায় শরীরে জ্বর চলে আসছে, মুখটা তেতো তেতো লাগছে একটা চুমু দাও না।”

সাদিয়া রায়হান এমন কিছ চাইবে মোটেও জানত না। কিছুটা অপ্রশ্তুত হয়ে বলল,
—“এখন কেউ চলে এলে?”
—“দিবা না তাই তো। আমি মরে গেলে বুঝতে?”

সাদিয়া রায়হানের ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে বলল,
—” এ কথা জীবনেও মুখে আনবেন না। ”

রায়হান ডান হাতটা দিয়ে সাদিয়ার হাত ধরে হালকা টান দিতেই সাদিয়া রায়হানের উপর ঝুকে পড়ল। রায়হান বলল,
—“চুমু দাও নয়তো আবার বলবো। ”

সাদিয়া চোখ বন্ধ করে রায়হানের ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়াতেই রায়হান ডান হাত দিয়ে ওর মাথাটা পিছন থেকে চেপে ধরলল। সাদিয়ার ঠোঁট জোরা নিজের ঠোঁটের সংস্পর্শে নিয়ে নিল। কিছুক্ষণ পর রায়হান ওর মাথার উপর থেকে হাত সরাতেই সাদিয়া যেন হাপাতে লাগল। রায়হান সাদিয়াকে দেখে মুচকি হেসে বলল,
—“এখন থেকে অভ্যাস করে নাও। হাপালে চলবে? ”

সাদিয়া রায়হানের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তখনি কেবিন এর দরজায় নক করে সাদিয়ার বাবা-মা আর সৎ বোন মাইশা কেবিন এর ভিতর ঢুকল। তাদের দেখে সাদিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। সাদিয়ার বাবা সাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে রায়হানের কাছে বসল। বলল,
—“এখন কি একটু ভালো লাগছে বাবা?”
—“সামান্য একটু ব্যাথা আছে নয়তো আমি ভালো আছি।”
—” তুমি আজ আমার ছোট মেয়ের জন্য যা করলে নিজের ছেলে হলেও করতো না হয়তো।

সাদিয়ার সৎ মা সালমা বেগম বলে উঠল,
—“তোমার রিন জীবনে শোধ করতে পারবো কি না জানি না। আমার মেয়েটার জীবনটা আজ তুমি বাঁচালে বাবা।”

সাদিয়া এসব সুনে কিছুই বুঝতে পারলো না, “রায়হান কিভাবে মাইশার জীবন বাঁচালো? বাবা-মা এসব কি বলছে কিছুই মাথায় ঢুকলো না। মাইশাকে বাঁচাতে গিয়েই কি রায়হানের এ অবস্থা হলো ” — ভেবে রায়হানের দিকে তাকালো সাদিয়া।

সাদিয়াকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়হানের মুখটা মিলিন হয়ে গেল। রায়হান চায়নি সাদিয়া এসব জানতে পারুক কিন্তু তারা তো সব বলে দিল সাদিয়ার সামনে।

মাইশা তখনি বলে উঠল,
—“আপনি আজ নিজের জীবন ঝুঁকি নেয়ে আমাকে বাঁচালেন নায়তো ওই ধর্ষকগুলা এতক্ষনে আমার সাথে কি কি করতো… ছিঃ….” (মাইশা)
—“কি বলছে বাবা-মা আর মাইশা? মাইশাকে বাঁচাতে গিয়ে আপনার এই অবস্থা আর আপনি এত বড় একটা কথা আমার থেকে লুকাতে চাইছিলেন। কেন? কেন লুকাতে চাইছিলেন? ”

সাদিয়া কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পেরে রায়হান উঠে বসতে চাইলো ঠিক তখনি বা হাতে ব্যাথে পেল। সাদিয়া দ্রুত রায়হানের কাছে গেল রায়হানকে ধরে আস্তে আস্তে শুয়িয়ে দিয়ে বলল,
—“উঠছিলেন কেন?”
—“বিশ্বাস করো সাদিয়া আমি তোমার থেকে ব্যাপারটা লুকাতে চেয়েছি কারন তুমি এমনিতেই নিজেকে এবং সাদিয়াকে নিয়ে ডিপ্রেশড এই ব্যাপারটা শুনলে হয়তো তোমার উপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে তাই। তুমি আমাকে ভুল ভুঝোনা প্লিজ।

