মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-২৩
পড়ন্ত অপরাহ্নে গোধূলি লগ্নে রক্তিম প্রভাকর ক্রমশ হেলে পড়েছে। অস্তমান বিভাবসুর লালচে আভা মহী তে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। দখিনা পবন জানালার ঈষৎ ফাঁক দিয়ে রুমে ঢুকে পড়ছে। একটু আগেই প্রচণ্ড বৃষ্টি ধারা ধরত্রীর বুকে স্নিগ্ধ, ঠাণ্ডা ভাব দিয়ে গেছে। মোনার শীত লাগছে, ঈষৎ ফাঁক হয়ে থাকা জানালা’টাও বন্ধ করে দেয়, রুমে বাতাস আসার সব পথ রুদ্ধ করে দেয়।
মোনা নিশানের অগোছালো করে রাখা সব কাপড় গুছিয়ে ওয়াড্রবে রাখল। যেগুলো ময়লা জমেছে সেগুলো ওয়াশিং মেশিনে কাচলো। ছেলেদের এই বাজে স্বভাব’টা বোধ হয় জন্মসূত্রে লাভ করা। এলোমেলো করে কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা!ছোট বেলা থেকে মা বা বোন কেউ একজন অগোছালো জামা-কাপড় গুছিয়ে রাখবে, ধুয়ে দিবে ।আর বিয়ের পর বউ। এটা’ই তাঁদের জীবনচক্র।
আজ রুম ,কিচেন পরিষ্কার, জামা কাপড় ধোয়া,এসব করতে করতে মোনার প্রাণ ওষ্ঠাগত। এগুলো সব লিলি বেগমই করে দিতো। কয়েকদিন যাবৎ আসছে না লিলি বেগম। মোনা প্রায়ই ফোন দেয়। বার বার একই কথা বলে,’ প্রিয়ম হাঁটতে পারে না,ওর দেখাশোনা করা লাগে।’ এই টুকু বলে অনুনয় বিনয় করে বলে,’ মোনা তুই আয় না একবার।’ মোনা দ্রুত চতুরতার সহিত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলবে।
আরো কয়েকদিন কেটে গেলো। মোনার পরীক্ষার ফলাফল বের হলো। এক কথায় খারাপ হয়েছে রেজাল্ট। মোনা মন খারাপ করছে না, মোনা ভেবেছে এর থেকেও খারাপ হবে। নতুন জায়গা,নতুন পরিবেশ, নতুন ধাঁচে লেখাপড়া সব কিছুর সাথে নিজেকে মানাতে একটু সময় লাগা স্বাভাবিক। নিশান কে সামলানো, রান্না-বান্না, জব এসবের পরে লেখাপড়া।
মোনা অবচেতন মনে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ল। প্রিয়মের পা এখনো ভালো হয়নি? মোনা প্রিয়মের সাথে প্রেম করুক আর না করুক! প্রিয়ম নিয়ম করে মোনার ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকুক, রাত-বিরাতে নিঃশব্দে এসে বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে থাকুক। এগুলো যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিক নিয়মের বিঘ্ন সৃষ্টি হলে মানুষ যেমন শুন্যতা অনুভব করে, মোনাও হয়ত শূন্যতা অনুভব করছে। এটা’কে ভালোবাসা বলে ভুল করা যাবে না।
আমাদের নিত্যঘটিত স্বাভাবিক নিয়ম গুলো হোক সেটা ভালো কিংবা খারাপ, পছন্দের কিংবা অপছন্দের। কোন কারণে তার থেকে ব্যতিক্রম কিছু ঘটলে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক।
মোনা লিলি বেগমের কাছে ফোন দেয়, উদ্দেশ্য প্রিয়মের খোঁজ নেওয়া। মোনা অনেকক্ষণ কথা বলল কিছু দ্বিধাদ্বন্দব, সংকোচ আর ইতস্তত বোধের কারণে জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠল না। মোনা ফোন রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিলো। ওপাশ থেকে বলল,
-“আবার ফোন দিয়েছিস কেন?কিছু বলবি?”
