#অবুঝ বেলার তুমি
নিলান্তিকা ইসলাম
পর্ব ৪
ঘরে ঢুকেই রুমে এসে দরজা আটকে দিলো গুঞ্জন।কিচেন থেকে সব খেয়াল করছেন গুঞ্জনের মা চারুলতা।বেশ কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করছেন অল্পতেই রেগে যায় গুঞ্জন।অন্যমনস্ক হয়ে থাকে।কিন্তু আন্দাজ করে উঠতে পারছেন না।এখন আবার এভাবে তাড়াহুড়ো করে কলেজ থেকে ফিরে দরজা আটকে দিলো।কোন ও বিপদে পড়ে নি তো মেয়েটা।কিংবা কোন ছেলে পুলের চক্করে।বেশ ভাবাচ্ছে ওনাকে ব্যাপারটা।এখনকার ছেলে মেয়েরাই এমন কখন কি হয় বুঝাই যায় না।আবেগ বেশি বিবেক কম।
গুঞ্জন ওয়াশ রুমে ডুকে চোখে মুখে পানির ঝাপট দেয়।পুরো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। সে এখনো ভেবে উঠতে পারছে না,কি করে সে এতো বড় ভুল টা করলো তার সেই ছোট্র বিহান কেই চিনতে পারলো না!
ওদিকে গুঞ্জনের মা চারুলতা এসে কখন থেকেই দরজায় কড়া নেড়ে যাচ্ছে।গুঞ্জন মহা বিরক্তিতে ভুগছে।তার মা টা ও না।ডাকতে থাকলে যতক্ষন অবদি না খুলছে ডাকতেই থাকে।ভালো আর খারাপ সময় বুঝে না।যেনো গলায় কেউ গুঞ্জন নাম সেট করে নন স্টপ টেপ রেকর্ডার লাগিয়ে দিয়েছে আর অনবরত বেজেই যাচ্ছে।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে দরজা টা খুলে দিলো গুঞ্জন।তারপর বললো,
____হ্যা গো মা! তুমি আমার কোন জন্মের শত্রু বলতো, একটু শান্তিতে ও থাকতে দিবেনা।একবার দুবার ডাকার পর যখন বুঝবে কেউ দরজা খুলছে না তখন ভেবে নিতে হয়।সে কোন ও সমস্যায় আছে।কিন্তু না! তুমি কি করো।ডেকেই চলো ডেকেই চলো।
____চারুলতা বললেন,তুই কি আমার মেয়ে নাকি আমি তোর মেয়ে?আমার টেনশন হতে পারে না নাকি!বেশ কদিন ধরে খেয়াল করছি কেমন অন্যমনস্ক হয়ে আছিস।তোদের আজ কাল কার জেনারেশন দের বোঝা বড্ড দায়।
আগে আমার কথার উত্তর দে তো গুঞ্জন!সমস্যা টা কি কোন ও ছেলেকে নিয়ে?কোন ও ছেলে পুলের পাল্লায় পড়িস নি তো আবার!দেখ আমি কিন্তু আগে থেকেই বলে দিচ্ছি তোর বাবা তোর বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।তাই অন্য কোন ও ছেলের দিকে একদম পা বাড়াবি না জানিস ই তো তোর বাবার সম্পর্কে।
গুঞ্জনের এসব বকবক শুনতে একদমই ইচ্ছে করছে না।সেই ছোটাবেলা থেকেই শুনে আসছে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে কোন ও ছেলের দিকে পা বাড়ানো নিষেধ।কিন্তু এখনো অবদি এটাই জানতে পারে নি সে ছেলে টা আসলে কে?
সে যে বাবুন দার অপেক্ষায় বসে আছে।সে ই ছোট বেলা থেকে তাহলে কি করে মেনে নেবে সে অন্য কাউকে।পারবে না সে পারবে না।বাবুন দার সাথে তার মিল অসম্ভব জেনে ও এই দুটো চোখ বারবার বাবুন দাকেই খুজে যাচ্ছে।তবে কি বাবুন দা শুধুই তার অবুঝবেলার দেখা স্বপ্ন হয়েই রয়ে যাবে।কখনোই কি বাস্তবে রুপ নেবে না তার দেখা অবুঝ স্বপ্ন টা!