—“তুই দুলাভাইকে ভুল বুঝিসনা আপু আমার জন্যই আজ উনার এ অবস্থা।”(মাইশা)
—“আমি আপনাকে ভুল বুঝিনি। আপনার যদি কিছু হয়ে যেত।”
—“আমার কিছু হয়নি তো এই যে পা ব্যান্ডেজ দেখছো, ভাঙ্গেনি কিন্তু ছিলে গেছে মাত্র।”
—“হাত আর মাথা ?”

রায়হান কিছু বলার আগে বলে উঠল সাহেলা বেগম,
—“হাতটা ভেঙ্গে গেছে আর মাথাটা ফেটে গেছে বলে জানিয়েছে ডাক্তার।”


—“আচ্ছা আন্টি মনে আছে আপনার নিজের মেয়ের সাথে যা হতে চলেছিল তা সাদিয়ার সাথেও হয়েছিল। আপনি সেদিন ওকে কত কি বলেছিলেন নষ্টা, ধর্ষিতা আরো কত কি! আজ যদি মাইশার সাথে এটা হয়ে যেত তাহলে কি মাইশাকেও এটা বলতেন? মনে তো হয় না।”
—“আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল বাবা। আমাকে মাফ করে দাও। সাদিয়া মা আমার ক্ষমা করে দে আমায়। এই মাকে ক্ষমা করি না?”

সাদিয়া তাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল। মাইশা পিছন থেকে বোনকে জরিয়ে ধরে বলল আমাকেও মাফ করে দে আপু আমিও তো তোকে সেদিন কত কথা শুনিয়েছি। তাদের কথা শুনে সাদিয়ার বাবা বলে উঠল,

—“কখনো কাউকে কিছু বলতে হয় না। কাউকে কিছু বলার আগে ভাবতে হয় এটা যদি আমার সাথে হতো। নিজেকে সেই ব্যক্তির জায়গায় রেখে বিবেচনা করলে কেউই একটা মানুষের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করতে পারবে না।”
—“ঠিক বলেছেন আংঙ্কেল।”

তারা তাদের করা কাজের জন্য লজ্জা বোধ করল। তখনি রায়হানের মোবাইলে একটা ফোন আসল, সাদিয়া ফোনটা কানে ঠেকাতেই আমজাদ চৌধুরি বলল,

—“বাসায় মাক্স পরা লোক তিনজন লোক এসেছিল কিছু না বলে। ঘড়ের জিনিসপত্র ভেঙ্গে আমাদের একটা ঘড়ে আটকে মিমকে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। হৃদয়ও সে সময়ে বাসায় ছিল না কাজের খোঁজে বাইরে গিয়েছিল। কারা ছিল কিছু বুঝতে পারলাম? সাদিয়া ফ্লোরে বসে পরল। সবাই অবাক হয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালো।

চলবে….
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ১২

ঘড়ের জিনিসপত্র ভেঙ্গে সাদিয়াকে বাসায় না পেয়ে মিমকে উঠিয়ে নিয়ে যায় লোকগুলো। সেই লোকগুলো আর কেউ না সাদিয়ার ধর্ষক ইমরান, ইশানের সহযোগি এবং বন্ধু ফাহিম ও আরো দুজন। লোকগুলো মিমকে জোর করে গাড়িতো ওঠাতে যাবে তখনি মিম হাতে কামড় দিয়ে ছাড়া পেতেই কোন দিকে না তাকিয়ে রাস্তার মধ্য দৌড় লাগালো যাতে করে লোক সমাগম এর মধ্যে থেকে ওকে তুলে নিয়ে যেতে সাহস না করে লোকগুলো।

