#তোমার_মাঝেই_আমি
#পর্ব:২
#নিহীন_রুবাইয়াত
–নিহীন এই নিহীন খাবার খেতে আয়..
–আসছি মা।
নিহীন ফেসবুকিং করছিলো এতোক্ষন,কিন্তু এখন অনিচ্ছা স্বত্তেও নিচে যাওয়া লাগছে।নিহীনদের বাড়ির এই এক নিয়ম না খেয়ে থাকা যাবে না।নিহীনের বাবা শান্তশিষ্ট মানুষ কিন্তু রেগে গেলে মাথা ঠিক থাকে না তাই খাবার না খেয়ে থাকা যাবে না তা না হলে তাকে বকা শুনতে হবে।
–কি ব্যাপার তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো ভাইয়া?
–বস বস,নিলুফার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।
(নিহী নিলুফার দিকে তাকাই।নিলুফা লজ্জাই পুরো লাল হয়ে আছে)
–নিহী তোমার ইচ্ছাগুলোও বলো,আপুর বিয়ে বলে কথা তোমারও তো কিছু শখ আছে না কি?(নিহীনের ভাবি অনামিকা খাবার বাড়তে বাড়তে বলে)
–হুম আছে তো ভাবি।বিয়েতে আমি ডান্স করবো আর আমার পছন্দ মতো ড্রেস,মেকাপ,জুতা,জুয়েলারি সব কিনে দিতে হবে।
–আরে সব হবে পাগলি
–থ্যাংকস ভাইয়া।
–সবই ঠিক আছে কিন্তু জুতা চুরি বা কোন দুষ্টুমি হবে না কিন্তু(নিহীনের বাবা খেতে খেতে বলে)
–মানে টা কি?বাবা এসব না হলে মজা হয় নাকি?
–হ্যা আব্বা।এসব না হলে মজা হয় না নিহীন তো ঠিক বলেছে(অনামিকা ও গাল ফুলিয়ে বলে।বউমার কথা অমান্য করা যায় না বিধাই মিনহাজুর সাহেব ঠিক আছে বলেন)
–এই তোরা কি নিয়ে কথা বলছিস রে?
–এসে গেলো ভাঙা রেডিও(নিহীন তার ফুফুকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে খাবারের দিকে চোখ দেই)
–এই ছেড়ি তুই কি বললি?
–কিছু না ফুফু(হাসার চেষ্টা করে)সবসময় কথা ধরা লাগবে,অসহ্য একদম(মনেমনে)
–নিশান বল না কি কথা হচ্ছিলো…
–তেমন কিছু না ফুফু নিলুফার বিয়ের কথাই।কাল পরশু তো ডেট ফিক্সড হবে তাই আর কি।
–ওহ…আচ্ছা শোন আমার কিন্তু লাল বেনারসি কিনে দিবি একটা।আমার অনেক দিনের শখ লাল একটা বেনারসি পড়ার।(লজ্জা পাওয়ার ভাব নেই মহিমা বেগম কিন্তু নিহীন এবারো তার পিছে লাগে)
–হ্যা ভাইয়া লাল বেনারসি দিস ফুফুরে তারপর পার্লার থেলে সাজিয়ে আপুর বদলে ফুফুর বিয়ে দিয়ে দেবো।বেচারা আমাদের ফুফা তো শান্তি পাবে।সারাদিন ভাঙা রেডিওর গান তো আর শোনা লাগবে না।হাহাহাহহাহাহহাহা…
নিহীনের কথাই সবাই হেসে দেই তার ফুফু অনেক ক্ষেপে যাই।
–ভাইজান দেখো তোমার মেয়ে আবার আমাকে কথা শুনাচ্ছে(কাঁদো কাঁদো মুখে)
–নিহীন কি হচ্ছে টা কি?ভুলে যেয়ো না উনি তোমার ফুফু হয়।
নিহীন কিছু বলতে যাই কিন্তু মায়ের চোখ গরম করা দেখে আর কিছু বলে না।
দুইদিন পর খান পরিবার থেকে রহমান পরিবারে ফোন করা হয় আজ বিকালে নাকি তারা আসবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করার জন্য।নিহীনদের বাড়িতে তো হৈচৈ পড়ে গেছে।কিন্তু নিহীনের ফোনে হাসপাতাল থেকে কল আসে মীরার নাকি ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।মীরা নিহীনের বেস্টফ্রেন্ড,বাবা-মা নাই আপন বলতে আছে শুধু তার দাদি।দাদি টেনশন করবে বলে নিহীনকে ফোন দেয়া হয়েছে।নিহীন তাড়াহুড়া করে চলে যাই।তার বাবা মাও তাকে বাধা দেই না কারন মীরাকে তারাও অনেক ভালোবাসে।
এদিকে খান ভিলাইও আয়োজন চলছে।বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা।আলমাস সাহেব খুবই ব্যস্ত বেয়াই বাড়িতে কি কি মিষ্টি,ফল নিয়ে যেতে হবে তা না।এদিকে সৌরভ,সৌভিকের মা রুবিনা খানও শাড়ি,গহনা ঠিক করছেন।ছেলের বউকে আজ তিনি আংটি পরিয়ে আসবেন নাকি।তবে সৌরভ বেশ মন খারাপ করে বসে আছে তাকে নাকি নিয়ে যাওয়া হবে না।সৌভিক তার বাবার অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ভাইয়কে সাথে নিয়ার পারমিশন নিয়েছে।
বিকাল ৪টার দিকে সৌভিকরা রহমান ভিলাই যায়।বাবা,মা,সৌরভ,সৌভিক আর তাদের মামা এসেছে বিয়ের ডেট ঠিক করতে।সবাই গল্পগুজব করছে কিন্তু সৌভিক যেন অস্থির হয়ে উঠছে বার বার এদিক ওদিক চোখ ঘুরাচ্ছে।
–ধুর কই গেলো…(আনমনে বলে ওঠে সৌভিক)
–কিরে কাকে খুজিস??(দুষ্টু হাসি হাসি দিয়ে সৌরভ জিজ্ঞেস করে)
–কা কাকে খুজবো আমি?আর কে_কেনোই খুজবো?কি উল্টা পাল্টা বকছিস?শর তো…
–বুঝি বুঝি,সব বুঝি।ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাই তাও আবার ৩ বছরের বড়…
–শুনবি কারে খুজছি?
