#ঝরা পাতার দিনগুলো
#পান্না হাবিব
পর্ব -৪
আমাদের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে এশার আজান দিয়ে দিলো। রুমে ঢুকেই ফয়সালের ফোনে আবার ট্রাই করলাম। নাহ এখনো ফোন অফ বলছে। কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।
বেস্ট ফ্রেন্ড প্রিমাকে ফোন দিলাম। কেউতো জানেই না যে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে!!
-প্রিমা আমি না বিয়ে করে ফেলছি।
– ভেরি গুড বেবি। সাক্ষী কে কে হইছে? আমি সাক্ষী হই নাই সো এই বিয়ে হবে না। তুই আবার বিয়ে করবি।
– আচ্ছা আবার বিয়ে করবো।
-ফয়সাল ভাই কই? থাকবি কই রাতে? ফয়সাল ভাইয়ের বাসায় সবাই মেনে নিসে?
– একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম ফয়সাল না সাব্বির।
– প্রিমা কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো
কি করবো চিন্তা করে কিছুক্ষন পর আবার ফোন দিলাম প্রিমাকে। ফোন রিসিভ হতেই অপরপাশ থেকে কান্নার শব্দ পেলাম। আশ্চর্য!! শুধু আমিই কাঁদতে পারছি না। বাসায় আসিস কালকে এটা বলেই ফোন কেটে দিলাম।
-কি মেহের কোন ডিপার্টমেন্ট?
-আমি মুচকি হেসে বললাম স্যার একুয়াকালচার। -ফয়সালও কি একুয়াকালচার এ?
আমি মাথা ঝাকালাম।
– হুম এই জন্যেই তুমি এই ডিপার্টমেন্টে।
-দাত বের করে হাসি দিয়ে বললাম জি স্যার। ওকে রেখে কই যাবো বলেন স্যার।-
– বিয়ে করছ কবে?
– স্যার লেইট করবো না। ফয়সাল একটা জব পেলেই বিয়ে করে ফেলবো।
-বাসায় জানে তোমার?
-নাহ কিন্তু ও একটা জব পেলে ম্যানেজ৷ করে ফেলবো সব ইনশআল্লাহ।
আর একমাস পরে হলো এই অবস্থা!!!
মেজো ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন্যে ভাইয়ার রুমের কাছে আসতেই শুনতে পেলাম মেজো ভাবির গলার আওয়াজ,” আর বইলো না, এখনোতো কেউ জানে না মেয়ে যে বিয়ের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কই ছিলো।
না না, এখন বলবো না। সুযোগ মতো সব শোধ তুলবো। আমাকে কম অপমান করেছে এইটুকুন মেয়ে!!”
আমার জন্যে ভাবি কবে অপমানিত হয়েছে মনে করতে পারলাম না ঠিক। মাথা চুলকাতে চুলকাতে ড্রইংরুমের দিকে গেলাম। আমার তিন ভাইয়া, তিন দুলাভাই সবাই দেখি গল্প করছে। মেজো ভাইয়াকে ডাক দিলাম।
-ভাইয়া নেক্সট মাসের ৩ তারিখ থেকে মিডটার্ম শুরু। আর আমার রিসার্চও শুরু করতে হবে।
– কবে যেতে হবে চিটাগং?
– যত তারাতাড়ি যেতে পারি।
– আচ্ছা আমি দেখছি
আমার রুমে ঢুকে দেখি সব আপু আর ভাবিরা বসে আছে। আমাকে ঢুকতে দেখেই মেজো ভাবি বলে উঠলো
কিগো ননদিনি, কি করলা বাসর রাতে? বলেই সবাই হেসে উঠলো।
আমি ভেবে পেলাম না মানুষ এতো তারাতাড়ি রং কিভাবে বদলায়!!
তোমরা যদি শুনতে পারো আমি বলতে পারি, আমার কোনো সমস্যা নাই।
নাহ ভাই থাক, তোর মুখে যে কিছু আটকায় না সেইটা আমরা জানি। বলেই সবাই আবার হাসাহাসি শুরু করলো।
এতো অসহ্য লাগছে এদেরকে!! এতো হাসে কেনো এরা!!
রাতে সবাই একসাথে ড্রইং রুমে ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে খেতে বসেছি।
“আচ্ছা মেহের গতকালকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথায় ছিলি?” ছোট ফুপির এমন প্রশ্নে সবাই খাওয়ার কথা ভুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!!