হৃদয় বড়ি থেকে একটু দূরে মিষ্টির দোকানের সামনে নেমে পড়েছে গাড়ি থেকে। আজ ও ইন্টাভিওতে টিকে গেছে। পরশু থেকে অফিসে জয়েন করবে। সেই আনন্দে বাসায় কিছু মিষ্টি কিনে নিয়ে যাবে। মিষ্টি কিনে মিষ্টির পেকেট হাতে নিয়ে দোকান থেকে বের হতেই মিমকে রাস্তায় দৌড়াতে দেখল।
আতঙ্কে উঠল হৃদয়। মিষ্টি প্যাকেট, বিভিন্ন সার্টিফিকেটের ফাইলা হাত থেকে ফেলে দৌড় লাগাল। মিমের কাছে গিয়ে মিমকে জরিয়ে ধরে বলল,
—“কেথায় ছুঁটছো তুমি এত রাতে?”
—“ছাড়ুন আমায়, আমাকে ছাড়ুন নয়তো চিৎকার করে লোকজন জরো করবো আমি।
—“কি বলছো তুমি এসব। এত রাতে বাসা থেকে বের হলে কেন তুমি?”
—“আপনারা আমাকে ছেড়ে দিন।”
—“আপনারা? কই কেউ তো নাই এখানে আমার দিকে তাকাও, আমি হৃদয়।”

মিম একবার হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে চেনা পরিচিত কারো মুখ দেখে শান্ত হলো। হৃদরের বুকি শান্তিতে মাথা রাখল। হৃদয় মিমকে নিয়ে বাড়ি ফিরল। আমজাদ চৌধুরি আর রেহানা বেগম হৃদয়ের সাথে মিমকে দেখে বেশ অবাক হলেন তার সাথে মিমের বাড়ি ফেরা দেখে খুশিও হলেন। আমজাদ চৌধুরি হৃদয়কে জিগ্যেস করে,
—“মিমকে তুই কোথায় পেলি?”
—“আমি বাসায় ফিরছিলাম তখনি মিমকে রাস্তায় দৌড়াতে দেখলাম তারপর বাসায় নিয়ে আসলাম। মিম রাস্তায় কেন দৌড়াচ্ছিলে তুমি?”

হৃদয়ের কথা শোনার পর রাহেলা বেগম আর আমজাদ চৌধুরি সব খুলে বলল। বাবা-মায়ের সব কথা শুনে হৃদয় বেশ অবাক।
— “কার এমন দুঃসাহস যে কিনা আমাদের বাড়িতে এসে মিমকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সিকোরিটিগার্ড কি করছিল তখন? শালা কই ছিল?
—“ওকে তো খুঁজে পাচ্ছি না তখন থেকেই।”(রাহেলা বেগম)
—“ওরা আমাদের বাসা টার্গেট করেই এসেছিল। যে বা যারা এর পিছনে ছিল তাদের আমি কিছুতেই ছাড়বো না। ওদের খুঁজে বের করবোই।”

রায়হানের কথা শেষ না হতেই আমজাদ চৌধুরি বলে উঠে সাদিয়া, রায়হান ওরা মিমের জন্য ট্যানশন করছে হয়তো। ফোন করে জানিয়ে দেয়া উচিত মিম ঠিক আছে ওকে তুই ফিরিয়ে এনেছিস সুস্থ অবস্থায়।

—“আমার খুব পানি পিপাসা পেয়েছে দৌড়ানোর কারনে, পনি খাবো।”(মিম)

আমজাদ চৌধুরি আর রেহানা বেগম দুজনই চমকে গেলেন মিমের কথা শুনে। ডাক্তার বলেছিল মিম যে বড় ধরনের সক্ট পেয়েছে ওর সাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে দু’এক বছর লাগবে কিন্তু মিমের সাভাবিক ব্যবহার, কথা বলা দেখে তারা অবাক হলো।

—“ওগো মিম কথা বলছে?”(রেহানা বেগম)
—“তাই তো দেখছি।”
—“এতে এত অবাক হওয়ার কি আছে একটু আগে রাস্তায়ও তো আমার সাথে কথা বলল।”
—“কি বলছিস? মিম কি তাহলে সুস্থ হচ্ছে?”