মোনার গলায় আড়ষ্টতা স্পষ্ট ফুটে উঠে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেন মোনার গলায় আস্ত হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে তাই কথা বের হচ্ছে না। মোনা একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলল,
-“আচ্ছা প্রিয়ম ভাই সুস্থ হবে কবে? আর তুমি আমাদের বাসায় আসবে কবে?”
লিলি বেগম নিঃশব্দে হাসলো।বলল,
-“প্রিয়ম এখন সুস্থ, বেশি হাঁটলে প্রবলেম হবে তাই যায়না কোথায়ও। আচ্ছা আমি কালই আসবো যা।”
-“এসো কিন্তু।”
মোনা ফোন রাখে। ফোন রাখার সাথে সাথেই শ্রুতির ফোন। মোনা নিশানের মুখে নাস্তা তুলে দিচ্ছে। নিশান’কে খাওয়ানো শেষে, স্কুলের জন্য রেডি করিয়ে দেয়। এর ভিতর শ্রুতি ফোন দিয়েছে অনেকবার। মোন কল ব্যাক করে। ওপাশ থেকে উথালপাতাল হয়ে বলে লম্বা সুরে বলে,
-“আজ খুব একটা খুশির খবর আছে মোনা। তুমি তাড়াতাড়ি এসো।”
মোনা তেমন গ্রাহ্য করে না। শ্রুতির খুশি তো সব কিছুতেই। শ্রুতির খুশি নিয়ে গুরুত্বর ভাবনা চিন্তার কিছু নেয়। মোনা ভার্সিটিতে গিয়ে দেখা শ্রুতি শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে কারো জন্য অধীর আগ্রহে ব্যাকুল হয়ে আছে। শ্রুতির পাশে বসা ওয়াটস। মোনা কে দেখেই নিদারুণ হৃষ্টতার গলায় বলে,
-“আমার আর সমীরের বিয়ে’টা বোধ হয় এবার হয়ে যাবে। সমীর রাতের বেলায় নাকি আমায় ভীষণ মিস করে।”
মোনার মুখের হাস্যউজ্জ্বল ভাব অপ্রস্তুত ভাবে বিলীন হয়ে যায়। সমীর আর ওঁর ঘনিষ্ঠ কথা নির্লজ্জের মত ওয়াটসের সামনে মোনার কাছে বলছে। মোনা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়ে। শ্রুতি আবার বলা শুরু করল,
-“আর কি বলেছে জানো—”
মোনা তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,
-“এই শ্রুতি থামো, থামো। তোমাদের ব্যক্তিগত কথা এভাবে কেন প্রকাশ করছ? তোমাদের বিয়ে হবে এটা খুশির খবর। কিন্তু তুমি এখন থামো প্লীজ।”
কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করতে না পারায় শ্রুতি হতাশ হয়ে যায় যেন, ব্যর্থ চোখে তাকালো মোনার দিকে।এই আলোচনা থেকে সম্পূর্ণ বের হতে মোনা বলল,
-“তোমাদের পরিচয়,প্রেম, আশির্বাদ কিভাবে হয়েছে?”