খাওয়ার জন্য অনেকক্ষন ধরে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু আওয়াজ এসে গুঞ্জনের কানেই পৌচাচ্ছে না।কি করে পৌছাবে! কানে যে এখন অন্য কারো নামের শঙ্ক্ষ বাজছে।
হুট করেই গুঞ্জনের ভাই গৌতম এসে চুল ধরে একটান মারলো।কোমর অবদি চুল গুঞ্জনের ছোটবেলা থেকেই তার চুলগুলো বেশ বড়ছিলো।বিহান ও ঝগড়া লেগে ঠিক এইভাবেই তার চুলগুলো টেনে দিতো।
ভাবতেই গৌতম কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে গুঞ্জন।গৌতম ভেবে পায় না মাঝে মধ্যেই তার গুঞ্জন দি তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে ।তার কারণ টা এখনো গৌতমের অজানা। কিন্তু এখন কার ছেলে তো একটু তাড়াতাড়িই পেকে যায়।কোমরে দুহাত দিয়ে দাড়িয়ে বলতে লাগলো,
____দিস ইজ লাভ কেইস তাই না?
_____ গৌতমের মুখে এমন কথা শুনে চোখ উল্টে তাকায় গুঞ্জন।
গাল টিপে দিয়ে বলে তবেরে! তুই লাভ কেইসের কি বুঝিস রে?
____আরে বুঝি বুঝি।আমাদের চোখের সামনেই তো ঘটছে সব আর বুঝবো না।তোমার এই ন্যাকা ন্যাকা কান্না দেখলেই আমি বুঝে যাই।আরে স্কুল যাওয়ার সময় দেখিতো আমাদের ক্লাসের সেজুতি রোজ একটা একটা করে চিঠি নিয়ে আসে আমাদের বিমল স্যারের জন্য।
আর বিমল স্যার কে তো কত্ত দেখেছি চিঠি পরে কোন ও দিন হাসে আর কোন ও দিন কাঁদে।আমি প্রথম প্রথম গুলিয়ে যেতাম পরে সেজুতি ই তো বললো দিস ইজ লাভ কেইস।তার দির সাথে বিমল স্যারের রিলেশন চলছে।কিন্তু পরিবার থেকে জানাজানি হওয়ায় তারা ব্যাপার টা মেনে নিচ্ছে না।তাই লুকিয়ে লুকিয়ে পত্র আদান প্রদান হয়।আর গিফট হিসেবে রোজ বিমল স্যারের পক্ষ থেকে ডেইরী মিল্ক, মিল্ক ক্যান্ডি, চিপ্স বিভিন্ন খেলনা গিফট পায় সেজুতি
গৌতমের সব কথা গুঞ্জনের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।ও এই বয়সে এতো টা পেকে গেছে বাকি বয়স তো পড়েই রইলো।
গুঞ্জন চোখ রাঙিয়ে গৌতমের কান ধরে শাষালো ____তবে রে,বাবাইকে বলে তোকে যদি মার না খাওয়াচ্ছি তো দেখিস।