রায়হান এবার ব্যাপারটা খেয়াল করে দেখল “সত্যিই তো মিম কথা বলছে, সাভাবিক ব্যাবহার করছে। তাহলেকি সত্যি আমার মিম এবার সুস্থ হয়ে উঠবে?” ভেবেই খুশিতে মিমের হাত দুটি ধরে বললো,
—“তুমি আবার আগের মত সুস্থ হয়ে মিম।”
—“আমার হাতটা ছাড়ুন। ভুলে যাবেন না আপনি একজন পরপুরুষ। আপনার সমনে আসাও আমার গুনাহ হবে তাই প্লিজ আমার কাছ থেকে একটু দূরে থাকুন। আমি একটু একা থাকতে চাই।”

রেহানা বেগম মিমকে ওর ঘড়ে নিয়ে গেল। হৃয়দ লজ্জা ভেঙ্গে আমজাদ চৌধুরিকে বলল,
—” বাবা আমি আর মিমের কাছে পরপুরুষ হয়ে থাকতে চাই না। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। আর তোমাদের কথা মত আমি চাকুরিও পেয়ে গেছি। বাবা তুমি ভাইয়া, ভাবি বাসায় আসলে কথা বইলো তাদের সাথে। আমি ওর থেকে আর দূরে সরে থাকতে পারবো না।”

হৃদয় চলে গেল। আমজাদ চৌধুরি মিমকে ফোন করে সব কিছু বলল মিমের বাড়ি ফেরার কথা। সাদিয়া সব শুনে যেন শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছে এখন। রায়হানকে বললে রায়হান একটু চিন্তামুক্ত হয়। কিন্তু ভাবতে থাকে — “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এদের ব্যবস্থা কিছু একটা করতেই হবে।”

সাদিয়া রায়হানকে নিয়ে বাসায় ফিরতেই আমজাদ চৌধুরি এবং রেহানা বেগম ছেলের শরীরের অবস্থা দেখে উত্তেজিত হয়ে গেলেন, একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলেন। “রায়হানের হাত,পা, মাথায় ব্যান্ডেজ কেন? এসব কি করে হলো? কিভাবে এমন হলো? সাদিয়া ফোনে কিছু জানালো না কেন? রায়হান এখন কেমন আছে?” তারা চিন্তা করবে বলে রায়হান “ধর্ষকরা ওকে মেরেছে” কথাটা না বলে বলল, “গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছিল।”


সাদিয়া রায়হানকে ঘরে নিয়ে গিয়ে ধরে ধরে খাটে শুয়িয়ে দিল। রায়হানের সারা শরীর যেন এখন ব্যাথা করতে লাগল। শরীরের জ্বর টাও যেন বারতে লাগল রায়হানের। রাত প্রায় অনেক হয়েছে তাই সাদিয়া রায়হানের খিদে পেয়েছি কি না জিগ্যেস করল রায়হান জ্বরের কারনে কিছু খাবে না বলে জানালে।
সাদিয়া কিছুক্ষন রায়হানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—“কিছু না খেলে তো শরীর খারাপ করবে আপনার। জানেন আপনার জন্য সন্ধ্যায় বিরিয়ানি রান্না করেছিল।”

রায়হান বিরিয়ানির কথা শুনে বলল,
—“বিরিয়ানি ?”
—“হুম, মা বলেছিল আপনি খুব পছন্দ করেন তাই রেঁধেছিলাম।”
—“আমি খাবো, জলদী নিয়ে আসো।”

সাদিয়া রায়হানের কপালে হাত রেখে বলল,
—“আপনার জ্বর কমে গেল নাকি বিরিয়ানির কথা শুনে?”
—“আহা, নিয়ে আসো না।”
—“এক্ষুনি যচ্ছি।”