শ্রুতি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। সব কিছু গুছিয়ে তুলছে বলার জন্য। কিছুটা উদাস ভাব শ্রুতির মুখে দেখা যাচ্ছে। পুরানো কথা, পুরানো স্মৃতি মানুষ’কে যেন কারণে অকারণে উদাস বানিয়ে দেয়।
-“আমার আর সমীরের বাসা পাশাপাশি। সমীর বনেদি পরিবারের ছেলে। আর আমাদের পরিবারের অবস্থা ছিলো মোটামুটি। সমীর আমার প্রায় দশ বছরের বড় হবে। সমীর যখন তাগড়া যুবক আমি তো তখন ছোট। প্রেম, ভালোবাসা ওসব কিছুই বুঝিনা তখন। আমার পরিবারের সবাই কুৎসিত, গায়ের রং কুচকুচে কালো। এর জন্য যে মানুষ আমাদের হেয় চোখে দেখত তাও বুঝতাম। আমি স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই সমীরের সাথে দেখা হত,আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণ আমি খুঁজে পেতাম না,আমায় দেখার কি আছে? আমি তো কালো। আমিও আড়চোখে তাকাতাম,প্রেম- ভালোবাসা এসব থেকে তাকাতাম না। সুন্দর তাই তাকাতাম। আমি তো ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারিনি ওই ছেলে আমায় পছন্দ করবে। আমায় প্রেমের প্রস্তাব দিলো,আমি কিছু না বুঝেই রাজি হয়ে গেলাম। অত কিছু ভাবার বয়স তখনো হয়নি। আমি তো প্রেমে রাজি হয়েছি সুন্দর বলে। সে বয়সে শুধু সৌন্দর্য অনুমান করার ক্ষমতা ছিলো, অন্য কোন আবেগ অনুভূতি ছিলো না। আস্তে আস্তে বুঝতে পারি আসলে সমীরের বাহ্যিক সৌন্দর্যের থেকে ভিতরের সৌন্দর্য আরো বেশি উৎকট। তখন আমার মনে হতো সমীর যদি সুন্দর না হয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত মানুষ হতো তাহলেও আমি ও’কে ছেড়ে যেতে পারতাম না। এর মাঝে শুরু হয় ট্রাজেডি। বাপ আমার বিয়ে ঠিক করে বুড়ো এক টাকাওয়ালা লোকের সাথে। কালো মেয়ে বিয়ে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। সমীর দাঁড়ায় বাঁধা হয়ে। তখন সবাই জেনে যায় আমাদের প্রেমের কথা। সবার মুখে একই কথা,’কি দেখে প্রেম করেছিস ওই মেয়ের সাথে? চেহেরার কি শ্রী!’
সমীরের পরিবারে যেন দাবানলের সৃষ্টি হয়। সমীর নিজের জায়গায় অনড়, সে আমায় বিয়ে করবেই। সমীর সবার বিরুদ্ধে যায়। শেষে আরেক ঝামেলা । আমাদের বংশে বংশে মিলছে না। সমীর’রা মজুমদার, আর আমরা দাস। কি যে ঝামেলা! সব ঝামেলা ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চায়। সমীরের পরিবার আমাদের সমাজচ্যুত করার ভয় দেখায়, সে এক লম্বা কাহিনী। বিয়ে হলো না, শেষ পর্যন্ত আশির্বাদ হলো। সমীর বলে আমার লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর বিয়ে। সমীরের আমেরিকায় জব হয়, আমায় নিয়ে আমেরিকা চলে আসে।”
শ্রুতি এক নাগাড়ে অনার্গল ভাবে বলল কথা গুলো। মাঝে মাঝে শ্রুতির গলা ধরা আসছিল যেন। কান্নায় ধরে আসা গলায় কাঁপা কাঁপা ভাবে বলেছিল শ্রুতি। শ্রুতির চোখ ছলছল করছে। দুই ফোঁটা পানি জমেছে সেখানে। হয়ত সমীর’কে সব বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে পেয়েছিল সেই সুখে নয়ত পুরনো ম্লান স্মৃতির বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু করেছিল সেজন্য। পুরানো স্মৃতি বন্দনায় শ্রুতির মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেলো যেন। চোখে মুখে লেগে থাকা চঞ্চলতা কিছু সময়ের জন্য বিলীন হয়ে গেছে। মুখ’টা বিবর্ণ, বিধ্বস্ত রূপ ধারণ করেছে। পরিবারের কথা মনে পড়েছে হয়ত।
এই গাঢ় নিস্তব্ধতা রেশ কাটিয়ে পরিবেশ’টা কে স্বাভাবিক করতে মোনা বলল,
-“সমীরের পরিবারের লোকের সাথে তোমার কথা হয়?”
