#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
হিমেল কেবিনে ঢুকেই ধপ করে নূরের পায়ের কাছে বসে পড়ল। সাবরিনা আবরার হিমেলকে দেখে আবার মরা কান্না জুড়ে দিলো। হিমেলের চোখে ও পানি চলে এসেছে। নূর এমন এক্টা জঘন্য স্টেপ নিবে হিমেল স্বপ্নে ও ভাবে নি।
হিমেল থম মেরে নূরের পায়ের কাছে বসে আছে। আর মনে মনে বিড়বিড় করছে,,,,,
–“কাল রাতেই তো নূরকে এতো ভালোভাবে বুঝালাম। এরপর ও নূর এই কাজটা কিভাবে করতে পারল। যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে। তার যাওয়ার পথে কারো হাত ছিলো না। এখন যার সাথে ওর লাইফ জুড়ে গেছে তাকে নিয়েই ভাবতে বললাম। আর সে কি না….
হিমেল আর কিছু বলতে পারল না, সেই পাঁচ মিনিট আগে থেকেই ওর ফোনে অনবরত কল আসছে। হিমেল বসা থেকে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনটা চোখের সামনে ধরতেই স্ক্রীনে সাদমান নামটা জ্বলজ্বল করছে। হিমেল তড়িঘড়ি করে কেবিন থেকে বের হয়ে যেই না কলটা রিসিভ করল অমনি ঐ পাশ থেকে উওেজিত কন্ঠে সাদমান বলে উঠল,,,,,
–“এই…তোদের সমস্যা কি? সেই কখন থেকে এক এক করে তোদের সব গুলার নাম্বারে কল দিয়েই যাচ্ছি অথচ রিসিভ করার সাথে নাম ই নেই। নূরকে সকাল থেকে এই পর্যন্ত হাজারটা কল দিয়েছি। নূরকে না পেয়ে সানমুনকে দিয়েছি, এরপর দিলাম আয়মনকে, এখন দিলাম তোকে। তা ও আবার টানা আটটা কল দেওয়ার পর তুই কলটা পিক করেছিস। কি হয়েছে আমাকে এক্টু বলবি? নাকি আমি তোদের ছেড়ে দূরে চলে এসেছি বলে আমাকে ভুলে গেছিস?”
হিমেল কান্না সিক্ত কন্ঠে বলে উঠল,,,,,
–“নূর সুসাইড করার চেষ্টা করেছে সাদমান। এখন হসপিটালে ভর্তি। আমরা সবাই হসপিটালেই আছি।”
কথাটা শোনার সাথে সাথেই সাদমান চার তলা ছাদের উপর থেকে বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিলেই নাতাশা সাদমানকে হেচকা টান দিয়ে ওর দিকে ঘুড়িয়ে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে। ধস্তাধস্তিতে ফোনটা হাত থেকে ফসকে পড়ে সুসাইড করেছে। সাদমানের চোখে পানি টলমল করছে। নাতাশা এবার সাদমানকে ছেড়ে চোখ লাল করে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,
–“আর ইউ ক্রেইজি সাদমান? এখন যদি আমি তোকে না ধরতাম, তাহলে কি অবস্থা হতো বুঝতে পারছিস?”
সাদমান চোখে নোনাজল জল নিয়ে ধপ করে ছাদের ফ্লোরে বসে পড়ল। নাতাশা ও সাদমানের পাশে বসে পড়ল। নাতাশা ওর রাগটাকে কন্ট্রোল করে সাদমানের কাঁধে হাত রেখে শান্ত স্বরে বলল,,,,,
–“কি হয়েছে সাদমান? তুই এমন করছিস কেনো? ঐখানে সব ঠিক ঠাক আছে তো?”
সাদমান এক ঝটকায় কাঁধের উপর থেকে নাতাশার হাতটা সরিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা চোখের জল বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
–“আমরা এখনি বিডি ব্যাক করব।”
নাতাশা কিছুটা অবাক হয়ে সাদমানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল…..