বলে সাদিয়া চলে গেল। দুই মিনিটের মধ্যে বিরিয়ানির থালা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো সাদিয়া। কর্নার টেবিলের উপর থালাটা রেখে রায়হানকে ধরে ধরে শোয়া থেকে বসতে সাহায্য করল। তারপর প্লেট হাতে নিয়ে রায়হানের মুখের সামনে এক লোকমা বিরিয়ানি তুলে ধরল সাদিয়া। রায়হান বিরিয়ানি মুখে না নিয়ে বলল,
—“আহা, কি সুন্দর গ্রাণ আছে এটা থেকে ঠিক মায়ের রান্না করা বিরিয়ানির মত।”
—“আমি বিরিয়ানি রাঁধতে পারতাম না। মাই তো সিখালো রান্নাটা। তাই মায়ের রান্নার গ্রাণ আসছে বোধয়।”
—“হুম, তাইতো বলি একদম মায়ের রান্নার গ্রাণ আসছে এটা থেকে।”
—“কথা রেখে এবার মুখে নিন প্লিজ। বেশিক্ষণ বসে থাকা আপনার জন্য ঠিক না তার উপর আপনার জ্বর।”

“হুম দাও” — বলপ রায়হান খাবার মুখে নিল। রায়হান খাওয়ার পর সাদিয়াকে বলল,
—“পর পর তোমার হাতের আঙ্গুল গুলো একটা একটা করে আমার মুখে দাও চেটে খাবো।
—“কিহ ?”
—“হ্যা, আমি চেটেপুটে খাবো।”

সাদিয়ার আঙ্গুল গুলোতে লেগে থাকা বিরিয়ানি গুলো রায়হান একের পর এক খেতে লাগল আর সাদিয়া প্রতিটা আঙ্গুর চাটার সময় কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। সাদিয়া লজ্জায় লাল হওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে রায়হান বলল,
—“আমার হাতটা যেন সারাজীবন এমনই থাকে। তাহলেই প্রতিদিন তিনবেলা তোমার হাতে খেতে পারবো।”
—“আল্লাহ মাফ করুন। এসব কি বলছেন আপনি। আপনার হাত ঠিক করে হলেও আমি প্রতিদিন আপনাকে খায়িয়ে দিব। এসব কথা আর ভুলেও বলবেন না।”
—“আরে আমি তো এমনিই বললাম। কি হলো রাগ করলে? সাদিয়া? ”

“আমি প্লেটটা রেখে আসছি ” — বলে সাদিয়া রান্নাঘরে চলে গেল। ফিরে এসে দেখল রায়হান জ্বরে কাপছে। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে দেখল, ‘একশো চার ডিগ্রি জ্বর ‘
সাদিয়া কাবার্ড থেকে ভারি কাথা বের করে রায়হানের গয়ে জরিয়ে দিল। দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে এক বাটি পানি, সরিসার তেল গরম করে নিয়ে আসলো। রায়হান শীতে কাপছে এখনো সাদিয়া রুমাল ভিজিয়ে রায়হানের মাথায় জল পট্টি দিয়ে বুকে হাতে পায়ে মালিশ করতে লাগলো। রায়হান যেন জ্বরে এখনো কাপছে সাথে গোঙ্গাচ্ছেও। সাদিয়ার ভয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে রায়হানের কাপুনি বন্ধ হয়ে গেল। গোঙ্গানোও বন্ধ হয়ে গেল। সাদিয়া হাত রেখে বুকে মালিশ করার জন্য হাত রাখে রায়হানের হার্টবিড শুনতে পেল না। বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করতে লাগগল সাদিয়া। রায়হানের বুকে মাথা রেখেও কোন হার্ট বিট শুনতে পেল না সাদিয়া। রায়হানের নাকের কাছে হাত নিয়ে…..

চলবে….

[ খুব বেশি সমস্যর মধ্যে আছি আমি নিজেও জানি না গল্প কেমন হচ্ছে। দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here