তোলপাড় পর্ব ৬

তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৬
_________________
সকালে কোচিং শেষে কলেজের পশ্চিম দিকে থাকা দীঘির ঘাটের বেঞ্চিতে বসে আছে অরূণী। দীঘির স্বচ্ছ,স্থির জলের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ। মাঝে মাঝে দখিনা সমীরণ দীঘির শান্ত জলে মৃদু দোলা দিয়ে যাচ্ছে। ঠাণ্ডা শীতল বাতাসে শরীর শিরশির করে ওঠছে অরূণীর। মাঝে মাঝে জোরে বয়ে যাওয়া পাগলাটে পবনে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
তাইতি আর রাকা ফুসকা নিয়ে এসে ধপ করে বসে অরূণীর পাশে। তাইতি প্রশ্ন করল, “কিরে নীড়া আজ এখনো আসেনি? কোচিং-এ ও আসলো না।”
অরূণী মুখে থাকা ফুসকা’টা গিলে বলল, “দেখ আবার কার সাথে ডেটিং-এ গেছে।”
এর ভিতর রাকা বলে ওঠল, “কিরে অরূণী? রুদ্র ভাইয়ের সাথে তোর প্রেম কতদূর?”
কথাটায় খানিক বিদ্রুপ ছিলো।অরূণীর মেজাজ চট করে খারাপ হয়ে গেল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো একবার রাকার দিকে। অরূণী কিছু বলার আগেই রাকা আবার বলল, “আরে এভাবে তাকাস কেন?মজা করে বলেছি।এখন বল কি খবর?”
অরূণী বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে বলল, “তোর এত জানতে হবে না।”
ফুসকায় প্রচণ্ড ঝাল ছিলো। অরূণীর মুখ জ্বলছে। ঝালে যেন মুখ গরম হয়ে গেছে। তাইতি ঝাল খেতে পছন্দ করে। অরূণীর শ্যাম বর্ণের মুখটা লাল হয়ে ওঠেছে ঝালে।তাইতির দিকে তাকিয়ে বলল, “এত ঝাল! একটু কমিয়ে দিবি দিতে বলবি না?”
অরূণী সিঁড়ি বেয়ে নেমে দীঘির পানি মুখে নিয়ে কুলি করল কয়েকবার। তারপর আবার এসে আগের জায়গায় বসল। দীঘির শান্ত জলে ঢিল ছুঁড়তে ছুঁড়তে হতাশ গলায় বলল, “রুদ্রর সাথে প্রেম হবে না মনে হয়।কেমন যেন রুদ্র। কাঠখোট্টা টাইপ।”
তাইতি রাগ রাগ গলায় বলল, “হবে কিভাবে তোর প্রেম? রুদ্র ভাই সামনে পেলে তোরে কষিয়ে কয়েক’টা চড় দিবে। একবার না হয় আমজাদ স্যারের বাসায় পাঠিয়ে বোকা বানিয়েছিস।স্যরি বলে ঝামেলা মিটিয়ে নিয়ে টাকা দিয়ে দিতি। আজ কেন আবার সেই আমজাদ স্যারের বাসায় গিয়ে টাকা চাইতে বললি?”
– “টাকা দিয়ে স্যরি বললেই তো সব মিটমাট হয়ে যাবে। তারপর আর কথা কিভাবে বলব?এই ঝামেলা’টা তো বাড়াচ্ছি কথা বলার জন্য।”
অরূণী এইটুকু বলে আবার থেমে বলল, “কারো মনে ঢুকতে হলে আগে তাঁর চিন্তা-ভাবনায় ঢুকতে হবে। আজকে আমজাদ স্যারের বাসায় গিয়ে যখন আবার বোকা হয়ে আসবে তখন সারাক্ষণ আমার কথা ভাববে। আমায় খুঁজবে।সে হোক বিরুক্তি কিংবা রাগে।”
রাকা বলল, “এছাড়া আর কোনো উপায় নেই রুদ্র ভাইয়ের মনে কিংবা চিন্তা-ভাবনায় ঢোকার?এসব উল্টাপাল্টা কাজ করে লোক’টা কে বিভ্রান্ত করছিস এভাবে! আমার মনে হয় উনি গম্ভীর টাইপ মানুষ।এসব ঝামেলা তুই শেষ করবি কিভাবে আর প্রেম হবে কিভাবে?”