–“পাগলের মতো কি যা তা বকছিস? তুই তো জানিস ই আমরা এখন চাইলে ও কোথাও মুভ করতে পারব না। তারপর ও এসব কেনো বলছিস।”
সাদমান নাতাশার থেকে মুখ ফিরিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,
–“নূর হসপিটালে এডমিট নাতাশা। সুসাইড করার চেষ্টা করেছিলো। আমি কিভাবে শান্ত থাকব বল? কিভাবে শান্ত থাকব?”
সাদমানের কথা শুনে নাতাশার চোখে ও জল ভরে এলো। নাতাশা আর দেরি না করে আয়মনের নাম্বারে ফোন লাগালো। দুই বার কল করার পর তৃতীয় বার আয়মন ফোনটা পিক করেছে। কলটা রিসিভ করার সাথে সাথেই নাতাশা কান্নাসিক্ত কন্ঠে আয়মনকে বলল,,,,,
–“হিমেল এসব কি বলেছে আয়মন? নূর নাকি সু..সা..ই..ড এটেম্পট করেছে?”
আয়মন এখনো গাড়িতে। চট্টগ্রামের কাছাকাছি চলে এসেছে। আয়মন কিছুটা বদরাগী মোড নিয়ে বলল,,,,
–“আর বলিস না, ঐ মা*দা*চো*কে কতোবার বুঝাইছি এসব না করতে। তারপর ও সে এটাই করেছে। টানা চল্লিশ দিন ধরে ওকে বুঝাইছি। বুঝ মানে নি সে। আমাদের সবাইকে গাঙ্গে ভাসানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ঐ শালা।”
আয়মন কিছুটা শান্ত হয়ে বলল,,,,
–“আমি এখন যাচ্ছি হসপিটাল। তুই চিন্তা করিস না।”
নাতাশা কান্নাসিক্ত কন্ঠে বলল,,,,
–“সাদমান খুব পাগলামী করছে, এখনি নাকি বিডি তে ব্যাক করবে। আচ্ছা, তুই ই বল এখন কি আমাদের পক্ষে বিডি তে ব্যাক করা সম্ভব? টিচাররাই তো এলাউড করবে না। রোলসের বাইরে কিছুই করা যাবে না।”
–“সাদমানকে পাগলামী করতে বারণ কর। নূর এখন আউট অফ ডেন্জ্ঞার। ওয়াশ করা হয়েছে। দু এক ঘন্টা পরেই সুস্থ হয়ে যাবে। আমি রাখছি। তোদের আসতে হবে না।”
কথাগুলো বলেই আয়মন কলটা কেটে দিলো। নাতাশা ফোনটা কান থেকে সরিয়ে পিছন থেকে সাদমানের পিঠে হাত রেখে সাদমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
–“নূর এখন ঠিক আছে। ওয়াশ করে বেডে দেওয়া হয়েছে। ঘন্টা দু এক পরে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। আয়মন বলেছে পাগলামী না করে শান্ত হয়ে থাকতে।”
সাদমান ওর পিঠের উপর থেকে নাতাশার হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে নাতাশার পাশ কাটিয়ে ছাঁদ থেকে দ্রুত প্রস্থান নিলো। ছাদ থেকে নেমে দুই তলায় গিয়ে ২১২ নম্বর রুমের দরজাটা খুলে সাদমান ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। দরজা লাগানোর আওয়াজে পুরো ব্লিডিং খানিক কেঁপে উঠল।
নাতাশা ছাদে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে সাদমানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,,
–“তোর এভোয়েডনেস গুলো আমার একদম সহ্য হয় না সাদমান। তুই কেনো বুঝিস না, আমি তোকে পাগলের মতো ভালোবাসি। চাঁদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। এরপরে ও তুই কেনো সানমুন সানমুন করিস? আমার খুব কষ্ট হয় সাদমান। খুব বেশি কষ্ট হয়।”
নাতাশা কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে হাটু ভাঁজ করে ফ্লোরে বসে পড়ল।
*
*
অন্যদিকে,,,,,,
প্রায় এক ঘন্টা পর,,,,
আয়মন হসপিটালে এসে হাজির। সিঁড়ি বেয়ে দৌঁড়ে ১১২ নম্বর কেবিনে ঢুকে পড়ে সে। একজন নার্স এসে নূরের হাতের ক্যানোলা আর স্যালাইনের নল গুলো খুলে দিচ্ছে। কিছুক্ষন পরেই নূরের জ্ঞান ফিরবে। নূরের কেবিনে সবাই এসে জট পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূরের আম্মু, আব্বু, নীড়, চাঁদনীর আব্বু, জায়মার আম্মু সবাই সিরিয়ালে নূরের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আয়মনকে কেউ এখনো খেয়াল করে নি।