গৌতম মুখ ফুলিয়ে বলে
___যাক বাবা সেজুতির দির লাভ কেইসে সে এতো এতো গিফট পায় আর আমার দির লাভ কেইসে আমাকে কিনা খেতে হচ্ছে কান মলা!
গুঞ্জন আবার চোখ রাঙাতেই গৌতম দৌড়ে গিয়ে পালালো।
গুঞ্জন এখনো অবাক হচ্ছে।সত্যি মা ঠিকই বলে আজকাল কার জেনারেশন দের বোঝা দায়।এ ছেলে নিশ্চিত মেয়ে পটানোতে ওস্তাদ হবে।
বিকেলে মন খারাপি টা ভালো করতে ছাদে গিয়ে গাছ গুলো দেখতে লাগলো গুঞ্জন।পরগাছা জন্মেছিলো সেগুলো ও ছাটাই করে দিলো।কামিনী গাছ টার দিকে নজর গেলো গুঞ্জনের।
খুব সুন্দর করে বাবুন দা এক একটা ফুল আর ফুল গাছের বর্ণনা বুঝিয়ে দিতো গুঞ্জন কে।নইলে গুঞ্জন কখনো এতো এতো ফুল গাছ আর নাম চিনতোই না।
বর্ষার সুভাসিত ফুলের মধ্যে অন্যতম কামিনী ফুল।কামিনী ফুলের একটা অলৌকিক দিক আছে, ফুল যখন ফোটে তখন সারাদেশের সব গাছে একই দিনে ফোটে।অনেকটা লেবু ফুলের মতো দেখতে।
“সত্যিই কামিনী কোমল কুসুম অতি,শিশিরের ভরটুকু ও যেনো সইতে পারে না।একটু ছুয়ে দেখার ইচ্ছেয় হাত বাড়ালেই নিমিষেই ঝরে যাবে সব পাপড়ী আর শুধুই আঙুলে লেগে থাকবে মিষ্টি মধুর গন্ধ”
বাবুন দা অনেক সময়ই বলতো,
____তুই কামিনী ফুলের মতো হতে যাস না যেনো!অল্পতেই ঝরে পড়া চলবে না।মেয়েদের অনেক সাহসী হতে হয় গুঞ্জন।তাদের জীবনে চলতে গেলে অনেক কঠোর কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।সেই পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে অনেকেই কামিনীর মতো অল্প আঘাতেই ঝরে পড়ে।তোকে কিন্তু একদম ওদের মতো হওয়া চলবে না।
বাবুন দা আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিলো বলেই তো গুঞ্জন এখনো ঝরে না গিয়ে টিকে আছে।তাইতো প্রতিনিয়ত ব্যাগে সতর্কতা মূলক সব কিছু নিয়ে ঘুরে যেনো হঠাৎ কোন ও পরিস্থিতি পড়ে তাকে ঝরে পড়তে না হয়।
আর এই হাসনাহেনা ফুলের দিকে তাকাতেই গুঞ্জনের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।এই ফুলের মন কাড়া গন্ধ।এতোই মাতাল করার মতো ঘ্রান যে বিষাক্ত সাপেরা অবদি চলে আসে এ ফুলের গন্ধে মোহিত হয়ে।বাবুন দা যখন গুঞ্জন কে বলছিল,এ ফুলের গন্ধে সাপেরা আসে।গুঞ্জন তখন ভয় পেয়ে বলেছিলো,
____বাবুন দা সাপ এসে যদি কখনো আমায় কেটে দেয় তখন কি হবে।
____পরদিনই যখন গুঞ্জন ঘুম থেকে উঠে ফুল তুলতে গেলো হাসনা হেনা গাছটিকে আর দেখতে পায় নি।
পরে বাবুন দা ই বলে ছিলো,তোর জন্য বিপদের কারণ হবে এমন সব জিনিস আমি উপড়ে ফেলে দেবো গুঞ্জন!
যেখানে হাসনাহেনা ফুল ছিলো বাবুন দার সবচাইতে প্রিয় ফুল।
গুঞ্জনের অবুঝ মন না বুঝে ও সেদিন খিলখিলিয়ে হেসে ছিলো।অথচ আজ যখন সঠিক কারণ টা জানতে পারলো তখন তাকে কাঁদতে হচ্ছে।
কোথায় তুমি বাবুন দা! একবার এসে ও দুহাতে আলতো করে একবার ছুয়ে দাও প্লিজ।আমি যে এখন বুঝতে শিখেছি তোমাকে জানতে শিখেছি।অথচ আজ তুমি ই নেই!
চলবে