কিভাবে ঝামেলা মিটমাট করবে এই ভেবে অরূণী যেন একটু চিন্তিত। বলল, “এছাড়া যদি উপায় থাকত তাহলে কি আমি এসব করতাম?আমি উনাকে কেমন যেন অনেক ভালোবাসে ফেলেছি। অযৌক্তিক ভালোবাসা। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে।”
অরূণীর গলায় বিমর্ষতা।তাইতি কিছুক্ষণ পর বলল, “একটা কাজ করতে পারিস।”
অরূণী আগ্রহী চোখে তাকালো তাইতির দিকে। তাইতি বলল, “ স্যরি বলে উনার টাকা ফেরত দিয়ে দে।আর প্রেম ভুতের চিন্তা মাথা থেকে নামিয়ে ফেল। এভাবে প্রেম হবে না। রুদ্র আকন নিরাবেগ মানুষ! ছ্যাকা-ট্যাকা খেয়েছে বোধ হয়।”
তাইতির কথার প্রত্যুত্তরে অরূণী খিটখিটে মেজাজে বলল, “কিভাবে প্রেমটা হওয়াবো সে বুদ্ধি না দিয়ে…।”
শেষের কথা টুকু অস্পষ্ট ভাবে বিড়বিড় করে শেষ করল অরূণী। তাইতি বা রাকা কেউই এই অস্ফুট স্বরের কথা বুঝতে পারলো না। অরূণী খানিক বাদে করুণ স্বরে বলল, “আমি যদি চোখ ধাঁধানো সুন্দরী হতাম তাহলে প্রেম আরো আগেই হয়ে যেত। শ্যামলা বলেই যত সমস্যা।”
এই প্রথম নিজের গায়ের রং নিয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করলো অরূণী।এর আগে কখনো এই নিয়ে অরূণীর কোন আক্ষেপ ছিলো না।তাইতি আর রাকা যেন বিস্মিত হলো খুব। রাকা অদ্ভুত এক ভঙ্গিতে বলল, “ছিঃ অরূণী তুই শ্যাম বর্ণের জন্য আক্ষেপ করছিস! তুই দিন দিন চিপ মেন্টালিটির হয়ে যাচ্ছিস।থার্ড ক্লাস মানুষের মত চিন্তা-ভাবনা।”
অরূণী ঠোঁট উল্টে বললো, “এত জ্ঞান ঢালিস না।” এই বলে বেঞ্চে রাখা কলেজ ব্যাগ’টা কাঁধে নিতে নিতে বলল, “আজ আমি ক্লাস করবো না। বাসায় গেলাম।”
তাইতি মরিয়া হয়ে ওঠে বলল, “কেন ক্লাস করবি না?অরূণী তোর মাথায় দেখছি ভুত চেপেছে।”
অরূণীর সরল স্বীকারোক্তি, “চেপেছে ভুত। গেলাম আমি।”
অরূণীর এমন প্রতিক্রিয়া দেখে ওঁরা আর কথা বলার জোঁ পেলো না। অরূণী কলেজ থেকে সোজা সেই চায়ের দোকানে গেল। এই দোকানির কথা অরূণী ভুলে বসেছে। অথচ রুদ্র এখানে আসলেই নিশ্চিত দোকানি সব বলে দিবে। এতদিনে কি রুদ্র একবারও আসেনি? নাকি দোকানি বলে দিয়েছে? বলে দিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। নিজের এই আত্মভোলা স্বভাবের জন্য নিজের ওপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে অরূণীর। ভয়ে অরূণীর বুক ঢিপঢিপ করছে। সূর্যের কানে এসব কথা একবার গেলে মহাপ্রলয় হয়ে যাবে। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অরূণীর এতদিনে একবারও মাথায় আসেনি। কি অদ্ভুত ব্যাপার! দীঘির ঘাটে বসে নানান চিন্তায় এই বিষয়’টা হঠাৎ মাথায় আসতেই অরূণী কলেজ বাদে চলে এসেছে। দোকানে দোকানি নেই। দোকানের বেঞ্চে বসা খরিদ্দারের কাছ থেকে জানতে পারলো দোকানি কোথায় যেন গেছে। কয়েক মিনিট পরে দোকানির ছেলে আসলো। ছেলের বয়স ১৩-১৪ হবে। দোকানির ছেলের কাছ থেকে জানতে পারলো দোকানির আসতে একটু দেরি হবে। কি আর করার! অরূণী উত্তপ্ত রোদের ভিতর বসে বসে অপেক্ষা করছে। মনে মনে ভাবছে এখন যদি রুদ্র চলে আসে? ভাবতেই অরূণীর ভয় ভয় লাগছে। অরূণী নিরাব্বই ভাগ নিশ্চিত রুদ্র’কে বলে দিয়েছে এসব কথা দোকানি।