তোমার মাঝে আমি পর্ব ৩

তোমার_মাঝেই_আমি
#পর্ব:৩
#নিহীন_রুবাইয়াত

সৌভিক নিহীনদের বাড়ির সামনে দাড়িয়েই হাসছিলো,নিশান অফিস থেকে দুপুরে খাওয়ার জন্য বাসায় আসছিলো তখনি সৌভিকে হাসতে দেখে।

–আরে সৌভিক কি অবস্থা ব্রো?
–আলহামদুলিল্লাহ ভাই।আপনার কি খবর?
–আমিও ভালো আছি।কিন্তু তুমি এখানে দাড়িয়ে কেন ভিতরে যাওনি আবার হাসছো এতো।কি হয়েছে?
–তেমন কিছু না ভাই,একটা পেত্নি দেখে হাসি পাচ্ছে।
–পেত্নি মানে??
–কিছু না।ভিতরে যেতে দেবেন না নাকি?
–আরে কি যে বলো চলো।

সৌভিককে দেখে সবাই তো অনেক খুশি।সৌভিক জানাই সে এসেছে বিয়ের শপিং করতে হবে তাই নিলুফা যেন সাথে যাই এটা বলার জন্যই এসেছে।
নিহীনের বাবা সৌভিকের জন্য মিষ্টি,ফল আনতে বলে।
ট্রে তে করে নিহীন একটা গ্লাস আনে,,
–এই নিন খান
–কি এটা নিহীন?(ওর বাবা জানতে চাই)
–ঠান্ডা ঠান্ডা ঘোল এনেছি বাবা।মিষ্টি খেলে তো ডায়াবেটিস হবে তাই ওসব না খাওয়াই ভালো।আর বাইরে যে গরম ঘোল খেলে মাথা ঠান্ডা হবে।
–কি সব বলছিস এ?বাবা তুমি কিছু মনে করো না।
–না না আংকেল আমি কিছু মনে করিনি।আর তাছাড়া আই লাভ ঘোল।

সৌভিক এক গ্লাস ঘোল পুরোটা খেয়ে ফেলে।ওর ঘোল একদম পছন্দ না কিন্তু তাও হাসিমুখে খেয়ে নেই,মনে মনে তো বমি করতে ইচ্ছা করছে।খাওয়া শেষে নিহীনের দিকে তাকিয়ে বলে
–ঘোল টা ভালো ছিলো বেইয়ান।

সৌভিক বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাই।নিহীন চলে যাই বেলকনিতে।সৌভিক গাড়িতে উঠে বসবে তার আগে বেলকনিতে তাকিয়ে দেখে নিহীন হাসছে,সৌভিক তখন বলে ওঠে
–আমাদের বাসায় আসেন আমরাও অতিথি আপ্যায়ন করতে জানি।

বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছে আজ দুই পরিবার।নিহীন,নিলুফা,নিহীনের ভাবি অনামিকা রেডি হয়ে বসে আছে।সৌরভ আর সৌভিক আসবে নাকি।

তারা বিয়ের শপিং এর জন্য নাম করা শপিং মলে যাই।নিলুফার জন্য শাড়ি,গহনা কেনে।বাড়ির সবার জন্যই নতুন জামা কাপড় কেনা হয়েছে কিন্তু নিহীন কিছুই কেনেনি।তার নাকি কোনটাই পছন্দ হয়নি।

সবাই কফি খেতে ক্যাফেতে যাই কিন্তু নিহীন বাইরেই থাকে।হটাত একটা ১৩-১৪ বছর বয়সী ছেলে এসে,,

–আপু,আপু এটা নে
–কি এটা?কিসের প্যাকেট?
–ভাই দিছে আপনারে..
–মানে?কে ভাই কোন ভাই?আর আমাকে কেন দিছে?
–আপু আমি তো অত জানি না।আমাকে বললো আপনাকে দিতে।কাল থেকে কিছু খাইনাই আপু ভাইর এই কাজ করে দেয়ার জন্য উনি আমায় ৫০০ টাকা দেছে আর যদি এটা নেন তাহলে আরো ৫০০ দেবে।এটা নিয়ে নেন না আপু।

(নিহীন তো ভাবছে কি হচ্ছে এসব?আর ওরে কেই বা এটা দেবে,আছেই বা কি?)
–ও আপু নেন না…(ছেলেটার জন্য মায়া হলো,নিয়ে নিলো নিহীন প্যাকেট টা আর সাথে একটা চিঠি।নিহীন অনেক আগ্রহ নিয়ে চিঠিটা খোলে,

“এতো বাছাবাছা ঠিক না।বেশি ভালো খুজতে গেলে পস্তাতে হয়”।
হাহ!কে এটা?আমাকে কিনা বলে বাছাবাছি ঠিক না।নিহীনের জানা লাগবে এটা কে দিলো)

–আচ্ছা ভাইয়া এটা তোমায় কে দিয়েছে?
–ওই যে নীল শার্ট পরা ভাইটা।

বাচ্চাটার কথা মতো নিহীন ক্যাফের ভিতরে তাকাই,নীল শার্টে তো সৌরভ।নিহীন হেসে দেই।তারমানে তার দুলাভাই দিছে কিন্তু পিচ্চিটার হাত দিয়ে দেয়ার কি দরকার?নিজে দিলেই তো পারতো।

–আচ্ছা ভাইয়া তুমি এখন যাও।আর এই নাও ২০০টাকা তুমি খাবার কিনে খেয়ো।

এতোক্ষন,একজোড়া নজর নিহীনদের দেখছিলো,কিন্তু নিহীন সেটা জানেই না।বাসায় চলে যাই তারা।