এই ঘটনা কিভাবে জানলো সেটা নিয়ে না হয় পরে ভাবা যাবে। কিন্তু এখন উত্তরটা দিব কি। মাথা ঘুরাচ্ছে আমার। মেজো ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কেনো জানি মনে হলো এই মানুষটা জানে সব।
-আমার সাথে ছিলো। সাব্বিরের এমন উত্তরে সবথেকে জোড়ে স্বস্তির নিশ্বাসটা মনে হয় আমি ফেললাম!!!
-আর হ্যা কেনো আমার সাথে ছিলো আর কি করেছি আমারা সেগুলো আশা করি জানার কারো দরকার হবে না।
এইপ্রথম বার কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালাম সাব্বিরের দিকে। কিন্তু তাচ্ছিল্যের হাসি আর ঘৃণার পরিবর্তে আর কিছুই পেলাম না।
কোনরকমে রাতের খাওয়া শেষ করে রুমে চলে এলাম। সবগুলো পিচ্চি খাটের উপর বসা। অন্য সময় হলে হয়তো ভুতের গল্প বলে সবগুলোকে ভয় দেখিয়ে একসাথে ঘুমাতাম। কিন্তু একমুহূর্তে সবগুলোকে দেখে বিরক্ত লাগছে।
-ফুপি তুমি আমাদের সাথে নাকি ঘুমাবে না? গাল ফুলিয়ে সবথেকে পিচ্চিটা বললো। তাই আমরা তোমার রুমে আগেই চলে আসছি।
হঠাৎ মনে হলো আরে এদের সাথে ঘুমালে তো সাব্বিরের সাথে, না না ফ্লোরে ঘুমাইতে হবে না।
-দাত কেলিয়ে হাসি দিয়ে বললাম জি আম্মু আব্বুরা আজকে তোমরা সবাই আমার সাথে ঘুমাবা। মজার মজার গল্প বলবো তোমাদের।
কি পিচ্চি পাচ্চারা ঘুমাতে যাও নি এখনো?
যাও যাও। তোমাদের ফুপির সাথে আমার একটু কাজ আছে। সাব্বির রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
-কি করবা তুমি ফুপির সাথে?
-প্রেম করবো তোমার ফুপির সাথে।।
ছয় বছর বয়সি বড় ভাইয়ার বড় মেয়েটা দোড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো “আম্মু…পাপা.. তোমরা আমাকে পাশের বাড়ির ছেলের সাথে প্রেম করতে দাও না আর এখন?
ফুপির ঘরে সাব্বির চাচ্চু ঢুকছে প্রেম করতে!!!
খালি আমার বেলায় সব দোষ!! ”
সাব্বির থম মেরে দাড়িয়ে আছে!!
বাকি সব পিচ্চি গুলো কে রুম থেকে বের করে দিলাম। বাইরে এখনো ঐটার চিৎকার শুনতে পাচ্ছি।
-শেষমেশ পিচ্চি মেয়েটাকেও তোর মতো বানাচ্ছিস তাই না?
কি উত্তর দিবো ভেবে পেলাম না। ধুরো, এতো ভেবে কি হবে। অনেক ভেবেও তো কিছুই করতে পারলাম না নিজের জীবনে !!
মুখের উপর ধাম করে বালিশ এসে পরলো। কিছু না বলে বালিশটা ফ্লোরে রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।
বাইরে কি সুন্দর ধবধবে সাদা চাঁদের আলো!!
মনে হচ্ছে সব জোছনা আজকেই নেমে শেষ হয়ে যাবে।এমন চাঁদের আলোয় আমি আর ফয়সাল সারারাত কথা বলতাম। আমি হলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আর ও আমাদের হলের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার উপর বসে কথা বলতো। মাএ কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতাম আমরা দুজন দুজনকে দেখে দেখে । মাঝে মধ্যে জোড়ে আই লাভ ইউ মুটকি বলে দৌড় দিতো যেনো কেউ চিনতে না পারে!!
বুকের ভেতর কেমন সব খালি খালি লাগছে। রুম থেকে এনে একটা সিগারেট ধরালাম। আগে ফয়সালকে রাগানোর জন্যে খেতাম মাঝে মধ্যে। কিন্তু আজকে রাগ করার মতো কেউ নেই।
.