আয়মন ধীর পায়ে হেঁটে নূরের পায়ের কাছে এসে দাঁড়াল। নূরকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখে আয়মনের বুকটা কেঁপে উঠল। উষ্কো খুশকো চুল, শুকনো মুখ, লাল ঠোঁট গুলো কালো হয়ে ফেটে গেছে, জিম করা সুঠাম দেহটা কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। ডান গালে এক্টা পিম্পল ও উঁকি দিয়েছে। সব মিলিয়ে নূরের অবস্থা নাজেহাল।
নার্সটা উনার কাজ করে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। আয়মনকে দেখে নীড় এসে আয়মনের পাশে দাঁড়াল। আয়মন নীড়ের দিকে তাকিয়ে যেই না কিছু বলতে যাবে অমনি চাঁদনী এসে ওদের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। পিছন পিছন চাঁদনীর আম্মু, সোহানী, লাবিবা, জায়মা ওরা চারজন কিছুটা হাঁফাতে হাঁফাতে কেবিনে ঢুকে পড়ল। ওদের অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই বুঝে গেছে চাঁদনী বেড ছেড়ে ছুটতে ছুটতে এই কেবিনে এসেছে। ওরা কেউ চাঁদনীকে থামাতে পারে নি। হাত দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে চাঁদনীর। স্যালাইনের লাইন ছিঁড়ে সে ছুটে এসেছে নূরের কাছে।
নূরের দিকে তাকিয়ে চাঁদনী ওর এলোমেলো চুলগুলো রক্তমাখা হাত দিয়ে হাত খোঁপা করে নেয়। খোপার কিছু কিছু অংশে রক্ত লেগে আছে। চাঁদনী হুট করে নূরের মাথার কাছে বসে নূরের কপালে এক্টা চুমো খেয়ে নূরের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। নূরের সেন্স এখনো ফিরে নি। কেবিন থেকে সব মুরুব্বিরা এক এক করে বের হয়ে গেলো। শুধু আয়মন, নীড়, হিমেল, জায়মা আর লাবিবা আছে। ওরা জানে নূরের সেন্স ফিরলে পাগলামী শুরু করবে। চাঁদনীকে তখন ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবে। রোজ ছাড়া সে অন্য কাউকে ওর শরীরে টাচ করতে দেয় না। প্রচন্ড রেগে যায় সে।
প্রায় পনেরো মিনিট পর নূর এক্টু এক্টু করে চোখ খুলতে থাকে। হাত পা নাড়তে থাকে। চাঁদনী এখনো আগের মতো নূরের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। নূর এবার পুরোপুরি ভাবে চোখ খুলে ওর বুকে ভারি কিছুর অনুভব পেয়ে যেই না বুকের দিকে তাকাল, অমনি সে এক ঝটকায় চাঁদনীর মাথাটা হাত দিয়ে ছিটকে ফেলে দিলো। চাঁদনী তাল সামলাতে না পেরে ঠাস হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
নূর শোয়া থেকে উঠে মাথায় হাত দিয়ে কপালটা খানিক কুঁচকে ফ্লোরে পড়ে থাকা চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,
–“তোমার সাহস হয় কি করে আমার বুকে মাথা রাখার? আমি আমার বুকে শুধুমাএ রোজকে বহন করি। এই জায়গাটার মালিক একমাএ রোজ। ফারদার যদি তুমি এই ভুলটা করার সাহস দেখাও, তবে এর চেয়ে ভয়ংকর শাস্তি পাবে।”
আয়মন, নীড় আর হিমেল চোখ লাল করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। লাবিবা আর জায়মা এসে চাঁদনীকে ধরে ফেলল। চাঁদনীর কপাল কেটে সামান্য রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ওরা দুজন মিলে চাঁদনীকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো।
চাঁদনী চোখে এক রাশ জল নিয়ে লাবিবা আর জায়মার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নূরের সামনা সামনি দাঁড়িয়ে মুখে এক্টা মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে বলল,,,,
–“ওকে বাবা ফাইন। আমি আর কখনো তোমার শরীরে টাচ করব না। হ্যাপি???”