অবশেষে আজ হলুদ।দুই পরিবারের হলুদই এক সাথে হবে।শহরের বেশ নাম করা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে।

ছেলেপক্ষের মেয়েরা আজ পরেছে হালকা সবুজ কালারের শাড়ি আর নীল পাঞ্জাবি আর মেয়ে পক্ষরা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি আর ছেলেরা বেগুনি পাঞ্জাবি।

–সবাই এসে গেছে তো সে কই??সে এখনো আসছে না কেন??
–কে কই সৌভিক?(পাশ থেকে আবিরের গলা শুনে সৌভিক চকমে ওঠে।আবির সৌভিকের মামাতো ভাই।সৌভিকের সাথেই পড়ে মাস্টার্স ১ম বর্ষে)
–তু তুই?তুই এখানে?
–আমি এখানে মানে?ভাইটা কি একা তোর যে তুই থাকবি আমি থাকতে পারবো না।
–আরে আমি কি সেটা বলেছি?মানে তুই কখন এলি?মামি বলছিলো তোর আসতে আজ রাত হয়ে যাবে হলুদে থাকতে পারবি না নাকি।
–কথা তো তেমনই ছিলো কিন্তু ম্যানেজ করে নিয়েছি।আমার কথা বাদ দে তুই কারে খুজতিছিস সেটা বল আগে।
–আ আমি আবার কা কারে খুজবো?
–যারে তুমি খুজতেছো সে।আর তুই তোতলাচ্ছিস কেন?কি ব্যাপার কি লুকানো হচ্ছে বল
–আরে কিছু না।আমি তো জাস্ট…..(সৌভিক থেমে যাই।মুখটা হা হয়ে গেছে তার,চোখের পলকও থেমে গেছে…
–কি রে হা হয়ে গেলি কেন??
–বিউটিফুল…
–কে বিউটিফুল??

আবির গেটের দিকে তাকাই।তাদের হবু ভাবি আসছে আর সাথে দুইটা মেয়ে।হলুদ শাড়ি ফুলের গহনাই নিলুফাকে অনেক সুন্দর লাগছে।কিন্তু পাশের মেয়ে দুটোও অনেক সুন্দর।কিন্তু সৌভিক কাকে বললো আবির সৌভিকের কাছে জানতে কিন্তু তার আগেই সৌভিক ওখান থেকে চলে গেছে কারন সে জানে এখনি আবির তার মাথা খারাপ করে দেবে….

হলুদ শুরু হয় ছেলে মেয়ে দুজনেরই হলুদ লাগানো হচ্ছে।বাড়ির বড়রা আগে হলুদ লাগাই।এবার ছোটদের পালা।নিশান,অনামিকা হলুদ লাগানোর পরে সৌভিক আর নিহীন একসাথে স্টেজে চলে যাই।

–এই আপনি আসলেন কেন?আমি আপু আর ভাইয়াকে হলুদ দিবো এখন..
–ও হ্যালো,,ভুলে যাবেন না এটা আমার ভাইয়ের হলুদ তাই আমি আগে হলুদ লাগাবো।
–না আমি আগে।আমারো বোনের হলুদ।

দুজনের ঝগড়া লেগে যাই।সবাই তো অবাক ওদের ঝগড়া দেখে।কেউ থামাতে পারছে না ওদের।সৌভিক এবার নিহীনের কানের কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে নিহীন আর কথা বলে না।সৌভিক ভাই ভাবিকে হলুদ লাগাই,তারপর নিহীন ও হলুদ লাগাই।

এরপর আত্মীয়স্বজনরা হলুদ লাগানো শুরু করে।নিহীন ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য বের হয় কিন্তু ওয়াশরুম খুজে পাচ্ছে না।হটাত কেউ যেন নিহীনের হাত ধরে টান দেই।নিহীন চিল্লাতে গেলে একটা হাত নিহীনের মুখের ওপর রাখে ব্যক্তিটি।অন্ধকার রুমে কেউ একজন নিহীনের খুব কাছে তার কোমড় জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে আর এক হাত দিয়ে তার মুখ চেপে আছে।তার প্রতিটা নিশ্বাস নিহীনের চোখে মুখে পড়ছে।নিহীনের হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে সাথে ভয়।নিহীন অনেক ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।লোকটি আরো শক্ত করে ধরে।নিহীন হাজার চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না।১০ মিনিট মতো এভাবে চলার পর নিহীন হাল ছেড়ে দেই।আস্তে আস্তে কোমড় থেকে হাত সরে যাই নিহীনের,তার মুখে যেন কিছু একটা লাগালো লোকটি।নিহীন বোকার মতো দাড়িয়ে আছে সে চাইলেই কিন্তু পারে পালাতে তবে সে পালালো না।লোকটি এবার যা করলো তাতে নিহীন কেপে উঠলো।লোকটি নিহীনের কপালে চুমু দিয়েছে।নিহীন তো পুরো শকড।লোকটি চলে যাই।নিহীন বোকার মতো দাড়িয়েই থাকে।বেশখানিক খন পর অনামিকা নিহীনকে খুজতে থাকে।ভাবির গলা শুনে নিহীন বাইরে যাই।

অনামিকা নিহীনকে দেখে জানতে চাই তার মুখে হলুদ কিভাবে লাগল সে তো ভয় পেয়ে যাই।নিহীনের কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া কথাটা মনে পড়ে যাই,সে কেঁপে ওঠে…..

চলবে…
(ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here