অরূণীর পরক্ষণে মনে হলো যদি রুদ্রর কাছে বলে দিতো তাহলে রুদ্র কাল ফোনে কিছু বলল না কেন? এসব ভাবনা শেষ হতে না হতেই অরূণী তাকিয়ে দেখে রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে আচমকাই নীরদের আগমন। কয়েক মুহূর্ত পর পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে গেল।বড় বড় কালো মেঘের খণ্ড আকাশে বিচরণ করছে। কয়েকবার মেঘে ডাক দিতেই বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়তে লাগলো। মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির আঁচে খানিক ভিজে যেতে লাগলো অরূণী। এর ভিতর দেখলো দোকানি ছাতা মাথায় দিয়ে দ্রুত দোকানের দিকে এগিয়ে আসছে। অরূণীর অপেক্ষার অবসান হলো। দোকানি ছাতা বন্ধ করে দোকানের বেঞ্চে রেখে সবার আগে অরূণীর দিকে তাকালো। এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে হন্তদন্ত হয়ে ফেরা মানুষ’কে সাথে সাথে কিছু জিজ্ঞেস করা সমীচীন নয়। অরূণী কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ভাই, রুদ্র আকন কে কি আপনি বলে দিয়েছেন আমি তাঁর খোঁজ করেছি কিংবা আমার ঠিকানা?”
দোকানি গায়ের গামছা দিয়ে মাথার পানি মুছতে মুছতে বলল, “না, না আপা। রুদ্র তো আর আহেই নাই।”
অরূণী পুলকিত হলো।সত্যিকারের একটা ভাবনা ঘুচলো যেন। মন জুড়ে প্রশান্তি অনুভূত হলো। কয়েক মুহূর্ত পর দোকানি কে সতর্ক করে বলল, “ভুলেও এসব বিষয়ে কিছু বলবেন না।”
দোকানি মাথা ঝাঁকিয়ে অরূণীর কথায় সম্মতি দেয়। অরূণী সূর্যের বোন এ কথা জানার পর থেকে দোকানি সব সময় আন্তরিক আচরণ করে।ভিতরে ভিতরে হয়ত বড্ড বিরক্ত হয়।হোক বিরক্ত! অরূণীর কিছু এসে যায় না।অরূণী আবার বলল, “শুনুন এসব কথা সূর্য দাদা’কে ভুলেও বলবেন না। ভুলক্রমে যদি বলেও ফেলেন তাহলে কিন্তু আমি ইনিয়ে-বানিয়ে আপনার নামে মিথ্যে বিচার দিবো। তারপর আপনার দোকান উড়ে যাবে।”
– “না,না আপা এগুলো আমি সূর্যের কাছে কইতে যামু ক্যা?”
অরূণী বৃষ্টি শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে। দোকানে বসে খরিদ্দার’রা সিগারেট টানছে। সিগারেটের গন্ধে অরূণীর দম বন্ধ লাগছে। খরিদ্দারের ভিতর কেউ কেউ অরূণীর দিকে সরু চোখে তাকায়। এভাবে একটা যুবতী মেয়ে সংকোচহীন ভাবে এত গুলো পুরুষের মাঝে বসে আছে ব্যাপার’টা চোখে বিদ্ধ হওয়ার মত কিংবা দৃষ্টিকটু। দোকানি সবাই’কে ইশারায় সাবধান করে বলল, “সূর্যের বোন।”
কয়েক মিনিট পর বৃষ্টি কমে আসতেই অরূণী বের হয়ে গেল দোকান থেকে। বৃষ্টি হলে অরূণীর মেজাজ বিগড়ে যায়। চারপাশের এমন স্যাঁতসেঁতে অবস্থা অরূণীর বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে।
__________________________
বিকালে টিউশনি শেষে রুদ্র সেই চায়ের দোকানে যায়। অনেক দিন পর রুদ্র’কে দেখে দোকানি একটু অবাক হলো। অরূণীর ব্যাপার’টা বলার জন্য দোকানির মনের ভিতর হাঁসফাঁস অবস্থা হচ্ছে। কিন্তু সূর্যের কথা মনে পড়তেই অরূণীর বিষয়’টা বলার আগ্রহ হ্রাস পেয়ে গেল।