–বল বল…(অধীর আগ্রহে সৌরভ তাকাই)
–তোর বউ রে মানে আমার ভাবি।(চোখ টিপ মারে সৌভিক)
–হুর শালা…(সৌরভ বিষন্ন ভাব নিয়ে ঘুরে বসে)
আংটি পরানো হয় তারপর ঠিক করা আগামী ২৮তারিখে বিয়ে।তার মানে আর ১৭ দিন পর।কিন্তু তার আগে ২৬ তারিখ হলুদ হবে,ছেলেমেয়ের হলুদ একসাথেই হবে আর ২৭ তারিখ মেহেদি।তারপর ৩০ তারিখে বৌভাতের অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যার দিকে সৌভিকরা চলে যাচ্ছে।কিন্তু সৌভিকের মনটা যেন যেতেই চাচ্ছে না।কাউকে তো জিজ্ঞেস ও করা যাবে না কিছু।মন খারাপ করে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতে যাই সে।গাড়ির দরজা খুলতে যাবে তখনই সৌরভ হাত ধরে ফেলে
–বেস্টফ্রেন্ড এক্সিডেন্ট করেছে,হাসপাতালে গেছে তাই।(মুচকি হেসে সৌরভ গাড়িতে বসে)
সৌভিক কিছু বলে না তবে ভাইর মুখে এমন কথা শুনে সারা রাস্তা চুপচাপ থাকে,দু একবার সৌরভের সাথে চোখাচোখি হলেও চোখ সরিয়ে নেই।আর সৌরভ তো মিটমিট করে হেসেই গেছে সারা রাস্তা।
নিহীন মীরাকে তার বাসায় রেখে নিজের বাসায় এসে বিয়ের তারিখ শুনে তো মহা খুশি।
পরের দিন দুপুরে নিহীন তাদের বাড়ির সামনের পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা পাড়ছিলো হটাত তার পা পিছলে যাই আর সে নিচে পড়ে।কিন্তু সে মাটিতে পড়েনি পড়েছে সৌভিকের গায়ের উপর।সৌভিকের পিঠের ওপর নিহীন শুয়ে আছে।সৌভিক ব্যাথায় মাগো করে উঠলো।নিহীন তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে।
–সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি আপনার গায়ের ওপর পড়ে গেছি।
নিহীন হাত বাড়িয়ে দেই সৌভিকের দিকে
কিন্তু সৌভিক না উঠেই বলে,
–আরে আরে বুঝি বুঝি,আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের ওপর যে কোন মেয়েই পড়তে চাই।বাহানা করা লাগবে না আর(সৌভিক উঠতে উঠতে কথা গুলো বলে)
–ও হ্যালো আমি ইচ্ছা করে পড়ি….
(নিহীনের কথা শেষ হতে দেই না সৌভিক)
–ওই মেয়ে তোমার মালিককে ডাকো,,চাকর বাকরকে এসব বলা যাবে না।
–হোয়াট দা হেল!!কে চাকর?(নিহীন রেগে যাই)
–আরে ধুর মিনহাজুর আংকেল বা নিশান ভাইকে ডাকো,যাও যাও কুইক…
–ওরে আমার নবাব পুত্তুর।আপনি কোথাকার কে হ্যা যে আপনার অর্ডার ফলো করতে হবে?আর ওনাদের সাথেই বা কি দরকার?
–আমি নবাব পুত্র না হলেও অনেক কিছুই।যাই হোক তোমার মতো পেত্নিকে সেটা বলতে চাই না।
–ইউ!!…আমি পেত্নি?
–পেত্নি না হলে গাছে কি?
–এই ছেলে এই তখন থেকে যা নয় তাই বলছিস কে রে তুই?
–আমি?ওই যে নিলুফা আছে না এই বাড়ির মেয়ে ওর এক মাত্র দেবর।আজহার আরিয়ান সৌরভের একমাত্র ছোট ভাই আশহাদ আরিয়ান সৌভিক।
(নিহীন থ মেরে যাই)আরো একটা সিক্রেট আছে,শোনো তাহলে,এই বাড়ির ছোট মেয়ে নিহীন না ফিহিন কি যেন নাম সে আমার কাছে চুমু চাইছে।বলা যাই না মিনহাজুর আংকেল আবার ছোট মেয়েটারে আমার জন্য আমাকে ফিক্সড ও করতে পারে।
কথাটা বলেই চোখ টিপ মারে সৌভিক আর সাথে দুষ্টু হাসি দেই।আর নিহীনের সেদিনের কথা মনে পড়ে যাই।সে লজ্জাই বাড়ির ভিতরে দৌড় দেই।
–আরে কই যাও?দাড়াও…..হাহাহাহাহাহাহহাহা।পেত্নি…….(সৌভিক জোরে জোরে হাসতে থাকে)
এদিকে নিহীন তার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেই..
চলবে কি???
(ভুলত্রটি ক্ষমা করবেন আর গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন।ধন্যবাদ)