নূর বুক ফাঁটা চিৎকার দিয়ে চোখ দুটো লাল করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
–“আমাকে হ্যাপি দেখতে চাইলে আমার রোজকে আমার কাছে এনে দাও। ওর স্পর্শ আমার খুব প্রয়োজন। দারুনভাবে মিস করছি ওকে। আমার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। বুকের ভিতর অদ্ভুত এক্টা ব্যাথা হয়। সবকিছু নিরাগ নিরাগ লাগে। ওর ভয়েসটা শোনার জন্য কান দুটো ছটফট ছটফট করে। ওকে এক নজর দেখার জন্য আমার মনটা বেসামাল হয়ে উঠছে। প্লিজ আমার রোজকে এনে দাও তোমরা… প্লিজ। আমি বোজকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। রোজকে আমি উন্মাদের মতো ভালোবাসি। রোজ বলেছিলো কখনো আমার হাত ছাড়বে না। সবসময় আমার দুহাত আঁকড়ে ধরে রাখবে। প্রতিদিন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে। কিন্তু না, রোজ ওর কথা রাখে নি। ছেড়ে চলে গেছে আমাকে। হারিয়ে ফেলেছি আমি রোজকে। আমার খামখেয়ালির জন্য আমার রোজ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি ও নিজেকে শেষ করে ফেলব। রোজের মতো নিজেকে বড় লড়ির নিচে পিষে ফেলব।”
কথা গুলো বলেই নূর পাগলের মতো বেডের চাঁদর, বালিশ, ডেস্কের উপর রাখা নার্সদের দরকারী সরন্জ্ঞাম সব ছুড়াছুড়ি করছে। আয়মন, নীড়, হিমেল কেউ ওকে ধরে রাখতে পারছে না। নূর এবার বেড থেকে উঠে কেবিন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। আয়মন, নীড়, হিমেল নূরকে বার বার আটকে দিচ্ছে। তিনজনের কেউ ই নূরের সাথে পেরে উঠছে না।
ঐদিকে চাঁদনী হেচকি তুলে তুলে কাঁদছে আর মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,
–“আয়মন ভাইয়া প্লিজ নূর ভাইয়াকে থামা। এতো ছুটাছুটি করলে নূর ভাইয়া আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে। প্লিজ তোরা থাকা ওকে। নূর ভাইয়ার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারব না। আমি কখনোই আমার চোখের সামনে ওর নিথর দেহটা দেখতে পারব না। দরকার হলে ওর আগে আমি মরব। নূর ভাইয়াকে কিছুতেই কেবিনের বাইরে বের হতে দিস না। না হয় তোরা দুজনেরই মরা মুখ দেখবি।”
চাঁদনীর বুক ফাঁটা চিৎকার আর উন্মাদনা দেখে আয়মন নিজেকে সামলাতে পারছে না। আয়মন এবার ঠাস করে নূরের গালে এক চড় বসিয়ে দিলো। এতে নূরের কোনো হেল দুল নেই। নূর আরো বেশি ডিসপারেড হয়ে আয়মনকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলল,,,,,
–“তোরা আমাকে মারতে মারতে আধামরা করে ফেললে ও কিছুতেই আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবি না। আমি রোজের কাছে যাবোই যাবো। আমার এখনি রোজের কাছে যেতে হবে। সেই কখন থেকে রোজ আমাকে ডেকে যাচ্ছে। প্লিজ… তোরা আমাকে যেতে দে।”
আয়মন দাঁত কিড়মিড় করে চোখ দুটো লাল করে নূরের শার্টের কলার ধরে বলল,,,,
–“রোজ মারা গেছে। মৃত্যু ব্যক্তির সাথে দেখা করা যায় না। কেনো বুঝতে চাচ্ছিস না তুই?”