শ্রুতি স্মৃতির জানালা’টা বন্ধ করে তাকালো মোনার দিকে। চোখ মুখ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল।
-“না, আমার সাথে কথা হয়না। সমীরের সাথে হয়। তাও মাঝে মাঝে। তাঁরা সমীরের উপর রাগ।”
ওয়াটস মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিস্মিত গলায় বলল,
-“কি সুন্দর প্রেম কাহিনী তোমার! পাক্কা প্রেমিক-প্রেমিকা তোমরা।”
উত্তরে শ্রুতি গর্বের দীপ্তি নিয়ে হাসলো। মোনা বলল,
-“তো হঠাৎ এখন বিয়ে করতে চাচ্ছো?তোমার তো লেখাপড়া শেষ হয়নি।”
-“সমীর তো ফাইনাল বলে নি। সমীর শুধু বলে বিয়ের পর মেয়ে’দের মাথায় কুবুদ্ধি চাপে। হাজবেন্ডের ঘাড়ে চেপে থাকতে চায়। লেখাপড়ায় মন বসাতে পারেনা। সমীর খুব মেধাবী ছিলো, তাঁর কাছে লেখাপড়ার গুরুত্ব সর্বপ্রথম।”
ওয়াটস কি যেন ভেবে বলল,
-“আচ্ছা সমীর যদি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে?”
শ্রুতি ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওয়াটস এর দিকে। কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর উত্তর দিলো।
-“সিদ্ধান্ত বদলে ফেলার ভয়ে বিয়ে করব? যদি সিদ্ধান্ত বদলানোর হয় সেটা তো বিয়ের পরও বদলাতে পারে। ছেড়ে চলে না যাওয়া যদি বিয়ের মাধ্যমেই নিশ্চিত হত তাহলে তো ডিভোর্স শব্দ’টা থাকত না।”
মোনা শ্রুতির কথায় বিমুগ্ধ হলো। পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কত সুস্থ চিন্তা ভাবনার মানুষ সমীর। আচ্ছা সমীরের যদি এই ভালোবাসা বদলে যায়? হয়ত বদলাবে না.. তবুও যদি বদলে যায় তাহলে শ্রুতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাবে। কত ভালোবাসার মানুষ বিয়ের আগে কিংবা বিয়ের পরও বদলে গেছে। প্রেম, ভালোবাসায় ছেড়ে যাওয়া কিংবা বদলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে না?তাহলে তো কোন সন্দেহ, অবিশ্বাস কিছুই থাকবে না।
শ্রুতি বলল,
-“আমি আজও বুঝতে পারছি না সমীর কেন আমায় এত ভালোবাসে? আমার মনে হয় ইশ্বর তো আমায় কুৎসিত করে তৈরি করেছে, সেই অপূর্ণতা সমীরের ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছে।”
আজ সারা ক্লাসে শুধু সমীর আর শ্রুতির কথা ভাবছে মোনা। ওঁদের নিয়ে ভাবনা যেন আজ ওর অস্থি মজ্জায় গেঁথে গেছে। ঘোরলাগা প্রেম কাহিনী। মোনা আজ অফিসে গিয়েও এই ভাবনা মাথা থেকে সরাতে পারেনি। অদ্ভুত ভাবে মোনার মস্তিষ্কে চেপে বসেছে। মোনা রোমাঞ্চিত হচ্ছে।
—-
বাসায় ফিরে মোনা বিশ্রাম নিয়ে পড়তে বসে। মোনার ক্ষোভ হয় প্রিয়মের কথা ভেবে। প্রিয়ম নাকি ওঁর জন্য বদলে গেছে, ওঁর ভালোবাসায় বিভোর হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। কই এতদিনে তো একটা ম্যাসেজও করল না! ফোনও দেয় নি। প্রিয়ম হেঁয়ালি করছে, নিছক মজা নিচ্ছে। এছাড়া কিছুই নয়।
পড়া শেষে বারান্দায় যাওয়া মোনার নিত্য স্বভাব হয়ে উঠেছে। অমাবস্যার তমসা রাত। পৃথিবী’কে গ্রাস করেছে আঁধারে। ধরা আজ অন্ধকার সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। আকাশের দিকে তাকালে মোনার দৃষ্টি অন্ধকারে হারিয়ে যায়। সেই বিলীন হওয়া দৃষ্টি ফিরে পায় জানালার ফাঁক দিয়ে আসা খন্ড খন্ড আলোর মিছিল দেখে।
দখিনা মৃদু হাওয়ায় মোনার কর্ণপ্রান্তের কুন্তল মুখে উড়ে আসছে বার বার।মোনা বিরক্ত নিয়ে বার বার মুখে উড়ে আসা চুল গুলো সরাচ্ছে। মোনার এই রাতে কফি খেতে ইচ্ছে করতে। মোনা চুলা জ্বালিয়ে চুলা কফির তৈরির জন্য পানি বসায়। মোনা অকারণে তাকিয়ে আছে চুলায় দাউদাউ করে জ্বলা হুতাশনের দিকে। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, অবলোকন করছে।
নিশান সজাগ হয়ে যায়। ঘুম জড়ানো চোখে খুঁজতে থাকে মোনা’কে। মোনা কফির মগ নিয়ে বসে নিশানের পাশে। দুই ভাই – বোনে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে তৃপ্তি সহকারে। মোনা প্রশান্তি পায়, নিশান ভালো আছে! নিশানের শরীরের সেই মারের আঘাত গুলো এখনো আছে,কত অমানবিক ভাবে মারত ইমরুল চৌধুরী। বাবা নাম টার সাথে কি এত পিশাচশতা যায়?