চায়ের দোকানে কিছুক্ষণ বসে থেকে রুদ্র আমজাদ হোসেনের বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিলো। রুদ্রের বাইকের সামনের দিক’টা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ভেঙে গেছে কিছু’টা, তাই বাসায় রেখে এসেছে। ট্যাক্সি কিংবা রিকশায় যাতায়াত বিরক্ত লাগে রুদ্রর। অরূণীর প্রতি রাগে রুদ্রর মেজাজ সপ্তমে। জীবনে বেঁচে থাকতে আর কাউকে টাকা ধার না দেওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছে রুদ্র। আমজাদ হোসেনের বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই রুদ্র ঝটপট নেমে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো। চোখে-মুখে ঘোর বিরুপতা। দরজার সামনে গিয়ে দেখে দরজায় বড়সড় একটা তালা ঝুলানো। রুদ্রের মাথায় রাগে যেন রক্ত উঠে গেল। তীব্র ক্রোধে চোয়াল শক্ত করে চোখ বন্ধ করে রাখলো কয়েক সেকেন্ড। ইচ্ছে করছে দরজায় কয়েক’টা কষিয়ে লাথি দিতে।প্রচণ্ড রাগে রুদ্রের কান লাল হয়ে গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে যেন। আমজাদ হোসেনের পাশের রুমের বারান্দা থেকে এক ভদ্রমহিলা শুকানো কাপড় রুমে নিচ্ছে। রুদ্র ইতস্তত বোধ করে ডাকলো অজ্ঞাত সেই মহিলাকে। ভদ্রমহিলা মিষ্টি হেসে বলল, “কিছু বলছো?”
গলার স্বরটা নরম। কথায় সমাদরপূর্ণ ভাব আছে। রুদ্র সহজ ভাবে কথা বলার ভরসা পেলো। জিজ্ঞেস করল, “এই বাসায় সাথিরা থাকে? ওঁরা কোথায় গেছে বলতে পারবেন?”
ভদ্র মহিলার মুখের অভিব্যক্তি যেন মুহূর্তেই বদলে গেলো। অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রের দিকে। যেন খারাপ কিছু জিজ্ঞেস করেছে রুদ্র। ভদ্র মহিলাকে নিরুত্তর দেখে রুদ্র আবার বলল, “আমার খুব জরুরি প্রয়োজন উনাদের।”
ভদ্রমহিলা ঝাঁঝালো গলায় বলল, “কলেজে পড়ো তুমি না? আজকালকার ছেলেপেলে এত বেয়াদব! স্যারদের মান-সম্মান দেয়না। পরিবার থেকে ভদ্রতা শিখো নি?”
রুদ্র নির্বুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল।ভাষা শূন্য সে দৃষ্টি। পরিবার তুলে কথা এই প্রশ্নের বিপরীতে! রুদ্রের চেহেরায় তীব্র ক্ষোভ। রাগ সংযত করলো। মহিলাদের সাথে ঝামেলা না করাই শ্রেয়। যথাসম্ভব বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করল, “আপনি আমায় এসব কথা কেন বলছেন?এই বাসার ভদ্রলোকের বোন সাথি আমার থেকে টাকা ধার এনেছে।আমি টাকা নিতে এসেছি। আর আমায় দেখে মনে হয় আমি কলেজে পড়ি?”
ভদ্রমহিলা দ্বিগুণ রাগ নিয়ে বলল, “চড় মেরে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব পোলাপান।কোনো আদব আচরণ শিখে নি।একজন শিক্ষকের সাথে মজা নেয়, তাও তাঁর বাসায় এসে।”
কথা গুলো রুদ্রর মাথায় উপর দিয়ে গেল।কিছুই বুঝতে পারলো না। রুদ্রের মনে খানিক সন্দেহ হলো,কোথায়ও ভুল হচ্ছে ওঁর। কিছুই বুঝতে পারছে না। সন্দিহান হয়ে বলল, “আচ্ছা এই বাসায় কারা ভাড়া থাকে? আমি বলতে চাচ্ছি সাথিরা থাকে তো?”
ভদ্র মহিলার রাগ যেন ক্রমশ বাড়ছে। বারান্দা থেকে গলা উঁচিয়ে ডাক দিলো, “এই আরাফের আব্বু এদিকে আসো তো।”
এইটুকু বলে বিড়বিড় করে বলল, “একজন শিক্ষক’কে তার বাসায় এসে, কলেজে কিংবা রাস্তায় বসে উত্যক্ত করা! এই প্রজন্ম’টা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষকের ভয়ে কেঁপেছি। আর এঁরা?”