নূর এবার আয়মনের শার্টের কলার ধরে দাঁত গিজগিজ করে গড়িয়ে পড়া চোখের জল নিয়ে আয়মনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,,,,
–“মা*দা*চো* তোর সাহস হয় কি করে আমার রোজকে মৃত বলার? রোজ মরে নি। আমার রোজ বেঁচে আছে। আমি এখনি রোজের কাছে যাবো।”
চাঁদনী এবার নিজেকে কিছুটা শান্ত করে চোখের জল গুলো হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে দৌঁড়ে গিয়ে কেবিনের দরজাটা বন্ধ করে দেয়। এরপর আয়মন, নীড় আর হিমেলকে ধাক্কা দিয়ে নূরের থেকে ছাড়িয়ে নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। নূরের নীলাভ চোখ দুটোতে রক্ত জমে গেছে। ধবধবে ফর্সা মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। শরীর থেকে দরদরিয়ে ঘাম পড়ছে।
চাঁদনীর চোখ গুলো ফুলে টকটকে লাল হয়ে গেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। শ্বাস বেড়ে চাঁদনীর পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
নূর যেই না চাঁদনীকে ধাক্কা দিতে যাবে অমনি চাঁদনী ওর শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে নূরকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরল। নূর ধস্তাধস্তি করছে চাঁদনীর থেকে নিজেকে সরানোর জন্য। চাঁদনী নূরকে এতোটাই শক্তভাবে ধরেছে যে, নূর কিছুতেই চাঁদনীর থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। নূরের পাগলামীর পরিমান বেড়ে যাওয়াতে চাঁদনী সবাইকে উদ্দেশ্য করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,
–“তোমরা সবাই পিছনে ঘুরে চোখ দুটো বন্ধ করে রাখো প্লিজ।”
চাঁদনীর কথা মতো সবাই পিছনে ঘুরে চোখে হাত দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। চাঁদনী এবার নূরের বুক থেকে মাথা তুলে নূরের পায়ের উপর ওর দু পা তুলে নূরের মুখটাকে ওর দুহাত দিয়ে শক্ত করে ধরে ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরল। নূর চাঁদনীকে ঠেলে ও দূরে সরাতে পারছে না। চাঁদনীর ঠোঁট থেকে নূর ওর ঠোঁট ছাড়াতে নিলেই চাঁদনী নূরের ঠোঁটে খুব রুডলি কামড় বসাতে থাকে। এক পর্যায়ে রাগে লাল হয়ে নূর ও চাঁদনীর ঠোঁটে খুব জোরে জোরে কামড় বসাতে থাকে। চাঁদনী সব ব্যাথা সহ্য করে নিচ্ছে এরপর ও নূরের ঠোঁট ছাঁড়ছে না। দুজনের চোখ থেকেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। যতক্ষন পর্যন্ত নূর শান্ত না হবে ততক্ষন পর্যন্ত চাঁদনী নূরের ঠোঁট ছাড়বে না।
প্রায় দশ মিনিট পর নূর কিছুটা শান্ত হয়ে আসে। ছুটাছুটি বন্ধ করে দেয়। শরীরের সব শক্তি মিইয়ে এসেছে নূরের। কামড়ানো বন্ধ করে নূর চাঁদনীর ঠোঁটে সফটলি কিস করছে। চাঁদনী ব্যাপারটা বুঝে নূরের ঠোঁট থেকে ওর ঠোঁট সরিয়ে নেয়। চাঁদনীর ঠোঁট কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। নূরের ঠোঁট দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।
রক্তে রঙ্গিন হওয়া নূরের লাল চোখ দুটো আবার নীলাভ রং ধারন করেছে। নূর পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেছে। হুট করে নূর চাঁদনীর দিকে একবার তাকিয়ে চাঁদনীর কাঁধে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল।
#চলবে,,,,,,,,,,,