—-
মোনা জ্যাকের বাসায় যায়।জ্যাকের বাসায় খুব শোরগোল। কোন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হচ্ছে মনে হচ্ছে। জ্যাক সেদিনও ফোন করে বলেছিল,’মোনালিসা আপনি আসুন না একবার আমার বাসায়, আমি ইদানিং খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।’
মোনাও সময় করে উঠতে পারে না। প্রিন্সেস’কে দেখার জন্য অধীর হয়ে উঠেছে। জ্যাক বলেছে প্রিন্সেস নাকি কথা বলতে শিখছে। ফাদার ডাক শিখেছে। প্রিন্সেসও আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে।
জ্যাক সবাই’কে কিভাবে কি করতে হবে নির্দেশ করছে। মোনা’কে দেখে জাগতিক সব কাজ উপেক্ষা করে রুমে নিয়ে গেলো প্রিন্সেসের কাছে। জ্যাক উৎসুক গলায় বার বার বলছে,
-“প্রিন্সেস ফাদার বলো ফাদার।”
প্রিন্সেস অস্পষ্ট ভাবে কিছু একটা বলল। মোনা হেসে উঠলো। বলল,
-“জ্যাক আপনি কিন্তু মিথ্যা বললেন। প্রিন্সেস মোটেও ফাদার বলে নি।”
জ্যাক মোনার কথার প্রত্ত্যুতরে ব্যাখ্যা করে বলে,
-“বাচ্চা’রা স্পষ্ট ভাবে কিছু বলতে পারে না। বুঝে নিতে হয় মোনালিসা। বুঝার মত ব্রেন থাকতে হয়।”
বাচ্চা দের ব্যাপারে বাবা-মা খুব উৎসুক থাকে। আদো আদো গলায় কিছু একটা বললেই বাবা-মা উচ্ছ্বাসিত হয়ে সেটার ব্যাখ্যা খুঁজে। নিজেদের মত করে অর্থ বের করে।
জ্যাক আদুরে গলায় বলল,
-“প্রিন্সেস মোনালিসা’কে মাদার ডাকো তো। মোনালিসা বিশ্বাস করছে না।”
জ্যাকের কথা শুনে কোন এক অজ্ঞাত কারণে মোনার হাসি বিলুপ্ত হয়ে গেলো। প্রিন্সেসের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়। এর ভিতর জ্যাক বলে,
-“মোনালিসা আমার বাসায় পার্টি, বন্ধু-বান্ধব আসবে। কিন্তু আপনায় দাওয়াত করতে পারছি না। আমি জানি আপনি এসব পছন্দ করবেন না।”
কেমন পার্টি?সেই নাইট ক্লাবের মত পার্টি? মোনালিসা বলল,
-“আপনি এত বুঝেন কিভাবে?”
জ্যাক জবাব দিলো না। মোনা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আশাহত হলো উত্তর না পেয়ে। জ্যাকের ডাক এলো, বুঝা গেলো জরুরি কিছু।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ -কালকে শেষে লেখা ছিলো গল্প শেষ না, তাও আমায় ইনবক্সে জিজ্ঞেস করে। হায় কফার!🤦
ভালোলাগা-খারাপ লাগা বলে যান দুই লাইনে