ভদ্র মহিলার কথা শেষ না হতেই রুম থেকে এক লোক বেরিয়ে আসলো। হাতে উপন্যাসের বই। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, “কি হয়েছে কি?এভাবে গলা ফাটিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেন?তোমার জন্য..।”
কথা শেষ করার আগেই লোক’টার চোখ যায় রুদ্রের দিকে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কে তুমি?”
রুদ্র এতক্ষণের ঘটনার কিছুই বুঝলো না। এমন আচরণের কারণ কি হতে পারে? ভদ্র লোকের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাই একটা কথা বলি ঠাণ্ডা মাথায় আগে শোনেন। মহিলা মানুষের মত সব’টা না শুনে,কথা না বুঝে চেঁচাবেন না।”
রুদ্রের কথাটা ভদ্র মহিলার গায়ে লাগলো যেন।তিনি কিছু বলতে গেলে ভদ্রলোক তাঁকে থামিয়ে দিয়ে রুদ্রের উদ্দেশ্য বলল, “কি কথা?বলো।”
রুদ্র চরম বিরক্তি ভরা গলায় বলল, “আমি রুদ্র আকন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ি। এক মেয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আমার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছে। এই বাসার ঠিকানা দিলো মেয়েটা। নাম বলল সাথি। বিভিন্ন ঝামেলায় ওই মেয়ের ফোন বন্ধ। আমি এর আগে একদিন টাকা নিয়ে এসে সাথির কথা জিজ্ঞেস করায় এক লোক আমায় তাড়া করেছে। আজ এসে আপনার ওয়াইফের কাছে সাথির কথা জিজ্ঞেস করতেই আমায় যা তা বলবো।”
রুদ্রের কথা শুনে ভদ্র লোকের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। হাসি থামতে বেশ কিছুক্ষণ লাগলো। রুদ্র নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল। অহেতুক হাসি’কে রুদ্রের শরীর রাগে চড়চড় করছে। হাসির রেশ এখনো ভদ্র লোকের গলায় বিদ্যমান। বলল, “হায় ইয়াং ম্যান! যদি এমন’টা হয়ে থাকে তাহলে তোমায় বোকা বানানো হয়েছে।”
রুদ্র তীব্র বিস্মিত আর আগ্রহী গলায় বলল, “মানে?”
– “মানে হলো এই বাসায় আমজাদ হোসেন ভাড়া থাকে। কলেজ শিক্ষক। উনার প্রাক্তনের নাম সাথি। উনায় সবাই সাথির নাম বলে বিরক্ত করে। উনি ভয়ংকর ভাবে রেগে যায় এতে। রেস্টুরেন্টের মেয়ে তোমায় বোকা বানিয়েছে।”
কথা শেষে লোক’টা আবার হাসলো। উচ্চস্বরের হাসিতে লোকটার শরীর ঈষৎ কাঁপছে। রুদ্র আর কিছু বললো না। সবটা শুনে হতচেতন হয়ে রইল।রেস্টুরেন্টের সেই মেয়ের মুখটা পর্দার মত ভাসছে রুদ্রের চোখে। রাগের ফুলকি ছড়াচ্ছে চেহেরায়। নিজেকে এই প্রথম এত বোকা মনে হচ্ছে! এমন বোকা হওয়ার লজ্জায় রুদ্রের মাথা কাটা যাচ্ছে। রেস্টুরেন্টের সেই মেয়ের নাম সাথি কিংবা চারু কোন’টাই নয়। রেস্টুরেন্টের সেই মেয়েকে রুদ্রের সাধারণ কোনো মেয়ে মনে হচ্ছে না এখন, অসাধারণ কু-বুদ্ধি সম্পন্ন মেয়ে। যার আগাগোড়া কু-বুদ্ধিতে বেষ্টিত। নিদারূণ এক তীব্র রাগে রুদ্রের শরীর মন ঝাঝড়া হয়ে যাচ্ছে। শুধু মনে হচ্ছে রেস্টুরেন্টের সেই মেয়ে ভয়ংকর,অতি মাত্রায় ভয়ংকর। দুই দিনের ভিতর ওই মেয়েকে খুঁজে বের করাই এখন রুদ্রের ধ্যান জ্ঞান। সামনে পেলে অসংখ্য থাপ্পড়ে হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ কিংবা কাল শিরা গালে বসিয়ে দিবে। কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবে।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here